রাজু নুরুল

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন।
এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠা নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে এমন আচরণ রীতিমতো বিস্ময়ের। টানা দুই মেয়াদ নির্ভেজাল কাটিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে বিভোর মোদি ও তাঁর অনুসারীদের জন্য এটি বিরল এক অভিজ্ঞতা। এর আগে কোভিড সামলাতে ব্যর্থ হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি।
গত শুক্রবারের (১৯ নভেম্বর) ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘তপস্যায় নিশ্চয় কিঞ্চিৎ ঘাটতি ছিল, তাই সব কৃষককে সন্তুষ্ট করতে পারিনি। স্বচ্ছ হৃদয়ে ক্ষমা চেয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’ আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আন্দোলনকারী কৃষকদের খেত-খামারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। মোদির এ ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন, অবশেষে হার মানলেন নরেন্দ্র মোদি। কেউ বলছেন, এ জয় কৃষকের। বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, ‘বিলম্বিত বোধোদয়। অহংকারের পতন হলো।’ তবে আন্দোলনের শীর্ষ নেতা ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেইউ) প্রধান রাকেশ টিকায়েত বলেছেন, বিতর্কিত কৃষি আইন দেশের পার্লামেন্টে বাতিল হলেই শুধু তাঁরা চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন। রাজ্যসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে ২৯ নভেম্বর।
কী ছিল বিতর্কিত কৃষি আইনে?
সরকার শুরু থেকে বলে আসছিল—তিনটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তিনটি কৃষি আইন কার্যকর করা হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে, কৃষিক্ষেত্রে ফড়িয়া বা দালালদের আধিপত্য কমিয়ে কৃষকের আয় বাড়ানো। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, রাজ্যগুলোয় চুক্তিভিত্তিক চাষের ব্যবস্থা আইনসিদ্ধ করা এবং তৃতীয়টি হচ্ছে, কৃষিপণ্য বিপণন নিয়ে যে আইন রয়েছে, তা দূর করে আন্তঃরাজ্য কৃষিপণ্যের অবাধ বাণিজ্যের রাস্তা খুলে দেওয়া।
এখন দেখা যাক, আইন তিনটিতে কী বলা আছে এবং কেনই-বা এর বিরোধিতা করা হচ্ছিল। প্রথম আইনটি ছিল অত্যাবশ্যক পণ্য সংশোধনী আইন। এ আইনের মাধ্যমে কোনো দালাল বা ফড়িয়া ছাড়া কৃষক সরাসরি বড় ব্যবসায়ীর কাছে তাঁর পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। এতে কৃষক প্রকৃত দাম পাবেন ও আয় বাড়বে। কিন্তু কৃষকেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের কথা হলো, অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) আইনের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সরাসরি কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য কিনে মজুত ও বিক্রির অধিকার দেওয়া হলো। এর মধ্য দিয়ে সরকার কৃষিপণ্যে যে সহায়ক মূল্য দেয়, তা তুলে নিতে চায়। কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য কেনার দায় সরকার নিজেদের ঘাড় থেকে ঝেড়ে বেসরকারি সংস্থা বা ব্যবসায়ীদের কাছে দিতে চায়। ফলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মজুতের ঊর্ধ্বসীমা না রাখায় সেসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা চলে যাবে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।
দ্বিতীয় আইনটি কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন আইন। সরকার বলছে, এ আইনের ফলে কৃষক তাঁর এলাকার মান্ডির বাইরেও ফসল বিক্রি করতে পারবেন। এখন কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য মান্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন হাত ঘুরে বড় ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছায়। নতুন আইনের ফলে বড় ব্যবসায়ী বা বেসরকারি কোনো সংস্থা চাইলে সরাসরি চাষির কাছ থেকে কৃষিপণ্য কিনে নিতে পারবেন। কৃষকদের দাবি, তাঁরা এতে আপাতত লাভবান হবেন সত্য; কিন্তু এতে মান্ডিব্যবস্থার বিলোপ ঘটবে। ফলে কৃষকের সুরক্ষাকবচ থাকবে না এবং সেই সুযোগে বড় সংস্থাগুলো কৃষকদের ক্রমাগত ঠকানোর সুযোগ পাবে।
তৃতীয়টিকে বলা হচ্ছিল কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ এবং কৃষি পরিষেবাসংক্রান্ত কৃষক চুক্তি আইন। এ আইনের মাধ্যমে কৃষক চুক্তিনির্ভর চাষ করতে পারবেন। কৃষক আগে থেকেই বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে শস্যের দাম নির্ধারণ করে নিতে পারবেন। কোনো বেসরকারি বাণিজ্য সংস্থা বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা চাইলে কৃষকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে সেই জমিতে কৃষিজ পণ্য ফলাতে পারবেন। জমির চুক্তি অনুযায়ী কৃষক দাম পেয়ে যাবেন। কৃষক নিজের জমিতে কাজ করতে চাইলে তার জন্য দৈনিক পারিশ্রমিকও মিলবে। সরকারের যুক্তি, এতে দেশীয় কৃষিজ পণ্যের চাহিদা বাড়বে। কৃষিপণ্য রপ্তানির পথ প্রশস্ত হবে। কিন্তু কৃষকদের আশঙ্কা ছিল, চুক্তির খেলাপ হলে প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে টেকার সামর্থ্য কৃষকদের নেই। তখন কৃষকেরা নিজ জমি লিজ দিতে বাধ্য হবেন। ফলে নিজের জমিতে ক্রীতদাস হয়ে যাবেন।
মোটকথা, নতুন তিনটি আইন মূলত কৃষকের কাছ থেকে সরকারি সংরক্ষণের সুবিধা কেড়ে নিত, যা কয়েক দশক ধরে ভারতের কৃষকদের মুক্তবাজার থেকে রক্ষা করেছে।
আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল সবখানে
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তড়িঘড়ি করে সংসদের অধিবেশনে বিনা আলোচনায় বিল তিনটি আইনে রূপান্তরিত হয়। বিলের ওপর আলোচনার দাবি না মেনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও বিলগুলো পাঠাতে অস্বীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ততক্ষণে দেশজুড়ে কৃষকেরা ফুঁসে উঠেছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে কৃষকেরা দিল্লি অবরোধ শুরু করেন। তত দিনে ৪০টির বেশি সংগঠন এক ছাতার নিচে এসে গেছে। গড়ে তুলেছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। ভারতে সংঘবদ্ধ কৃষক সংগঠনের পালে হাওয়া লাগল। ধারাবাহিক মিছিল, সভা-সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘটের মাধ্যমে প্রায় দেড় বছর পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশসহ ভারতের কৃষিপ্রধান বড় বড় অঞ্চলে রাস্তাঘাট দখল করে রেখেছিলেন তাঁরা। আন্দোলনের মধ্যে শিখ ও জাটরা সংখ্যায় বেশি ছিলেন। গত দেড় বছর বর্ষা, শীত, গরম—কোনো দুর্যোগেই মাঠ ছাড়েননি তাঁরা। আন্দোলনকে অবৈধ ঘোষণা করতে মোদি সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে কৃষি আন্দোলনকে অবৈধ বলে ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, কৃষকদের আন্দোলন আইনানুগ এবং আন্দোলন করার অধিকার সংবিধানেই আছে। উল্টো পুলিশ প্রশাসন ও সরকারকে আন্দোলনে বাধা না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত।
গণমানুষের লাগাতার আন্দোলন
প্রথমে পাঞ্জাব-হরিয়ানাসহ বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকেরা দিল্লির সীমান্তে এসে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁরা ট্রাক, ট্রাক্টর আর সঙ্গে গোটা পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। রাজধানী অচল করে দিয়েছিলেন। এক বছর ধরে অবরোধস্থানে থেকেছেন কৃষকেরা। সেসব স্থানেই শিশুদের পড়াশোনা করাতে স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে। কমিউনিটি কিচেন পরিচালনা করে কৃষকদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে দিনের পর দিন। নারীদের জন্য ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। একসময় সেই আন্দোলন সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে। কংগ্রেস ও বাম দল ছাড়াও রাজ্যভিত্তিক দলগুলো আন্দোলনে সমর্থন দেয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যোগ দিয়েছেন কৃষকদের এই ক্যাম্পে। শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরা। পরিবারের বাধা, সরকারের চোখরাঙানিকে গ্রাহ্য করেননি।
এ বছরের অক্টোবরে ‘রেল রোকা’ কর্মসূচির ডাক দিলে গোটা রেলব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। ‘ভারত বন্ধ’-এ সারা ভারত স্তব্ধ হয়ে যায়। কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে সুমিত নামে এক বর তাঁর ট্রাক্টরে কৃষকদের ঝান্ডা ঝুলিয়ে বিয়ের আসরে হাজির হন। পাঞ্জাবের ফরিদকোট জেলার কোট কপুরা গ্রামের ২৮ বছর বয়সী মনি গিল তাঁর করপোরেট চাকরি ছেড়ে কৃষকদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি এখানে আমাদের কৃষকদের প্রতি সমর্থন জানাতে এসেছি। এই আইনগুলো দ্বারা শুধু কৃষকদের ক্ষতি হবে মনে হলেও আসলে এতে লোকসান হবে সব মানুষের। আমি নিশ্চিত যে আমরা জিতব। দিল্লিতে একটা ছোট পাঞ্জাব তৈরি হয়ে গেছে, দেখতে বেশ লাগছে।’ এভাবেই কৃষকদের আন্দোলন হয়ে পড়ে সর্বস্তরের আন্দোলন।
শুধু ভারতে নয়, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশের বাইরেও। প্রবাসী ভারতীয়দের পাশাপাশি জাতিসংঘ কৃষকদের আন্দোলন বিবেচনা করতে চিঠি দেয়। দেশ হিসেবে ব্রিটেন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র; ব্যক্তি হিসেবে গায়িকা রিয়ানা, পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের আইনজীবী ও তাঁর বোনঝি মিনা হ্যারিস; মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কৃষক আন্দোলন নিয়ে মোদি সরকারকে সতর্ক করে।
দমন-পীড়ন-নিগ্রহ, তবু অটল
মোদি সরকার এসব আন্দোলন গ্রাহ্য করেনি। ফলে দেড় বছরের আন্দোলনে সাত শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ বছরের জুন পর্যন্ত শুধু পাঞ্জাবে মারা গেছেন ২২০ জন কৃষক। আন্দোলনকারীদের ওপর নানাভাবে নিপীড়ন চালানো হয়েছে। কৃষকদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। মারা গেছেন কয়েকজন কিষানি। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে হয়েছে ব্যাপক সংঘর্ষ। কৃষকদের মনোবল ও ঐক্য ভাঙতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি শাসক বিজেপি।
একদিকে প্রশাসনিক দমন-পীড়ন, অকথ্য পুলিশি অত্যাচার; অন্যদিকে বিভিন্ন ধারায় মামলা করে কৃষক ঐক্যে ভাঙনের চেষ্টা চলেছে। একদল কৃষককে ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দিল্লির লাগোয়া বলে পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকেরা অবরোধে শামিল হওয়ায় তাঁদের ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘খলিস্তানি’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক: গত বছরের ২০ ডিসেম্বরের ঘটনা। বিমলা দেবী নামের ৬২ বছর বয়সী এক নারী সিংঘু আন্দোলনমঞ্চে এসেছিলেন। সেখানে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ওই মঞ্চে আন্দোলন করছে তাঁর ছেলে এবং ভাইয়েরা। তাঁরা কেউ সন্ত্রাসী বা বিদ্রোহী নন। হরিয়ানার সোনিপত জেলার সেহরি গ্রামে তাঁর পরিবার দুই একর জমিতে গম, জোয়ার ও আখের চাষ করে। অথচ দূরদর্শনে শোনা গেল, ‘আমাদের ছেলেদের গুন্ডা বলা হচ্ছে। ওরা চাষি, গুন্ডা নয়। এসব শুনে আমি কাঁদছিলাম। কারণ, ওরা জানে না, কৃষকদের চেয়ে বড় মানুষ নেই।’
এত সব দমন-পীড়নের পরেও কৃষকেরা ছিলেন অনড়। অবশেষে দেড় বছর পর এল তাঁদের মধুর জয়।
কৃষি আইন বাতিল কি রাজনৈতিক কারণে?
সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলোয় বিজেপির ফল হয়েছে হতাশাজনক। হিমাচল প্রদেশের চারটি আসনেই তারা কংগ্রেসের কাছে হেরেছে। হরিয়ানায় উপনির্বাচনে হয়েছে তৃতীয়। রাজস্থানে দুটি আসন হারিয়েছে কংগ্রেসের কাছে। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে একটি করে আসন কেড়ে নিয়েছে কংগ্রেস। দাদরা-নগর হাভেলিতে হেরেছে শিবসেনার কাছে। পশ্চিমবঙ্গের সাত আসনের উপনির্বাচনে সাতটিতেই ধরাশায়ী হয়েছে। উত্তর প্রদেশের ৪০৪টি বিধানসভার মধ্যে ৩১২টি বিজেপির দখলে, সেই রাজ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আসন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন দলীয় নেতারা। কৃষক আন্দোলনের ঢেউ সবচেয়ে বেশি উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে। এখানে ১০৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপির দখলে ৭৫টির মতো আসন। তা সম্ভব হয়েছিল জাট ও মুসলমান কৃষকদের জোটে ভাঙন ধরানোর কারণে। সেই ভাঙন জোড়া লাগিয়েছে কৃষক আন্দোলন।
২০২২ সালে যে রাজ্যগুলোয় বিধানসভা নির্বাচন হবে, তার মধ্যে অন্যতম পাঞ্জাব। ভারতের এ রাজ্য একমাত্র শিখপ্রধান। কৃষি আইন বাতিলে যাঁরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এ রাজ্যের শিখ কৃষকেরা। তাঁদের কথা মাথায় রেখে মোদি এমন দিনে কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা দিলেন যে, ১৯ নভেম্বর ছিল শিখ ধর্মাবলম্বীদের গুরু নানক দেবের জন্মবার্ষিকী। ভারতের এই দুই বড় রাজ্য ছাড়াও উত্তরাখণ্ড, মনিপুর, গোয়ায় নির্বাচন হবে আগামী বছরের শুরুর দিকে। আর বছরের শেষ দিকে নির্বাচন হবে হিমাচল ও গুজরাটে। তাই সব মিলিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, কৃষকদের স্বার্থ নয়, আইন বাতিলের পেছনে প্রধান প্রভাবক ভোটের হিসাব-নিকাশ।
ভারত-বাংলাদেশের কৃষিতে মিল-অমিল ও ভবিষ্যৎ
ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৬ শতাংশ। বাংলাদেশে এখনো ৪৩ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত, যেখানে ভারতে এ হার আরও বেশি—৫২ শতাংশ। তবে ভারতের কৃষি আমাদের চেয়ে বহুগুণ বড় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। দুগ্ধ, কাজুবাদাম, নারিকেল, চা, পাট, আম, গবাদি পশুসহ নানা কৃষিপণ্য উৎপাদনে ভারত বিশ্বে প্রথম। কফি উৎপাদনে সারা বিশ্বে ষষ্ঠ, তামাকে তৃতীয়, বিশ্বের মোট উৎপাদিত ফলের ১০ শতাংশ ভারত একা উৎপাদন করে। বাংলাদেশও কৃষির নানা শাখায় বিশ্বদরবারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে। ইলিশে প্রথম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পাটে দ্বিতীয়, আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ।
কিন্তু কৃষকদের সুরক্ষায় বাংলাদেশে অবস্থা যে যথেষ্ট নাজুক, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের মতো বাংলাদেশের কৃষকেরা যোজন-যোজন দূরে। কৃষকের মাঠে যখন এক কেজি আলু ৫ টাকা দরে বিক্রি হয়, সেটিই ঢাকার মতো বড় শহরে কখনো ২০ টাকার নিচে নামে না। ২০ টাকা কেজি দরের ধান যখন চাল হয়ে যায়, সেটার দাম গিয়ে দাঁড়ায় ৫০-৬০ টাকায়। এই উদাহরণ প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রে সত্য।
বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা ধীরে ধীরে করপোরেট মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে চলে গেছে। ওদিকে দফায় দফায় ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, বীজের সংকট, সারের অভাব তো নিয়মিত ঘটনা। কৃষকের কাছ থেকে সস্তায় কিনে ব্যক্তিগত সুরক্ষায় মজুত করে মাঝখান থেকে একদল লুটে নিচ্ছে অস্বাভাবিক মুনাফা। কিন্তু ভারতের মতো বাংলাদেশের কৃষক সংঘবদ্ধ নয়, নেই সচেতনতা। তিনটি আইন বাতিলের জন্য ভারতের লাখো কৃষক যেভাবে একটানা দেড় বছর মাঠঘাটে আন্দোলন করে বেড়াল, সংগঠনের সেই শক্তি অনুপস্থিত তো বটেই; বরং বাংলাদেশের কোনো একটা কৃষি আইন প্রণয়নের সময় কি আদৌ কোনো কৃষকের মন্তব্য চাওয়া হয়, নাকি কৃষকেরা জানে যে, আইন দিয়ে আসলে কী হয়? এখানেই ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের কৃষকদের মূল তফাত।
গণতন্ত্রের টালমাটাল সময়ে গর্ব করার মতো যে অহিংস আন্দোলন ভারতের কিষান দেখাল, সেখান থেকে কি আমরা শিখব যে, আন্দোলন কীভাবে করতে হয়? গত বছর তীব্র শীতের গভীর রাতে উন্মুক্ত রাজপথে বৃদ্ধ শিখ কৃষকদের নির্জীব হয়ে বসে থাকার মাহাত্ম্যকে ধারণ করার যোগ্যতা কি অর্জন করতে পারব কখনো? আর যদি না পারি, তবে আমাদের কৃষির ভবিষ্যৎ আর কৃষকের হাতে থাকবে না।
লেখক: উন্নয়নকর্মী

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন।
এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠা নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে এমন আচরণ রীতিমতো বিস্ময়ের। টানা দুই মেয়াদ নির্ভেজাল কাটিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে বিভোর মোদি ও তাঁর অনুসারীদের জন্য এটি বিরল এক অভিজ্ঞতা। এর আগে কোভিড সামলাতে ব্যর্থ হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি।
গত শুক্রবারের (১৯ নভেম্বর) ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘তপস্যায় নিশ্চয় কিঞ্চিৎ ঘাটতি ছিল, তাই সব কৃষককে সন্তুষ্ট করতে পারিনি। স্বচ্ছ হৃদয়ে ক্ষমা চেয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’ আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আন্দোলনকারী কৃষকদের খেত-খামারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। মোদির এ ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন, অবশেষে হার মানলেন নরেন্দ্র মোদি। কেউ বলছেন, এ জয় কৃষকের। বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, ‘বিলম্বিত বোধোদয়। অহংকারের পতন হলো।’ তবে আন্দোলনের শীর্ষ নেতা ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেইউ) প্রধান রাকেশ টিকায়েত বলেছেন, বিতর্কিত কৃষি আইন দেশের পার্লামেন্টে বাতিল হলেই শুধু তাঁরা চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন। রাজ্যসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে ২৯ নভেম্বর।
কী ছিল বিতর্কিত কৃষি আইনে?
সরকার শুরু থেকে বলে আসছিল—তিনটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তিনটি কৃষি আইন কার্যকর করা হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে, কৃষিক্ষেত্রে ফড়িয়া বা দালালদের আধিপত্য কমিয়ে কৃষকের আয় বাড়ানো। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, রাজ্যগুলোয় চুক্তিভিত্তিক চাষের ব্যবস্থা আইনসিদ্ধ করা এবং তৃতীয়টি হচ্ছে, কৃষিপণ্য বিপণন নিয়ে যে আইন রয়েছে, তা দূর করে আন্তঃরাজ্য কৃষিপণ্যের অবাধ বাণিজ্যের রাস্তা খুলে দেওয়া।
এখন দেখা যাক, আইন তিনটিতে কী বলা আছে এবং কেনই-বা এর বিরোধিতা করা হচ্ছিল। প্রথম আইনটি ছিল অত্যাবশ্যক পণ্য সংশোধনী আইন। এ আইনের মাধ্যমে কোনো দালাল বা ফড়িয়া ছাড়া কৃষক সরাসরি বড় ব্যবসায়ীর কাছে তাঁর পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। এতে কৃষক প্রকৃত দাম পাবেন ও আয় বাড়বে। কিন্তু কৃষকেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের কথা হলো, অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) আইনের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সরাসরি কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য কিনে মজুত ও বিক্রির অধিকার দেওয়া হলো। এর মধ্য দিয়ে সরকার কৃষিপণ্যে যে সহায়ক মূল্য দেয়, তা তুলে নিতে চায়। কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য কেনার দায় সরকার নিজেদের ঘাড় থেকে ঝেড়ে বেসরকারি সংস্থা বা ব্যবসায়ীদের কাছে দিতে চায়। ফলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মজুতের ঊর্ধ্বসীমা না রাখায় সেসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা চলে যাবে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।
দ্বিতীয় আইনটি কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন আইন। সরকার বলছে, এ আইনের ফলে কৃষক তাঁর এলাকার মান্ডির বাইরেও ফসল বিক্রি করতে পারবেন। এখন কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য মান্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন হাত ঘুরে বড় ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছায়। নতুন আইনের ফলে বড় ব্যবসায়ী বা বেসরকারি কোনো সংস্থা চাইলে সরাসরি চাষির কাছ থেকে কৃষিপণ্য কিনে নিতে পারবেন। কৃষকদের দাবি, তাঁরা এতে আপাতত লাভবান হবেন সত্য; কিন্তু এতে মান্ডিব্যবস্থার বিলোপ ঘটবে। ফলে কৃষকের সুরক্ষাকবচ থাকবে না এবং সেই সুযোগে বড় সংস্থাগুলো কৃষকদের ক্রমাগত ঠকানোর সুযোগ পাবে।
তৃতীয়টিকে বলা হচ্ছিল কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ এবং কৃষি পরিষেবাসংক্রান্ত কৃষক চুক্তি আইন। এ আইনের মাধ্যমে কৃষক চুক্তিনির্ভর চাষ করতে পারবেন। কৃষক আগে থেকেই বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে শস্যের দাম নির্ধারণ করে নিতে পারবেন। কোনো বেসরকারি বাণিজ্য সংস্থা বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা চাইলে কৃষকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে সেই জমিতে কৃষিজ পণ্য ফলাতে পারবেন। জমির চুক্তি অনুযায়ী কৃষক দাম পেয়ে যাবেন। কৃষক নিজের জমিতে কাজ করতে চাইলে তার জন্য দৈনিক পারিশ্রমিকও মিলবে। সরকারের যুক্তি, এতে দেশীয় কৃষিজ পণ্যের চাহিদা বাড়বে। কৃষিপণ্য রপ্তানির পথ প্রশস্ত হবে। কিন্তু কৃষকদের আশঙ্কা ছিল, চুক্তির খেলাপ হলে প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে টেকার সামর্থ্য কৃষকদের নেই। তখন কৃষকেরা নিজ জমি লিজ দিতে বাধ্য হবেন। ফলে নিজের জমিতে ক্রীতদাস হয়ে যাবেন।
মোটকথা, নতুন তিনটি আইন মূলত কৃষকের কাছ থেকে সরকারি সংরক্ষণের সুবিধা কেড়ে নিত, যা কয়েক দশক ধরে ভারতের কৃষকদের মুক্তবাজার থেকে রক্ষা করেছে।
আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল সবখানে
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তড়িঘড়ি করে সংসদের অধিবেশনে বিনা আলোচনায় বিল তিনটি আইনে রূপান্তরিত হয়। বিলের ওপর আলোচনার দাবি না মেনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও বিলগুলো পাঠাতে অস্বীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ততক্ষণে দেশজুড়ে কৃষকেরা ফুঁসে উঠেছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে কৃষকেরা দিল্লি অবরোধ শুরু করেন। তত দিনে ৪০টির বেশি সংগঠন এক ছাতার নিচে এসে গেছে। গড়ে তুলেছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। ভারতে সংঘবদ্ধ কৃষক সংগঠনের পালে হাওয়া লাগল। ধারাবাহিক মিছিল, সভা-সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘটের মাধ্যমে প্রায় দেড় বছর পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশসহ ভারতের কৃষিপ্রধান বড় বড় অঞ্চলে রাস্তাঘাট দখল করে রেখেছিলেন তাঁরা। আন্দোলনের মধ্যে শিখ ও জাটরা সংখ্যায় বেশি ছিলেন। গত দেড় বছর বর্ষা, শীত, গরম—কোনো দুর্যোগেই মাঠ ছাড়েননি তাঁরা। আন্দোলনকে অবৈধ ঘোষণা করতে মোদি সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে কৃষি আন্দোলনকে অবৈধ বলে ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, কৃষকদের আন্দোলন আইনানুগ এবং আন্দোলন করার অধিকার সংবিধানেই আছে। উল্টো পুলিশ প্রশাসন ও সরকারকে আন্দোলনে বাধা না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত।
গণমানুষের লাগাতার আন্দোলন
প্রথমে পাঞ্জাব-হরিয়ানাসহ বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকেরা দিল্লির সীমান্তে এসে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁরা ট্রাক, ট্রাক্টর আর সঙ্গে গোটা পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। রাজধানী অচল করে দিয়েছিলেন। এক বছর ধরে অবরোধস্থানে থেকেছেন কৃষকেরা। সেসব স্থানেই শিশুদের পড়াশোনা করাতে স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে। কমিউনিটি কিচেন পরিচালনা করে কৃষকদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে দিনের পর দিন। নারীদের জন্য ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। একসময় সেই আন্দোলন সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে। কংগ্রেস ও বাম দল ছাড়াও রাজ্যভিত্তিক দলগুলো আন্দোলনে সমর্থন দেয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যোগ দিয়েছেন কৃষকদের এই ক্যাম্পে। শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরা। পরিবারের বাধা, সরকারের চোখরাঙানিকে গ্রাহ্য করেননি।
এ বছরের অক্টোবরে ‘রেল রোকা’ কর্মসূচির ডাক দিলে গোটা রেলব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। ‘ভারত বন্ধ’-এ সারা ভারত স্তব্ধ হয়ে যায়। কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে সুমিত নামে এক বর তাঁর ট্রাক্টরে কৃষকদের ঝান্ডা ঝুলিয়ে বিয়ের আসরে হাজির হন। পাঞ্জাবের ফরিদকোট জেলার কোট কপুরা গ্রামের ২৮ বছর বয়সী মনি গিল তাঁর করপোরেট চাকরি ছেড়ে কৃষকদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি এখানে আমাদের কৃষকদের প্রতি সমর্থন জানাতে এসেছি। এই আইনগুলো দ্বারা শুধু কৃষকদের ক্ষতি হবে মনে হলেও আসলে এতে লোকসান হবে সব মানুষের। আমি নিশ্চিত যে আমরা জিতব। দিল্লিতে একটা ছোট পাঞ্জাব তৈরি হয়ে গেছে, দেখতে বেশ লাগছে।’ এভাবেই কৃষকদের আন্দোলন হয়ে পড়ে সর্বস্তরের আন্দোলন।
শুধু ভারতে নয়, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশের বাইরেও। প্রবাসী ভারতীয়দের পাশাপাশি জাতিসংঘ কৃষকদের আন্দোলন বিবেচনা করতে চিঠি দেয়। দেশ হিসেবে ব্রিটেন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র; ব্যক্তি হিসেবে গায়িকা রিয়ানা, পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের আইনজীবী ও তাঁর বোনঝি মিনা হ্যারিস; মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কৃষক আন্দোলন নিয়ে মোদি সরকারকে সতর্ক করে।
দমন-পীড়ন-নিগ্রহ, তবু অটল
মোদি সরকার এসব আন্দোলন গ্রাহ্য করেনি। ফলে দেড় বছরের আন্দোলনে সাত শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ বছরের জুন পর্যন্ত শুধু পাঞ্জাবে মারা গেছেন ২২০ জন কৃষক। আন্দোলনকারীদের ওপর নানাভাবে নিপীড়ন চালানো হয়েছে। কৃষকদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। মারা গেছেন কয়েকজন কিষানি। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে হয়েছে ব্যাপক সংঘর্ষ। কৃষকদের মনোবল ও ঐক্য ভাঙতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি শাসক বিজেপি।
একদিকে প্রশাসনিক দমন-পীড়ন, অকথ্য পুলিশি অত্যাচার; অন্যদিকে বিভিন্ন ধারায় মামলা করে কৃষক ঐক্যে ভাঙনের চেষ্টা চলেছে। একদল কৃষককে ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দিল্লির লাগোয়া বলে পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকেরা অবরোধে শামিল হওয়ায় তাঁদের ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘খলিস্তানি’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক: গত বছরের ২০ ডিসেম্বরের ঘটনা। বিমলা দেবী নামের ৬২ বছর বয়সী এক নারী সিংঘু আন্দোলনমঞ্চে এসেছিলেন। সেখানে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ওই মঞ্চে আন্দোলন করছে তাঁর ছেলে এবং ভাইয়েরা। তাঁরা কেউ সন্ত্রাসী বা বিদ্রোহী নন। হরিয়ানার সোনিপত জেলার সেহরি গ্রামে তাঁর পরিবার দুই একর জমিতে গম, জোয়ার ও আখের চাষ করে। অথচ দূরদর্শনে শোনা গেল, ‘আমাদের ছেলেদের গুন্ডা বলা হচ্ছে। ওরা চাষি, গুন্ডা নয়। এসব শুনে আমি কাঁদছিলাম। কারণ, ওরা জানে না, কৃষকদের চেয়ে বড় মানুষ নেই।’
এত সব দমন-পীড়নের পরেও কৃষকেরা ছিলেন অনড়। অবশেষে দেড় বছর পর এল তাঁদের মধুর জয়।
কৃষি আইন বাতিল কি রাজনৈতিক কারণে?
সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলোয় বিজেপির ফল হয়েছে হতাশাজনক। হিমাচল প্রদেশের চারটি আসনেই তারা কংগ্রেসের কাছে হেরেছে। হরিয়ানায় উপনির্বাচনে হয়েছে তৃতীয়। রাজস্থানে দুটি আসন হারিয়েছে কংগ্রেসের কাছে। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে একটি করে আসন কেড়ে নিয়েছে কংগ্রেস। দাদরা-নগর হাভেলিতে হেরেছে শিবসেনার কাছে। পশ্চিমবঙ্গের সাত আসনের উপনির্বাচনে সাতটিতেই ধরাশায়ী হয়েছে। উত্তর প্রদেশের ৪০৪টি বিধানসভার মধ্যে ৩১২টি বিজেপির দখলে, সেই রাজ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আসন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন দলীয় নেতারা। কৃষক আন্দোলনের ঢেউ সবচেয়ে বেশি উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে। এখানে ১০৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপির দখলে ৭৫টির মতো আসন। তা সম্ভব হয়েছিল জাট ও মুসলমান কৃষকদের জোটে ভাঙন ধরানোর কারণে। সেই ভাঙন জোড়া লাগিয়েছে কৃষক আন্দোলন।
২০২২ সালে যে রাজ্যগুলোয় বিধানসভা নির্বাচন হবে, তার মধ্যে অন্যতম পাঞ্জাব। ভারতের এ রাজ্য একমাত্র শিখপ্রধান। কৃষি আইন বাতিলে যাঁরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এ রাজ্যের শিখ কৃষকেরা। তাঁদের কথা মাথায় রেখে মোদি এমন দিনে কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা দিলেন যে, ১৯ নভেম্বর ছিল শিখ ধর্মাবলম্বীদের গুরু নানক দেবের জন্মবার্ষিকী। ভারতের এই দুই বড় রাজ্য ছাড়াও উত্তরাখণ্ড, মনিপুর, গোয়ায় নির্বাচন হবে আগামী বছরের শুরুর দিকে। আর বছরের শেষ দিকে নির্বাচন হবে হিমাচল ও গুজরাটে। তাই সব মিলিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, কৃষকদের স্বার্থ নয়, আইন বাতিলের পেছনে প্রধান প্রভাবক ভোটের হিসাব-নিকাশ।
ভারত-বাংলাদেশের কৃষিতে মিল-অমিল ও ভবিষ্যৎ
ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৬ শতাংশ। বাংলাদেশে এখনো ৪৩ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত, যেখানে ভারতে এ হার আরও বেশি—৫২ শতাংশ। তবে ভারতের কৃষি আমাদের চেয়ে বহুগুণ বড় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। দুগ্ধ, কাজুবাদাম, নারিকেল, চা, পাট, আম, গবাদি পশুসহ নানা কৃষিপণ্য উৎপাদনে ভারত বিশ্বে প্রথম। কফি উৎপাদনে সারা বিশ্বে ষষ্ঠ, তামাকে তৃতীয়, বিশ্বের মোট উৎপাদিত ফলের ১০ শতাংশ ভারত একা উৎপাদন করে। বাংলাদেশও কৃষির নানা শাখায় বিশ্বদরবারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে। ইলিশে প্রথম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পাটে দ্বিতীয়, আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ।
কিন্তু কৃষকদের সুরক্ষায় বাংলাদেশে অবস্থা যে যথেষ্ট নাজুক, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের মতো বাংলাদেশের কৃষকেরা যোজন-যোজন দূরে। কৃষকের মাঠে যখন এক কেজি আলু ৫ টাকা দরে বিক্রি হয়, সেটিই ঢাকার মতো বড় শহরে কখনো ২০ টাকার নিচে নামে না। ২০ টাকা কেজি দরের ধান যখন চাল হয়ে যায়, সেটার দাম গিয়ে দাঁড়ায় ৫০-৬০ টাকায়। এই উদাহরণ প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রে সত্য।
বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা ধীরে ধীরে করপোরেট মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে চলে গেছে। ওদিকে দফায় দফায় ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, বীজের সংকট, সারের অভাব তো নিয়মিত ঘটনা। কৃষকের কাছ থেকে সস্তায় কিনে ব্যক্তিগত সুরক্ষায় মজুত করে মাঝখান থেকে একদল লুটে নিচ্ছে অস্বাভাবিক মুনাফা। কিন্তু ভারতের মতো বাংলাদেশের কৃষক সংঘবদ্ধ নয়, নেই সচেতনতা। তিনটি আইন বাতিলের জন্য ভারতের লাখো কৃষক যেভাবে একটানা দেড় বছর মাঠঘাটে আন্দোলন করে বেড়াল, সংগঠনের সেই শক্তি অনুপস্থিত তো বটেই; বরং বাংলাদেশের কোনো একটা কৃষি আইন প্রণয়নের সময় কি আদৌ কোনো কৃষকের মন্তব্য চাওয়া হয়, নাকি কৃষকেরা জানে যে, আইন দিয়ে আসলে কী হয়? এখানেই ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের কৃষকদের মূল তফাত।
গণতন্ত্রের টালমাটাল সময়ে গর্ব করার মতো যে অহিংস আন্দোলন ভারতের কিষান দেখাল, সেখান থেকে কি আমরা শিখব যে, আন্দোলন কীভাবে করতে হয়? গত বছর তীব্র শীতের গভীর রাতে উন্মুক্ত রাজপথে বৃদ্ধ শিখ কৃষকদের নির্জীব হয়ে বসে থাকার মাহাত্ম্যকে ধারণ করার যোগ্যতা কি অর্জন করতে পারব কখনো? আর যদি না পারি, তবে আমাদের কৃষির ভবিষ্যৎ আর কৃষকের হাতে থাকবে না।
লেখক: উন্নয়নকর্মী

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’।
৭ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে...
৭ ঘণ্টা আগে
ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক...
৭ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
১৪ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’। একই সঙ্গে দেশবাসীর উদ্দেশে নিজের পরিকল্পনার কথাও সংক্ষেপে তুলে ধরলেন। তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন এবং জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় বাধ্য হয়ে প্রবাসে থাকার পর তাঁর এই ফিরে আসা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক অধ্যায়ের এক নতুন পর্বের সূচনা বলেই অনেকে দেখছেন। স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘটনা নিয়ে জনমনে অনেক প্রত্যাশা জেগে উঠেছে। উঠেছে কিছু প্রশ্নও।
তারেক রহমানের বক্তব্যে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো গণতন্ত্র, ঐক্য, উন্নয়ন, আইনের শাসন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা। তিনি বলেছেন, ‘আজ আমাদের সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার। আমরা চাই, সকলে মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন।’
দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত ও উত্তেজনাপূর্ণ জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তাঁর কণ্ঠে এই সমঝোতা ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির আহ্বান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে। তবে বক্তব্যের ভাষা খুবই আশাব্যঞ্জক হলেও, বাস্তবে তার প্রতিফলন কতটা ঘটানো সম্ভব হবে, সেটাই হলো এখনকার আসল চ্যালেঞ্জ।
দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের বাইরে ছিলেন তারেক রহমান। তাঁর এই দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক বাস্তবতা অনেক কিছুই বদলে গেছে। নতুন প্রজন্মের ভোটারদের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। তাঁদের মধ্যে প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন। ফলে তারেক রহমানের সামনে বড় দায়িত্ব হলো—এই পরিবর্তিত বাস্তবতাকে বোঝা এবং সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মসূচি গ্রহণ করে তা জনগণের সামনে উপস্থাপন করা। বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি, তাতে কেবল অতীতের রাজনৈতিক স্মৃতি বা আবেগ দিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। এখন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বর্তমান প্রজন্মকে ভালোভাবে বোঝা।
তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে একটি সুযোগ হিসেবেই দেখা যেতে পারে। সেটা হলো সংলাপ-সমঝোতা, আত্মসমালোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চাকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ। রাজনীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন হয় ধারাবাহিক আচরণ, স্বচ্ছতা এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করার মধ্য দিয়ে। সভার মঞ্চে বক্তব্যে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও অবস্থান যদি বাস্তব কর্মসূচিতে রূপ নেয়, তবেই তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে। এখন সেটাই করে দেখাতে হবে তারেক রহমান ও তাঁর দল বিএনপিকে।
তবে এ-ও মনে রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষ ও জনগণের দায়িত্বও কম নয়। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইনের ন্যায্য প্রয়োগ নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন টেকসই হয় না। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন সেই বৃহত্তর আলোচনাকেই আবার সামনে এনে দিয়েছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘটনা দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এটি অপার সম্ভাবনা যেমন তৈরি করেছে, তেমনি দায়িত্বশীল রাজনীতির দাবিও জোরালো করেছে। সকলের প্রত্যাশা, এই প্রত্যাবর্তন যেন কেবল একটি প্রতীকী ঘটনা হয়ে না থাকে; বরং এটি যেন সত্যিই গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নে একটি মাইলফলক হিসেবে দেশবাসীর সামনে প্রতিফলিত হয়।

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’। একই সঙ্গে দেশবাসীর উদ্দেশে নিজের পরিকল্পনার কথাও সংক্ষেপে তুলে ধরলেন। তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন এবং জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় বাধ্য হয়ে প্রবাসে থাকার পর তাঁর এই ফিরে আসা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক অধ্যায়ের এক নতুন পর্বের সূচনা বলেই অনেকে দেখছেন। স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘটনা নিয়ে জনমনে অনেক প্রত্যাশা জেগে উঠেছে। উঠেছে কিছু প্রশ্নও।
তারেক রহমানের বক্তব্যে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো গণতন্ত্র, ঐক্য, উন্নয়ন, আইনের শাসন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা। তিনি বলেছেন, ‘আজ আমাদের সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার। আমরা চাই, সকলে মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন।’
দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত ও উত্তেজনাপূর্ণ জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তাঁর কণ্ঠে এই সমঝোতা ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির আহ্বান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে। তবে বক্তব্যের ভাষা খুবই আশাব্যঞ্জক হলেও, বাস্তবে তার প্রতিফলন কতটা ঘটানো সম্ভব হবে, সেটাই হলো এখনকার আসল চ্যালেঞ্জ।
দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের বাইরে ছিলেন তারেক রহমান। তাঁর এই দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক বাস্তবতা অনেক কিছুই বদলে গেছে। নতুন প্রজন্মের ভোটারদের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। তাঁদের মধ্যে প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন। ফলে তারেক রহমানের সামনে বড় দায়িত্ব হলো—এই পরিবর্তিত বাস্তবতাকে বোঝা এবং সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মসূচি গ্রহণ করে তা জনগণের সামনে উপস্থাপন করা। বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি, তাতে কেবল অতীতের রাজনৈতিক স্মৃতি বা আবেগ দিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। এখন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বর্তমান প্রজন্মকে ভালোভাবে বোঝা।
তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে একটি সুযোগ হিসেবেই দেখা যেতে পারে। সেটা হলো সংলাপ-সমঝোতা, আত্মসমালোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চাকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ। রাজনীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন হয় ধারাবাহিক আচরণ, স্বচ্ছতা এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করার মধ্য দিয়ে। সভার মঞ্চে বক্তব্যে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও অবস্থান যদি বাস্তব কর্মসূচিতে রূপ নেয়, তবেই তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে। এখন সেটাই করে দেখাতে হবে তারেক রহমান ও তাঁর দল বিএনপিকে।
তবে এ-ও মনে রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষ ও জনগণের দায়িত্বও কম নয়। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইনের ন্যায্য প্রয়োগ নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন টেকসই হয় না। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন সেই বৃহত্তর আলোচনাকেই আবার সামনে এনে দিয়েছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘটনা দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এটি অপার সম্ভাবনা যেমন তৈরি করেছে, তেমনি দায়িত্বশীল রাজনীতির দাবিও জোরালো করেছে। সকলের প্রত্যাশা, এই প্রত্যাবর্তন যেন কেবল একটি প্রতীকী ঘটনা হয়ে না থাকে; বরং এটি যেন সত্যিই গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নে একটি মাইলফলক হিসেবে দেশবাসীর সামনে প্রতিফলিত হয়।

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠ
২৩ নভেম্বর ২০২১
দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে...
৭ ঘণ্টা আগে
ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক...
৭ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
১৪ ঘণ্টা আগেডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে ফেরা নতুন প্রত্যাশার সূচনা করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের নাম কেবল দলের নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত নয়; এটি একটি আদর্শিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রের দর্শন তিনি উত্তরাধিকারের মাধ্যমে নয়, বরং রাজনৈতিক চর্চা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ধারণ করেছেন। তাঁর কাছে রাজনীতি কখনোই ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ছিল না; বরং এটি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি নৈতিক লড়াই।
সংগঠক থেকে নেতৃত্বে উত্তরণ
তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি দলকে শক্তিশালী করার কাজে মনোনিবেশ করেন। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, সাংগঠনিক দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব পুনর্গঠনের মাধ্যমে তিনি বিএনপিকে একটি তৃণমূলভিত্তিক সংগঠনে পরিণত করেন। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ জোরদার করা এবং কর্মীদের মূল্যায়নের ধারা দলের শক্তি দৃঢ় করে। এই কার্যকর সংগঠক সত্তা পরবর্তী সময়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় আরও পরিপক্বতা আনতে সহায়তা করেছে। তিনি সব সময় দলীয় নীতি ও আদর্শকে প্রাধান্য দিয়েছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ কখনো নয়।
এক-এগারো ও নির্বাসনের রাজনীতি
২০০৭ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের নেতৃত্ব আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। এক-এগারোর অগণতান্ত্রিক বাস্তবতায় দেশের রাজনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়লেও গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও জোরপূর্বক রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার মুখেও তিনি আপসহীন ছিলেন। চিকিৎসার অজুহাতে তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হলেও বাস্তবে এটি রাজনৈতিক নির্বাসনই ছিল। দীর্ঘ প্রবাসজীবনে তিনি বিএনপিকে শুধু টিকিয়ে রাখেননি; দলকে ভাঙনের হাত থেকেও রক্ষা করেছেন। একাধিকবার দলকে নেতৃত্বশূন্য করার বা বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু তাঁর ধৈর্য ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে দল ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন—নেতৃত্ব মানে শুধু উপস্থিতি নয়; সংকটে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই প্রকৃত নেতৃত্ব।
ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক রাজনীতি
তারেক রহমান বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানকে স্পষ্টভাবে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক করেছেন। তাঁর মতে, দেশের চলমান সংকটের মূল কারণ জনগণের ভোটাধিকার হরণ। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া টেকসই স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়।
তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণমুক্ত করার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার এবং প্রশাসনের স্বচ্ছতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এটি রাজনৈতিক দলকে আদর্শিক পথে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের চেয়ে জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
শাসক বা সরকারের কাজ হলো জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা; যারা এর বিপরীতে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণই শেষ সত্তা। তাই তারেক রহমানের রাজনীতিতে সর্বদা জনগণকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়।
তরুণ প্রজন্ম ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ
তারেক রহমান সব সময়ই তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার পক্ষে ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস, তরুণ প্রজন্ম আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। শিক্ষিত, মেধাবী ও চিন্তাশীল তরুণদের রাজনীতিতে আনার আহ্বান দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব বিকাশের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেও তিনি দেশের প্রতিটি আন্দোলন ও কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কৌশল নির্ধারণ, সময়োপযোগী কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংকট তুলে ধরা—এই নেপথ্যের নেতৃত্ব বিএনপিকে রাজনীতির মূলধারায় টিকিয়ে রেখেছে। তরুণদের অংশগ্রহণ দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে নতুন ধারণা, উদ্ভাবনী কৌশল এবং নৈতিক মূল্যবোধের সংমিশ্রণ ঘটাতে পারে—এটাই তাঁর বার্তা।
২৫ ডিসেম্বর: একটি প্রতীকী প্রত্যাবর্তন
গতকাল ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে বিএনপি যে সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল, তা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি দীর্ঘ অপেক্ষা, আবেগ এবং রাজনৈতিক প্রত্যাশার প্রতিফলন। রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন ৩০০ ফুট এলাকায় প্রস্তুতি এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা-কর্মীদের আগমন প্রমাণ করে—তারেক রহমান আজও দলের রাজনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘদিনের নেতৃত্বের অনুপস্থিতি কাটিয়ে ওঠা, মাঠের রাজনীতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা—সবই তাঁর সরাসরি উপস্থিতির মাধ্যমে সম্ভব। পাশাপাশি, এটি সরকারবিরোধী রাজনীতিতে ভারসাম্য স্থাপন করবে। তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন সাধারণ জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে, ভোটাধিকার ও ন্যায্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে। দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার পর তাঁর উপস্থিতি দলের ভেতরে নেতৃত্ব পুনর্গঠন এবং সংহতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
নিশ্চয়ই সামনে চ্যালেঞ্জ কম নয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্বল রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং গণতন্ত্রহীন বাস্তবতা বড় বাধা। তবে দীর্ঘ সংগ্রাম, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও আপসহীন অবস্থান তাঁকে এগিয়ে যেতে শক্তি দেবে। যদি প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় জবাবদিহি পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি শুধু রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নয়; এটি গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ, নতুন নেতৃত্বের শক্তি এবং তরুণ প্রজন্মের আশা—সবকিছুর একক চিহ্ন। এইসব প্রত্যাশা বাস্তবায়িত হলে ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর সারা দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক নবজাগরণের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে ফেরা নতুন প্রত্যাশার সূচনা করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের নাম কেবল দলের নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত নয়; এটি একটি আদর্শিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রের দর্শন তিনি উত্তরাধিকারের মাধ্যমে নয়, বরং রাজনৈতিক চর্চা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ধারণ করেছেন। তাঁর কাছে রাজনীতি কখনোই ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ছিল না; বরং এটি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি নৈতিক লড়াই।
সংগঠক থেকে নেতৃত্বে উত্তরণ
তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি দলকে শক্তিশালী করার কাজে মনোনিবেশ করেন। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, সাংগঠনিক দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব পুনর্গঠনের মাধ্যমে তিনি বিএনপিকে একটি তৃণমূলভিত্তিক সংগঠনে পরিণত করেন। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ জোরদার করা এবং কর্মীদের মূল্যায়নের ধারা দলের শক্তি দৃঢ় করে। এই কার্যকর সংগঠক সত্তা পরবর্তী সময়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় আরও পরিপক্বতা আনতে সহায়তা করেছে। তিনি সব সময় দলীয় নীতি ও আদর্শকে প্রাধান্য দিয়েছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ কখনো নয়।
এক-এগারো ও নির্বাসনের রাজনীতি
২০০৭ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের নেতৃত্ব আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। এক-এগারোর অগণতান্ত্রিক বাস্তবতায় দেশের রাজনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়লেও গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও জোরপূর্বক রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার মুখেও তিনি আপসহীন ছিলেন। চিকিৎসার অজুহাতে তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হলেও বাস্তবে এটি রাজনৈতিক নির্বাসনই ছিল। দীর্ঘ প্রবাসজীবনে তিনি বিএনপিকে শুধু টিকিয়ে রাখেননি; দলকে ভাঙনের হাত থেকেও রক্ষা করেছেন। একাধিকবার দলকে নেতৃত্বশূন্য করার বা বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু তাঁর ধৈর্য ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে দল ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন—নেতৃত্ব মানে শুধু উপস্থিতি নয়; সংকটে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই প্রকৃত নেতৃত্ব।
ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক রাজনীতি
তারেক রহমান বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানকে স্পষ্টভাবে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক করেছেন। তাঁর মতে, দেশের চলমান সংকটের মূল কারণ জনগণের ভোটাধিকার হরণ। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া টেকসই স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়।
তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণমুক্ত করার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার এবং প্রশাসনের স্বচ্ছতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এটি রাজনৈতিক দলকে আদর্শিক পথে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের চেয়ে জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
শাসক বা সরকারের কাজ হলো জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা; যারা এর বিপরীতে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণই শেষ সত্তা। তাই তারেক রহমানের রাজনীতিতে সর্বদা জনগণকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়।
তরুণ প্রজন্ম ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ
তারেক রহমান সব সময়ই তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার পক্ষে ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস, তরুণ প্রজন্ম আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। শিক্ষিত, মেধাবী ও চিন্তাশীল তরুণদের রাজনীতিতে আনার আহ্বান দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব বিকাশের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেও তিনি দেশের প্রতিটি আন্দোলন ও কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কৌশল নির্ধারণ, সময়োপযোগী কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংকট তুলে ধরা—এই নেপথ্যের নেতৃত্ব বিএনপিকে রাজনীতির মূলধারায় টিকিয়ে রেখেছে। তরুণদের অংশগ্রহণ দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে নতুন ধারণা, উদ্ভাবনী কৌশল এবং নৈতিক মূল্যবোধের সংমিশ্রণ ঘটাতে পারে—এটাই তাঁর বার্তা।
২৫ ডিসেম্বর: একটি প্রতীকী প্রত্যাবর্তন
গতকাল ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে বিএনপি যে সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল, তা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি দীর্ঘ অপেক্ষা, আবেগ এবং রাজনৈতিক প্রত্যাশার প্রতিফলন। রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন ৩০০ ফুট এলাকায় প্রস্তুতি এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা-কর্মীদের আগমন প্রমাণ করে—তারেক রহমান আজও দলের রাজনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘদিনের নেতৃত্বের অনুপস্থিতি কাটিয়ে ওঠা, মাঠের রাজনীতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা—সবই তাঁর সরাসরি উপস্থিতির মাধ্যমে সম্ভব। পাশাপাশি, এটি সরকারবিরোধী রাজনীতিতে ভারসাম্য স্থাপন করবে। তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন সাধারণ জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে, ভোটাধিকার ও ন্যায্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে। দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার পর তাঁর উপস্থিতি দলের ভেতরে নেতৃত্ব পুনর্গঠন এবং সংহতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
নিশ্চয়ই সামনে চ্যালেঞ্জ কম নয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্বল রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং গণতন্ত্রহীন বাস্তবতা বড় বাধা। তবে দীর্ঘ সংগ্রাম, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও আপসহীন অবস্থান তাঁকে এগিয়ে যেতে শক্তি দেবে। যদি প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় জবাবদিহি পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি শুধু রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নয়; এটি গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ, নতুন নেতৃত্বের শক্তি এবং তরুণ প্রজন্মের আশা—সবকিছুর একক চিহ্ন। এইসব প্রত্যাশা বাস্তবায়িত হলে ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর সারা দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক নবজাগরণের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠ
২৩ নভেম্বর ২০২১
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’।
৭ ঘণ্টা আগে
ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক...
৭ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
১৪ ঘণ্টা আগেবিধান রিবেরু

ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিওদার্নো ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার কথা জানেন। তো মধ্যযুগীয় সেই বর্বর সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটার পেছনে অনেকগুলো বিষয় কাজ করেছে। সামাজিক উদ্বেগ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অর্থনৈতিক করুণাবস্থা, মহামারি সামাল দিতে না পারা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক অস্থিরতা। সবকিছু মিলিয়ে তখন সমাজের মানুষের ভেতর প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছিল, পাশাপাশি তাদের ছিল না জ্ঞানের আলো, কাজেই খুব সহজে দোষ চাপিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য তারা বেছে নিয়েছিল নারী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের। তবে সপ্তদশ শতকের শেষ দিক থেকে যখন বৈজ্ঞানিক চিন্তাচেতনার উন্মেষ ঘটছে, যখন আইন ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার হচ্ছে এবং যখন মানুষ ধর্মের অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসা শুরু করেছে, তখন ইউরোপীয় সমাজে পুড়িয়ে মারার প্রবণতাও কমে এসেছে। তারপরও বলা যাবে না, তারা পুরোপুরি আলোকপ্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই একবিংশ শতকের বাংলাদেশে ইউরোপের সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতা ফিরে এল কেন?
এই প্রশ্নটির উত্তর নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। ৫০০ বছর আগের বাস্তবতার ভেতরেই এর উত্তর নিহিত রয়েছে। সেই উত্তর মাথায় নিয়ে, বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া, গণমাধ্যমে আসা কিছু ভয়াবহ ঘটনা উল্লেখ করা যাক। ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও আগুন লাগায় মিছিল নিয়ে আসা একদল লোক। তো এই মব বা দঙ্গল, যাই বলি না কেন, তাদের কয়েকজন নিচতলায় পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে হোটেলটির কয়েকটি তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন সেখান থেকে বিদেশিসহ ২১ জনের দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
২০২৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ‘তৌহিদি জনতা’ পরিচয়ে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার কবর, বাড়ি ও দরবার শরিফে হামলার ঘটনা ঘটে। মর্মান্তিক ঘটনা হলো, এই মব নুরুল হকের মরদেহ কবর থেকে তুলে মহাসড়কের পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
২০২৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং পরে তাঁকে গাছে ঝুলিয়ে পোড়ানো হয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ধর্ম নিয়ে কোনো ধরনের কটূক্তির নজির তারা পায়নি।
এই ঘটনার পরদিনই, ১৯ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরে দরজায় তালা লাগিয়ে ও পেট্রল ঢেলে বেলাল হোসেন নামের এক বিএনপি নেতার ঘরে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় ঘরের ভেতর আগুনে পুড়ে মারা যায় ওই বিএনপি নেতার সাত বছরের মেয়ে। এ ছাড়া ওই বিএনপি নেতা এবং তাঁর আরও দুই মেয়ে আগুনে দগ্ধ হন।
এসব ঘটনার ভেতর আরও এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যেতে পারত, বলা যেতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়তো লেখা হয়ে যেত কালো অধ্যায়টির নাম, শিরোনাম হতো ‘পুড়িয়ে মারা হলো ৩০ জন সাংবাদিককে’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ১৮ ডিসেম্বর এই আয়োজনটাই করা হয়েছিল। সেদিন রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার—এই দুই পত্রিকা অফিসের সামনে আগে মব জড়ো হয় এবং পরে অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, ভেতরে আটকে পড়াদের যখন ফায়ার সার্ভিস বাঁচাতে এগিয়ে আসে, তাদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয় এই দঙ্গলবাজরা। উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট, যেন ভেতরে থাকা প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক পুড়ে মারা যান। নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর নিজের দেখা অভিজ্ঞতা থেকে এই সাক্ষ্য দেন।
একই সময়ে (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম চলাকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ছায়ানট ভবনেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ভবনের ভেতর থাকা নালন্দা স্কুলের শিশুদের জন্য রাখা আসবাব ও বইপত্রও রেহাই পায়নি। ঠিক পরদিনই (১৯ ডিসেম্বর) আগুন লাগানো হয় আরেক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অফিসে। সৌভাগ্যের বিষয় যে, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ের ভেতরে কেউ ছিল না।
বলা হচ্ছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে নাকি পত্রিকা অফিস ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে আগুন ও লুটপাট করা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন ওসমান হাদি। প্রচারের সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন সময়ে নিজের জীবনের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি, বিশেষ করে প্রশাসন। ১২ ডিসেম্বর হাদিকে গুলি করা হয়। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মোহাম্মদ ওসামা জানান, একটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুজনের মধ্যে থেকে একজন ওসমান হাদির ওপর গুলি চালান। তাঁর দাবি, এই দুজন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ওসমান হাদির প্রচারণার টিমে যোগ দিয়েছিলেন।
এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত নিন্দনীয় ও বর্বরোচিত। তবে সবচেয়ে বেশি বর্বরতা বোধ হয় ছবি ও পরিচয় জানার পরও প্রধান আসামিদের ধরতে না পারা। যারা হাদিকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলো এবং হত্যাকারীদের ধরতে পারল না, রাগ-ক্ষোভ তাদের ওপর হলো না, রাগ হলো বইপত্র, হারমোনিয়াম ও তবলার ওপর!
একেই বলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে। হাদিকে হত্যার পেছনে রয়েছে জঘন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি, এর পরিবর্তন হওয়া জরুরি। হাদির ওপর রাজনৈতিক হামলা ও হত্যার বিচার সবাই চান, কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে কেন গণমাধ্যম বা সাংস্কৃতিক সংগঠন আক্রান্ত হবে? কেনই-বা সেগুলোর ভেতর লুটপাট চালানো হবে, সেটা একটু ভাবলেই বোঝা যায়।
নগর পুড়লে যেমন দেবালয় এড়ায় না, তেমনি যারা আগুন নিয়ে খেলছে, তাদের হাতও যে অরক্ষিত থাকবে, সেটিও হলফ করে বলা যায় না। চট্টগ্রামেও আমরা দেখি, পুড়িয়ে মারার উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে চারটি হিন্দু পরিবারের ঘরের দরজা আটকে বাইরে থেকে আগুন দেওয়া হয়। সবশেষ ২৩ ডিসেম্বর ভোরে রাউজান উপজেলার পৌর শহরে পশ্চিম সুলতানপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আগুনের পর আক্রান্তরা টিন ও বাঁশের বেড়া কেটে ঘর থেকে বের হয়ে যান।
যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির ভেতর বাংলাদেশ ঢুকে পড়েছে, তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার, পূর্বের ভয়ের সংস্কৃতিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে সচেতনভাবে। কখনো রগ কেটে, কখনো গুম-খুন করে, কখনোবা পুড়িয়ে মেরে এই ভীতির রাজনীতি সচল রাখা হচ্ছে কয়েক দশক ধরে। স্বাধীন মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, এখন কেউ স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা পর্যন্ত পাচ্ছে না। পত্রিকা অফিসের সামনে এসে প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে লোকজন বলছে ঘরে ঘরে গিয়ে সাংবাদিকদের হত্যা করার কথা। প্রশাসন নির্বিকার! মোটা দাগে দেখলে, এমন হুমকি, নৃশংসতা ও বর্বরতার পেছনে বর্তমান সময়ের ঝঞ্ঝামুখর রাজনৈতিক পরিস্থিতি দায়ী। তা ছাড়া আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। শিক্ষার অবস্থাও করুণ। আসল কথা হলো, জ্ঞানের আলো থেকে এখনকার সাধারণ মানুষ বহুদিন ধরেই বঞ্চিত। এই বঞ্চনা একদিকে মানুষের ভেতর হিংস্রতার জন্ম দিচ্ছে, আরেক দিকে তাদের ভেতর যুক্তিসিদ্ধ চিন্তা করার ক্ষমতাও লোপ করে দিচ্ছে। তারা পরিণত হচ্ছে হিংস্র জড় পদার্থে। তাই মানুষকে কুকুর-বিড়ালের মতো পিটিয়ে মেরে, পুড়িয়ে ফেলতে তাদের একবিন্দুও আটকাচ্ছে না। আদতে তারা আর মানুষ নেই। মানুষ গড়ার কারিগর যারা, সেই শিক্ষকেরাও আজ চরমভাবে অপমানিত ও অপদস্থ হচ্ছেন। যে সমাজে শিক্ষকদের সঙ্গে নির্বিচারে অসম্মান করা হয়, রাষ্ট্র ও শিক্ষার্থী উভয় পক্ষ থেকে, সে দেশে মানুষ গড়বে কে? আর মানুষই-বা হবে কারা? গভীর সংকটে বাংলাদেশ।

ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিওদার্নো ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার কথা জানেন। তো মধ্যযুগীয় সেই বর্বর সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটার পেছনে অনেকগুলো বিষয় কাজ করেছে। সামাজিক উদ্বেগ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অর্থনৈতিক করুণাবস্থা, মহামারি সামাল দিতে না পারা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক অস্থিরতা। সবকিছু মিলিয়ে তখন সমাজের মানুষের ভেতর প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছিল, পাশাপাশি তাদের ছিল না জ্ঞানের আলো, কাজেই খুব সহজে দোষ চাপিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য তারা বেছে নিয়েছিল নারী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের। তবে সপ্তদশ শতকের শেষ দিক থেকে যখন বৈজ্ঞানিক চিন্তাচেতনার উন্মেষ ঘটছে, যখন আইন ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার হচ্ছে এবং যখন মানুষ ধর্মের অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসা শুরু করেছে, তখন ইউরোপীয় সমাজে পুড়িয়ে মারার প্রবণতাও কমে এসেছে। তারপরও বলা যাবে না, তারা পুরোপুরি আলোকপ্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই একবিংশ শতকের বাংলাদেশে ইউরোপের সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতা ফিরে এল কেন?
এই প্রশ্নটির উত্তর নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। ৫০০ বছর আগের বাস্তবতার ভেতরেই এর উত্তর নিহিত রয়েছে। সেই উত্তর মাথায় নিয়ে, বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া, গণমাধ্যমে আসা কিছু ভয়াবহ ঘটনা উল্লেখ করা যাক। ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও আগুন লাগায় মিছিল নিয়ে আসা একদল লোক। তো এই মব বা দঙ্গল, যাই বলি না কেন, তাদের কয়েকজন নিচতলায় পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে হোটেলটির কয়েকটি তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন সেখান থেকে বিদেশিসহ ২১ জনের দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
২০২৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ‘তৌহিদি জনতা’ পরিচয়ে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার কবর, বাড়ি ও দরবার শরিফে হামলার ঘটনা ঘটে। মর্মান্তিক ঘটনা হলো, এই মব নুরুল হকের মরদেহ কবর থেকে তুলে মহাসড়কের পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
২০২৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং পরে তাঁকে গাছে ঝুলিয়ে পোড়ানো হয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ধর্ম নিয়ে কোনো ধরনের কটূক্তির নজির তারা পায়নি।
এই ঘটনার পরদিনই, ১৯ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরে দরজায় তালা লাগিয়ে ও পেট্রল ঢেলে বেলাল হোসেন নামের এক বিএনপি নেতার ঘরে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় ঘরের ভেতর আগুনে পুড়ে মারা যায় ওই বিএনপি নেতার সাত বছরের মেয়ে। এ ছাড়া ওই বিএনপি নেতা এবং তাঁর আরও দুই মেয়ে আগুনে দগ্ধ হন।
এসব ঘটনার ভেতর আরও এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যেতে পারত, বলা যেতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়তো লেখা হয়ে যেত কালো অধ্যায়টির নাম, শিরোনাম হতো ‘পুড়িয়ে মারা হলো ৩০ জন সাংবাদিককে’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ১৮ ডিসেম্বর এই আয়োজনটাই করা হয়েছিল। সেদিন রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার—এই দুই পত্রিকা অফিসের সামনে আগে মব জড়ো হয় এবং পরে অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, ভেতরে আটকে পড়াদের যখন ফায়ার সার্ভিস বাঁচাতে এগিয়ে আসে, তাদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয় এই দঙ্গলবাজরা। উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট, যেন ভেতরে থাকা প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক পুড়ে মারা যান। নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর নিজের দেখা অভিজ্ঞতা থেকে এই সাক্ষ্য দেন।
একই সময়ে (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম চলাকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ছায়ানট ভবনেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ভবনের ভেতর থাকা নালন্দা স্কুলের শিশুদের জন্য রাখা আসবাব ও বইপত্রও রেহাই পায়নি। ঠিক পরদিনই (১৯ ডিসেম্বর) আগুন লাগানো হয় আরেক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অফিসে। সৌভাগ্যের বিষয় যে, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ের ভেতরে কেউ ছিল না।
বলা হচ্ছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে নাকি পত্রিকা অফিস ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে আগুন ও লুটপাট করা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন ওসমান হাদি। প্রচারের সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন সময়ে নিজের জীবনের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি, বিশেষ করে প্রশাসন। ১২ ডিসেম্বর হাদিকে গুলি করা হয়। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মোহাম্মদ ওসামা জানান, একটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুজনের মধ্যে থেকে একজন ওসমান হাদির ওপর গুলি চালান। তাঁর দাবি, এই দুজন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ওসমান হাদির প্রচারণার টিমে যোগ দিয়েছিলেন।
এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত নিন্দনীয় ও বর্বরোচিত। তবে সবচেয়ে বেশি বর্বরতা বোধ হয় ছবি ও পরিচয় জানার পরও প্রধান আসামিদের ধরতে না পারা। যারা হাদিকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলো এবং হত্যাকারীদের ধরতে পারল না, রাগ-ক্ষোভ তাদের ওপর হলো না, রাগ হলো বইপত্র, হারমোনিয়াম ও তবলার ওপর!
একেই বলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে। হাদিকে হত্যার পেছনে রয়েছে জঘন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি, এর পরিবর্তন হওয়া জরুরি। হাদির ওপর রাজনৈতিক হামলা ও হত্যার বিচার সবাই চান, কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে কেন গণমাধ্যম বা সাংস্কৃতিক সংগঠন আক্রান্ত হবে? কেনই-বা সেগুলোর ভেতর লুটপাট চালানো হবে, সেটা একটু ভাবলেই বোঝা যায়।
নগর পুড়লে যেমন দেবালয় এড়ায় না, তেমনি যারা আগুন নিয়ে খেলছে, তাদের হাতও যে অরক্ষিত থাকবে, সেটিও হলফ করে বলা যায় না। চট্টগ্রামেও আমরা দেখি, পুড়িয়ে মারার উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে চারটি হিন্দু পরিবারের ঘরের দরজা আটকে বাইরে থেকে আগুন দেওয়া হয়। সবশেষ ২৩ ডিসেম্বর ভোরে রাউজান উপজেলার পৌর শহরে পশ্চিম সুলতানপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আগুনের পর আক্রান্তরা টিন ও বাঁশের বেড়া কেটে ঘর থেকে বের হয়ে যান।
যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির ভেতর বাংলাদেশ ঢুকে পড়েছে, তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার, পূর্বের ভয়ের সংস্কৃতিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে সচেতনভাবে। কখনো রগ কেটে, কখনো গুম-খুন করে, কখনোবা পুড়িয়ে মেরে এই ভীতির রাজনীতি সচল রাখা হচ্ছে কয়েক দশক ধরে। স্বাধীন মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, এখন কেউ স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা পর্যন্ত পাচ্ছে না। পত্রিকা অফিসের সামনে এসে প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে লোকজন বলছে ঘরে ঘরে গিয়ে সাংবাদিকদের হত্যা করার কথা। প্রশাসন নির্বিকার! মোটা দাগে দেখলে, এমন হুমকি, নৃশংসতা ও বর্বরতার পেছনে বর্তমান সময়ের ঝঞ্ঝামুখর রাজনৈতিক পরিস্থিতি দায়ী। তা ছাড়া আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। শিক্ষার অবস্থাও করুণ। আসল কথা হলো, জ্ঞানের আলো থেকে এখনকার সাধারণ মানুষ বহুদিন ধরেই বঞ্চিত। এই বঞ্চনা একদিকে মানুষের ভেতর হিংস্রতার জন্ম দিচ্ছে, আরেক দিকে তাদের ভেতর যুক্তিসিদ্ধ চিন্তা করার ক্ষমতাও লোপ করে দিচ্ছে। তারা পরিণত হচ্ছে হিংস্র জড় পদার্থে। তাই মানুষকে কুকুর-বিড়ালের মতো পিটিয়ে মেরে, পুড়িয়ে ফেলতে তাদের একবিন্দুও আটকাচ্ছে না। আদতে তারা আর মানুষ নেই। মানুষ গড়ার কারিগর যারা, সেই শিক্ষকেরাও আজ চরমভাবে অপমানিত ও অপদস্থ হচ্ছেন। যে সমাজে শিক্ষকদের সঙ্গে নির্বিচারে অসম্মান করা হয়, রাষ্ট্র ও শিক্ষার্থী উভয় পক্ষ থেকে, সে দেশে মানুষ গড়বে কে? আর মানুষই-বা হবে কারা? গভীর সংকটে বাংলাদেশ।

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠ
২৩ নভেম্বর ২০২১
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’।
৭ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে...
৭ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
১৪ ঘণ্টা আগেতারেকের প্রত্যাবর্তন: অভিমত
অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছেন, সেদিন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হয়েছে, তা তিনি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছেন। বহু প্রতিভার অধিকারী বাবা জিয়াউর রহমান কীভাবে চড়াই-উতরাই মোকাবিলা করে দেশকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়েছেন, তাও তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। মা খালেদা জিয়া হলেন তাঁর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই স্বৈরাচারী এরশাদ প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তখন বিএনপির খুব দুঃসময়। হাল ধরলেন খালেদা জিয়া। তারেক রহমান প্রত্যক্ষ করেছেন, নবাগত তাঁর মা কীভাবে ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সুসংগঠিত করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে তারেক রহমানের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলায় দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে। তৃণমূল সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে পরিচিত হন, যা ছিল তাঁর জন্য মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা তাঁর পরিবার থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার ঝুলিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার কাজে সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। অতঃপর এই অঙ্গনে তাঁর কর্মকাণ্ড ছিল নিরন্তর প্রবহমান। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশব্যাপী প্রচার-কার্যক্রম পরিচালনার পাঠ গ্রহণ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে আধুনিক ও কার্যকর প্রচারের কৌশল প্রণয়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বিএনপির অমিত সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে তাঁর অভ্যুদয় ঘটে। ২০০১ সালে নির্বাচিত হন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে। ২০০৯ সালে দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। অল্প সময়ের মধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ ও যুবসমাজকে রাজনীতির প্রশিক্ষণ দিয়ে নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সাংগঠনিক দক্ষতা তাঁকে দলের ভেতরে ও দেশবাসীর কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তোলে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার কারাবন্দী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্থলে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে রয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। কখনো সংগ্রাম সফলতার মুখ দেখে, আবার কখনো-বা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নেতাকে অপশক্তির রোষানলে পড়তে হয়। কৈশোরের অনুরূপ তারেক রহমানের রাজনৈতিক অঙ্গনে পথ চলাও নিয়ত সরলরৈখিক হয়নি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে যে সেনা সরকার এসেছিল, তা জরুরি অবস্থা জারি করে বিরাজনীতিকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।
বিশেষ করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনী এবং টাস্কফোর্সের নামে হামলা-মামলা, জুলুম ও নির্যাতন চালায়। দেশনেত্রীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই নির্যাতন ও জুলুমের শিকার নেতা-কর্মীদের মধ্যে তারেক রহমানের ওপর নেমে আসা নির্যাতনের মাত্রা ও ধরন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। ৭ মার্চ ২০০৭ তারিখে গ্রেপ্তারের পর তাঁর ওপর নেমে আসে পৈশাচিক নির্যাতন। এই আক্রমণ তাঁর প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্যই করা হয়েছিল। তিনি ভাগ্যক্রমে এবং দেশবাসীর দোয়ায় বেঁচে যান। ৭ মার্চ ২০০৭ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এটি তাঁর জন্য একদিক থেকে যেমন নির্বাসনের যন্ত্রণা ভোগের শামিল, অন্যদিক থেকে দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়ে তাঁর নিজের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও দৃঢ় করার একটি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া। রাজনৈতিক জীবনের এই আঁকাবাঁকা পথ চলায় তিনি যে জীবনমুখী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা তাঁর বর্তমান পথ চলার ক্ষেত্রে পাথেয় হিসেবে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব পালন করার সময় তাঁর এই অভিজ্ঞতার সুবাদে সূচিত হতে পারে বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতির গতিধারা। পৃথিবীর স্বনামধন্য রাজনীতিকগণের জীবন ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, তাঁদের অনেকেরই রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক সুখ-দুঃখের অভিজ্ঞতা ও চড়াই-উতরাই পার হওয়ার করুণ কাহিনি। সুখ-দুঃখের এই মিশ্র অভিজ্ঞতাগুলো তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরালো করেছে। তারেক রহমানের রয়েছে নির্যাতনের দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করার অভিজ্ঞতা। রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সফলতম রাষ্ট্রনায়ক পিতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের করুণ কাহিনি প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা। আরও রয়েছে মা খালেদা জিয়ার ৪০ বছর যাবৎ বসবাস করা নিজ বাসস্থান থেকে বিতাড়িত হওয়ার করুণ অভিজ্ঞতা। প্রতিনিয়ত নেতা-কর্মীদের ওপর ঘটে যাওয়া অসংখ্য নিপীড়ন-নির্যাতনের কাহিনি তো রয়েছেই। এই অভিজ্ঞতাগুলো তারেক রহমানকে করে তুলেছে এক সর্বংসহা রাজনীতিক হিসেবে। তাঁর মধ্যে এমন এক বোধ তৈরি হয়েছে, যা তাঁকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অপরিহার্য করে তুলেছে।
সুতরাং বলা যায়, যে অভিজ্ঞতাগুলো একজন মানুষকে ব্যক্তি, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের অন্তর্নিহিত মর্মার্থ উপলব্ধিতে সাহায্য করে, তারেক রহমান সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রায় অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতির পঙ্কিল পথে নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার-আন্দোলনের কর্মপন্থা নির্ধারণে এর চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে কি? বোধ করি নেই।
এখন প্রয়োজন হলো, এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণে সচেষ্ট হওয়া, যার স্বপ্ন নিয়ে এ দেশ রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল এবং যার সূচনা করেছিলেন তাঁরই পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা ও পরবর্তী সময়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শেষ দিন ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন, সেদিন থেকেই এই স্বপ্ন পূরণের বাস্তব এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। প্রতিশোধের অগণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে তারেক রহমান জাতির উদ্দেশ্যে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত থাকবে, সেটাই জাতির প্রত্যাশা। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু একজন ব্যক্তির ফিরে আসা নয় বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে এক নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের এক সুবর্ণ সুযোগ।
অন্তর্বর্তী সরকার তারেক রহমানসহ সকল রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে এই সুযোগের বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা উচিত। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার বজায় থাকলে প্রতিহিংসার বিপরীতে গণতান্ত্রিক ইতিবাচক প্রতিযোগিতার বিজয় অনিবার্য।
লেখক: অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছেন, সেদিন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হয়েছে, তা তিনি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছেন। বহু প্রতিভার অধিকারী বাবা জিয়াউর রহমান কীভাবে চড়াই-উতরাই মোকাবিলা করে দেশকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়েছেন, তাও তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। মা খালেদা জিয়া হলেন তাঁর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই স্বৈরাচারী এরশাদ প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তখন বিএনপির খুব দুঃসময়। হাল ধরলেন খালেদা জিয়া। তারেক রহমান প্রত্যক্ষ করেছেন, নবাগত তাঁর মা কীভাবে ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সুসংগঠিত করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে তারেক রহমানের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলায় দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে। তৃণমূল সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে পরিচিত হন, যা ছিল তাঁর জন্য মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা তাঁর পরিবার থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার ঝুলিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার কাজে সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। অতঃপর এই অঙ্গনে তাঁর কর্মকাণ্ড ছিল নিরন্তর প্রবহমান। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশব্যাপী প্রচার-কার্যক্রম পরিচালনার পাঠ গ্রহণ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে আধুনিক ও কার্যকর প্রচারের কৌশল প্রণয়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বিএনপির অমিত সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে তাঁর অভ্যুদয় ঘটে। ২০০১ সালে নির্বাচিত হন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে। ২০০৯ সালে দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। অল্প সময়ের মধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ ও যুবসমাজকে রাজনীতির প্রশিক্ষণ দিয়ে নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সাংগঠনিক দক্ষতা তাঁকে দলের ভেতরে ও দেশবাসীর কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তোলে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার কারাবন্দী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্থলে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে রয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। কখনো সংগ্রাম সফলতার মুখ দেখে, আবার কখনো-বা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নেতাকে অপশক্তির রোষানলে পড়তে হয়। কৈশোরের অনুরূপ তারেক রহমানের রাজনৈতিক অঙ্গনে পথ চলাও নিয়ত সরলরৈখিক হয়নি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে যে সেনা সরকার এসেছিল, তা জরুরি অবস্থা জারি করে বিরাজনীতিকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।
বিশেষ করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনী এবং টাস্কফোর্সের নামে হামলা-মামলা, জুলুম ও নির্যাতন চালায়। দেশনেত্রীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই নির্যাতন ও জুলুমের শিকার নেতা-কর্মীদের মধ্যে তারেক রহমানের ওপর নেমে আসা নির্যাতনের মাত্রা ও ধরন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। ৭ মার্চ ২০০৭ তারিখে গ্রেপ্তারের পর তাঁর ওপর নেমে আসে পৈশাচিক নির্যাতন। এই আক্রমণ তাঁর প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্যই করা হয়েছিল। তিনি ভাগ্যক্রমে এবং দেশবাসীর দোয়ায় বেঁচে যান। ৭ মার্চ ২০০৭ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এটি তাঁর জন্য একদিক থেকে যেমন নির্বাসনের যন্ত্রণা ভোগের শামিল, অন্যদিক থেকে দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়ে তাঁর নিজের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও দৃঢ় করার একটি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া। রাজনৈতিক জীবনের এই আঁকাবাঁকা পথ চলায় তিনি যে জীবনমুখী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা তাঁর বর্তমান পথ চলার ক্ষেত্রে পাথেয় হিসেবে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব পালন করার সময় তাঁর এই অভিজ্ঞতার সুবাদে সূচিত হতে পারে বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতির গতিধারা। পৃথিবীর স্বনামধন্য রাজনীতিকগণের জীবন ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, তাঁদের অনেকেরই রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক সুখ-দুঃখের অভিজ্ঞতা ও চড়াই-উতরাই পার হওয়ার করুণ কাহিনি। সুখ-দুঃখের এই মিশ্র অভিজ্ঞতাগুলো তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরালো করেছে। তারেক রহমানের রয়েছে নির্যাতনের দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করার অভিজ্ঞতা। রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সফলতম রাষ্ট্রনায়ক পিতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের করুণ কাহিনি প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা। আরও রয়েছে মা খালেদা জিয়ার ৪০ বছর যাবৎ বসবাস করা নিজ বাসস্থান থেকে বিতাড়িত হওয়ার করুণ অভিজ্ঞতা। প্রতিনিয়ত নেতা-কর্মীদের ওপর ঘটে যাওয়া অসংখ্য নিপীড়ন-নির্যাতনের কাহিনি তো রয়েছেই। এই অভিজ্ঞতাগুলো তারেক রহমানকে করে তুলেছে এক সর্বংসহা রাজনীতিক হিসেবে। তাঁর মধ্যে এমন এক বোধ তৈরি হয়েছে, যা তাঁকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অপরিহার্য করে তুলেছে।
সুতরাং বলা যায়, যে অভিজ্ঞতাগুলো একজন মানুষকে ব্যক্তি, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের অন্তর্নিহিত মর্মার্থ উপলব্ধিতে সাহায্য করে, তারেক রহমান সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রায় অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতির পঙ্কিল পথে নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার-আন্দোলনের কর্মপন্থা নির্ধারণে এর চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে কি? বোধ করি নেই।
এখন প্রয়োজন হলো, এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণে সচেষ্ট হওয়া, যার স্বপ্ন নিয়ে এ দেশ রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল এবং যার সূচনা করেছিলেন তাঁরই পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা ও পরবর্তী সময়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শেষ দিন ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন, সেদিন থেকেই এই স্বপ্ন পূরণের বাস্তব এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। প্রতিশোধের অগণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে তারেক রহমান জাতির উদ্দেশ্যে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত থাকবে, সেটাই জাতির প্রত্যাশা। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু একজন ব্যক্তির ফিরে আসা নয় বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে এক নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের এক সুবর্ণ সুযোগ।
অন্তর্বর্তী সরকার তারেক রহমানসহ সকল রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে এই সুযোগের বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা উচিত। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার বজায় থাকলে প্রতিহিংসার বিপরীতে গণতান্ত্রিক ইতিবাচক প্রতিযোগিতার বিজয় অনিবার্য।
লেখক: অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠ
২৩ নভেম্বর ২০২১
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’।
৭ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে...
৭ ঘণ্টা আগে
ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক...
৭ ঘণ্টা আগে