জাহীদ রেজা নূর

আমার কেন যেন মনে হলো, তাঁকে আমি দেখেছি। তাঁকে আমি চিনতাম।
কিন্তু সময়ের হিসেব মেলাতে গিয়ে দেখি, তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। কারণ, ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে আমি পড়াশুনা শেষ করে রাশিয়া থেকে দেশে ফিরেছিলাম। ১৯৯৬ সালেরই সেপ্টেম্বরে কমরেড আবদুস শহীদ মারা গেছেন। ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে আমি সংবাদে আমার চাকরিজীবন শুরু করেছি। তাই তাঁকে দেখার কোনো উপায়ই ছিল না আমার।
তাহলে কেন মনে হচ্ছে, তাঁকে আমি দেখেছি?
ভেবে দেখলাম, এর মূল কারণ হয়তো তানিয়া। হ্যাঁ, আবদুস শহীদের মেয়ে তানিয়া। আমি যখন সংবাদ ছেড়ে মুক্তকণ্ঠে যোগ দিলাম, তখন সেখানে তানিয়াকে পেলাম সহকর্মী হিসেবে। ও ছিল কম্পোজ বিভাগে। সে বহু আগের কথা। কিন্তু এখনো মনে পড়ে, তানিয়ার কম্পোজে ভুল প্রায় থাকতই না। ওর করা কম্পোজ নির্দ্বিধায় প্রুফ রিডিং ছাড়াই পড়া যেত। সহকর্মী হাসান মামুনই সম্ভবত কমরেড আবদুস শহীদের মেয়ে হিসেবে তানিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তিনিই কমরেড সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছিলেন। হাসান মামুন কমরেড আবদুস শহীদকে চিনতেন। কারণ, দীর্ঘদিন তিনি সংবাদে চাকরি করেছেন। তিনি যে সময় সংবাদে ছিলেন, তখন প্রায়ই আবদুস শহীদ আসতেন সংবাদ অফিসে।
বামপন্থী রাজনীতির প্রতি ঝোঁক ছিল আমার। তাই খাপড়া ওয়ার্ডের হত্যাকাণ্ডের কথা অজানা থাকার কথা নয়। হাসান মামুন সে কথা মনে করিয়ে দিতেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের সহকর্মী তানিয়া একটা ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার বহন করছে।
তানিয়ার গুনপণার শেষ নেই। ওকে কখনো রাগ করতে দেখিনি। এক বছর সময়কালে যতবার দেখা হয়েছে, ওর হাসি মুখটাই দেখেছি।
খাপড়া ওয়ার্ড নিয়ে এরপরও কিছু কিছু পড়েছি। প্রথম আলোয় চাকরি শুরু করার পর জয়া শহীদের সঙ্গে পরিচয় হয়। তানিয়ার ছোট বোন জয়া। বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে নিউজ ছাপাতে কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীর সংবাদটি দিতে ও আসত। তানিয়ার মতো নয় ও, একটু চঞ্চল। অনর্গল কথা বলতে পারে। অনেক ব্যাপারে ওর আগ্রহ। বাবার স্মৃতিকে উজ্জ্বল রাখার জন্য জয়া ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
দুই.
আমরা এমন একজন মানুষ সম্পর্কে কথা বলতে যাচ্ছি, যিনি সাম্যবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। পার্টি করা অবস্থায় কিংবা পার্টি থেকে সরে যাওয়ার পরও তিনি সাম্যবাদকেই জীবনের অঙ্গ বলে মনে করতেন। একটা অদ্ভুত সময়ে জন্ম হয়েছিল কিছু অদ্ভুত মানুষের। আবদুস শহীদও ছিলেন সে সময়ের সে রকম একজন অদ্ভুত মানুষ। ‘অদ্ভুত’ শব্দটা কি ঠিক বলা হলো? এর চেয়ে ‘আশ্চর্য’ শব্দটিই বুঝি সুপ্রযুক্ত হতো। বর্তমান সময়ে এ ধরনের মানুষ নেই বললেই চলে।
এখন বুঝতে চেষ্টা করি, সাম্যবাদ কী করে পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মানুষের মনে জ্বালিয়েছিল দীপশিখা। প্রায় একটা শতাব্দিজুড়ে বিশ্বের মানুষ স্বপ্ন বুনেছে, সাম্যের কথা ভাবতে চেয়েছে। ভেবেছে, এই পৃথিবীতে সব মানুষ হবে সমান।
কিন্তু হঠাৎ এক ঝড়ে সবকিছুই যখন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল, তখন অনেকের জীবন থেকেই ঝরে গেল সে স্বপ্ন। আমার জানতে ইচ্ছে করে, কমরেড শহীদের মন থেকেও সে স্বপ্ন ঝরে গিয়েছিল কিনা। এ প্রশ্ন মনে আসার কারণ হলো, আমি তাঁর সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, তাতে সাম্যবাদের প্রতি তাঁর প্রবল নিষ্ঠারই প্রকাশ দেখেছি। তাই, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাপ্তি তাঁকে কতটা হতবিহ্বল করেছিল, তা আমার জানা দরকার। আমার জানা দরকার, বিপ্লবের ভিত্তিভূমি প্রস্তুত হওয়ার আগেই তুলনামূলকভাবে ইউরোপের অনগ্রসর একটি দেশে বিপ্লবের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনকে তিনি কী চোখে দেখতেন। পার্টির আমলাতন্ত্র যখন একটি স্বপ্নের টুঁটি টিপে ধরেছিল, তখন তা থেকে উত্তরণের কোনো দিশা কি ছিল তাঁর ভাবনায়?
এ প্রশ্নসহ আরও অনেক প্রশ্ন আছে আমার। শুধু আবদুস শহীদকে নয়, সে আমলের সব সৎ কমিউনিস্টের উদ্দেশেই প্রশ্নগুলো।
তিন.
আমরা যখন রাগ করে বলি, ‘যাও, জেলের ঘানি টানো’, তখন বুঝি না যে, সত্যিই একসময় বন্দীদের দিয়ে ঘানি টানানো হতো। গরুর কাজ করানো হতো মানুষকে দিয়ে। আধুনিককালে অবশ্য যন্ত্র এসে ঘানি টানার সমাপ্তি ঘটিয়েছে। কিন্তু যে মানসিকতায় মানুষকে দিয়ে ঘানি টানানো হতো, তাতে প্রবলভাবে বর্ণবাদকেও দেখি। ব্রিটিশেরা বিদায় নিয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ আত্মা তখনো ভর করে ছিল নব্যসৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের ঘাড়ে। সে সময় যে তিনটি ধারায় এ দেশের রাজনীতি বিকশিত হয়েছে—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ইসলামি—তারই একটি ধারার প্রতি সবচেয়ে বেশি রোষ ছিল পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের। সমাজতন্ত্রীদের সবচেয়ে ঘৃণার চোখে দেখত তারা। এ কথা তো ঠিক, কমিউনিস্ট বা লাল জুজুর ভয় সবসময়ই স্বৈরাচারী রাষ্ট্রগুলোকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখত। সে আমলের তরুণদের অনেকেই সাম্যবাদে দীক্ষা নিত। সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপ্লবের বিজয়ের পর কীভাবে একটি নতুন ধরনের সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, তা নিয়ে ভাবত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাম্যবাদীরা। বাংলাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কমরেড শহীদ সেই ধারার উজ্জ্বল এক প্রতিনিধি।
আবদুস শহীদের একটি অমর কীর্তি আছে ‘কারাস্মৃতি’ নামে। এ বইতে আমরা খাপড়া ওয়ার্ডের সেই বিভীষিকার দেখা পাই। পঞ্চাশ সালের ২৪ এপ্রিলের নৃশংসতায় যারা নিহত হয়েছিলেন, সেই সাতজন, বিজল সেন (রাজশাহী), হানিফ শেখ (কুষ্টিয়া), দেলওয়ার (কুষ্টিয়া), আনোয়ার (খুলনা), সুখেন ভট্টাচার্য (ময়মনসিংহ), সুধীন ধর (রংপুর), কম্পরাম সিং (দিনাজপুর)—এর তালিকায়ও জায়গা করে নিতে পারতেন আবদুস শহীদ। আমরা অনেকেই আমাদের ভাবনার আয়নায় দেখতে পাব—১৯৫০ সালের দিকে দেশের বহু কারাগারেই রাজবন্দীরা নিজেদের মর্যাদা রক্ষার জন্য লড়াই করছেন। রাজবন্দীদের পাশাপাশি সাধারণ কয়েদিরাও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
ব্রিটিশ আমলে গরুর বদলে কয়েদিদের দিয়ে ঘানি টানানো হতো। ভারি লোহার রড কাঁধে নিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে কয়েদিরা ঘানি টানছে—এ কথা মনে হলেই আমার স্মরণে আসে জয়নুল আবেদিনের আঁকা গরুর গাড়ি ঠেলার সেই অসাধারণ ছবিটির কথা। বহু হাজতি ছিলেন, যারা বছরের পর বছর জেলে বন্দী ছিলেন। যদিও স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেখানেও বিনা বিচারে বন্দী থাকার ঘটনা ঘটেই চলেছে। সে কথা থাক।
রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডের সেই নারকীয় ঘটনাটা অতি সংক্ষেপে এখানে বলে রাখি। একদিন যখন জেলের ভেতরে আইজিপি (প্রিজন) আমিরুদ্দীন আসেন, সেদিন কয়েদিদের ১২/১৪ জন প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে কয়েদিদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলেন। আমিরুদ্দীন সাধারণ কয়েদিদের বিষয়ে আলাপই করতে চাইলেন না। তিনি চাইলেন শুধু রাজবন্দীদের কথা শুনতে। আপত্তি তুললেন প্রতিনিধিরা। তাঁরা বললেন, সাধারণ কয়েদি ও রাজবন্দীরা একই কারাগারে বাস করছে। তাঁদের একই ধরনের সমস্যা। সুতরাং সবার দাবি–দাওয়া নিয়েই কথা বলতে হবে। আইজিপি শুধু রাজবন্দীদের প্রতি তাঁর সহানুভূতির কথা জানালেন। আলোচনা ব্যর্থ হলো।
আইজিপি তখন জেল সুপার মি. বিলকে নির্দেশ দিলেন ওই প্রতিনিধিদের খাপড়া ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে নিতে হবে। নিতে হবে ১৪ নং সেলে। ১৪ নং সেল ছিল কনডেমনড সেল। জঘন্য ছিল সে সেলটি। আলোচনা করে খাপড়া ওয়ার্ডের বন্দীরা সিদ্ধান্ত নিলেন, এই ওয়ার্ড ছেড়ে ১৪ নং সেলে কেউ যাবে না।
এর পর এল ২৪ এপ্রিল। যথারীতি চা–রুটি দিয়ে নাশতা শেষ করেছেন বন্দীরা। ক্লান্ত। কুষ্টিয়ার কমরেড হানিফের সভাপতিত্বে আলোচনা চলছে। তিনি সবাইকে সংক্ষেপে বক্তব্য দিতে বলছেন। এ কথা বলার পরই শোনা গেল বুটের খটখট আওয়াজ। সুপার মি. বিলের সঙ্গে ২৫/৩০ জন মেট ও সিপাহী ঢুকে পড়ল খাপড়া ওয়ার্ডে। মি. বিল বললেন, ‘এখান থেকে কয়েকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে।’ কিছুটা কথা কাটাকাটির পর মি. বিল ওয়ার্ডের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। নিজেরাও সেখানে আটকা পড়ে যাবেন বুঝে দ্রুত তাঁরা বেরিয়ে পড়েন ওয়ার্ড থেকে। মি. বিল ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গিয়েই হুইসেল বাজান। তারপর ৪০ জনের মতো সিপাহি গরাদের ওপর দিকে লাঠিচার্জ করতে লাগল। এ সময় একজন মেট আবদুস শহীদের হাতে এমনভাবে লাঠি দিয়ে আঘাত করল যে, তাঁর তর্জনি কেটে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে থাকল।
বন্দীরা হাতের কাছে যা পাচ্ছিল, তাই ছুড়ে মেরে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু একটু পরই যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটে যাবে, সে কথা কেউ ভাবতেও পারেননি।
ওয়ার্ডের প্রায় ৫০টি জানালায় দেখা গেল বন্দুক। সিপাইরা নির্বিচারে গুলি করতে লাগল। কমরেড হানিফের শরীরে গুলি লেগেছে, তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা গেলেন। স্প্লিন্টার ঢুকে গিয়েছিল কমরেড শহীদের পায়ে। এর পর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এর মধ্যে যা ঘটার ঘটে গেছে। সাতজন মারা যান, ২৯ জন আহত হয়ে কোনোভাবে বেঁচে যান।
আবদুস শহীদ শিক্ষকতা করেছেন। লিখেছেন কয়েকটি বই। বিশ্বের নানা দেশের গণসংগীত নিয়েও রয়েছে তাঁর একটি বই। মানুষ তাঁর কাছে কোন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিল, তার একটি প্রমাণ এই বই।
চার.
আবদুস শহীদের দিকে চোখ রাখলে আমরা দেখতে পাব, তাঁর জন্ম ১৯১৭ সালে বরিশালের বানারিপাড়ার বলহার গ্রামে। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। কমিউনিস্টদের ছাত্র ফেডারেশনে কাজ করার পর তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতেও যোগ দেন। বরিশালের জোতদারদের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করেন। ১৯৪৮ সালে গ্রেপ্তার হলে তাঁকে রাজশাহী জেলে রাখা হয়। এখন শুনলে নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে অবাক লাগতে পারে, পার্টির নির্দেশে তিনি সরকারি চাকরি করেননি। কয়েকটি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি করেছিলেন মাত্র।
এখানে যা উহ্য থাকল, তা হলো জীবনে তিনি কখনো বিত্তবৈভবের মুখ দেখেননি। আজীবন দারিদ্র্যের মধ্যেই বসবাস করেছেন। তারই মধ্যে সংসারজীবন অতিবাহিত করেছেন। সাম্যবাদের প্রতি প্রবল আগ্রহ তাঁর সংসার জীবনকেও সংকটে ফেলেছে। কিন্তু আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে তিনি জীবন অতিবাহিত করে গেছেন।
এখানে আমরা একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করব। আবদুস শহীদের জন্মসালটির দিকে তাকালেই দেখতে পাব, রুশ বিপ্লব আর তাঁর জন্ম একই সালে। ১৯১৭ সাল এক সময় মুক্তিকামী মানুষের জন্য ছিল মুক্তির অন্য নাম। কিন্তু সে স্বপ্ন যে বাস্তব হলো না, এ বড় কষ্টের বিষয়।
পাঁচ.
বর্তমান বিশ্বে, এই বাজার অর্থনীতির যুগে একটি কথা তো পরিষ্কার—সংখ্যাই এখানে সবচেয়ে বড় ব্যাপার। মানবিকতাকে পাশে ঠেলে রেখে তার কথা ভুলে গেলে কিছুই আসে যায় না মানুষের। যে মূল্যবোধগুলোকে ওপরে তুলে ধরা হয়েছিল একসময়, তার আর দাম নেই। কেউই এখন আর ‘কমিউনিস্ট’ নাম শুনে শিহরিত হয় না। খুব কম মানুষই এখন ত্যাগকে জীবনের আদর্শ বলে ভাবতে পারে না। এই রকম একটি পটভূমিতে দাঁড়িয়ে আবদুস শহীদকে একজন বোকা মানুষ বলেই মনে হবে। আক্ষেপ হবে, কেন তিনি এ ধরনের একটি ছন্নছাড়া জীবনযাপন করে গেলেন। কেউ কেউ চায়ে চুমুক দিয়ে শ্লেষের সঙ্গে বলতেও পারবে, ‘জীবনটা অকারণে পানিতে ফেললেন ভদ্রলোক!’ কেউ আঁৎকে উঠে বলবে, ‘ওহো! ও তো এক রকম আত্মহত্যা!’
আমি তা মনে করি না। আমি সে সময়ের সাম্যবাদে বিশ্বাসী মানুষদের মনে করি কালের মহানায়ক। এখন তারা অনেকের কাছেই অবোধ্য, কিন্তু এটা তাঁদের কল্যাণ–চিন্তাকে কোনোভাবেই খাটো করতে পারে না। আমরা কমিউনিস্ট পার্টির নানা ভুল দেখেছি। আমলাতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মিশ্রণে কীভাবে একটি স্বপ্ন কবরে চলে যায়, তা দেখেছি। কিন্তু সঙ্গে তো এও দেখেছি, সত্যিকার স্বপ্নেরা মরে না। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে। সেখানে এখন পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর কল্যাণ রাষ্ট্রগুলোয় সমাজতন্ত্রের অনেক উপাদান যে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তা তো সেই স্বপ্নেরই ফসল।
তাই কমরেড আবদুস শহীদের কথা বলতে গেলে আমাকে একটি অসাধারণ মানবিক স্বপ্নের কথাই বলতে হয়। কোনো দ্বিধা ছাড়াই বলতে হয়, তিনি যা বিশ্বাস করেছেন, তা বুকে লালন করেছেন পরম যত্নে। জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ ছিল সেটাই। তানিয়া, আর জয়ার দিকে তাকালে আমার মনে হয়, তাঁর সেই স্বপ্নটা ওদের মধ্য দিয়েই বেঁচে আছে। দারিদ্র্যের চাবুক ওদের রিক্ত করতে চেয়েছিল। তা নিয়ে ওদের আক্ষেপও আছে হয়তো। বাবার প্রতি এক ধরনের অভিমানও হয়তো আছে। কিন্তু ওরা এও জানে, সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য বাসযোগ্য একটি পৃথিবী গড়তে চেয়েছিলেন যারা, তাঁদেরই একজন ছিলেন তাঁদের স্বপ্নবান বাবা। এই গর্ব সবাই করতে পারে না। এই অর্জনের জন্য কেউ যদি তানিয়া আর জয়াকে ঈর্ষা করে, আমি তাতে মোটেও অবাক হব না। আজ ৮ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুদিনে এই কথাগুলোই মনে এল।

আমার কেন যেন মনে হলো, তাঁকে আমি দেখেছি। তাঁকে আমি চিনতাম।
কিন্তু সময়ের হিসেব মেলাতে গিয়ে দেখি, তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। কারণ, ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে আমি পড়াশুনা শেষ করে রাশিয়া থেকে দেশে ফিরেছিলাম। ১৯৯৬ সালেরই সেপ্টেম্বরে কমরেড আবদুস শহীদ মারা গেছেন। ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে আমি সংবাদে আমার চাকরিজীবন শুরু করেছি। তাই তাঁকে দেখার কোনো উপায়ই ছিল না আমার।
তাহলে কেন মনে হচ্ছে, তাঁকে আমি দেখেছি?
ভেবে দেখলাম, এর মূল কারণ হয়তো তানিয়া। হ্যাঁ, আবদুস শহীদের মেয়ে তানিয়া। আমি যখন সংবাদ ছেড়ে মুক্তকণ্ঠে যোগ দিলাম, তখন সেখানে তানিয়াকে পেলাম সহকর্মী হিসেবে। ও ছিল কম্পোজ বিভাগে। সে বহু আগের কথা। কিন্তু এখনো মনে পড়ে, তানিয়ার কম্পোজে ভুল প্রায় থাকতই না। ওর করা কম্পোজ নির্দ্বিধায় প্রুফ রিডিং ছাড়াই পড়া যেত। সহকর্মী হাসান মামুনই সম্ভবত কমরেড আবদুস শহীদের মেয়ে হিসেবে তানিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তিনিই কমরেড সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছিলেন। হাসান মামুন কমরেড আবদুস শহীদকে চিনতেন। কারণ, দীর্ঘদিন তিনি সংবাদে চাকরি করেছেন। তিনি যে সময় সংবাদে ছিলেন, তখন প্রায়ই আবদুস শহীদ আসতেন সংবাদ অফিসে।
বামপন্থী রাজনীতির প্রতি ঝোঁক ছিল আমার। তাই খাপড়া ওয়ার্ডের হত্যাকাণ্ডের কথা অজানা থাকার কথা নয়। হাসান মামুন সে কথা মনে করিয়ে দিতেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের সহকর্মী তানিয়া একটা ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার বহন করছে।
তানিয়ার গুনপণার শেষ নেই। ওকে কখনো রাগ করতে দেখিনি। এক বছর সময়কালে যতবার দেখা হয়েছে, ওর হাসি মুখটাই দেখেছি।
খাপড়া ওয়ার্ড নিয়ে এরপরও কিছু কিছু পড়েছি। প্রথম আলোয় চাকরি শুরু করার পর জয়া শহীদের সঙ্গে পরিচয় হয়। তানিয়ার ছোট বোন জয়া। বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে নিউজ ছাপাতে কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীর সংবাদটি দিতে ও আসত। তানিয়ার মতো নয় ও, একটু চঞ্চল। অনর্গল কথা বলতে পারে। অনেক ব্যাপারে ওর আগ্রহ। বাবার স্মৃতিকে উজ্জ্বল রাখার জন্য জয়া ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
দুই.
আমরা এমন একজন মানুষ সম্পর্কে কথা বলতে যাচ্ছি, যিনি সাম্যবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। পার্টি করা অবস্থায় কিংবা পার্টি থেকে সরে যাওয়ার পরও তিনি সাম্যবাদকেই জীবনের অঙ্গ বলে মনে করতেন। একটা অদ্ভুত সময়ে জন্ম হয়েছিল কিছু অদ্ভুত মানুষের। আবদুস শহীদও ছিলেন সে সময়ের সে রকম একজন অদ্ভুত মানুষ। ‘অদ্ভুত’ শব্দটা কি ঠিক বলা হলো? এর চেয়ে ‘আশ্চর্য’ শব্দটিই বুঝি সুপ্রযুক্ত হতো। বর্তমান সময়ে এ ধরনের মানুষ নেই বললেই চলে।
এখন বুঝতে চেষ্টা করি, সাম্যবাদ কী করে পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মানুষের মনে জ্বালিয়েছিল দীপশিখা। প্রায় একটা শতাব্দিজুড়ে বিশ্বের মানুষ স্বপ্ন বুনেছে, সাম্যের কথা ভাবতে চেয়েছে। ভেবেছে, এই পৃথিবীতে সব মানুষ হবে সমান।
কিন্তু হঠাৎ এক ঝড়ে সবকিছুই যখন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল, তখন অনেকের জীবন থেকেই ঝরে গেল সে স্বপ্ন। আমার জানতে ইচ্ছে করে, কমরেড শহীদের মন থেকেও সে স্বপ্ন ঝরে গিয়েছিল কিনা। এ প্রশ্ন মনে আসার কারণ হলো, আমি তাঁর সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, তাতে সাম্যবাদের প্রতি তাঁর প্রবল নিষ্ঠারই প্রকাশ দেখেছি। তাই, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাপ্তি তাঁকে কতটা হতবিহ্বল করেছিল, তা আমার জানা দরকার। আমার জানা দরকার, বিপ্লবের ভিত্তিভূমি প্রস্তুত হওয়ার আগেই তুলনামূলকভাবে ইউরোপের অনগ্রসর একটি দেশে বিপ্লবের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনকে তিনি কী চোখে দেখতেন। পার্টির আমলাতন্ত্র যখন একটি স্বপ্নের টুঁটি টিপে ধরেছিল, তখন তা থেকে উত্তরণের কোনো দিশা কি ছিল তাঁর ভাবনায়?
এ প্রশ্নসহ আরও অনেক প্রশ্ন আছে আমার। শুধু আবদুস শহীদকে নয়, সে আমলের সব সৎ কমিউনিস্টের উদ্দেশেই প্রশ্নগুলো।
তিন.
আমরা যখন রাগ করে বলি, ‘যাও, জেলের ঘানি টানো’, তখন বুঝি না যে, সত্যিই একসময় বন্দীদের দিয়ে ঘানি টানানো হতো। গরুর কাজ করানো হতো মানুষকে দিয়ে। আধুনিককালে অবশ্য যন্ত্র এসে ঘানি টানার সমাপ্তি ঘটিয়েছে। কিন্তু যে মানসিকতায় মানুষকে দিয়ে ঘানি টানানো হতো, তাতে প্রবলভাবে বর্ণবাদকেও দেখি। ব্রিটিশেরা বিদায় নিয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ আত্মা তখনো ভর করে ছিল নব্যসৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের ঘাড়ে। সে সময় যে তিনটি ধারায় এ দেশের রাজনীতি বিকশিত হয়েছে—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ইসলামি—তারই একটি ধারার প্রতি সবচেয়ে বেশি রোষ ছিল পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের। সমাজতন্ত্রীদের সবচেয়ে ঘৃণার চোখে দেখত তারা। এ কথা তো ঠিক, কমিউনিস্ট বা লাল জুজুর ভয় সবসময়ই স্বৈরাচারী রাষ্ট্রগুলোকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখত। সে আমলের তরুণদের অনেকেই সাম্যবাদে দীক্ষা নিত। সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপ্লবের বিজয়ের পর কীভাবে একটি নতুন ধরনের সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, তা নিয়ে ভাবত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাম্যবাদীরা। বাংলাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কমরেড শহীদ সেই ধারার উজ্জ্বল এক প্রতিনিধি।
আবদুস শহীদের একটি অমর কীর্তি আছে ‘কারাস্মৃতি’ নামে। এ বইতে আমরা খাপড়া ওয়ার্ডের সেই বিভীষিকার দেখা পাই। পঞ্চাশ সালের ২৪ এপ্রিলের নৃশংসতায় যারা নিহত হয়েছিলেন, সেই সাতজন, বিজল সেন (রাজশাহী), হানিফ শেখ (কুষ্টিয়া), দেলওয়ার (কুষ্টিয়া), আনোয়ার (খুলনা), সুখেন ভট্টাচার্য (ময়মনসিংহ), সুধীন ধর (রংপুর), কম্পরাম সিং (দিনাজপুর)—এর তালিকায়ও জায়গা করে নিতে পারতেন আবদুস শহীদ। আমরা অনেকেই আমাদের ভাবনার আয়নায় দেখতে পাব—১৯৫০ সালের দিকে দেশের বহু কারাগারেই রাজবন্দীরা নিজেদের মর্যাদা রক্ষার জন্য লড়াই করছেন। রাজবন্দীদের পাশাপাশি সাধারণ কয়েদিরাও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
ব্রিটিশ আমলে গরুর বদলে কয়েদিদের দিয়ে ঘানি টানানো হতো। ভারি লোহার রড কাঁধে নিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে কয়েদিরা ঘানি টানছে—এ কথা মনে হলেই আমার স্মরণে আসে জয়নুল আবেদিনের আঁকা গরুর গাড়ি ঠেলার সেই অসাধারণ ছবিটির কথা। বহু হাজতি ছিলেন, যারা বছরের পর বছর জেলে বন্দী ছিলেন। যদিও স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেখানেও বিনা বিচারে বন্দী থাকার ঘটনা ঘটেই চলেছে। সে কথা থাক।
রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডের সেই নারকীয় ঘটনাটা অতি সংক্ষেপে এখানে বলে রাখি। একদিন যখন জেলের ভেতরে আইজিপি (প্রিজন) আমিরুদ্দীন আসেন, সেদিন কয়েদিদের ১২/১৪ জন প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে কয়েদিদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলেন। আমিরুদ্দীন সাধারণ কয়েদিদের বিষয়ে আলাপই করতে চাইলেন না। তিনি চাইলেন শুধু রাজবন্দীদের কথা শুনতে। আপত্তি তুললেন প্রতিনিধিরা। তাঁরা বললেন, সাধারণ কয়েদি ও রাজবন্দীরা একই কারাগারে বাস করছে। তাঁদের একই ধরনের সমস্যা। সুতরাং সবার দাবি–দাওয়া নিয়েই কথা বলতে হবে। আইজিপি শুধু রাজবন্দীদের প্রতি তাঁর সহানুভূতির কথা জানালেন। আলোচনা ব্যর্থ হলো।
আইজিপি তখন জেল সুপার মি. বিলকে নির্দেশ দিলেন ওই প্রতিনিধিদের খাপড়া ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে নিতে হবে। নিতে হবে ১৪ নং সেলে। ১৪ নং সেল ছিল কনডেমনড সেল। জঘন্য ছিল সে সেলটি। আলোচনা করে খাপড়া ওয়ার্ডের বন্দীরা সিদ্ধান্ত নিলেন, এই ওয়ার্ড ছেড়ে ১৪ নং সেলে কেউ যাবে না।
এর পর এল ২৪ এপ্রিল। যথারীতি চা–রুটি দিয়ে নাশতা শেষ করেছেন বন্দীরা। ক্লান্ত। কুষ্টিয়ার কমরেড হানিফের সভাপতিত্বে আলোচনা চলছে। তিনি সবাইকে সংক্ষেপে বক্তব্য দিতে বলছেন। এ কথা বলার পরই শোনা গেল বুটের খটখট আওয়াজ। সুপার মি. বিলের সঙ্গে ২৫/৩০ জন মেট ও সিপাহী ঢুকে পড়ল খাপড়া ওয়ার্ডে। মি. বিল বললেন, ‘এখান থেকে কয়েকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে।’ কিছুটা কথা কাটাকাটির পর মি. বিল ওয়ার্ডের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। নিজেরাও সেখানে আটকা পড়ে যাবেন বুঝে দ্রুত তাঁরা বেরিয়ে পড়েন ওয়ার্ড থেকে। মি. বিল ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গিয়েই হুইসেল বাজান। তারপর ৪০ জনের মতো সিপাহি গরাদের ওপর দিকে লাঠিচার্জ করতে লাগল। এ সময় একজন মেট আবদুস শহীদের হাতে এমনভাবে লাঠি দিয়ে আঘাত করল যে, তাঁর তর্জনি কেটে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে থাকল।
বন্দীরা হাতের কাছে যা পাচ্ছিল, তাই ছুড়ে মেরে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু একটু পরই যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটে যাবে, সে কথা কেউ ভাবতেও পারেননি।
ওয়ার্ডের প্রায় ৫০টি জানালায় দেখা গেল বন্দুক। সিপাইরা নির্বিচারে গুলি করতে লাগল। কমরেড হানিফের শরীরে গুলি লেগেছে, তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা গেলেন। স্প্লিন্টার ঢুকে গিয়েছিল কমরেড শহীদের পায়ে। এর পর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এর মধ্যে যা ঘটার ঘটে গেছে। সাতজন মারা যান, ২৯ জন আহত হয়ে কোনোভাবে বেঁচে যান।
আবদুস শহীদ শিক্ষকতা করেছেন। লিখেছেন কয়েকটি বই। বিশ্বের নানা দেশের গণসংগীত নিয়েও রয়েছে তাঁর একটি বই। মানুষ তাঁর কাছে কোন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিল, তার একটি প্রমাণ এই বই।
চার.
আবদুস শহীদের দিকে চোখ রাখলে আমরা দেখতে পাব, তাঁর জন্ম ১৯১৭ সালে বরিশালের বানারিপাড়ার বলহার গ্রামে। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। কমিউনিস্টদের ছাত্র ফেডারেশনে কাজ করার পর তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতেও যোগ দেন। বরিশালের জোতদারদের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করেন। ১৯৪৮ সালে গ্রেপ্তার হলে তাঁকে রাজশাহী জেলে রাখা হয়। এখন শুনলে নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে অবাক লাগতে পারে, পার্টির নির্দেশে তিনি সরকারি চাকরি করেননি। কয়েকটি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি করেছিলেন মাত্র।
এখানে যা উহ্য থাকল, তা হলো জীবনে তিনি কখনো বিত্তবৈভবের মুখ দেখেননি। আজীবন দারিদ্র্যের মধ্যেই বসবাস করেছেন। তারই মধ্যে সংসারজীবন অতিবাহিত করেছেন। সাম্যবাদের প্রতি প্রবল আগ্রহ তাঁর সংসার জীবনকেও সংকটে ফেলেছে। কিন্তু আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে তিনি জীবন অতিবাহিত করে গেছেন।
এখানে আমরা একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করব। আবদুস শহীদের জন্মসালটির দিকে তাকালেই দেখতে পাব, রুশ বিপ্লব আর তাঁর জন্ম একই সালে। ১৯১৭ সাল এক সময় মুক্তিকামী মানুষের জন্য ছিল মুক্তির অন্য নাম। কিন্তু সে স্বপ্ন যে বাস্তব হলো না, এ বড় কষ্টের বিষয়।
পাঁচ.
বর্তমান বিশ্বে, এই বাজার অর্থনীতির যুগে একটি কথা তো পরিষ্কার—সংখ্যাই এখানে সবচেয়ে বড় ব্যাপার। মানবিকতাকে পাশে ঠেলে রেখে তার কথা ভুলে গেলে কিছুই আসে যায় না মানুষের। যে মূল্যবোধগুলোকে ওপরে তুলে ধরা হয়েছিল একসময়, তার আর দাম নেই। কেউই এখন আর ‘কমিউনিস্ট’ নাম শুনে শিহরিত হয় না। খুব কম মানুষই এখন ত্যাগকে জীবনের আদর্শ বলে ভাবতে পারে না। এই রকম একটি পটভূমিতে দাঁড়িয়ে আবদুস শহীদকে একজন বোকা মানুষ বলেই মনে হবে। আক্ষেপ হবে, কেন তিনি এ ধরনের একটি ছন্নছাড়া জীবনযাপন করে গেলেন। কেউ কেউ চায়ে চুমুক দিয়ে শ্লেষের সঙ্গে বলতেও পারবে, ‘জীবনটা অকারণে পানিতে ফেললেন ভদ্রলোক!’ কেউ আঁৎকে উঠে বলবে, ‘ওহো! ও তো এক রকম আত্মহত্যা!’
আমি তা মনে করি না। আমি সে সময়ের সাম্যবাদে বিশ্বাসী মানুষদের মনে করি কালের মহানায়ক। এখন তারা অনেকের কাছেই অবোধ্য, কিন্তু এটা তাঁদের কল্যাণ–চিন্তাকে কোনোভাবেই খাটো করতে পারে না। আমরা কমিউনিস্ট পার্টির নানা ভুল দেখেছি। আমলাতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মিশ্রণে কীভাবে একটি স্বপ্ন কবরে চলে যায়, তা দেখেছি। কিন্তু সঙ্গে তো এও দেখেছি, সত্যিকার স্বপ্নেরা মরে না। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে। সেখানে এখন পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর কল্যাণ রাষ্ট্রগুলোয় সমাজতন্ত্রের অনেক উপাদান যে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তা তো সেই স্বপ্নেরই ফসল।
তাই কমরেড আবদুস শহীদের কথা বলতে গেলে আমাকে একটি অসাধারণ মানবিক স্বপ্নের কথাই বলতে হয়। কোনো দ্বিধা ছাড়াই বলতে হয়, তিনি যা বিশ্বাস করেছেন, তা বুকে লালন করেছেন পরম যত্নে। জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ ছিল সেটাই। তানিয়া, আর জয়ার দিকে তাকালে আমার মনে হয়, তাঁর সেই স্বপ্নটা ওদের মধ্য দিয়েই বেঁচে আছে। দারিদ্র্যের চাবুক ওদের রিক্ত করতে চেয়েছিল। তা নিয়ে ওদের আক্ষেপও আছে হয়তো। বাবার প্রতি এক ধরনের অভিমানও হয়তো আছে। কিন্তু ওরা এও জানে, সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য বাসযোগ্য একটি পৃথিবী গড়তে চেয়েছিলেন যারা, তাঁদেরই একজন ছিলেন তাঁদের স্বপ্নবান বাবা। এই গর্ব সবাই করতে পারে না। এই অর্জনের জন্য কেউ যদি তানিয়া আর জয়াকে ঈর্ষা করে, আমি তাতে মোটেও অবাক হব না। আজ ৮ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুদিনে এই কথাগুলোই মনে এল।

ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
৯ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
৯ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
৯ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অসংগতি, বৈষম্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। শিক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান, ছাত্র সংসদ, ছাত্ররাজনীতির গতিধারা এবং শিক্ষাব্যবস্থার নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা
মাসুদ রানা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল দাবি ছিল ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন’। গত দেড় বছরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীনতার পথে কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রশ্ন হলো, বৈষম্যহীনতা মূল রেখে, ডালপালা ছাঁটলে তো কোনো লাভ হবে না। বৈষম্য তো রয়ে গেছে আমাদের মূলে। একটা দেশে কীভাবে কওমি মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলা মিডিয়াম, বাংলার আবার ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম থাকতে পারে? আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি, এইসব শিক্ষাকাঠামোর কোথাও মিলনস্থান নেই। এভাবে আমরা আমাদের দেশের মানুষকে শিক্ষা, অর্থনীতি ও ধর্ম দিয়ে বিভাজিত করেছি। এ রকম একটা সমাজে বৈষম্যহীন করার জন্য যে ধরনের প্রজ্ঞা, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি লাগে, তার তো সব অনুপস্থিতি এখনো আছে।
সুতরাং আমি গত দেড় বছরে বাংলাদেশের কোনো পর্যায়েই বৈষম্যহীনতা তো দূরের কথা, বৈষম্য কমানোর চেষ্টা দেখিনি। গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, ধনীরা হয়তোবা আরও বেশি ধনী হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কোনো দিক দিয়েই কমেনি।
আগের সরকারের প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। বর্তমান সরকার যে পরিমার্জন এনেছে, তা শিক্ষাব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা কি রেখেছে?
আগের সরকার যা করেছে এবং বর্তমান সরকার যা করছে, আসলে তা হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আগের সরকার মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহার করেছে। আর এই সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই চব্বিশের আন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটা সময় লাগে। ইতিহাসকে আসলে একটা সময় দিতে হয়। এটা সত্যি সত্যি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কি না, সেটা সময়ের আলোকে আসলে রেকটিফাই ও টেস্ট করতে হয়। মানে ফিল্টারিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনই এটা দেওয়ার মানে হলো, আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান, ঠিক যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছিল। ইতিহাস তো ব্যবহার্য বিষয় না। ইতিহাস তো ধারণ করার বিষয়।
চব্বিশকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই হলো, আপনাদের কোনো লাভের বিষয় আছে। আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান টিস্যু পেপারের মতো। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের হীন স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করবেন, সেটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। কাকে বাদ দেওয়া হবে? রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দকে বাদ দেওয়া যায়? এঁদের কবিতা ও অন্যান্য লেখা দিয়ে ধর্ম ও জাতিভেদের ব্যাপারগুলো টেনে নিয়ে আসা ঠিক না। তাঁরা সময় দ্বারা পরীক্ষিত। ভালো মানের লোক দিয়ে একটা শিক্ষা কমিশন করা দরকার ছিল। কিন্তু এই সরকারের কি ম্যান্ডেট থাকতে পারে আমলাদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় যোগ বা বিয়োগ করার? তাদের এই যোগ ও বাদ দেওয়ার কোনোটাই সমর্থন করতে পারি না।
গত দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পটপরিবর্তনকে কীভাবে দেখেন?
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনীতি করবে, লেজুড়বৃত্তি করবে না। কোনো দলের জাতীয় নেতারা অন্যায় করলে সেটার প্রতিবাদ করবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে থাকবে, শিক্ষায় কীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করা যায়, গবেষণায় কীভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়; শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে ও এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবে এবং সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবে—দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন দলীয় বৃত্তের মধ্যে চলে যায়, তখন একটা দলের মধ্যে আটকে থাকলে তো তারা পুরো আকাশ দেখতে পাবে না। সে কারণে তারা সেই দলের কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডকে মাফ করে দেয়। আর অন্য দলের সামান্য অন্যায়কে বড় করে দেখে থাকে। এটা শিক্ষার্থীদের চরিত্র হওয়া উচিত না। এই আকাঙ্ক্ষাটা জুলাই আন্দোলনের পর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার ফিরে এসেছে। দলান্ধতা আবার বেড়ে
গেছে। কিন্তু সবার না। যেমন উগ্র ডানপন্থীদের কার্যক্রম প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেছে। কিন্তু এটাকে প্রতিহত করার জন্য তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে ডাকসুসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখেন?
ছাত্র সংসদের কিছু দায়িত্ব আছে। তারা কী করতে পারে এবং কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না, সেগুলোর সবকিছু লিখিত না থাকলেও অধিকাংশ জনের কাছে সেগুলোর একটা ধারণা আছে। ছাত্র সংসদের কাজ তো ছিন্নমূল মানুষকে লাঠির বাড়ি দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া না। ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয় বা কাউকে পেটানো না। তারা নিজেদের প্রশাসনের অংশ মনে করে। উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা আমাদেরই পার্ট।’ তা হতে পারে না।
ছাত্র সংসদের নির্ধারিত কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার বিষয়গুলো দেখভাল করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণাকে কীভাবে অগ্রসর করা যায়, কীভাবে লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করা যায়—এসব নিয়ে কাজ করা। উন্নত দেশের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা নতুন ছাত্র যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের প্রয়োজনে বাসস্ট্যান্ড ও বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে থাকে। কারণ, বিভিন্ন দেশ থেকে বা গ্রাম থেকে যখন শিক্ষার্থীরা আসে, নতুন একটা শহর চেনার কথা না। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের কাজ আসলে এগুলোই। শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্কলারশিপ পাবে, কে আর্থিকভাবে দুর্বল—এদের জন্যই তারা কাজ করবে। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে এরা যা করছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটা দলকে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী করা যায়, সেগুলোতে তাদের মূল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ ফিরে এসেছে?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই সরকার তো নির্দলীয়। এই নির্দলীয় সরকার কি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যিকারের একাডেমিকভাবে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছে? সব ক্ষেত্রেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই দলীয় উপাচার্যরা নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশাসনিক সব পদে প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ডিনদের দলীয়ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সরকার যা করেছে, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন যা করেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও কোনো পার্থক্য দেখা গেল না।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। তারা কি শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে?
এই দেশে সবদিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা। যেহেতু দেশের শিক্ষা ও সরকারি হাসপাতালের মান ভালো না, সেহেতু দেশের লক্ষ-কোটি টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী শুধু পড়ালেখার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। শুধু অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে না, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কোনো সরকার কি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছে, যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তার কত অংশ দেশে ফিরে আসছেন? এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা শেষ করে এই যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, এটাকেই বলা হয় ‘ব্রেন ড্রেন’। আমরা যাঁদের মেধাবী হিসেবে তৈরি করছি, তাঁদের সেবাটা পাচ্ছে না এ দেশ। তার চিত্রটা দেখা পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে হাঁটলে। শুধু তা-ই না, এ দেশে আরেকটা সমস্যা তৈরি হয়েছে—গত সাড়ে ১৫ বছরে থিয়েটার, টেলিভিশন, গানের শিল্পীসহ নানা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে গেছেন। সুতরাং শিক্ষক, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণে দেশে মেধাবীদের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
একটা দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা নির্দিষ্টসংখ্যক উচ্চ মানের মানুষের। এঁদের সংখ্যা কমে যাওয়া মানে শরীরের রক্তশূন্যতার মতো। আমরা এখন সেই রক্তশূন্যতার মধ্যে ভুগছি। প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার।
শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি ভালো করা না যায়, তাহলে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার কারণে বেকারের সংখ্যা প্রচুর। বেকারত্বের কারণেই দেশে নানা ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তাদের কাছে আমার আবেদন বা অনুরোধ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ তৈরি হয়। আগে উন্নত মানুষ তৈরি করতে হবে। কারণ, উন্নত মানুষের মাধ্যমেই কেবল উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। দালানকোঠা নির্মাণ করে দেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর এমন একটা দেশ পাওয়া যাবে না, যে দেশ শিক্ষায় উন্নত না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে পেরেছে। একটা উদাহরণ দিই। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে ১০০-এর মধ্যে ছিল না। সেই চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০-এর মধ্যে অবস্থান করছে। আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা দশের মধ্যে চলে আসবে। এই যে চলে আসা এবং তাদের যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, দুটিই হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল দাবি ছিল ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন’। গত দেড় বছরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীনতার পথে কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রশ্ন হলো, বৈষম্যহীনতা মূল রেখে, ডালপালা ছাঁটলে তো কোনো লাভ হবে না। বৈষম্য তো রয়ে গেছে আমাদের মূলে। একটা দেশে কীভাবে কওমি মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলা মিডিয়াম, বাংলার আবার ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম থাকতে পারে? আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি, এইসব শিক্ষাকাঠামোর কোথাও মিলনস্থান নেই। এভাবে আমরা আমাদের দেশের মানুষকে শিক্ষা, অর্থনীতি ও ধর্ম দিয়ে বিভাজিত করেছি। এ রকম একটা সমাজে বৈষম্যহীন করার জন্য যে ধরনের প্রজ্ঞা, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি লাগে, তার তো সব অনুপস্থিতি এখনো আছে।
সুতরাং আমি গত দেড় বছরে বাংলাদেশের কোনো পর্যায়েই বৈষম্যহীনতা তো দূরের কথা, বৈষম্য কমানোর চেষ্টা দেখিনি। গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, ধনীরা হয়তোবা আরও বেশি ধনী হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কোনো দিক দিয়েই কমেনি।
আগের সরকারের প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। বর্তমান সরকার যে পরিমার্জন এনেছে, তা শিক্ষাব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা কি রেখেছে?
আগের সরকার যা করেছে এবং বর্তমান সরকার যা করছে, আসলে তা হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আগের সরকার মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহার করেছে। আর এই সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই চব্বিশের আন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটা সময় লাগে। ইতিহাসকে আসলে একটা সময় দিতে হয়। এটা সত্যি সত্যি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কি না, সেটা সময়ের আলোকে আসলে রেকটিফাই ও টেস্ট করতে হয়। মানে ফিল্টারিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনই এটা দেওয়ার মানে হলো, আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান, ঠিক যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছিল। ইতিহাস তো ব্যবহার্য বিষয় না। ইতিহাস তো ধারণ করার বিষয়।
চব্বিশকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই হলো, আপনাদের কোনো লাভের বিষয় আছে। আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান টিস্যু পেপারের মতো। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের হীন স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করবেন, সেটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। কাকে বাদ দেওয়া হবে? রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দকে বাদ দেওয়া যায়? এঁদের কবিতা ও অন্যান্য লেখা দিয়ে ধর্ম ও জাতিভেদের ব্যাপারগুলো টেনে নিয়ে আসা ঠিক না। তাঁরা সময় দ্বারা পরীক্ষিত। ভালো মানের লোক দিয়ে একটা শিক্ষা কমিশন করা দরকার ছিল। কিন্তু এই সরকারের কি ম্যান্ডেট থাকতে পারে আমলাদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় যোগ বা বিয়োগ করার? তাদের এই যোগ ও বাদ দেওয়ার কোনোটাই সমর্থন করতে পারি না।
গত দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পটপরিবর্তনকে কীভাবে দেখেন?
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনীতি করবে, লেজুড়বৃত্তি করবে না। কোনো দলের জাতীয় নেতারা অন্যায় করলে সেটার প্রতিবাদ করবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে থাকবে, শিক্ষায় কীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করা যায়, গবেষণায় কীভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়; শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে ও এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবে এবং সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবে—দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন দলীয় বৃত্তের মধ্যে চলে যায়, তখন একটা দলের মধ্যে আটকে থাকলে তো তারা পুরো আকাশ দেখতে পাবে না। সে কারণে তারা সেই দলের কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডকে মাফ করে দেয়। আর অন্য দলের সামান্য অন্যায়কে বড় করে দেখে থাকে। এটা শিক্ষার্থীদের চরিত্র হওয়া উচিত না। এই আকাঙ্ক্ষাটা জুলাই আন্দোলনের পর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার ফিরে এসেছে। দলান্ধতা আবার বেড়ে
গেছে। কিন্তু সবার না। যেমন উগ্র ডানপন্থীদের কার্যক্রম প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেছে। কিন্তু এটাকে প্রতিহত করার জন্য তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে ডাকসুসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখেন?
ছাত্র সংসদের কিছু দায়িত্ব আছে। তারা কী করতে পারে এবং কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না, সেগুলোর সবকিছু লিখিত না থাকলেও অধিকাংশ জনের কাছে সেগুলোর একটা ধারণা আছে। ছাত্র সংসদের কাজ তো ছিন্নমূল মানুষকে লাঠির বাড়ি দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া না। ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয় বা কাউকে পেটানো না। তারা নিজেদের প্রশাসনের অংশ মনে করে। উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা আমাদেরই পার্ট।’ তা হতে পারে না।
ছাত্র সংসদের নির্ধারিত কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার বিষয়গুলো দেখভাল করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণাকে কীভাবে অগ্রসর করা যায়, কীভাবে লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করা যায়—এসব নিয়ে কাজ করা। উন্নত দেশের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা নতুন ছাত্র যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের প্রয়োজনে বাসস্ট্যান্ড ও বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে থাকে। কারণ, বিভিন্ন দেশ থেকে বা গ্রাম থেকে যখন শিক্ষার্থীরা আসে, নতুন একটা শহর চেনার কথা না। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের কাজ আসলে এগুলোই। শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্কলারশিপ পাবে, কে আর্থিকভাবে দুর্বল—এদের জন্যই তারা কাজ করবে। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে এরা যা করছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটা দলকে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী করা যায়, সেগুলোতে তাদের মূল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ ফিরে এসেছে?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই সরকার তো নির্দলীয়। এই নির্দলীয় সরকার কি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যিকারের একাডেমিকভাবে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছে? সব ক্ষেত্রেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই দলীয় উপাচার্যরা নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশাসনিক সব পদে প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ডিনদের দলীয়ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সরকার যা করেছে, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন যা করেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও কোনো পার্থক্য দেখা গেল না।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। তারা কি শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে?
এই দেশে সবদিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা। যেহেতু দেশের শিক্ষা ও সরকারি হাসপাতালের মান ভালো না, সেহেতু দেশের লক্ষ-কোটি টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী শুধু পড়ালেখার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। শুধু অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে না, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কোনো সরকার কি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছে, যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তার কত অংশ দেশে ফিরে আসছেন? এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা শেষ করে এই যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, এটাকেই বলা হয় ‘ব্রেন ড্রেন’। আমরা যাঁদের মেধাবী হিসেবে তৈরি করছি, তাঁদের সেবাটা পাচ্ছে না এ দেশ। তার চিত্রটা দেখা পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে হাঁটলে। শুধু তা-ই না, এ দেশে আরেকটা সমস্যা তৈরি হয়েছে—গত সাড়ে ১৫ বছরে থিয়েটার, টেলিভিশন, গানের শিল্পীসহ নানা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে গেছেন। সুতরাং শিক্ষক, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণে দেশে মেধাবীদের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
একটা দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা নির্দিষ্টসংখ্যক উচ্চ মানের মানুষের। এঁদের সংখ্যা কমে যাওয়া মানে শরীরের রক্তশূন্যতার মতো। আমরা এখন সেই রক্তশূন্যতার মধ্যে ভুগছি। প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার।
শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি ভালো করা না যায়, তাহলে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার কারণে বেকারের সংখ্যা প্রচুর। বেকারত্বের কারণেই দেশে নানা ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তাদের কাছে আমার আবেদন বা অনুরোধ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ তৈরি হয়। আগে উন্নত মানুষ তৈরি করতে হবে। কারণ, উন্নত মানুষের মাধ্যমেই কেবল উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। দালানকোঠা নির্মাণ করে দেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর এমন একটা দেশ পাওয়া যাবে না, যে দেশ শিক্ষায় উন্নত না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে পেরেছে। একটা উদাহরণ দিই। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে ১০০-এর মধ্যে ছিল না। সেই চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০-এর মধ্যে অবস্থান করছে। আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা দশের মধ্যে চলে আসবে। এই যে চলে আসা এবং তাদের যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, দুটিই হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।

সহকর্মী হাসান মামুনই সম্ভবত কমরেড আবদুস শহীদের মেয়ে হিসেবে তানিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তিনিই কমরেড সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছিলেন। হাসান মামুন কমরেড আবদুস শহীদকে চিনতেন। কারণ, দীর্ঘদিন তিনি সংবাদে চাকরি করেছেন। তিনি যে সময় সংবাদে ছিলেন, তখন প্রায়ই আবদুস শহীদ আসতেন সংবাদ অফিসে।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
৯ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
৯ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগেসৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন—নির্বাচন হবে। কবে হবে? সে উত্তরটাও সুনির্ধারিতভাবে পাওয়া গেছে বছরের শেষ দিকে এসে। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। আকাঙ্ক্ষিত তফসিল। সারা বছর যাঁরা ‘নির্বাচন কবে হবে’—এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করেছেন, তাঁরা নির্বাচনের তারিখটা জেনে নিশ্চয়ই স্বস্তি পেয়েছেন। এবার বহুল আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনটা আসছে বছর ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেই ব্যাপারটা সোনায় সোহাগা হবে!
ভবিষ্যতের কথা থাক। লেখাটা আসলে এ বছরের আলোচিত ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দিতে ছাপা হয়েছে, যেন অতীতের ভুল শুধরে নতুন বছরে আমরা ভালো কিছু করে এর সুফল ভোগ করতে পারি। ২০২৫ সালে এত ঘটনা ঘটে গেছে যে একে ‘ঘটনার ঘনঘটার বছর’ বললে নিশ্চয়ই দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ হবে না! দেখুন তো পাঠক, নিচের ঘটনাগুলো আপনার মনে পড়ছে কি না।
২. ২০২৫। সালটা ভীষণ উদ্বেগ নিয়ে কেটেছে অনেকের। শিশু ধর্ষণ থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি—কী হয়নি এ বছর? অপরাধ যে কয়েক গুণ বেড়েছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা মাগুরার আট বছর বয়সী শিশুর ধর্ষণের বিচার চেয়েছিলাম। বছরের শুরুতে সেই শিশুর ওপর নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল পুরো দেশ। তবু ঢাকার কেরানীগঞ্জে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। রাঙামাটিতে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে ষাট বছরের বৃদ্ধ। ঝিনাইদহে চকলেটের প্রলোভনে ধর্ষণের শিকার হয় চার বছর বয়সী শিশু।
৩. ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সোহাগ নামের এক ব্যক্তির মাথা থেঁতলে মেরে ফেলা হয় প্রকাশ্য দিবালোকে। এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছিল নেট দুনিয়ায়। ফুটেজটা কোনো দুঃস্বপ্ন হলেই ভালো হতো। কিন্তু না, বাস্তব ঘটনার সাক্ষী এটি। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় একই রকমভাবে একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল পুরান ঢাকার ওয়ারীতে। এলাকাবাসী সেদিন সাহসের পরিচয় দিয়ে রুখে দিয়েছেন হামলাকারীকে। চাঁদাবাজি নিয়ে মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল বলে দেশের মানুষ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিল তখন।
চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বছরের শুরুর দিকেই এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) যুগ্ম সদস্যসচিব এহতেশামুল হক হামলার শিকার হন। পরে বেরিয়ে আসে এই হামলার পেছনে হাত রয়েছে চব্বিশের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে জামিনে ছাড়া পাওয়া দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর। কারাগারে থাকতেই যেখানে তাঁরা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা যায়, সেখানে তাঁদের জামিন দেওয়া কতটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে, তা ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই জনগণ নির্ধারণ করে ফেলেছে।
৪. সোনার দাম যেভাবে এ বছর বেড়েছে, তা এক ব্যাপার বটে! এর চেয়েও বড় ব্যাপার ঘটে গিয়েছিল যখন এক ব্যবসায়ী নিজের সোনার দোকানে নিজেই ডাকাতি করিয়ে ‘কট’ খেয়ে যান। মানিকগঞ্জ শহরের স্বর্ণকারপট্টি এলাকায় শুভ দাস লোক ভাড়া করে নিজের দোকানে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে গ্রাহকদের স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি তাঁর এই চালাকি।
তবে রাজধানীর বনশ্রীর ঘটনাটি দুঃখজনক ছিল। আনোয়ার হোসেন নামে এক সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে ১৬০ ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছয়-সাতজন দুর্বৃত্ত।
৫. আপনারা হয়তো কোনো কমেডি সিনেমায় দেখে থাকবেন, ছিনতাইকারী শুধু টাকাপয়সা বা ফোন ছিনতাই করে না, গায়ের জামা-পায়ের জুতা সবই নিয়ে চলে যায়। রাজধানীর শ্যামলীতে সত্যিই যখন এ রকম একটি ঘটনা ঘটল, তখন এর সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি জব্দ করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও চাপাতি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে মেলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ছিনতাইকারী চক্রটি চাপাতি ও মোটরসাইকেল ভাড়া দেয় মাঠপর্যায়ে ছিনতাইকারীদের। প্রতিদিন ঢাকার একাধিক এলাকায় চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ছিনতাই কার্যক্রম চালায় চক্রটি। চাপাতি-মোটরসাইকেলের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে হয় না তাদের, ছিনতাই শেষে মালপত্র বিক্রির পর ভাড়া দিতে হয়। এমনকি ছিনতাইয়ের মালপত্র বিক্রিও করতে হয় ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতাদের কাছে। ছিনতাই করার এক আধুনিক প্যাকেজ বটে!
বছরজুড়ে মোহাম্মদপুর এলাকাটিও কিন্তু ছিনতাইয়ের ঘটনার জন্য এক আতঙ্কের জায়গা হয়ে রয়েছে। যখন-তখন চাপাতি নিয়ে তেড়ে আসা তরুণেরা এলাকাটির ত্রাস। পুলিশ তৎপরতা না বাড়ালে সেখানকার অপরাধ চলতেই থাকবে।
৬. বছরের আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড ছিল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যাকাণ্ড। শুধু হাসির ‘অপরাধে’ প্রাণ দিতে হয়েছিল তাঁকে।
বাড্ডায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় বিএনপির নেতা কামরুল আহসান সাধনকে। পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম লতিফপুর এলাকায় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পল্লবীতে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে প্রবেশ করে মুখোশ ও হেলমেট পরা সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়াকে। চট্টগ্রামে চলন্ত প্রাইভেট কার থামিয়ে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে বিএনপি-সমর্থিত এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক কারণ নাকি ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে—সবই জটিল রহস্যে মুড়ে আছে।
লক্ষ্মীপুরে বিএনপির নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তাঁর দুই সন্তানের মৃত্যু পুরো দেশকেই মর্মাহত করেছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে ও লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা বর্বরতার সব মাত্রা যেন ছাড়িয়ে গেছে। কবর থেকে উঠিয়ে নুরাল পাগলার লাশ পুড়িয়ে তথাকথিত মব কী অর্জন করতে পেরেছে, তা এক রহস্য। মবের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সংবাদমাধ্যমও। একটুর জন্য রক্ষা পেয়েছে সংবাদকর্মীরা।
নাটকীয় কায়দায় যেভাবে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে দিনদুপুরে গুলি করা হলো, তা এই বছরটির জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যুর পর সারা দেশ এখনো জনরোষে ফুঁসছে, বিচার চাইছে সবাই। কিন্তু বিচার কার হবে? পলাতক হত্যাকারীকে অবিলম্বে খুঁজে বের করা হোক। তবেই না হবে বিচার।
৭. ২০২৫ সালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনা কোনটি? এর উত্তরে বলতে হয়—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর দেশে ফিরেছেন। ফিরেই মাটির স্পর্শ নিয়েছেন। জানিয়েছেন দেশ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা। তাঁকে সংবর্ধনা দিতে মানুষের যে ঢল নেমেছিল ঢাকার পূর্বাচলের পথে, তা প্রত্যাবর্তনের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য বলে মেনে নিতে হয়।
আবার সেই নির্বাচনে ফিরে আসা যাক। তারেক রহমানের আগমনে দেশের রাজনৈতিক পট কতটা আর কীভাবে পরিবর্তন হবে, তা সময় বলে দেবে। নির্বাচনের ওপর কেমন আর কতটা প্রভাব পড়বে, তা-ও সময়ই বলে দেবে। কিন্তু নির্বাচনে যাঁরা জয়ী হবেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বলতে পারবেন এ বছর যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা কিংবা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা নতুন বছরে ঠেকানো যাবে কি না। কারণ,
দেশের হাল যাঁরা ধরবেন, দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা তো তাঁদেরই হাতে থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তাঁরা থাকবেন জনগণের হৃদয়ে। হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া কি খুব কঠিন?
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন—নির্বাচন হবে। কবে হবে? সে উত্তরটাও সুনির্ধারিতভাবে পাওয়া গেছে বছরের শেষ দিকে এসে। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। আকাঙ্ক্ষিত তফসিল। সারা বছর যাঁরা ‘নির্বাচন কবে হবে’—এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করেছেন, তাঁরা নির্বাচনের তারিখটা জেনে নিশ্চয়ই স্বস্তি পেয়েছেন। এবার বহুল আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনটা আসছে বছর ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেই ব্যাপারটা সোনায় সোহাগা হবে!
ভবিষ্যতের কথা থাক। লেখাটা আসলে এ বছরের আলোচিত ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দিতে ছাপা হয়েছে, যেন অতীতের ভুল শুধরে নতুন বছরে আমরা ভালো কিছু করে এর সুফল ভোগ করতে পারি। ২০২৫ সালে এত ঘটনা ঘটে গেছে যে একে ‘ঘটনার ঘনঘটার বছর’ বললে নিশ্চয়ই দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ হবে না! দেখুন তো পাঠক, নিচের ঘটনাগুলো আপনার মনে পড়ছে কি না।
২. ২০২৫। সালটা ভীষণ উদ্বেগ নিয়ে কেটেছে অনেকের। শিশু ধর্ষণ থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি—কী হয়নি এ বছর? অপরাধ যে কয়েক গুণ বেড়েছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা মাগুরার আট বছর বয়সী শিশুর ধর্ষণের বিচার চেয়েছিলাম। বছরের শুরুতে সেই শিশুর ওপর নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল পুরো দেশ। তবু ঢাকার কেরানীগঞ্জে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। রাঙামাটিতে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে ষাট বছরের বৃদ্ধ। ঝিনাইদহে চকলেটের প্রলোভনে ধর্ষণের শিকার হয় চার বছর বয়সী শিশু।
৩. ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সোহাগ নামের এক ব্যক্তির মাথা থেঁতলে মেরে ফেলা হয় প্রকাশ্য দিবালোকে। এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছিল নেট দুনিয়ায়। ফুটেজটা কোনো দুঃস্বপ্ন হলেই ভালো হতো। কিন্তু না, বাস্তব ঘটনার সাক্ষী এটি। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় একই রকমভাবে একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল পুরান ঢাকার ওয়ারীতে। এলাকাবাসী সেদিন সাহসের পরিচয় দিয়ে রুখে দিয়েছেন হামলাকারীকে। চাঁদাবাজি নিয়ে মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল বলে দেশের মানুষ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিল তখন।
চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বছরের শুরুর দিকেই এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) যুগ্ম সদস্যসচিব এহতেশামুল হক হামলার শিকার হন। পরে বেরিয়ে আসে এই হামলার পেছনে হাত রয়েছে চব্বিশের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে জামিনে ছাড়া পাওয়া দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর। কারাগারে থাকতেই যেখানে তাঁরা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা যায়, সেখানে তাঁদের জামিন দেওয়া কতটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে, তা ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই জনগণ নির্ধারণ করে ফেলেছে।
৪. সোনার দাম যেভাবে এ বছর বেড়েছে, তা এক ব্যাপার বটে! এর চেয়েও বড় ব্যাপার ঘটে গিয়েছিল যখন এক ব্যবসায়ী নিজের সোনার দোকানে নিজেই ডাকাতি করিয়ে ‘কট’ খেয়ে যান। মানিকগঞ্জ শহরের স্বর্ণকারপট্টি এলাকায় শুভ দাস লোক ভাড়া করে নিজের দোকানে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে গ্রাহকদের স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি তাঁর এই চালাকি।
তবে রাজধানীর বনশ্রীর ঘটনাটি দুঃখজনক ছিল। আনোয়ার হোসেন নামে এক সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে ১৬০ ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছয়-সাতজন দুর্বৃত্ত।
৫. আপনারা হয়তো কোনো কমেডি সিনেমায় দেখে থাকবেন, ছিনতাইকারী শুধু টাকাপয়সা বা ফোন ছিনতাই করে না, গায়ের জামা-পায়ের জুতা সবই নিয়ে চলে যায়। রাজধানীর শ্যামলীতে সত্যিই যখন এ রকম একটি ঘটনা ঘটল, তখন এর সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি জব্দ করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও চাপাতি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে মেলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ছিনতাইকারী চক্রটি চাপাতি ও মোটরসাইকেল ভাড়া দেয় মাঠপর্যায়ে ছিনতাইকারীদের। প্রতিদিন ঢাকার একাধিক এলাকায় চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ছিনতাই কার্যক্রম চালায় চক্রটি। চাপাতি-মোটরসাইকেলের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে হয় না তাদের, ছিনতাই শেষে মালপত্র বিক্রির পর ভাড়া দিতে হয়। এমনকি ছিনতাইয়ের মালপত্র বিক্রিও করতে হয় ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতাদের কাছে। ছিনতাই করার এক আধুনিক প্যাকেজ বটে!
বছরজুড়ে মোহাম্মদপুর এলাকাটিও কিন্তু ছিনতাইয়ের ঘটনার জন্য এক আতঙ্কের জায়গা হয়ে রয়েছে। যখন-তখন চাপাতি নিয়ে তেড়ে আসা তরুণেরা এলাকাটির ত্রাস। পুলিশ তৎপরতা না বাড়ালে সেখানকার অপরাধ চলতেই থাকবে।
৬. বছরের আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড ছিল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যাকাণ্ড। শুধু হাসির ‘অপরাধে’ প্রাণ দিতে হয়েছিল তাঁকে।
বাড্ডায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় বিএনপির নেতা কামরুল আহসান সাধনকে। পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম লতিফপুর এলাকায় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পল্লবীতে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে প্রবেশ করে মুখোশ ও হেলমেট পরা সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়াকে। চট্টগ্রামে চলন্ত প্রাইভেট কার থামিয়ে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে বিএনপি-সমর্থিত এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক কারণ নাকি ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে—সবই জটিল রহস্যে মুড়ে আছে।
লক্ষ্মীপুরে বিএনপির নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তাঁর দুই সন্তানের মৃত্যু পুরো দেশকেই মর্মাহত করেছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে ও লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা বর্বরতার সব মাত্রা যেন ছাড়িয়ে গেছে। কবর থেকে উঠিয়ে নুরাল পাগলার লাশ পুড়িয়ে তথাকথিত মব কী অর্জন করতে পেরেছে, তা এক রহস্য। মবের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সংবাদমাধ্যমও। একটুর জন্য রক্ষা পেয়েছে সংবাদকর্মীরা।
নাটকীয় কায়দায় যেভাবে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে দিনদুপুরে গুলি করা হলো, তা এই বছরটির জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যুর পর সারা দেশ এখনো জনরোষে ফুঁসছে, বিচার চাইছে সবাই। কিন্তু বিচার কার হবে? পলাতক হত্যাকারীকে অবিলম্বে খুঁজে বের করা হোক। তবেই না হবে বিচার।
৭. ২০২৫ সালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনা কোনটি? এর উত্তরে বলতে হয়—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর দেশে ফিরেছেন। ফিরেই মাটির স্পর্শ নিয়েছেন। জানিয়েছেন দেশ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা। তাঁকে সংবর্ধনা দিতে মানুষের যে ঢল নেমেছিল ঢাকার পূর্বাচলের পথে, তা প্রত্যাবর্তনের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য বলে মেনে নিতে হয়।
আবার সেই নির্বাচনে ফিরে আসা যাক। তারেক রহমানের আগমনে দেশের রাজনৈতিক পট কতটা আর কীভাবে পরিবর্তন হবে, তা সময় বলে দেবে। নির্বাচনের ওপর কেমন আর কতটা প্রভাব পড়বে, তা-ও সময়ই বলে দেবে। কিন্তু নির্বাচনে যাঁরা জয়ী হবেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বলতে পারবেন এ বছর যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা কিংবা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা নতুন বছরে ঠেকানো যাবে কি না। কারণ,
দেশের হাল যাঁরা ধরবেন, দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা তো তাঁদেরই হাতে থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তাঁরা থাকবেন জনগণের হৃদয়ে। হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া কি খুব কঠিন?
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

সহকর্মী হাসান মামুনই সম্ভবত কমরেড আবদুস শহীদের মেয়ে হিসেবে তানিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তিনিই কমরেড সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছিলেন। হাসান মামুন কমরেড আবদুস শহীদকে চিনতেন। কারণ, দীর্ঘদিন তিনি সংবাদে চাকরি করেছেন। তিনি যে সময় সংবাদে ছিলেন, তখন প্রায়ই আবদুস শহীদ আসতেন সংবাদ অফিসে।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
৯ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
৯ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে। এই চিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হলো নির্বাচনের ব্যয়।
সুস্থ গণতন্ত্রের প্রধান অন্তরায় হলো টাকার রাজনীতি। নির্বাচনী ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতি রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। কারণ, নির্বাচনের পেছনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, বিজয়ীরা ক্ষমতায় গিয়ে সুদে-আসলে সেই অর্থ জনগণের পকেট থেকেই আদায় করার চেষ্টা করেন।
নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন অনেকগুলো যুগোপযোগী সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) এই সুপারিশগুলোর একটি বড় অংশই উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন করে নিবিড় নজরদারি করার প্রস্তাবটি গৃহীত না হওয়া একটি বড় ক্ষতির জায়গা তৈরি করতে পারে ভবিষ্যতে।
‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের’ মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধির সংস্কৃতি আগে থেকেই শিকড় গেড়ে আছে। যখন একজন প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করে মনোনয়ন কেনেন এবং নির্বাচনে লড়েন, তখন জনসেবা নয় বরং ‘বিনিয়োগের মুনাফা’ তোলাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই সংস্কৃতি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মূল উৎস।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। এসব বিষয় উপেক্ষার কারণে ভবিষ্যতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যেরও কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে বুঝতে হবে যে, লোকদেখানো সংস্কার দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছে, তা কেবল কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রায়ণ এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
দেশের সচেতন মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এবার হয়তো নির্বাচনী ব্যবস্থার একটা আমূল সংস্কার করা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের বৈঠকে বিভিন্ন দলের নেতাদের মতামত নেওয়ার জন্য চা-নাশতা বাবদ রাষ্ট্রের টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বৈঠকগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল যে আসেনি, তা পরবর্তী সময়ে কমিশনের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট হওয়া গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিরসন করা সম্ভব না হলে নির্বাচনের পরে সেগুলো নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার কোনো বিলাসিতার বিষয় নয়। এটি রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করার অপরিহার্য শর্ত। সরকারকে নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে এবং সংস্কার কমিশনের বাকি সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে একটি প্রকৃত অর্থবহ পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। অন্যথায় ভোটের নামে অর্থের খেলা চলবেই এবং দুর্নীতি নামক দানবটি আমাদের শাসনব্যবস্থাকে কুরে কুরে খেতে থাকবে।

সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে। এই চিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হলো নির্বাচনের ব্যয়।
সুস্থ গণতন্ত্রের প্রধান অন্তরায় হলো টাকার রাজনীতি। নির্বাচনী ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতি রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। কারণ, নির্বাচনের পেছনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, বিজয়ীরা ক্ষমতায় গিয়ে সুদে-আসলে সেই অর্থ জনগণের পকেট থেকেই আদায় করার চেষ্টা করেন।
নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন অনেকগুলো যুগোপযোগী সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) এই সুপারিশগুলোর একটি বড় অংশই উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন করে নিবিড় নজরদারি করার প্রস্তাবটি গৃহীত না হওয়া একটি বড় ক্ষতির জায়গা তৈরি করতে পারে ভবিষ্যতে।
‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের’ মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধির সংস্কৃতি আগে থেকেই শিকড় গেড়ে আছে। যখন একজন প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করে মনোনয়ন কেনেন এবং নির্বাচনে লড়েন, তখন জনসেবা নয় বরং ‘বিনিয়োগের মুনাফা’ তোলাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই সংস্কৃতি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মূল উৎস।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। এসব বিষয় উপেক্ষার কারণে ভবিষ্যতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যেরও কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে বুঝতে হবে যে, লোকদেখানো সংস্কার দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছে, তা কেবল কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রায়ণ এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
দেশের সচেতন মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এবার হয়তো নির্বাচনী ব্যবস্থার একটা আমূল সংস্কার করা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের বৈঠকে বিভিন্ন দলের নেতাদের মতামত নেওয়ার জন্য চা-নাশতা বাবদ রাষ্ট্রের টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বৈঠকগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল যে আসেনি, তা পরবর্তী সময়ে কমিশনের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট হওয়া গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিরসন করা সম্ভব না হলে নির্বাচনের পরে সেগুলো নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার কোনো বিলাসিতার বিষয় নয়। এটি রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করার অপরিহার্য শর্ত। সরকারকে নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে এবং সংস্কার কমিশনের বাকি সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে একটি প্রকৃত অর্থবহ পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। অন্যথায় ভোটের নামে অর্থের খেলা চলবেই এবং দুর্নীতি নামক দানবটি আমাদের শাসনব্যবস্থাকে কুরে কুরে খেতে থাকবে।

সহকর্মী হাসান মামুনই সম্ভবত কমরেড আবদুস শহীদের মেয়ে হিসেবে তানিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তিনিই কমরেড সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছিলেন। হাসান মামুন কমরেড আবদুস শহীদকে চিনতেন। কারণ, দীর্ঘদিন তিনি সংবাদে চাকরি করেছেন। তিনি যে সময় সংবাদে ছিলেন, তখন প্রায়ই আবদুস শহীদ আসতেন সংবাদ অফিসে।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
৯ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
৯ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

সহকর্মী হাসান মামুনই সম্ভবত কমরেড আবদুস শহীদের মেয়ে হিসেবে তানিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তিনিই কমরেড সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছিলেন। হাসান মামুন কমরেড আবদুস শহীদকে চিনতেন। কারণ, দীর্ঘদিন তিনি সংবাদে চাকরি করেছেন। তিনি যে সময় সংবাদে ছিলেন, তখন প্রায়ই আবদুস শহীদ আসতেন সংবাদ অফিসে।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
৯ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
৯ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
৯ ঘণ্টা আগে