পাভেল পার্থ

রবীন্দ্রনাথের ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ গানটি কী আমরা মনে রেখেছি? আমরা কী জানি আমাদের দেশের মাটির আজ কী হাল, কী দশা? আমরা কি মাটির জীবন বাঁচিয়ে রাখছি? অপরিকল্পিত উন্নয়ন, দশাসই নগরায়ণ কিংবা রাসায়নিক কৃষির দাপটে মাটি আজ রক্তাক্ত, দূষিত ও দখল হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আমাদের জনপদে ‘মাটি’ কেবল মাটি নয়, মাটি এক জীবনবোধের রূপকল্প। সহজিয়া সাধনার জটিল বয়ান। আমরা যখন বলি, ‘মাটির কাছে ফেরা’ কিংবা ‘জন্মমাটি’ কিংবা ‘মাটির মতন মানুষ’ তখন আমরা ভিন্ন ভিন্ন জীবনের ব্যঞ্জনা বুঝি। আমাদের সামনে হাজির হয় বেশ কিছু দার্শনিক ও রাজনৈতিক দৃশ্যকল্প। এই জনপদ বিশ্বাস করে—মাটির প্রাণ আছে। মাটি মানুষসহ প্রাণসত্তাকে বাঁচিয়ে রাখার রসদ জোগায়। মাটি জোগায় মুখের আহার। কিন্তু আমরা কি মাটির আহার ঠিক রেখেছি? অধিক ফসল ফলানোর নামে আমরা মাটির বুকে ঢেলেছি নির্দয় বিষের জঞ্জাল। মাটির প্রাণ আজ যন্ত্রণায় ছটফট করে। এমনকি নিদারুণভাবে জীবন্ত মাটি প্রতিদিন আমরা তুলে দিচ্ছি ইটের ভাটায়। মাটিকে আর মাটি রাখিনি। মাটির সংসার তছনছ করে দিয়েছি।
এক দলা মাটি কেবলমাত্র একদলা মাটি নয়। মৃত্তিকা-বাস্তুসংস্থান এক জটিল সংসার। এখানে মাটির রাসায়নিক উপাদান আছে, অণুজীব আছে, ঘুমিয়ে থাকা বীজ দানা আছে, আছে কত সহস্র প্রাণপ্রজাতি। তথাকথিত সবুজ বিপ্লব মাটির এই সংসারকে বুঝতে চায়নি। এক দলা মৃত্তিকা-পরিবারের সকল সদস্যকে খুন করে কেবল মাটিকে বিবেচনা করেছে শস্য-উৎপাদনের একটি ক্ষেত্র হিসেবে। এভাবে দিনের পর দিন মাটি আজ সব হারিয়ে শুকিয়ে খটখটে হয়ে আছে। এমনকি আমরা মাটির আর্দ্রতা, মাটির জলকণা, মাটির হিউমাস কোনো কিছুই ঠিক রাখিনি। মাটির তলার পানি মেশিন দিয়ে টেনে টেনে তুলে আজ মাটির শরীর শুকিয়ে ফেলেছি। এভাবেই আমরা একতরফাভাবে কেবলমাত্র মানুষের জন্য খাদ্য হিসেবে কেবল ধান বা কিছু দানা জাতীয় ফসলের বাণিজ্যিক উৎপাদন করতে পেরেছি। মাটির ওপর এত অনাচার-অত্যাচার প্রশ্নহীনভাবে আমরা করে চলেছি। কারণ এক ঐতিহাসিক ঔপনিবেশিক মনস্তত্ত্ব এখনো আমরা ধারণ করে রেখেছি। আমরা এখনো মনে করি ‘মাটি সর্বংসহা’। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। কারণ, মাটির হিউমাস কমেছে, মাটির পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র বদলে গেছে, মাটির উৎপাদনশীলতার মাত্রা ও হার বদলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ডাকসাইটে এসব উন্নয়ন বাহাদুরির পাশাপাশি আমাদের মাটি-জগৎ আজ ‘জলবায়ু সংকটের’ কারণেও দাঁড়িয়ে আছে এক গভীর বিপদের মুখোমুখি। দেশজুড়ে জলবায়ু বিপর্যয়ের নানা অভিঘাত ও নিদারুণ প্রভাব পড়ছে মৃত্তিকা-বাস্তুতন্ত্রে। বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি আজ তীব্র খরা ও নির্দয় শুষ্কতায় তড়পাচ্ছে। পাহাড়ের মাটি অরণ্যের বিস্তার হারিয়ে প্রতিদিন ক্ষয় হচ্ছে। দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলের মাটি আজ তীব্র লবণাক্ততায় আক্রান্ত। কৃষিজমি থেকে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলের বসতবাড়ির মাটিও হয়ে পড়ছে লবণাক্ত। জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে ক্রমশ লবণাক্ত হয়ে যাওয়া মাটির কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আজ বাধ্য হয়ে জন্মমাটি ছেড়ে নিজেদের আগাম বিক্রি করছে ইটের ভাটায়। মাটি হারিয়ে মানুষ আজ জীবন বাঁচাতে হন্যে হয়েছে। চারদিকে এক প্রবল হাহাকার।
মাটির জন্য এখনো আমরা কোনো রাজনৈতিক ইশতেহার বা কার্যকর উদ্যোগ দেখিনি। কোনো সুনির্দিষ্ট আইন বা নীতি নেই মাটি সুরক্ষা প্রশ্নে। পরিবার, বিদ্যালয়, সংঘ, কি গণমাধ্যম—কোথাও মাটি ব্যবস্থাপনা ও মাটির প্রতি আমাদের আচরণ ও কর্তব্য কেমন হওয়া দরকার—সে বিষয়ে কোনো তৎপরতা নেই। ক্রমশ মাটি-বিচ্ছিন্ন এক নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা কীভাবে তাহলে মাটির প্রতি মমতা ও ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে পারি? মাটির প্রতি কৃতজ্ঞতা ও নতজানু হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি? মাটি প্রশ্নে আজ আমাদের অবশ্যই রাষ্ট্রীয় তৎপরতা জরুরি। সামগ্রিক জাগরণ জরুরি। যদি ‘দেশের মাটির পরে’ আমরা আজ কৃতজ্ঞচিত্তে মাথা ঠেকাতে চাই, তবে সবার আগে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, মাটির প্রাণ আছে, মাটি এক জীবন্ত সত্তা, আর এর সুরক্ষায় আমাদের সবার দায় ও দায়িত্ব আছে।
ভূমি হচ্ছে মৌলিক প্রাকৃতিক সম্পদ, যা মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, শিল্পপণ্য, ভোগবিলাস, স্বাস্থ্য রক্ষার উপকরণ ইত্যাদি সবকিছুরই উৎস। মাটি বা ভূমি বা জমি সুরক্ষা প্রশ্নে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে প্রথম ‘কৃষিজমি সুরক্ষা আইন’ খসড়া করে। দুঃখজনকভাবে এখনো আইনটি কার্যকর হয়নি। কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনে ‘কৃষিজমিকে’ কেবলমাত্র খাদ্যশস্য উৎপাদনের স্থান হিসেবে দেখা হয়েছে। আইনের প্রেক্ষাপট বা ভূমিকা অংশে কৃষিজমি সুরক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, ‘পরিবেশ ও খাদ্যশস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার কথা।’ কৃষিজমি কোনোভাবেই কেবল খাদ্যশস্য উৎপাদনের জায়গা নয়। এটি এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় বাস্তুসংস্থান এবং এখানে নানা প্রাণী ও উদ্ভিদের যৌথ বসবাসের ভেতর দিয়ে এক জটিল প্রতিবেশ ব্যবস্থা চালু থাকে।
কৃষিজমি জীবন্ত; এর প্রাণ আছে। এটি নানা অণুজীব, পতঙ্গ, কেঁচো, কাঁকড়া, শামুক, সাপ, ছোট পাখি, গুল্ম ও বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদের আবাস ও বিচরণস্থল কৃষিজমি। কৃষিজমি একই সঙ্গে কোনো গ্রামীণ সমাজের বসতি স্থাপনের ইতিহাস এবং কৃষি সভ্যতার এক জীবন্ত দলিল। এটি সামাজিক সংহতি ও নানা বর্গ-শ্রেণির ঐক্যের প্রতীক। কৃষিজমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা প্রকাশ করে। একেক অঞ্চলের কৃষিজমি একেক ঋতু বা মৌসুমে একেক রং ও ব্যঞ্জনা নিয়ে মূর্ত হয়। কখনো-বা ধানের সবুজ প্রান্তর, কখনো হলুদ সরিষার খেত, কখনো জুমের মিশ্র ফসল, আবার কখনো রসুনের জমি।
কৃষিজমি জলবায়ু সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে এবং পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের কৃষিজমিই দুনিয়ার সামগ্রিক টেকসই বিকাশে ভূমিকা রাখে। ভৌগোলিকভাবে কৃষিজমি স্থানীয়; কিন্তু এর সামগ্রিক অবদান বৈশ্বিক। উল্লিখিত আইনে কৃষিজমিকে খুবই সংকীর্ণ অর্থে দেখা হয়েছে এবং এটিই আইনের প্রধান দর্শনগত ও মনস্তাত্ত্বিক ত্রুটি। মাটিসহ কৃষিজমির সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এটি কৃষিসভ্যতা বিকাশের ভিত্তিস্থল। কৃষিজমির সামগ্রিক অবদান ও সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিয়ে কৃষিজমি সুরক্ষা আইনে উল্লেখ করা জরুরি।
মাটির বৈচিত্র্যময় বিস্তার ও অবস্থান একেক অঞ্চল ও বাস্তুসংস্থানকে একেক পরিচয় দান করেছে। গড়ে তুলেছে একেক জীবনধারা ও উৎপাদন সম্পর্ক। জলবায়ু, পানিসম্পদ, ভূমিরূপ, মাটি, উদ্ভিদ বৈচিত্র্য, তৃণভূমি, কি অরণ্য—সবই ভূমির অংশ। বাংলাদেশে অঞ্চল ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতায় কৃষি জমির ধরনগুলো এক নয়। মহামতি খনার বচনে আছে, ‘রোদে ধান, ছায়ায় পান’। তার মানে কোনো কৃষি জমিনে রোদ পড়ে, আবার কোনোটি ছায়াময় জমিন। জমির ধরন বুঝে একেক জমিনে একেক ফসল ভালো হয়। হাওরাঞ্চলে বসতবাড়ি বাগানকে বলে ‘বিছরা’, মধুপুর গড়াঞ্চলে নিচু জমিকে বলে ‘বাইদ’ এবং উঁচু জমিকে ‘চালা’, বরেন্দ্র অঞ্চলের ঢেউখেলানো জমিকে স্থানীয়ভাবে বলে ‘গ্যালারি জমি’, মানিকগঞ্জে উঁচু জমিকে বলে ‘কান্দা জমি’, সিলেটের খাসি আদিবাসীরা কৃষিজ বাগানকে বলেন ‘জুম’। সিলেটের দুই টিলার মাঝের জমিকে আদিবাসী লালেং (পাত্র) ভাষায় বলে ‘গুল’।
এই জমিগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে খুব ভালো আঠালো বিন্নি ধানের আবাদ হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই পাহাড়ের খাদের জমিনও ভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। বর্তমানে এমন জমিগুলোতে দুই পাশ আটকে বৃষ্টির পানি জমিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। মধুপুর ও ভাওয়াল গড়ের পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলের বরেন্দ্রভূমির কৃষিজমির বৈশিষ্ট্য উঁচু হলেও তা স্তরবিশিষ্ট ভিন্নতা নিয়ে বিদ্যমান। কিন্তু বর্তমানে এই জমির বৈশিষ্ট্য যন্ত্র দিয়ে কেটে সমান করে এর স্তর বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট করা হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিজমির স্তরবিন্যাসকে অক্ষুণ্ন রাখা জরুরি। কক্সবাজারের টেকনাফসহ সমুদ্র উপকূলে জোয়ার প্লাবিত কৃষিজমি এবং নারিকেল জিঞ্জিরা বা সেন্টমার্টিনসহ সমুদ্র দ্বীপসমূহের মাটি ও কৃষিজমির বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দিয়েই সুরক্ষার আওতায় আনতে হবে। তো আমরা কি দেশের মৃত্তিকা-বিন্যাসের এমন প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ধরনকে বিবেচনা না করেই সকল অঞ্চলের মাটি ও জমির জন্য একই ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে থাকব বারবার? কেবল রাসায়নিক কৃষি নয়, কৃষিজমিতে কী ধরনের শস্য বা ফসলের আবাদ হবে, আর সেটি মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কতখানি ক্ষতিকর, তাও বিবেচনায় আনা জরুরি। বিশেষ করে হাইব্রিড, জিএমও ফসল, তামাক, হাইব্রিড ভুট্টা—এসব ফসল মাটির স্বাস্থ্য ভেঙে দেয়। এমনকি সামাজিক বনায়নের নামে একাশিয়া, ম্যাঞ্জিয়াম, সেগুন, ইউক্যালিপটাসের বৃহৎ বাগান কিংবা বাণিজ্যিক রাবার চাষও মাটির বাস্তুসংস্থান ও মাটির প্রাকৃতিক পানিধারণ ক্ষমতাকে বিনষ্ট করছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (২০১৫) তথ্যমতে, দেশে মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ১৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন হেক্টর। দেশের মোট ভূমির ১৩ দশমিক ৩ শতাংশজুড়ে বনভূমি, ২০ দশমিক ১ শতাংশে জলাধার, ঘরবাড়ি, শিল্প-কারখানা এবং বাকি ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর ভেতর আবাদযোগ্য জমি ৮৫ লাখ ৫ হাজার ২৭৮ দশমিক ১৪ হেক্টর। কিন্তু নিদারুণভাবে দেশে প্রতিদিন কৃষিজমি কমছে। অর্থাৎ, মৃত্তিকা-বাস্তুসংস্থান বদলে যাচ্ছে।
ইউএনডিপির (২০০৩) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতি বছর দেশে ১ শতাংশ করে কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় পর্যন্ত পাহাড়ি নদী ও চা বাগানের ছড়া থেকে বালু তোলা হলেও এখন দেশের অনেক নদ-নদী, ছড়া, নদী তীর ও চরাঞ্চল থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। বালু উত্তোলন করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ভূমির বৈশিষ্ট্য বিনাশ করা হয়। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরে ভাঙন তীব্র হয়ে অনেক কৃষি জমি বিলীন হয়ে যায়। জমিতে নানা মাত্রার রাসায়নিক প্রয়োগ, লাগাতার সেচ, নানা জাতের বাণিজ্যিক করপোরেট ফসল আবাদের পাশাপাশি শিল্প দূষণ, উজানে বাঁধ, বর্জ্য, পলিথিনসহ নানাবিধ কারণে কৃষি জমির মাটির স্বাস্থ্য ক্ষয় হচ্ছে।
বাংলাদেশের পরিবেশ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন (২০০১) থেকে জানা যায়, ১৯৬৪ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূ-উপরিস্থ মাটি ব্যাপক ক্ষয় হয়েছে, যা মোট জমির প্রায় ১৭ শতাংশ। বনভূমি আচ্ছাদিত অঞ্চলে মাটি ক্ষয় অনেক কম এবং তা প্রতি বছর প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৭ থেকে ৭ দশমিক ২ টন। মাটির জৈব উপাদান ভয়াবহভাবে কমছে এবং তা বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শুরু করে মধুপুর গড়, হিমালয় পাদদেশ, তিস্তা-করতোয়া-বাঙালী নদী অববাহিকা অঞ্চলে।
২০০২ সালে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট’-এর সম্মেলনে মাটি দিবসের প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়। থাইল্যান্ড এবং বিশ্ব মৃত্তিকা পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক মাটি দিবস উদ্যাপনের কাজ শুরু করে এবং বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা একে সহযোগিতা করে। ২০১৩ সালের জুনে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা জাতিসংঘের ৬৮ তম সাধারণ অধিবেশনে মাটি দিবসের প্রসঙ্গটি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ বিশ্ব মাটি দিবসের বিষয়টি সমর্থন করে এবং ২০১৪ সালে প্রথম বিশ্ব মাটি দিবস পালিত হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মাটি দিবস পালিত হয়ে আসছে।
এ বছর মাটি দিবসের প্রতিপাদ্য হলো—‘মাটির লবণাক্ততা দূর কর, মাটির উৎপাদনশীলতা বাড়াও’। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মৃত্তিকা-বাস্তুসংস্থানের বড় সর্বনাশটি ঘটেছে আশির দশকের পর থেকে। উপকূলীয় লবণপানির জোয়ারভাটায় এককালে গড়ে ওঠা কৃষিজীবন থেকে বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘেরের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছেন লাখো মানুষ। উপকূলীয় বাঁধ দিয়ে গ্রামের সঙ্গে নদীগুলোর জোয়ারভাটার প্রবাহ আটকে কৃষিজমিতে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘের। দীর্ঘ সময়জুড়ে আবদ্ধ ঘেরে লবণপানি আটকে থাকায় জমিতে অভ্যন্তরীণ লবণের মাত্রা বাড়ে এবং মাটি লবণাক্ত হয়ে ক্রমান্বয়ে আবাদ অনুপযোগী হয়ে ওঠে। পাশাপাশি জলবায়ু বিপর্যয়জনিত সংকটের কারণে এই লবণাক্ততার মাত্রা আরও বাড়ছে এবং এই লবণাক্ততার বিস্তার ক্রমশ উপকূলের সকল মাটিকেই লবণাক্ত করে তুলছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (২০১০) দেখিয়েছে, ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার ১৬টি জেলাতেই কৃষিজমি কমেছে এবং সামগ্রিকভাবে উপকূলে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ কৃষি জমি কমে গেছে। জলবায়ু বিপর্যয়সহ সকল সংকট থেকে দেশের মাটি সুরক্ষায় এখনই আমাদের জোরদার আওয়াজ তোলা দরকার, দরকার কার্যকর পদক্ষেপ। দরকার মৃত্তিকা-সংবেদনশীল রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
লেখক: পাভেল পার্থ, গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ

রবীন্দ্রনাথের ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ গানটি কী আমরা মনে রেখেছি? আমরা কী জানি আমাদের দেশের মাটির আজ কী হাল, কী দশা? আমরা কি মাটির জীবন বাঁচিয়ে রাখছি? অপরিকল্পিত উন্নয়ন, দশাসই নগরায়ণ কিংবা রাসায়নিক কৃষির দাপটে মাটি আজ রক্তাক্ত, দূষিত ও দখল হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আমাদের জনপদে ‘মাটি’ কেবল মাটি নয়, মাটি এক জীবনবোধের রূপকল্প। সহজিয়া সাধনার জটিল বয়ান। আমরা যখন বলি, ‘মাটির কাছে ফেরা’ কিংবা ‘জন্মমাটি’ কিংবা ‘মাটির মতন মানুষ’ তখন আমরা ভিন্ন ভিন্ন জীবনের ব্যঞ্জনা বুঝি। আমাদের সামনে হাজির হয় বেশ কিছু দার্শনিক ও রাজনৈতিক দৃশ্যকল্প। এই জনপদ বিশ্বাস করে—মাটির প্রাণ আছে। মাটি মানুষসহ প্রাণসত্তাকে বাঁচিয়ে রাখার রসদ জোগায়। মাটি জোগায় মুখের আহার। কিন্তু আমরা কি মাটির আহার ঠিক রেখেছি? অধিক ফসল ফলানোর নামে আমরা মাটির বুকে ঢেলেছি নির্দয় বিষের জঞ্জাল। মাটির প্রাণ আজ যন্ত্রণায় ছটফট করে। এমনকি নিদারুণভাবে জীবন্ত মাটি প্রতিদিন আমরা তুলে দিচ্ছি ইটের ভাটায়। মাটিকে আর মাটি রাখিনি। মাটির সংসার তছনছ করে দিয়েছি।
এক দলা মাটি কেবলমাত্র একদলা মাটি নয়। মৃত্তিকা-বাস্তুসংস্থান এক জটিল সংসার। এখানে মাটির রাসায়নিক উপাদান আছে, অণুজীব আছে, ঘুমিয়ে থাকা বীজ দানা আছে, আছে কত সহস্র প্রাণপ্রজাতি। তথাকথিত সবুজ বিপ্লব মাটির এই সংসারকে বুঝতে চায়নি। এক দলা মৃত্তিকা-পরিবারের সকল সদস্যকে খুন করে কেবল মাটিকে বিবেচনা করেছে শস্য-উৎপাদনের একটি ক্ষেত্র হিসেবে। এভাবে দিনের পর দিন মাটি আজ সব হারিয়ে শুকিয়ে খটখটে হয়ে আছে। এমনকি আমরা মাটির আর্দ্রতা, মাটির জলকণা, মাটির হিউমাস কোনো কিছুই ঠিক রাখিনি। মাটির তলার পানি মেশিন দিয়ে টেনে টেনে তুলে আজ মাটির শরীর শুকিয়ে ফেলেছি। এভাবেই আমরা একতরফাভাবে কেবলমাত্র মানুষের জন্য খাদ্য হিসেবে কেবল ধান বা কিছু দানা জাতীয় ফসলের বাণিজ্যিক উৎপাদন করতে পেরেছি। মাটির ওপর এত অনাচার-অত্যাচার প্রশ্নহীনভাবে আমরা করে চলেছি। কারণ এক ঐতিহাসিক ঔপনিবেশিক মনস্তত্ত্ব এখনো আমরা ধারণ করে রেখেছি। আমরা এখনো মনে করি ‘মাটি সর্বংসহা’। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। কারণ, মাটির হিউমাস কমেছে, মাটির পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র বদলে গেছে, মাটির উৎপাদনশীলতার মাত্রা ও হার বদলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ডাকসাইটে এসব উন্নয়ন বাহাদুরির পাশাপাশি আমাদের মাটি-জগৎ আজ ‘জলবায়ু সংকটের’ কারণেও দাঁড়িয়ে আছে এক গভীর বিপদের মুখোমুখি। দেশজুড়ে জলবায়ু বিপর্যয়ের নানা অভিঘাত ও নিদারুণ প্রভাব পড়ছে মৃত্তিকা-বাস্তুতন্ত্রে। বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি আজ তীব্র খরা ও নির্দয় শুষ্কতায় তড়পাচ্ছে। পাহাড়ের মাটি অরণ্যের বিস্তার হারিয়ে প্রতিদিন ক্ষয় হচ্ছে। দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলের মাটি আজ তীব্র লবণাক্ততায় আক্রান্ত। কৃষিজমি থেকে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলের বসতবাড়ির মাটিও হয়ে পড়ছে লবণাক্ত। জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে ক্রমশ লবণাক্ত হয়ে যাওয়া মাটির কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আজ বাধ্য হয়ে জন্মমাটি ছেড়ে নিজেদের আগাম বিক্রি করছে ইটের ভাটায়। মাটি হারিয়ে মানুষ আজ জীবন বাঁচাতে হন্যে হয়েছে। চারদিকে এক প্রবল হাহাকার।
মাটির জন্য এখনো আমরা কোনো রাজনৈতিক ইশতেহার বা কার্যকর উদ্যোগ দেখিনি। কোনো সুনির্দিষ্ট আইন বা নীতি নেই মাটি সুরক্ষা প্রশ্নে। পরিবার, বিদ্যালয়, সংঘ, কি গণমাধ্যম—কোথাও মাটি ব্যবস্থাপনা ও মাটির প্রতি আমাদের আচরণ ও কর্তব্য কেমন হওয়া দরকার—সে বিষয়ে কোনো তৎপরতা নেই। ক্রমশ মাটি-বিচ্ছিন্ন এক নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা কীভাবে তাহলে মাটির প্রতি মমতা ও ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে পারি? মাটির প্রতি কৃতজ্ঞতা ও নতজানু হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি? মাটি প্রশ্নে আজ আমাদের অবশ্যই রাষ্ট্রীয় তৎপরতা জরুরি। সামগ্রিক জাগরণ জরুরি। যদি ‘দেশের মাটির পরে’ আমরা আজ কৃতজ্ঞচিত্তে মাথা ঠেকাতে চাই, তবে সবার আগে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, মাটির প্রাণ আছে, মাটি এক জীবন্ত সত্তা, আর এর সুরক্ষায় আমাদের সবার দায় ও দায়িত্ব আছে।
ভূমি হচ্ছে মৌলিক প্রাকৃতিক সম্পদ, যা মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, শিল্পপণ্য, ভোগবিলাস, স্বাস্থ্য রক্ষার উপকরণ ইত্যাদি সবকিছুরই উৎস। মাটি বা ভূমি বা জমি সুরক্ষা প্রশ্নে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে প্রথম ‘কৃষিজমি সুরক্ষা আইন’ খসড়া করে। দুঃখজনকভাবে এখনো আইনটি কার্যকর হয়নি। কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনে ‘কৃষিজমিকে’ কেবলমাত্র খাদ্যশস্য উৎপাদনের স্থান হিসেবে দেখা হয়েছে। আইনের প্রেক্ষাপট বা ভূমিকা অংশে কৃষিজমি সুরক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, ‘পরিবেশ ও খাদ্যশস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার কথা।’ কৃষিজমি কোনোভাবেই কেবল খাদ্যশস্য উৎপাদনের জায়গা নয়। এটি এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় বাস্তুসংস্থান এবং এখানে নানা প্রাণী ও উদ্ভিদের যৌথ বসবাসের ভেতর দিয়ে এক জটিল প্রতিবেশ ব্যবস্থা চালু থাকে।
কৃষিজমি জীবন্ত; এর প্রাণ আছে। এটি নানা অণুজীব, পতঙ্গ, কেঁচো, কাঁকড়া, শামুক, সাপ, ছোট পাখি, গুল্ম ও বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদের আবাস ও বিচরণস্থল কৃষিজমি। কৃষিজমি একই সঙ্গে কোনো গ্রামীণ সমাজের বসতি স্থাপনের ইতিহাস এবং কৃষি সভ্যতার এক জীবন্ত দলিল। এটি সামাজিক সংহতি ও নানা বর্গ-শ্রেণির ঐক্যের প্রতীক। কৃষিজমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা প্রকাশ করে। একেক অঞ্চলের কৃষিজমি একেক ঋতু বা মৌসুমে একেক রং ও ব্যঞ্জনা নিয়ে মূর্ত হয়। কখনো-বা ধানের সবুজ প্রান্তর, কখনো হলুদ সরিষার খেত, কখনো জুমের মিশ্র ফসল, আবার কখনো রসুনের জমি।
কৃষিজমি জলবায়ু সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে এবং পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের কৃষিজমিই দুনিয়ার সামগ্রিক টেকসই বিকাশে ভূমিকা রাখে। ভৌগোলিকভাবে কৃষিজমি স্থানীয়; কিন্তু এর সামগ্রিক অবদান বৈশ্বিক। উল্লিখিত আইনে কৃষিজমিকে খুবই সংকীর্ণ অর্থে দেখা হয়েছে এবং এটিই আইনের প্রধান দর্শনগত ও মনস্তাত্ত্বিক ত্রুটি। মাটিসহ কৃষিজমির সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এটি কৃষিসভ্যতা বিকাশের ভিত্তিস্থল। কৃষিজমির সামগ্রিক অবদান ও সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিয়ে কৃষিজমি সুরক্ষা আইনে উল্লেখ করা জরুরি।
মাটির বৈচিত্র্যময় বিস্তার ও অবস্থান একেক অঞ্চল ও বাস্তুসংস্থানকে একেক পরিচয় দান করেছে। গড়ে তুলেছে একেক জীবনধারা ও উৎপাদন সম্পর্ক। জলবায়ু, পানিসম্পদ, ভূমিরূপ, মাটি, উদ্ভিদ বৈচিত্র্য, তৃণভূমি, কি অরণ্য—সবই ভূমির অংশ। বাংলাদেশে অঞ্চল ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতায় কৃষি জমির ধরনগুলো এক নয়। মহামতি খনার বচনে আছে, ‘রোদে ধান, ছায়ায় পান’। তার মানে কোনো কৃষি জমিনে রোদ পড়ে, আবার কোনোটি ছায়াময় জমিন। জমির ধরন বুঝে একেক জমিনে একেক ফসল ভালো হয়। হাওরাঞ্চলে বসতবাড়ি বাগানকে বলে ‘বিছরা’, মধুপুর গড়াঞ্চলে নিচু জমিকে বলে ‘বাইদ’ এবং উঁচু জমিকে ‘চালা’, বরেন্দ্র অঞ্চলের ঢেউখেলানো জমিকে স্থানীয়ভাবে বলে ‘গ্যালারি জমি’, মানিকগঞ্জে উঁচু জমিকে বলে ‘কান্দা জমি’, সিলেটের খাসি আদিবাসীরা কৃষিজ বাগানকে বলেন ‘জুম’। সিলেটের দুই টিলার মাঝের জমিকে আদিবাসী লালেং (পাত্র) ভাষায় বলে ‘গুল’।
এই জমিগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে খুব ভালো আঠালো বিন্নি ধানের আবাদ হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই পাহাড়ের খাদের জমিনও ভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। বর্তমানে এমন জমিগুলোতে দুই পাশ আটকে বৃষ্টির পানি জমিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। মধুপুর ও ভাওয়াল গড়ের পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলের বরেন্দ্রভূমির কৃষিজমির বৈশিষ্ট্য উঁচু হলেও তা স্তরবিশিষ্ট ভিন্নতা নিয়ে বিদ্যমান। কিন্তু বর্তমানে এই জমির বৈশিষ্ট্য যন্ত্র দিয়ে কেটে সমান করে এর স্তর বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট করা হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিজমির স্তরবিন্যাসকে অক্ষুণ্ন রাখা জরুরি। কক্সবাজারের টেকনাফসহ সমুদ্র উপকূলে জোয়ার প্লাবিত কৃষিজমি এবং নারিকেল জিঞ্জিরা বা সেন্টমার্টিনসহ সমুদ্র দ্বীপসমূহের মাটি ও কৃষিজমির বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দিয়েই সুরক্ষার আওতায় আনতে হবে। তো আমরা কি দেশের মৃত্তিকা-বিন্যাসের এমন প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ধরনকে বিবেচনা না করেই সকল অঞ্চলের মাটি ও জমির জন্য একই ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে থাকব বারবার? কেবল রাসায়নিক কৃষি নয়, কৃষিজমিতে কী ধরনের শস্য বা ফসলের আবাদ হবে, আর সেটি মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কতখানি ক্ষতিকর, তাও বিবেচনায় আনা জরুরি। বিশেষ করে হাইব্রিড, জিএমও ফসল, তামাক, হাইব্রিড ভুট্টা—এসব ফসল মাটির স্বাস্থ্য ভেঙে দেয়। এমনকি সামাজিক বনায়নের নামে একাশিয়া, ম্যাঞ্জিয়াম, সেগুন, ইউক্যালিপটাসের বৃহৎ বাগান কিংবা বাণিজ্যিক রাবার চাষও মাটির বাস্তুসংস্থান ও মাটির প্রাকৃতিক পানিধারণ ক্ষমতাকে বিনষ্ট করছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (২০১৫) তথ্যমতে, দেশে মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ১৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন হেক্টর। দেশের মোট ভূমির ১৩ দশমিক ৩ শতাংশজুড়ে বনভূমি, ২০ দশমিক ১ শতাংশে জলাধার, ঘরবাড়ি, শিল্প-কারখানা এবং বাকি ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। এর ভেতর আবাদযোগ্য জমি ৮৫ লাখ ৫ হাজার ২৭৮ দশমিক ১৪ হেক্টর। কিন্তু নিদারুণভাবে দেশে প্রতিদিন কৃষিজমি কমছে। অর্থাৎ, মৃত্তিকা-বাস্তুসংস্থান বদলে যাচ্ছে।
ইউএনডিপির (২০০৩) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতি বছর দেশে ১ শতাংশ করে কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় পর্যন্ত পাহাড়ি নদী ও চা বাগানের ছড়া থেকে বালু তোলা হলেও এখন দেশের অনেক নদ-নদী, ছড়া, নদী তীর ও চরাঞ্চল থেকে বালু উত্তোলন করা হয়। বালু উত্তোলন করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ভূমির বৈশিষ্ট্য বিনাশ করা হয়। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরে ভাঙন তীব্র হয়ে অনেক কৃষি জমি বিলীন হয়ে যায়। জমিতে নানা মাত্রার রাসায়নিক প্রয়োগ, লাগাতার সেচ, নানা জাতের বাণিজ্যিক করপোরেট ফসল আবাদের পাশাপাশি শিল্প দূষণ, উজানে বাঁধ, বর্জ্য, পলিথিনসহ নানাবিধ কারণে কৃষি জমির মাটির স্বাস্থ্য ক্ষয় হচ্ছে।
বাংলাদেশের পরিবেশ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন (২০০১) থেকে জানা যায়, ১৯৬৪ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূ-উপরিস্থ মাটি ব্যাপক ক্ষয় হয়েছে, যা মোট জমির প্রায় ১৭ শতাংশ। বনভূমি আচ্ছাদিত অঞ্চলে মাটি ক্ষয় অনেক কম এবং তা প্রতি বছর প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৭ থেকে ৭ দশমিক ২ টন। মাটির জৈব উপাদান ভয়াবহভাবে কমছে এবং তা বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শুরু করে মধুপুর গড়, হিমালয় পাদদেশ, তিস্তা-করতোয়া-বাঙালী নদী অববাহিকা অঞ্চলে।
২০০২ সালে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট’-এর সম্মেলনে মাটি দিবসের প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়। থাইল্যান্ড এবং বিশ্ব মৃত্তিকা পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক মাটি দিবস উদ্যাপনের কাজ শুরু করে এবং বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা একে সহযোগিতা করে। ২০১৩ সালের জুনে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা জাতিসংঘের ৬৮ তম সাধারণ অধিবেশনে মাটি দিবসের প্রসঙ্গটি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ বিশ্ব মাটি দিবসের বিষয়টি সমর্থন করে এবং ২০১৪ সালে প্রথম বিশ্ব মাটি দিবস পালিত হয়। এর পর থেকে প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মাটি দিবস পালিত হয়ে আসছে।
এ বছর মাটি দিবসের প্রতিপাদ্য হলো—‘মাটির লবণাক্ততা দূর কর, মাটির উৎপাদনশীলতা বাড়াও’। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মৃত্তিকা-বাস্তুসংস্থানের বড় সর্বনাশটি ঘটেছে আশির দশকের পর থেকে। উপকূলীয় লবণপানির জোয়ারভাটায় এককালে গড়ে ওঠা কৃষিজীবন থেকে বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘেরের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছেন লাখো মানুষ। উপকূলীয় বাঁধ দিয়ে গ্রামের সঙ্গে নদীগুলোর জোয়ারভাটার প্রবাহ আটকে কৃষিজমিতে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘের। দীর্ঘ সময়জুড়ে আবদ্ধ ঘেরে লবণপানি আটকে থাকায় জমিতে অভ্যন্তরীণ লবণের মাত্রা বাড়ে এবং মাটি লবণাক্ত হয়ে ক্রমান্বয়ে আবাদ অনুপযোগী হয়ে ওঠে। পাশাপাশি জলবায়ু বিপর্যয়জনিত সংকটের কারণে এই লবণাক্ততার মাত্রা আরও বাড়ছে এবং এই লবণাক্ততার বিস্তার ক্রমশ উপকূলের সকল মাটিকেই লবণাক্ত করে তুলছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (২০১০) দেখিয়েছে, ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার ১৬টি জেলাতেই কৃষিজমি কমেছে এবং সামগ্রিকভাবে উপকূলে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ কৃষি জমি কমে গেছে। জলবায়ু বিপর্যয়সহ সকল সংকট থেকে দেশের মাটি সুরক্ষায় এখনই আমাদের জোরদার আওয়াজ তোলা দরকার, দরকার কার্যকর পদক্ষেপ। দরকার মৃত্তিকা-সংবেদনশীল রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
লেখক: পাভেল পার্থ, গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১৬ ঘণ্টা আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১৬ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১৭ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

এক দলা মাটি কেবলমাত্র একদলা মাটি নয়। মৃত্তিকা-বাস্তুসংস্থান এক জটিল সংসার। এখানে মাটির রাসায়নিক উপাদান আছে, অণুজীব আছে, ঘুমিয়ে থাকা বীজদানা আছে, আছে কত সহস্র প্রাণ প্রজাতি। তথাকথিত সবুজ বিপ্লব মাটির এই সংসারকে বুঝতে চায়নি। এক দলা মৃত্তিকা-পরিবারের সকল সদস্যকে খুন করে কেবল মাটিকে বিবেচনা করেছে শস্য-উ
০৫ ডিসেম্বর ২০২১
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১৬ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১৭ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।
দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।
প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!
তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?
কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।
দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।
প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!
তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?
কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

এক দলা মাটি কেবলমাত্র একদলা মাটি নয়। মৃত্তিকা-বাস্তুসংস্থান এক জটিল সংসার। এখানে মাটির রাসায়নিক উপাদান আছে, অণুজীব আছে, ঘুমিয়ে থাকা বীজদানা আছে, আছে কত সহস্র প্রাণ প্রজাতি। তথাকথিত সবুজ বিপ্লব মাটির এই সংসারকে বুঝতে চায়নি। এক দলা মৃত্তিকা-পরিবারের সকল সদস্যকে খুন করে কেবল মাটিকে বিবেচনা করেছে শস্য-উ
০৫ ডিসেম্বর ২০২১
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১৬ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১৭ ঘণ্টা আগেহাসান আলী

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।
প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।
আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।
বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।
প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।
প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।
আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।
বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।
প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

এক দলা মাটি কেবলমাত্র একদলা মাটি নয়। মৃত্তিকা-বাস্তুসংস্থান এক জটিল সংসার। এখানে মাটির রাসায়নিক উপাদান আছে, অণুজীব আছে, ঘুমিয়ে থাকা বীজদানা আছে, আছে কত সহস্র প্রাণ প্রজাতি। তথাকথিত সবুজ বিপ্লব মাটির এই সংসারকে বুঝতে চায়নি। এক দলা মৃত্তিকা-পরিবারের সকল সদস্যকে খুন করে কেবল মাটিকে বিবেচনা করেছে শস্য-উ
০৫ ডিসেম্বর ২০২১
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১৬ ঘণ্টা আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১৭ ঘণ্টা আগেসাদিয়া সুলতানা রিমি

বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যেও শান্ত থাকা যায়, কীভাবে উত্তেজনার মুহূর্তে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা যায়। ইতিহাস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, সংকটের সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই অস্থির সময়ের কেন্দ্রে রয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড। আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্যই গভীর শোকের কারণ। তিনি ছিলেন সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়েছিল; তরুণদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছিল আশা, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা। সেই কণ্ঠ আজ নীরব। আর এই নীরবতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক যাত্রার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
একজন নাগরিকের প্রাণহানি কখনোই ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হতে পারে না। বিশেষত, যখন সেই নাগরিক একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। হাদির হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এই হত্যার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের ন্যূনতম কর্তব্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণ, রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এবং পরিবারটির দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত এই দায়বদ্ধতারই একটি বার্তা দেয়। তবে ঘোষণা ও আশ্বাসের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আইনের শাসনের বাস্তব প্রয়োগ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে না পারলে এমন হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
কিন্তু শোক ও ক্ষোভের প্রকাশ যখন সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন তা নিজ উদ্দেশ্যকেই নস্যাৎ করে। হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে যে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মানে কেবল ইট-পাথরের ভবন নয়; এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতের সহাবস্থান এবং সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের প্রতীক। এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে গণতন্ত্রের শিরায় আঘাত করা। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক না কেন সহিংসতা কখনোই ন্যায্যতা পায় না।
বিশেষ করে, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করার ঘটনা আমাদের আরও সতর্ক করে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার ভূমিকা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। মতভিন্নতার কারণে কাউকে শত্রু বানিয়ে ফেলার এই প্রবণতা সমাজকে বিভক্ত করে, যুক্তিকে হত্যা করে এবং শেষ পর্যন্ত সহিংসতার পথ প্রশস্ত করে। আজ যদি আমরা যুক্তির বদলে লেবেলিংকে বেছে নিই, তবে কাল আর কেউই নিরাপদ থাকবে না।
এই অস্থিরতার পেছনে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাইহীন তথ্য, আবেগতাড়িত পোস্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার মুহূর্তের মধ্যে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়; বরং তথ্য যাচাই করা, সংযত ভাষা ব্যবহার করা এবং উসকানিমূলক কনটেন্ট থেকে বিরত থাকা। এক একটি ভুয়া পোস্ট এক একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ—যা পুরো সমাজকে দগ্ধ করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জনও সমান জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। পুলিশি তৎপরতা যদি একপক্ষীয় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা উত্তেজনা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেবে। তাই শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সংলাপ, ব্যাখ্যা ও আস্থার রাজনীতি জরুরি।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। উসকানি নয়, সংলাপ; প্রতিহিংসা নয়, সহনশীলতা—এই নীতিই হতে হবে পথনির্দেশক। দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই সময়ে প্রতিটি দলের ধৈর্য ধরার পরীক্ষা চলছে। নেতারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, কর্মীদের সংযত না করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহুকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
নির্বাচন শুধু ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়া নয়; এটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। অস্থিতিশীলতা সেই ধারাবাহিকতাকে ভেঙে দেয়। শরিফ ওসমান হাদির স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে অক্ষুণ্ন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হলে সহিংসতা নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই শক্তিশালী করতে হবে।
বিশেষ করে তরুণসমাজের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদির কণ্ঠ যে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছিল, আজ তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই দর্শনই পারে দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে। আবেগের বশে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ধ্বংস করতে পারে।
বাংলাদেশ আজ সংকট, সম্ভাবনা ও সংগ্রামের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে শোক, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনা। কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সামষ্টিক প্রজ্ঞা ও সংযমের ওপর। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয় বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যদি আমরা এই শক্তিকে ধারণ করতে পারি, তবে হাদির রক্ত বৃথা যাবে না; বরং তা হয়ে উঠবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এক কঠিন কিন্তু আশাব্যঞ্জক সংগ্রামের প্রেরণা।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যেও শান্ত থাকা যায়, কীভাবে উত্তেজনার মুহূর্তে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা যায়। ইতিহাস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, সংকটের সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই অস্থির সময়ের কেন্দ্রে রয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড। আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্যই গভীর শোকের কারণ। তিনি ছিলেন সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়েছিল; তরুণদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছিল আশা, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা। সেই কণ্ঠ আজ নীরব। আর এই নীরবতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক যাত্রার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
একজন নাগরিকের প্রাণহানি কখনোই ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হতে পারে না। বিশেষত, যখন সেই নাগরিক একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। হাদির হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এই হত্যার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের ন্যূনতম কর্তব্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণ, রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এবং পরিবারটির দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত এই দায়বদ্ধতারই একটি বার্তা দেয়। তবে ঘোষণা ও আশ্বাসের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আইনের শাসনের বাস্তব প্রয়োগ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে না পারলে এমন হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
কিন্তু শোক ও ক্ষোভের প্রকাশ যখন সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন তা নিজ উদ্দেশ্যকেই নস্যাৎ করে। হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে যে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মানে কেবল ইট-পাথরের ভবন নয়; এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতের সহাবস্থান এবং সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের প্রতীক। এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে গণতন্ত্রের শিরায় আঘাত করা। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক না কেন সহিংসতা কখনোই ন্যায্যতা পায় না।
বিশেষ করে, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করার ঘটনা আমাদের আরও সতর্ক করে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার ভূমিকা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। মতভিন্নতার কারণে কাউকে শত্রু বানিয়ে ফেলার এই প্রবণতা সমাজকে বিভক্ত করে, যুক্তিকে হত্যা করে এবং শেষ পর্যন্ত সহিংসতার পথ প্রশস্ত করে। আজ যদি আমরা যুক্তির বদলে লেবেলিংকে বেছে নিই, তবে কাল আর কেউই নিরাপদ থাকবে না।
এই অস্থিরতার পেছনে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাইহীন তথ্য, আবেগতাড়িত পোস্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার মুহূর্তের মধ্যে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়; বরং তথ্য যাচাই করা, সংযত ভাষা ব্যবহার করা এবং উসকানিমূলক কনটেন্ট থেকে বিরত থাকা। এক একটি ভুয়া পোস্ট এক একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ—যা পুরো সমাজকে দগ্ধ করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জনও সমান জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। পুলিশি তৎপরতা যদি একপক্ষীয় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা উত্তেজনা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেবে। তাই শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সংলাপ, ব্যাখ্যা ও আস্থার রাজনীতি জরুরি।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। উসকানি নয়, সংলাপ; প্রতিহিংসা নয়, সহনশীলতা—এই নীতিই হতে হবে পথনির্দেশক। দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই সময়ে প্রতিটি দলের ধৈর্য ধরার পরীক্ষা চলছে। নেতারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, কর্মীদের সংযত না করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহুকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
নির্বাচন শুধু ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়া নয়; এটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। অস্থিতিশীলতা সেই ধারাবাহিকতাকে ভেঙে দেয়। শরিফ ওসমান হাদির স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে অক্ষুণ্ন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হলে সহিংসতা নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই শক্তিশালী করতে হবে।
বিশেষ করে তরুণসমাজের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদির কণ্ঠ যে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছিল, আজ তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই দর্শনই পারে দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে। আবেগের বশে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ধ্বংস করতে পারে।
বাংলাদেশ আজ সংকট, সম্ভাবনা ও সংগ্রামের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে শোক, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনা। কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সামষ্টিক প্রজ্ঞা ও সংযমের ওপর। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয় বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যদি আমরা এই শক্তিকে ধারণ করতে পারি, তবে হাদির রক্ত বৃথা যাবে না; বরং তা হয়ে উঠবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এক কঠিন কিন্তু আশাব্যঞ্জক সংগ্রামের প্রেরণা।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

এক দলা মাটি কেবলমাত্র একদলা মাটি নয়। মৃত্তিকা-বাস্তুসংস্থান এক জটিল সংসার। এখানে মাটির রাসায়নিক উপাদান আছে, অণুজীব আছে, ঘুমিয়ে থাকা বীজদানা আছে, আছে কত সহস্র প্রাণ প্রজাতি। তথাকথিত সবুজ বিপ্লব মাটির এই সংসারকে বুঝতে চায়নি। এক দলা মৃত্তিকা-পরিবারের সকল সদস্যকে খুন করে কেবল মাটিকে বিবেচনা করেছে শস্য-উ
০৫ ডিসেম্বর ২০২১
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১৬ ঘণ্টা আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১৬ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১৭ ঘণ্টা আগে