
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে।
মাসুদ রানা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি এবং হকার উচ্ছেদের মূল কারণ কী? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
চা-দোকানি ও হকাররা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, এ রকম তথ্য আমরা এর আগে শুনিনি বা পাইনি। যেটা আমরা জেনেছি, এখানে কিছু ভবঘুরে, পাগল থাকেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডার বিষয়টা বড় করে উপস্থাপন করা হয়। সেসবের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমাদের ধারণা নেই। ধারণা নেই বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, আসলে তাঁদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যদি সম্পর্ক থাকত, তাহলে ক্যাম্পাসের পাশে যে শাহবাগ থানা আছে, তারা তা জানত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কারা মাদক বিক্রি করে, সেটা তারা জানে এবং চাইলে তাদেরকে ধরতে পারে। কিন্তু চা-বিক্রেতা বা হকারদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি কি এভাবে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন? এটা তো প্রশাসনের দায়িত্বে হওয়ার কথা?
সত্যি বলতে কি, ডাকসু প্রতিনিধিদের এগুলো করার কথা নয়। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবেই করেছেন। এটা করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁরা বরং প্রশাসনের কাছে দাবি তুলতে পারেন, আপনারা এখান থেকে চা-দোকানি ও হকারদের সরিয়ে নিন এবং এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন। এখানে চা-দোকানি বা হকাররা কেন এসেছেন? ক্যাম্পাসে সস্তা খাবারের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা এখানে ব্যবসা করতে পারছেন। এখানে মেট্রোরেলের কারণে মানুষের যাতায়াত আছে। দুপুর ও রাতের খাবারের পরেও শিক্ষার্থীদের খিদে লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁরাই কিন্তু এসব দোকানের বড় কনজ্যুমার বা ভোক্তা।
এখন তাঁরা যদি বলেন, এখানে কেন তাঁরা এলেন, কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হলো? তাহলে বলতে হবে, সেটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। সবার জানা থাকার কথা, জুলাই আন্দোলনের সময় এই মানুষগুলোই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হলে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্যও করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হকার বা চা-দোকানিদের একটা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ করার মতো, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন বয় ছিলেন নতুবা ক্যানটিনের অন্য কাজ করেছেন। এ ধরনের লোকজন অবসর সময়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এভাবে তাঁরা আবার ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছেন। এঁদেরকে বহিরাগত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উচ্ছেদ করা দোকানি বা হকারদের বিরুদ্ধে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা কতটা যৌক্তিক?
ক্যাম্পাসে একটা সিস্টেম থাকা দরকার। কাদেরকে এবং কীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হবে? এই অনুমতি যদি কেউ ভেতরে ভেতরে দিয়ে থাকে, কোনো চাঁদাবাজির ব্যাপার থাকে এবং সেখান থেকে কোনো অর্থ আয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাঁরা কোনোভাবেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে চাইবেন না। সেটা আইনি পথ নয়। লিখিত অনুমতি না থাকায় মুখে মুখে একধরনের অনুমতি দেওয়ার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ মৌখিক চুক্তি।
যেটাকে তাঁরা আইনবহির্ভূত বলছেন, সেটার কি কোনো লিখিত দলিল আছে? লিখিত থাকলে সেটা দেখার বিষয়। যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তার তো একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সেই নীতিমালা অনুযায়ী হকারদের বসতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ডাকসুর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হওয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় না?
প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দু-তিন রাতের মধ্যে দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে নতুন প্রশাসন আসার পর। তাঁরা কীভাবে এখানে এসে দোকান খুলতে পারলেন? এখানে নিশ্চয় কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের ব্যাপার আছে, যারা এই নতুন দোকানিদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুমান করতে পারি, এখানে কোনো না কোনোভাবে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ থাকতে পারে।
যে বামপন্থী ছাত্রনেতারা এসবের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরকে ‘গাঞ্জাটিয়া’সহ আপত্তিকর শব্দে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ভাষার ব্যবহার কি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে বিব্রত করে না?
যাঁরা এভাবে কথা বলছেন, তাঁদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা হলো, যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে হেয় করা। আমাদের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, কাউকে হেয়, অপমান করা এবং ট্যাগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো ঘটনায় প্রতিবাদ করতে না পারেন। সেই উদ্দেশ্য থেকে বামপন্থীদের ‘গাঞ্জাটিয়া’ এবং ভবঘুরে ও হকারদের সক্রিয়ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো বামপন্থী বা সাধারণ শিক্ষার্থী বলেননি যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চান না। বামপন্থী ছাত্রনেতারা কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।
এখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিছুদিন পর অন্য কোনো হকার অন্য প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারেন। তাঁরাই যদি আবার নারী শিক্ষার্থীদের গোপনে ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন? সেটার কী হবে?
ডাকসু প্রতিনিধি সত্যি সত্যি নিরাপত্তার কথা ভেবে থাকলে আগে তাঁদেরকে জানতে হবে, কোন কোন বিষয় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে। শিক্ষার্থীরা কি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা নারী শিক্ষার্থীদের যৌন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিংবা শ্লীলতাহানি করেছেন? অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাকসুর যে দুজন প্রতিনিধি হকার ও চা-দোকানিদের পিটিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাদকাসক্তি নির্মূল করছেন। ব্যাপারটিকে তাঁরা ঘুরিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাঁরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁরা (বামপন্থীরা) যেন মুখ খুলতে না পারেন।
এই পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ছিল বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে হয়, ডাকসুতে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একটা বিশেষ দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সুচিন্তিতভাবে এ কাজগুলো করছেন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়। এই সুযোগে ছাত্রপ্রতিনিধিরা ভূমিকা গ্রহণ করছেন। এ কারণে আমি এ ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলব।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এসব না থাকার পরেও তাঁরা এটা কীভাবে করতে পারলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কি এড়াতে পারে?
এই প্রশাসন কিন্তু আরও অনেক কিছু করেনি। তাদের দায়িত্বের কাজ না করার কারণে এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই সময় কিন্তু ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি।
কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে, সে রকম কিছু আমরা শুনিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন কর্মচারী একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাঁর অপরাধের কারণে তাঁকে থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁকে ফুলের মালাও পরানো হয়েছে।
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রশাসন আসলে কোনো ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। তার কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।
গত সরকারের সময় ছাত্রলীগ যে অপকর্মগুলো করেছিল, বর্তমান ডাকসু নেতৃত্ব কি সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?
আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখনকার ডাকসু প্রতিনিধিরা কম কিছু করছেন না। এগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই। তাঁরা বলছেন, বামপন্থীদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। যাঁরা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে হেয় করছেন। বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ভবঘুরের ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করার সঙ্গে কনডম পাওয়ার ঘটনাটি প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কি কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন? কিছুদিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, দুই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য তাঁর মোবাইল ফোন চেক করেছেন। এই যে ধারাটা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ঢোকানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি এবং হকার উচ্ছেদের মূল কারণ কী? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
চা-দোকানি ও হকাররা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, এ রকম তথ্য আমরা এর আগে শুনিনি বা পাইনি। যেটা আমরা জেনেছি, এখানে কিছু ভবঘুরে, পাগল থাকেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডার বিষয়টা বড় করে উপস্থাপন করা হয়। সেসবের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমাদের ধারণা নেই। ধারণা নেই বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, আসলে তাঁদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যদি সম্পর্ক থাকত, তাহলে ক্যাম্পাসের পাশে যে শাহবাগ থানা আছে, তারা তা জানত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কারা মাদক বিক্রি করে, সেটা তারা জানে এবং চাইলে তাদেরকে ধরতে পারে। কিন্তু চা-বিক্রেতা বা হকারদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি কি এভাবে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন? এটা তো প্রশাসনের দায়িত্বে হওয়ার কথা?
সত্যি বলতে কি, ডাকসু প্রতিনিধিদের এগুলো করার কথা নয়। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবেই করেছেন। এটা করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁরা বরং প্রশাসনের কাছে দাবি তুলতে পারেন, আপনারা এখান থেকে চা-দোকানি ও হকারদের সরিয়ে নিন এবং এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন। এখানে চা-দোকানি বা হকাররা কেন এসেছেন? ক্যাম্পাসে সস্তা খাবারের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা এখানে ব্যবসা করতে পারছেন। এখানে মেট্রোরেলের কারণে মানুষের যাতায়াত আছে। দুপুর ও রাতের খাবারের পরেও শিক্ষার্থীদের খিদে লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁরাই কিন্তু এসব দোকানের বড় কনজ্যুমার বা ভোক্তা।
এখন তাঁরা যদি বলেন, এখানে কেন তাঁরা এলেন, কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হলো? তাহলে বলতে হবে, সেটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। সবার জানা থাকার কথা, জুলাই আন্দোলনের সময় এই মানুষগুলোই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হলে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্যও করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হকার বা চা-দোকানিদের একটা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ করার মতো, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন বয় ছিলেন নতুবা ক্যানটিনের অন্য কাজ করেছেন। এ ধরনের লোকজন অবসর সময়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এভাবে তাঁরা আবার ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছেন। এঁদেরকে বহিরাগত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উচ্ছেদ করা দোকানি বা হকারদের বিরুদ্ধে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা কতটা যৌক্তিক?
ক্যাম্পাসে একটা সিস্টেম থাকা দরকার। কাদেরকে এবং কীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হবে? এই অনুমতি যদি কেউ ভেতরে ভেতরে দিয়ে থাকে, কোনো চাঁদাবাজির ব্যাপার থাকে এবং সেখান থেকে কোনো অর্থ আয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাঁরা কোনোভাবেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে চাইবেন না। সেটা আইনি পথ নয়। লিখিত অনুমতি না থাকায় মুখে মুখে একধরনের অনুমতি দেওয়ার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ মৌখিক চুক্তি।
যেটাকে তাঁরা আইনবহির্ভূত বলছেন, সেটার কি কোনো লিখিত দলিল আছে? লিখিত থাকলে সেটা দেখার বিষয়। যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তার তো একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সেই নীতিমালা অনুযায়ী হকারদের বসতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ডাকসুর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হওয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় না?
প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দু-তিন রাতের মধ্যে দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে নতুন প্রশাসন আসার পর। তাঁরা কীভাবে এখানে এসে দোকান খুলতে পারলেন? এখানে নিশ্চয় কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের ব্যাপার আছে, যারা এই নতুন দোকানিদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুমান করতে পারি, এখানে কোনো না কোনোভাবে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ থাকতে পারে।
যে বামপন্থী ছাত্রনেতারা এসবের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরকে ‘গাঞ্জাটিয়া’সহ আপত্তিকর শব্দে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ভাষার ব্যবহার কি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে বিব্রত করে না?
যাঁরা এভাবে কথা বলছেন, তাঁদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা হলো, যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে হেয় করা। আমাদের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, কাউকে হেয়, অপমান করা এবং ট্যাগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো ঘটনায় প্রতিবাদ করতে না পারেন। সেই উদ্দেশ্য থেকে বামপন্থীদের ‘গাঞ্জাটিয়া’ এবং ভবঘুরে ও হকারদের সক্রিয়ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো বামপন্থী বা সাধারণ শিক্ষার্থী বলেননি যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চান না। বামপন্থী ছাত্রনেতারা কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।
এখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিছুদিন পর অন্য কোনো হকার অন্য প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারেন। তাঁরাই যদি আবার নারী শিক্ষার্থীদের গোপনে ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন? সেটার কী হবে?
ডাকসু প্রতিনিধি সত্যি সত্যি নিরাপত্তার কথা ভেবে থাকলে আগে তাঁদেরকে জানতে হবে, কোন কোন বিষয় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে। শিক্ষার্থীরা কি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা নারী শিক্ষার্থীদের যৌন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিংবা শ্লীলতাহানি করেছেন? অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাকসুর যে দুজন প্রতিনিধি হকার ও চা-দোকানিদের পিটিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাদকাসক্তি নির্মূল করছেন। ব্যাপারটিকে তাঁরা ঘুরিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাঁরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁরা (বামপন্থীরা) যেন মুখ খুলতে না পারেন।
এই পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ছিল বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে হয়, ডাকসুতে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একটা বিশেষ দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সুচিন্তিতভাবে এ কাজগুলো করছেন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়। এই সুযোগে ছাত্রপ্রতিনিধিরা ভূমিকা গ্রহণ করছেন। এ কারণে আমি এ ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলব।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এসব না থাকার পরেও তাঁরা এটা কীভাবে করতে পারলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কি এড়াতে পারে?
এই প্রশাসন কিন্তু আরও অনেক কিছু করেনি। তাদের দায়িত্বের কাজ না করার কারণে এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই সময় কিন্তু ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি।
কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে, সে রকম কিছু আমরা শুনিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন কর্মচারী একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাঁর অপরাধের কারণে তাঁকে থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁকে ফুলের মালাও পরানো হয়েছে।
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রশাসন আসলে কোনো ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। তার কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।
গত সরকারের সময় ছাত্রলীগ যে অপকর্মগুলো করেছিল, বর্তমান ডাকসু নেতৃত্ব কি সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?
আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখনকার ডাকসু প্রতিনিধিরা কম কিছু করছেন না। এগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই। তাঁরা বলছেন, বামপন্থীদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। যাঁরা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে হেয় করছেন। বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ভবঘুরের ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করার সঙ্গে কনডম পাওয়ার ঘটনাটি প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কি কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন? কিছুদিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, দুই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য তাঁর মোবাইল ফোন চেক করেছেন। এই যে ধারাটা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ঢোকানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে।
মাসুদ রানা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি এবং হকার উচ্ছেদের মূল কারণ কী? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
চা-দোকানি ও হকাররা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, এ রকম তথ্য আমরা এর আগে শুনিনি বা পাইনি। যেটা আমরা জেনেছি, এখানে কিছু ভবঘুরে, পাগল থাকেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডার বিষয়টা বড় করে উপস্থাপন করা হয়। সেসবের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমাদের ধারণা নেই। ধারণা নেই বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, আসলে তাঁদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যদি সম্পর্ক থাকত, তাহলে ক্যাম্পাসের পাশে যে শাহবাগ থানা আছে, তারা তা জানত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কারা মাদক বিক্রি করে, সেটা তারা জানে এবং চাইলে তাদেরকে ধরতে পারে। কিন্তু চা-বিক্রেতা বা হকারদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি কি এভাবে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন? এটা তো প্রশাসনের দায়িত্বে হওয়ার কথা?
সত্যি বলতে কি, ডাকসু প্রতিনিধিদের এগুলো করার কথা নয়। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবেই করেছেন। এটা করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁরা বরং প্রশাসনের কাছে দাবি তুলতে পারেন, আপনারা এখান থেকে চা-দোকানি ও হকারদের সরিয়ে নিন এবং এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন। এখানে চা-দোকানি বা হকাররা কেন এসেছেন? ক্যাম্পাসে সস্তা খাবারের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা এখানে ব্যবসা করতে পারছেন। এখানে মেট্রোরেলের কারণে মানুষের যাতায়াত আছে। দুপুর ও রাতের খাবারের পরেও শিক্ষার্থীদের খিদে লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁরাই কিন্তু এসব দোকানের বড় কনজ্যুমার বা ভোক্তা।
এখন তাঁরা যদি বলেন, এখানে কেন তাঁরা এলেন, কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হলো? তাহলে বলতে হবে, সেটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। সবার জানা থাকার কথা, জুলাই আন্দোলনের সময় এই মানুষগুলোই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হলে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্যও করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হকার বা চা-দোকানিদের একটা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ করার মতো, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন বয় ছিলেন নতুবা ক্যানটিনের অন্য কাজ করেছেন। এ ধরনের লোকজন অবসর সময়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এভাবে তাঁরা আবার ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছেন। এঁদেরকে বহিরাগত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উচ্ছেদ করা দোকানি বা হকারদের বিরুদ্ধে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা কতটা যৌক্তিক?
ক্যাম্পাসে একটা সিস্টেম থাকা দরকার। কাদেরকে এবং কীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হবে? এই অনুমতি যদি কেউ ভেতরে ভেতরে দিয়ে থাকে, কোনো চাঁদাবাজির ব্যাপার থাকে এবং সেখান থেকে কোনো অর্থ আয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাঁরা কোনোভাবেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে চাইবেন না। সেটা আইনি পথ নয়। লিখিত অনুমতি না থাকায় মুখে মুখে একধরনের অনুমতি দেওয়ার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ মৌখিক চুক্তি।
যেটাকে তাঁরা আইনবহির্ভূত বলছেন, সেটার কি কোনো লিখিত দলিল আছে? লিখিত থাকলে সেটা দেখার বিষয়। যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তার তো একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সেই নীতিমালা অনুযায়ী হকারদের বসতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ডাকসুর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হওয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় না?
প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দু-তিন রাতের মধ্যে দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে নতুন প্রশাসন আসার পর। তাঁরা কীভাবে এখানে এসে দোকান খুলতে পারলেন? এখানে নিশ্চয় কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের ব্যাপার আছে, যারা এই নতুন দোকানিদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুমান করতে পারি, এখানে কোনো না কোনোভাবে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ থাকতে পারে।
যে বামপন্থী ছাত্রনেতারা এসবের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরকে ‘গাঞ্জাটিয়া’সহ আপত্তিকর শব্দে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ভাষার ব্যবহার কি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে বিব্রত করে না?
যাঁরা এভাবে কথা বলছেন, তাঁদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা হলো, যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে হেয় করা। আমাদের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, কাউকে হেয়, অপমান করা এবং ট্যাগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো ঘটনায় প্রতিবাদ করতে না পারেন। সেই উদ্দেশ্য থেকে বামপন্থীদের ‘গাঞ্জাটিয়া’ এবং ভবঘুরে ও হকারদের সক্রিয়ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো বামপন্থী বা সাধারণ শিক্ষার্থী বলেননি যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চান না। বামপন্থী ছাত্রনেতারা কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।
এখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিছুদিন পর অন্য কোনো হকার অন্য প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারেন। তাঁরাই যদি আবার নারী শিক্ষার্থীদের গোপনে ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন? সেটার কী হবে?
ডাকসু প্রতিনিধি সত্যি সত্যি নিরাপত্তার কথা ভেবে থাকলে আগে তাঁদেরকে জানতে হবে, কোন কোন বিষয় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে। শিক্ষার্থীরা কি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা নারী শিক্ষার্থীদের যৌন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিংবা শ্লীলতাহানি করেছেন? অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাকসুর যে দুজন প্রতিনিধি হকার ও চা-দোকানিদের পিটিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাদকাসক্তি নির্মূল করছেন। ব্যাপারটিকে তাঁরা ঘুরিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাঁরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁরা (বামপন্থীরা) যেন মুখ খুলতে না পারেন।
এই পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ছিল বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে হয়, ডাকসুতে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একটা বিশেষ দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সুচিন্তিতভাবে এ কাজগুলো করছেন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়। এই সুযোগে ছাত্রপ্রতিনিধিরা ভূমিকা গ্রহণ করছেন। এ কারণে আমি এ ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলব।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এসব না থাকার পরেও তাঁরা এটা কীভাবে করতে পারলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কি এড়াতে পারে?
এই প্রশাসন কিন্তু আরও অনেক কিছু করেনি। তাদের দায়িত্বের কাজ না করার কারণে এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই সময় কিন্তু ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি।
কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে, সে রকম কিছু আমরা শুনিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন কর্মচারী একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাঁর অপরাধের কারণে তাঁকে থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁকে ফুলের মালাও পরানো হয়েছে।
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রশাসন আসলে কোনো ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। তার কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।
গত সরকারের সময় ছাত্রলীগ যে অপকর্মগুলো করেছিল, বর্তমান ডাকসু নেতৃত্ব কি সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?
আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখনকার ডাকসু প্রতিনিধিরা কম কিছু করছেন না। এগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই। তাঁরা বলছেন, বামপন্থীদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। যাঁরা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে হেয় করছেন। বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ভবঘুরের ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করার সঙ্গে কনডম পাওয়ার ঘটনাটি প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কি কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন? কিছুদিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, দুই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য তাঁর মোবাইল ফোন চেক করেছেন। এই যে ধারাটা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ঢোকানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি এবং হকার উচ্ছেদের মূল কারণ কী? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
চা-দোকানি ও হকাররা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, এ রকম তথ্য আমরা এর আগে শুনিনি বা পাইনি। যেটা আমরা জেনেছি, এখানে কিছু ভবঘুরে, পাগল থাকেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডার বিষয়টা বড় করে উপস্থাপন করা হয়। সেসবের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমাদের ধারণা নেই। ধারণা নেই বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, আসলে তাঁদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যদি সম্পর্ক থাকত, তাহলে ক্যাম্পাসের পাশে যে শাহবাগ থানা আছে, তারা তা জানত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কারা মাদক বিক্রি করে, সেটা তারা জানে এবং চাইলে তাদেরকে ধরতে পারে। কিন্তু চা-বিক্রেতা বা হকারদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি কি এভাবে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন? এটা তো প্রশাসনের দায়িত্বে হওয়ার কথা?
সত্যি বলতে কি, ডাকসু প্রতিনিধিদের এগুলো করার কথা নয়। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবেই করেছেন। এটা করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁরা বরং প্রশাসনের কাছে দাবি তুলতে পারেন, আপনারা এখান থেকে চা-দোকানি ও হকারদের সরিয়ে নিন এবং এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন। এখানে চা-দোকানি বা হকাররা কেন এসেছেন? ক্যাম্পাসে সস্তা খাবারের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা এখানে ব্যবসা করতে পারছেন। এখানে মেট্রোরেলের কারণে মানুষের যাতায়াত আছে। দুপুর ও রাতের খাবারের পরেও শিক্ষার্থীদের খিদে লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁরাই কিন্তু এসব দোকানের বড় কনজ্যুমার বা ভোক্তা।
এখন তাঁরা যদি বলেন, এখানে কেন তাঁরা এলেন, কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হলো? তাহলে বলতে হবে, সেটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। সবার জানা থাকার কথা, জুলাই আন্দোলনের সময় এই মানুষগুলোই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হলে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্যও করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হকার বা চা-দোকানিদের একটা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ করার মতো, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন বয় ছিলেন নতুবা ক্যানটিনের অন্য কাজ করেছেন। এ ধরনের লোকজন অবসর সময়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এভাবে তাঁরা আবার ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছেন। এঁদেরকে বহিরাগত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উচ্ছেদ করা দোকানি বা হকারদের বিরুদ্ধে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা কতটা যৌক্তিক?
ক্যাম্পাসে একটা সিস্টেম থাকা দরকার। কাদেরকে এবং কীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হবে? এই অনুমতি যদি কেউ ভেতরে ভেতরে দিয়ে থাকে, কোনো চাঁদাবাজির ব্যাপার থাকে এবং সেখান থেকে কোনো অর্থ আয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাঁরা কোনোভাবেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে চাইবেন না। সেটা আইনি পথ নয়। লিখিত অনুমতি না থাকায় মুখে মুখে একধরনের অনুমতি দেওয়ার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ মৌখিক চুক্তি।
যেটাকে তাঁরা আইনবহির্ভূত বলছেন, সেটার কি কোনো লিখিত দলিল আছে? লিখিত থাকলে সেটা দেখার বিষয়। যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তার তো একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সেই নীতিমালা অনুযায়ী হকারদের বসতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ডাকসুর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হওয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় না?
প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দু-তিন রাতের মধ্যে দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে নতুন প্রশাসন আসার পর। তাঁরা কীভাবে এখানে এসে দোকান খুলতে পারলেন? এখানে নিশ্চয় কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের ব্যাপার আছে, যারা এই নতুন দোকানিদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুমান করতে পারি, এখানে কোনো না কোনোভাবে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ থাকতে পারে।
যে বামপন্থী ছাত্রনেতারা এসবের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরকে ‘গাঞ্জাটিয়া’সহ আপত্তিকর শব্দে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ভাষার ব্যবহার কি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে বিব্রত করে না?
যাঁরা এভাবে কথা বলছেন, তাঁদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা হলো, যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে হেয় করা। আমাদের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, কাউকে হেয়, অপমান করা এবং ট্যাগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো ঘটনায় প্রতিবাদ করতে না পারেন। সেই উদ্দেশ্য থেকে বামপন্থীদের ‘গাঞ্জাটিয়া’ এবং ভবঘুরে ও হকারদের সক্রিয়ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো বামপন্থী বা সাধারণ শিক্ষার্থী বলেননি যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চান না। বামপন্থী ছাত্রনেতারা কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।
এখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিছুদিন পর অন্য কোনো হকার অন্য প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারেন। তাঁরাই যদি আবার নারী শিক্ষার্থীদের গোপনে ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন? সেটার কী হবে?
ডাকসু প্রতিনিধি সত্যি সত্যি নিরাপত্তার কথা ভেবে থাকলে আগে তাঁদেরকে জানতে হবে, কোন কোন বিষয় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে। শিক্ষার্থীরা কি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা নারী শিক্ষার্থীদের যৌন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিংবা শ্লীলতাহানি করেছেন? অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাকসুর যে দুজন প্রতিনিধি হকার ও চা-দোকানিদের পিটিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাদকাসক্তি নির্মূল করছেন। ব্যাপারটিকে তাঁরা ঘুরিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাঁরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁরা (বামপন্থীরা) যেন মুখ খুলতে না পারেন।
এই পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ছিল বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে হয়, ডাকসুতে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একটা বিশেষ দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সুচিন্তিতভাবে এ কাজগুলো করছেন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়। এই সুযোগে ছাত্রপ্রতিনিধিরা ভূমিকা গ্রহণ করছেন। এ কারণে আমি এ ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলব।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এসব না থাকার পরেও তাঁরা এটা কীভাবে করতে পারলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কি এড়াতে পারে?
এই প্রশাসন কিন্তু আরও অনেক কিছু করেনি। তাদের দায়িত্বের কাজ না করার কারণে এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই সময় কিন্তু ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি।
কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে, সে রকম কিছু আমরা শুনিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন কর্মচারী একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাঁর অপরাধের কারণে তাঁকে থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁকে ফুলের মালাও পরানো হয়েছে।
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রশাসন আসলে কোনো ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। তার কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।
গত সরকারের সময় ছাত্রলীগ যে অপকর্মগুলো করেছিল, বর্তমান ডাকসু নেতৃত্ব কি সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?
আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখনকার ডাকসু প্রতিনিধিরা কম কিছু করছেন না। এগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই। তাঁরা বলছেন, বামপন্থীদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। যাঁরা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে হেয় করছেন। বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ভবঘুরের ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করার সঙ্গে কনডম পাওয়ার ঘটনাটি প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কি কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন? কিছুদিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, দুই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য তাঁর মোবাইল ফোন চেক করেছেন। এই যে ধারাটা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ঢোকানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়।
২ মিনিট আগে
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই।
১৯ ঘণ্টা আগে
পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।
১ দিন আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট মতভেদ নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়ার পর, আজ শনিবার পঞ্চম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে যেন কোনো বিকার নেই। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমমনা কয়েকটি দল ছাড়া এ বিষয়ে...
১ দিন আগেমৃত্যুঞ্জয় রায়

নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়। সারা গায়ে ছাই মেখে আধপোড়া গজার মাছ খেয়ে গগন নেচে নেচে দৌড়িয়েছে কয়েক মাইল ঢাকের তালে তালে। মোটা কাছি দিয়ে বেঁধে বিশজন জোয়ান পুরুষও গগনকে ধরে রাখতে পারেনি। এমনি শক্তিধর নিশকাইন্দা দেওয়ের ভর!’
অনেক দিন থেকেই ইচ্ছা ছিল পারিল-বলধারার সেই প্রাচীন বটগাছটা দেখার। অবশেষে এ মাসেই সে সুযোগ এল। ড. নওয়াজেশের ভাইপো নাসিম আহমেদ নাদভী ও আজাদ ভাইয়ের সঙ্গে সেখানে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। বিরাট এলাকাজুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে সে গাছটা অনেকটা জায়গা ছেয়ে ফেলেছে। গোড়াটা পাকা করে বাঁধানো। তার তলায় শুয়ে আছে নিশকাইন্দা দেওয়ের মাটির ক্ষয়িষ্ণু অবয়ব, বিশাল দেহ, প্রায় ৪০ ফুট লম্বা আর ৩০ ফুট চওড়া। কে এই নিশকাইন্দা দেও তা কেউ বলতে পারে না। কারও কারও ধারণা, ওটা শিবের এক ভয়ংকর রূপ। প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তির দিন সে গাছের তলায় বিরাট মেলা বসে, নিশকাইন্দা দেওয়ের পূজা হয়। ঢাক বাজে, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনিতে সে বটতলাটা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। ভক্তরা মাটির ঘোড়া গাছের তলায় রেখে মানত করে। বড় বড় জটায়, থামের মতো গুঁড়িতে সিঁদুর-তেল দিয়ে দেবতার প্রতীক আঁকে। সে গাছটা স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে হয়ে উঠেছে এক পবিত্র বৃক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, গাছটার বয়স প্রায় ৩০০ বছর। গ্রামবাসীর ধারণা, বলধারার সে গাছটাই গ্রামকে ঝড়ঝাপটা ও বিপদ-আপদ থেকে শত শত বছর ধরে রক্ষা করে চলেছে। তাই ওর প্রতি তাদের এ মান্যতা। কিন্তু যে গাছকে তারা বটবৃক্ষ বলে, নামটা যার কারণে হয়েছে বলধারার বটতলা, আসলে সেটি বটগাছ না, অশ্বত্থ না। ড. নওয়াজেশ আহমদেরও সন্দেহ ছিল ওটা নিয়ে, ভেবেছিলেন পাকুড়গাছ। সে যাই হোক, গাছটি যে অনেক প্রাচীন ও পবিত্র, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এরূপ আরও দুটি প্রাচীন গাছের দেখা পেলাম এ মাসেই। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার হিরনাল গ্রামে সে গাছ দুটি রয়েছে। এর একটি বটগাছ, অন্যটি খিরনিগাছ। পাশাপাশি দুটি গাছের অবস্থান। বটগাছটা প্রায় তিন বিঘা জমিজুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে জায়গাটা অন্ধকার করে ফেলেছে। অনেক খুঁজেও সে বটগাছের মূল গাছ বা গোড়া কোনটি, তা দেখতে পেলাম না। অসংখ্য ঝুরি নামিয়ে মোটা মোটা থামের মতো করে তা দিয়ে ঠেক দিয়ে রেখেছে ভারী ডালপালাগুলোকে। সে বটতলাতেও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পূজা করে, মানত করে। কুলাদি মৌজায় অবস্থিত সে গাছটি হিরনাল বটগাছ নামে পরিচিত। অনেকের ধারণা, বটগাছটির বয়স হবে প্রায় ৪০০ বছর। এর কাছেই রয়েছে এর চেয়েও বয়সী আরেকটি গাছ, সেখানকার অনেকেরই ধারণা সে গাছটির বয়স হবে কমপক্ষে ৫০০ বছর। সেটি বট না, খিরনিগাছ। পাশে হজরত শাহ আল হাদী (র.)-এর মাজার। সে বিশাল গাছটির গোড়াটা বৃত্তাকার বেদি করে বাঁধানো। সে গ্রামে ওই খিরনিগাছটিও পেয়েছে পবিত্র বৃক্ষের মর্যাদা, কেউ তার একটা পাতাও ছেঁড়ে না। মানত করে তা পূরণ হলে কেউ কেউ খিরনিতলায় এসে শিরনি দিয়ে যায়। এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে মানুষের প্রগাঢ় বিশ্বাস ও ভয় গাছগুলোকে টিকিয়ে রেখেছে। গাছগুলোও গ্রামের মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আগলে রাখছে।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী জমিদারবাড়িতেও আছে প্রায় আড়াই শ বছর বয়সী একটি কাঠগোলাপগাছ। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রামে আছে প্রায় ২০০ বছর বয়সী একটি শিমুলগাছ। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গ্রামে আছে ২২০ বছর বয়সী একটি সূর্যপুরী আমগাছ। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হিরণ্যকান্দিতে আছে একটি শতবর্ষী আমগাছ। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী গ্রামের কাছে আছে একটি প্রাচীন গাবগাছ। ধারণা করা হয়, এশিয়ার বৃহত্তম ও সবচেয়ে বেশি বয়সী একটি গাবগাছ আছে মাগুরা জেলার সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাটকেলবাড়িয়া গ্রামে। এ দুটি গাবগাছেরই বয়স হবে কয়েক শ বছর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার শুড়রা গ্রামে আছে প্রায় ৫০০ বছর বয়সী একটি তেঁতুলগাছ, যা তেভাগা আন্দোলন ও সাঁওতাল বিদ্রোহের নীরব সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে। এসব সুসংবাদের পাশাপাশি দুঃসংবাদও শুনতে পাই। রাজশাহীর তানোরের অমৃতপুর গ্রামের সেই শতবর্ষী তেঁতুলগাছটা কেন কাটা পড়ল?
ঢাকা শহরেও কিছু শতবর্ষী বৃক্ষ আছে। এগুলোর মধ্যে হেয়ার রোডের পাদাউক, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সীমানাপ্রাচীরের কোলে ব্ল্যাকবিন গাছ, ফুলার রোডে উদয়ন স্কুলের সামনে থাকা তেঁতুলগাছ ও রোডের মুখে থাকা বিশাল আকৃতির রেইনট্রিগাছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শামসুন্নাহার হল ও টিএসসির সামনে আছে শতবর্ষী বুদ্ধ নারকেলগাছ, কার্জন হলের সামনে আছে শতবর্ষী নাগলিঙ্গম ও মেহগনিগাছ, একটু দূরেই আছে কনকচূড়া ও গ্লিরিসিডিয়াগাছ। রমনা পার্কের মধ্যে আছে বিশাল আকৃতির দুটি ছাতিমগাছ। এ ছাড়া সেখানে আছে শতবর্ষী মহুয়া ও কুসুমগাছ। লেদার টেকনোলজি কলেজ চত্বরে আছে একটি প্রাচীন খিরনিগাছ। এ রকম শত শত প্রাচীন বৃক্ষ পাওয়া যাবে সারা দেশে।
অতীতে প্রায় গ্রামেই একটা বিশাল বটগাছ থাকত। সে বটগাছগুলো বিভিন্ন দেবতার থান (স্থানের বিকৃত শব্দ) হিসেবে পরিচিতি পেত। সেসব থানে প্রতিবছর বিশেষ কোনো দিনে বিশেষ দেব-দেবীর পূজা হতো, এখনো কোথাও কোথাও তা হয়। বটতলায় মেলা ও হাটবাজার বসত। নদীর ধারে খেয়াঘাটের পাড়ে বট আর অশ্বত্থগাছ লাগানো হতো, যাতে খেয়ার যাত্রীরা সেখানে জিরিয়ে অপেক্ষা করতে পারে। এমনকি অনেক স্কুলের বিশাল মাঠের কোণে থাকত বিশাল বিশাল বৃক্ষ, যার তলায় শিশুরা খেলত। আজ সেসব অনেকের কাছেই অতীতের স্মৃতি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীপল্লিতে গিয়েও দেখেছি, সেসব গ্রামে অন্তত একটি প্রাচীন বৃক্ষ রয়েছে। মারমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা কোনো স্থানে তাদের নতুন বসতি স্থাপনের আগে প্রথমে সে জায়গায় একটি তেঁতুলগাছ লাগিয়ে রেখে আসে। কয়েক বছর পর সেখানে গিয়ে যদি দেখতে পায় যে গাছটি খুব বেড়েছে, তাহলে সে জায়গায় তারা নতুন বসতি স্থাপন করে। সে তেঁতুলগাছই যেন ওদের রক্ষক ও প্রহরী হয়ে দাঁড়ায়।
কেন একটি প্রাচীন বৃক্ষ কোনো এলাকার মানুষের জন্য রক্ষক হবে না? একটি বর্ষীয়ান আমগাছ গড়ে দিনে ১০০ গ্যালন পানি তার পাতার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে সে এলাকাকে শীতল করে দেয়। এটা অনুভব করা যায় ঢাকা শহরেই, মতিঝিল থেকে ফিরে হঠাৎ করে বুয়েট ক্যাম্পাসে ঢুকলে, আহা কী প্রশান্তি আর শীতলতা সেখানে! তাই যেকোনোভাবে হোক এ দেশের প্রাচীন ও পবিত্র গাছগুলো যত দিন নিজেরা বাঁচতে চায়, তত দিন তাদের বাঁচতে দিতে হবে। আশার কথা যে সরকার ইতিমধ্যে দেশের প্রাচীন বৃক্ষগুলোকে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর ধারা ২৩ (১) অনুযায়ী স্মারক বৃক্ষ, পবিত্র বৃক্ষ ও প্রাচীন বৃক্ষগুলোকে রক্ষার ঘোষণা দিয়েছে। আবেদন জানিয়েছে সেগুলো সংরক্ষণের স্বার্থে ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক গাছগুলোকে চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করতে। এ বিষয়ে আমাদের আশপাশে এরূপ যেসব বৃক্ষ রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে তার তথ্য আমাদেরই সরকারকে তথা বন অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। স্থানীয়ভাবে নিজেরা সচেতন হয়ে সেগুলো রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের পক্ষে কখনো প্রতিটি গাছের পাশে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা সম্ভব না, বিষয়টা হাস্যকরও বটে। আর গবেষকদের দায়িত্ব হবে, তালিকা তৈরির পর সেসব গাছের সঠিক বয়স নিরূপণপূর্বক ডেটাবেইস তৈরি করা, এসব গাছের ইতিহাস উদ্ধার করা।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়। সারা গায়ে ছাই মেখে আধপোড়া গজার মাছ খেয়ে গগন নেচে নেচে দৌড়িয়েছে কয়েক মাইল ঢাকের তালে তালে। মোটা কাছি দিয়ে বেঁধে বিশজন জোয়ান পুরুষও গগনকে ধরে রাখতে পারেনি। এমনি শক্তিধর নিশকাইন্দা দেওয়ের ভর!’
অনেক দিন থেকেই ইচ্ছা ছিল পারিল-বলধারার সেই প্রাচীন বটগাছটা দেখার। অবশেষে এ মাসেই সে সুযোগ এল। ড. নওয়াজেশের ভাইপো নাসিম আহমেদ নাদভী ও আজাদ ভাইয়ের সঙ্গে সেখানে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। বিরাট এলাকাজুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে সে গাছটা অনেকটা জায়গা ছেয়ে ফেলেছে। গোড়াটা পাকা করে বাঁধানো। তার তলায় শুয়ে আছে নিশকাইন্দা দেওয়ের মাটির ক্ষয়িষ্ণু অবয়ব, বিশাল দেহ, প্রায় ৪০ ফুট লম্বা আর ৩০ ফুট চওড়া। কে এই নিশকাইন্দা দেও তা কেউ বলতে পারে না। কারও কারও ধারণা, ওটা শিবের এক ভয়ংকর রূপ। প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তির দিন সে গাছের তলায় বিরাট মেলা বসে, নিশকাইন্দা দেওয়ের পূজা হয়। ঢাক বাজে, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনিতে সে বটতলাটা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। ভক্তরা মাটির ঘোড়া গাছের তলায় রেখে মানত করে। বড় বড় জটায়, থামের মতো গুঁড়িতে সিঁদুর-তেল দিয়ে দেবতার প্রতীক আঁকে। সে গাছটা স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে হয়ে উঠেছে এক পবিত্র বৃক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, গাছটার বয়স প্রায় ৩০০ বছর। গ্রামবাসীর ধারণা, বলধারার সে গাছটাই গ্রামকে ঝড়ঝাপটা ও বিপদ-আপদ থেকে শত শত বছর ধরে রক্ষা করে চলেছে। তাই ওর প্রতি তাদের এ মান্যতা। কিন্তু যে গাছকে তারা বটবৃক্ষ বলে, নামটা যার কারণে হয়েছে বলধারার বটতলা, আসলে সেটি বটগাছ না, অশ্বত্থ না। ড. নওয়াজেশ আহমদেরও সন্দেহ ছিল ওটা নিয়ে, ভেবেছিলেন পাকুড়গাছ। সে যাই হোক, গাছটি যে অনেক প্রাচীন ও পবিত্র, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এরূপ আরও দুটি প্রাচীন গাছের দেখা পেলাম এ মাসেই। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার হিরনাল গ্রামে সে গাছ দুটি রয়েছে। এর একটি বটগাছ, অন্যটি খিরনিগাছ। পাশাপাশি দুটি গাছের অবস্থান। বটগাছটা প্রায় তিন বিঘা জমিজুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে জায়গাটা অন্ধকার করে ফেলেছে। অনেক খুঁজেও সে বটগাছের মূল গাছ বা গোড়া কোনটি, তা দেখতে পেলাম না। অসংখ্য ঝুরি নামিয়ে মোটা মোটা থামের মতো করে তা দিয়ে ঠেক দিয়ে রেখেছে ভারী ডালপালাগুলোকে। সে বটতলাতেও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পূজা করে, মানত করে। কুলাদি মৌজায় অবস্থিত সে গাছটি হিরনাল বটগাছ নামে পরিচিত। অনেকের ধারণা, বটগাছটির বয়স হবে প্রায় ৪০০ বছর। এর কাছেই রয়েছে এর চেয়েও বয়সী আরেকটি গাছ, সেখানকার অনেকেরই ধারণা সে গাছটির বয়স হবে কমপক্ষে ৫০০ বছর। সেটি বট না, খিরনিগাছ। পাশে হজরত শাহ আল হাদী (র.)-এর মাজার। সে বিশাল গাছটির গোড়াটা বৃত্তাকার বেদি করে বাঁধানো। সে গ্রামে ওই খিরনিগাছটিও পেয়েছে পবিত্র বৃক্ষের মর্যাদা, কেউ তার একটা পাতাও ছেঁড়ে না। মানত করে তা পূরণ হলে কেউ কেউ খিরনিতলায় এসে শিরনি দিয়ে যায়। এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে মানুষের প্রগাঢ় বিশ্বাস ও ভয় গাছগুলোকে টিকিয়ে রেখেছে। গাছগুলোও গ্রামের মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আগলে রাখছে।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী জমিদারবাড়িতেও আছে প্রায় আড়াই শ বছর বয়সী একটি কাঠগোলাপগাছ। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রামে আছে প্রায় ২০০ বছর বয়সী একটি শিমুলগাছ। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গ্রামে আছে ২২০ বছর বয়সী একটি সূর্যপুরী আমগাছ। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হিরণ্যকান্দিতে আছে একটি শতবর্ষী আমগাছ। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালী গ্রামের কাছে আছে একটি প্রাচীন গাবগাছ। ধারণা করা হয়, এশিয়ার বৃহত্তম ও সবচেয়ে বেশি বয়সী একটি গাবগাছ আছে মাগুরা জেলার সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের পাটকেলবাড়িয়া গ্রামে। এ দুটি গাবগাছেরই বয়স হবে কয়েক শ বছর। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার শুড়রা গ্রামে আছে প্রায় ৫০০ বছর বয়সী একটি তেঁতুলগাছ, যা তেভাগা আন্দোলন ও সাঁওতাল বিদ্রোহের নীরব সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে। এসব সুসংবাদের পাশাপাশি দুঃসংবাদও শুনতে পাই। রাজশাহীর তানোরের অমৃতপুর গ্রামের সেই শতবর্ষী তেঁতুলগাছটা কেন কাটা পড়ল?
ঢাকা শহরেও কিছু শতবর্ষী বৃক্ষ আছে। এগুলোর মধ্যে হেয়ার রোডের পাদাউক, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সীমানাপ্রাচীরের কোলে ব্ল্যাকবিন গাছ, ফুলার রোডে উদয়ন স্কুলের সামনে থাকা তেঁতুলগাছ ও রোডের মুখে থাকা বিশাল আকৃতির রেইনট্রিগাছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শামসুন্নাহার হল ও টিএসসির সামনে আছে শতবর্ষী বুদ্ধ নারকেলগাছ, কার্জন হলের সামনে আছে শতবর্ষী নাগলিঙ্গম ও মেহগনিগাছ, একটু দূরেই আছে কনকচূড়া ও গ্লিরিসিডিয়াগাছ। রমনা পার্কের মধ্যে আছে বিশাল আকৃতির দুটি ছাতিমগাছ। এ ছাড়া সেখানে আছে শতবর্ষী মহুয়া ও কুসুমগাছ। লেদার টেকনোলজি কলেজ চত্বরে আছে একটি প্রাচীন খিরনিগাছ। এ রকম শত শত প্রাচীন বৃক্ষ পাওয়া যাবে সারা দেশে।
অতীতে প্রায় গ্রামেই একটা বিশাল বটগাছ থাকত। সে বটগাছগুলো বিভিন্ন দেবতার থান (স্থানের বিকৃত শব্দ) হিসেবে পরিচিতি পেত। সেসব থানে প্রতিবছর বিশেষ কোনো দিনে বিশেষ দেব-দেবীর পূজা হতো, এখনো কোথাও কোথাও তা হয়। বটতলায় মেলা ও হাটবাজার বসত। নদীর ধারে খেয়াঘাটের পাড়ে বট আর অশ্বত্থগাছ লাগানো হতো, যাতে খেয়ার যাত্রীরা সেখানে জিরিয়ে অপেক্ষা করতে পারে। এমনকি অনেক স্কুলের বিশাল মাঠের কোণে থাকত বিশাল বিশাল বৃক্ষ, যার তলায় শিশুরা খেলত। আজ সেসব অনেকের কাছেই অতীতের স্মৃতি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীপল্লিতে গিয়েও দেখেছি, সেসব গ্রামে অন্তত একটি প্রাচীন বৃক্ষ রয়েছে। মারমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা কোনো স্থানে তাদের নতুন বসতি স্থাপনের আগে প্রথমে সে জায়গায় একটি তেঁতুলগাছ লাগিয়ে রেখে আসে। কয়েক বছর পর সেখানে গিয়ে যদি দেখতে পায় যে গাছটি খুব বেড়েছে, তাহলে সে জায়গায় তারা নতুন বসতি স্থাপন করে। সে তেঁতুলগাছই যেন ওদের রক্ষক ও প্রহরী হয়ে দাঁড়ায়।
কেন একটি প্রাচীন বৃক্ষ কোনো এলাকার মানুষের জন্য রক্ষক হবে না? একটি বর্ষীয়ান আমগাছ গড়ে দিনে ১০০ গ্যালন পানি তার পাতার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে সে এলাকাকে শীতল করে দেয়। এটা অনুভব করা যায় ঢাকা শহরেই, মতিঝিল থেকে ফিরে হঠাৎ করে বুয়েট ক্যাম্পাসে ঢুকলে, আহা কী প্রশান্তি আর শীতলতা সেখানে! তাই যেকোনোভাবে হোক এ দেশের প্রাচীন ও পবিত্র গাছগুলো যত দিন নিজেরা বাঁচতে চায়, তত দিন তাদের বাঁচতে দিতে হবে। আশার কথা যে সরকার ইতিমধ্যে দেশের প্রাচীন বৃক্ষগুলোকে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর ধারা ২৩ (১) অনুযায়ী স্মারক বৃক্ষ, পবিত্র বৃক্ষ ও প্রাচীন বৃক্ষগুলোকে রক্ষার ঘোষণা দিয়েছে। আবেদন জানিয়েছে সেগুলো সংরক্ষণের স্বার্থে ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক গাছগুলোকে চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করতে। এ বিষয়ে আমাদের আশপাশে এরূপ যেসব বৃক্ষ রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে তার তথ্য আমাদেরই সরকারকে তথা বন অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। স্থানীয়ভাবে নিজেরা সচেতন হয়ে সেগুলো রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের পক্ষে কখনো প্রতিটি গাছের পাশে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা সম্ভব না, বিষয়টা হাস্যকরও বটে। আর গবেষকদের দায়িত্ব হবে, তালিকা তৈরির পর সেসব গাছের সঠিক বয়স নিরূপণপূর্বক ডেটাবেইস তৈরি করা, এসব গাছের ইতিহাস উদ্ধার করা।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
৭ দিন আগে
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই।
১৯ ঘণ্টা আগে
পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।
১ দিন আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট মতভেদ নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়ার পর, আজ শনিবার পঞ্চম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে যেন কোনো বিকার নেই। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমমনা কয়েকটি দল ছাড়া এ বিষয়ে...
১ দিন আগেরাজিউল হাসান

‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই। দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা বিশ্বটাকে আরও বাসযোগ্য করব। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কতটা রাখতে পারছি? জঞ্জাল তো সরছেই না, বরং এই আধুনিক যুগেও পৃথিবীর বুকে শ্বাস ফেলতে না ফেলতেই কিছু নবজাতকের ঠাঁই হয় আবর্জনার স্তূপে, অকারণে-নিঃশব্দে ঝরে যায় তাদের প্রাণ।
পৃথিবীটা সুন্দর। জীবন আরও সুন্দর। কিন্তু এত এত সুন্দরের মাঝে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা সম্ভবত ডাস্টবিনে নবজাতকের ঠাঁই হওয়া। আবর্জনার স্তূপ কেন কিছু নবজাতকের ঠিকানা হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। প্রতিটা প্রাণই গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রেক্ষাপট থেকে জীবন বাঁচানোর দিকে মনোযোগ আকর্ষণই এ লেখার উদ্দেশ্য। কারও জীবনে সেই নবজাতক সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত বলেই নিজের কিংবা সঙ্গীর নাড়ি ছেঁড়া ধনকে এভাবে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সভ্য জগতে এমনটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
মানবাধিকার সংগঠন সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যের বরাত দিয়ে দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় গত ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে মোট ৯৪টি নবজাতক উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ৬৪টিই মৃত।
১২ এপ্রিল ‘বিশ্ব পথশিশু দিবস’ সামনে রেখে গত ১০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন’। এই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নবজাতকসহ বিভিন্ন বয়সী শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে প্রায় ১০ হাজার পথশিশু ও নবজাতকের সন্ধান মিলেছে। তাদের মধ্যে ৮০০ ছিল নবজাতক। ২০২৪ সালে উদ্ধার হওয়া নবজাতকদের ৬৮ শতাংশই উদ্ধার হয়েছে মৃত অবস্থায়। অথচ পৃথিবীর নতুন এই অতিথিদের জীবন এভাবে চোখ মেলার আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল না। তাদের থাকার কথা ছিল মায়ের কোলে, পরিবারের আলো হয়ে। কিন্তু তা না হয়ে তাদের ঠিকানা হয়েছে আবর্জনার স্তূপে।
অথচ এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে আমাদের সমাজে। একটা সন্তানের জন্য অনেক দম্পতির জীবন অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা সেই নবজাতকের সঙ্গে যদি কোনোভাবে ওই সব দম্পতির যোগসূত্র ঘটিয়ে দেওয়া যায়, তাহলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। একটু সচেতন আর উদ্যোগী হলে এই যোগসূত্র ঘটানো সম্ভব, ঠেকানো সম্ভব নতুন প্রাণগুলোর ঝরে পড়া।
একটি শিশু যখন জন্ম নেয়, তার প্রতি যেমন মা-বাবার দায়িত্ব থাকে, একইভাবে দায়িত্ব থাকে রাষ্ট্রেরও। উন্নত বিশ্বে শিশুর দায়দায়িত্ব পালনে মা-বাবা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র রীতিমতো হস্তক্ষেপ করে বসে। বলিউডে এ নিয়ে একটি ছবিও আছে—‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। ছবিটিতে যদিও কোল থেকে সন্তান কেড়ে নেওয়ার পর একজন মায়ের আকুতি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে বড় একটি বার্তাও আছে। নরওয়ে, ফিনল্যান্ডসহ উন্নত রাষ্ট্রগুলো মনে করে, আজকের শিশু আগামী দিনের সম্পদ। কাজেই তার সুরক্ষা, তাকে বড় করে তোলার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মা-বাবা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা যদি কোনোভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তাহলে রাষ্ট্র নিজেই সে দায়িত্ব নিয়ে নেবে।
এমন ব্যবস্থার কারণেই উন্নত বিশ্বে ডাস্টবিন কখনো কোনো নবজাতকের ঠিকানা হয় না। এমন ঘটনা কেবল ঘটে আমাদের দেশের মতো উন্নত হওয়ার চেষ্টায় থাকা দেশগুলোয়। কারণ, এখানে এখনো আজকের শিশুকে আগামীর সম্পদ বলে মনে করা হয় না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঠেকানোর উপায় কী? আমাদের দেশে অবশ্য একটি সমাধান আছে। সেটা হলো সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘ছোটমনি নিবাস’। সারা দেশে ছয়টি বিভাগে পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন ০-৭ বছর বয়সী উদ্ধারকৃত শিশুদের এখানে লালনপালন করা হয়। কিন্তু ডাস্টবিনে পড়ে থাকা শিশুকে উদ্ধার করে সেই নিবাস পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়। এর পাশাপাশি যদি হাসপাতালগুলোয় ‘নবজাতক ব্যাংক’ থাকত, তাহলে হয়তো ডাস্টবিনে নবজাতকের ঠাঁইই হতো না। তারপরও যদি কোনো নবজাতককে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হয়, তার জীবন অন্তত সেই আবর্জনার স্তূপেই শেষ হতো না। এই ব্যবস্থা এমনভাবে করা যেতে পারে যেখানে কেউ চাইলে তাঁর ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানকে’ ডাস্টবিনে ছুড়ে না ফেলে নবজাতক ব্যাংকে রেখে যাবেন। সেখানে তাঁর পরিচয় গোপন থাকবে। আগ্রহী দম্পতিরা হাসপাতালে যোগাযোগ করে সেই ব্যাংক থেকে সন্তান দত্তক নিতে পারবেন। এতে সন্তানহীন দম্পতিরা যেমন মা-বাবা হওয়ার স্বাদ পাবেন, একইভাবে মা-বাবাহীন নবজাতকগুলোও পরিবার খুঁজে পাবে।
কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন, দেশজুড়ে থাকা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের এতিমখানা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘ছোটমনি নিবাস’ থেকেই তো দত্তক নেওয়া যায়। হাসপাতালে আবার ‘নবজাতক ব্যাংক’ খোলার ঝক্কি নিতে হবে কেন? ওপরে যে তথ্যগুলো আমি উল্লেখ করেছি, তাতেই এই প্রশ্নের জবাব রয়েছে। একটি তথ্য আবার উল্লেখ করছি—২০২৪ সালে উদ্ধার হওয়া নবজাতকদের ৬৮ শতাংশই উদ্ধার হয়েছে মৃত অবস্থায়।
একটি শিশুর জন্মের পর তার কিছু সেবার প্রয়োজন হয়। সেই সেবাটা না পেলে তার জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কাজেই একটি নবজাতককে ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করে ‘ছোটমনি নিবাস’ কিংবা এতিমখানায় নেওয়ার চেয়ে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া জরুরি। হাসপাতালে যদি ‘নবজাতক ব্যাংক’ থাকে, তাহলে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা শিশুগুলোর জন্য সেই সেবা পাওয়া সহজ হবে। ফলে শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে না, অকালে ঝরবে না তাদের প্রাণ।

‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই। দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিই, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা বিশ্বটাকে আরও বাসযোগ্য করব। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি কতটা রাখতে পারছি? জঞ্জাল তো সরছেই না, বরং এই আধুনিক যুগেও পৃথিবীর বুকে শ্বাস ফেলতে না ফেলতেই কিছু নবজাতকের ঠাঁই হয় আবর্জনার স্তূপে, অকারণে-নিঃশব্দে ঝরে যায় তাদের প্রাণ।
পৃথিবীটা সুন্দর। জীবন আরও সুন্দর। কিন্তু এত এত সুন্দরের মাঝে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা সম্ভবত ডাস্টবিনে নবজাতকের ঠাঁই হওয়া। আবর্জনার স্তূপ কেন কিছু নবজাতকের ঠিকানা হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। প্রতিটা প্রাণই গুরুত্বপূর্ণ। সেই প্রেক্ষাপট থেকে জীবন বাঁচানোর দিকে মনোযোগ আকর্ষণই এ লেখার উদ্দেশ্য। কারও জীবনে সেই নবজাতক সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত বলেই নিজের কিংবা সঙ্গীর নাড়ি ছেঁড়া ধনকে এভাবে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সভ্য জগতে এমনটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
মানবাধিকার সংগঠন সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যের বরাত দিয়ে দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় গত ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে মোট ৯৪টি নবজাতক উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ৬৪টিই মৃত।
১২ এপ্রিল ‘বিশ্ব পথশিশু দিবস’ সামনে রেখে গত ১০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘ডা. মুজিব নিউবর্ন ফাউন্ডেশন’। এই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নবজাতকসহ বিভিন্ন বয়সী শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে প্রায় ১০ হাজার পথশিশু ও নবজাতকের সন্ধান মিলেছে। তাদের মধ্যে ৮০০ ছিল নবজাতক। ২০২৪ সালে উদ্ধার হওয়া নবজাতকদের ৬৮ শতাংশই উদ্ধার হয়েছে মৃত অবস্থায়। অথচ পৃথিবীর নতুন এই অতিথিদের জীবন এভাবে চোখ মেলার আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল না। তাদের থাকার কথা ছিল মায়ের কোলে, পরিবারের আলো হয়ে। কিন্তু তা না হয়ে তাদের ঠিকানা হয়েছে আবর্জনার স্তূপে।
অথচ এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে আমাদের সমাজে। একটা সন্তানের জন্য অনেক দম্পতির জীবন অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা সেই নবজাতকের সঙ্গে যদি কোনোভাবে ওই সব দম্পতির যোগসূত্র ঘটিয়ে দেওয়া যায়, তাহলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। একটু সচেতন আর উদ্যোগী হলে এই যোগসূত্র ঘটানো সম্ভব, ঠেকানো সম্ভব নতুন প্রাণগুলোর ঝরে পড়া।
একটি শিশু যখন জন্ম নেয়, তার প্রতি যেমন মা-বাবার দায়িত্ব থাকে, একইভাবে দায়িত্ব থাকে রাষ্ট্রেরও। উন্নত বিশ্বে শিশুর দায়দায়িত্ব পালনে মা-বাবা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র রীতিমতো হস্তক্ষেপ করে বসে। বলিউডে এ নিয়ে একটি ছবিও আছে—‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। ছবিটিতে যদিও কোল থেকে সন্তান কেড়ে নেওয়ার পর একজন মায়ের আকুতি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে বড় একটি বার্তাও আছে। নরওয়ে, ফিনল্যান্ডসহ উন্নত রাষ্ট্রগুলো মনে করে, আজকের শিশু আগামী দিনের সম্পদ। কাজেই তার সুরক্ষা, তাকে বড় করে তোলার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মা-বাবা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা যদি কোনোভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তাহলে রাষ্ট্র নিজেই সে দায়িত্ব নিয়ে নেবে।
এমন ব্যবস্থার কারণেই উন্নত বিশ্বে ডাস্টবিন কখনো কোনো নবজাতকের ঠিকানা হয় না। এমন ঘটনা কেবল ঘটে আমাদের দেশের মতো উন্নত হওয়ার চেষ্টায় থাকা দেশগুলোয়। কারণ, এখানে এখনো আজকের শিশুকে আগামীর সম্পদ বলে মনে করা হয় না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঠেকানোর উপায় কী? আমাদের দেশে অবশ্য একটি সমাধান আছে। সেটা হলো সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘ছোটমনি নিবাস’। সারা দেশে ছয়টি বিভাগে পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন ০-৭ বছর বয়সী উদ্ধারকৃত শিশুদের এখানে লালনপালন করা হয়। কিন্তু ডাস্টবিনে পড়ে থাকা শিশুকে উদ্ধার করে সেই নিবাস পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়। এর পাশাপাশি যদি হাসপাতালগুলোয় ‘নবজাতক ব্যাংক’ থাকত, তাহলে হয়তো ডাস্টবিনে নবজাতকের ঠাঁইই হতো না। তারপরও যদি কোনো নবজাতককে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হয়, তার জীবন অন্তত সেই আবর্জনার স্তূপেই শেষ হতো না। এই ব্যবস্থা এমনভাবে করা যেতে পারে যেখানে কেউ চাইলে তাঁর ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানকে’ ডাস্টবিনে ছুড়ে না ফেলে নবজাতক ব্যাংকে রেখে যাবেন। সেখানে তাঁর পরিচয় গোপন থাকবে। আগ্রহী দম্পতিরা হাসপাতালে যোগাযোগ করে সেই ব্যাংক থেকে সন্তান দত্তক নিতে পারবেন। এতে সন্তানহীন দম্পতিরা যেমন মা-বাবা হওয়ার স্বাদ পাবেন, একইভাবে মা-বাবাহীন নবজাতকগুলোও পরিবার খুঁজে পাবে।
কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন, দেশজুড়ে থাকা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের এতিমখানা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ‘ছোটমনি নিবাস’ থেকেই তো দত্তক নেওয়া যায়। হাসপাতালে আবার ‘নবজাতক ব্যাংক’ খোলার ঝক্কি নিতে হবে কেন? ওপরে যে তথ্যগুলো আমি উল্লেখ করেছি, তাতেই এই প্রশ্নের জবাব রয়েছে। একটি তথ্য আবার উল্লেখ করছি—২০২৪ সালে উদ্ধার হওয়া নবজাতকদের ৬৮ শতাংশই উদ্ধার হয়েছে মৃত অবস্থায়।
একটি শিশুর জন্মের পর তার কিছু সেবার প্রয়োজন হয়। সেই সেবাটা না পেলে তার জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কাজেই একটি নবজাতককে ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করে ‘ছোটমনি নিবাস’ কিংবা এতিমখানায় নেওয়ার চেয়ে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া জরুরি। হাসপাতালে যদি ‘নবজাতক ব্যাংক’ থাকে, তাহলে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা শিশুগুলোর জন্য সেই সেবা পাওয়া সহজ হবে। ফলে শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে না, অকালে ঝরবে না তাদের প্রাণ।

মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
৭ দিন আগে
নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়।
২ মিনিট আগে
পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।
১ দিন আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট মতভেদ নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়ার পর, আজ শনিবার পঞ্চম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে যেন কোনো বিকার নেই। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমমনা কয়েকটি দল ছাড়া এ বিষয়ে...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। কিছুটা ছোট পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ১১০ টাকা দরে।
পেঁয়াজের দাম কবে কমবে, সেটা অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না। শঙ্কার ব্যাপার, গত বছরের মজুত পেঁয়াজের ১০ শতাংশ রয়েছে। বাকি ৯০ শতাংশ খাওয়া হয়ে গেছে। মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হলেও তা বাজারে আসতে আরও মাস দেড়েক লাগবে। তাহলে পেঁয়াজের এই উচ্চমূল্য কমবে কী করে?
আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত পেঁয়াজ-সংক্রান্ত খবরটিতে ক্রেতার জন্য আশাবাদী কোনো উপাদান নেই। বোঝাই যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন উচ্চমূল্যেই পেঁয়াজ কিনে খেতে হবে। আর সরকার যদি চায়, তাহলে দাম কমতে পারে। আপাতত তার একটাই পথ—আমদানি। সরকার কি পেঁয়াজ আমদানির দিকে যাবে, নাকি নতুন পেঁয়াজ আসা পর্যন্ত উচ্চমূল্যেই পেঁয়াজ খাওয়াকেই স্বাভাবিক বলে মনে করবে? কেউ কেউ তো স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, গত বছরও এই সময় এ রকমই ছিল পেঁয়াজের দাম। যদি সেটা জানাই থাকে, তাহলে আগেই কেন দাম স্থিতিশীল রাখার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের নিশ্চয়ই মনে পড়ে যাবে, গত বছর নভেম্বরে আলুর কেজি হয়েছিল ৭০ টাকা। এবার কেন যেন আলু তার রক্তচক্ষু এখনো দেখায়নি। মোটামুটি ২০-২৫ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে গোল আলু। পেঁয়াজের সঙ্গে সন্ধি করে আলুর দামও যেন বেড়ে না যায়, কায়মনোবাক্যে তা প্রার্থনা করি।
পেঁয়াজের ঘাটতির কারণেই কি দাম বাড়ল, নাকি এর পেছনে কোনো সিন্ডিকেটের হাত আছে, তা জানা দরকার। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সুপারিশ করেছিল, পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকা পার হলেই আমদানির অনুমতি দিতে হবে। আর সেটা করা হলে একই সঙ্গে শুল্ক ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। ভাবনাটি ভালো ছিল। পেঁয়াজ নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্দিনে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশকে কাজে পরিণত করলে ভালো হয়।
সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এ সময় বাজার স্থিতিশীল না থাকলে মানুষ বিপদে পড়বে। শীতের সবজি উঠতে শুরু করলে সবজির বাজার হয়তো স্থিতিশীল হবে। মাছ-মাংসের দাম নিয়েও ভাবা দরকার। আমাদের দেশে পুষ্টিকর খাদ্য সহজলভ্য নয়। দরিদ্র মানুষের পক্ষে পুষ্টিকর খাবার দুর্লভ হয়ে উঠেছে। ডিম আর ব্রয়লার মুরগি থেকে মূলত প্রোটিন পায় দরিদ্র মানুষ। সে খাদ্যপণ্যের দাম যদি গরিব মানুষের নাগালের মধ্যে না থাকে, তাহলে প্রোটিন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা দরকার।
অনেক বিষয়েই কথা বলা যায়। তবে এ মুহূর্তে পেঁয়াজকে নাগালের মধ্যে রাখার জন্য চিন্তা করুক সংশ্লিষ্ট মহল—এটাই সবচেয়ে জরুরি।

পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। কিছুটা ছোট পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ১১০ টাকা দরে।
পেঁয়াজের দাম কবে কমবে, সেটা অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না। শঙ্কার ব্যাপার, গত বছরের মজুত পেঁয়াজের ১০ শতাংশ রয়েছে। বাকি ৯০ শতাংশ খাওয়া হয়ে গেছে। মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হলেও তা বাজারে আসতে আরও মাস দেড়েক লাগবে। তাহলে পেঁয়াজের এই উচ্চমূল্য কমবে কী করে?
আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত পেঁয়াজ-সংক্রান্ত খবরটিতে ক্রেতার জন্য আশাবাদী কোনো উপাদান নেই। বোঝাই যাচ্ছে, বেশ কিছুদিন উচ্চমূল্যেই পেঁয়াজ কিনে খেতে হবে। আর সরকার যদি চায়, তাহলে দাম কমতে পারে। আপাতত তার একটাই পথ—আমদানি। সরকার কি পেঁয়াজ আমদানির দিকে যাবে, নাকি নতুন পেঁয়াজ আসা পর্যন্ত উচ্চমূল্যেই পেঁয়াজ খাওয়াকেই স্বাভাবিক বলে মনে করবে? কেউ কেউ তো স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, গত বছরও এই সময় এ রকমই ছিল পেঁয়াজের দাম। যদি সেটা জানাই থাকে, তাহলে আগেই কেন দাম স্থিতিশীল রাখার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমাদের নিশ্চয়ই মনে পড়ে যাবে, গত বছর নভেম্বরে আলুর কেজি হয়েছিল ৭০ টাকা। এবার কেন যেন আলু তার রক্তচক্ষু এখনো দেখায়নি। মোটামুটি ২০-২৫ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে গোল আলু। পেঁয়াজের সঙ্গে সন্ধি করে আলুর দামও যেন বেড়ে না যায়, কায়মনোবাক্যে তা প্রার্থনা করি।
পেঁয়াজের ঘাটতির কারণেই কি দাম বাড়ল, নাকি এর পেছনে কোনো সিন্ডিকেটের হাত আছে, তা জানা দরকার। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সুপারিশ করেছিল, পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকা পার হলেই আমদানির অনুমতি দিতে হবে। আর সেটা করা হলে একই সঙ্গে শুল্ক ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। ভাবনাটি ভালো ছিল। পেঁয়াজ নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্দিনে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশকে কাজে পরিণত করলে ভালো হয়।
সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এ সময় বাজার স্থিতিশীল না থাকলে মানুষ বিপদে পড়বে। শীতের সবজি উঠতে শুরু করলে সবজির বাজার হয়তো স্থিতিশীল হবে। মাছ-মাংসের দাম নিয়েও ভাবা দরকার। আমাদের দেশে পুষ্টিকর খাদ্য সহজলভ্য নয়। দরিদ্র মানুষের পক্ষে পুষ্টিকর খাবার দুর্লভ হয়ে উঠেছে। ডিম আর ব্রয়লার মুরগি থেকে মূলত প্রোটিন পায় দরিদ্র মানুষ। সে খাদ্যপণ্যের দাম যদি গরিব মানুষের নাগালের মধ্যে না থাকে, তাহলে প্রোটিন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা দরকার।
অনেক বিষয়েই কথা বলা যায়। তবে এ মুহূর্তে পেঁয়াজকে নাগালের মধ্যে রাখার জন্য চিন্তা করুক সংশ্লিষ্ট মহল—এটাই সবচেয়ে জরুরি।

মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
৭ দিন আগে
নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়।
২ মিনিট আগে
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই।
১৯ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট মতভেদ নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়ার পর, আজ শনিবার পঞ্চম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে যেন কোনো বিকার নেই। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমমনা কয়েকটি দল ছাড়া এ বিষয়ে...
১ দিন আগেঅরুণ কর্মকার

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট মতভেদ নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়ার পর, আজ শনিবার পঞ্চম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে যেন কোনো বিকার নেই। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমমনা কয়েকটি দল ছাড়া এ বিষয়ে কথাবার্তাও বলছে খুব কম দলই। সবচেয়ে বড় দল বিএনপি তো সরকারের আলটিমেটাম দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই জাতীয় নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে তাঁদের প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা ঘোষণা করেছে। এর পর থেকে এমনকি টেলিফোন করেও নাকি আলাপ-আলোচনার জন্য বিএনপির কোনো সাড়া পায়নি বলে অভিযোগ করেছে জামায়াত। এনসিপির পক্ষ থেকেও সরকারের আলটিমেটামের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। আর কাদের কথা বলার আছে! অবশ্য ফেসবুক এবং টিভি টক শোতে উপস্থিত হয়ে কোনো কোনো ক্ষুদ্র দলের নেতারা কিছু কথা বলছেন। তাতেও নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নিশ্চিত জাতীয় নির্বাচনের বিষয়েও আশাপ্রদ কিছু নেই।
২৭০ দিন ধরে ৩০টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য’ সৃষ্টির গলদঘর্ম অধ্যবসায়ে রেফারির ভূমিকা পালন করা ঐকমত্য কমিশন জোড়াতালি দেওয়া এক সুপারিশ সরকারকে ধরিয়ে দিয়ে দৃশ্যপট থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়েছে। ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র কৌশলে এমনই এক সুপারিশ তারা দিয়ে গেছে যে তা প্রকাশ হওয়ার পর প্রায় সব দল, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এই সুপারিশ জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে নতুন করে জাতীয় অনৈক্য সৃষ্টি করবে। দৃশ্যত এখন তেমনটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। এমনকি এই সুপারিশ নিয়ে সরকার কী করবে, তা-ও নির্ধারণ করতে না পেরে বন্দুকটা ফের রাজনীতিকদের ঘাড়ে রাখার কৌশল নিয়েছে। গত সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের সভার পর এসেছে তাদের আলটিমেটাম। তাতে বলা হয়, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে এবং জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে—তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাত দিনের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়। দলগুলো এটা করতে ব্যর্থ হলে সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। এক. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ছিলেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত হয়েছে তাঁরই সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশনের সভায়। তিনি সভাপতি হিসেবে তাতে স্বাক্ষর করেছেন। ওই সুপারিশমালায় কোন কোন বিষয়ে কী কী ভিন্নমত আছে, সেগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বপ্রণোদিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করা সম্ভব কি না—সবই তিনি জানেন। কাজেই সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে আলোচনা করলে সমাধান সহজ হতো নাকি? যদি সমাধান না-ও হতো তাহলেও জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতা সম্পর্কে কারও কোনো সন্দেহ থাকত না। এখন সে সন্দেহ অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতার মুখেই শোনা যায়। তাহলে দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা অনুষ্ঠানে সরকার কেন উদ্যোগহীন থাকল! আবার শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিন্তু সরকারই নেবে। এ যেন এক সাপলুডু খেলা। দুই. রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শেষ করে সরকারকে দিকনির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। যে বিষয়গুলোর ফয়সালা রেফারির মধ্যস্থতায় ২৭০ দিনের অধ্যবসায়ে নিরসন হলো না, সেগুলো সাত দিনের আলোচনায় ফয়সালা যে হওয়ার নয়, তা সবাই বোঝে। তা ছাড়া, জাতীয় রাজনীতির কোনো জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজনৈতিক দলগুলো স্বপ্রণোদিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করেছে—এমন কোনো নজিরই তো নেই। এই কথা কি অন্তর্বর্তী সরকারের অজানা? তারপরও কেন এই অনর্থক আলটিমেটামের অবতারণা।
বলা হতে পারে যে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সর্বশেষ সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে সবকিছু জেনে-বুঝেও এমন একটি পদক্ষেপ ভবিষ্যতে শুধু লোকদেখানো হিসেবেই গণ্য হতে পারে। তিন. রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে। কিন্তু এ কথা কে না বোঝে, যা ২৭০ দিনের অধ্যবসায়ে হয়নি তা সাত দিনে হবে না। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই তো জানে যে তাদের মতানৈক্য কোন কোন প্রশ্নে এবং কোনটা কত গভীর। কাজেই এখন যখন বিএনপি আর এনসিপি কার্যত আলোচনার বিষয়ে নিস্পৃহ, অন্যদিকে জামায়াতসহ আট দলের নেতারা আন্দোলনে নেমে সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করার হুমকি দিচ্ছেন, প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দিয়েও নির্বাচনের আগে গণভোট হতেই হবে বলে বক্তৃতা দিচ্ছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে কীভাবে আলোচনায় বসবে আর কী-ইবা সিদ্ধান্ত নেবে? সুতরাং চূড়ান্ত বিকল্প হচ্ছে সরকারের সিদ্ধান্ত। এখন প্রশ্ন হলো, যদি সেই সিদ্ধান্ত কোনো কোনো দলের মনঃপূত না হয় (না হওয়ারই কথা) তাহলে তারা কী অবস্থান নেবে? তারা কি সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে যাবে, নাকি না। যদি না যায় তাহলে কি নির্বাচন হবে? যদি হয়ও তা কি সুষ্ঠু এবং এমন উৎসবমুখর হবে, যা সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখবে?
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) একটি ‘প্রাক্-নির্বাচনী মূল্যায়ন’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের নির্বাচনপূর্ব বর্তমান পরিবেশ নাজুক। নির্বাচনে নিরাপত্তা বাহিনী যে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, সে বিষয়ে সাধারণের মধ্যে অবিশ্বাস রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়নে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য অংশীজনদের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ প্রয়োজন। আইআরআই কিছু সুপারিশও দিয়েছে। তার মধ্যে প্রথমেই আছে, সব রাজনৈতিক দলকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব? বিএনপির কথাই যদি বলি, যে জুলাই সনদে বিএনপি স্বাক্ষর করেছে, সেই সনদ তো নাকি ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশে অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি। তাহলে বিএনপি কোন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে? জুলাই সনদ এবং সংবিধান সংশোধনের যেসব প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছে, সেখানে তো রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতগুলো (নোট অব ডিসেন্ট) রাখাই হয়নি। তাহলে কীভাবে তারা সবকিছু আইআরআইয়ের সুপারিশ আর অন্তর্বর্তী সরকারের আকাঙ্ক্ষা বা অঙ্গীকার অনুযায়ী বাস্তবায়িত হবে। এসব কারণেই তো আলোচনার বিষয়ে অনেক রাজনৈতিক দল নির্বিকার। তাদের চাওয়া এখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া-পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট মতভেদ নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়ার পর, আজ শনিবার পঞ্চম দিন অতিবাহিত হচ্ছে। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে যেন কোনো বিকার নেই। একমাত্র জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমমনা কয়েকটি দল ছাড়া এ বিষয়ে কথাবার্তাও বলছে খুব কম দলই। সবচেয়ে বড় দল বিএনপি তো সরকারের আলটিমেটাম দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই জাতীয় নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে তাঁদের প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা ঘোষণা করেছে। এর পর থেকে এমনকি টেলিফোন করেও নাকি আলাপ-আলোচনার জন্য বিএনপির কোনো সাড়া পায়নি বলে অভিযোগ করেছে জামায়াত। এনসিপির পক্ষ থেকেও সরকারের আলটিমেটামের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। আর কাদের কথা বলার আছে! অবশ্য ফেসবুক এবং টিভি টক শোতে উপস্থিত হয়ে কোনো কোনো ক্ষুদ্র দলের নেতারা কিছু কথা বলছেন। তাতেও নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নিশ্চিত জাতীয় নির্বাচনের বিষয়েও আশাপ্রদ কিছু নেই।
২৭০ দিন ধরে ৩০টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য’ সৃষ্টির গলদঘর্ম অধ্যবসায়ে রেফারির ভূমিকা পালন করা ঐকমত্য কমিশন জোড়াতালি দেওয়া এক সুপারিশ সরকারকে ধরিয়ে দিয়ে দৃশ্যপট থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়েছে। ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র কৌশলে এমনই এক সুপারিশ তারা দিয়ে গেছে যে তা প্রকাশ হওয়ার পর প্রায় সব দল, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এই সুপারিশ জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে নতুন করে জাতীয় অনৈক্য সৃষ্টি করবে। দৃশ্যত এখন তেমনটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। এমনকি এই সুপারিশ নিয়ে সরকার কী করবে, তা-ও নির্ধারণ করতে না পেরে বন্দুকটা ফের রাজনীতিকদের ঘাড়ে রাখার কৌশল নিয়েছে। গত সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের সভার পর এসেছে তাদের আলটিমেটাম। তাতে বলা হয়, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে এবং জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে—তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাত দিনের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়। দলগুলো এটা করতে ব্যর্থ হলে সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। এক. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ছিলেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত হয়েছে তাঁরই সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশনের সভায়। তিনি সভাপতি হিসেবে তাতে স্বাক্ষর করেছেন। ওই সুপারিশমালায় কোন কোন বিষয়ে কী কী ভিন্নমত আছে, সেগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বপ্রণোদিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করা সম্ভব কি না—সবই তিনি জানেন। কাজেই সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে আলোচনা করলে সমাধান সহজ হতো নাকি? যদি সমাধান না-ও হতো তাহলেও জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতা সম্পর্কে কারও কোনো সন্দেহ থাকত না। এখন সে সন্দেহ অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতার মুখেই শোনা যায়। তাহলে দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা অনুষ্ঠানে সরকার কেন উদ্যোগহীন থাকল! আবার শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিন্তু সরকারই নেবে। এ যেন এক সাপলুডু খেলা। দুই. রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শেষ করে সরকারকে দিকনির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। যে বিষয়গুলোর ফয়সালা রেফারির মধ্যস্থতায় ২৭০ দিনের অধ্যবসায়ে নিরসন হলো না, সেগুলো সাত দিনের আলোচনায় ফয়সালা যে হওয়ার নয়, তা সবাই বোঝে। তা ছাড়া, জাতীয় রাজনীতির কোনো জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজনৈতিক দলগুলো স্বপ্রণোদিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা করেছে—এমন কোনো নজিরই তো নেই। এই কথা কি অন্তর্বর্তী সরকারের অজানা? তারপরও কেন এই অনর্থক আলটিমেটামের অবতারণা।
বলা হতে পারে যে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সর্বশেষ সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে সবকিছু জেনে-বুঝেও এমন একটি পদক্ষেপ ভবিষ্যতে শুধু লোকদেখানো হিসেবেই গণ্য হতে পারে। তিন. রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে। কিন্তু এ কথা কে না বোঝে, যা ২৭০ দিনের অধ্যবসায়ে হয়নি তা সাত দিনে হবে না। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই তো জানে যে তাদের মতানৈক্য কোন কোন প্রশ্নে এবং কোনটা কত গভীর। কাজেই এখন যখন বিএনপি আর এনসিপি কার্যত আলোচনার বিষয়ে নিস্পৃহ, অন্যদিকে জামায়াতসহ আট দলের নেতারা আন্দোলনে নেমে সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করার হুমকি দিচ্ছেন, প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দিয়েও নির্বাচনের আগে গণভোট হতেই হবে বলে বক্তৃতা দিচ্ছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে কীভাবে আলোচনায় বসবে আর কী-ইবা সিদ্ধান্ত নেবে? সুতরাং চূড়ান্ত বিকল্প হচ্ছে সরকারের সিদ্ধান্ত। এখন প্রশ্ন হলো, যদি সেই সিদ্ধান্ত কোনো কোনো দলের মনঃপূত না হয় (না হওয়ারই কথা) তাহলে তারা কী অবস্থান নেবে? তারা কি সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে যাবে, নাকি না। যদি না যায় তাহলে কি নির্বাচন হবে? যদি হয়ও তা কি সুষ্ঠু এবং এমন উৎসবমুখর হবে, যা সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখবে?
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) একটি ‘প্রাক্-নির্বাচনী মূল্যায়ন’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের নির্বাচনপূর্ব বর্তমান পরিবেশ নাজুক। নির্বাচনে নিরাপত্তা বাহিনী যে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে, সে বিষয়ে সাধারণের মধ্যে অবিশ্বাস রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়নে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য অংশীজনদের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ প্রয়োজন। আইআরআই কিছু সুপারিশও দিয়েছে। তার মধ্যে প্রথমেই আছে, সব রাজনৈতিক দলকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব? বিএনপির কথাই যদি বলি, যে জুলাই সনদে বিএনপি স্বাক্ষর করেছে, সেই সনদ তো নাকি ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশে অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি। তাহলে বিএনপি কোন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে? জুলাই সনদ এবং সংবিধান সংশোধনের যেসব প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছে, সেখানে তো রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতগুলো (নোট অব ডিসেন্ট) রাখাই হয়নি। তাহলে কীভাবে তারা সবকিছু আইআরআইয়ের সুপারিশ আর অন্তর্বর্তী সরকারের আকাঙ্ক্ষা বা অঙ্গীকার অনুযায়ী বাস্তবায়িত হবে। এসব কারণেই তো আলোচনার বিষয়ে অনেক রাজনৈতিক দল নির্বিকার। তাদের চাওয়া এখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন।

মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
৭ দিন আগে
নিসর্গবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদের ‘মহাবনস্পতির পদাবলী’ বইটা যখনই সুযোগ পাই, তখনই দুই-চার পাতা পড়ি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে, ১৯৯৩ সালে। সে বইয়ের ‘মহাদ্রুম সমাচার’ নিবন্ধে তিনি পারিল-বলধারার একটি পবিত্র বটবৃক্ষ সম্পর্কে লিখেছেন: ‘ভর এসেছে, গগন ঋষির উপর বটতলায়।
২ মিনিট আগে
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’—শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরাতে চেয়েছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাঝেমধ্যেই আমরা নানা আয়োজনে, নানা কারণে তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলো আওড়াই।
১৯ ঘণ্টা আগে
পেঁয়াজ নিয়ে পরিহাস তো আজকের ব্যাপার নয়। প্রত্যেকেই জানত, কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ নিয়ে একটা অঘটন ঘটবে। দাম যাবে বেড়ে। কিন্তু কবে সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’ আসবে, সেটা জানা ছিল না। অবশেষে সেই সময় এসে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ টাকার পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।
১ দিন আগে