মো. গোলাম রহমান

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ৩ মে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বীকৃত দীর্ঘকাল থেকে, কিন্তু ১৯৯১ সালে প্রবর্তিত হয় এই দিনটি। ১৯৪৮ সালে গৃহীত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আর্টিকেল ১৯-এর সঙ্গে সংগতি রেখে আফ্রিকার সাংবাদিকেরা উইন্ডহোয়েক ডিক্লারেশন নামে এই দিবসের ঘোষণা দেন। জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালে ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশে এই দিবসকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস হিসেবে অভিহিত করে।
এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্লোগান হচ্ছে, ‘ডিজিটাল অবরোধে সাংবাদিকতা’, কেউ কেউ বলছেন ‘ডিজিটাল শৃঙ্খলে গণমাধ্যম’। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই) রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ১০-দফা আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, নিজ দেশে, তথা তাবৎ বিশ্বে সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যেন নিজ দেশে নজর দিতে পারে, যাতে সঠিকভাবে গণমাধ্যমের দায়িত্ব পালন সম্ভব হয়। দিনটি সাধারণভাবে দেশে দেশে সরকার ও প্রশাসনকে স্বাধীন সাংবাদিকতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পেশাদারি ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতাকে স্বাধীনভাবে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের তাগিদ দেওয়া হয় এই বিশেষ দিনটিতে। এই দিনে তাই প্রতিটি দেশে সাংবাদিকতা পেশায় নিবেদিত সংগ্রামীদের স্মরণ করা হয়। সাংবাদিকতা পেশায় হত্যা, নানা ধরনের অবরোধ, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য হুমকি, রাজনৈতিক কিংবা পেশি শক্তির চাপ, আইনের অপব্যবহার করে পেশাজীবীদের ওপর নির্যাতন, ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগ, পেশার ওপর অগণতান্ত্রিক আচরণ ইত্যাদি মুখ্য আলোচ্য বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
আমাদের দেশের সংবিধানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাক্স্বাধীনতা ও মানুষের গণতন্ত্র চর্চার অন্যতম উপযোগ হিসেবে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু এই চেতনার পুরো বাস্তবায়ন আমরা দেখি না। রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) প্রতিবেদনে আমাদের দেশের সাংবাদিকতা পেশার ওপর যে পর্যবেক্ষণ দেখি, তাতে ১৮০টি দেশের মধ্যে তা ১৬২তম স্থানে। তারা তাদের ওয়েব সাইটে উল্লেখ করেছে—
‘...the government now has a tailor-made judicial weapon for silencing troublesome journalists–the 2018 digital security law, under which ‘negative propaganda’ is punishable by up to 14 years in prison...Journalists have been subjected to violence by party activists, they have been arrested arbitrarily, and news sites have been blocked.’ (RSF website, 29 April 2022)
এদিকে সারা বিশ্বে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হুমকির মুখে বলে উল্লেখ করে বলেছে যে ৭৩টি দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুরোপুরি ‘ব্লকড’ এবং ৫৯টি দেশে আংশিক ‘ব্লকড’। সংবাদপত্র ছাপানো ও বিলির ক্ষেত্রে অনেক দেশেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক কারণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় বলে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে।
আমাদের দেশে এ পর্যন্ত ২৩ জন সাংবাদিক মারা গেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিচার সমাধা হয়নি এবং এগুলোর সঙ্গে জড়িত ৩১ জন এখন কারাগারে রয়েছেন বলে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রয়েছেন নিখোঁজ। বহুল আলোচিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ৮৮বার পেছানো হয়েছে। সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়েছিল ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা এখনো করতে পারেনি।
নতুন প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণ করে সাংবাদিকেরা উপকৃত হবেন—এটা প্রত্যাশা করা অনিবার্য। শুধু সাংবাদিকেরাই নন, জনগণ ইন্টারনেটে সংযুক্ত থেকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে। এটাই তো স্বাভাবিক। এর বাইরে কি কিছু চিন্তা করার সুযোগ আছে? একই সঙ্গে যুগের দাবি হচ্ছে—ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে নানা পেশার লোকজন সমৃদ্ধ হবে এবং বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থায় নিজেকে সম্পৃক্ত করবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুকূলে দেশে জনবান্ধব আইন প্রণীত হবে—এও একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর স্বীকৃতি দেখা যায় রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে। এসব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে প্রণীত হয় না। জনগণের স্বার্থে ব্যবহৃতও হয় না। এটাই হচ্ছে জনগণের জন্য সবচেয়ে বড় পরিহাস।
একটি দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে নিশ্চিত করতে স্বাধীন গণমাধ্যমের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো দেশের গণতন্ত্রের মানকে উন্নত স্তরে নেওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে সেই দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। দেশের সংবাদপত্র, তথা গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বলতে আমরা সঠিক ভোটার তালিকা, নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক দল, দলের আর্থিক লেনদেন ইত্যাদিকে বুঝে থাকি। তবে এটা এখন স্বীকৃত যে, একটি দেশের গণতন্ত্রের মান কিংবা তার প্রায়োগিক পরিমাপের গভীরতা বুঝতে গেলে সেই দেশের সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে নির্দেশক হিসেবে গ্রহণ করা যায়। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ ও তার প্রতিফলন অবশ্যম্ভাবী। এই দায়িত্বশীলতাকে সরকার বা কোনো পক্ষ তাদের বিপরীত অবস্থান বিবেচনা করে গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ ভাবার সুযোগ নেই।
গণমাধ্যম এবং জনগণের আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা এবং এসব থেকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশে কতিপয় আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ও জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০২০। ছাপা পত্রিকা, টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের অনলাইন সংস্করণের জন্য নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা রেখে এই নীতিমালা অনুমোদিত হয়েছে। গত ২৮ মার্চ ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির) আইন ২০২২’ সংসদে উপস্থাপিত হয়। এই আইন বিশ্লেষণ করে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, এই আইনের ৫৪টি ধারার মধ্যে ৩৭টি ধারাই সাংবাদিকবান্ধব নয়। এই আইনগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চালু আছে। এই আইনগুলো দেশের সকল নাগরিককে নিরাপত্তা ও সুবিধা প্রদানে পুরোপুরি সফল হয়নি। কোনো কোনো আইনের অপপ্রয়োগ এবং ভুল ব্যবহারের কারণে সাংবাদিকসহ অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কেউ কেউ কারাবরণ করছেন বলেও আলোচনা আছে। বিচার শুরুর আগেই কেউ কেউ শাস্তি ভোগ করছেন, যা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় কাম্য নয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, একটি সমাজে ইন্টারনেট ব্যবহারের মান ও সামর্থ্যের সঙ্গে সেই সমাজের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের বিষয়বস্তু, তথা আধেয়ের উৎকর্ষের মান নির্ভর করে। তার মানে হচ্ছে, গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে শুধু বাক্স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের বিষয়টিই জড়িত নয়। এর সঙ্গে গণমাধ্যমের গুণগত মানের বিষয়টিও জড়িত। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবার অনুধাবন করা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ৬০টি আন্তর্জাতিক অংশীদার সম্প্রতি ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স, পলিটিকস অব ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স, ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ে এক ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণায় জনগণের ডিজিটাল প্রযুক্তি উন্নয়নের লক্ষ্যে কানেকটিভিটির শক্তিমত্তা, গণতন্ত্র, শান্তি, আইনের শাসন, স্থায়ী উন্নয়ন, মৌলিক ও মানবাধিকার ভোগ ও স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রযুক্তি গ্রহণ ও তাকে কল্যাণমুখী করে ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। এসবের সম্ভাবনা যেমন বাড়ছে, তেমনি নতুনতর বিপদও দেখা দিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রভাব ব্যক্তিবিশেষ এবং পেশায় সংশ্লিষ্টদের ওপর পড়ছে। এটি দ্রুতই যন্ত্রনির্ভর কর্মকাণ্ডে মানুষের স্বাভাবিক প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের জায়গাটি হয়ে যাচ্ছে শিথিল। ব্যক্তিবিশেষের নিজস্ব ‘ডেটা প্রাইভেসি’, তার স্বত্ব বা মালিকানা, তথ্যের স্বচ্ছতা, জনগণের নাগরিক অধিকার ও সচেতনতা, পেশাজীবীদের সাংগঠনিক স্বীকৃতি ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা—এসব চ্যালেঞ্জ নতুনভাবে দেখা দিচ্ছে। এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু কথা বলা কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নয়। গণমাধ্যমের ‘কনটেন্ট’ বা আধেয় ও বিষয়বস্তুর গুণগত মান নির্ধারণেও ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির অবাধ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ডিজিটাল অবরোধ নয়, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে উদারনৈতিক মনোভাব দেখাতে হবে। সাংবাদিকতা, তথা গণমাধ্যমের মান উন্নয়নের স্বার্থে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা এবং জনগণকে প্রযুক্তিবান্ধব আইন প্রয়োগ করে তাদের সহায়তা করাই সংশ্লিষ্ট মহলের কর্তব্য হওয়া উচিত।
লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ৩ মে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বীকৃত দীর্ঘকাল থেকে, কিন্তু ১৯৯১ সালে প্রবর্তিত হয় এই দিনটি। ১৯৪৮ সালে গৃহীত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আর্টিকেল ১৯-এর সঙ্গে সংগতি রেখে আফ্রিকার সাংবাদিকেরা উইন্ডহোয়েক ডিক্লারেশন নামে এই দিবসের ঘোষণা দেন। জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালে ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশে এই দিবসকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস হিসেবে অভিহিত করে।
এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্লোগান হচ্ছে, ‘ডিজিটাল অবরোধে সাংবাদিকতা’, কেউ কেউ বলছেন ‘ডিজিটাল শৃঙ্খলে গণমাধ্যম’। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই) রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ১০-দফা আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, নিজ দেশে, তথা তাবৎ বিশ্বে সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যেন নিজ দেশে নজর দিতে পারে, যাতে সঠিকভাবে গণমাধ্যমের দায়িত্ব পালন সম্ভব হয়। দিনটি সাধারণভাবে দেশে দেশে সরকার ও প্রশাসনকে স্বাধীন সাংবাদিকতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পেশাদারি ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতাকে স্বাধীনভাবে উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিকদের তাগিদ দেওয়া হয় এই বিশেষ দিনটিতে। এই দিনে তাই প্রতিটি দেশে সাংবাদিকতা পেশায় নিবেদিত সংগ্রামীদের স্মরণ করা হয়। সাংবাদিকতা পেশায় হত্যা, নানা ধরনের অবরোধ, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য হুমকি, রাজনৈতিক কিংবা পেশি শক্তির চাপ, আইনের অপব্যবহার করে পেশাজীবীদের ওপর নির্যাতন, ডিজিটাল আইনের অপপ্রয়োগ, পেশার ওপর অগণতান্ত্রিক আচরণ ইত্যাদি মুখ্য আলোচ্য বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
আমাদের দেশের সংবিধানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাক্স্বাধীনতা ও মানুষের গণতন্ত্র চর্চার অন্যতম উপযোগ হিসেবে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু এই চেতনার পুরো বাস্তবায়ন আমরা দেখি না। রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) প্রতিবেদনে আমাদের দেশের সাংবাদিকতা পেশার ওপর যে পর্যবেক্ষণ দেখি, তাতে ১৮০টি দেশের মধ্যে তা ১৬২তম স্থানে। তারা তাদের ওয়েব সাইটে উল্লেখ করেছে—
‘...the government now has a tailor-made judicial weapon for silencing troublesome journalists–the 2018 digital security law, under which ‘negative propaganda’ is punishable by up to 14 years in prison...Journalists have been subjected to violence by party activists, they have been arrested arbitrarily, and news sites have been blocked.’ (RSF website, 29 April 2022)
এদিকে সারা বিশ্বে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হুমকির মুখে বলে উল্লেখ করে বলেছে যে ৭৩টি দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুরোপুরি ‘ব্লকড’ এবং ৫৯টি দেশে আংশিক ‘ব্লকড’। সংবাদপত্র ছাপানো ও বিলির ক্ষেত্রে অনেক দেশেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক কারণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় বলে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে।
আমাদের দেশে এ পর্যন্ত ২৩ জন সাংবাদিক মারা গেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিচার সমাধা হয়নি এবং এগুলোর সঙ্গে জড়িত ৩১ জন এখন কারাগারে রয়েছেন বলে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রয়েছেন নিখোঁজ। বহুল আলোচিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ৮৮বার পেছানো হয়েছে। সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়েছিল ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা এখনো করতে পারেনি।
নতুন প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণ করে সাংবাদিকেরা উপকৃত হবেন—এটা প্রত্যাশা করা অনিবার্য। শুধু সাংবাদিকেরাই নন, জনগণ ইন্টারনেটে সংযুক্ত থেকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে। এটাই তো স্বাভাবিক। এর বাইরে কি কিছু চিন্তা করার সুযোগ আছে? একই সঙ্গে যুগের দাবি হচ্ছে—ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে নানা পেশার লোকজন সমৃদ্ধ হবে এবং বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থায় নিজেকে সম্পৃক্ত করবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুকূলে দেশে জনবান্ধব আইন প্রণীত হবে—এও একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর স্বীকৃতি দেখা যায় রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে। এসব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে প্রণীত হয় না। জনগণের স্বার্থে ব্যবহৃতও হয় না। এটাই হচ্ছে জনগণের জন্য সবচেয়ে বড় পরিহাস।
একটি দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে নিশ্চিত করতে স্বাধীন গণমাধ্যমের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো দেশের গণতন্ত্রের মানকে উন্নত স্তরে নেওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে সেই দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। দেশের সংবাদপত্র, তথা গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বলতে আমরা সঠিক ভোটার তালিকা, নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক দল, দলের আর্থিক লেনদেন ইত্যাদিকে বুঝে থাকি। তবে এটা এখন স্বীকৃত যে, একটি দেশের গণতন্ত্রের মান কিংবা তার প্রায়োগিক পরিমাপের গভীরতা বুঝতে গেলে সেই দেশের সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে নির্দেশক হিসেবে গ্রহণ করা যায়। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ ও তার প্রতিফলন অবশ্যম্ভাবী। এই দায়িত্বশীলতাকে সরকার বা কোনো পক্ষ তাদের বিপরীত অবস্থান বিবেচনা করে গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ ভাবার সুযোগ নেই।
গণমাধ্যম এবং জনগণের আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা এবং এসব থেকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশে কতিপয় আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ও জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০২০। ছাপা পত্রিকা, টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের অনলাইন সংস্করণের জন্য নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা রেখে এই নীতিমালা অনুমোদিত হয়েছে। গত ২৮ মার্চ ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির) আইন ২০২২’ সংসদে উপস্থাপিত হয়। এই আইন বিশ্লেষণ করে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, এই আইনের ৫৪টি ধারার মধ্যে ৩৭টি ধারাই সাংবাদিকবান্ধব নয়। এই আইনগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চালু আছে। এই আইনগুলো দেশের সকল নাগরিককে নিরাপত্তা ও সুবিধা প্রদানে পুরোপুরি সফল হয়নি। কোনো কোনো আইনের অপপ্রয়োগ এবং ভুল ব্যবহারের কারণে সাংবাদিকসহ অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কেউ কেউ কারাবরণ করছেন বলেও আলোচনা আছে। বিচার শুরুর আগেই কেউ কেউ শাস্তি ভোগ করছেন, যা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় কাম্য নয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, একটি সমাজে ইন্টারনেট ব্যবহারের মান ও সামর্থ্যের সঙ্গে সেই সমাজের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের বিষয়বস্তু, তথা আধেয়ের উৎকর্ষের মান নির্ভর করে। তার মানে হচ্ছে, গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে শুধু বাক্স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের বিষয়টিই জড়িত নয়। এর সঙ্গে গণমাধ্যমের গুণগত মানের বিষয়টিও জড়িত। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবার অনুধাবন করা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ৬০টি আন্তর্জাতিক অংশীদার সম্প্রতি ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স, পলিটিকস অব ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স, ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ে এক ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণায় জনগণের ডিজিটাল প্রযুক্তি উন্নয়নের লক্ষ্যে কানেকটিভিটির শক্তিমত্তা, গণতন্ত্র, শান্তি, আইনের শাসন, স্থায়ী উন্নয়ন, মৌলিক ও মানবাধিকার ভোগ ও স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রযুক্তি গ্রহণ ও তাকে কল্যাণমুখী করে ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। এসবের সম্ভাবনা যেমন বাড়ছে, তেমনি নতুনতর বিপদও দেখা দিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রভাব ব্যক্তিবিশেষ এবং পেশায় সংশ্লিষ্টদের ওপর পড়ছে। এটি দ্রুতই যন্ত্রনির্ভর কর্মকাণ্ডে মানুষের স্বাভাবিক প্রয়োজন ও অগ্রাধিকারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের জায়গাটি হয়ে যাচ্ছে শিথিল। ব্যক্তিবিশেষের নিজস্ব ‘ডেটা প্রাইভেসি’, তার স্বত্ব বা মালিকানা, তথ্যের স্বচ্ছতা, জনগণের নাগরিক অধিকার ও সচেতনতা, পেশাজীবীদের সাংগঠনিক স্বীকৃতি ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা—এসব চ্যালেঞ্জ নতুনভাবে দেখা দিচ্ছে। এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু কথা বলা কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নয়। গণমাধ্যমের ‘কনটেন্ট’ বা আধেয় ও বিষয়বস্তুর গুণগত মান নির্ধারণেও ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির অবাধ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ডিজিটাল অবরোধ নয়, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে উদারনৈতিক মনোভাব দেখাতে হবে। সাংবাদিকতা, তথা গণমাধ্যমের মান উন্নয়নের স্বার্থে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা এবং জনগণকে প্রযুক্তিবান্ধব আইন প্রয়োগ করে তাদের সহায়তা করাই সংশ্লিষ্ট মহলের কর্তব্য হওয়া উচিত।
লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
৭ ঘণ্টা আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
৮ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
৮ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগে
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু এবং রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। এই আশঙ্কা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল?
আশঙ্কা বাস্তবতাবিবর্জিত ছিল না। প্রাথমিকভাবে, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছামাত্রই সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া তা-ই প্রমাণ করে। গণ-অভ্যুত্থানের পর সংঘটিত পূর্ববর্তী (অ)রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড, হত্যাচেষ্টার ধারাবাহিকতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা মোকাবিলায় ব্যর্থতাই হাদির ওপর গুলিবর্ষণে সাহস জুগিয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলকে। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী
আবহ শুরু হওয়ামাত্রই প্রকাশ্যে এই আলোচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থীর ওপর গুলি এবং হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্য অশনিসংকেত। এই ঘটনা জনমনে ভয় সৃষ্টি করবে, যা রাজনৈতিক সহিংসতা, চোরাগোপ্তা হামলা, মব ভায়োলেন্সের মাত্রাসহ হত্যাচেষ্টার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে, যদি দ্রুত ও অর্থবহ তদন্ত না হয় এবং অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তাহলে তা ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিযোগকেও আরও দৃঢ় করবে।
নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংস ঘটনা কি নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে? আপনি কী বলবেন?
নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকাই অন্যতম প্রধান সম্ভাব্য কারণ। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনের ব্যাপারে ‘যদি, কিন্তু, তবে’ ইত্যাদি যোগ করা; কারও পক্ষ থেকে প্রতিরোধ কিংবা বর্জনের হুমকি এই আশঙ্কাকে ভিত্তি দিচ্ছে। তবে বিস্তর বিশ্লেষণের স্বার্থে এই হত্যা অন্যান্য সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ও কারণ কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ঘটনার সময়কাল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তফসিল ঘোষণার ঠিক পরদিনই হাদির ওপর হামলা হওয়ার ক্ষেত্রে, ঘটনার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাঁর পদত্যাগ দাবি, ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, ‘বিচার না হলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’ এমন হুমকি, মৃত্যুসংবাদের পর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে শারীরিক লাঞ্ছনা—সব মিলিয়ে নির্বাচন বানচালের শঙ্কা থেকে যায়।
গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের পারস্পরিক চূড়ান্ত দোষারোপের পেছনের রাজনীতি, অভিযুক্ত গুলিবর্ষণকারীর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি হুমকি, এমনকি কার সঙ্গে কখন, কোথায় অভিযুক্ত হত্যাকারী সময় কাটিয়েছে, তার ছবি বিশ্লেষণ—এসবই ইঙ্গিত করে নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু করে একটি ‘নির্বাচনভীতি’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়া অথবা লাশকে সুবিধা আদায়ের রাজনীতিতে পরিণত করার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তদলীয় সহিংসতা বৃদ্ধি করে তৃতীয় পক্ষ সার্বিক পরিস্থিতিকে সাংঘর্ষিক করে তুলতে পারে, যা নির্বাচন ব্যাহত করার রাজনীতিই বটে।
আগামী নির্বাচনে এই রাজনৈতিক সহিংসতা কী প্রভাব ফেলতে পারে?
নির্বাচন নানাভাবে প্রভাবিত করা হতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও ক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং সহিংস চক্রের সঙ্গে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসবই সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। অন্তত তিনটি সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়নের দাবি রাখে—৫ আগস্ট ২০২৪-এ লুণ্ঠন হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি, ভোটযাত্রায় ভয় ও নিষ্ক্রিয়তা এবং উসকানিমূলক বক্তব্য ও সাংঘর্ষিক রাজনীতির মেরুকরণ বৃদ্ধি। ভয় ও অনিশ্চয়তার কারণে ভোটারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ কমতে পারে। আবার, সরকারের দায়সারা মনোভাব এই হামলাকে ভিকটিমহুড (সিম্বলিক মার্টায়ারডম) বা শক্তি প্রদর্শনের উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে কোনো কোনো পক্ষ। অন্যদিকে, রাষ্ট্র
যদি লোকদেখানো মাত্রাতিরিক্ত কঠোর নিরাপত্তা আরোপ করে, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে সংকুচিত করতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সক্ষমতা ও পেশাদারত্বের ওপর।
এই হামলার পর ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে যে ধরনের আলটিমেটাম কিংবা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, সেটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
দুইভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। একদিকে আবেগ তথা বৈধ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, যা স্বাভাবিক। অন্যদিকে, অদূরদর্শী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিশেষত, শহুরে রাজনীতিতে আন্দোলন ও আলটিমেটাম একটি পরিচিত রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু এগুলো যখন মুহূর্তের উত্তেজনায় জ্বালাও-পোড়াও রূপে রূপান্তর হয় বা সহিংস চরিত্র ধারণ করে, তখন মূল ইস্যু চাপা পড়ে, সাধারণ জনগণ বিরক্ত হয়, আপাতদৃষ্টে তা-ই মনে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক মূল্যবোধ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। শান্তিপূর্ণ ও আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে দাবি উত্থাপনই দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ হয়, যা স্থায়িত্ব দেয়। তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায়, সহিংস ঘটনার জবাব সহিংসতা, ঘৃণা কিংবা মব ভায়োলেন্স নয়, বরং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সহিষ্ণু, সৃজনশীল এবং জনমুখী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে মোকাবিলা দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ফলপ্রসূ হয়।
এই ঘটনায় চিহ্নিত অপরাধী কীভাবে দেশ ছাড়তে পারল? এখানে কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল?
আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, সীমান্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি এবং দ্রুত গ্রেপ্তার বাস্তবায়নে গুরুতর গ্যাপ ছিল। সন্দেহভাজনেরা মোটরসাইকেলে ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার, মোবাইল সিম ও ফোন ফেলে দেওয়া, একাধিক যানবাহন বদল করে সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা, যা পূর্বপরিকল্পিত সমন্বয়ভিত্তিক আঁতাতনির্ভর পলায়নের ইঙ্গিত। সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা, আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ প্রতিরোধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত রয়েছে, তাদের সহায়তা থাকতে পারে। কোনো একক সংস্থার ব্যর্থতা নয় এটি।
হাদির মৃত্যুসংবাদের পর যেসব সহিংস ঘটনা ঘটল, সেগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
অবস্থাদৃষ্টে, কেবল ‘স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে নয়, বরং শাসনব্যবস্থার চরম শৈথিল্য ও প্রতিশোধপরায়ণ সুসংগঠিত উসকানির সম্মিলিত ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী সহিংসতার খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ‘লড়াকু যোদ্ধা’ হিসেবে অনেকের কাছে ওসমান হাদির যে পরিচিতি তৈরি হয়েছিল, তা অনেকাংশে ম্লান করেছে বলেই অনুমান।
দেশের যে দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা অফিস পোড়ানো হয়েছে, সেখানে জুলাইয়ের অনেক স্মৃতি-স্মারকও ছিল। ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে হয়েছে ২৮ জন পেশাজীবীকে। অথচ এই দুটি পত্রিকা পতিত সরকারের সময় গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিষিদ্ধ ছিল। ছায়ানটের ওপর কিসের রাগ? সাংস্কৃতিক দর্শনের সঙ্গে মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। মানুষকে আকৃষ্ট করবে এমন পাল্টা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের চেষ্টা
না করে, এ রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কারা উৎসাহ দিচ্ছে?
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ আরও স্পষ্ট করে ঘটনার পেছনের অশুভ শক্তির সংযোগ।
ওসমান হাদির নিজের বক্তব্য এবং অবস্থানের সঙ্গেও এই জঘন্য সহিংস ঘটনাগুলো সাংঘর্ষিক। কেননা, এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্যও ছিল স্পষ্ট: ‘পারলে আরও দশটা প্রথম আলো তৈরি করে দেখান। প্রথম আলো অফিসের সামনে আপনার কাজ কী?’ সবকিছু বিবেচনায়, এই সহিংসতা তরুণদের নিজস্ব বিবেচনায় সংঘটিত হয়েছে—এমনটা মনে হওয়ার কারণ সীমিত। ‘বিশেষ’ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ও দলগত আদর্শিক দ্বন্দ্বের প্রতিশোধমূলক রাজনীতি তরুণদের আবেগকে পুঁজি করছে বলেই অনুমান (ইনস্ট্রুমেন্টালাইজেশন অব ইয়ুথ)। বিনা উসকানিতে দুঃশাসন পতনোত্তর (রেজিম ফল) বাস্তবতায় এ রকম সংঘবদ্ধ সহিংসতা গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং সর্বোপরি শান্তি বিনির্মাণের পথে প্রধান অন্তরায়। বিশ্ব পরিমণ্ডলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যার দায় সরকারের ওপর চাপবে।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আপনার পরামর্শ কী?
এই বিষয়ে মোটাদাগে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি আইনের শাসন তথা কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অপরাধের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি সমাজকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীবিশেষে আইনের কঠোরতা, নমনীয়তা এমনকি বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিপন্থী। দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের পাশাপাশি প্রতিটি তদন্তের অগ্রগতি ও চূড়ান্ত ফল জনসমক্ষে নিয়মিত প্রকাশ জরুরি। সীমান্ত নজরদারি
এবং ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্রুত তথ্যপ্রবাহের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরামর্শ। দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। সঙ্গে বিদ্যমান ত্রুটিযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, যার ওপর টেকসই স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে। ভিন্নমতের কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারও সহিংস মৃত্যুর ঘটনায় আজকাল উল্লাস—এসবই সুস্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বিলুপ্তির পূর্বাভাস।
এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য ও সুশিক্ষার অভাব। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক বিভাজনগুলো এখন শত্রু-মিত্রের বাইনারিতে পরিণত হয়েছে। ফলে সামষ্টিক জাতীয় স্বার্থ কিংবা জাতীয়তাবোধ তৈরি হচ্ছে না। রাজনীতিতে ধর্মের যাচ্ছেতাই ব্যবহার, মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগতকরণের বিপরীতে বিতর্কিতকরণের হীন প্রয়াস, যাকে-তাকে যখন-তখন ভারত-পাকিস্তানপন্থী ট্যাগিং—এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ভয়ানক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি বা দেশের বিদ্যমান আইনবিধির আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং প্রথম পরামর্শ অনুযায়ী অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তত মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি বৃহৎ পরিসরের জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাও রাখা যেতে পারে এই কমিশনে, যাতে কমিশন মান বজায় রেখে নিরপেক্ষ এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
অধিকন্তু, সীমিত সম্পদের বিপরীতে দেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে, যার বড় একটি অংশের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো হয়ে উঠেছে বিনা বেতনে তাদের ‘নিয়োগকারী কর্ম সংস্থা’। বিনা বেতনে তথাকথিত এই ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ’ দিয়ে তাদের অনেককে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত করছেন দলের এলিট নেতারা। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই মূলত এদের বেশির ভাগ জড়াচ্ছে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে, নিয়োজিত হচ্ছে বিরোধীমত নিয়ন্ত্রণের
মতো অপরাধমূলক কাজে। ফলে রাজনৈতিক সচেতনতা বাদ দিয়ে রাজনীতিপ্রবণ হয়ে উঠছে সমাজের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তৈরি হচ্ছে অপরাধের এক ভিশাস সাইকেল (পরিবর্তনের নেতিবাচক চক্র)। ফলে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে এবং স্থিতিশীলতা পড়ে যাচ্ছে হুমকির মুখে।
অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। এই আশঙ্কা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল?
আশঙ্কা বাস্তবতাবিবর্জিত ছিল না। প্রাথমিকভাবে, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছামাত্রই সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া তা-ই প্রমাণ করে। গণ-অভ্যুত্থানের পর সংঘটিত পূর্ববর্তী (অ)রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড, হত্যাচেষ্টার ধারাবাহিকতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা মোকাবিলায় ব্যর্থতাই হাদির ওপর গুলিবর্ষণে সাহস জুগিয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলকে। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী
আবহ শুরু হওয়ামাত্রই প্রকাশ্যে এই আলোচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থীর ওপর গুলি এবং হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্য অশনিসংকেত। এই ঘটনা জনমনে ভয় সৃষ্টি করবে, যা রাজনৈতিক সহিংসতা, চোরাগোপ্তা হামলা, মব ভায়োলেন্সের মাত্রাসহ হত্যাচেষ্টার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে, যদি দ্রুত ও অর্থবহ তদন্ত না হয় এবং অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তাহলে তা ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিযোগকেও আরও দৃঢ় করবে।
নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংস ঘটনা কি নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে? আপনি কী বলবেন?
নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকাই অন্যতম প্রধান সম্ভাব্য কারণ। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনের ব্যাপারে ‘যদি, কিন্তু, তবে’ ইত্যাদি যোগ করা; কারও পক্ষ থেকে প্রতিরোধ কিংবা বর্জনের হুমকি এই আশঙ্কাকে ভিত্তি দিচ্ছে। তবে বিস্তর বিশ্লেষণের স্বার্থে এই হত্যা অন্যান্য সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ও কারণ কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ঘটনার সময়কাল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তফসিল ঘোষণার ঠিক পরদিনই হাদির ওপর হামলা হওয়ার ক্ষেত্রে, ঘটনার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাঁর পদত্যাগ দাবি, ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, ‘বিচার না হলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’ এমন হুমকি, মৃত্যুসংবাদের পর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে শারীরিক লাঞ্ছনা—সব মিলিয়ে নির্বাচন বানচালের শঙ্কা থেকে যায়।
গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের পারস্পরিক চূড়ান্ত দোষারোপের পেছনের রাজনীতি, অভিযুক্ত গুলিবর্ষণকারীর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি হুমকি, এমনকি কার সঙ্গে কখন, কোথায় অভিযুক্ত হত্যাকারী সময় কাটিয়েছে, তার ছবি বিশ্লেষণ—এসবই ইঙ্গিত করে নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু করে একটি ‘নির্বাচনভীতি’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়া অথবা লাশকে সুবিধা আদায়ের রাজনীতিতে পরিণত করার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তদলীয় সহিংসতা বৃদ্ধি করে তৃতীয় পক্ষ সার্বিক পরিস্থিতিকে সাংঘর্ষিক করে তুলতে পারে, যা নির্বাচন ব্যাহত করার রাজনীতিই বটে।
আগামী নির্বাচনে এই রাজনৈতিক সহিংসতা কী প্রভাব ফেলতে পারে?
নির্বাচন নানাভাবে প্রভাবিত করা হতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও ক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং সহিংস চক্রের সঙ্গে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসবই সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। অন্তত তিনটি সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়নের দাবি রাখে—৫ আগস্ট ২০২৪-এ লুণ্ঠন হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি, ভোটযাত্রায় ভয় ও নিষ্ক্রিয়তা এবং উসকানিমূলক বক্তব্য ও সাংঘর্ষিক রাজনীতির মেরুকরণ বৃদ্ধি। ভয় ও অনিশ্চয়তার কারণে ভোটারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ কমতে পারে। আবার, সরকারের দায়সারা মনোভাব এই হামলাকে ভিকটিমহুড (সিম্বলিক মার্টায়ারডম) বা শক্তি প্রদর্শনের উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে কোনো কোনো পক্ষ। অন্যদিকে, রাষ্ট্র
যদি লোকদেখানো মাত্রাতিরিক্ত কঠোর নিরাপত্তা আরোপ করে, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে সংকুচিত করতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সক্ষমতা ও পেশাদারত্বের ওপর।
এই হামলার পর ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে যে ধরনের আলটিমেটাম কিংবা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, সেটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
দুইভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। একদিকে আবেগ তথা বৈধ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, যা স্বাভাবিক। অন্যদিকে, অদূরদর্শী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিশেষত, শহুরে রাজনীতিতে আন্দোলন ও আলটিমেটাম একটি পরিচিত রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু এগুলো যখন মুহূর্তের উত্তেজনায় জ্বালাও-পোড়াও রূপে রূপান্তর হয় বা সহিংস চরিত্র ধারণ করে, তখন মূল ইস্যু চাপা পড়ে, সাধারণ জনগণ বিরক্ত হয়, আপাতদৃষ্টে তা-ই মনে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক মূল্যবোধ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। শান্তিপূর্ণ ও আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে দাবি উত্থাপনই দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ হয়, যা স্থায়িত্ব দেয়। তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায়, সহিংস ঘটনার জবাব সহিংসতা, ঘৃণা কিংবা মব ভায়োলেন্স নয়, বরং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সহিষ্ণু, সৃজনশীল এবং জনমুখী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে মোকাবিলা দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ফলপ্রসূ হয়।
এই ঘটনায় চিহ্নিত অপরাধী কীভাবে দেশ ছাড়তে পারল? এখানে কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল?
আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, সীমান্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি এবং দ্রুত গ্রেপ্তার বাস্তবায়নে গুরুতর গ্যাপ ছিল। সন্দেহভাজনেরা মোটরসাইকেলে ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার, মোবাইল সিম ও ফোন ফেলে দেওয়া, একাধিক যানবাহন বদল করে সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা, যা পূর্বপরিকল্পিত সমন্বয়ভিত্তিক আঁতাতনির্ভর পলায়নের ইঙ্গিত। সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা, আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ প্রতিরোধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত রয়েছে, তাদের সহায়তা থাকতে পারে। কোনো একক সংস্থার ব্যর্থতা নয় এটি।
হাদির মৃত্যুসংবাদের পর যেসব সহিংস ঘটনা ঘটল, সেগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
অবস্থাদৃষ্টে, কেবল ‘স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে নয়, বরং শাসনব্যবস্থার চরম শৈথিল্য ও প্রতিশোধপরায়ণ সুসংগঠিত উসকানির সম্মিলিত ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী সহিংসতার খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ‘লড়াকু যোদ্ধা’ হিসেবে অনেকের কাছে ওসমান হাদির যে পরিচিতি তৈরি হয়েছিল, তা অনেকাংশে ম্লান করেছে বলেই অনুমান।
দেশের যে দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা অফিস পোড়ানো হয়েছে, সেখানে জুলাইয়ের অনেক স্মৃতি-স্মারকও ছিল। ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে হয়েছে ২৮ জন পেশাজীবীকে। অথচ এই দুটি পত্রিকা পতিত সরকারের সময় গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিষিদ্ধ ছিল। ছায়ানটের ওপর কিসের রাগ? সাংস্কৃতিক দর্শনের সঙ্গে মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। মানুষকে আকৃষ্ট করবে এমন পাল্টা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের চেষ্টা
না করে, এ রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কারা উৎসাহ দিচ্ছে?
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ আরও স্পষ্ট করে ঘটনার পেছনের অশুভ শক্তির সংযোগ।
ওসমান হাদির নিজের বক্তব্য এবং অবস্থানের সঙ্গেও এই জঘন্য সহিংস ঘটনাগুলো সাংঘর্ষিক। কেননা, এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্যও ছিল স্পষ্ট: ‘পারলে আরও দশটা প্রথম আলো তৈরি করে দেখান। প্রথম আলো অফিসের সামনে আপনার কাজ কী?’ সবকিছু বিবেচনায়, এই সহিংসতা তরুণদের নিজস্ব বিবেচনায় সংঘটিত হয়েছে—এমনটা মনে হওয়ার কারণ সীমিত। ‘বিশেষ’ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ও দলগত আদর্শিক দ্বন্দ্বের প্রতিশোধমূলক রাজনীতি তরুণদের আবেগকে পুঁজি করছে বলেই অনুমান (ইনস্ট্রুমেন্টালাইজেশন অব ইয়ুথ)। বিনা উসকানিতে দুঃশাসন পতনোত্তর (রেজিম ফল) বাস্তবতায় এ রকম সংঘবদ্ধ সহিংসতা গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং সর্বোপরি শান্তি বিনির্মাণের পথে প্রধান অন্তরায়। বিশ্ব পরিমণ্ডলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যার দায় সরকারের ওপর চাপবে।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আপনার পরামর্শ কী?
এই বিষয়ে মোটাদাগে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি আইনের শাসন তথা কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অপরাধের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি সমাজকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীবিশেষে আইনের কঠোরতা, নমনীয়তা এমনকি বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিপন্থী। দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের পাশাপাশি প্রতিটি তদন্তের অগ্রগতি ও চূড়ান্ত ফল জনসমক্ষে নিয়মিত প্রকাশ জরুরি। সীমান্ত নজরদারি
এবং ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্রুত তথ্যপ্রবাহের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরামর্শ। দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। সঙ্গে বিদ্যমান ত্রুটিযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, যার ওপর টেকসই স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে। ভিন্নমতের কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারও সহিংস মৃত্যুর ঘটনায় আজকাল উল্লাস—এসবই সুস্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বিলুপ্তির পূর্বাভাস।
এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য ও সুশিক্ষার অভাব। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক বিভাজনগুলো এখন শত্রু-মিত্রের বাইনারিতে পরিণত হয়েছে। ফলে সামষ্টিক জাতীয় স্বার্থ কিংবা জাতীয়তাবোধ তৈরি হচ্ছে না। রাজনীতিতে ধর্মের যাচ্ছেতাই ব্যবহার, মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগতকরণের বিপরীতে বিতর্কিতকরণের হীন প্রয়াস, যাকে-তাকে যখন-তখন ভারত-পাকিস্তানপন্থী ট্যাগিং—এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ভয়ানক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি বা দেশের বিদ্যমান আইনবিধির আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং প্রথম পরামর্শ অনুযায়ী অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তত মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি বৃহৎ পরিসরের জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাও রাখা যেতে পারে এই কমিশনে, যাতে কমিশন মান বজায় রেখে নিরপেক্ষ এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
অধিকন্তু, সীমিত সম্পদের বিপরীতে দেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে, যার বড় একটি অংশের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো হয়ে উঠেছে বিনা বেতনে তাদের ‘নিয়োগকারী কর্ম সংস্থা’। বিনা বেতনে তথাকথিত এই ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ’ দিয়ে তাদের অনেককে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত করছেন দলের এলিট নেতারা। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই মূলত এদের বেশির ভাগ জড়াচ্ছে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে, নিয়োজিত হচ্ছে বিরোধীমত নিয়ন্ত্রণের
মতো অপরাধমূলক কাজে। ফলে রাজনৈতিক সচেতনতা বাদ দিয়ে রাজনীতিপ্রবণ হয়ে উঠছে সমাজের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তৈরি হচ্ছে অপরাধের এক ভিশাস সাইকেল (পরিবর্তনের নেতিবাচক চক্র)। ফলে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে এবং স্থিতিশীলতা পড়ে যাচ্ছে হুমকির মুখে।

এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু কথা বলা কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নয়। গণমাধ্যমের ‘কনটেন্ট’ বা আধেয় ও বিষয়বস্তুর গুণগত মান নির্ধারণেও ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির অবাধ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ডিজিটাল অবরোধ নয়...
০৩ মে ২০২২
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
৮ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
৮ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগেরুশো তাহের

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো এমন একটি কোম্পানি বা সংস্থা, যা অন্য একটি কোম্পানি বা সংস্থার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন করে, যাতে তারা সম্পদ ভাগ করে নিতে পারে, সাধারণ লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে এবং পারস্পরিক সুবিধা পেতে পারে, যা একা অর্জন করা কঠিন হবে। এই অংশীদারত্বে অর্থ, দক্ষতা বা তথ্য ভাগ করে নেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং এগুলো প্রায়ই পরিপূরক পণ্য বা পরিষেবার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এগুলো আইনি অংশীদারত্ব (লিগ্যাল পার্টনারশিপ), এজেন্সি বা করপোরেট সহযোগী (করপোরেট অ্যাফিলিয়েট) থেকে আলাদা, যেখানে অংশীদারেরা স্বতন্ত্র থাকলেও যৌথ উদ্যোগে সহযোগিতা করে।
এদিকে পৃথিবীর দেশে দেশে রুশ ফেডারেশন তার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার দেশগুলোয় রাশিয়ান স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন ‘রোসাটম’-এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে যাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে রুশ ফেডারেশনের প্রভাব বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আজ যে রুশ নিউক্লিয়ার টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ (থ্রি প্লাস) রি-অ্যাক্টর স্থাপনে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বারতা নিয়ে কমিশনিংয়ের দ্বারপ্রান্তে, তা-ও রাশিয়া ও বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের অনিবার্য ফল।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পৃথিবীর অন্য যেসব দেশের সঙ্গে রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ রয়েছে, সেসব দেশেও রুশ ফেডারেশন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি এমনকি বিশেষজ্ঞ সেবা দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। সেই ইতিহাস খানিকটা আলোকপাত করছি। বস্তুত নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর স্থাপন ও পরিচালনায় বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর একটি হচ্ছে রোসাটম। এটি শুধু দেশে নয়, বরং পৃথিবীর নানা দেশে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর তথা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা, সারা বিশ্বে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি সম্প্রসারণে রোসাটম গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য প্রতিষ্ঠান। আগামী দিনেও পৃথিবীর অনেক দেশে রোসাটম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং পরিচালনায় অংশ নিতে যাচ্ছে। যেমন তুরস্কে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের চারটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনের চুক্তি রোসাটম ও তুরস্ক সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১০ সালে, যা তুরস্কের পার্লামেন্টেও অনুমোদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালে নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু তুর্কি সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৫ সালে ২৪ নভেম্বর সিরিয়ার রুশ বিমান ভূপাতিত এবং সে কারণে আইএস কর্তৃক রুশ স্পেশাল ফোর্সের প্রাণহানিতে সেই চুক্তি পিছিয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে মস্কো ও আঙ্কারা সেই ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর মাধ্যমে তুরস্কে রোসাটম কর্তৃক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চালায়।
রুশ ফেডারেশনের আরেক স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হচ্ছে বেলারুশ। বেলারুশে রোসাটম ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১০ সালে। যেগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় যথাক্রমে ২০১৮ সালে ও ২০২০ সালে। এদিকে ইরানে ভিভিইআর-১০০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপন চুক্তি রোসাটম ও ইরান সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১৪ সালে। উল্লেখ্য, ইরান জার্মানির সহযোগিতায় নির্মিত
ও পরিচালিত রি-অ্যাক্টর থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির জায়গায় রুশ ফেডারেশনকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করল ইরান। উল্লেখ্য, ইরানের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম বুশের-১। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে বুশের-২ নামে আরেকটি প্রকল্পে আরও ছয়টি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে ইরান ও রুশ ফেডারেশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৯৮৮ সালে ভারতের কুদানকুলামে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। তবে সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নির্মাণ শুরুর ১১ বছরের মাথায় ২০১৩ সালে অপারেশনে আসে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৬ সালের অক্টোবরে রুশ ফেডারেশন ও ভারত ঘোষণা করে যে কুদানকুলাম-২-এর পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। উল্লেখ্য, কুদানকুলাম-২ থ্রি প্লাস রি-অ্যাক্টর উন্নয়নের কাজও চলছে রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট কর্তৃক।
এশিয়ার আরেক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামে নিন তুয়ান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ এখন পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে রুশ টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ মডেলের থ্রি-প্লাস প্রজন্মের রি-অ্যাক্টর স্থাপনের কথা ছিল।
এটি হতো ভিয়েতনামের প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৪ সালে শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং সেই অনুযায়ী সাইট উন্নয়নও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম সরকার নিরাপত্তার ইস্যুগুলো নিশ্চিতকল্পের লক্ষ্যে নিন তুয়ান প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনামের ওই প্রকল্প রুশ ফেডারেশনের ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় নির্মিত হতে যাচ্ছিল।
‘পাকস-২ প্রকল্প’ নামে হাঙ্গেরিতে ২০১৮ সালে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানি এমজিএম এবং রোসাটমের মধ্যে ২০১৪ সালের শেষের দিকে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, প্রাথমিক পাকস-নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। ফিনল্যান্ডে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের একটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে শুরু করে রোসাটম। যেটির কারিগরি সহায়তা ও অর্থায়নও করে রোসাটম। কিন্তু সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের সম্পর্কটি দোটানায় পড়ে যায়।
উল্লেখ্য, রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গভীর সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্কের প্রতিফলনই রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, যার অনিবার্য ফল বাংলাদেশের রূপপুরে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের অনন্য অবদান।
রুশো তাহের, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও যোগাযোগ পরামর্শক

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো এমন একটি কোম্পানি বা সংস্থা, যা অন্য একটি কোম্পানি বা সংস্থার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন করে, যাতে তারা সম্পদ ভাগ করে নিতে পারে, সাধারণ লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে এবং পারস্পরিক সুবিধা পেতে পারে, যা একা অর্জন করা কঠিন হবে। এই অংশীদারত্বে অর্থ, দক্ষতা বা তথ্য ভাগ করে নেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং এগুলো প্রায়ই পরিপূরক পণ্য বা পরিষেবার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এগুলো আইনি অংশীদারত্ব (লিগ্যাল পার্টনারশিপ), এজেন্সি বা করপোরেট সহযোগী (করপোরেট অ্যাফিলিয়েট) থেকে আলাদা, যেখানে অংশীদারেরা স্বতন্ত্র থাকলেও যৌথ উদ্যোগে সহযোগিতা করে।
এদিকে পৃথিবীর দেশে দেশে রুশ ফেডারেশন তার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার দেশগুলোয় রাশিয়ান স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন ‘রোসাটম’-এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে যাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে রুশ ফেডারেশনের প্রভাব বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আজ যে রুশ নিউক্লিয়ার টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ (থ্রি প্লাস) রি-অ্যাক্টর স্থাপনে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বারতা নিয়ে কমিশনিংয়ের দ্বারপ্রান্তে, তা-ও রাশিয়া ও বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের অনিবার্য ফল।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পৃথিবীর অন্য যেসব দেশের সঙ্গে রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ রয়েছে, সেসব দেশেও রুশ ফেডারেশন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি এমনকি বিশেষজ্ঞ সেবা দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। সেই ইতিহাস খানিকটা আলোকপাত করছি। বস্তুত নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর স্থাপন ও পরিচালনায় বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর একটি হচ্ছে রোসাটম। এটি শুধু দেশে নয়, বরং পৃথিবীর নানা দেশে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর তথা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা, সারা বিশ্বে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি সম্প্রসারণে রোসাটম গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য প্রতিষ্ঠান। আগামী দিনেও পৃথিবীর অনেক দেশে রোসাটম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং পরিচালনায় অংশ নিতে যাচ্ছে। যেমন তুরস্কে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের চারটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনের চুক্তি রোসাটম ও তুরস্ক সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১০ সালে, যা তুরস্কের পার্লামেন্টেও অনুমোদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালে নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু তুর্কি সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৫ সালে ২৪ নভেম্বর সিরিয়ার রুশ বিমান ভূপাতিত এবং সে কারণে আইএস কর্তৃক রুশ স্পেশাল ফোর্সের প্রাণহানিতে সেই চুক্তি পিছিয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে মস্কো ও আঙ্কারা সেই ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর মাধ্যমে তুরস্কে রোসাটম কর্তৃক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চালায়।
রুশ ফেডারেশনের আরেক স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হচ্ছে বেলারুশ। বেলারুশে রোসাটম ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১০ সালে। যেগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় যথাক্রমে ২০১৮ সালে ও ২০২০ সালে। এদিকে ইরানে ভিভিইআর-১০০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপন চুক্তি রোসাটম ও ইরান সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১৪ সালে। উল্লেখ্য, ইরান জার্মানির সহযোগিতায় নির্মিত
ও পরিচালিত রি-অ্যাক্টর থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির জায়গায় রুশ ফেডারেশনকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করল ইরান। উল্লেখ্য, ইরানের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম বুশের-১। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে বুশের-২ নামে আরেকটি প্রকল্পে আরও ছয়টি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে ইরান ও রুশ ফেডারেশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৯৮৮ সালে ভারতের কুদানকুলামে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। তবে সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নির্মাণ শুরুর ১১ বছরের মাথায় ২০১৩ সালে অপারেশনে আসে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৬ সালের অক্টোবরে রুশ ফেডারেশন ও ভারত ঘোষণা করে যে কুদানকুলাম-২-এর পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। উল্লেখ্য, কুদানকুলাম-২ থ্রি প্লাস রি-অ্যাক্টর উন্নয়নের কাজও চলছে রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট কর্তৃক।
এশিয়ার আরেক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামে নিন তুয়ান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ এখন পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে রুশ টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ মডেলের থ্রি-প্লাস প্রজন্মের রি-অ্যাক্টর স্থাপনের কথা ছিল।
এটি হতো ভিয়েতনামের প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৪ সালে শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং সেই অনুযায়ী সাইট উন্নয়নও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম সরকার নিরাপত্তার ইস্যুগুলো নিশ্চিতকল্পের লক্ষ্যে নিন তুয়ান প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনামের ওই প্রকল্প রুশ ফেডারেশনের ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় নির্মিত হতে যাচ্ছিল।
‘পাকস-২ প্রকল্প’ নামে হাঙ্গেরিতে ২০১৮ সালে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানি এমজিএম এবং রোসাটমের মধ্যে ২০১৪ সালের শেষের দিকে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, প্রাথমিক পাকস-নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। ফিনল্যান্ডে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের একটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে শুরু করে রোসাটম। যেটির কারিগরি সহায়তা ও অর্থায়নও করে রোসাটম। কিন্তু সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের সম্পর্কটি দোটানায় পড়ে যায়।
উল্লেখ্য, রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গভীর সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্কের প্রতিফলনই রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, যার অনিবার্য ফল বাংলাদেশের রূপপুরে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের অনন্য অবদান।
রুশো তাহের, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও যোগাযোগ পরামর্শক

এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু কথা বলা কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নয়। গণমাধ্যমের ‘কনটেন্ট’ বা আধেয় ও বিষয়বস্তুর গুণগত মান নির্ধারণেও ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির অবাধ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ডিজিটাল অবরোধ নয়...
০৩ মে ২০২২
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
৭ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
৮ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
এই বার্তা দেওয়া না হলে দেশ পড়ে যায় বিপদে। এরই মধ্যে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। দুটি পত্রিকা অফিস এবং ছায়ানট ও উদীচীতে উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে দলটি। এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে এই নৈরাজ্যের নিন্দা জানানো হয়েছে। মুশকিল হলো, নিন্দা জানালে জনগণ সংকটগুলো বুঝতে পারে বটে, কিন্তু শৈশবে বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে দেওয়া একটি বাক্যের কথা তখন তাদের মনে পড়ে যায়। ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেল’—এই বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ করেননি, এমন পড়ুয়া খুব কম আছেন।
এবারও দেখা গেল, শাহবাগ থেকে কিছু মানুষ এসে প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভাঙচুর চালাচ্ছে। সংখ্যায় এরা বেশি নয়, কিন্তু যে রকম মারমুখী, তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মূলত এই আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। পত্রিকা অফিস কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর যখন হামলে পড়ল কিছু মানুষ, তখন তাদের থামানোর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য সেখানে মোতায়েন ছিল না। ভাঙচুর শেষে আগুন দেওয়ার পর এসে হাজির হয়। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার পর হাজির হয় ফায়ার সার্ভিস।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, নিন্দা জানানো হয়েছে। ঘাপটি মেরে বসে থাকা অরাজক বাহিনী যে সুযোগ নিয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নেয়, সেটা এখন দেখার বিষয়। যেকোনো বিষয়কে ইস্যু করে যে কেউ অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারাকে স্বাধীনতা বলে না, তাকে বলা হয় অরাজকতা। এই কথা সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বুঝতে হবে। উত্তেজিত জনতা যুক্তি বোঝে না।
তাদের উত্তেজিত করছে কে, সেটাই আসলে খুঁজে বের করা দরকার।
জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময় এসে গেছে। এ সময় নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারি মহল থেকে যে ধরনের কথা শোনা যায়, তাতে মনে হয়, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে সরকার। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই এখন সবার চাওয়া। সে রকম পরিবেশ তৈরির করার জন্য নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে সরকারকে। যারা ঝোপ বুঝে কোপ মারে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক না হলে বিপদ বাড়তেই থাকবে।
দেশে বহুমত, বাক্স্বাধীনতা, সংস্কৃতির প্রবহমানতার ওপর আঘাত এলে তা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দেশের মানুষের শান্তি এখন খুব প্রয়োজন।

নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
এই বার্তা দেওয়া না হলে দেশ পড়ে যায় বিপদে। এরই মধ্যে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। দুটি পত্রিকা অফিস এবং ছায়ানট ও উদীচীতে উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে দলটি। এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে এই নৈরাজ্যের নিন্দা জানানো হয়েছে। মুশকিল হলো, নিন্দা জানালে জনগণ সংকটগুলো বুঝতে পারে বটে, কিন্তু শৈশবে বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে দেওয়া একটি বাক্যের কথা তখন তাদের মনে পড়ে যায়। ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেল’—এই বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ করেননি, এমন পড়ুয়া খুব কম আছেন।
এবারও দেখা গেল, শাহবাগ থেকে কিছু মানুষ এসে প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভাঙচুর চালাচ্ছে। সংখ্যায় এরা বেশি নয়, কিন্তু যে রকম মারমুখী, তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মূলত এই আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। পত্রিকা অফিস কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর যখন হামলে পড়ল কিছু মানুষ, তখন তাদের থামানোর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য সেখানে মোতায়েন ছিল না। ভাঙচুর শেষে আগুন দেওয়ার পর এসে হাজির হয়। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার পর হাজির হয় ফায়ার সার্ভিস।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, নিন্দা জানানো হয়েছে। ঘাপটি মেরে বসে থাকা অরাজক বাহিনী যে সুযোগ নিয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নেয়, সেটা এখন দেখার বিষয়। যেকোনো বিষয়কে ইস্যু করে যে কেউ অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারাকে স্বাধীনতা বলে না, তাকে বলা হয় অরাজকতা। এই কথা সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বুঝতে হবে। উত্তেজিত জনতা যুক্তি বোঝে না।
তাদের উত্তেজিত করছে কে, সেটাই আসলে খুঁজে বের করা দরকার।
জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময় এসে গেছে। এ সময় নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারি মহল থেকে যে ধরনের কথা শোনা যায়, তাতে মনে হয়, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে সরকার। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই এখন সবার চাওয়া। সে রকম পরিবেশ তৈরির করার জন্য নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে সরকারকে। যারা ঝোপ বুঝে কোপ মারে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক না হলে বিপদ বাড়তেই থাকবে।
দেশে বহুমত, বাক্স্বাধীনতা, সংস্কৃতির প্রবহমানতার ওপর আঘাত এলে তা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দেশের মানুষের শান্তি এখন খুব প্রয়োজন।

এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু কথা বলা কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নয়। গণমাধ্যমের ‘কনটেন্ট’ বা আধেয় ও বিষয়বস্তুর গুণগত মান নির্ধারণেও ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির অবাধ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ডিজিটাল অবরোধ নয়...
০৩ মে ২০২২
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
৭ ঘণ্টা আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
৮ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু কথা বলা কিংবা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নয়। গণমাধ্যমের ‘কনটেন্ট’ বা আধেয় ও বিষয়বস্তুর গুণগত মান নির্ধারণেও ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির অবাধ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ডিজিটাল অবরোধ নয়...
০৩ মে ২০২২
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
৭ ঘণ্টা আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
৮ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
৮ ঘণ্টা আগে