আনোয়ারুল হক
সাধারণভাবে নতুন স্মৃতি পুরোনোকে মনে রাখা কঠিন করে তোলে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ভুলে যাওয়া খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়টি মস্তিষ্ক দ্বারা পরিচালিত হয়। আবার ইতিহাসের এমন এমন কিছু অধ্যায় মস্তিষ্কের কুঠরিতে এমনভাবে জায়গা করে নেয়, যা আর মানুষ ভুলতে পারে না। যেমন আমাদের জেনারেশন সেই কৈশোরে যারা ’৬৯ দেখেছে, অল্পস্বল্প মিছিলে হেঁটেছে, তাঁদের স্মৃতিতে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান উজ্জ্বল। শুধু অভ্যুত্থানই নয়, বিজয়ী অভ্যুত্থানের যে রাজনৈতিক ফলাফল, তা কীভাবে দ্রুত একটা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনের রায়কে পাকিস্তানি শাসকেরা অস্বীকার করার ফলে কীভাবে এক নদী রক্ত পেরিয়ে একটা স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ ভূমিষ্ঠ হলো—সবই আমাদের সামনে, আমাদের কমবেশি অংশগ্রহণে ঘটে গেল।
আবার এই যে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের ভ্রূণ সৃষ্টি হয়েছিল ’৫২-এর ভাষা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে—যা আমাদের প্রজন্ম দেখেনি। কিন্তু একটা জাতির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আমাদের ইতিহাসকে এমনভাবে স্পর্শ করে আছে, মনে হয় আমরাও সালাম-বরকতের সঙ্গে পথ হেঁটেছি। একটা জাতি বা জনগোষ্ঠীর বিকাশের ইতিহাস এমনই—চাইলেই মুছে ফেলা যায় না, মুছেও না।
১৯৮২ থেকে ’৯০ অর্থাৎ প্রায় গোটা আশির দশকজুড়ে স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘস্থায়ী গণসংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল। ১৯৮২-৮৩ সালে এ সংগ্রামের সূচনা করেছিল বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ এবং যার একধরনের পরিসমাপ্তি হয়েছিল ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতা দখল করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দমন-পীড়নের প্রথম লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নেন। সামরিক ফরমান জারি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, এমনকি হলগুলোর অভ্যন্তরেও কোনো সভা-সমাবেশ মিছিল করা যাবে না। পাঁচজনের বেশি একত্র হওয়া যাবে না। মিলাদ বা দোয়া মাহফিল করতে হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামরিক ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে।
একের পর এক এ ধরনের অপমানজনক ফরমান ছাত্রদের আত্মসম্মানে আঘাত হানে। এবং একতরফাভাবে শিক্ষা, বিশেষত উচ্চশিক্ষাকে সাধারণের জন্য সংকোচন এবং প্রাথমিক স্তর থেকেই শিশুমনে সাম্প্রদায়িক ভেদ-বিভেদ সৃষ্টির শিক্ষানীতি ঘোষণা করার ফলে ছাত্র আন্দোলনে ভাটার টান থাকলেও গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের ডাক দিলে ছাত্র সমাজ দ্রুতই সাড়া দেয়। প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষায় ছাত্র আন্দোলনে এক নব উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। তবে অগ্রসর হওয়ার পথ মসৃণ ছিল না। সামরিক শাসনের মধ্যে আঁকাবাঁকা নানা পথে নানা কৌশলে সেদিনের ছাত্র আন্দোলনকে অগ্রসর করতে হয়েছিল। অবশেষে ’৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক আইন ভেঙে মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে এক বিশাল ছাত্র মিছিল স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে রওনা হয় সচিবালয়ের পথে।
১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মিছিল এগিয়ে চলেছে সচিবালয় অভিমুখে। ভীত শাসকেরা সেই মিছিলের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। শহীদ হন জয়নাল এবং পরবর্তী সময়ে মোজাম্মেল ও কাঞ্চন। গুম করে ফেলা হয় অনেক লাশ। রাতের আঁধারে নেমে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, যা থেকে ছাত্রী হলও বাদ যায়নি। দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র আন্দোলনের যে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল দমন-পীড়নের মাধ্যমে, তাকে নিভিয়ে দেওয়া যায়নি। বরং তা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। গড়ে ওঠে সামরিক শাসনবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট, শ্রমিক-কর্মচারীদের জোট, পেশাজীবী আন্দোলন, কৃষক-খেতমজুর আন্দোলন, সাংস্কৃতিক জোট, এমনকি কবিতা পরিষদের মতো সংগঠনের আন্দোলন। সামরিক শাসনের অবসান এবং নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার এক দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের নানা পর্বে ছাত্র আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছাত্র আন্দোলনের কর্মী সেলিম-দেলোয়ারকে পুলিশের ট্রাকের চাকায় পিষ্ট করে হত্যা করা হয়। ছাত্র কর্মী রাউফুন বসুনিয়া, শাহজাহান সিরাজ এবং এক জটিল পর্বে আসলাম প্রমুখের আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে এ আন্দোলন অগ্রসর হয়। এ লড়াইয়ে শ্রমিকনেতা তাজুল ও খেতমজুর আন্দোলনের কর্মী টিটোর আত্মদান আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। আর অতি সাধারণ মানুষের হাতে লেখা ও বুকে-পিঠে আঁকা ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ হয়ে যায় সময়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা। শহীদ নূর হোসেন যেন গণতন্ত্রের সংগ্রামের প্রতীক। এমনিভাবে সংগ্রামের নানা পর্বে অসংখ্য শহীদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারির রক্তপতাকা হাতে ছাত্র সমাজ অগ্রসর হয়েছে ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের পথে এবং অভ্যুত্থানের বিজয় মশাল জ্বালাতে শেষ মুহূর্তে জীবন উৎসর্গ করেন সেই ১৪ ফেব্রুয়ারির মিছিলের মুখ আর ৯০-এ পেশাজীবী আন্দোলনের নেতা ডা. মিলন।
সামরিক শাসন আর একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে আশির দশকজুড়ে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার লড়াই এবং নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান দেশের ইতিহাসের অংশ। তেমনি ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে ২০২৪-এর বীরত্বপূর্ণ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। কোনো আন্দোলন বা গণসংগ্রামই চেনা ছক বা ছন্দে সীমাবদ্ধ থাকে না। তাই তো সৃষ্টি হয় নতুন নতুন ইতিহাস। এবারের জুলাই ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান বিশেষ করে তারুণ্যের জাগরণ যে বৈশিষ্ট্য নিয়ে সংগঠিত হয়েছিল, তা অন্য সময়ের থেকে ভিন্নতর এবং অতিসাম্প্রতিক। তাই আবু সাঈদের বীরত্ব বা মুগ্ধর মুগ্ধতা, রিকশার পাদানিতে গোলাম নাফিজ আমাদের গভীরভাবে আলোড়িত করে। তেমনি সেলিম-দেলোয়ারের পুলিশের ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে আত্মদানের কাহিনি কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক তাজুল ইসলামের আদমজীতে কারখানা শ্রমিক হিসেবে চাকরি নিয়ে শ্রমিক আন্দোলন ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে জীবন বলিদান, নূর হোসেনের বীরত্বগাথা কিংবা ডা. মিলনের আত্মোৎসর্গ—সবই ইতিহাসের অংশ। ইতিহাসের একটা অংশ দিয়ে আরেকটা অংশ ঢেকে ফেলার চেষ্টা হবে আত্মঘাতী। এবং শেষ বিচারে তা সফল হয় না। কিন্তু তার পরেও বর্ণচোরা এক গোষ্ঠী জাতির সব বীরত্বগাথা ও গৌরবের ইতিহাসকে ডিলিট করে শুধু চব্বিশকে প্রতিস্থাপন করতে চাইছে।
প্রায় এক দশকের সামরিক শাসনের ঘন আঁধারে ১৪ ফেব্রুয়ারি ’৮৩ ছিল ধ্রুবতারার মতো। এবং ১৪ ফেব্রুয়ারিই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে দ্রোহের আগুন জ্বেলেছিল এবং তা অবসান না হওয়া পর্যন্ত ওই সময়ের সংগ্রামে দ্যুতি হিসেবে থেকেছে। আর ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়ে আসছে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে।
সাধারণভাবে নতুন স্মৃতি পুরোনোকে মনে রাখা কঠিন করে তোলে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ভুলে যাওয়া খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়টি মস্তিষ্ক দ্বারা পরিচালিত হয়। আবার ইতিহাসের এমন এমন কিছু অধ্যায় মস্তিষ্কের কুঠরিতে এমনভাবে জায়গা করে নেয়, যা আর মানুষ ভুলতে পারে না। যেমন আমাদের জেনারেশন সেই কৈশোরে যারা ’৬৯ দেখেছে, অল্পস্বল্প মিছিলে হেঁটেছে, তাঁদের স্মৃতিতে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান উজ্জ্বল। শুধু অভ্যুত্থানই নয়, বিজয়ী অভ্যুত্থানের যে রাজনৈতিক ফলাফল, তা কীভাবে দ্রুত একটা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনের রায়কে পাকিস্তানি শাসকেরা অস্বীকার করার ফলে কীভাবে এক নদী রক্ত পেরিয়ে একটা স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ ভূমিষ্ঠ হলো—সবই আমাদের সামনে, আমাদের কমবেশি অংশগ্রহণে ঘটে গেল।
আবার এই যে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের ভ্রূণ সৃষ্টি হয়েছিল ’৫২-এর ভাষা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে—যা আমাদের প্রজন্ম দেখেনি। কিন্তু একটা জাতির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আমাদের ইতিহাসকে এমনভাবে স্পর্শ করে আছে, মনে হয় আমরাও সালাম-বরকতের সঙ্গে পথ হেঁটেছি। একটা জাতি বা জনগোষ্ঠীর বিকাশের ইতিহাস এমনই—চাইলেই মুছে ফেলা যায় না, মুছেও না।
১৯৮২ থেকে ’৯০ অর্থাৎ প্রায় গোটা আশির দশকজুড়ে স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘস্থায়ী গণসংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল। ১৯৮২-৮৩ সালে এ সংগ্রামের সূচনা করেছিল বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ এবং যার একধরনের পরিসমাপ্তি হয়েছিল ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতা দখল করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দমন-পীড়নের প্রথম লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নেন। সামরিক ফরমান জারি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, এমনকি হলগুলোর অভ্যন্তরেও কোনো সভা-সমাবেশ মিছিল করা যাবে না। পাঁচজনের বেশি একত্র হওয়া যাবে না। মিলাদ বা দোয়া মাহফিল করতে হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামরিক ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে।
একের পর এক এ ধরনের অপমানজনক ফরমান ছাত্রদের আত্মসম্মানে আঘাত হানে। এবং একতরফাভাবে শিক্ষা, বিশেষত উচ্চশিক্ষাকে সাধারণের জন্য সংকোচন এবং প্রাথমিক স্তর থেকেই শিশুমনে সাম্প্রদায়িক ভেদ-বিভেদ সৃষ্টির শিক্ষানীতি ঘোষণা করার ফলে ছাত্র আন্দোলনে ভাটার টান থাকলেও গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের ডাক দিলে ছাত্র সমাজ দ্রুতই সাড়া দেয়। প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষায় ছাত্র আন্দোলনে এক নব উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। তবে অগ্রসর হওয়ার পথ মসৃণ ছিল না। সামরিক শাসনের মধ্যে আঁকাবাঁকা নানা পথে নানা কৌশলে সেদিনের ছাত্র আন্দোলনকে অগ্রসর করতে হয়েছিল। অবশেষে ’৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক আইন ভেঙে মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে এক বিশাল ছাত্র মিছিল স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে রওনা হয় সচিবালয়ের পথে।
১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মিছিল এগিয়ে চলেছে সচিবালয় অভিমুখে। ভীত শাসকেরা সেই মিছিলের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। শহীদ হন জয়নাল এবং পরবর্তী সময়ে মোজাম্মেল ও কাঞ্চন। গুম করে ফেলা হয় অনেক লাশ। রাতের আঁধারে নেমে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, যা থেকে ছাত্রী হলও বাদ যায়নি। দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র আন্দোলনের যে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল দমন-পীড়নের মাধ্যমে, তাকে নিভিয়ে দেওয়া যায়নি। বরং তা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। গড়ে ওঠে সামরিক শাসনবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট, শ্রমিক-কর্মচারীদের জোট, পেশাজীবী আন্দোলন, কৃষক-খেতমজুর আন্দোলন, সাংস্কৃতিক জোট, এমনকি কবিতা পরিষদের মতো সংগঠনের আন্দোলন। সামরিক শাসনের অবসান এবং নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার এক দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের নানা পর্বে ছাত্র আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছাত্র আন্দোলনের কর্মী সেলিম-দেলোয়ারকে পুলিশের ট্রাকের চাকায় পিষ্ট করে হত্যা করা হয়। ছাত্র কর্মী রাউফুন বসুনিয়া, শাহজাহান সিরাজ এবং এক জটিল পর্বে আসলাম প্রমুখের আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে এ আন্দোলন অগ্রসর হয়। এ লড়াইয়ে শ্রমিকনেতা তাজুল ও খেতমজুর আন্দোলনের কর্মী টিটোর আত্মদান আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। আর অতি সাধারণ মানুষের হাতে লেখা ও বুকে-পিঠে আঁকা ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ হয়ে যায় সময়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা। শহীদ নূর হোসেন যেন গণতন্ত্রের সংগ্রামের প্রতীক। এমনিভাবে সংগ্রামের নানা পর্বে অসংখ্য শহীদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারির রক্তপতাকা হাতে ছাত্র সমাজ অগ্রসর হয়েছে ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের পথে এবং অভ্যুত্থানের বিজয় মশাল জ্বালাতে শেষ মুহূর্তে জীবন উৎসর্গ করেন সেই ১৪ ফেব্রুয়ারির মিছিলের মুখ আর ৯০-এ পেশাজীবী আন্দোলনের নেতা ডা. মিলন।
সামরিক শাসন আর একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে আশির দশকজুড়ে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার লড়াই এবং নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান দেশের ইতিহাসের অংশ। তেমনি ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে ২০২৪-এর বীরত্বপূর্ণ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। কোনো আন্দোলন বা গণসংগ্রামই চেনা ছক বা ছন্দে সীমাবদ্ধ থাকে না। তাই তো সৃষ্টি হয় নতুন নতুন ইতিহাস। এবারের জুলাই ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান বিশেষ করে তারুণ্যের জাগরণ যে বৈশিষ্ট্য নিয়ে সংগঠিত হয়েছিল, তা অন্য সময়ের থেকে ভিন্নতর এবং অতিসাম্প্রতিক। তাই আবু সাঈদের বীরত্ব বা মুগ্ধর মুগ্ধতা, রিকশার পাদানিতে গোলাম নাফিজ আমাদের গভীরভাবে আলোড়িত করে। তেমনি সেলিম-দেলোয়ারের পুলিশের ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে আত্মদানের কাহিনি কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক তাজুল ইসলামের আদমজীতে কারখানা শ্রমিক হিসেবে চাকরি নিয়ে শ্রমিক আন্দোলন ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে জীবন বলিদান, নূর হোসেনের বীরত্বগাথা কিংবা ডা. মিলনের আত্মোৎসর্গ—সবই ইতিহাসের অংশ। ইতিহাসের একটা অংশ দিয়ে আরেকটা অংশ ঢেকে ফেলার চেষ্টা হবে আত্মঘাতী। এবং শেষ বিচারে তা সফল হয় না। কিন্তু তার পরেও বর্ণচোরা এক গোষ্ঠী জাতির সব বীরত্বগাথা ও গৌরবের ইতিহাসকে ডিলিট করে শুধু চব্বিশকে প্রতিস্থাপন করতে চাইছে।
প্রায় এক দশকের সামরিক শাসনের ঘন আঁধারে ১৪ ফেব্রুয়ারি ’৮৩ ছিল ধ্রুবতারার মতো। এবং ১৪ ফেব্রুয়ারিই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে দ্রোহের আগুন জ্বেলেছিল এবং তা অবসান না হওয়া পর্যন্ত ওই সময়ের সংগ্রামে দ্যুতি হিসেবে থেকেছে। আর ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়ে আসছে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে।
আমার এই লেখা যেদিন ছাপা হবে, সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
৬ ঘণ্টা আগেকয়েক দিন আগে সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর বাজারে গিয়েছি কিছু সবজি কেনার জন্য, তখন পেলাম তার ফোন।
৬ ঘণ্টা আগেএকটি দেশ তখনই প্রকৃত উন্নয়নের পথে এগোয়, যখন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের সব স্তরে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে যে প্রবৃদ্ধি বা অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে, তার বাস্তব চিত্র ভিন্ন। আজকের পত্রিকায় ১৪ মার্চ প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, মাত্র তিন মাসে ব্যাংক হিসাবধারী কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে...
৬ ঘণ্টা আগেড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় ঢাকা শহরের ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়। লিঙ্গবৈচিত্র্যসহ সামাজিক নৃবিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে দেশে-বিদেশের গবেষণা পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগে