নজরুল জাহিদ

যৌনতা মানুষের আদিমতম প্রবৃত্তি। কিন্তু আদিম মানুষের যৌনতা, আর আধুনিক মানুষের যৌনতায় প্রভেদ আছে। আদিকালে যা বংশবিস্তারের জন্য নিতান্ত রুটিন একটা প্রয়োজন ছিল, বুদ্ধিমান মানবজাতি তাকে ক্রমে দেহ-মনের পূর্ণ বিকাশ আর পরিতৃপ্তির উপায় হিসেবে নির্মাণ করেছে। মানুষ যেমন কাঁচা মাংসকে ক্রমে রান্না করা খাওয়া শিখেছে, তেমন যৌনতাকেও কল্পনায়, শৃঙ্গারে, উপাচারে, রাগমোচনে তুরীয় আনন্দ উপভোগের মাধ্যমে শিল্পে পরিণত করেছে। ‘হ্যাভিং সেক্স’-কে ‘মেকিং লাভ’-এ রূপ দিয়েছে।
কিন্তু যৌনতার এই অভিযাত্রায় নারী আর পুরুষের প্রাপ্তি সমান থাকেনি। একযাত্রায় দুই ফল হয়েছে। আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো থেকে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা-কাঠামোর রূপান্তরে প্রধানত বঞ্চিত হয়েছে নারী। এই বঞ্চনা কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, মানসিক ও শারীরিকও। নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘোচাতে তাই যৌনতার মুক্তি দরকার।
এই নিবন্ধে আমরা খুব সংক্ষেপে যৌনতার এই জার্নিটা দেখতে চাইব। দেখতে চাইব পুরুষের ‘ক্ষমতা’ কীভাবে তৈরি হলো, কীভাবে তা নারীর মনোদৈহিক বিকাশের পথে বাধা দিল এবং সফল যৌনতা কীভাবে নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার উপায় হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
আদিজ্ঞান: শ্বাপদসংকুল বৈরী পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকা কঠিন ছিল। অন্য হিংস্র প্রাণিকুলের সঙ্গে যুঝে টিকে থাকার জন্য মানুষের নিজ গোষ্ঠীর লোকবল বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সকল স্তন্যপায়ী (mammal) প্রাণীর মধ্যে মানুষের প্রধান সীমাবদ্ধতা ছিল তাদের নারীরা বছরে একবারের বেশি সন্তান জন্ম দিতে পারে না (uniparous) এবং শারীরিক শক্তিতে দুর্বল হওয়ায় মানুষের বাচ্চা বাঁচেও কম।
অন্যদিকে শত্রুপক্ষের নারীরা একবারে অনেকগুলো বাচ্চা দিতে পারে (pluriparous) এবং সেসব বাচ্চারা বেঁচেও থাকে বেশি সংখ্যায়। গোষ্ঠীর শক্তিবৃদ্ধির জন্য প্রচুর সন্তান জন্মদান প্রয়োজন—সারভাইভালের এই আদিজ্ঞান যত বাড়ল, নারীর গুরুত্বও তত বাড়তে থাকল। ফলে প্রিমিটিভ সমাজ হয়ে উঠল নারীপ্রধান। যেহেতু বছরে একটি মাত্র সন্তান হওয়ায় একজন নারীর পক্ষে গোষ্ঠীর চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই নিশ্চিত করা ছিল অসম্ভব, সেহেতু পুরুষের বহুগামিতাও প্রয়োজনেরই অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যৌনতায় বহুগামিতা (polygamy) না থাকলে মানবজাতি পৃথিবীতে টিকতে পারত না।
উদ্বৃত্ত পুঁজি: আদিকালের কোনো এক স্তরে মানুষের হাতে জমিয়ে রাখার মতো খাদ্য এল, আর বসে থাকার মতো সময়ও এল। এই অবসরে উন্নত মস্তিষ্কের মানুষ যৌনতাকে প্রজনন (reproduction) থেকে বিনোদনে (recreation) উত্তীর্ণ করার ফুরসত পেল। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর জীবনে এই অবসর না আসায় তারা যৌনতাকে বিনোদনে রূপ দিতে পারল না। এ কারণেই মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী কদাচ সন্তান ধারণ ভিন্ন নিজ শরীরের আরাম বা আনন্দের জন্য সেক্স করে। ঠিক কোন সময়ে এই পরিবর্তনটা ঘটল, তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। কারণ সম্পদের বিভাজন পৃথিবীর সবখানে একই সময়ে সর্বজনীনভাবে ঘটেনি। যেমন, শীতপ্রধান অঞ্চলের মানুষের শীতের জন্য খাদ্য মজুত রাখার প্রয়োজন, আর গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মানুষের সেই প্রয়োজন এক ছিল না। আফ্রিকা থেকে প্রথম মানব অভিবাসন শুরু হয়ে তারপর প্রাগৈতিহাসিক যত অভিবাসন হয়েছে, তারও কারণ এক নয়।
যৌনতার আরেক রূপ: সময়ের সঙ্গে মানুষ যৌনতার আরেক রূপ আবিষ্কার করে। গোষ্ঠীর লোকবল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিজের আনন্দের জন্যও যৌনসঙ্গমের প্রয়োজন বোধ করতে শেখে তারা। অন্যদিকে গর্ভকাল (গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় গর্ভকালে সঙ্গম অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ থাকা) ও মাসিকের সময় যৌনমিলন বন্ধ থাকা—এই দুই কারণে পুরুষ আরও বহুগামী হয়ে উঠল। মনে রাখতে হবে, তার আগ থেকেই প্রাকৃতিক কারণে নারীর তুলনায় পুরুষের মধ্যে বহুগামিতার প্রাবল্য ছিল। সেই প্রবৃত্তি (instinct) এখনো আছে। তবে তা আইন, নীতি, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ইত্যাদি দ্বারা অনেকাংশে আধুনিক মানুষ নিয়ন্ত্রণও করতে শিখেছে। মানবজাতির একগামিতার
(monogamy) অভিমুখে প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রার ইতিহাস মাত্র এক হাজার বছরের মতো।
যৌনতার ধরন: নারী ও পুরুষের যৌনতার ধরন আলাদা (কারণটা প্রাকৃতিক, এবং অজানা)। শরীর সঞ্জাত পরিতৃপ্তির উপায়ও উভয়ের সমান নয়। পুরুষের যৌনতৃপ্তি যদি সমদ্বিবাহু (isoceles) ত্রিভুজ হয়, তাহলে নারীর যৌনতৃপ্তিকে rainbow বা বড়জোর সমবাহু (equilateral) ত্রিভুজের সঙ্গে তুলনা করা যায়। পুরুষ মোরগের মতো দৌড়ে উঠে হাঁসের মতো নেমে যেতে পারে। নারীর জ্বলতে সময় লাগে, নিভতেও সময় লাগে।
নারীর শরীর ‘দেখে’ বা ‘ছুঁয়ে’ পুরুষ যেভাবে ‘উত্তেজিত’ হয়, পুরুষের শরীর দেখে বা ছুঁয়ে নারী সেভাবে উত্তেজিত হয় না। পৃথিবীই যেহেতু মনুষ্য বসবাসযোগ্য একমাত্র গ্রহ (এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত), এবং নারী যেহেতু বছরে একবার তাও একটিমাত্র সন্তান প্রসব করতে পারে, পুরুষের তাই এই ‘যাচ্ছেতাই’ যৌন-ইচ্ছা ও ‘ধরো তক্তা মারো পেরেক’ টাইপ সেক্স করার উদ্দীপনা থাকাটা দরকারি ছিল। শিক্ষা, সভ্যতা, জনসংখ্যা ও পরিবেশের ভারসাম্য বিবেচনায় এখন আর সেই দরকার নেই।
যৌনতৃপ্তি: এতকাল যে যৌনতা কেবল গর্ভধারণের উদ্দেশ্যে যোনিগর্ভে নিছক বীর্যপাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, ইতিহাসের এই পর্বে তাতে যৌনতৃপ্তির বিষয়টা যুক্ত হলো। যৌনজীবনে এই প্রথম পুরুষ একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলো। যেনতেন উপায়ে বীর্য স্খলন হলেই যৌনতায় পুরুষের প্রয়োজন ও তৃপ্তি দুটোই মেলে।
কিন্তু নারীর যেহেতু অমন কোনো স্খলন নেই, তাই তার যৌনতৃপ্তি হওয়া, না-হওয়া, হওয়া দরকার কি-না, এমন বিষয়গুলো যৌনজীবনে সন্নিবেশিত হতে থাকল। যৌনতায় নারীর দাবি স্পষ্ট হতে শুরু করায় এবং যৌনতায় তার প্যাসিভ ভূমিকার পাশাপাশি অ্যাকটিভ ভূমিকার জন্ম হওয়ায় নারীকে নিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজন দেখা দিল। যৌনতায় শৃঙ্গার, আসন বৈচিত্র্য, রাগমোচন, নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার আগমন ঘটতে শুরু করায় তাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ধর্ম, নীতিশাস্ত্র ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর প্রতিষ্ঠাও শুরু হলো।
একই সময়ে সম্পদে ‘আমার’ ধারণা পোক্ত হলো। বলা বাহুল্য সেই ‘আমি’টা পুরুষ। গর্ভ, মাসিক, সন্তান সংরক্ষণ ইত্যাদি শারীরিক কারণে নারীর জন্য আয়েশের বা অবসরের সুবিধা বরাবর ছিল কম। পক্ষান্তরে, সম্পদের মালিকানায় পুরুষের প্রাধান্য বিস্তার, আয়েশি পুরুষের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদির হাত ধরে গোষ্ঠীপতি থেকে পুরুষ রাজ্যপতি (বা রাষ্ট্রপতি) হয়ে নারীর ওপর তার ক্ষমতার বিস্তার ঘটাতে সমর্থ হলো।
যৌন আনন্দ বনাম ক্ষমতা: আদিতে যে যৌনতায় আনন্দের তুলনায় প্রয়োজন বেশি ছিল। ক্রমে সেই যৌনতায় প্রয়োজনের তুলনায় আনন্দ বেশি লক্ষ্য হয়ে উঠল। কিন্তু পুরুষের এই একচেটিয়া আনন্দে বাধ সাধল নারীর ‘যৌনচাহিদা’ বা রাগমোচনের আকাঙ্ক্ষা। কেবল গর্ভবতী করাই নয়, নারীকে তৃপ্ত করাটাও একটা দায়িত্ব হয়ে দাঁড়াল। ফলে এই প্রথম পুরুষ সন্ত্রস্ত (threatened) বোধ করতে শুরু করল।
দেখা গেল, পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের একমাত্র পরাজয় ঘটতে শুরু করল যৌনমিলনে। পুরুষ দিগ্বিজয় করলেও তার উত্থানরহিত পুরুষাঙ্গ বা অকালপতনের আশঙ্কা তাকে নারীর সামনে ভীত করে তুলল। অতএব, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই দুর্বলতা ঢাকার পুরুষতান্ত্রিক উপায় হয়ে দাঁড়াল ঔদ্ধত্য। যৌনতায় প্রবেশ ঘটল ক্ষমতার। পুরুষ হয়ে উঠল নারীর মালিক। নারী যেন বিছানায় বেশি না চায়, তার জন্য কেবল শাস্ত্রই নয়; বরং পদ্ধতিরও আবিষ্কার হলো (যেমন FGM)।
প্রেম: একই সঙ্গে শিক্ষারও বিস্তার হচ্ছিল। (কিছু) মানুষ আহার-নিদ্রার জন্য ‘প্রয়োজন’ নয়—এমন বিষয়ের (শিল্প, সাহিত্য, সৌন্দর্য ইত্যাদি) প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠল। ইতিহাসের এই পর্বেই প্রথম মানুষের জীবনে পরিণত রূপে প্রেম এল। প্রেমের সঙ্গে রাষ্ট্রিক না হোক, ব্যক্তিক জীবনে নারীর মূল্য ফিরে আসতে শুরু করল।
কিন্তু তত দিনে পুরুষতন্ত্র নারীকে কেবল সম্পদেই নয়, চৈতন্যেও দৈন্যদশায় ডুবিয়ে দিয়েছে। নারী কেবল পুরুষের কাছেই নয়, নিজের কাছেও ‘অবজেক্ট’ হয়ে উঠেছে। ফরাসি সমাজতাত্ত্বিক ও রাজনীতিক সিমন দ্য বোভোয়ারের ভাষায়—‘মানুষ’ হয়ে জন্মে (পুরুষতন্ত্রের জাঁতাকলে) সে নারী হয়ে উঠেছে। এই অচলাবস্থা থেকে বেরোতে প্রেমের বিকল্প আর কিছু নেই। প্রেম মানেই শ্রদ্ধার সোপান বেয়ে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদার জীবন উদ্যাপন করা। প্রেম মানেই সফল যৌনতা, যেখানে নারী কেবল ‘গ্রহীতা’ নয়; দাতাও। প্রেম মানেই এক মনোরম লড়াই, যেখানে উভয় পক্ষ সমানভাবে জয়ী হয়; যেখানে পুরুষের ‘ক্ষমতা’ নারীর স্বাধীন সম্মতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
লেখক: বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা

যৌনতা মানুষের আদিমতম প্রবৃত্তি। কিন্তু আদিম মানুষের যৌনতা, আর আধুনিক মানুষের যৌনতায় প্রভেদ আছে। আদিকালে যা বংশবিস্তারের জন্য নিতান্ত রুটিন একটা প্রয়োজন ছিল, বুদ্ধিমান মানবজাতি তাকে ক্রমে দেহ-মনের পূর্ণ বিকাশ আর পরিতৃপ্তির উপায় হিসেবে নির্মাণ করেছে। মানুষ যেমন কাঁচা মাংসকে ক্রমে রান্না করা খাওয়া শিখেছে, তেমন যৌনতাকেও কল্পনায়, শৃঙ্গারে, উপাচারে, রাগমোচনে তুরীয় আনন্দ উপভোগের মাধ্যমে শিল্পে পরিণত করেছে। ‘হ্যাভিং সেক্স’-কে ‘মেকিং লাভ’-এ রূপ দিয়েছে।
কিন্তু যৌনতার এই অভিযাত্রায় নারী আর পুরুষের প্রাপ্তি সমান থাকেনি। একযাত্রায় দুই ফল হয়েছে। আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো থেকে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা-কাঠামোর রূপান্তরে প্রধানত বঞ্চিত হয়েছে নারী। এই বঞ্চনা কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, মানসিক ও শারীরিকও। নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘোচাতে তাই যৌনতার মুক্তি দরকার।
এই নিবন্ধে আমরা খুব সংক্ষেপে যৌনতার এই জার্নিটা দেখতে চাইব। দেখতে চাইব পুরুষের ‘ক্ষমতা’ কীভাবে তৈরি হলো, কীভাবে তা নারীর মনোদৈহিক বিকাশের পথে বাধা দিল এবং সফল যৌনতা কীভাবে নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার উপায় হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
আদিজ্ঞান: শ্বাপদসংকুল বৈরী পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকা কঠিন ছিল। অন্য হিংস্র প্রাণিকুলের সঙ্গে যুঝে টিকে থাকার জন্য মানুষের নিজ গোষ্ঠীর লোকবল বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সকল স্তন্যপায়ী (mammal) প্রাণীর মধ্যে মানুষের প্রধান সীমাবদ্ধতা ছিল তাদের নারীরা বছরে একবারের বেশি সন্তান জন্ম দিতে পারে না (uniparous) এবং শারীরিক শক্তিতে দুর্বল হওয়ায় মানুষের বাচ্চা বাঁচেও কম।
অন্যদিকে শত্রুপক্ষের নারীরা একবারে অনেকগুলো বাচ্চা দিতে পারে (pluriparous) এবং সেসব বাচ্চারা বেঁচেও থাকে বেশি সংখ্যায়। গোষ্ঠীর শক্তিবৃদ্ধির জন্য প্রচুর সন্তান জন্মদান প্রয়োজন—সারভাইভালের এই আদিজ্ঞান যত বাড়ল, নারীর গুরুত্বও তত বাড়তে থাকল। ফলে প্রিমিটিভ সমাজ হয়ে উঠল নারীপ্রধান। যেহেতু বছরে একটি মাত্র সন্তান হওয়ায় একজন নারীর পক্ষে গোষ্ঠীর চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই নিশ্চিত করা ছিল অসম্ভব, সেহেতু পুরুষের বহুগামিতাও প্রয়োজনেরই অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যৌনতায় বহুগামিতা (polygamy) না থাকলে মানবজাতি পৃথিবীতে টিকতে পারত না।
উদ্বৃত্ত পুঁজি: আদিকালের কোনো এক স্তরে মানুষের হাতে জমিয়ে রাখার মতো খাদ্য এল, আর বসে থাকার মতো সময়ও এল। এই অবসরে উন্নত মস্তিষ্কের মানুষ যৌনতাকে প্রজনন (reproduction) থেকে বিনোদনে (recreation) উত্তীর্ণ করার ফুরসত পেল। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর জীবনে এই অবসর না আসায় তারা যৌনতাকে বিনোদনে রূপ দিতে পারল না। এ কারণেই মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী কদাচ সন্তান ধারণ ভিন্ন নিজ শরীরের আরাম বা আনন্দের জন্য সেক্স করে। ঠিক কোন সময়ে এই পরিবর্তনটা ঘটল, তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। কারণ সম্পদের বিভাজন পৃথিবীর সবখানে একই সময়ে সর্বজনীনভাবে ঘটেনি। যেমন, শীতপ্রধান অঞ্চলের মানুষের শীতের জন্য খাদ্য মজুত রাখার প্রয়োজন, আর গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মানুষের সেই প্রয়োজন এক ছিল না। আফ্রিকা থেকে প্রথম মানব অভিবাসন শুরু হয়ে তারপর প্রাগৈতিহাসিক যত অভিবাসন হয়েছে, তারও কারণ এক নয়।
যৌনতার আরেক রূপ: সময়ের সঙ্গে মানুষ যৌনতার আরেক রূপ আবিষ্কার করে। গোষ্ঠীর লোকবল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিজের আনন্দের জন্যও যৌনসঙ্গমের প্রয়োজন বোধ করতে শেখে তারা। অন্যদিকে গর্ভকাল (গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় গর্ভকালে সঙ্গম অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ থাকা) ও মাসিকের সময় যৌনমিলন বন্ধ থাকা—এই দুই কারণে পুরুষ আরও বহুগামী হয়ে উঠল। মনে রাখতে হবে, তার আগ থেকেই প্রাকৃতিক কারণে নারীর তুলনায় পুরুষের মধ্যে বহুগামিতার প্রাবল্য ছিল। সেই প্রবৃত্তি (instinct) এখনো আছে। তবে তা আইন, নীতি, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ইত্যাদি দ্বারা অনেকাংশে আধুনিক মানুষ নিয়ন্ত্রণও করতে শিখেছে। মানবজাতির একগামিতার
(monogamy) অভিমুখে প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রার ইতিহাস মাত্র এক হাজার বছরের মতো।
যৌনতার ধরন: নারী ও পুরুষের যৌনতার ধরন আলাদা (কারণটা প্রাকৃতিক, এবং অজানা)। শরীর সঞ্জাত পরিতৃপ্তির উপায়ও উভয়ের সমান নয়। পুরুষের যৌনতৃপ্তি যদি সমদ্বিবাহু (isoceles) ত্রিভুজ হয়, তাহলে নারীর যৌনতৃপ্তিকে rainbow বা বড়জোর সমবাহু (equilateral) ত্রিভুজের সঙ্গে তুলনা করা যায়। পুরুষ মোরগের মতো দৌড়ে উঠে হাঁসের মতো নেমে যেতে পারে। নারীর জ্বলতে সময় লাগে, নিভতেও সময় লাগে।
নারীর শরীর ‘দেখে’ বা ‘ছুঁয়ে’ পুরুষ যেভাবে ‘উত্তেজিত’ হয়, পুরুষের শরীর দেখে বা ছুঁয়ে নারী সেভাবে উত্তেজিত হয় না। পৃথিবীই যেহেতু মনুষ্য বসবাসযোগ্য একমাত্র গ্রহ (এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত), এবং নারী যেহেতু বছরে একবার তাও একটিমাত্র সন্তান প্রসব করতে পারে, পুরুষের তাই এই ‘যাচ্ছেতাই’ যৌন-ইচ্ছা ও ‘ধরো তক্তা মারো পেরেক’ টাইপ সেক্স করার উদ্দীপনা থাকাটা দরকারি ছিল। শিক্ষা, সভ্যতা, জনসংখ্যা ও পরিবেশের ভারসাম্য বিবেচনায় এখন আর সেই দরকার নেই।
যৌনতৃপ্তি: এতকাল যে যৌনতা কেবল গর্ভধারণের উদ্দেশ্যে যোনিগর্ভে নিছক বীর্যপাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, ইতিহাসের এই পর্বে তাতে যৌনতৃপ্তির বিষয়টা যুক্ত হলো। যৌনজীবনে এই প্রথম পুরুষ একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলো। যেনতেন উপায়ে বীর্য স্খলন হলেই যৌনতায় পুরুষের প্রয়োজন ও তৃপ্তি দুটোই মেলে।
কিন্তু নারীর যেহেতু অমন কোনো স্খলন নেই, তাই তার যৌনতৃপ্তি হওয়া, না-হওয়া, হওয়া দরকার কি-না, এমন বিষয়গুলো যৌনজীবনে সন্নিবেশিত হতে থাকল। যৌনতায় নারীর দাবি স্পষ্ট হতে শুরু করায় এবং যৌনতায় তার প্যাসিভ ভূমিকার পাশাপাশি অ্যাকটিভ ভূমিকার জন্ম হওয়ায় নারীকে নিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজন দেখা দিল। যৌনতায় শৃঙ্গার, আসন বৈচিত্র্য, রাগমোচন, নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার আগমন ঘটতে শুরু করায় তাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ধর্ম, নীতিশাস্ত্র ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর প্রতিষ্ঠাও শুরু হলো।
একই সময়ে সম্পদে ‘আমার’ ধারণা পোক্ত হলো। বলা বাহুল্য সেই ‘আমি’টা পুরুষ। গর্ভ, মাসিক, সন্তান সংরক্ষণ ইত্যাদি শারীরিক কারণে নারীর জন্য আয়েশের বা অবসরের সুবিধা বরাবর ছিল কম। পক্ষান্তরে, সম্পদের মালিকানায় পুরুষের প্রাধান্য বিস্তার, আয়েশি পুরুষের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদির হাত ধরে গোষ্ঠীপতি থেকে পুরুষ রাজ্যপতি (বা রাষ্ট্রপতি) হয়ে নারীর ওপর তার ক্ষমতার বিস্তার ঘটাতে সমর্থ হলো।
যৌন আনন্দ বনাম ক্ষমতা: আদিতে যে যৌনতায় আনন্দের তুলনায় প্রয়োজন বেশি ছিল। ক্রমে সেই যৌনতায় প্রয়োজনের তুলনায় আনন্দ বেশি লক্ষ্য হয়ে উঠল। কিন্তু পুরুষের এই একচেটিয়া আনন্দে বাধ সাধল নারীর ‘যৌনচাহিদা’ বা রাগমোচনের আকাঙ্ক্ষা। কেবল গর্ভবতী করাই নয়, নারীকে তৃপ্ত করাটাও একটা দায়িত্ব হয়ে দাঁড়াল। ফলে এই প্রথম পুরুষ সন্ত্রস্ত (threatened) বোধ করতে শুরু করল।
দেখা গেল, পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের একমাত্র পরাজয় ঘটতে শুরু করল যৌনমিলনে। পুরুষ দিগ্বিজয় করলেও তার উত্থানরহিত পুরুষাঙ্গ বা অকালপতনের আশঙ্কা তাকে নারীর সামনে ভীত করে তুলল। অতএব, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই দুর্বলতা ঢাকার পুরুষতান্ত্রিক উপায় হয়ে দাঁড়াল ঔদ্ধত্য। যৌনতায় প্রবেশ ঘটল ক্ষমতার। পুরুষ হয়ে উঠল নারীর মালিক। নারী যেন বিছানায় বেশি না চায়, তার জন্য কেবল শাস্ত্রই নয়; বরং পদ্ধতিরও আবিষ্কার হলো (যেমন FGM)।
প্রেম: একই সঙ্গে শিক্ষারও বিস্তার হচ্ছিল। (কিছু) মানুষ আহার-নিদ্রার জন্য ‘প্রয়োজন’ নয়—এমন বিষয়ের (শিল্প, সাহিত্য, সৌন্দর্য ইত্যাদি) প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠল। ইতিহাসের এই পর্বেই প্রথম মানুষের জীবনে পরিণত রূপে প্রেম এল। প্রেমের সঙ্গে রাষ্ট্রিক না হোক, ব্যক্তিক জীবনে নারীর মূল্য ফিরে আসতে শুরু করল।
কিন্তু তত দিনে পুরুষতন্ত্র নারীকে কেবল সম্পদেই নয়, চৈতন্যেও দৈন্যদশায় ডুবিয়ে দিয়েছে। নারী কেবল পুরুষের কাছেই নয়, নিজের কাছেও ‘অবজেক্ট’ হয়ে উঠেছে। ফরাসি সমাজতাত্ত্বিক ও রাজনীতিক সিমন দ্য বোভোয়ারের ভাষায়—‘মানুষ’ হয়ে জন্মে (পুরুষতন্ত্রের জাঁতাকলে) সে নারী হয়ে উঠেছে। এই অচলাবস্থা থেকে বেরোতে প্রেমের বিকল্প আর কিছু নেই। প্রেম মানেই শ্রদ্ধার সোপান বেয়ে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদার জীবন উদ্যাপন করা। প্রেম মানেই সফল যৌনতা, যেখানে নারী কেবল ‘গ্রহীতা’ নয়; দাতাও। প্রেম মানেই এক মনোরম লড়াই, যেখানে উভয় পক্ষ সমানভাবে জয়ী হয়; যেখানে পুরুষের ‘ক্ষমতা’ নারীর স্বাধীন সম্মতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
লেখক: বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা
নজরুল জাহিদ

যৌনতা মানুষের আদিমতম প্রবৃত্তি। কিন্তু আদিম মানুষের যৌনতা, আর আধুনিক মানুষের যৌনতায় প্রভেদ আছে। আদিকালে যা বংশবিস্তারের জন্য নিতান্ত রুটিন একটা প্রয়োজন ছিল, বুদ্ধিমান মানবজাতি তাকে ক্রমে দেহ-মনের পূর্ণ বিকাশ আর পরিতৃপ্তির উপায় হিসেবে নির্মাণ করেছে। মানুষ যেমন কাঁচা মাংসকে ক্রমে রান্না করা খাওয়া শিখেছে, তেমন যৌনতাকেও কল্পনায়, শৃঙ্গারে, উপাচারে, রাগমোচনে তুরীয় আনন্দ উপভোগের মাধ্যমে শিল্পে পরিণত করেছে। ‘হ্যাভিং সেক্স’-কে ‘মেকিং লাভ’-এ রূপ দিয়েছে।
কিন্তু যৌনতার এই অভিযাত্রায় নারী আর পুরুষের প্রাপ্তি সমান থাকেনি। একযাত্রায় দুই ফল হয়েছে। আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো থেকে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা-কাঠামোর রূপান্তরে প্রধানত বঞ্চিত হয়েছে নারী। এই বঞ্চনা কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, মানসিক ও শারীরিকও। নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘোচাতে তাই যৌনতার মুক্তি দরকার।
এই নিবন্ধে আমরা খুব সংক্ষেপে যৌনতার এই জার্নিটা দেখতে চাইব। দেখতে চাইব পুরুষের ‘ক্ষমতা’ কীভাবে তৈরি হলো, কীভাবে তা নারীর মনোদৈহিক বিকাশের পথে বাধা দিল এবং সফল যৌনতা কীভাবে নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার উপায় হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
আদিজ্ঞান: শ্বাপদসংকুল বৈরী পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকা কঠিন ছিল। অন্য হিংস্র প্রাণিকুলের সঙ্গে যুঝে টিকে থাকার জন্য মানুষের নিজ গোষ্ঠীর লোকবল বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সকল স্তন্যপায়ী (mammal) প্রাণীর মধ্যে মানুষের প্রধান সীমাবদ্ধতা ছিল তাদের নারীরা বছরে একবারের বেশি সন্তান জন্ম দিতে পারে না (uniparous) এবং শারীরিক শক্তিতে দুর্বল হওয়ায় মানুষের বাচ্চা বাঁচেও কম।
অন্যদিকে শত্রুপক্ষের নারীরা একবারে অনেকগুলো বাচ্চা দিতে পারে (pluriparous) এবং সেসব বাচ্চারা বেঁচেও থাকে বেশি সংখ্যায়। গোষ্ঠীর শক্তিবৃদ্ধির জন্য প্রচুর সন্তান জন্মদান প্রয়োজন—সারভাইভালের এই আদিজ্ঞান যত বাড়ল, নারীর গুরুত্বও তত বাড়তে থাকল। ফলে প্রিমিটিভ সমাজ হয়ে উঠল নারীপ্রধান। যেহেতু বছরে একটি মাত্র সন্তান হওয়ায় একজন নারীর পক্ষে গোষ্ঠীর চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই নিশ্চিত করা ছিল অসম্ভব, সেহেতু পুরুষের বহুগামিতাও প্রয়োজনেরই অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যৌনতায় বহুগামিতা (polygamy) না থাকলে মানবজাতি পৃথিবীতে টিকতে পারত না।
উদ্বৃত্ত পুঁজি: আদিকালের কোনো এক স্তরে মানুষের হাতে জমিয়ে রাখার মতো খাদ্য এল, আর বসে থাকার মতো সময়ও এল। এই অবসরে উন্নত মস্তিষ্কের মানুষ যৌনতাকে প্রজনন (reproduction) থেকে বিনোদনে (recreation) উত্তীর্ণ করার ফুরসত পেল। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর জীবনে এই অবসর না আসায় তারা যৌনতাকে বিনোদনে রূপ দিতে পারল না। এ কারণেই মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী কদাচ সন্তান ধারণ ভিন্ন নিজ শরীরের আরাম বা আনন্দের জন্য সেক্স করে। ঠিক কোন সময়ে এই পরিবর্তনটা ঘটল, তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। কারণ সম্পদের বিভাজন পৃথিবীর সবখানে একই সময়ে সর্বজনীনভাবে ঘটেনি। যেমন, শীতপ্রধান অঞ্চলের মানুষের শীতের জন্য খাদ্য মজুত রাখার প্রয়োজন, আর গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মানুষের সেই প্রয়োজন এক ছিল না। আফ্রিকা থেকে প্রথম মানব অভিবাসন শুরু হয়ে তারপর প্রাগৈতিহাসিক যত অভিবাসন হয়েছে, তারও কারণ এক নয়।
যৌনতার আরেক রূপ: সময়ের সঙ্গে মানুষ যৌনতার আরেক রূপ আবিষ্কার করে। গোষ্ঠীর লোকবল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিজের আনন্দের জন্যও যৌনসঙ্গমের প্রয়োজন বোধ করতে শেখে তারা। অন্যদিকে গর্ভকাল (গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় গর্ভকালে সঙ্গম অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ থাকা) ও মাসিকের সময় যৌনমিলন বন্ধ থাকা—এই দুই কারণে পুরুষ আরও বহুগামী হয়ে উঠল। মনে রাখতে হবে, তার আগ থেকেই প্রাকৃতিক কারণে নারীর তুলনায় পুরুষের মধ্যে বহুগামিতার প্রাবল্য ছিল। সেই প্রবৃত্তি (instinct) এখনো আছে। তবে তা আইন, নীতি, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ইত্যাদি দ্বারা অনেকাংশে আধুনিক মানুষ নিয়ন্ত্রণও করতে শিখেছে। মানবজাতির একগামিতার
(monogamy) অভিমুখে প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রার ইতিহাস মাত্র এক হাজার বছরের মতো।
যৌনতার ধরন: নারী ও পুরুষের যৌনতার ধরন আলাদা (কারণটা প্রাকৃতিক, এবং অজানা)। শরীর সঞ্জাত পরিতৃপ্তির উপায়ও উভয়ের সমান নয়। পুরুষের যৌনতৃপ্তি যদি সমদ্বিবাহু (isoceles) ত্রিভুজ হয়, তাহলে নারীর যৌনতৃপ্তিকে rainbow বা বড়জোর সমবাহু (equilateral) ত্রিভুজের সঙ্গে তুলনা করা যায়। পুরুষ মোরগের মতো দৌড়ে উঠে হাঁসের মতো নেমে যেতে পারে। নারীর জ্বলতে সময় লাগে, নিভতেও সময় লাগে।
নারীর শরীর ‘দেখে’ বা ‘ছুঁয়ে’ পুরুষ যেভাবে ‘উত্তেজিত’ হয়, পুরুষের শরীর দেখে বা ছুঁয়ে নারী সেভাবে উত্তেজিত হয় না। পৃথিবীই যেহেতু মনুষ্য বসবাসযোগ্য একমাত্র গ্রহ (এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত), এবং নারী যেহেতু বছরে একবার তাও একটিমাত্র সন্তান প্রসব করতে পারে, পুরুষের তাই এই ‘যাচ্ছেতাই’ যৌন-ইচ্ছা ও ‘ধরো তক্তা মারো পেরেক’ টাইপ সেক্স করার উদ্দীপনা থাকাটা দরকারি ছিল। শিক্ষা, সভ্যতা, জনসংখ্যা ও পরিবেশের ভারসাম্য বিবেচনায় এখন আর সেই দরকার নেই।
যৌনতৃপ্তি: এতকাল যে যৌনতা কেবল গর্ভধারণের উদ্দেশ্যে যোনিগর্ভে নিছক বীর্যপাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, ইতিহাসের এই পর্বে তাতে যৌনতৃপ্তির বিষয়টা যুক্ত হলো। যৌনজীবনে এই প্রথম পুরুষ একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলো। যেনতেন উপায়ে বীর্য স্খলন হলেই যৌনতায় পুরুষের প্রয়োজন ও তৃপ্তি দুটোই মেলে।
কিন্তু নারীর যেহেতু অমন কোনো স্খলন নেই, তাই তার যৌনতৃপ্তি হওয়া, না-হওয়া, হওয়া দরকার কি-না, এমন বিষয়গুলো যৌনজীবনে সন্নিবেশিত হতে থাকল। যৌনতায় নারীর দাবি স্পষ্ট হতে শুরু করায় এবং যৌনতায় তার প্যাসিভ ভূমিকার পাশাপাশি অ্যাকটিভ ভূমিকার জন্ম হওয়ায় নারীকে নিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজন দেখা দিল। যৌনতায় শৃঙ্গার, আসন বৈচিত্র্য, রাগমোচন, নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার আগমন ঘটতে শুরু করায় তাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ধর্ম, নীতিশাস্ত্র ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর প্রতিষ্ঠাও শুরু হলো।
একই সময়ে সম্পদে ‘আমার’ ধারণা পোক্ত হলো। বলা বাহুল্য সেই ‘আমি’টা পুরুষ। গর্ভ, মাসিক, সন্তান সংরক্ষণ ইত্যাদি শারীরিক কারণে নারীর জন্য আয়েশের বা অবসরের সুবিধা বরাবর ছিল কম। পক্ষান্তরে, সম্পদের মালিকানায় পুরুষের প্রাধান্য বিস্তার, আয়েশি পুরুষের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদির হাত ধরে গোষ্ঠীপতি থেকে পুরুষ রাজ্যপতি (বা রাষ্ট্রপতি) হয়ে নারীর ওপর তার ক্ষমতার বিস্তার ঘটাতে সমর্থ হলো।
যৌন আনন্দ বনাম ক্ষমতা: আদিতে যে যৌনতায় আনন্দের তুলনায় প্রয়োজন বেশি ছিল। ক্রমে সেই যৌনতায় প্রয়োজনের তুলনায় আনন্দ বেশি লক্ষ্য হয়ে উঠল। কিন্তু পুরুষের এই একচেটিয়া আনন্দে বাধ সাধল নারীর ‘যৌনচাহিদা’ বা রাগমোচনের আকাঙ্ক্ষা। কেবল গর্ভবতী করাই নয়, নারীকে তৃপ্ত করাটাও একটা দায়িত্ব হয়ে দাঁড়াল। ফলে এই প্রথম পুরুষ সন্ত্রস্ত (threatened) বোধ করতে শুরু করল।
দেখা গেল, পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের একমাত্র পরাজয় ঘটতে শুরু করল যৌনমিলনে। পুরুষ দিগ্বিজয় করলেও তার উত্থানরহিত পুরুষাঙ্গ বা অকালপতনের আশঙ্কা তাকে নারীর সামনে ভীত করে তুলল। অতএব, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই দুর্বলতা ঢাকার পুরুষতান্ত্রিক উপায় হয়ে দাঁড়াল ঔদ্ধত্য। যৌনতায় প্রবেশ ঘটল ক্ষমতার। পুরুষ হয়ে উঠল নারীর মালিক। নারী যেন বিছানায় বেশি না চায়, তার জন্য কেবল শাস্ত্রই নয়; বরং পদ্ধতিরও আবিষ্কার হলো (যেমন FGM)।
প্রেম: একই সঙ্গে শিক্ষারও বিস্তার হচ্ছিল। (কিছু) মানুষ আহার-নিদ্রার জন্য ‘প্রয়োজন’ নয়—এমন বিষয়ের (শিল্প, সাহিত্য, সৌন্দর্য ইত্যাদি) প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠল। ইতিহাসের এই পর্বেই প্রথম মানুষের জীবনে পরিণত রূপে প্রেম এল। প্রেমের সঙ্গে রাষ্ট্রিক না হোক, ব্যক্তিক জীবনে নারীর মূল্য ফিরে আসতে শুরু করল।
কিন্তু তত দিনে পুরুষতন্ত্র নারীকে কেবল সম্পদেই নয়, চৈতন্যেও দৈন্যদশায় ডুবিয়ে দিয়েছে। নারী কেবল পুরুষের কাছেই নয়, নিজের কাছেও ‘অবজেক্ট’ হয়ে উঠেছে। ফরাসি সমাজতাত্ত্বিক ও রাজনীতিক সিমন দ্য বোভোয়ারের ভাষায়—‘মানুষ’ হয়ে জন্মে (পুরুষতন্ত্রের জাঁতাকলে) সে নারী হয়ে উঠেছে। এই অচলাবস্থা থেকে বেরোতে প্রেমের বিকল্প আর কিছু নেই। প্রেম মানেই শ্রদ্ধার সোপান বেয়ে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদার জীবন উদ্যাপন করা। প্রেম মানেই সফল যৌনতা, যেখানে নারী কেবল ‘গ্রহীতা’ নয়; দাতাও। প্রেম মানেই এক মনোরম লড়াই, যেখানে উভয় পক্ষ সমানভাবে জয়ী হয়; যেখানে পুরুষের ‘ক্ষমতা’ নারীর স্বাধীন সম্মতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
লেখক: বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা

যৌনতা মানুষের আদিমতম প্রবৃত্তি। কিন্তু আদিম মানুষের যৌনতা, আর আধুনিক মানুষের যৌনতায় প্রভেদ আছে। আদিকালে যা বংশবিস্তারের জন্য নিতান্ত রুটিন একটা প্রয়োজন ছিল, বুদ্ধিমান মানবজাতি তাকে ক্রমে দেহ-মনের পূর্ণ বিকাশ আর পরিতৃপ্তির উপায় হিসেবে নির্মাণ করেছে। মানুষ যেমন কাঁচা মাংসকে ক্রমে রান্না করা খাওয়া শিখেছে, তেমন যৌনতাকেও কল্পনায়, শৃঙ্গারে, উপাচারে, রাগমোচনে তুরীয় আনন্দ উপভোগের মাধ্যমে শিল্পে পরিণত করেছে। ‘হ্যাভিং সেক্স’-কে ‘মেকিং লাভ’-এ রূপ দিয়েছে।
কিন্তু যৌনতার এই অভিযাত্রায় নারী আর পুরুষের প্রাপ্তি সমান থাকেনি। একযাত্রায় দুই ফল হয়েছে। আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো থেকে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা-কাঠামোর রূপান্তরে প্রধানত বঞ্চিত হয়েছে নারী। এই বঞ্চনা কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, মানসিক ও শারীরিকও। নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘোচাতে তাই যৌনতার মুক্তি দরকার।
এই নিবন্ধে আমরা খুব সংক্ষেপে যৌনতার এই জার্নিটা দেখতে চাইব। দেখতে চাইব পুরুষের ‘ক্ষমতা’ কীভাবে তৈরি হলো, কীভাবে তা নারীর মনোদৈহিক বিকাশের পথে বাধা দিল এবং সফল যৌনতা কীভাবে নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার উপায় হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
আদিজ্ঞান: শ্বাপদসংকুল বৈরী পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকা কঠিন ছিল। অন্য হিংস্র প্রাণিকুলের সঙ্গে যুঝে টিকে থাকার জন্য মানুষের নিজ গোষ্ঠীর লোকবল বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সকল স্তন্যপায়ী (mammal) প্রাণীর মধ্যে মানুষের প্রধান সীমাবদ্ধতা ছিল তাদের নারীরা বছরে একবারের বেশি সন্তান জন্ম দিতে পারে না (uniparous) এবং শারীরিক শক্তিতে দুর্বল হওয়ায় মানুষের বাচ্চা বাঁচেও কম।
অন্যদিকে শত্রুপক্ষের নারীরা একবারে অনেকগুলো বাচ্চা দিতে পারে (pluriparous) এবং সেসব বাচ্চারা বেঁচেও থাকে বেশি সংখ্যায়। গোষ্ঠীর শক্তিবৃদ্ধির জন্য প্রচুর সন্তান জন্মদান প্রয়োজন—সারভাইভালের এই আদিজ্ঞান যত বাড়ল, নারীর গুরুত্বও তত বাড়তে থাকল। ফলে প্রিমিটিভ সমাজ হয়ে উঠল নারীপ্রধান। যেহেতু বছরে একটি মাত্র সন্তান হওয়ায় একজন নারীর পক্ষে গোষ্ঠীর চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই নিশ্চিত করা ছিল অসম্ভব, সেহেতু পুরুষের বহুগামিতাও প্রয়োজনেরই অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যৌনতায় বহুগামিতা (polygamy) না থাকলে মানবজাতি পৃথিবীতে টিকতে পারত না।
উদ্বৃত্ত পুঁজি: আদিকালের কোনো এক স্তরে মানুষের হাতে জমিয়ে রাখার মতো খাদ্য এল, আর বসে থাকার মতো সময়ও এল। এই অবসরে উন্নত মস্তিষ্কের মানুষ যৌনতাকে প্রজনন (reproduction) থেকে বিনোদনে (recreation) উত্তীর্ণ করার ফুরসত পেল। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর জীবনে এই অবসর না আসায় তারা যৌনতাকে বিনোদনে রূপ দিতে পারল না। এ কারণেই মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী কদাচ সন্তান ধারণ ভিন্ন নিজ শরীরের আরাম বা আনন্দের জন্য সেক্স করে। ঠিক কোন সময়ে এই পরিবর্তনটা ঘটল, তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। কারণ সম্পদের বিভাজন পৃথিবীর সবখানে একই সময়ে সর্বজনীনভাবে ঘটেনি। যেমন, শীতপ্রধান অঞ্চলের মানুষের শীতের জন্য খাদ্য মজুত রাখার প্রয়োজন, আর গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মানুষের সেই প্রয়োজন এক ছিল না। আফ্রিকা থেকে প্রথম মানব অভিবাসন শুরু হয়ে তারপর প্রাগৈতিহাসিক যত অভিবাসন হয়েছে, তারও কারণ এক নয়।
যৌনতার আরেক রূপ: সময়ের সঙ্গে মানুষ যৌনতার আরেক রূপ আবিষ্কার করে। গোষ্ঠীর লোকবল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিজের আনন্দের জন্যও যৌনসঙ্গমের প্রয়োজন বোধ করতে শেখে তারা। অন্যদিকে গর্ভকাল (গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় গর্ভকালে সঙ্গম অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ থাকা) ও মাসিকের সময় যৌনমিলন বন্ধ থাকা—এই দুই কারণে পুরুষ আরও বহুগামী হয়ে উঠল। মনে রাখতে হবে, তার আগ থেকেই প্রাকৃতিক কারণে নারীর তুলনায় পুরুষের মধ্যে বহুগামিতার প্রাবল্য ছিল। সেই প্রবৃত্তি (instinct) এখনো আছে। তবে তা আইন, নীতি, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ইত্যাদি দ্বারা অনেকাংশে আধুনিক মানুষ নিয়ন্ত্রণও করতে শিখেছে। মানবজাতির একগামিতার
(monogamy) অভিমুখে প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রার ইতিহাস মাত্র এক হাজার বছরের মতো।
যৌনতার ধরন: নারী ও পুরুষের যৌনতার ধরন আলাদা (কারণটা প্রাকৃতিক, এবং অজানা)। শরীর সঞ্জাত পরিতৃপ্তির উপায়ও উভয়ের সমান নয়। পুরুষের যৌনতৃপ্তি যদি সমদ্বিবাহু (isoceles) ত্রিভুজ হয়, তাহলে নারীর যৌনতৃপ্তিকে rainbow বা বড়জোর সমবাহু (equilateral) ত্রিভুজের সঙ্গে তুলনা করা যায়। পুরুষ মোরগের মতো দৌড়ে উঠে হাঁসের মতো নেমে যেতে পারে। নারীর জ্বলতে সময় লাগে, নিভতেও সময় লাগে।
নারীর শরীর ‘দেখে’ বা ‘ছুঁয়ে’ পুরুষ যেভাবে ‘উত্তেজিত’ হয়, পুরুষের শরীর দেখে বা ছুঁয়ে নারী সেভাবে উত্তেজিত হয় না। পৃথিবীই যেহেতু মনুষ্য বসবাসযোগ্য একমাত্র গ্রহ (এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত), এবং নারী যেহেতু বছরে একবার তাও একটিমাত্র সন্তান প্রসব করতে পারে, পুরুষের তাই এই ‘যাচ্ছেতাই’ যৌন-ইচ্ছা ও ‘ধরো তক্তা মারো পেরেক’ টাইপ সেক্স করার উদ্দীপনা থাকাটা দরকারি ছিল। শিক্ষা, সভ্যতা, জনসংখ্যা ও পরিবেশের ভারসাম্য বিবেচনায় এখন আর সেই দরকার নেই।
যৌনতৃপ্তি: এতকাল যে যৌনতা কেবল গর্ভধারণের উদ্দেশ্যে যোনিগর্ভে নিছক বীর্যপাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, ইতিহাসের এই পর্বে তাতে যৌনতৃপ্তির বিষয়টা যুক্ত হলো। যৌনজীবনে এই প্রথম পুরুষ একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলো। যেনতেন উপায়ে বীর্য স্খলন হলেই যৌনতায় পুরুষের প্রয়োজন ও তৃপ্তি দুটোই মেলে।
কিন্তু নারীর যেহেতু অমন কোনো স্খলন নেই, তাই তার যৌনতৃপ্তি হওয়া, না-হওয়া, হওয়া দরকার কি-না, এমন বিষয়গুলো যৌনজীবনে সন্নিবেশিত হতে থাকল। যৌনতায় নারীর দাবি স্পষ্ট হতে শুরু করায় এবং যৌনতায় তার প্যাসিভ ভূমিকার পাশাপাশি অ্যাকটিভ ভূমিকার জন্ম হওয়ায় নারীকে নিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজন দেখা দিল। যৌনতায় শৃঙ্গার, আসন বৈচিত্র্য, রাগমোচন, নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার আগমন ঘটতে শুরু করায় তাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ধর্ম, নীতিশাস্ত্র ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর প্রতিষ্ঠাও শুরু হলো।
একই সময়ে সম্পদে ‘আমার’ ধারণা পোক্ত হলো। বলা বাহুল্য সেই ‘আমি’টা পুরুষ। গর্ভ, মাসিক, সন্তান সংরক্ষণ ইত্যাদি শারীরিক কারণে নারীর জন্য আয়েশের বা অবসরের সুবিধা বরাবর ছিল কম। পক্ষান্তরে, সম্পদের মালিকানায় পুরুষের প্রাধান্য বিস্তার, আয়েশি পুরুষের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদির হাত ধরে গোষ্ঠীপতি থেকে পুরুষ রাজ্যপতি (বা রাষ্ট্রপতি) হয়ে নারীর ওপর তার ক্ষমতার বিস্তার ঘটাতে সমর্থ হলো।
যৌন আনন্দ বনাম ক্ষমতা: আদিতে যে যৌনতায় আনন্দের তুলনায় প্রয়োজন বেশি ছিল। ক্রমে সেই যৌনতায় প্রয়োজনের তুলনায় আনন্দ বেশি লক্ষ্য হয়ে উঠল। কিন্তু পুরুষের এই একচেটিয়া আনন্দে বাধ সাধল নারীর ‘যৌনচাহিদা’ বা রাগমোচনের আকাঙ্ক্ষা। কেবল গর্ভবতী করাই নয়, নারীকে তৃপ্ত করাটাও একটা দায়িত্ব হয়ে দাঁড়াল। ফলে এই প্রথম পুরুষ সন্ত্রস্ত (threatened) বোধ করতে শুরু করল।
দেখা গেল, পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের একমাত্র পরাজয় ঘটতে শুরু করল যৌনমিলনে। পুরুষ দিগ্বিজয় করলেও তার উত্থানরহিত পুরুষাঙ্গ বা অকালপতনের আশঙ্কা তাকে নারীর সামনে ভীত করে তুলল। অতএব, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই দুর্বলতা ঢাকার পুরুষতান্ত্রিক উপায় হয়ে দাঁড়াল ঔদ্ধত্য। যৌনতায় প্রবেশ ঘটল ক্ষমতার। পুরুষ হয়ে উঠল নারীর মালিক। নারী যেন বিছানায় বেশি না চায়, তার জন্য কেবল শাস্ত্রই নয়; বরং পদ্ধতিরও আবিষ্কার হলো (যেমন FGM)।
প্রেম: একই সঙ্গে শিক্ষারও বিস্তার হচ্ছিল। (কিছু) মানুষ আহার-নিদ্রার জন্য ‘প্রয়োজন’ নয়—এমন বিষয়ের (শিল্প, সাহিত্য, সৌন্দর্য ইত্যাদি) প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠল। ইতিহাসের এই পর্বেই প্রথম মানুষের জীবনে পরিণত রূপে প্রেম এল। প্রেমের সঙ্গে রাষ্ট্রিক না হোক, ব্যক্তিক জীবনে নারীর মূল্য ফিরে আসতে শুরু করল।
কিন্তু তত দিনে পুরুষতন্ত্র নারীকে কেবল সম্পদেই নয়, চৈতন্যেও দৈন্যদশায় ডুবিয়ে দিয়েছে। নারী কেবল পুরুষের কাছেই নয়, নিজের কাছেও ‘অবজেক্ট’ হয়ে উঠেছে। ফরাসি সমাজতাত্ত্বিক ও রাজনীতিক সিমন দ্য বোভোয়ারের ভাষায়—‘মানুষ’ হয়ে জন্মে (পুরুষতন্ত্রের জাঁতাকলে) সে নারী হয়ে উঠেছে। এই অচলাবস্থা থেকে বেরোতে প্রেমের বিকল্প আর কিছু নেই। প্রেম মানেই শ্রদ্ধার সোপান বেয়ে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদার জীবন উদ্যাপন করা। প্রেম মানেই সফল যৌনতা, যেখানে নারী কেবল ‘গ্রহীতা’ নয়; দাতাও। প্রেম মানেই এক মনোরম লড়াই, যেখানে উভয় পক্ষ সমানভাবে জয়ী হয়; যেখানে পুরুষের ‘ক্ষমতা’ নারীর স্বাধীন সম্মতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
লেখক: বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা

সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
১৫ ঘণ্টা আগে
বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়...
১৫ ঘণ্টা আগে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২ দিন আগেকোনো রাজনীতিকের সামনে সুযোগ বারবার আসে না। সেদিক থেকে তারেক রহমান সৌভাগ্যবান। তাঁর সামনে দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ এসেছে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার, শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর। রাষ্ট্রকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ধাঁচে নিয়ে যাওয়ার অপতৎপরতা রুখে দিতেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন।
আজাদুর রহমান চন্দন

সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা-ভঙ্গুরতার কারণে এই অস্থির ও ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ যখন এমন কোনো দল বা নেতার প্রয়োজন বোধ করছিলেন মনেপ্রাণে, ঠিক সে সময়ে তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছরের ‘নির্বাসিত’ জীবন শেষ করে দেশে ফিরে সবাইকে নিয়ে সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ইচ্ছা-প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘আজ আমাদের সময় এসেছে, সবাই মিলে দেশ গড়ার। এ দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছেন, এ দেশে একইভাবে সমতলেরও মানুষ আছেন; এ দেশে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করেন।’ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসুন, আমরা যে ধর্মের মানুষ হই, আমরা যে শ্রেণির মানুষ হই, যে রাজনৈতিক দলেরই সদস্য হই, অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যেকোনো মূল্যে এ দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে; যেকোনো মূল্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে; যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারেন। শিশু হোক, নারী হোক, পুরুষ হোক, যেকোনো বয়স, যেকোনো শ্রেণি, যেকোনো পেশা, যেকোনো ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকেন, এই হোক আমাদের চাওয়া।’
এটা ঠিক, এ দেশে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য মানুষ খুব কমই আমলে নেয়। ‘ওসব তো রাজনীতির কথা’—এমন মন্তব্যের মাধ্যমে রাজনীতিবিদেরাও নানা সময়ে বুঝিয়ে দেন, তাঁদের বক্তব্য নিছকই কথার কথা। তা সত্ত্বেও সংকটে-দুর্বিপাকে মানুষ রাজনীতিকদের ওপরই ভরসা করে থাকেন। এমনই এক সংকটকালে তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখতে দেখা যাচ্ছে এমন অনেক মানুষকেও, যাঁরা একসময় তাঁকে পছন্দ করতেন না। অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা সত্ত্বেও তারেক রহমান ছাড়া ভরসা করার মতো কাউকে কি এ মুহূর্তে চোখে পড়ছে? রাজনীতিসচেতন মানুষদের কাছে বিএনপির পরিচয় একটি ডান বা মধ্য-ডানপন্থী দল হিসেবে। অতি ডানপন্থার ঝুঁকির মধ্যে এই দলের নেতা কি পারবেন ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে? এমন অনেক প্রশ্ন আছে অনেক মানুষের।
এই অবস্থায় তারেক রহমানও আজ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। তাঁর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ মুহূর্তে তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের ভেতরের কোন্দল মেটানো, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সকল পর্যায়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে নেতা-কর্মীদের বাধ্য করা। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানো, নেতাদের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা এবং ভোটারদের আস্থা অর্জন করাও তাঁর জন্য জরুরি। এরই মধ্যে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র বা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা তারেক রহমানের জন্য এক কঠিন কাজ হবে। মিত্রদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির ভেতরে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা নিরসন করাও খুব সহজ কাজ নয়। বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণার পাশাপাশি মিত্রদের জন্য কিছু আসন ছাড়ার পর কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। যশোর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মনিরামপুর এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। নীলফামারী-১ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম প্রার্থী ঘোষণা করার পর সেখানেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। কিশোরগঞ্জ-৪ ও ঝিনাইদহ-৪ আসনেও মিত্রদের ছাড় দেওয়ায় তৃণমূল নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেছেন বিএনপির আলোচিত নেত্রী রুমিন ফারহানা।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে আছে বিএনপি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ২৫৯টি ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৬৬ জন নিহত এবং ২ হাজার ৯২৩ জন আহত হয়েছেন। এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, দলে শৃঙ্খলা ফেরানো কতটা জরুরি। তারেক রহমান এত বছর দল পরিচালনা করেছেন ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে। এখন তিনি দেশে উপস্থিত থাকার সময় যদি দলীয় নেতা-কর্মীরা অপকর্মে জড়ান, তবে তাতে তাঁর সুনাম নষ্ট হবে এবং প্রতিপক্ষ আরও বেশি করে সমালোচনার সুযোগ পাবে।
তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন কি না, সে নিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্ত একধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। সে সুযোগে যাঁরা অনেকটা ‘ফাঁকা মাঠে’ গোল দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন, তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে বিএনপির নেতার প্রত্যাবর্তন। উদীয়মান কোনো কোনো দল তো এখন টলমল অবস্থায়। কিছুদিন আগেও যেখানে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার খবর পাওয়া যেত, সেখানে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে গেছে। তবে আসন্ন ক্ষমতার হাতছানি দেখে গণমাধ্যমের আনত মস্তকে বন্দনায় মেতে ওঠাটা বিপজ্জনক। বন্দনা ও চাটুকারিতা প্রশ্রয় পেয়ে গেলে নেতৃত্বের সামনে বিপথে চালিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ঝুঁকি কতটা এড়িয়ে চলতে পারেন, সেটিও দেখার বিষয়।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন মাস তিনেক আগে বলেছিলেন, ‘এ দেশে শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও নানা ধর্মের মানুষ ও জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করছেন। এখানে সব মত-পথ এবং ধর্মের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারে—এমন নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী অথচ সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতার প্রয়োজন। এ ধরনের নেতা তারেক রহমানকে ছাড়া কাউকে দেখছি না। কারণ, তারেক রহমান মধ্যপন্থী ধারার রাজনীতি করলেও ইসলামি মূলধারার রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদী নেতার যেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই; তেমনি ইঙ্গো-মার্কিন চেতনা এবং বাম চেতনায় বিশ্বাসী তথাকথিত প্রগতিশীল নেতার গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাপিত জীবনে ইসলামি চেতনা ধারণ করেন; কিন্তু কথাবার্তা ও কর্মের মাধ্যমে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।’ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরিয়ত মাওলানা আবু জাফর কাশেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এবং সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান খায়রুল আহসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল দৈনিক ইনকিলাব ভবনে সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। এ এম এম বাহাউদ্দীনের এই মূল্যায়নের মর্যাদাও যদি তারেক রহমান রাখতে পারেন, তবে সামনের দিনগুলোতে সেটিও দেশের জন্য একেবারে কম হবে না।
কোনো রাজনীতিকের সামনে সুযোগ বারবার আসে না। সেদিক থেকে তারেক রহমান সৌভাগ্যবান। তাঁর সামনে দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ এসেছে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার, শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর। রাষ্ট্রকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ধাঁচে নিয়ে যাওয়ার অপতৎপরতা রুখে দিতেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাঁর পিতা জিয়াউর রহমান শাসনকালের সূচনার দিকে তখনকার বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম জি (মোহাম্মদ গোলাম) তোয়াবের দিক থেকে এমনই এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন। এম জি তোয়াব আগে থেকেই কট্টর পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দিক থেকে চ্যালেঞ্জ থাকার কারণেই তখন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিরও সীমিত সমর্থন পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। এ মুহূর্তে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের আবেগ-উচ্ছ্বাস ও নিরাপত্তার কড়াকড়িতে তারেক রহমানের চলাফেরাসহ কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাটে পোহানো কষ্টটুকু মানুষ মন থেকে মেনে নিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা না-ও হতে পারে। বিষয়টির দিকে বিএনপির নেতার সুনজর বিবেচনা রাখে। সামগ্রিকভাবে তারেক রহমান সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সে অনুযায়ী অগ্রসর হলেই আপাতত পাওয়া স্বস্তিটুকু স্থায়ী হতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা-ভঙ্গুরতার কারণে এই অস্থির ও ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ যখন এমন কোনো দল বা নেতার প্রয়োজন বোধ করছিলেন মনেপ্রাণে, ঠিক সে সময়ে তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছরের ‘নির্বাসিত’ জীবন শেষ করে দেশে ফিরে সবাইকে নিয়ে সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ইচ্ছা-প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘আজ আমাদের সময় এসেছে, সবাই মিলে দেশ গড়ার। এ দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছেন, এ দেশে একইভাবে সমতলেরও মানুষ আছেন; এ দেশে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করেন।’ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসুন, আমরা যে ধর্মের মানুষ হই, আমরা যে শ্রেণির মানুষ হই, যে রাজনৈতিক দলেরই সদস্য হই, অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যেকোনো মূল্যে এ দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে; যেকোনো মূল্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে; যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারেন। শিশু হোক, নারী হোক, পুরুষ হোক, যেকোনো বয়স, যেকোনো শ্রেণি, যেকোনো পেশা, যেকোনো ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকেন, এই হোক আমাদের চাওয়া।’
এটা ঠিক, এ দেশে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য মানুষ খুব কমই আমলে নেয়। ‘ওসব তো রাজনীতির কথা’—এমন মন্তব্যের মাধ্যমে রাজনীতিবিদেরাও নানা সময়ে বুঝিয়ে দেন, তাঁদের বক্তব্য নিছকই কথার কথা। তা সত্ত্বেও সংকটে-দুর্বিপাকে মানুষ রাজনীতিকদের ওপরই ভরসা করে থাকেন। এমনই এক সংকটকালে তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখতে দেখা যাচ্ছে এমন অনেক মানুষকেও, যাঁরা একসময় তাঁকে পছন্দ করতেন না। অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা সত্ত্বেও তারেক রহমান ছাড়া ভরসা করার মতো কাউকে কি এ মুহূর্তে চোখে পড়ছে? রাজনীতিসচেতন মানুষদের কাছে বিএনপির পরিচয় একটি ডান বা মধ্য-ডানপন্থী দল হিসেবে। অতি ডানপন্থার ঝুঁকির মধ্যে এই দলের নেতা কি পারবেন ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে? এমন অনেক প্রশ্ন আছে অনেক মানুষের।
এই অবস্থায় তারেক রহমানও আজ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। তাঁর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ মুহূর্তে তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের ভেতরের কোন্দল মেটানো, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সকল পর্যায়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে নেতা-কর্মীদের বাধ্য করা। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানো, নেতাদের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা এবং ভোটারদের আস্থা অর্জন করাও তাঁর জন্য জরুরি। এরই মধ্যে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র বা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা তারেক রহমানের জন্য এক কঠিন কাজ হবে। মিত্রদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির ভেতরে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা নিরসন করাও খুব সহজ কাজ নয়। বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণার পাশাপাশি মিত্রদের জন্য কিছু আসন ছাড়ার পর কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। যশোর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মনিরামপুর এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। নীলফামারী-১ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম প্রার্থী ঘোষণা করার পর সেখানেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। কিশোরগঞ্জ-৪ ও ঝিনাইদহ-৪ আসনেও মিত্রদের ছাড় দেওয়ায় তৃণমূল নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেছেন বিএনপির আলোচিত নেত্রী রুমিন ফারহানা।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে আছে বিএনপি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ২৫৯টি ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৬৬ জন নিহত এবং ২ হাজার ৯২৩ জন আহত হয়েছেন। এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, দলে শৃঙ্খলা ফেরানো কতটা জরুরি। তারেক রহমান এত বছর দল পরিচালনা করেছেন ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে। এখন তিনি দেশে উপস্থিত থাকার সময় যদি দলীয় নেতা-কর্মীরা অপকর্মে জড়ান, তবে তাতে তাঁর সুনাম নষ্ট হবে এবং প্রতিপক্ষ আরও বেশি করে সমালোচনার সুযোগ পাবে।
তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন কি না, সে নিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্ত একধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। সে সুযোগে যাঁরা অনেকটা ‘ফাঁকা মাঠে’ গোল দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন, তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে বিএনপির নেতার প্রত্যাবর্তন। উদীয়মান কোনো কোনো দল তো এখন টলমল অবস্থায়। কিছুদিন আগেও যেখানে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার খবর পাওয়া যেত, সেখানে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে গেছে। তবে আসন্ন ক্ষমতার হাতছানি দেখে গণমাধ্যমের আনত মস্তকে বন্দনায় মেতে ওঠাটা বিপজ্জনক। বন্দনা ও চাটুকারিতা প্রশ্রয় পেয়ে গেলে নেতৃত্বের সামনে বিপথে চালিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ঝুঁকি কতটা এড়িয়ে চলতে পারেন, সেটিও দেখার বিষয়।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন মাস তিনেক আগে বলেছিলেন, ‘এ দেশে শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও নানা ধর্মের মানুষ ও জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করছেন। এখানে সব মত-পথ এবং ধর্মের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারে—এমন নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী অথচ সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতার প্রয়োজন। এ ধরনের নেতা তারেক রহমানকে ছাড়া কাউকে দেখছি না। কারণ, তারেক রহমান মধ্যপন্থী ধারার রাজনীতি করলেও ইসলামি মূলধারার রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদী নেতার যেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই; তেমনি ইঙ্গো-মার্কিন চেতনা এবং বাম চেতনায় বিশ্বাসী তথাকথিত প্রগতিশীল নেতার গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাপিত জীবনে ইসলামি চেতনা ধারণ করেন; কিন্তু কথাবার্তা ও কর্মের মাধ্যমে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।’ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরিয়ত মাওলানা আবু জাফর কাশেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এবং সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান খায়রুল আহসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল দৈনিক ইনকিলাব ভবনে সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। এ এম এম বাহাউদ্দীনের এই মূল্যায়নের মর্যাদাও যদি তারেক রহমান রাখতে পারেন, তবে সামনের দিনগুলোতে সেটিও দেশের জন্য একেবারে কম হবে না।
কোনো রাজনীতিকের সামনে সুযোগ বারবার আসে না। সেদিক থেকে তারেক রহমান সৌভাগ্যবান। তাঁর সামনে দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ এসেছে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার, শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর। রাষ্ট্রকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ধাঁচে নিয়ে যাওয়ার অপতৎপরতা রুখে দিতেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাঁর পিতা জিয়াউর রহমান শাসনকালের সূচনার দিকে তখনকার বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম জি (মোহাম্মদ গোলাম) তোয়াবের দিক থেকে এমনই এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন। এম জি তোয়াব আগে থেকেই কট্টর পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দিক থেকে চ্যালেঞ্জ থাকার কারণেই তখন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিরও সীমিত সমর্থন পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। এ মুহূর্তে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের আবেগ-উচ্ছ্বাস ও নিরাপত্তার কড়াকড়িতে তারেক রহমানের চলাফেরাসহ কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাটে পোহানো কষ্টটুকু মানুষ মন থেকে মেনে নিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা না-ও হতে পারে। বিষয়টির দিকে বিএনপির নেতার সুনজর বিবেচনা রাখে। সামগ্রিকভাবে তারেক রহমান সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সে অনুযায়ী অগ্রসর হলেই আপাতত পাওয়া স্বস্তিটুকু স্থায়ী হতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

যৌনতার অভিযাত্রায় নারী আর পুরুষের প্রাপ্তি সমান থাকেনি। একযাত্রায় দুই ফল হয়েছে। আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো থেকে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা-কাঠামোর রূপান্তরে প্রধানত বঞ্চিত হয়েছে নারী। এই বঞ্চনা কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, মানসিক ও শারীরিকও। নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘোচাতে তাই যৌনতার মুক্তি দরকার।
০৩ অক্টোবর ২০২২
বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়...
১৫ ঘণ্টা আগে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২ দিন আগেবিমল সরকার

বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়, বারবার রাজনৈতিক কলহ, শত রকমের বাধাবিপত্তি ও দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মধ্যেও এ সময়ে কী পাইনি আমরা! আসলে নির্মোহ ও পক্ষপাতহীন দৃষ্টিতে দেখতে পারলে দুটি পক্ষের কোনোটির মতামতকেই উপেক্ষা করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না—‘কী পেয়েছি’ আর ‘কী পাইনি’।
এখানে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটি নিয়ে আমার ছিটেফোঁটা আলোকপাত করার প্রয়াস। ইংরেজরা প্রথমবারের মতো ১৯০৫ সালে বাংলাকে (ব্রিটিশ বাংলা) ভাগ এবং ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামে স্বতন্ত্র একটি প্রদেশ সৃষ্টি করে। নবগঠিত প্রদেশটির রাজধানী স্থাপন করা হয় ঢাকায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জন-অধ্যুষিত এলাকার চাহিদা ও অন্যান্য যৌক্তিক কারণে করা হলেও মাত্র ছয় বছরের মাথায় ১৯১১ সালে তা বাতিল করা হয়। বঙ্গভঙ্গ এবং বঙ্গভঙ্গ রদকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী শহর ঢাকাসহ গোটা পূর্ববঙ্গ ও এই এলাকার মুসলিম জনগণের প্রতি শাসককুল ইংরেজদের একটি বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়।
বঙ্গভঙ্গের সময় অবিভক্ত বাংলায় একটিই মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছিল—কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ১৮৫৭ সাল)। এ ছাড়া অবিভক্ত বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম প্রভৃতি) কলেজ ছিল মোট ৩৭টি। এই ৩৭টির মধ্যে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসামে’ (নবগঠিত প্রদেশ) ১১টি এবং অবশিষ্ট বঙ্গে ছিল ২৬টি কলেজ। একই সময় (১৯০৫) সারা বাংলায় এমএ পড়ার কলেজ ছিল মোট তিনটি। বিখ্যাত ঢাকা কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, রাজশাহী কলেজ, জগন্নাথ কলেজসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের তখন ‘ভরা যৌবন’; খ্যাতি ও গৌরব-গরিমা অনেক দিক থেকেই। তা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) ও আসামে (নবগঠিত প্রদেশের অংশ) এমএ পড়ার মতো কোনো কলেজ বা বন্দোবস্ত ছিল না সে সময়।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন শর্ত অনুযায়ী ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী ২৫ মাইল পরিধি এলাকায় অবস্থিত কলেজগুলোই (ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ প্রভৃতি ৭টি) এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রাখা হয়। পূর্ববঙ্গের বাকি সব কলেজ থেকে যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে (যা ১৯৪৭ সালে দেশভাগ পর্যন্ত বহাল থাকে)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববঙ্গের প্রথম, অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় (প্রথমটি কলকাতা) এবং উপমহাদেশের ১১তম বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গভঙ্গ এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই অঞ্চলে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনায় কলেজসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে।
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায়। পূর্ববঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় পাকিস্তানের সঙ্গে এবং তখনই পূর্ববঙ্গ শিক্ষা অধ্যাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কাম শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ‘এফিলিয়েশন’-এর ব্যবস্থা যোগ করলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর (ডিগ্রি স্তরের ৩৪টি ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরের ২৩টি) এফিলিয়েশন ও তত্ত্বাবধানের ভার এই বিশ্ববিদ্যালয়টির (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ওপর ন্যস্ত হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় বাংলাদেশ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় একটিই ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মেডিকেল কলেজও একটিই, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ইংরেজ আমলে ১৯৪৬ সালে স্থাপিত)। এ ছাড়া সারা দেশে কলেজ ছিল মোট ৫৫টি (ডিগ্রি ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরে; এগুলোর মধ্যে সরকারি কলেজ ৪টি)। ঠিক এ সবকিছু নিয়েই পাকিস্তান আমলে যাত্রা শুরু হয় আমাদের।
পাকিস্তানি শাসনের ২৪ বছরে অন্যায়, শোষণ আর বৈষম্যের মধ্যেও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ কিছু উন্নয়ন ও সম্প্রসারণমূলক কাজ সম্পন্ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন পরে হলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয় এ সময়ে (পাকিস্তান সৃষ্টির ছয় বছরের মাথায় ১৯৫৩ সালে হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর ২০ বছরের মাথায় ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)। এ ছাড়া পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে একে একে মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয় আটটি।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা যেমন রয়েছে নানাবিধ, তেমনি উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সম্ভাবনাগুলোকেও খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। দেশে বর্তমানে ৫৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি আছে ১১৫টি। সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি; বেসরকারি ৭৩টি। বিভাগীয় পাঁচ শহরে রয়েছে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এত কিছু থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতি, অনিয়ম আর অব্যবস্থার কারণে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সার্বক্ষণিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় গোটা জাতিকে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরের মাথায় এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় আর কী হতে পারে?
আসলেই তো! আগে যেমনই থাক বা না থাক, শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমানে কি নেই আমাদের? স্বীকার না করে উপায় নেই, উচ্চশিক্ষায় আমাদের দেশে এ এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। সরকারি-বেসরকারি দেড় শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয় (১৭২টি)। একইভাবে এক শর বেশি মেডিকেল কলেজ (১১০টি)। রয়েছে পাঁচ বিভাগীয় শহরে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ৭০৮টি সরকারি কলেজ। ডিগ্রি স্তরে পাঠদান উপযোগী কলেজ দুই হাজারের বেশি (২,২৫৭টি)। আর সরকারি-বেসরকারি সাড়ে আট শ কলেজে (৮৮২) অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স (১৭৫) পড়ানোর ব্যবস্থা-বন্দোবস্ত রয়েছে। এসব বিবেচনায় শিক্ষাক্ষেত্রে এক বিপ্লব বলা যেতে পারে।
আমি আবারও কিছুটা অতীতমুখী হতে চাই। ১৯৪৭ সালে একটিমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় আর একটি মেডিকেল কলেজ দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। ২৪ বছর পর ১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়, আটটি মেডিকেল কলেজ, ডিগ্রি স্তরের ১১০টি কলেজ, (যেগুলোর মধ্যে ২৬টি সরকারি) আর অনার্স পড়ানোর মতো কলেজ ২০টি। সে তুলনায় আজ অভাবনীয় পরিবর্তন ও অগ্রগতি সহজেই দৃশ্যমান। তবে উপযুক্ত দেখভালের অভাব ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক কিছু থাকার পরও কী যেন নেই আমাদের। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সব সময় ব্যতিব্যস্ত করে রাখে।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক যাযাবরের (বিনয়কুমার মুখোপাধ্যায়) অমর সৃষ্টি ‘দৃষ্টিপাত’ উপন্যাসটির কথা মনে পড়ে। যাযাবর তাঁর কালজয়ী উপন্যাস শেষ করেন এই বাক্যটি দিয়ে—‘যে আগুন আলো দেয় না অথচ দহন করে, সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দহনে পলে পলে দগ্ধ হলেন কাণ্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য চারুদত্ত আধারকার।’ আমাদের উচ্চ শিক্ষপ্রতিষ্ঠানেও যেন এমন শিক্ষারূপী আগুন আছে, যা আলো দেয় না অথচ প্রতিনিয়ত দহন করে চলেছে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়, বারবার রাজনৈতিক কলহ, শত রকমের বাধাবিপত্তি ও দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মধ্যেও এ সময়ে কী পাইনি আমরা! আসলে নির্মোহ ও পক্ষপাতহীন দৃষ্টিতে দেখতে পারলে দুটি পক্ষের কোনোটির মতামতকেই উপেক্ষা করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না—‘কী পেয়েছি’ আর ‘কী পাইনি’।
এখানে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটি নিয়ে আমার ছিটেফোঁটা আলোকপাত করার প্রয়াস। ইংরেজরা প্রথমবারের মতো ১৯০৫ সালে বাংলাকে (ব্রিটিশ বাংলা) ভাগ এবং ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামে স্বতন্ত্র একটি প্রদেশ সৃষ্টি করে। নবগঠিত প্রদেশটির রাজধানী স্থাপন করা হয় ঢাকায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জন-অধ্যুষিত এলাকার চাহিদা ও অন্যান্য যৌক্তিক কারণে করা হলেও মাত্র ছয় বছরের মাথায় ১৯১১ সালে তা বাতিল করা হয়। বঙ্গভঙ্গ এবং বঙ্গভঙ্গ রদকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী শহর ঢাকাসহ গোটা পূর্ববঙ্গ ও এই এলাকার মুসলিম জনগণের প্রতি শাসককুল ইংরেজদের একটি বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়।
বঙ্গভঙ্গের সময় অবিভক্ত বাংলায় একটিই মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছিল—কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ১৮৫৭ সাল)। এ ছাড়া অবিভক্ত বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম প্রভৃতি) কলেজ ছিল মোট ৩৭টি। এই ৩৭টির মধ্যে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসামে’ (নবগঠিত প্রদেশ) ১১টি এবং অবশিষ্ট বঙ্গে ছিল ২৬টি কলেজ। একই সময় (১৯০৫) সারা বাংলায় এমএ পড়ার কলেজ ছিল মোট তিনটি। বিখ্যাত ঢাকা কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, রাজশাহী কলেজ, জগন্নাথ কলেজসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের তখন ‘ভরা যৌবন’; খ্যাতি ও গৌরব-গরিমা অনেক দিক থেকেই। তা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) ও আসামে (নবগঠিত প্রদেশের অংশ) এমএ পড়ার মতো কোনো কলেজ বা বন্দোবস্ত ছিল না সে সময়।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন শর্ত অনুযায়ী ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী ২৫ মাইল পরিধি এলাকায় অবস্থিত কলেজগুলোই (ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ প্রভৃতি ৭টি) এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রাখা হয়। পূর্ববঙ্গের বাকি সব কলেজ থেকে যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে (যা ১৯৪৭ সালে দেশভাগ পর্যন্ত বহাল থাকে)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববঙ্গের প্রথম, অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় (প্রথমটি কলকাতা) এবং উপমহাদেশের ১১তম বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গভঙ্গ এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই অঞ্চলে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনায় কলেজসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে।
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায়। পূর্ববঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় পাকিস্তানের সঙ্গে এবং তখনই পূর্ববঙ্গ শিক্ষা অধ্যাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কাম শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ‘এফিলিয়েশন’-এর ব্যবস্থা যোগ করলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর (ডিগ্রি স্তরের ৩৪টি ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরের ২৩টি) এফিলিয়েশন ও তত্ত্বাবধানের ভার এই বিশ্ববিদ্যালয়টির (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ওপর ন্যস্ত হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় বাংলাদেশ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় একটিই ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মেডিকেল কলেজও একটিই, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ইংরেজ আমলে ১৯৪৬ সালে স্থাপিত)। এ ছাড়া সারা দেশে কলেজ ছিল মোট ৫৫টি (ডিগ্রি ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরে; এগুলোর মধ্যে সরকারি কলেজ ৪টি)। ঠিক এ সবকিছু নিয়েই পাকিস্তান আমলে যাত্রা শুরু হয় আমাদের।
পাকিস্তানি শাসনের ২৪ বছরে অন্যায়, শোষণ আর বৈষম্যের মধ্যেও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ কিছু উন্নয়ন ও সম্প্রসারণমূলক কাজ সম্পন্ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন পরে হলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয় এ সময়ে (পাকিস্তান সৃষ্টির ছয় বছরের মাথায় ১৯৫৩ সালে হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর ২০ বছরের মাথায় ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)। এ ছাড়া পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে একে একে মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয় আটটি।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা যেমন রয়েছে নানাবিধ, তেমনি উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সম্ভাবনাগুলোকেও খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। দেশে বর্তমানে ৫৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি আছে ১১৫টি। সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি; বেসরকারি ৭৩টি। বিভাগীয় পাঁচ শহরে রয়েছে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এত কিছু থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতি, অনিয়ম আর অব্যবস্থার কারণে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সার্বক্ষণিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় গোটা জাতিকে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরের মাথায় এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় আর কী হতে পারে?
আসলেই তো! আগে যেমনই থাক বা না থাক, শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমানে কি নেই আমাদের? স্বীকার না করে উপায় নেই, উচ্চশিক্ষায় আমাদের দেশে এ এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। সরকারি-বেসরকারি দেড় শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয় (১৭২টি)। একইভাবে এক শর বেশি মেডিকেল কলেজ (১১০টি)। রয়েছে পাঁচ বিভাগীয় শহরে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ৭০৮টি সরকারি কলেজ। ডিগ্রি স্তরে পাঠদান উপযোগী কলেজ দুই হাজারের বেশি (২,২৫৭টি)। আর সরকারি-বেসরকারি সাড়ে আট শ কলেজে (৮৮২) অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স (১৭৫) পড়ানোর ব্যবস্থা-বন্দোবস্ত রয়েছে। এসব বিবেচনায় শিক্ষাক্ষেত্রে এক বিপ্লব বলা যেতে পারে।
আমি আবারও কিছুটা অতীতমুখী হতে চাই। ১৯৪৭ সালে একটিমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় আর একটি মেডিকেল কলেজ দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। ২৪ বছর পর ১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়, আটটি মেডিকেল কলেজ, ডিগ্রি স্তরের ১১০টি কলেজ, (যেগুলোর মধ্যে ২৬টি সরকারি) আর অনার্স পড়ানোর মতো কলেজ ২০টি। সে তুলনায় আজ অভাবনীয় পরিবর্তন ও অগ্রগতি সহজেই দৃশ্যমান। তবে উপযুক্ত দেখভালের অভাব ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক কিছু থাকার পরও কী যেন নেই আমাদের। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সব সময় ব্যতিব্যস্ত করে রাখে।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক যাযাবরের (বিনয়কুমার মুখোপাধ্যায়) অমর সৃষ্টি ‘দৃষ্টিপাত’ উপন্যাসটির কথা মনে পড়ে। যাযাবর তাঁর কালজয়ী উপন্যাস শেষ করেন এই বাক্যটি দিয়ে—‘যে আগুন আলো দেয় না অথচ দহন করে, সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দহনে পলে পলে দগ্ধ হলেন কাণ্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য চারুদত্ত আধারকার।’ আমাদের উচ্চ শিক্ষপ্রতিষ্ঠানেও যেন এমন শিক্ষারূপী আগুন আছে, যা আলো দেয় না অথচ প্রতিনিয়ত দহন করে চলেছে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

যৌনতার অভিযাত্রায় নারী আর পুরুষের প্রাপ্তি সমান থাকেনি। একযাত্রায় দুই ফল হয়েছে। আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো থেকে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা-কাঠামোর রূপান্তরে প্রধানত বঞ্চিত হয়েছে নারী। এই বঞ্চনা কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, মানসিক ও শারীরিকও। নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘোচাতে তাই যৌনতার মুক্তি দরকার।
০৩ অক্টোবর ২০২২
সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
১৫ ঘণ্টা আগে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির নির্বাচনী আসন সমঝোতার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পর ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দল থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ও রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য তাসনিম জারা। এখন তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। গতকাল পদত্যাগ করেন আরেক নেত্রী তাজনূভা জাবীন। এর আগে দল থেকে পদত্যাগ করেন এনসিপিতে জামায়াতবিরোধী অংশের নেতা হিসেবে পরিচিত মীর আরশাদুল হক। এরপর ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দলের ৩০ জন নেতা এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে ‘সম্ভাব্য জোট বিষয়ে নীতিগত আপত্তি’র বিষয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাতে তাঁরা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের জোট এনসিপির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ধরনের জোট এনসিপির বহু কর্মী, সমর্থক এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মসহ অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশা সৃষ্টি করবে। এর মাধ্যমে এনসিপির নিজস্ব মধ্যপন্থী রাজনৈতিক অবস্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কিছুদিন আগে বিএনপি ও জামায়াত জোটের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এনসিপি ও এবি পার্টি মিলে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট গঠন করেছিল। আপাতত এ জোটের কোনো ভবিষ্যৎ দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ‘জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। গতকাল ২৮ ডিসেম্বর সকালে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ মিডিয়া গ্রুপে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশে জোটগত রাজনীতি একটা পুরোনো সংস্কৃতি। প্রতিপক্ষ রাজনীতিকে মোকাবিলা করার জন্য সমমনা দলের সঙ্গে জোট করা নতুন বিষয় নয়। পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগকে পরাস্ত করতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্ত ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। এরপর নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করার জন্য ত্রিদলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। তাদের সম্মিলিত আন্দোলনে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। তবে নির্বাচনী জোটে দেশ ও জনগণের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। যেমন বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট গঠন করে সরকার গঠন করেছিল। এরপর শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী হওয়ার ক্ষেত্রে এই জোটের ভূমিকাও ছিল। সবচেয়ে ক্ষতির দিক হলো, ছোট দলগুলো সুবিধার জন্য জোট করে পরবর্তী সময়ে বড় দলের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। তাদের আর নিজস্ব রাজনীতি থাকে না।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করা দল এনসিপি সম্ভবত একই ভুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নানা সমালোচনার পরও দলটি যে সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল, সাময়িক নির্বাচনী সুবিধার জন্য সে সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার পথে। এতে হতাশ হবে তরুণদের একটি বড় অংশ। হতাশ হবে দেশের নতুন রাজনীতিপ্রত্যাশী একটি শক্তি, যারা বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের বাইরে বিকল্প খুঁজছিল।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির নির্বাচনী আসন সমঝোতার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পর ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দল থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ও রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য তাসনিম জারা। এখন তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। গতকাল পদত্যাগ করেন আরেক নেত্রী তাজনূভা জাবীন। এর আগে দল থেকে পদত্যাগ করেন এনসিপিতে জামায়াতবিরোধী অংশের নেতা হিসেবে পরিচিত মীর আরশাদুল হক। এরপর ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দলের ৩০ জন নেতা এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে ‘সম্ভাব্য জোট বিষয়ে নীতিগত আপত্তি’র বিষয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাতে তাঁরা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের জোট এনসিপির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ধরনের জোট এনসিপির বহু কর্মী, সমর্থক এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মসহ অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশা সৃষ্টি করবে। এর মাধ্যমে এনসিপির নিজস্ব মধ্যপন্থী রাজনৈতিক অবস্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কিছুদিন আগে বিএনপি ও জামায়াত জোটের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এনসিপি ও এবি পার্টি মিলে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট গঠন করেছিল। আপাতত এ জোটের কোনো ভবিষ্যৎ দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ‘জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। গতকাল ২৮ ডিসেম্বর সকালে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ মিডিয়া গ্রুপে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশে জোটগত রাজনীতি একটা পুরোনো সংস্কৃতি। প্রতিপক্ষ রাজনীতিকে মোকাবিলা করার জন্য সমমনা দলের সঙ্গে জোট করা নতুন বিষয় নয়। পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগকে পরাস্ত করতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্ত ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। এরপর নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করার জন্য ত্রিদলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। তাদের সম্মিলিত আন্দোলনে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। তবে নির্বাচনী জোটে দেশ ও জনগণের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। যেমন বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট গঠন করে সরকার গঠন করেছিল। এরপর শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী হওয়ার ক্ষেত্রে এই জোটের ভূমিকাও ছিল। সবচেয়ে ক্ষতির দিক হলো, ছোট দলগুলো সুবিধার জন্য জোট করে পরবর্তী সময়ে বড় দলের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। তাদের আর নিজস্ব রাজনীতি থাকে না।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করা দল এনসিপি সম্ভবত একই ভুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নানা সমালোচনার পরও দলটি যে সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল, সাময়িক নির্বাচনী সুবিধার জন্য সে সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার পথে। এতে হতাশ হবে তরুণদের একটি বড় অংশ। হতাশ হবে দেশের নতুন রাজনীতিপ্রত্যাশী একটি শক্তি, যারা বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের বাইরে বিকল্প খুঁজছিল।

যৌনতার অভিযাত্রায় নারী আর পুরুষের প্রাপ্তি সমান থাকেনি। একযাত্রায় দুই ফল হয়েছে। আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো থেকে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা-কাঠামোর রূপান্তরে প্রধানত বঞ্চিত হয়েছে নারী। এই বঞ্চনা কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, মানসিক ও শারীরিকও। নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘোচাতে তাই যৌনতার মুক্তি দরকার।
০৩ অক্টোবর ২০২২
সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
১৫ ঘণ্টা আগে
বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়...
১৫ ঘণ্টা আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২ দিন আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অসংগতি, বৈষম্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। শিক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান, ছাত্র সংসদ, ছাত্ররাজনীতির গতিধারা এবং শিক্ষাব্যবস্থার নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা
মাসুদ রানা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল দাবি ছিল ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন’। গত দেড় বছরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীনতার পথে কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রশ্ন হলো, বৈষম্যহীনতা মূল রেখে, ডালপালা ছাঁটলে তো কোনো লাভ হবে না। বৈষম্য তো রয়ে গেছে আমাদের মূলে। একটা দেশে কীভাবে কওমি মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলা মিডিয়াম, বাংলার আবার ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম থাকতে পারে? আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি, এইসব শিক্ষাকাঠামোর কোথাও মিলনস্থান নেই। এভাবে আমরা আমাদের দেশের মানুষকে শিক্ষা, অর্থনীতি ও ধর্ম দিয়ে বিভাজিত করেছি। এ রকম একটা সমাজে বৈষম্যহীন করার জন্য যে ধরনের প্রজ্ঞা, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি লাগে, তার তো সব অনুপস্থিতি এখনো আছে।
সুতরাং আমি গত দেড় বছরে বাংলাদেশের কোনো পর্যায়েই বৈষম্যহীনতা তো দূরের কথা, বৈষম্য কমানোর চেষ্টা দেখিনি। গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, ধনীরা হয়তোবা আরও বেশি ধনী হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কোনো দিক দিয়েই কমেনি।
আগের সরকারের প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। বর্তমান সরকার যে পরিমার্জন এনেছে, তা শিক্ষাব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা কি রেখেছে?
আগের সরকার যা করেছে এবং বর্তমান সরকার যা করছে, আসলে তা হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আগের সরকার মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহার করেছে। আর এই সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই চব্বিশের আন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটা সময় লাগে। ইতিহাসকে আসলে একটা সময় দিতে হয়। এটা সত্যি সত্যি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কি না, সেটা সময়ের আলোকে আসলে রেকটিফাই ও টেস্ট করতে হয়। মানে ফিল্টারিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনই এটা দেওয়ার মানে হলো, আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান, ঠিক যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছিল। ইতিহাস তো ব্যবহার্য বিষয় না। ইতিহাস তো ধারণ করার বিষয়।
চব্বিশকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই হলো, আপনাদের কোনো লাভের বিষয় আছে। আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান টিস্যু পেপারের মতো। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের হীন স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করবেন, সেটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। কাকে বাদ দেওয়া হবে? রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দকে বাদ দেওয়া যায়? এঁদের কবিতা ও অন্যান্য লেখা দিয়ে ধর্ম ও জাতিভেদের ব্যাপারগুলো টেনে নিয়ে আসা ঠিক না। তাঁরা সময় দ্বারা পরীক্ষিত। ভালো মানের লোক দিয়ে একটা শিক্ষা কমিশন করা দরকার ছিল। কিন্তু এই সরকারের কি ম্যান্ডেট থাকতে পারে আমলাদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় যোগ বা বিয়োগ করার? তাদের এই যোগ ও বাদ দেওয়ার কোনোটাই সমর্থন করতে পারি না।
গত দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পটপরিবর্তনকে কীভাবে দেখেন?
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনীতি করবে, লেজুড়বৃত্তি করবে না। কোনো দলের জাতীয় নেতারা অন্যায় করলে সেটার প্রতিবাদ করবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে থাকবে, শিক্ষায় কীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করা যায়, গবেষণায় কীভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়; শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে ও এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবে এবং সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবে—দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন দলীয় বৃত্তের মধ্যে চলে যায়, তখন একটা দলের মধ্যে আটকে থাকলে তো তারা পুরো আকাশ দেখতে পাবে না। সে কারণে তারা সেই দলের কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডকে মাফ করে দেয়। আর অন্য দলের সামান্য অন্যায়কে বড় করে দেখে থাকে। এটা শিক্ষার্থীদের চরিত্র হওয়া উচিত না। এই আকাঙ্ক্ষাটা জুলাই আন্দোলনের পর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার ফিরে এসেছে। দলান্ধতা আবার বেড়ে
গেছে। কিন্তু সবার না। যেমন উগ্র ডানপন্থীদের কার্যক্রম প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেছে। কিন্তু এটাকে প্রতিহত করার জন্য তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে ডাকসুসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখেন?
ছাত্র সংসদের কিছু দায়িত্ব আছে। তারা কী করতে পারে এবং কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না, সেগুলোর সবকিছু লিখিত না থাকলেও অধিকাংশ জনের কাছে সেগুলোর একটা ধারণা আছে। ছাত্র সংসদের কাজ তো ছিন্নমূল মানুষকে লাঠির বাড়ি দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া না। ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয় বা কাউকে পেটানো না। তারা নিজেদের প্রশাসনের অংশ মনে করে। উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা আমাদেরই পার্ট।’ তা হতে পারে না।
ছাত্র সংসদের নির্ধারিত কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার বিষয়গুলো দেখভাল করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণাকে কীভাবে অগ্রসর করা যায়, কীভাবে লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করা যায়—এসব নিয়ে কাজ করা। উন্নত দেশের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা নতুন ছাত্র যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের প্রয়োজনে বাসস্ট্যান্ড ও বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে থাকে। কারণ, বিভিন্ন দেশ থেকে বা গ্রাম থেকে যখন শিক্ষার্থীরা আসে, নতুন একটা শহর চেনার কথা না। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের কাজ আসলে এগুলোই। শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্কলারশিপ পাবে, কে আর্থিকভাবে দুর্বল—এদের জন্যই তারা কাজ করবে। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে এরা যা করছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটা দলকে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী করা যায়, সেগুলোতে তাদের মূল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ ফিরে এসেছে?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই সরকার তো নির্দলীয়। এই নির্দলীয় সরকার কি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যিকারের একাডেমিকভাবে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছে? সব ক্ষেত্রেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই দলীয় উপাচার্যরা নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশাসনিক সব পদে প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ডিনদের দলীয়ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সরকার যা করেছে, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন যা করেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও কোনো পার্থক্য দেখা গেল না।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। তারা কি শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে?
এই দেশে সবদিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা। যেহেতু দেশের শিক্ষা ও সরকারি হাসপাতালের মান ভালো না, সেহেতু দেশের লক্ষ-কোটি টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী শুধু পড়ালেখার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। শুধু অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে না, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কোনো সরকার কি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছে, যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তার কত অংশ দেশে ফিরে আসছেন? এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা শেষ করে এই যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, এটাকেই বলা হয় ‘ব্রেন ড্রেন’। আমরা যাঁদের মেধাবী হিসেবে তৈরি করছি, তাঁদের সেবাটা পাচ্ছে না এ দেশ। তার চিত্রটা দেখা পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে হাঁটলে। শুধু তা-ই না, এ দেশে আরেকটা সমস্যা তৈরি হয়েছে—গত সাড়ে ১৫ বছরে থিয়েটার, টেলিভিশন, গানের শিল্পীসহ নানা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে গেছেন। সুতরাং শিক্ষক, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণে দেশে মেধাবীদের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
একটা দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা নির্দিষ্টসংখ্যক উচ্চ মানের মানুষের। এঁদের সংখ্যা কমে যাওয়া মানে শরীরের রক্তশূন্যতার মতো। আমরা এখন সেই রক্তশূন্যতার মধ্যে ভুগছি। প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার।
শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি ভালো করা না যায়, তাহলে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার কারণে বেকারের সংখ্যা প্রচুর। বেকারত্বের কারণেই দেশে নানা ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তাদের কাছে আমার আবেদন বা অনুরোধ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ তৈরি হয়। আগে উন্নত মানুষ তৈরি করতে হবে। কারণ, উন্নত মানুষের মাধ্যমেই কেবল উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। দালানকোঠা নির্মাণ করে দেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর এমন একটা দেশ পাওয়া যাবে না, যে দেশ শিক্ষায় উন্নত না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে পেরেছে। একটা উদাহরণ দিই। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে ১০০-এর মধ্যে ছিল না। সেই চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০-এর মধ্যে অবস্থান করছে। আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা দশের মধ্যে চলে আসবে। এই যে চলে আসা এবং তাদের যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, দুটিই হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল দাবি ছিল ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন’। গত দেড় বছরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীনতার পথে কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রশ্ন হলো, বৈষম্যহীনতা মূল রেখে, ডালপালা ছাঁটলে তো কোনো লাভ হবে না। বৈষম্য তো রয়ে গেছে আমাদের মূলে। একটা দেশে কীভাবে কওমি মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলা মিডিয়াম, বাংলার আবার ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম থাকতে পারে? আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি, এইসব শিক্ষাকাঠামোর কোথাও মিলনস্থান নেই। এভাবে আমরা আমাদের দেশের মানুষকে শিক্ষা, অর্থনীতি ও ধর্ম দিয়ে বিভাজিত করেছি। এ রকম একটা সমাজে বৈষম্যহীন করার জন্য যে ধরনের প্রজ্ঞা, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি লাগে, তার তো সব অনুপস্থিতি এখনো আছে।
সুতরাং আমি গত দেড় বছরে বাংলাদেশের কোনো পর্যায়েই বৈষম্যহীনতা তো দূরের কথা, বৈষম্য কমানোর চেষ্টা দেখিনি। গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, ধনীরা হয়তোবা আরও বেশি ধনী হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কোনো দিক দিয়েই কমেনি।
আগের সরকারের প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। বর্তমান সরকার যে পরিমার্জন এনেছে, তা শিক্ষাব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা কি রেখেছে?
আগের সরকার যা করেছে এবং বর্তমান সরকার যা করছে, আসলে তা হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আগের সরকার মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহার করেছে। আর এই সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই চব্বিশের আন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটা সময় লাগে। ইতিহাসকে আসলে একটা সময় দিতে হয়। এটা সত্যি সত্যি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কি না, সেটা সময়ের আলোকে আসলে রেকটিফাই ও টেস্ট করতে হয়। মানে ফিল্টারিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনই এটা দেওয়ার মানে হলো, আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান, ঠিক যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছিল। ইতিহাস তো ব্যবহার্য বিষয় না। ইতিহাস তো ধারণ করার বিষয়।
চব্বিশকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই হলো, আপনাদের কোনো লাভের বিষয় আছে। আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান টিস্যু পেপারের মতো। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের হীন স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করবেন, সেটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। কাকে বাদ দেওয়া হবে? রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দকে বাদ দেওয়া যায়? এঁদের কবিতা ও অন্যান্য লেখা দিয়ে ধর্ম ও জাতিভেদের ব্যাপারগুলো টেনে নিয়ে আসা ঠিক না। তাঁরা সময় দ্বারা পরীক্ষিত। ভালো মানের লোক দিয়ে একটা শিক্ষা কমিশন করা দরকার ছিল। কিন্তু এই সরকারের কি ম্যান্ডেট থাকতে পারে আমলাদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় যোগ বা বিয়োগ করার? তাদের এই যোগ ও বাদ দেওয়ার কোনোটাই সমর্থন করতে পারি না।
গত দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পটপরিবর্তনকে কীভাবে দেখেন?
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনীতি করবে, লেজুড়বৃত্তি করবে না। কোনো দলের জাতীয় নেতারা অন্যায় করলে সেটার প্রতিবাদ করবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে থাকবে, শিক্ষায় কীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করা যায়, গবেষণায় কীভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়; শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে ও এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবে এবং সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবে—দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন দলীয় বৃত্তের মধ্যে চলে যায়, তখন একটা দলের মধ্যে আটকে থাকলে তো তারা পুরো আকাশ দেখতে পাবে না। সে কারণে তারা সেই দলের কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডকে মাফ করে দেয়। আর অন্য দলের সামান্য অন্যায়কে বড় করে দেখে থাকে। এটা শিক্ষার্থীদের চরিত্র হওয়া উচিত না। এই আকাঙ্ক্ষাটা জুলাই আন্দোলনের পর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার ফিরে এসেছে। দলান্ধতা আবার বেড়ে
গেছে। কিন্তু সবার না। যেমন উগ্র ডানপন্থীদের কার্যক্রম প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেছে। কিন্তু এটাকে প্রতিহত করার জন্য তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে ডাকসুসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখেন?
ছাত্র সংসদের কিছু দায়িত্ব আছে। তারা কী করতে পারে এবং কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না, সেগুলোর সবকিছু লিখিত না থাকলেও অধিকাংশ জনের কাছে সেগুলোর একটা ধারণা আছে। ছাত্র সংসদের কাজ তো ছিন্নমূল মানুষকে লাঠির বাড়ি দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া না। ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয় বা কাউকে পেটানো না। তারা নিজেদের প্রশাসনের অংশ মনে করে। উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা আমাদেরই পার্ট।’ তা হতে পারে না।
ছাত্র সংসদের নির্ধারিত কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার বিষয়গুলো দেখভাল করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণাকে কীভাবে অগ্রসর করা যায়, কীভাবে লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করা যায়—এসব নিয়ে কাজ করা। উন্নত দেশের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা নতুন ছাত্র যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের প্রয়োজনে বাসস্ট্যান্ড ও বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে থাকে। কারণ, বিভিন্ন দেশ থেকে বা গ্রাম থেকে যখন শিক্ষার্থীরা আসে, নতুন একটা শহর চেনার কথা না। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের কাজ আসলে এগুলোই। শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্কলারশিপ পাবে, কে আর্থিকভাবে দুর্বল—এদের জন্যই তারা কাজ করবে। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে এরা যা করছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটা দলকে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী করা যায়, সেগুলোতে তাদের মূল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ ফিরে এসেছে?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই সরকার তো নির্দলীয়। এই নির্দলীয় সরকার কি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যিকারের একাডেমিকভাবে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছে? সব ক্ষেত্রেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই দলীয় উপাচার্যরা নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশাসনিক সব পদে প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ডিনদের দলীয়ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সরকার যা করেছে, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন যা করেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও কোনো পার্থক্য দেখা গেল না।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। তারা কি শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে?
এই দেশে সবদিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা। যেহেতু দেশের শিক্ষা ও সরকারি হাসপাতালের মান ভালো না, সেহেতু দেশের লক্ষ-কোটি টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী শুধু পড়ালেখার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। শুধু অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে না, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কোনো সরকার কি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছে, যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তার কত অংশ দেশে ফিরে আসছেন? এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা শেষ করে এই যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, এটাকেই বলা হয় ‘ব্রেন ড্রেন’। আমরা যাঁদের মেধাবী হিসেবে তৈরি করছি, তাঁদের সেবাটা পাচ্ছে না এ দেশ। তার চিত্রটা দেখা পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে হাঁটলে। শুধু তা-ই না, এ দেশে আরেকটা সমস্যা তৈরি হয়েছে—গত সাড়ে ১৫ বছরে থিয়েটার, টেলিভিশন, গানের শিল্পীসহ নানা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে গেছেন। সুতরাং শিক্ষক, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণে দেশে মেধাবীদের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
একটা দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা নির্দিষ্টসংখ্যক উচ্চ মানের মানুষের। এঁদের সংখ্যা কমে যাওয়া মানে শরীরের রক্তশূন্যতার মতো। আমরা এখন সেই রক্তশূন্যতার মধ্যে ভুগছি। প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার।
শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি ভালো করা না যায়, তাহলে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার কারণে বেকারের সংখ্যা প্রচুর। বেকারত্বের কারণেই দেশে নানা ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তাদের কাছে আমার আবেদন বা অনুরোধ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ তৈরি হয়। আগে উন্নত মানুষ তৈরি করতে হবে। কারণ, উন্নত মানুষের মাধ্যমেই কেবল উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। দালানকোঠা নির্মাণ করে দেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর এমন একটা দেশ পাওয়া যাবে না, যে দেশ শিক্ষায় উন্নত না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে পেরেছে। একটা উদাহরণ দিই। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে ১০০-এর মধ্যে ছিল না। সেই চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০-এর মধ্যে অবস্থান করছে। আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা দশের মধ্যে চলে আসবে। এই যে চলে আসা এবং তাদের যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, দুটিই হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।

যৌনতার অভিযাত্রায় নারী আর পুরুষের প্রাপ্তি সমান থাকেনি। একযাত্রায় দুই ফল হয়েছে। আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো থেকে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা-কাঠামোর রূপান্তরে প্রধানত বঞ্চিত হয়েছে নারী। এই বঞ্চনা কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, মানসিক ও শারীরিকও। নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘোচাতে তাই যৌনতার মুক্তি দরকার।
০৩ অক্টোবর ২০২২
সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
১৫ ঘণ্টা আগে
বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়...
১৫ ঘণ্টা আগে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগে