কাজী সালমা সুলতানা

জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক; একটি রাষ্ট্রের পরিচয়, একটি দেশের নাগরিকের অহংকার। তাই পতাকা রূপায়ণের মাঝে ফুটে ওঠে দেশের সব নাগরিকের পরিচয়, গর্ব করার উপাদান। জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সব দেশের নাগরিকই সদাসচেষ্ট থাকে। বাংলাদেশের মতো রক্ত দিয়ে কেনা পতাকার ক্ষেত্রে মর্যাদাবোধের জায়গাটি আরও বেশি স্পর্শকাতর। অথচ এই পতাকা নিয়ে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর নতুন বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। আর পতাকা তৈরির সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাদের নীরবতা ইতিহাস বিকৃত করার পথকে সহজ করে দিচ্ছে। জাতীয় পতাকা রূপায়ণের ঘটনার আগের কিছু ইতিহাস প্রাসঙ্গিকভাবেই চলে আসে। ১৯৬২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলায় রূপান্তরের প্রশ্নে এক বৈঠকে বসেন। আলোচনায় এ তিন নেতা একমত হন এবং ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে প্রগতিশীল চিন্তার কর্মীদের নিয়ে একটি গোপন সংগঠন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। এ সংগঠনের নাম দেওয়া হয় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’। ১৯৬৬ সালের মধ্যে তারা সারা দেশে সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটাতে সক্ষম হন। ছাত্রলীগের অন্য নেতারা মনে করতেন, বিষয়টি সংগঠনের অভ্যন্তরের উপদলীয় বিষয়। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সব কর্মকাণ্ড এ তিন নেতার মাধ্যমে পরিচালিত হতো। তাদের পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই নিউক্লিয়াস স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতার আন্দোলনকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণার পর ছাত্রলীগের এই অংশই এগিয়ে আসে। ছয় দফার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে গেলেও ছাত্রলীগ পূর্ণ সমর্থন জানায়। প্রথমে ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর শাখা ছয় দফার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। তৎকালীন ছাত্রলীগ মহানগর কমিটির সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ছয় দফার সমর্থনে মিছিল বের করা হয়। পরদিন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিও ছয় দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে। ১৯৬৬ সালের ৭ই জুন ছয় দফার সমর্থনে ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করা হয়। এদিন ঢাকায় ১১ জন ছাত্র শ্রমিক নিহত হয়। সেই থেকে ৭ জুনকে ছয় দফা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এরাই ছয় দফার আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেয় এবং শেখ মুজিবকে মুক্ত করে বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত করে।
১৯৭০ সালের ৭ই জুন ছয়দফা দিবস পালন উপলক্ষ্যে পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে শ্রমিক লীগ। ছাত্রলীগও একটি বাহিনী গঠন করে ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ কাজী আরেফ আহমেদকে এ বাহিনী গঠনের দায়িত্ব দেয়। এ বাহিনীর নাম দেওয়া হয় জয়বাংলা বাহিনী। ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় আ স ম আবদুর রবকে। নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে ব্যাটালিয়ন পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেটা ব্যাটালিয়ানের হাতে বঙ্গবন্ধুর হস্তান্তরের কথা। ৬ জুন ১৯৭০ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের নিউক্লিয়াস সদস্য কাজী আরেফ আহমেদ তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ডাকসুর সহ-সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও ছাত্রনেতা মনিরুল ইসলামকে (মার্শাল মনি) ডেকে নিয়ে পতাকা তৈরি করতে বলেন। এ সময়ে মনিরুল ইসলাম ও আ স ম আবদুর রব একমত হন যে, পতাকার জমিন অবশ্যই গাঢ় সবুজ রঙের (বট্ল্ গ্রিন) হতে হবে। শাহজাহান সিরাজ বলেন, লাল রঙের একটা কিছু পতাকায় থাকতে হবে। এরপর কাজী আরেফ আহমেদ গাঢ় সবুজের ওপর লাল সূর্যের একটি পতাকার নকশা তৈরি করেন। পতাকার নকশা দেখে সবাই একমত হন। এ সময় কাজী আরেফ আহমেদ প্রস্তাব করেন, লাল সূর্যের মাঝে সোনালি রঙে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র দিতে হবে, না হলে পাকিস্তানিরা আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে যে নানা অপপ্রচার করে থাকে, এ নিয়েও তা-ই করবে। পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে ‘ভারতের হাত আছে, ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের কাজ, বা ভারতীয় এজেন্টদের কার্যকলাপ’ বলে অপপ্রচার করত। এছাড়াও বাঙালির আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্ব পাকিস্তান এবং মিয়নমারের আরাকান রাজ্য নিয়ে একটি কাল্পনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপপ্রচার চালাত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। একাজে সরকারের প্রশাসনযন্ত্রেরও সাহায্য নেওয়া হতো। তারা কাল্পনিক এ রাষ্ট্রের নাম দিয়েছিল ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব বেঙ্গল’ বা ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র’। এ ধরনের অপপ্রচার থেকে রক্ষা পেতে পতাকার লাল সূর্যের মাঝখানে সোনালি আঁশ ও পাকা ধানের রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র রাখার কথা বলেন কাজী আরেফ আহমেদ। এবিষয়ে তারা একমত হন এবং পতাকা নিয়ে আলাপ করতে সিরাজুল আলম খানের কাছে যান।
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলেরই তিন তলার একটি কক্ষে সিরাজুল আলম খান প্রায়ই থাকতেন। স্বভাবতই স্বাধীনতা কার্যক্রমের একজন ঊর্ধ্বতন নেতা হিসেবে তারা তার অনুমোদন নিতে গেলেন। পতাকা তৈরিসহ সব কার্যক্রম সম্পর্কে তাকে জানানো হলো। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, যে নামেই পতাকা প্রদর্শন করো না কেন, সে পতাকাকে জনগণের ভবিষ্যৎ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে ভেবে নিতে কোনো বাধা থাকবে না। এরই মধ্যে এখানে যোগ দেন ছাত্রনেতা কামরুল আলম খান খসরু, স্বপন কুমার চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু, ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ ও নজরুল ইসলাম। তারা সবাই স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য। কামরুল আলম খান খসরু, স্বপন কুমার চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু ও নজরুল ইসলামকে পাঠানো হলো পতাকা সেলাই করে আনতে। ছাত্রলীগের অফিসের অবস্থান বলাকা ভবনে এবং এখানে অনেক দর্জির দোকান আছে। তাই তারা নিউমার্কেটে গেলেন।
গভীর রাতে দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে অ্যাপোলো নামক দোকান থেকে সবুজ ও লাল রঙের লেডি হ্যামিলটন কাপড় কিনে অপর এক রঙের দোকানিকে জাগিয়ে সোনালি রং ও তুলি কিনে নিয়ে তারা যান বলাকা ভবনে। সেখানে পাক টেইলার্সকে ডেকে তুলে পতাকা সেলাই করা হয়। যে দর্জি এ পতাকা সেলাই করলেন তিনি ছিলেন অবাঙালি। সে সময়ে তিনি বুঝতেও পারেননি যে নতুন এক জাতির, নতুন এক দেশের পতাকা সেলাই করছেন। সেই পতাকাই এত শক্তিধর হবে যে, এর প্রভাবে তাকে পাকিস্তানে চলে যেতে হবে। স্বাধীনতার পর ওই দর্জি পাকিস্তান চলে যান। পতাকা সেলাইয়ের পর সমস্যা দেখা দেয় লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা নিয়ে। এজন্য প্রয়োজন হয় শিল্পীর। সে সমস্যার সমাধান হিসেবে ডেকে আনা হয় শিবনারায়ণ দাসকে। শিবনারায়ণ দাস তখন কুমিল্লায় ছাত্রলীগ নেতা। তিনিও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য। তিনি খুব ভালো পোস্টার লিখতে পারতেন এবং রং-তুলির কাজ জানতেন। ছাত্রলীগ সলিমুল্লাহ হল শাখার সম্মেলন উপলক্ষে ব্যানার-ফেস্টুন লেখার জন্য তাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। তাকে ডেকে আনা হলো সলিমুল্লাহ হল থেকে। শিবনারায়ণ দাস জানালেন তিনি ম্যাপ আঁকতে পারবেন না, তবে রং করতে পারবেন। দেখা দিল আরেক সমস্যা।
এসমস্যা সমাধানের জন্য ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাসানুল হক ইনু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন জিন্নাহ হলের (বর্তমানে তিতুমীর হল) ৪০৮ নম্বর কক্ষে যান। এ দুজনই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সেই কক্ষে এনামুল হকও (হাসানুল হক ইনুর কাজিন) থাকতেন। তার কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ম্যাপ বের করা হলো। তার ওপর ট্রেসিং পেপার বসিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ম্যাপ আঁকা হলো। সেই ম্যাপ নিয়ে তারা ফিরে এলেন ইকবাল হলে। তারপর শিবনারায়ণ দাস নিপুণ হাতে বৃত্তের মাঝে ম্যাপটি আঁকলেন। এর ভেতর দিয়ে শেষ হলো ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নতুন পতাকা তৈরির কাজ।
এরপর পতাকা অনুমোদনের জন্য বৈঠক বসে। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ অনুমোদন দিলেও চূড়ান্তভাবে বঙ্গবন্ধুর অনুমোদন প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমোদনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় নিউক্লিয়াস সদস্য ছাত্রনেতা আবদুর রাজ্জাককে। ওই রাতেই আবদুর রাজ্জাক পতাকাটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যান এবং তা অনুমোদন করিয়ে আনেন। পরদিন অর্থাৎ ৭ জুন সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। কর্দমাক্ত মাঠে জয়বাংলা বাহিনী কুচকাওয়াজের সঙ্গে এগিয়ে আসছিল। বাহিনীর পোশাক ছিল সাদা প্যান্ট, সাদা শার্ট, মাথায় লাল-সবুজ টুপি এবং হাতে লাল-সবুজ কাপড়ের ব্যান্ডে লেখা ‘জয়বাংলা বাহিনী’। এ সময় মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ। আ স ম আবদুর রব মঞ্চের কাছে এসে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পতাকা গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বঙ্গবন্ধু কাজী আরেফের হাত থেকে পতাকাটি নিয়ে উপস্থিত জনতাকে প্রদর্শন করেন। এরপর আ স ম আবদুর রবের কাছে হস্তান্তর করেন। পতাকা গ্রহণ করে আ স ম আবদুর রব কুচকাওয়াজ করে মঞ্চের সামনে দিয়ে চলে যান।
সেই পতাকাটি ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ডাকসুর তৎকালীন সহসভাপতি হিসেবে আ স ম আবদুর রব লাখো ছাত্র-জনতার সমাবেশে জাতীয় পতাকা হিসেবে উত্তোলন করেন। ২৩ মার্চ ছিল পাকিস্তান দিবস। ১৯৭১ সালের এদিন সেনানিবাস ছাড়া সারা দেশের ঘরে ঘরে লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানো হয়। পরবর্তীকালে দীর্ঘ ৯ মাস রণাঙ্গনে এ পতাকাই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা, বাঙালি জাতির বেঁচে থাকার অবলম্বন। এই পতাকা বুকে ধারণ করেই একাত্তরে রণাঙ্গনে অকাতরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, এ পতাকা ধারণ করেই রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পটুয়া কামরুল হাসানকে পতাকার সঠিক মাপ ও নকশা নিয়ে কাজ করার দায়িত্ব দেন। তখন প্রয়াত শিল্পী কামরুল হাসান পতাকা থেকে বাংলাদেশের ম্যাপ সরিয়ে ফেলার প্রস্তাব দেন। কারণ বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা কঠিন ছিল এবং উত্তোলনের সময়ও ভুল হয়ে যেত। সেই সময় বাংলাদেশের ম্যাপ সরিয়ে আজকের লাল-সবুজের পতাকা, বাঙালির অহংকার!
লেখক: রাজনৈতিক গবেষক ও বিশ্লেষক এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক।
তথ্যসূত্র:
১. ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদের নিবন্ধ ‘আমাদের জাতীয় পতাকার ইতিহাস’, দৈনিক আমাদের সময়, ৩ ডিসেম্বর ২০০৯।
২. শাহজাহান সিরাজের বক্তব্য, তৃতীয়মাত্রা, চ্যানেল আই, প্রচারকাল ২৩ মার্চ ২০১১।
৩. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সমাজতন্ত্র, মনিরুল ইসলাম, প্রকাশকাল ২০১৩।
৪. বাঙালির জাতীয় রাষ্ট্র, কাজী আরেফ আহমেদ, প্রকাশকাল ২০১৪।
৫. আ স ম আবদুর রব, বাংলামেইল ২৪, প্রচারকাল ৭ মার্চ ২০১৫

জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক; একটি রাষ্ট্রের পরিচয়, একটি দেশের নাগরিকের অহংকার। তাই পতাকা রূপায়ণের মাঝে ফুটে ওঠে দেশের সব নাগরিকের পরিচয়, গর্ব করার উপাদান। জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সব দেশের নাগরিকই সদাসচেষ্ট থাকে। বাংলাদেশের মতো রক্ত দিয়ে কেনা পতাকার ক্ষেত্রে মর্যাদাবোধের জায়গাটি আরও বেশি স্পর্শকাতর। অথচ এই পতাকা নিয়ে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর নতুন বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। আর পতাকা তৈরির সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাদের নীরবতা ইতিহাস বিকৃত করার পথকে সহজ করে দিচ্ছে। জাতীয় পতাকা রূপায়ণের ঘটনার আগের কিছু ইতিহাস প্রাসঙ্গিকভাবেই চলে আসে। ১৯৬২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলায় রূপান্তরের প্রশ্নে এক বৈঠকে বসেন। আলোচনায় এ তিন নেতা একমত হন এবং ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে প্রগতিশীল চিন্তার কর্মীদের নিয়ে একটি গোপন সংগঠন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। এ সংগঠনের নাম দেওয়া হয় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’। ১৯৬৬ সালের মধ্যে তারা সারা দেশে সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটাতে সক্ষম হন। ছাত্রলীগের অন্য নেতারা মনে করতেন, বিষয়টি সংগঠনের অভ্যন্তরের উপদলীয় বিষয়। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সব কর্মকাণ্ড এ তিন নেতার মাধ্যমে পরিচালিত হতো। তাদের পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই নিউক্লিয়াস স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতার আন্দোলনকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণার পর ছাত্রলীগের এই অংশই এগিয়ে আসে। ছয় দফার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে গেলেও ছাত্রলীগ পূর্ণ সমর্থন জানায়। প্রথমে ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর শাখা ছয় দফার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। তৎকালীন ছাত্রলীগ মহানগর কমিটির সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ছয় দফার সমর্থনে মিছিল বের করা হয়। পরদিন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিও ছয় দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে। ১৯৬৬ সালের ৭ই জুন ছয় দফার সমর্থনে ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করা হয়। এদিন ঢাকায় ১১ জন ছাত্র শ্রমিক নিহত হয়। সেই থেকে ৭ জুনকে ছয় দফা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এরাই ছয় দফার আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেয় এবং শেখ মুজিবকে মুক্ত করে বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত করে।
১৯৭০ সালের ৭ই জুন ছয়দফা দিবস পালন উপলক্ষ্যে পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে শ্রমিক লীগ। ছাত্রলীগও একটি বাহিনী গঠন করে ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ কাজী আরেফ আহমেদকে এ বাহিনী গঠনের দায়িত্ব দেয়। এ বাহিনীর নাম দেওয়া হয় জয়বাংলা বাহিনী। ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় আ স ম আবদুর রবকে। নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে ব্যাটালিয়ন পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেটা ব্যাটালিয়ানের হাতে বঙ্গবন্ধুর হস্তান্তরের কথা। ৬ জুন ১৯৭০ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের নিউক্লিয়াস সদস্য কাজী আরেফ আহমেদ তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ডাকসুর সহ-সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও ছাত্রনেতা মনিরুল ইসলামকে (মার্শাল মনি) ডেকে নিয়ে পতাকা তৈরি করতে বলেন। এ সময়ে মনিরুল ইসলাম ও আ স ম আবদুর রব একমত হন যে, পতাকার জমিন অবশ্যই গাঢ় সবুজ রঙের (বট্ল্ গ্রিন) হতে হবে। শাহজাহান সিরাজ বলেন, লাল রঙের একটা কিছু পতাকায় থাকতে হবে। এরপর কাজী আরেফ আহমেদ গাঢ় সবুজের ওপর লাল সূর্যের একটি পতাকার নকশা তৈরি করেন। পতাকার নকশা দেখে সবাই একমত হন। এ সময় কাজী আরেফ আহমেদ প্রস্তাব করেন, লাল সূর্যের মাঝে সোনালি রঙে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র দিতে হবে, না হলে পাকিস্তানিরা আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে যে নানা অপপ্রচার করে থাকে, এ নিয়েও তা-ই করবে। পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে ‘ভারতের হাত আছে, ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের কাজ, বা ভারতীয় এজেন্টদের কার্যকলাপ’ বলে অপপ্রচার করত। এছাড়াও বাঙালির আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্ব পাকিস্তান এবং মিয়নমারের আরাকান রাজ্য নিয়ে একটি কাল্পনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপপ্রচার চালাত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। একাজে সরকারের প্রশাসনযন্ত্রেরও সাহায্য নেওয়া হতো। তারা কাল্পনিক এ রাষ্ট্রের নাম দিয়েছিল ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব বেঙ্গল’ বা ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র’। এ ধরনের অপপ্রচার থেকে রক্ষা পেতে পতাকার লাল সূর্যের মাঝখানে সোনালি আঁশ ও পাকা ধানের রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র রাখার কথা বলেন কাজী আরেফ আহমেদ। এবিষয়ে তারা একমত হন এবং পতাকা নিয়ে আলাপ করতে সিরাজুল আলম খানের কাছে যান।
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলেরই তিন তলার একটি কক্ষে সিরাজুল আলম খান প্রায়ই থাকতেন। স্বভাবতই স্বাধীনতা কার্যক্রমের একজন ঊর্ধ্বতন নেতা হিসেবে তারা তার অনুমোদন নিতে গেলেন। পতাকা তৈরিসহ সব কার্যক্রম সম্পর্কে তাকে জানানো হলো। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, যে নামেই পতাকা প্রদর্শন করো না কেন, সে পতাকাকে জনগণের ভবিষ্যৎ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে ভেবে নিতে কোনো বাধা থাকবে না। এরই মধ্যে এখানে যোগ দেন ছাত্রনেতা কামরুল আলম খান খসরু, স্বপন কুমার চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু, ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ ও নজরুল ইসলাম। তারা সবাই স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য। কামরুল আলম খান খসরু, স্বপন কুমার চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু ও নজরুল ইসলামকে পাঠানো হলো পতাকা সেলাই করে আনতে। ছাত্রলীগের অফিসের অবস্থান বলাকা ভবনে এবং এখানে অনেক দর্জির দোকান আছে। তাই তারা নিউমার্কেটে গেলেন।
গভীর রাতে দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে অ্যাপোলো নামক দোকান থেকে সবুজ ও লাল রঙের লেডি হ্যামিলটন কাপড় কিনে অপর এক রঙের দোকানিকে জাগিয়ে সোনালি রং ও তুলি কিনে নিয়ে তারা যান বলাকা ভবনে। সেখানে পাক টেইলার্সকে ডেকে তুলে পতাকা সেলাই করা হয়। যে দর্জি এ পতাকা সেলাই করলেন তিনি ছিলেন অবাঙালি। সে সময়ে তিনি বুঝতেও পারেননি যে নতুন এক জাতির, নতুন এক দেশের পতাকা সেলাই করছেন। সেই পতাকাই এত শক্তিধর হবে যে, এর প্রভাবে তাকে পাকিস্তানে চলে যেতে হবে। স্বাধীনতার পর ওই দর্জি পাকিস্তান চলে যান। পতাকা সেলাইয়ের পর সমস্যা দেখা দেয় লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা নিয়ে। এজন্য প্রয়োজন হয় শিল্পীর। সে সমস্যার সমাধান হিসেবে ডেকে আনা হয় শিবনারায়ণ দাসকে। শিবনারায়ণ দাস তখন কুমিল্লায় ছাত্রলীগ নেতা। তিনিও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য। তিনি খুব ভালো পোস্টার লিখতে পারতেন এবং রং-তুলির কাজ জানতেন। ছাত্রলীগ সলিমুল্লাহ হল শাখার সম্মেলন উপলক্ষে ব্যানার-ফেস্টুন লেখার জন্য তাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। তাকে ডেকে আনা হলো সলিমুল্লাহ হল থেকে। শিবনারায়ণ দাস জানালেন তিনি ম্যাপ আঁকতে পারবেন না, তবে রং করতে পারবেন। দেখা দিল আরেক সমস্যা।
এসমস্যা সমাধানের জন্য ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাসানুল হক ইনু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন জিন্নাহ হলের (বর্তমানে তিতুমীর হল) ৪০৮ নম্বর কক্ষে যান। এ দুজনই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সেই কক্ষে এনামুল হকও (হাসানুল হক ইনুর কাজিন) থাকতেন। তার কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ম্যাপ বের করা হলো। তার ওপর ট্রেসিং পেপার বসিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ম্যাপ আঁকা হলো। সেই ম্যাপ নিয়ে তারা ফিরে এলেন ইকবাল হলে। তারপর শিবনারায়ণ দাস নিপুণ হাতে বৃত্তের মাঝে ম্যাপটি আঁকলেন। এর ভেতর দিয়ে শেষ হলো ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নতুন পতাকা তৈরির কাজ।
এরপর পতাকা অনুমোদনের জন্য বৈঠক বসে। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ অনুমোদন দিলেও চূড়ান্তভাবে বঙ্গবন্ধুর অনুমোদন প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমোদনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় নিউক্লিয়াস সদস্য ছাত্রনেতা আবদুর রাজ্জাককে। ওই রাতেই আবদুর রাজ্জাক পতাকাটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যান এবং তা অনুমোদন করিয়ে আনেন। পরদিন অর্থাৎ ৭ জুন সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। কর্দমাক্ত মাঠে জয়বাংলা বাহিনী কুচকাওয়াজের সঙ্গে এগিয়ে আসছিল। বাহিনীর পোশাক ছিল সাদা প্যান্ট, সাদা শার্ট, মাথায় লাল-সবুজ টুপি এবং হাতে লাল-সবুজ কাপড়ের ব্যান্ডে লেখা ‘জয়বাংলা বাহিনী’। এ সময় মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ। আ স ম আবদুর রব মঞ্চের কাছে এসে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পতাকা গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বঙ্গবন্ধু কাজী আরেফের হাত থেকে পতাকাটি নিয়ে উপস্থিত জনতাকে প্রদর্শন করেন। এরপর আ স ম আবদুর রবের কাছে হস্তান্তর করেন। পতাকা গ্রহণ করে আ স ম আবদুর রব কুচকাওয়াজ করে মঞ্চের সামনে দিয়ে চলে যান।
সেই পতাকাটি ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ডাকসুর তৎকালীন সহসভাপতি হিসেবে আ স ম আবদুর রব লাখো ছাত্র-জনতার সমাবেশে জাতীয় পতাকা হিসেবে উত্তোলন করেন। ২৩ মার্চ ছিল পাকিস্তান দিবস। ১৯৭১ সালের এদিন সেনানিবাস ছাড়া সারা দেশের ঘরে ঘরে লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানো হয়। পরবর্তীকালে দীর্ঘ ৯ মাস রণাঙ্গনে এ পতাকাই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা, বাঙালি জাতির বেঁচে থাকার অবলম্বন। এই পতাকা বুকে ধারণ করেই একাত্তরে রণাঙ্গনে অকাতরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, এ পতাকা ধারণ করেই রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পটুয়া কামরুল হাসানকে পতাকার সঠিক মাপ ও নকশা নিয়ে কাজ করার দায়িত্ব দেন। তখন প্রয়াত শিল্পী কামরুল হাসান পতাকা থেকে বাংলাদেশের ম্যাপ সরিয়ে ফেলার প্রস্তাব দেন। কারণ বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা কঠিন ছিল এবং উত্তোলনের সময়ও ভুল হয়ে যেত। সেই সময় বাংলাদেশের ম্যাপ সরিয়ে আজকের লাল-সবুজের পতাকা, বাঙালির অহংকার!
লেখক: রাজনৈতিক গবেষক ও বিশ্লেষক এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক।
তথ্যসূত্র:
১. ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদের নিবন্ধ ‘আমাদের জাতীয় পতাকার ইতিহাস’, দৈনিক আমাদের সময়, ৩ ডিসেম্বর ২০০৯।
২. শাহজাহান সিরাজের বক্তব্য, তৃতীয়মাত্রা, চ্যানেল আই, প্রচারকাল ২৩ মার্চ ২০১১।
৩. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সমাজতন্ত্র, মনিরুল ইসলাম, প্রকাশকাল ২০১৩।
৪. বাঙালির জাতীয় রাষ্ট্র, কাজী আরেফ আহমেদ, প্রকাশকাল ২০১৪।
৫. আ স ম আবদুর রব, বাংলামেইল ২৪, প্রচারকাল ৭ মার্চ ২০১৫

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১৯ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
১৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
১৯ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক; একটি রাষ্ট্রের পরিচয়, একটি দেশের নাগরিকের অহংকার। তাই পতাকা রূপায়ণের মাঝে ফুটে ওঠে দেশের সব নাগরিকের পরিচয়, গর্ব করার উপাদান।
২১ এপ্রিল ২০২৪
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
১৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
১৯ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে। এই শঙ্কা ও সংশয় শুধু শহর-নগরবাসী মানুষের মধ্যে নয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও সমানভাবে বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কয়েকটি জেলা-উপজেলা শহর ও বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে গিয়েছি। পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো মানুষ স্বস্তিতে নেই।
মফস্বল শহর এবং গ্রামগঞ্জের মানুষের এই অস্বস্তি যে কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, তা নয়। আয়-উপার্জনে গভীর মন্দা থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়ও এই অস্বস্তির কারণ। শত্রুতা করে মামলায় ফাঁসানো, ব্যক্তিগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রং দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া—এগুলো বন্ধ হয়নি। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তার মধ্যে আছে নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা, যা আমাদের দেশের যেকোনো নির্বাচনকালীন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। এবারও পরিস্থিতি অন্য রকম হওয়ার কোনো লক্ষণ সাধারণ মানুষ দেখছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অতীতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার মানুষকে অব্যাহতভাবে আশ্বস্ত করে যাচ্ছে।
ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকেন্দ্রিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেও ভিন্ন কোনো চিত্র দেখা যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আগামী নির্বাচনটি একটি ‘পাতানো’ নির্বাচন হতে পারে। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি অনেক রকম আশঙ্কার কথা বলেছেন। যেমন ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে। ভোটের নির্ধারিত সময়ের পরে ভোট হতে পারে। মিডিয়া ভোট হতে পারে। কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ যদিও তাঁরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলেও বলে রেখেছেন। এর চেয়েও ভয়ানক এবং স্পর্শকাতর যে বিষয়টি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন তা হলো, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, গ্রহণযোগ্য না হয়, ক্রেডিবল না হয়, রিফ্লেকটিভ না হয় তাহলে ভবিষ্যতে দেশে গৃহযুদ্ধ হতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এসব বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় বিবেচিত হবে। কারণ, তাদের ওপর স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ লাগানো রয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের একেবারে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে যাদের অবস্থান, তারাও তো স্বস্তিতে নেই! তাদের মধ্যেও তো কেউ কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেমন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না।
আরেকজন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমাও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বুধবারই। তিনি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’ পরে সাংবাদিকদের রেহা কবির বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ড চলছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব ঘটনা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সরকার অবশ্য এসব ঘটনার জন্য কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার কার্যকর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে হয় না। যদি তা-ই হয় এবং আওয়ামী লীগ এ রকম কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে হয়তো স্বাভাবিক—সে ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচনটা কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সেই প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরেকটি বিষয় বোধ হয় সরকারের ভেবে দেখা দরকার। তা হলো কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালে থেকে সরকারের নাকের ডগায় বসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো অপচেষ্টা চালাচ্ছে কি না। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে সামনে এসেছে। কোনো পেশাদার শুটার কাউকে হত্যা করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে সেই ব্যক্তির আশপাশে থেকে নিজের চেহারা দেখাবে কি না, প্রশ্ন সেটি। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমনটা সাধারণত হয় না। কারণ সে ক্ষেত্রে শুটার নিজেই নিজেকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজ করে দেয়। কিন্তু ওসমান হাদির ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটাই ঘটেছে।
তা ছাড়া, ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর (অবশ্য তার আগেও বেশ কয়েকবার) দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ভারতের জন্য স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি করেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সৃষ্ট তীব্র টানাপোড়েন আমরা কয়েক দিন ধরে দেখেছি। নির্বাচনপূর্ব সময়ে দুই দেশের মধ্যে আন্তসীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, কূটনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেলে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনমনের অস্বস্তি বাড়াবে কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান।
অবশ্য যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিঘ্নিত করার কোনো প্রয়াস যে নেই, তা-ও মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মতো নানা কর্মকাণ্ডও দেখতে পাচ্ছে। তবে সবার জানা এবং বোঝা দরকার যে আগামী নির্বাচন বিঘ্নিত হলে দেশ অনেক বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের বড় কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই পরিস্থিতি বোধ হয় আমাদের কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। দেশের জন্য তো নয়ই।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে। এই শঙ্কা ও সংশয় শুধু শহর-নগরবাসী মানুষের মধ্যে নয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও সমানভাবে বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কয়েকটি জেলা-উপজেলা শহর ও বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে গিয়েছি। পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো মানুষ স্বস্তিতে নেই।
মফস্বল শহর এবং গ্রামগঞ্জের মানুষের এই অস্বস্তি যে কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, তা নয়। আয়-উপার্জনে গভীর মন্দা থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়ও এই অস্বস্তির কারণ। শত্রুতা করে মামলায় ফাঁসানো, ব্যক্তিগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রং দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া—এগুলো বন্ধ হয়নি। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তার মধ্যে আছে নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা, যা আমাদের দেশের যেকোনো নির্বাচনকালীন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। এবারও পরিস্থিতি অন্য রকম হওয়ার কোনো লক্ষণ সাধারণ মানুষ দেখছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অতীতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার মানুষকে অব্যাহতভাবে আশ্বস্ত করে যাচ্ছে।
ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকেন্দ্রিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেও ভিন্ন কোনো চিত্র দেখা যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আগামী নির্বাচনটি একটি ‘পাতানো’ নির্বাচন হতে পারে। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি অনেক রকম আশঙ্কার কথা বলেছেন। যেমন ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে। ভোটের নির্ধারিত সময়ের পরে ভোট হতে পারে। মিডিয়া ভোট হতে পারে। কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ যদিও তাঁরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলেও বলে রেখেছেন। এর চেয়েও ভয়ানক এবং স্পর্শকাতর যে বিষয়টি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন তা হলো, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, গ্রহণযোগ্য না হয়, ক্রেডিবল না হয়, রিফ্লেকটিভ না হয় তাহলে ভবিষ্যতে দেশে গৃহযুদ্ধ হতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এসব বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় বিবেচিত হবে। কারণ, তাদের ওপর স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ লাগানো রয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের একেবারে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে যাদের অবস্থান, তারাও তো স্বস্তিতে নেই! তাদের মধ্যেও তো কেউ কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেমন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না।
আরেকজন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমাও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বুধবারই। তিনি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’ পরে সাংবাদিকদের রেহা কবির বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ড চলছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব ঘটনা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সরকার অবশ্য এসব ঘটনার জন্য কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার কার্যকর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে হয় না। যদি তা-ই হয় এবং আওয়ামী লীগ এ রকম কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে হয়তো স্বাভাবিক—সে ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচনটা কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সেই প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরেকটি বিষয় বোধ হয় সরকারের ভেবে দেখা দরকার। তা হলো কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালে থেকে সরকারের নাকের ডগায় বসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো অপচেষ্টা চালাচ্ছে কি না। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে সামনে এসেছে। কোনো পেশাদার শুটার কাউকে হত্যা করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে সেই ব্যক্তির আশপাশে থেকে নিজের চেহারা দেখাবে কি না, প্রশ্ন সেটি। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমনটা সাধারণত হয় না। কারণ সে ক্ষেত্রে শুটার নিজেই নিজেকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজ করে দেয়। কিন্তু ওসমান হাদির ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটাই ঘটেছে।
তা ছাড়া, ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর (অবশ্য তার আগেও বেশ কয়েকবার) দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ভারতের জন্য স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি করেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সৃষ্ট তীব্র টানাপোড়েন আমরা কয়েক দিন ধরে দেখেছি। নির্বাচনপূর্ব সময়ে দুই দেশের মধ্যে আন্তসীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, কূটনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেলে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনমনের অস্বস্তি বাড়াবে কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান।
অবশ্য যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিঘ্নিত করার কোনো প্রয়াস যে নেই, তা-ও মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মতো নানা কর্মকাণ্ডও দেখতে পাচ্ছে। তবে সবার জানা এবং বোঝা দরকার যে আগামী নির্বাচন বিঘ্নিত হলে দেশ অনেক বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের বড় কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই পরিস্থিতি বোধ হয় আমাদের কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। দেশের জন্য তো নয়ই।

জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক; একটি রাষ্ট্রের পরিচয়, একটি দেশের নাগরিকের অহংকার। তাই পতাকা রূপায়ণের মাঝে ফুটে ওঠে দেশের সব নাগরিকের পরিচয়, গর্ব করার উপাদান।
২১ এপ্রিল ২০২৪
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১৯ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
১৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
১৯ ঘণ্টা আগেএম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ভয় পেয়ে ৫০ বছর বেঁচে থেকে লাভ নেই, যদি এই বেঁচে থাকা সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারে।’
অবশেষে ওসমান হাদি সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছেন। হাদিকে এভাবে হত্যা করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রেড অ্যালার্ট। তবে রাষ্ট্র ও সরকার জুলাই যোদ্ধা ও অকুতোভয় কণ্ঠস্বরগুলোকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে দেশটা গভীর সংকটে নিপতিত হতে বাধ্য।
বহু জল্পনা-কল্পনা-আলোচনার পর দেশ যখন নির্বাচনমুখী ট্রেনে, ঠিক তখন নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আততায়ীরা নিশানা করল কেন? যার ফলে উত্তপ্ত পুরো দেশ। প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সন্দেহ নেই, উদ্ভূত পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি জটিল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে হাদির ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আরও শক্তিশালীরূপে ফিরে এসেছে জুলাই আন্দোলনের পর লুণ্ঠিত অস্ত্রের বিষয়টি। সে সময়ে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলে এখনকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি নাও হতে পারত বলে অনেকের ধারণা।
এখন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে, নির্বাচন কি আদৌ হবে? নাকি নির্বাচন বানচালের অপতৎপরতা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে?
এ ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রার্থীদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এই আতঙ্কের কারণেই বিজয় দিবসের দিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ভয়ের ছায়া তাঁদের গ্রাস করছে। এরই মধ্যে হাদির ওপর আততায়ীর হামলার ঘটনা জনপ্রতিনিধি তো বটেই; জনমনেও একধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে, যা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তরায়। ফলে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এ পরিস্থিতির উন্নতি একমাত্র পথ।
শুধুই কি নির্বাচন বানচাল করা, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? নির্বাচন বানচাল হলে কার লাভ আর কার ক্ষতি? নির্বাচন বানচাল হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে যাদের লাভ, হাদির ওপর হামলায় তাদের কোনো ইন্ধন রয়েছে কি না বা রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে কি না? বা দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি চরম অস্থিরতা তৈরি করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায়?
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা বিরাজ করছে, তার সমাধান কী? কোনো কোনো মহল ভাবছে নির্বাচন ঘিরে দেশে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কাও আছে। তবে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজধানীতে ৩৫২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা বিভাগেও গড় হিসাব করলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খুন হয়েছে। এই খুনের হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটি বানচাল হয়ে গেলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে দেশ এখন যে সংকটে আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংকট ঘনীভূত হবে। সুতরাং রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি ভিন্ন হলেও এই মুহূর্তে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, সেই ঐক্যে যে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে, তা নানা ঘটনায় স্পষ্ট। কিন্তু এখন অন্তত হাদির এই ঘটনার পরে সেই ফাটল দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা, যথাযথ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অচিরেই উন্নতি ঘটবে। দূর হবে আস্থার সংকট। দেশ এগিয়ে যাবে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ভয় পেয়ে ৫০ বছর বেঁচে থেকে লাভ নেই, যদি এই বেঁচে থাকা সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারে।’
অবশেষে ওসমান হাদি সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছেন। হাদিকে এভাবে হত্যা করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রেড অ্যালার্ট। তবে রাষ্ট্র ও সরকার জুলাই যোদ্ধা ও অকুতোভয় কণ্ঠস্বরগুলোকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে দেশটা গভীর সংকটে নিপতিত হতে বাধ্য।
বহু জল্পনা-কল্পনা-আলোচনার পর দেশ যখন নির্বাচনমুখী ট্রেনে, ঠিক তখন নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আততায়ীরা নিশানা করল কেন? যার ফলে উত্তপ্ত পুরো দেশ। প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সন্দেহ নেই, উদ্ভূত পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি জটিল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে হাদির ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আরও শক্তিশালীরূপে ফিরে এসেছে জুলাই আন্দোলনের পর লুণ্ঠিত অস্ত্রের বিষয়টি। সে সময়ে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলে এখনকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি নাও হতে পারত বলে অনেকের ধারণা।
এখন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে, নির্বাচন কি আদৌ হবে? নাকি নির্বাচন বানচালের অপতৎপরতা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে?
এ ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রার্থীদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এই আতঙ্কের কারণেই বিজয় দিবসের দিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ভয়ের ছায়া তাঁদের গ্রাস করছে। এরই মধ্যে হাদির ওপর আততায়ীর হামলার ঘটনা জনপ্রতিনিধি তো বটেই; জনমনেও একধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে, যা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তরায়। ফলে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এ পরিস্থিতির উন্নতি একমাত্র পথ।
শুধুই কি নির্বাচন বানচাল করা, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? নির্বাচন বানচাল হলে কার লাভ আর কার ক্ষতি? নির্বাচন বানচাল হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে যাদের লাভ, হাদির ওপর হামলায় তাদের কোনো ইন্ধন রয়েছে কি না বা রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে কি না? বা দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি চরম অস্থিরতা তৈরি করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায়?
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা বিরাজ করছে, তার সমাধান কী? কোনো কোনো মহল ভাবছে নির্বাচন ঘিরে দেশে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কাও আছে। তবে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজধানীতে ৩৫২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা বিভাগেও গড় হিসাব করলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খুন হয়েছে। এই খুনের হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটি বানচাল হয়ে গেলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে দেশ এখন যে সংকটে আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংকট ঘনীভূত হবে। সুতরাং রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি ভিন্ন হলেও এই মুহূর্তে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, সেই ঐক্যে যে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে, তা নানা ঘটনায় স্পষ্ট। কিন্তু এখন অন্তত হাদির এই ঘটনার পরে সেই ফাটল দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা, যথাযথ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অচিরেই উন্নতি ঘটবে। দূর হবে আস্থার সংকট। দেশ এগিয়ে যাবে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে।

জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক; একটি রাষ্ট্রের পরিচয়, একটি দেশের নাগরিকের অহংকার। তাই পতাকা রূপায়ণের মাঝে ফুটে ওঠে দেশের সব নাগরিকের পরিচয়, গর্ব করার উপাদান।
২১ এপ্রিল ২০২৪
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১৯ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
১৯ ঘণ্টা আগেড. মো. শফিকুল ইসলাম

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকট—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে অর্থনীতির ওপর এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিসংখ্যান আর বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে কিছু সামষ্টিক সূচকে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা—এই দ্বৈত বাস্তবতা আজকের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাম্প্রতিক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এই বাস্তবতাকে পরিসংখ্যানের আয়নায় তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি দেখা গিয়েছিল, তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও কিছু সূচকে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত রয়েছে, তবু সেই পুনরুদ্ধার কতটা টেকসই, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ২ শতাংশে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে আস্থার সংকট শিল্প ও সেবা খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত সীমিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে শক্ত ভিত নেই। কারণ, টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বিনিয়োগ, যা এখনো দুর্বল। এখানে নতুন নির্বাচিত সরকার এলে, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়ে। নির্বাচিত সরকার এলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অবস্থার পরিবর্তনও হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশে স্থির রেখেছে। এই সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমাতে সহায়ক হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ছে বিনিয়োগে। উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। জুন ২০২৫ নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি, যা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনকভাবে কম। তাই অর্থ উপদেষ্টাকে এখানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
একই সময়ে সরকারি ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থপ্রবাহ আরও সংকুচিত হয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্প সম্প্রসারণ কিংবা উদ্ভাবনী উদ্যোগ—সবকিছুই উচ্চ সুদের চাপে থমকে যাচ্ছে। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন বাড়ে না, আর উৎপাদন না বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না—এই সরল অর্থনৈতিক সত্যটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
শিল্প উৎপাদনের চিত্রও সেই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করছে। যদিও কিছু মাসে শিল্প উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, তবু সামগ্রিকভাবে এই গতি স্থায়ী নয়। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা না থাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সীমিত পরিসরে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শ্রমবাজারে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আনুমানিক ২৬-২৭ লাখের মধ্যে (২.৬১-২.৭৪ মিলিয়ন)। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে প্রায় ৩ লাখের বেশি। বাস্তবে বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো যুব বেকারত্ব। শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ কাজ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ জনগোষ্ঠী যদি উৎপাদনপ্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তবে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ জনসংখ্যাগত বোঝায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি এখনো সীমিত। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামলেও চালের দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তার সুফল না পৌঁছানো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে। খাদ্যপণ্যের দামে সামান্য অস্থিরতাও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটে বড় ধাক্কা দেয়। কৃষি খাতেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঘন ঘন বন্যা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি উৎপাদনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আউশ ও আমন উৎপাদনে ঘাটতির তথ্য ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। কৃষি যদি স্থিতিশীল না থাকে, তবে মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য—দুটোই বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পর্যটনশিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, যা তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনো এই খাতটি যথাযথ গুরুত্ব ও পরিকল্পনার অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এসব উদ্যোগের সুফল পেতে সময় লাগবে, আর সেই সময়টা অর্থনীতি কতটা সহ্য করতে পারবে—সেটিই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রাখে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উচ্চ সুদের চাপে বিনিয়োগ স্থবির থাকলে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে এই পুনরুদ্ধার টেকসই হবে না। এখন প্রয়োজন সুসমন্বিত নীতি, বাস্তবমুখী সংস্কার এবং এমন সিদ্ধান্ত, যা কেবল পরিসংখ্যানে নয়, মানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকট—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে অর্থনীতির ওপর এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিসংখ্যান আর বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে কিছু সামষ্টিক সূচকে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা—এই দ্বৈত বাস্তবতা আজকের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাম্প্রতিক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এই বাস্তবতাকে পরিসংখ্যানের আয়নায় তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি দেখা গিয়েছিল, তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও কিছু সূচকে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত রয়েছে, তবু সেই পুনরুদ্ধার কতটা টেকসই, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ২ শতাংশে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে আস্থার সংকট শিল্প ও সেবা খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত সীমিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে শক্ত ভিত নেই। কারণ, টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বিনিয়োগ, যা এখনো দুর্বল। এখানে নতুন নির্বাচিত সরকার এলে, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়ে। নির্বাচিত সরকার এলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অবস্থার পরিবর্তনও হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশে স্থির রেখেছে। এই সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমাতে সহায়ক হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ছে বিনিয়োগে। উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। জুন ২০২৫ নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি, যা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনকভাবে কম। তাই অর্থ উপদেষ্টাকে এখানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
একই সময়ে সরকারি ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থপ্রবাহ আরও সংকুচিত হয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্প সম্প্রসারণ কিংবা উদ্ভাবনী উদ্যোগ—সবকিছুই উচ্চ সুদের চাপে থমকে যাচ্ছে। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন বাড়ে না, আর উৎপাদন না বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না—এই সরল অর্থনৈতিক সত্যটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
শিল্প উৎপাদনের চিত্রও সেই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করছে। যদিও কিছু মাসে শিল্প উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, তবু সামগ্রিকভাবে এই গতি স্থায়ী নয়। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা না থাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সীমিত পরিসরে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শ্রমবাজারে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আনুমানিক ২৬-২৭ লাখের মধ্যে (২.৬১-২.৭৪ মিলিয়ন)। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে প্রায় ৩ লাখের বেশি। বাস্তবে বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো যুব বেকারত্ব। শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ কাজ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ জনগোষ্ঠী যদি উৎপাদনপ্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তবে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ জনসংখ্যাগত বোঝায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি এখনো সীমিত। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামলেও চালের দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তার সুফল না পৌঁছানো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে। খাদ্যপণ্যের দামে সামান্য অস্থিরতাও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটে বড় ধাক্কা দেয়। কৃষি খাতেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঘন ঘন বন্যা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি উৎপাদনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আউশ ও আমন উৎপাদনে ঘাটতির তথ্য ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। কৃষি যদি স্থিতিশীল না থাকে, তবে মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য—দুটোই বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পর্যটনশিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, যা তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনো এই খাতটি যথাযথ গুরুত্ব ও পরিকল্পনার অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এসব উদ্যোগের সুফল পেতে সময় লাগবে, আর সেই সময়টা অর্থনীতি কতটা সহ্য করতে পারবে—সেটিই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রাখে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উচ্চ সুদের চাপে বিনিয়োগ স্থবির থাকলে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে এই পুনরুদ্ধার টেকসই হবে না। এখন প্রয়োজন সুসমন্বিত নীতি, বাস্তবমুখী সংস্কার এবং এমন সিদ্ধান্ত, যা কেবল পরিসংখ্যানে নয়, মানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে।

জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক; একটি রাষ্ট্রের পরিচয়, একটি দেশের নাগরিকের অহংকার। তাই পতাকা রূপায়ণের মাঝে ফুটে ওঠে দেশের সব নাগরিকের পরিচয়, গর্ব করার উপাদান।
২১ এপ্রিল ২০২৪
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১৯ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
১৯ ঘণ্টা আগে