Ajker Patrika

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র: কয়লার বেশি দাম নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে চালু হলো দ্বিতীয় ইউনিট

সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র: কয়লার বেশি দাম নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে চালু হলো দ্বিতীয় ইউনিট

কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রথম ইউনিট বেশ কয়েকবার বন্ধ হয়েছে। কয়লার উচ্চ দাম নির্ধারণ নিয়েও রয়েছে টানাপোড়েন। এর মধ্যে গতকাল রোববার (২৫ জুন) দিবাগত রাত ১২টায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে আদানি গ্রুপের ৮০০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিট। দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসার খবরে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ আদানির শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এর আগে গত ৬ এপ্রিল অনেকটা নীরবেই আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং বাংলাদেশে সরবরাহ শুরু করে।

ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের আদানির এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার দাম নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েনের মধ্যে ৬ এপ্রিল প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসাকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমে অস্বীকার করা হয়েছিল। তবে আজ সোমবার বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন, আদানির দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে।

ভারতের মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া লিমিটেডকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে গত ২৫ জুন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

ভারতের মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া লিমিটেডকে লেখা চিঠিতে আদানি গ্রুপ বলেছে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দ্বিতীয় ইউনিটের সফল সক্ষমতা পরীক্ষার পর বাংলাদেশ সময় ২৫ জুন দিবাগত রাত ১২টায় বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুমতি পাওয়া গেছে। 

এর আগে গত ৬ এপ্রিল আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রর প্রথম ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করলেও বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিপিডিবির কর্মকর্তারা অস্বীকার করেছিলেন। প্রথম ইউনিটরে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান গত ৮ এপ্রিল আজকের পত্রিকাকে বলেছিলেন, ‘আমি জানি না, আদানি এই দাবিটা কোথা থেকে এবং কিসের ভিত্তিতে করেছে। বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে এখনো কিছু প্রক্রিয়া বাকি আছে।’ 

অবশ্য বিপিডিবির পরিচালক শামীম হাসান আজ জানিয়েছেন, আজ সন্ধ্যা ৬টায় আদানির দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল ৮৬৭ মেগাওয়াট।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা
আদানি থেকে কম দামে, টেকসই ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে সরকার ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য–উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, গত ৭ জুন থেকে আজ পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কোনো একটি ইউনিট কমপক্ষে চারবার বন্ধ হয়ে যায়। গত ৭ জুন ২ দশমিক ৪৬ মিনিটের ঝড়ো হাওয়ায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ। 

এর আগে গত ১২ জুন প্রথম ইউনিটের বয়লার টিউবে ছিদ্র দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। এক দিন পরে একই সমস্যায় পড়ে দ্বিতীয় ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদনও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ২০ জুন এয়ার হিটারে ছিদ্র দেখা দেওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় প্রথম ইউনিটের উৎপাদন। 

তীব্র গরমের সময় আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় বাংলাদেশে বেড়ে গিয়েছিল লোডশেডিংয়ের তীব্রতা। এ নিয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্টেট অব দ্য আর্ট টেকনোলোজিতে তৈরি করা হয়নি। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রেও বারবার কারিগরি ত্রুটি দেখা দিচ্ছে।’

পিজিসিবির তথ্য–উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে সমস্যা দেখা দেয় সঞ্চালন লাইনেও। পিজিসিবির এক সূত্র জানিয়েছে, সামনে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য টানানো সরবরাহ লাইনের বাংলাদেশ অংশে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ৩০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা হবে। বিপিডিবির পরিচালক শামীম হাসান জানিয়েছেন, আজ সন্ধ্যা ৬টায় আদানির দুইটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল ৮৬৭ মেগাওয়াট। 

শুল্ক–কর ছাড় নিয়ে লুকোচুরির অভিযোগ
আদানির ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় অবস্থিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ আসছে গত ৬ এপ্রিল থেকে। আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার দাম অতিরিক্ত মাত্রায় নির্ধারণ ও শুল্ক ছাড় নিয়ে লুকোচুরির অভিযোগ রয়েছে। 

বিপিডিবি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমিকে ভারত সরকার বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে। বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার কারণে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য যন্ত্রপাতি ও কয়লা আমদানি বাবদ সব ধরনের শুল্ক-কর ছাড় পায়। চুক্তি অনুযায়ী, এই শুল্ক-কর ছাড়ের বিষয়টি বাংলাদেশকে ৩০ দিনের মধ্যে জানানোর কথা। চুক্তিতে বলা আছে, শুল্ক-কর ছাড় পেলে ক্যাপাসিটি চার্জ ও কয়লা আমদানি ব্যয় কমে যাবে। কিন্তু আদানি গ্রুপ এই ছাড়ের বিষয়টি বাংলাদেশকে জানায়নি। 

বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার ফলে আদানির গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রথম পাঁচ বছর শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। এর পরবর্তী পাঁচ বছর তারা পাবে ৫০ শতাংশ শুল্ক ছাড়।

কয়লার অতিরিক্ত দাম নির্ধারণ
শুল্ক ছাড়ের বিষয়টি বাংলাদেশকে না জানায়নি আদানি। পাশাপাশি কয়লার দাম দেশে অবস্থিত রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে প্রায় ২০০ ডলার বেশি নির্ধারণ করে তারা। আদানি গ্রুপ মার্চের শুরুর দিকে প্রতি টন কয়লার দাম ৪০০ ডলার নির্ধারণ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে চাহিদাপত্র পাঠায়। ওই সময় বিপিডিবি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা কেনার দরপ্রস্তাব আহ্বান করে। তাতে প্রতি টনের দাম প্রস্তাব করা হয়েছিল ২৩২ ডলার। অথচ আদানি গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লার দাম প্রস্তাব করে ৪০০ ডলার।

কয়লার দাম পুনর্নির্ধারণ ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যে শুল্ক-করে ছাড় পাচ্ছে সেটির সুফল বিপিডিবি কেন পাবে না—   তা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশে। বিপিডিবির এক সূত্র জানিয়েছে, কয়লার দাম পুনর্নির্ধারণ ও শুল্ক–কর ছাড়ের বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

উল্লেখ্য, আদানি গ্রুপের গড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আগামী ২৫ বছর ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...