Ajker Patrika

মশার দাপটে অসহায় জনজীবন

  • ঢাকার দুই সিটিতে দুর্বল তদারকিতে দৈনন্দিন কার্যক্রম।
  • সিটি করপোরেশনে বাজেট পর্যাপ্ত হলেও সুফল মিলছে না।
  • স্বাস্থ্যে তহবিলসংকটে স্থবির ডেঙ্গু কার্যক্রম।
  • ডেঙ্গুর কার্যক্রম এখনো ‘মৌসুমি’ সময়ে সীমাবদ্ধ।
তোফাজ্জল হোসেন রুবেলমুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৭: ০০
দিনের আলোয় জলাশয়ের পাশে ছোট গাছে লুকিয়ে আছে মশা। রায়েরবাজার বধ্যভূমি এলাকায়। আজকের পত্রিকা
দিনের আলোয় জলাশয়ের পাশে ছোট গাছে লুকিয়ে আছে মশা। রায়েরবাজার বধ্যভূমি এলাকায়। আজকের পত্রিকা

সারা দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে মশার উৎপাত। কয়েক মাস ধরে এমন উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। রাজধানীতে দিনের বেলায় কোনো রকমে টিকতে পারলেও সন্ধ্যা হওয়ার পরপর ঘরে-বাইরে মশার যন্ত্রণায় দাঁড়ানোই দায় হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আসন্ন গরমের মৌসুমে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মশা নিধন কার্যক্রমে ঢিলেমির কারণে সামনের দিনে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করছেন তাঁরা।

সারা দেশের মশকনিধন ও মশাবাহিত রোগ নিয়ে কাজ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এডিস মশার উৎপত্তিস্থল খুঁজে তা ধ্বংস করা ও এডিস মশা এবং ডেঙ্গুসংক্রান্ত জরিপে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে সহযোগিতা করার কাজ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। অন্যদিকে রোগী শনাক্ত, চিকিৎসা, সচেতনতামূলক কার্যক্রম, এডিস ও ডেঙ্গুবিষয়ক জরিপ, জিনোমিক সিকোয়েন্সিংয়ের কাজগুলো করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ দুই বিভাগের কাজে রয়েছে নানা অসংগতি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে মশা নির্মূলে পদক্ষেপের ঘাটতি, রোগ ও রোগী ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে। এখনো এডিস নির্মূলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি সরকার।

মশকনিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বছরে কমবেশি ২০০ কোটি টাকা বাজেট আছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসেন আজকের পত্রিকার বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশকনিধন কার্যক্রমের জন্য ব্যয় হয়েছে ৮৭ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১১১ কোটি টাকা।’ মশার নিধনে অনেকটা সমান অর্থ ব্যয় করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি)।

মশার পেছনে দুই সিটি করপোরেশনের এত বিপুল ব্যয়ের সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।

আগে শহরের মশকনিধন কার্যক্রম স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দেখভাল করতেন। গত ৫ আগস্টের পর সেই দায়িত্ব এসেছে একজন কর্মকর্তার ওপর। দুর্বল মনিটরিংয়ের সুযোগে অনেকটা গা-ছাড়া ভাব দেখা গেছে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মধ্যেও।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মোট ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা। তাঁদের অধীনে মশককর্মীরাও কাজ করেন। যদিও এ কাজটি আগে সরাসরি দেখভাল করতেন ৫৪টি ওয়ার্ডের একজন করে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তাঁদের সঙ্গে আরও ১৮ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরও ছিলেন। ডিএনসিসি এলাকায় এসব জনপ্রতিনিধি মশকনিধন কার্যক্রমের তদারকি ছাড়াও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি মনিটরিং করতেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কাউন্সিলরদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। বর্তমানে কয়েকটি ওয়ার্ডের সার্বিক কার্যক্রম দেখভাল করেন প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। এ কর্মকর্তার পক্ষে প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষে মাঠপর্যায়ে গিয়ে মশকনিধন কার্যক্রম দেখভালের খুব একটা সুযোগ নেই। ফলে মশকনিধনে যে স্বল্পসংখ্যক কর্মী মাঠে কাজ করেন, তাঁদের মধ্যেও গা-ছাড়া ভাব চলে এসেছে।

রাজধানীর আরেক অংশের দায়িত্বে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মশকনিধন কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের শেষ নেই। আজিমপুর অফিসার্স কলোনির বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে মশার ব্যাপক উৎপাত। গত দুই মাসের মধ্যে কলোনির মধ্যে কোনো মশকনিধনকর্মীকে ওষুধ ছিটাতে দেখি নাই।’

নিউ ইস্কাটন এলাকার বসবাস করেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল হকও গতকাল কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মশারি টানানোর পরও মশার ভন ভন থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। রমজান শুরু হওয়ার পর যখন মশারি থেকে বের হয়ে রাতে সেহরি খেতে বসি, তখন দেখা দেয় বড় বিপত্তিটা। দল বেঁধে মশা চারদিক ঘিরে ধরে।’

তবে মশকনিধন কার্যক্রম নিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা বা সীমাবদ্ধতা মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, ‘আমাদের ৭৫টি ওয়ার্ডে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হয়। পুরো ডিএসসিসির ১০টি অঞ্চলের আওতায় ৭৫টি ওয়ার্ডে আমাদের কর্মীরা কাজ করছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১ হাজার ৩৫ জন জনবল রয়েছে। সেখানে সুপারভাইজার, স্বাস্থ্য পরিদর্শকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তদারকি করে থাকেন। তবে এ মুহূর্তে শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে মশার উৎপাত কিছুটা বেড়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

এডিস মশাবাহিত সংক্রামক ভাইরাসটিতে এখন সারা বছরই আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। নগর থেকে শুরু করে প্রান্তিক অঞ্চলেও সংক্রমণ ঘটছে দ্রুত। ফলে সারা বছরই এডিস মশা নির্মূল ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে বছরজুড়ে কার্যক্রম পরিচালনাকে জোর দেওয়ার কথা বলছেন রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা।

ডেঙ্গুবিষয়ক কার্যক্রমের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা ডেঙ্গুবিষয়ক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে কৌশলগত পরিকল্পনা বা অপারেশনাল প্ল্যানের (ওপি) মাধ্যমে। তবে গত জুলাই থেকে ওপি চালু না থাকার কারণে কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সার্ভে থেকে শুরু করে সব কাজ করা হয় ওপির টাকায়। বর্তমানে ওপি চালু না থাকার কারণে ডেঙ্গুবিষয়ক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সার্ভের কাজটি করছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। ওপি না থাকলে কীভাবে কার্যক্রম চলবে সে বিষয়ে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে মোট দেড় সহস্রাধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২ মার্চের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর তাদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জনের বিপরীতে মারা গেছে ৩ জন। মার্চে ১৯ জন আক্রান্ত হলেও কোনো মৃত্যু ঘটেনি।

সার্ভে থেকে শুরু করে সব কাজ করা হয় ওপির টাকায়। বর্তমানে ওপি চালু না থাকার কারণে ডেঙ্গুবিষয়ক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ফরহাদ হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের, পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ)

গত বছরের ৪ ডিসেম্বর সর্বশেষ এডিসের জরিপে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ৫৬টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। ‘মনসুন এডিস সার্ভে-২০২৪’-এর ফলাফলে বলা হয়, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। স্বীকৃত এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করা হয়। রাজধানীর দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৬টি ওয়ার্ডেই ব্রুটো ইনডেক্স-২০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

মূলত তহবিলের সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ডেঙ্গুবিষয়ক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা। অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশিদ বলেন, ‘আইইডিসিআর সার্ভে করে। তাদেরকে এর জন্য কিছু অর্থ সংগ্রহ করে দেওয়া হয়েছে। ওরা এখন বর্ষা-পূর্ববর্তী এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ও প্রজনন নিয়ে সার্ভে করছে। ওপির তফসিলেই মূলত প্রশিক্ষণ, ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কীট বিতরণ, প্রয়োজনীয় ওষুধের কিছু অংশ দেওয়া হয়। সচেতনতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সকল কাজ করা হয়। ওপি না থাকার কারণে এসব কাজ চলছে না।

মেডিকেল এন্টোমলজিস্ট ও জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম সারোয়ার। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু বিবেচনা করলে ডেঙ্গুর বাহককে বিবেচনা করতে হবে। এডিস মশার জীবনচক্র শুধু মৌসুমি সময়ে সীমাবদ্ধ নয়। সারা বছরই তাদের জীবনচক্র চলে। ফলে বছরজুড়ে এডিস মশা নির্মূলে কাজ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত