Ajker Patrika

খেলাধুলার মধ্য দিয়েই শিশুরা লেখাপড়া শিখবে: প্রধানমন্ত্রী

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৪, ১৬: ৫৩
খেলাধুলার মধ্য দিয়েই শিশুরা লেখাপড়া শিখবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আজকের শিশুরা ডিজিটাল যুগের। কাজেই ডিজিটাল শিক্ষার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ দেখতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ করার। এই শিশুরা তো একদিন এই প্রযুক্তি ব্যবহার শিখবে। আমাদের যে স্মার্ট বাংলাদেশ সে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, অর্থাৎ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার মূল নেতৃত্ব আজকের শিশুরাই দেবে। আর সেটাই তো আমাদের লক্ষ্য। সেই ভাবে আমরা তাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

আজ রোববার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অভিভাবকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লেখাপড়া খুবই দরকার, কিন্তু লেখাপড়ার নামে তাদের ওপর কোনো রকম চাপ সৃষ্টি করবেন না। আমরাই এখন চাচ্ছি, খেলাধুলার মধ্য দিয়েই শিশুরা তাদের লেখাপড়া শিখবে, যাতে তার ভেতরের সুপ্ত মেধাবিকাশের সুযোগ পায়। সেই ভাবে আমরা কারিকুলাম তৈরি করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কারণ, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন তো শিশুরা বিশ্বটাকে সামনে দেখতে পায়। ক্লাসে শুধু বই পড়া না চোখে দেখে শিখতে পারে। আর এর পরে তারাই হবে এক স্মার্ট বাংলাদেশের এক স্মার্ট নাগরিক। সেটাই আমরা চাই। আজকের শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে আনব হাসি সবার ঘরে যথার্থ প্রতিপাদ্য গ্রহণ করার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই আমার দেশের প্রতিটা শিশু নিরাপদ জীবন পাক, সুন্দর ও উন্নত জীবন পাক সেটাই আমার কাম্য।’

শিশু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বাংলাদেশটাকে একটা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। আজকের শিশুদের কাছে আমার অনুরোধ—গুরুজনদের মানতে হবে, শিক্ষককে মানতে হবে, বাবা-মার কথা শুনে চলতে হবে। বাবা-মার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে। তাহলে কেউ বিপথে যেতে পারবে না। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি থেকে দূরে রাখার জন্য ছোটবেলা থেকেই সততার শিক্ষা দিতে হবে। সেই সঙ্গে সঙ্গে গান-বাজনা লেখাপড়া, ধর্মীয় শিক্ষা, ছবি আঁকা থেকে শুরু করে সব ধরনের কারিকুলাম এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। শিক্ষক আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে ছোটবেলা থেকে তাদের ভেতরে যেন মানবিক গুণগুলি বজায় থাকে, সেদিকে যেমন দেখবেন, আবার এই শিশুদের ভেতরে যে সুপ্ত মেধা আছে সেই মেধা ও মানব বিকাশে সুযোগ যেন তারা পায় সেদিকে দেখবেন।’ 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজকে বিশ্বব্যাপী আমরা দেখি অনেকেই শিশু অধিকারের কথা বলে, শিশু শিক্ষার কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু আমরা এটিও দেখি যে পাশাপাশি একটি দ্বিমুখী কার্যক্রম। সেই গাজায় শিশুদের ওপর যখন বোমা ফেলা হয়, হত্যা করা হয়, হাসপাতালে বোমা ফেলা হয়, ফিলিস্তিনের ওপর যখন আক্রমণ করা হয়, তখন আমি জানি না এই মানবাধিকার সংস্থাগুলো কোথায় থাকে? তাদের সেই মানবিকতা বোধ কোথায় থাকে? সেটাই আমার প্রশ্ন। আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। কারণ, যুদ্ধের সেই ভয়াবহতা আমরা নিজেরাও দেখেছি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী যেভাবে আমাদের ওপর অত্যাচার করেছে। আমরা সব সময় নির্যাতিত মানুষের পাশে আছি। তাই তো আমার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে যখন মানুষের ওপর অত্যাচার হলো, শিশুরা আহত অবস্থায় ছিল, তারা যখন আশ্রয় চাইল আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু আজকে গাজায় শিশুদের যে অবস্থাটা দেখি, নারীদের যে অবস্থাটা দেখি—আমি জানি না বিশ্বের বিবেক কেন নাড়া দেয় না। সেটাই আমার প্রশ্ন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন ’৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করি, তখন আমাদের শিশুদের সব রকম সুরক্ষা দেওয়ার পদক্ষেপ নেই। আমরা ২০০৭ সালে নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইন করে শিশুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করি। তা ছাড়া ২০১০ সালে জাতীয় শিশু নীতি-২০১১ আমরা প্রণয়ন করি। আমরা শিশু আইন-২০১৩ প্রণয়ন করি, ২০১৮ সালে সেটাকে আবার সংশোধন করে শিশুদের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। আমরা শিশুর উন্নয়ন ও স্বাভাবিক জীবন একীভূত করার লক্ষ্যে শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে শিশুদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। তা ছাড়া শিশুদের জন্য শিশুসদন প্রতিষ্ঠা, প্রাথমিক বৃত্তিমূলক শিক্ষাদান কর্মসূচি, সারা বাংলাদেশে শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রাইমারি স্কুল ২ কিলোমিটারের মধ্যে যেন এক একটি প্রাইমারি স্কুল হয়—সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। আমাদের দেশে মাত্র ৪৫ ভাগ শিশু লেখাপড়া করত; আজকে আমাদের দেশে প্রায় ৯৮ ভাগ শিশু স্কুলে যায় পড়াশোনা করে এবং সেই সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। বিশেষ করে মেয়েরা তো স্কুলে যেতে পারত না, তাদের জন্য আমরা সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের দেশের কারিগরি শিক্ষার হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৮ ভাগ এটি এখন বাড়িয়ে ১৭ দশমিক ৮৮ ভাগে উন্নীত করতে পেরেছি। এ ছাড়া আরও যেন ভালো কারিগরি ও ভোকেশনাল ট্রেনিং পায়, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। স্কুলগুলোতে আমরা কম্পিউটার ল্যাব করেছি, কম্পিউটার শিক্ষা এবং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। প্রযুক্তির শিক্ষাটা যেন শিশুকাল থেকে পায়, সে ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। শিশুদের ঝরে পড়ার হার কমিয়ে এনেছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়সংখ্যা আমরা বাড়িয়েছি।’ 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সকল সুযোগ একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল। মাত্র ৩ বছর ৭ মাস সময় পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি আমাদের একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। যে সংবিধানে এ দেশের মানুষের প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করা, নারী শিক্ষার সুযোগ, নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য পার্লামেন্টে সংরক্ষিত আসন থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন। আজকে আমরা পল্লী বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে যা কিছুই করি, সব ভিত্তি তিনি করে দিয়ে গেছেন। শিশুদের সুরক্ষার জন্য শিশু আইন তিনি প্রণয়ন করেন এবং শিশুদের জন্য তিনি এমন ব্যবস্থা করে যান, যেন কোনো শিশু অবহেলিত না থাকে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, জাতির পিতার যে আকাঙ্ক্ষা ছিল দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত থেকে তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, আর সেই সময় ১৫ আগস্টের আঘাত এল। এরপর আর বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। এই টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জন্ম গ্রহণ করেন। এই মাটিতেই তিনি ঘুমিয়ে আছেন বাবা-মায়ের কবরের পাশে। আজকে এখানে আমরা জাতীয় শিশু দিবস পালন করতে পেরে খুবই আনন্দিত। আমরা একটা জিনিস চাই, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে, আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।’ 

এর আগে জাতির পিতার ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং পরে ১০টা ৩৯ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। 

এরপর তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপরে পবিত্র সুরা ফাতেহা পাঠ ও বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেন তাঁরা। দোয়া-মোনাজাত শেষে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে রক্ষিত মন্তব্য বইয়ে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন। রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানানোর পর দলীয় প্রধান হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি প্রাঙ্গণে আয়োজিত শিশু সমাবেশ অনুষ্ঠানে আসন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ১১টা ৩৭ মিনিটে স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক। স্বাগত বক্তব্য শেষে বঙ্গবন্ধু ও শিশু অধিকারবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে শিশু প্রতিনিধির বক্তব্য দেন তাইমা তাসনিম। এরপরে বেলা ১১টা ৫৬ মিনিটে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি এমপি। এরপরে দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে সভাপতির বক্তব্য দেন শিশু প্রতিনিধি তিয়াশা জামিন। সভাপতির বক্তব্যের পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এরপরে প্রধান অতিথি জেলার ১০৪ জন অসচ্ছল, মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজনের হাতে পাঁচ হাজার টাকার আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রীকে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম গোপালগঞ্জের জিআই আবেদীত ব্রোঞ্জের গয়নার স্মারক উপহার ও জিআই সনদ পাওয়া গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ভর্তি হাঁড়ি তুলে দেন। পরে দুপুর ১২টা ৩৩ মিনিটে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২টা ৫৬ মিনিটে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষ করেন। পরে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী, প্রশিক্ষক ও কলাকুশলীদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। 

এরপরে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার সমাধি প্রাঙ্গণে আয়োজিত বইমেলা ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আঁকা চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মোহাম্মদ ফারুক খান এমপি, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এমপি, শেখ হেলালুদ্দীন এমপি, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এমপি, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলে নাইম, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, প্রধানমন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকার (টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া) উন্নয়ন প্রতিনিধি শহীদ উল্লা খন্দকার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাব উদ্দিন আজম, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল বশার খায়ের, সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ, টুঙ্গিপাড়া পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুলসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বেলা ৩টা ১৭ মিনিটে হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুদকের তদন্ত: ৭ দেশে জাবেদের আরও ৬১৫ সম্পদের সন্ধান

  • কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ সাতটি দেশে বিপুল সম্পদ।
  • নতুন ৩৮১টিসহ যুক্তরাজ্যে মোট সম্পদ ৭২৪টি।
  • নতুনগুলোসহ মোট ১ হাজার ১০০টি সম্পদের নথি দুদকের হাতে।
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ছবি: সংগৃহীত

পাচারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদ গড়ে আলোচনায় থাকা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নতুন করে ৬১৫টি সম্পদের তথ্য পাওয়ার গেছে। কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ সাতটি দেশে বিপুল এই সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নতুন করে ৬১৫টি সম্পদের নথিসহ মোট ১ হাজার ১০০টির মতো সম্পদের নথি রয়েছে তাদের কাছে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট, প্লট, বাড়ি এবং তাঁর নামে থাকা কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স। আর এসব সম্পদ রয়েছে প্রায় ১০টি দেশে। সম্পদগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা।

বিএফআইইউ ও দুদকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে যে ৬১৫টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, তার বেশির ভাগই যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে ৩৮১টি সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এর আগে একই দেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নামে ৩৪৩টি সম্পদের তথ্য পায় দুদক। সব মিলিয়ে শুধু যুক্তরাজ্যেই তাঁর ৭২৪টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেল।

এ ছাড়া, কম্বোডিয়ায় ১১১টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৪৮ মার্কিন ডলার। মালয়েশিয়ায় ৪৭টি সম্পদ পাওয়া গেছে, যার বাজারমূল্য ১০ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ২৪২ ডলার। ফিলিপাইনে ২টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯০ পেসো, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ কোটি টাকা। ভারতের হরিয়ানা, উত্তর চব্বিশপরগনাসহ দেশটিতে মোট ১১টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৪ ডলার।

সাইফুজ্জামান জাবেদের নামে থাইল্যান্ডে ২৪টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৩৬ কোটি ৩১ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯ থাই বাত। যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪টি সম্পদ ও ২টি কোম্পানির লাইসেন্স রয়েছে। ভিয়েতনামে ৩০টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুরে সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ। সুইজারল্যান্ডেও তাঁর সম্পদ রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নেতৃত্বে থাকা দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা তাঁর যে অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করছি, তার মধ্যে এখন পর্যন্ত সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নামে এক হাজারের বেশি সম্পদ থাকার নথি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি নথিতেই ভিয়েতনামে তাঁর ৩০টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা বলেন, সাইফুজ্জামান জাবেদ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচারের মাধ্যমে সম্পদ তৈরি করেন। অবৈধ অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের টাকা তিনি তাঁর সেসব দেশের এজেন্ট দিয়ে সংগ্রহ করেছেন, পরে দেশে প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে টাকা পরিশোধ করেছেন। তিনি জানান, জাবেদ তাঁর পাচারের অর্থ দিয়ে ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কোম্পানি ও ব্যবসা গড়ে তোলেন। পরে সেগুলো যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেন।

পাচারের অর্থ দেশে আনার বিষয়ে কথা বলেছেন দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পাচার করা অর্থ ফেরত আনার জন্য যথাযথ আইনিপ্রক্রিয়া শেষ করে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স পাঠাতে হবে। যদিও যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়, তাদের সঙ্গে চুক্তি থাকলে এটি সহজ হয়। আমাদের এমন চুক্তি নেই বললেই চলে। এ কারণে পাচারের অর্থ ফেরত আনা বেশ কঠিন।’

মঈদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি বলব, প্রক্রিয়া যত কঠিনই হোক, দুদককে সঠিক প্রক্রিয়ায় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের অর্থগুলো পাচার হয়ে যেসব দেশে যায়, সেসব দেশ দুর্নীতির সূচকে অত্যন্ত ভালো অবস্থানে। কিন্তু পাচারের অর্থ যখন তাদের দেশে যায়, তখন তারা তা ফেরতে সহযোগিতা না করে উল্টো সুরক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছে। এটা তাদের দ্বৈত নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।’

দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাজ্যে জাবেদ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা সম্পদ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে দুদক। এ লক্ষ্যে সে দেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে দুদক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রক্তসাগর পাড়ি দিয়ে পুব আকাশে স্বাধীনতার সূর্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বেলা পৌনে ১১টায় উপকণ্ঠ থেকে মূল ঢাকা শহরে প্রবেশ করেন বিজয়ী মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সেনারা। অন্যদিকে শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ে চলতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি।

১৫ ডিসেম্বর ছিল বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর সদর্প বিচরণের শেষ দিন। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর চূড়ান্ত অভিযানে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই কার্যত ঢাকায় পাকিস্তানি দুর্গের পতনের ক্ষণগণনা চলছিল। উপায় না দেখে পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান আবদুল্লাহ খান নিয়াজি শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ১৫ তারিখ আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দলিল এবং সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার জন্য ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকব ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা এসে পৌঁছান। বিকেল ৪টার আগেই বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনীর দুটি ইউনিটসহ মোট চার ব্যাটালিয়ন সেনা ঢাকায় প্রবেশ করে। সঙ্গে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকার এত দিনের জনবিরল সড়কগুলো ক্রমেই জনাকীর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে। সবার মুখে একাত্তরের পরিচিতি রণধ্বনি’ জয় বাংলা’।

কারফিউ জারি থাকলেও মানুষ তার পরোয়া না করে রাস্তায় বেরিয়ে উল্লাস করতে থাকেন। পাকিস্তানি বাহিনীর নয় মাসের গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞের পর মুক্তির আনন্দে তাঁরা তখন আত্মহারা। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর কয়েক লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে তাঁরা পেয়েছেন নতুন দেশ—বাংলাদেশ। বিজয়ের আনন্দ, স্বজন হারানোর শোক আর অজানা আগামীর প্রত্যাশায় সবার মনে এক বিচিত্র অনুভূতি। এর মধ্যেও ঘটে কিছু দুঃখজনক ঘটনা। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পলায়নপর কিছু পাকিস্তানি সেনা ও বিহারি এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে অনেক বাঙালিকে হতাহত করে।

বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার, ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও অন্য সামরিক কর্মকর্তারা বিমানে ঢাকা অবতরণ করেন। এর কিছু সময় পরই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল উৎফুল্ল জনতার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারত মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানি সমরাধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজি। পাকিস্তানি বাহিনীর দখল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হলো বাংলাদেশ। সগর্বে জায়গা করে নিল বিশ্বের মানচিত্রে।

ঢাকায় ১৬ ডিসেম্বরই ধীরে ধীরে সবাই জানতে পারেন আগের কয়েক দিনে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, লেখকসহ বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর। নিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনাদের এদেশীয় সহযোগীরা তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল; কিন্তু কেউই আর ফিরে আসেননি। দেশের এই মেধাবী, কৃতী সন্তানদের পরিণতির কথা ভেবে জনমনে ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ। পরদিনই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমির বীভৎস দৃশ্যের খবর। রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বিভিন্ন জায়গার অনেক বধ্যভূমিতে পাওয়া যায় নির্যাতিত মানুষের ক্ষতবিক্ষত দেহ। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের অনেকের হাত বা চোখ বাঁধা, বেয়নেট বা গুলিতে বিদ্ধ লাশের খোঁজ মেলে রায়েরবাজারে। বিজয়ের আনন্দের মধ্যে এই শোকের খবর, বধ্যভূমির ভয়াবহ দৃশ্য স্তম্ভিত করে মানুষকে।

এদিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই কাজে লেগে যায় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার। ১৬ ডিসেম্বরই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত প্রবাসী সরকার সদর দপ্তর থেকে গোটা দেশে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে। নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলি পাঠানো শুরু হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ায় শুরু হয় পুরো সরকারের দেশে ফেরার প্রক্রিয়াও। ৭ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই উনিশটি জেলার জন্য জেলা প্রশাসকদের মনোনয়ন ও নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছিল। শুরু হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের নতুন কঠিন যুদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ত্যাগ, বীরত্ব আর গৌরবের জ্বলন্ত সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয় নতুন একটি দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সে সংগ্রাম, আত্মত্যাগের চিত্র জীবন্ত হয়ে রয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয় নতুন একটি দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সে সংগ্রাম, আত্মত্যাগের চিত্র জীবন্ত হয়ে রয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কালো ফ্রেমে বাঁধাই করা একটি জামা। হলুদ জমিনের মাঝে লাল রং। জামাটি রেহানা নামের এক দুধের শিশুর। একাত্তরের যুদ্ধদিনে তার বয়স ছিল মাত্র দুই মাস। রেহানার বাবা আবদুস সালাম খান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এই অপরাধে পাক সেনারা বাড়িতে হানা দিয়ে শিশু রেহানাকে নির্মমভাবে আছাড় মেরে এবং বুটের তলায় পিষে হত্যা করে। একটি ছবিও না থাকায় মেয়ের চিহ্ন বলতে বাবার কাছে রয়ে যায় এ জামা।

বিজয়ের ভোর আনতে রেহানার মতো ঝরেছে কত প্রাণ। একাত্তরকে ঘিরে আছে কত সাহস, বীরত্ব আর আত্মত্যাগের কাহিনি। তারই বেশ কিছু নমুনা রয়েছে আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গ্যালারিগুলোতে। একে একে চারটি গ্যালারি পেরিয়ে এলে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো যেন চোখের সামনে তাজা হয়ে ফিরে আসে।

খুলনার সেনহাটিতে বাসা ছিল মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম খানের। যুদ্ধের শুরুর দিকে, ৩০ এপ্রিল পাক সেনারা স্থানীয় দালালদের সহায়তায় তাঁর বাসা ঘেরাও করে। সালামকে না পেয়ে তারা শিশু রেহানাকে হত্যা করে। রাতের আঁধারে বাবা গোপনে বাড়িতে এসে লাশটি ধুয়েমুছে রূপসা নদীতে ভাসিয়ে দেন। স্বাধীনতার পরে মেয়ের জামাটিই হয়ে ওঠে তাঁর বুকের ধন। জামাটি তিনি ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখেন দীর্ঘ ২৫ বছর। একপর্যায়ে তাঁর কাছ থেকে এটি সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কার্যত এক মহাকাব্যিক ঘটনা। এ রকম কত ঘটনাই না তখন ঘটেছে। দেশের প্রায় সব মানুষ যার যার সাধ্যমতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তির লড়াইয়ে। কেউ রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে লড়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে, খাবার খাইয়ে, শত্রুর গতিবিধি জানিয়ে কিংবা উদ্দীপনামূলক গান শুনিয়ে যে যেভাবে পেরেছেন সহায়তা করেছেন।

গ্যালারি-২-এ ঢুকতেই চোখে পড়বে একটা লুবিটেল-২ ক্যামেরা। আলোকচিত্রী শুকুর মিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবি তুলেছিলেন এই ক্যামেরা দিয়ে। একটু এগোলেই ভয় ধরানো এক অন্ধকার প্রকোষ্ঠে মৃদু আলো জ্বলছে। ওপরে লেখা, ‘অপারেশন সার্চলাইট: গণহত্যার নীল নকশা ও পঁচিশ মার্চের কালরাত্রি’।

পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শুরুর সেই ভয়ানক রাতের কথা ডায়েরিতে লিখেছিলেন কবি, নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রী সুফিয়া কামাল। আরও অনেকের মতো নাখালপাড়ার বাড়িতে বসে নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছিল তখনকার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী স্বাতী চোধুরী। সুফিয়া কামালের ডায়েরি আর স্বাতীর স্কুলের সেই খাতা আছে এখানে।

সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত আর তার ভেতরে বাংলাদেশের হলুদ মানচিত্র। প্রথম নকশার বাংলাদেশের এই জাতীয় পতাকা ৭ মার্চ উড়েছিল লে. সিকান্দার আলীর বাড়িতে। পতাকাটি আছে জাদুঘরের এই গ্যালারিতে। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান অসামান্য। ঢাকার রাজপথে ডামি রাইফেল হাতে নারীদের মিছিলের আলোকচিত্রও আছে।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন। ২৫ মার্চ রাতের প্রথম শহীদদের অন্যতম তিনি। তাঁর ব্যবহৃত বাইনোকুলার আর পোশাক রাখা হয়েছে জাদুঘরে। দেখা যাবে শহীদ অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, গোবিন্দ চন্দ্র দেব, আব্দুল মুকতাদির, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, কবি মেহেরুন্নেসাসহ অনেকের স্মৃতিবিজড়িত ব্যবহৃত জিনিস। রয়েছে জাতীয় চার নেতার ব্যবহৃত কোট, লাইটার, চশমা ইত্যাদি। গ্যালারি-২-এ আরও দেখা মিলবে একটি টাইপরাইটারের। জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ওপর চালানো গণহত্যা বন্ধের আবেদন করা হয়েছিল এই টাইপরাইটারে লিখে।

গ্যালারি-৩-এ বিশাল আলোকচিত্রে একাত্তরের শরণার্থী শিবিরের কষ্টকর জীবনের দৃশ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিল ১ কোটি মানুষ। এখানে আছে শরণার্থীদের নিয়ে করা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিকস, টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস, ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনের আলোকচিত্র। আছে সে সময়ের সাংস্কৃতিক দলের কার্যক্রমের বিভিন্ন ছবি।

এই গ্যালারিতে দেখা মিলবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের বিভিন্ন চিত্র, একুশের গানের স্রষ্টা শহীদ আলতাফ মাহমুদের ইলেকট্রিক শেভিং রেজার। একটি জায়গায় দেখা যায়, একটি বাড়ির জানালা। জানালার অন্যপাশে একটি ছবিতে অন্ধকারে অস্ত্র হাতে মুক্তিসেনা। ছবিটি এমনভাবে রাখা হয়েছে, দেখে মনে হবে, সত্যিই যেন জানালার ওপারে অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধা। গ্যালারি-৩-এর শেষ দিকে চোখ আটকে যাবে একটি কালো রঙের গাড়িতে। শহীদ ডা. ফজলে রাব্বির এই গাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতে ব্যবহৃত হতো। ১৫ ডিসেম্বর আল-বদরের সদস্যরা তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।

জাদুঘরের নারী নির্যাতন অংশে চোখ বুলালে শিউরে উঠতে হয়। সিলেটের পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পের দেয়ালে আঁকা ছবি রাখা হয়েছে এখানে। বাঙালি মেয়েদের নির্যাতন শিবিরের দেয়াল বুঝিয়ে দেয় কী ভয়াবহ নির্যাতন ঘটেছিল সেখানে।

একটি ছবিতে দেখা মেলে দুই কিশোরীর। তারা ঝুড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে কচুরিপানা। সেই কচুরিপানার আড়ালে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেনেড।

গ্যালারি-৪-এ দেখা মেলে বাঙালির বিজয়ের স্মৃতির নমুনা। দেখা মেলে মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের আলোকচিত্র ও স্মৃতিবিজড়িত বস্তু। এর মধ্যে রয়েছে বিলোনিয়া, পরশুরাম, চিথলিয়া, ফুলগাজী, ফেনী, মন্দভাগ, কসবা-সালদা নদী, নারায়ণগঞ্জ-কামরাঙ্গীরচর, শেরপুর, কামালপুর যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন। ঢাকা শহরে ট্রাকে চড়ে মানুষের বিজয় উল্লাস।

গ্যালারি-১-এ আছে একাত্তর পর্যন্ত এ ভূখণ্ডের বিভিন্ন শাসনামলের ইতিহাস। বাকি তিনটি গ্যালারিজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। বিজয় দিবসের ঠিক আগের দিনে জাদুঘরে দেখা গেল সপরিবারে আসা মোহা. আসলাম উদ্দিনকে। তিনি বললেন, ‘বিজয়ের মাসে হঠাৎ করেই জাদুঘরে ঘুরতে আসা। এসে ঘুরতে ঘুরতে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনার যেন সাক্ষী হয়ে গেলাম।’

দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে যায়। পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যের ম্লান আলো পড়ছে জাদুঘরের সামনে টাঙানো লাল-সবুজ পতাকায়। রাত পেরোলেই দেখা দেবে নতুন সূর্য। সে সূর্য মুক্তির, বিজয়ের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন প্রত্যাশা জাতির মনে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের ৫৪ বছর পূর্তি এবার। এই ভূখণ্ডের মানুষের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন ১৬ ডিসেম্বর। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় নতুন এক দেশ—বাংলাদেশ। দিনটি একই সঙ্গে বিজয়ের আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও শহীদের স্মরণে ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করবে দেশবাসী।

জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসনের পতনে বাংলাদেশে এখন এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা। স্বৈরশাসককে বিদায় জানানোর পাশাপাশি ঘুণে ধরা রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার করে নতুন সম্ভাবনাকে স্বাগত জানাতে চায় জনগণ। এমন ভিন্ন ধরনের এক প্রেক্ষাপটে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিতর্কহীন, অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনে দেশবাসী তাদের পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার অপেক্ষায়। এবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অতীতের ব্যর্থতা, সীমাবদ্ধতা ও সংকীর্ণতাকে কাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাধ্যমতো সচেষ্ট হবেন– এটিই এবারের বিজয় দিবসের প্রাক্কালে দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা।

এই আনন্দের দিনে জাতি পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর সন্তানদের। শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এ উপলক্ষে লাল-সবুজে সেজেছে দেশ। সর্বত্র উড়ছে জাতীয় পতাকা। বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রথামতো বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা অর্জন করি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। বিজয়ের এই দিনে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সকল বীর শহীদ, যুদ্ধাহতসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা মা-বোন, শহীদ পরিবারের সদস্য ও আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান রাখা সকল সংগ্রামী যোদ্ধাকে, যাঁদের ত্যাগ ও আত্মদানের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধ ছিল না, অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। বিগত পাঁচ দশকের পথচলায় জনগণের পূর্ণ রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক মুক্তি এখনো অর্জিত হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে নতুন আশা জাগিয়েছে।

একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তাঁদের এই আত্মদান আমাদের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা ও সাহস জোগায়, সকল সংকটে-সংগ্রামে দেখায় মুক্তির পথ।’ প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে নতুন সূর্য উদিত হয়েছিল, বিগত বছরগুলোতে তা বারবার স্বৈরাচার আর অপশাসনে ম্লান হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা আবারও একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত ও সুশাসিত বাংলাদেশের শক্তিশালী ভিত গড়ে তুলতে যে বিস্তৃত সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, দেশের আপামর জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আজ আমরা সে কর্মযজ্ঞের সফল পরিসমাপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছি।’

বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনাকেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। রাজধানী ঢাকা থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সড়কে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পোশাকধারী বাহিনীর পাশাপাশি সাদাপোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

আজ ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাবেন।

বিজয় দিবসে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে।

আজ বিকেলে বঙ্গভবনে মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। সিনেমা হলে বিনা মূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখানো হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত