Ajker Patrika

২০২১ সাল যাঁদের কেড়ে নিল

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৪২
২০২১ সাল যাঁদের কেড়ে নিল

চলে যাওয়া বছরটিতে আমরা হারিয়েছি অনেক বরেণ্য ব্যক্তিকে। এর মধ্যে অভিশপ্ত কোভিডও কেড়ে নিয়েছে অনেক প্রাণ।

বছরের শুরুতেই ৩ জানুয়ারি আমরা হারিয়েছি একুশে পদকজয়ী লেখিকা রাবেয়া খাতুনকে। অনেকগুলো উপন্যাস লিখেছিলেন তিনি। কয়েকটি উপন্যাস থেকে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ‘মেঘের পর মেঘ’, ‘মধুমতী’র নাম বলা যেতে পারে। ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর বর্তমান মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে জন্মেছিলেন তিনি। 

 এর পরের আঘাত আসে এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের শক্তিমান এই অভিনেতাও পেয়েছিলেন একুশে পদক। ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমণি’, ‘অশিক্ষিত’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘গেরিলা’ তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের কয়েকটি। জন্মেছিলেন ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী জেলায়। 

প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মুকসুদ চলে গেলেন ২৩ ফেব্রুয়ারি। ভালো গবেষক ছিলেন তিনি। মওলানা ভাসানীকে নিয়ে বই লিখেছেন। লিখেছেন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। তাঁর ভাষা ছিল সরল, কিন্তু গভীর তথ্যসমৃদ্ধ। মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর তাঁর জন্ম হয়। 

মার্চ মাসও ছিল বিয়োগের বেদনায় ভরা। ৪ মার্চ মারা যান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম)। ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম হওয়া এইচ টি ইমাম ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব। একই মাসের ৮ তারিখ চলে যান বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা শাহীন আলম। আর ১৬ মার্চ মারা যান বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে একজন সুলেখক হিসেবে পরিচিত মওদুদ আহমদের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। 

 এপ্রিলের এমনিতেই বদনাম ছিল, আছেও। ইংরেজ কবি টি এস এলিয়ট তো সেই কবেই এপ্রিলকে ‘নিষ্ঠুরতম মাস’ আখ্যা দিয়েছেন। সে কথা রাখতেই যেন এ বছরের এপ্রিল একের পর এক আঘাত হানল। এপ্রিল মাসের ৭ তারিখ এসেছিল দুঃসংবাদ নিয়ে। এদিন লোকসংগীতশিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী মারা যান। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী। ১৯৪৬ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। এই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ১০ এপ্রিল মারা যান সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান শাহরিয়ার। সুনামগঞ্জ জেলায় ১৯৪৬ সালের ২৫ এপ্রিল জন্ম হয়েছিল তাঁর। এর ঠিক পরদিনই চলে যান মিতা হক। 

 রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক মারা যান ১১ এপ্রিল। কিডনির রোগে দীর্ঘদিন ভুগছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে ঢাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই শিল্পী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনাই তাঁকে একেবারে দুর্বল করে ফেলেছিল। এপ্রিলের বাতাসকে ভারী করে তোলার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এতেও যেন সে নিজেকে ‘নিষ্ঠুরতম’ প্রমাণ করতে পারছিল না। কয়েক দিন বিরতি দিয়ে আবার আঘাত। এবার শামসুজ্জামান খান। ১৪ এপ্রিল বাংলা একাডেমির এই সাবেক মহাপরিচালক চলে যান। ১৯৪০ সালের ২৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করা এই অধ্যাপক ও লোকসংস্কৃতি গবেষক নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ছাপ রেখে গেছেন বহু লেখায়। এই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই চলে যান ‘মিষ্টি মেয়ে’ কবরী। ১৭ এপ্রিল চলে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্রশিল্পী কবরী। ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জন্মানো সারাহ বেগম কবরী ছিলেন এই বাংলার চলচ্চিত্রের একজন গুণী শিল্পী। শক্তিমান এই শিল্পীর ঝুলিতে আছে ‘সোয়ে নদিয়া জাগে পানি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘কাচ কাটা হীরে’, ‘সুজনসখী’, ‘সারেং বউ’-এর মতো ছবি। পাশাপাশি ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন কাড়ে। রাজনীতিও করেছেন, করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালনা। রাজ্জাক-কবরী জুটি একসময় চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জুড়িয়ে দিয়েছিল। 

 শামসুজ্জামান খানের মেয়াদ ফুরালে বাংলা একাডেমির দায়িত্ব পেয়েছিলেন কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। কিন্তু বেশি দিন সেই দায়িত্ব পালন করতে পারলেন না। ২৪ মে মারা যান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। ফরিদপুরে ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মেছিলেন তিনি। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘দাও বৃক্ষ দাও দিন’, ‘মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি’, ‘হাওয়া কলে জোড়াগাড়ি’, ‘নোনা জলে বুনো সংসার’, ‘স্বপ্নহীনতার পক্ষে’, ‘আমার একজনই বন্ধু’, ‘পোশাক বদলের পালা’, ‘প্রেমের কবিতা’, ‘কৃষ্ণ কৃপাণ ও অন্যান্য কবিতা’, ছিন্নভিন্ন অপরাহ্ণ’, ‘জয় বাংলা বলো রে ভাই’, ‘সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না’ উল্লেখযোগ্য। 

মারা যান অর্থনীতিবিদ ও সমাজসেবক শাহ আব্দুল হান্নান। ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদীতে জন্ম নেওয়া এই অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, দুর্নীতি দমন ব্যুরোর (বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশন) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৪ জুলাই মারা যান গীতিকার ও ছড়াকার ফজল-এ-খোদা। তাঁর লেখা গান ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’ খুবই জনপ্রিয়। তবে যে গানটি লিখে তিনি বাংলাদেশকে ঋণী করে গেছেন, সেটি হলো ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’। শিশুদের জন্য তাঁর লেখা ছড়াগুলো অনবদ্য। ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। 

 ২৩ জুলাই চলে যান গণসংগীতশিল্পী, শব্দসৈনিক ফকির আলমগীর। বাংলাদেশে পপসংগীতের পুরোধাব্যক্তিত্বদের একজন তিনি। আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফিরোজ সাঁই ও পিলু মমতাজকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল সেই সময়ের তারুণ্যের গান। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর মাধ্যমে তিনি গণসংগীতে অবদান রাখেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী। ‘ও সখিনা গেছস কিনা ভুইল্যা আমারে’ গানটি তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে। এ ছাড়া ‘মায়ের এক ধার দুধের দাম’, ‘নাম তার ছিল জন হেনরি’ গানগুলোর কথা মানুষ মনে রাখবে। ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। 

কথাসাহিত্যিক ও লেখক বুলবুল চৌধুরী মারা যান ২৮ আগস্ট। ১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্ম নেওয়া নিভৃতচারী শক্তিমান এই সাহিত্যিক ২০১১ সালে পান বাংলা একাডেমি পুরস্কার। আর যে বছর পেলেন একুশে পদক, সে বছরই মারা গেলেন। 

অভিনেতা, লেখক, নাট্যকার ও শিক্ষক ইনামুল হক মারা যান ১১ অক্টোবর। বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের এই পুরোধাব্যক্তিত্ব ছিলেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও নাটকের জন্যই তিনি জনপ্রিয়তা পান। মঞ্চ, টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। 

 বছরের শেষ দিকে চলে যান প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। রাজশাহীতে নিজের বাসায় ১৫ নভেম্বর মারা যান তিনি। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই লেখকের লেখা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘তৃষ্ণা’, ‘উত্তরবসন্তে’, ‘বিমর্ষ রাত্রি, প্রথম প্রহর’, ‘পরবাসী’, ‘আমৃত্যু’, ‘আজীবন’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘খাঁচা’, ‘ভূষণের একদিন’, ‘ফেরা’, ‘মন তার শঙ্খিনী’, ‘মাটির তলার মাটি’, ‘শোণিত সেতু’, ‘ঘরগেরস্থি’, ‘সরল হিংসা’, ‘খনন’, ‘সমুখে শান্তির পারাবার’, ‘অচিন পাখি’, ‘মা-মেয়ের সংসার’, ‘বিধবাদের কথা’, ‘সারা দুপুর’ ও ‘কেউ আসেনি’। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। 

মৃত্যুর এ সারিতে নাম লেখান একুশে পদকপ্রাপ্ত নজরুল গবেষক, বাংলা একাডেমির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। দিনটি ছিল ৩০ নভেম্বর। ভাষা আন্দোলনে তাঁর তোলা ছবিগুলো ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। তাঁর রয়েছে অনেকগুলো গবেষণাগ্রন্থ। ভাষা আন্দোলন, কবি নজরুল ইসলাম, ভাষাতত্ত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর লেখা গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে। ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্ম হয়েছিল তাঁর। 

 ডিসেম্বরের ২০ তারিখে মারা যান একাত্তরের রণাঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখা শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী। ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী’, ‘চিঠি জাহানারা ইমামকে’, ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বই। তিনি ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। এখানেই শেষ নয়। বড়দিনের দিন চলে যান জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। ২৫ ডিসেম্বর মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সাংবাদিক নেতা। 

সব মিলিয়ে ২০২১ সালে বাংলাদেশ একের পর এক কৃতিকে হারিয়েছে। হ্যাঁ, করোনায় সারা বছরই নানা শ্রেণি-পেশার নানা বয়সী মানুষ মারা গেছেন। এই প্রতিটি মৃত্যুই বেদনাদায়ক। তারপরও কিছু মৃত্যু থাকে, যা জাতীয় জীবনে একটা শূন্যতার সৃষ্টি করে। এ বছর বিভিন্ন অঙ্গনের এমন বহু মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, যাঁদের অভাব বোধ হবে অনেক দিন। যাঁদের এই হারিয়ে যাওয়ার কারণেও ২০২১ সালকে মানুষ মনে রাখবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গণভোটের প্রচার: পরিবর্তনের চাবি আপনারই হাতে

  • ১১টি সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে লিফলেটে।
  • বলা হয়েছে, ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে সব পাবেন। ‘না’ ভোট দিলে কিছুই পাবেন না।
  • গণভোটের বিষয়ে সরকার, ইসি, মন্ত্রণালয় প্রচার চালাবে।
তানিম আহমেদ, ঢাকা 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের বিষয়ে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ১০টি ভোটের গাড়ি চালু করা হয়েছে। ভোটারদের সচেতন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে ভোট পর্যন্ত দেশের সব জেলা-উপজেলায় ঘুরবে এসব গাড়ি। এ ছাড়া ভোটের গান প্রচারের পাশাপাশি উঠান বৈঠকও শুরু হয়েছে দেশব্যাপী। এর ধারাবাহিকতায় ‘দেশের চাবি আপনার হাতে’ স্লোগান নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

লিফলেটে ‘আপনি কি এমন বাংলাদেশ চান, যেখানে...’—এই জিজ্ঞাসার বিপরীতে ১১টি সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, সরকারি দল ইচ্ছেমতো সংবিধান সংশোধন করতে পারবে না; সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান চালু হবে; বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার এবং গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটিসমূহের সভাপতি নির্বাচিত হবে; কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না; সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়বে; ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য পার্লামেন্টে একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে; দেশের বিচারব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করবে; আপনার মৌলিক অধিকারের সংখ্যা (যেমন অবাধে ইন্টারনেট সেবাপ্রাপ্তির অধিকার) বাড়বে; দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি ইচ্ছেমতো ক্ষমা করতে পারবেন না; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য থাকবে।

লিফলেটে বলা হয়েছে, ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে ওপরের সবকিছু পাবেন। ‘না’ ভোট দিলে কিছুই পাবেন না। মনে রাখবেন, পরিবর্তনের চাবি এবার আপনারই হাতে।

এ ছাড়া গণভোটের বিষয়ে প্রচারের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে ‘গণভোট বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম’ সেল খোলা হয়েছে। প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা পদমর্যাদা) অধ্যাপক আলী রীয়াজকে। সেলের উদ্যোগে লোগো ও লিফলেট তৈরি করা হয়েছে, যা এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জানা গেছে, লিফলেট দু-এক দিনের মধ্যে বিলি শুরু করবে সরকার। তারা পর্যায়ক্রমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার শুরু করবে। গণভোট নিয়ে দুটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। যেখানে গণভোটের বিষয়ে সব ধরনের তথ্য দেওয়া থাকবে।

প্রচারের মাধ্যমে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে পৌঁছানো সরকারের লক্ষ্য বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গণভোট একটি ঐতিহাসিক সুযোগ দেশের মানুষের জন্য। অতীতে যেভাবে গণভোট হয়েছে, তা থেকে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ অতীতের গণভোটের ক্ষেত্রে দেখা গেছে গৃহীত সিদ্ধান্ত। যেমন দ্বাদশ সংশোধনীর ক্ষেত্রে। কিংবা এমন পরিস্থিতিতে হয়েছে, মানুষের পছন্দের জায়গা ছিল না। এই গণভোট হচ্ছে মানুষের পছন্দের সুযোগ। আশা করি, মানুষ সে সুযোগ ব্যবহার করবে।’

সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদের বিষয়ে গণভোটের বিষয়ে সারা দেশে প্রচারের লক্ষ্যে ২২ ডিসেম্বর থেকে যাত্রা শুরু করেছে ১০টি ভোটের গাড়ি—সুপার ক্যারাভান। এসব গাড়ি দেশের ৬৪ জেলা ও ৩০০টি উপজেলায় ঘুরে বেড়াবে। তারা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নির্বাচন ও গণভোট সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেবে, ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং গণতন্ত্রের বার্তা ছড়িয়ে দেবে। সেখানে বিভিন্ন ভিডিও চিত্র দেখানো হবে।

নির্বাচন এবং গণভোট উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৩০টি ভিডিও তৈরি করা হবে। যেখানে আটটি বিভাগের জন্য আটটি গান তৈরি করা হয়েছে। গত বুধবার ঢাকা বিভাগের জন‍্য নির্মিত গান রিলিজ করা হয়। গেয়েছেন স্টোইক ব্লিসখ‍্যাত কাজী। পর্যায়ক্রমে বাকি সাতটি বিভাগের জন্য নির্মিত গানও রিলিজ করা হবে। গানের কথায় এক দিন দুই ভোট, সংসদ-গণভোট আওয়াজ ওঠায়, জবাবদিহি, সংস্কার, পরিবর্তন চাইলে গণভোট দেওয়ার কথা বলা আছে। গত সরকারের আমলের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড গানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গানের কথায় সব জেলার নাম বলা হয়েছে। যেখানে দেশের মালিক জনগণকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ মানুষের উদ্দেশে বলা হয়, ‘আসুন দেশের মালিকানা বুঝে নিন।’

গণভোট নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি, ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ ১৯ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে প্রচার কার্যক্রম করবে সরকার। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকদের নিয়ে সরকার বৈঠক করেছে। এ ছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তথ্যচিত্র, শর্ট ভিডিও। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জারি-সারি গান, অঞ্চলভিত্তিক গান তৈরি করা হয়েছে—যা হাট-বাজারে প্রচার করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে ফোকাল ব্যক্তি নির্ধারণের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের জন্য একটি টিম তৈরি করা হচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে প্রচার হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, এনজিও ব্যুরোর উদ্যোগেও প্রচার করা হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিতসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুদের নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেখানে ধর্মগুরুদের নিজ নিজ ধর্মীয় স্থানের গণভোটের বিষয়ে মানুষকে বার্তা দিতে বলা হবে। সেখানে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে কী সংস্কার হবে, ‘না’ ভোট দিলে কী হবে—তা বলতে বলা হবে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগেও গণভোটে নিয়ে প্রচার করা হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘গণভোটের প্রচার করার জন্য আমাদের অফিসগুলোকে ফেস্টুন দেব। এ ছাড়া লিফলেট বিলি করব। তবে মূল কাজ করছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। আমরা আমাদের ভোট ব্যবস্থাপনায় যেটুকু দরকার, সেটুকু করব।’

গণভোট ও জুলাই সনদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোও প্রচার করবে বলে আশা সরকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মনোনয়নপত্র নিলেন ৩১৪৪ জন, আগামীকালই দাখিলের শেষ সময়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। আগামীকাল সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। আজ রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩০০ আসন থেকে ৩ হাজার ১৪৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আর জমা দিয়েছেন ১৬৬ জন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচনী কার্যক্রমের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটের কাজে কর্মকর্তা নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে ইসি।

এর আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের তাগিদ দিয়ে গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠি দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে পাঠানো চিঠিতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা ও এ জন্য বাজেট প্রণয়ন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করা, ভুল তথ্য ও অপতথ্যের বিস্তার রোধ এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের অনুমোদন ও নিরাপত্তা দেওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়।

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত অফিস, প্রতিষ্ঠান এবং প্রয়োজনে বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং গণমাধ্যমের বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক আসবেন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকের বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে ভিসা প্রসেসিংসহ সব বিষয়ে সচিবের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগকে দেওয়া চিঠিতে বিগত সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য যেভাবে নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়েছিল, এবারও তা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের জন্য ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রচারণা চালানো ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে পোস্টাল ভোটের বিষয়ে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ডাক বিভাগকে সমন্বয় ও গোপনীয়তা বজায় রেখে পোস্টাল ব্যালট দ্রুত ও নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া এবং ফেরত আনার কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে হবে।

এ ছাড়া আজ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে দেওয়া চিঠিতে ইসি জানায়, ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার, কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সংস্কার এবং কেন্দ্রে যাতায়াতের ভাঙা ও সংকীর্ণ রাস্তা মেরামতের প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে ইসির সম্মতির প্রয়োজন হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আগামী মঙ্গলবার অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

সারা দেশে কর্মরত জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

আগামী মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে এই অভিভাষণ দেবেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোছাইন আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে আজ রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে আয়োজিত প্রধান বিচারপতির অভিভাষণ দেওয়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য দেশের সব জেলার জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এর আগে আজ সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। বঙ্গভবনের দরবার হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে শপথবাক্য পড়ান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ২৩
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার। ছবি: প্রেস উইং
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার। ছবি: প্রেস উইং

বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার জানান, গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দেশের ব্যবসায়ী সমাজ নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই ঢাকা-করাচি সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হতে পারে।

পাকিস্তানি হাইকমিশনার জানান, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে চিকিৎসাবিজ্ঞান, ন্যানো টেকনোলজি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে পড়ার বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

লিভার ও কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য বাংলাদেশি রোগীদের পাকিস্তানে যাওয়ার হার বাড়ছে উল্লেখ করে ইমরান হায়দার বলেন, পাকিস্তান এ-সংক্রান্ত বিশেষায়িত চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা প্রদানের সুযোগ দিতে প্রস্তুত।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান যোগাযোগকে স্বাগত জানান। তিনি সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক এবং সরাসরি জনযোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

হাইকমিশনার ইমরান হায়দারের দায়িত্ব পালনকালে দুই দেশের মধ্যে যৌথ বিনিয়োগের নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-বিষয়ক (এসডিজি) সমন্বয়কারী ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত