Ajker Patrika

২০২১ সাল যাঁদের কেড়ে নিল

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৪২
২০২১ সাল যাঁদের কেড়ে নিল

চলে যাওয়া বছরটিতে আমরা হারিয়েছি অনেক বরেণ্য ব্যক্তিকে। এর মধ্যে অভিশপ্ত কোভিডও কেড়ে নিয়েছে অনেক প্রাণ।

বছরের শুরুতেই ৩ জানুয়ারি আমরা হারিয়েছি একুশে পদকজয়ী লেখিকা রাবেয়া খাতুনকে। অনেকগুলো উপন্যাস লিখেছিলেন তিনি। কয়েকটি উপন্যাস থেকে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ‘মেঘের পর মেঘ’, ‘মধুমতী’র নাম বলা যেতে পারে। ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর বর্তমান মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে জন্মেছিলেন তিনি। 

 এর পরের আঘাত আসে এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের শক্তিমান এই অভিনেতাও পেয়েছিলেন একুশে পদক। ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমণি’, ‘অশিক্ষিত’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘গেরিলা’ তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের কয়েকটি। জন্মেছিলেন ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী জেলায়। 

প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মুকসুদ চলে গেলেন ২৩ ফেব্রুয়ারি। ভালো গবেষক ছিলেন তিনি। মওলানা ভাসানীকে নিয়ে বই লিখেছেন। লিখেছেন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। তাঁর ভাষা ছিল সরল, কিন্তু গভীর তথ্যসমৃদ্ধ। মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর তাঁর জন্ম হয়। 

মার্চ মাসও ছিল বিয়োগের বেদনায় ভরা। ৪ মার্চ মারা যান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম)। ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম হওয়া এইচ টি ইমাম ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব। একই মাসের ৮ তারিখ চলে যান বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা শাহীন আলম। আর ১৬ মার্চ মারা যান বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে একজন সুলেখক হিসেবে পরিচিত মওদুদ আহমদের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। 

 এপ্রিলের এমনিতেই বদনাম ছিল, আছেও। ইংরেজ কবি টি এস এলিয়ট তো সেই কবেই এপ্রিলকে ‘নিষ্ঠুরতম মাস’ আখ্যা দিয়েছেন। সে কথা রাখতেই যেন এ বছরের এপ্রিল একের পর এক আঘাত হানল। এপ্রিল মাসের ৭ তারিখ এসেছিল দুঃসংবাদ নিয়ে। এদিন লোকসংগীতশিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী মারা যান। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী। ১৯৪৬ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। এই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ১০ এপ্রিল মারা যান সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান শাহরিয়ার। সুনামগঞ্জ জেলায় ১৯৪৬ সালের ২৫ এপ্রিল জন্ম হয়েছিল তাঁর। এর ঠিক পরদিনই চলে যান মিতা হক। 

 রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক মারা যান ১১ এপ্রিল। কিডনির রোগে দীর্ঘদিন ভুগছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে ঢাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই শিল্পী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনাই তাঁকে একেবারে দুর্বল করে ফেলেছিল। এপ্রিলের বাতাসকে ভারী করে তোলার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এতেও যেন সে নিজেকে ‘নিষ্ঠুরতম’ প্রমাণ করতে পারছিল না। কয়েক দিন বিরতি দিয়ে আবার আঘাত। এবার শামসুজ্জামান খান। ১৪ এপ্রিল বাংলা একাডেমির এই সাবেক মহাপরিচালক চলে যান। ১৯৪০ সালের ২৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করা এই অধ্যাপক ও লোকসংস্কৃতি গবেষক নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ছাপ রেখে গেছেন বহু লেখায়। এই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই চলে যান ‘মিষ্টি মেয়ে’ কবরী। ১৭ এপ্রিল চলে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্রশিল্পী কবরী। ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জন্মানো সারাহ বেগম কবরী ছিলেন এই বাংলার চলচ্চিত্রের একজন গুণী শিল্পী। শক্তিমান এই শিল্পীর ঝুলিতে আছে ‘সোয়ে নদিয়া জাগে পানি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘কাচ কাটা হীরে’, ‘সুজনসখী’, ‘সারেং বউ’-এর মতো ছবি। পাশাপাশি ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন কাড়ে। রাজনীতিও করেছেন, করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালনা। রাজ্জাক-কবরী জুটি একসময় চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জুড়িয়ে দিয়েছিল। 

 শামসুজ্জামান খানের মেয়াদ ফুরালে বাংলা একাডেমির দায়িত্ব পেয়েছিলেন কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। কিন্তু বেশি দিন সেই দায়িত্ব পালন করতে পারলেন না। ২৪ মে মারা যান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। ফরিদপুরে ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মেছিলেন তিনি। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘দাও বৃক্ষ দাও দিন’, ‘মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি’, ‘হাওয়া কলে জোড়াগাড়ি’, ‘নোনা জলে বুনো সংসার’, ‘স্বপ্নহীনতার পক্ষে’, ‘আমার একজনই বন্ধু’, ‘পোশাক বদলের পালা’, ‘প্রেমের কবিতা’, ‘কৃষ্ণ কৃপাণ ও অন্যান্য কবিতা’, ছিন্নভিন্ন অপরাহ্ণ’, ‘জয় বাংলা বলো রে ভাই’, ‘সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না’ উল্লেখযোগ্য। 

মারা যান অর্থনীতিবিদ ও সমাজসেবক শাহ আব্দুল হান্নান। ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদীতে জন্ম নেওয়া এই অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, দুর্নীতি দমন ব্যুরোর (বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশন) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৪ জুলাই মারা যান গীতিকার ও ছড়াকার ফজল-এ-খোদা। তাঁর লেখা গান ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’ খুবই জনপ্রিয়। তবে যে গানটি লিখে তিনি বাংলাদেশকে ঋণী করে গেছেন, সেটি হলো ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’। শিশুদের জন্য তাঁর লেখা ছড়াগুলো অনবদ্য। ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। 

 ২৩ জুলাই চলে যান গণসংগীতশিল্পী, শব্দসৈনিক ফকির আলমগীর। বাংলাদেশে পপসংগীতের পুরোধাব্যক্তিত্বদের একজন তিনি। আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফিরোজ সাঁই ও পিলু মমতাজকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল সেই সময়ের তারুণ্যের গান। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর মাধ্যমে তিনি গণসংগীতে অবদান রাখেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী। ‘ও সখিনা গেছস কিনা ভুইল্যা আমারে’ গানটি তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে। এ ছাড়া ‘মায়ের এক ধার দুধের দাম’, ‘নাম তার ছিল জন হেনরি’ গানগুলোর কথা মানুষ মনে রাখবে। ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। 

কথাসাহিত্যিক ও লেখক বুলবুল চৌধুরী মারা যান ২৮ আগস্ট। ১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্ম নেওয়া নিভৃতচারী শক্তিমান এই সাহিত্যিক ২০১১ সালে পান বাংলা একাডেমি পুরস্কার। আর যে বছর পেলেন একুশে পদক, সে বছরই মারা গেলেন। 

অভিনেতা, লেখক, নাট্যকার ও শিক্ষক ইনামুল হক মারা যান ১১ অক্টোবর। বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের এই পুরোধাব্যক্তিত্ব ছিলেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও নাটকের জন্যই তিনি জনপ্রিয়তা পান। মঞ্চ, টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। ১৯৪৩ সালের ২৯ মে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। 

 বছরের শেষ দিকে চলে যান প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। রাজশাহীতে নিজের বাসায় ১৫ নভেম্বর মারা যান তিনি। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই লেখকের লেখা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘তৃষ্ণা’, ‘উত্তরবসন্তে’, ‘বিমর্ষ রাত্রি, প্রথম প্রহর’, ‘পরবাসী’, ‘আমৃত্যু’, ‘আজীবন’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘খাঁচা’, ‘ভূষণের একদিন’, ‘ফেরা’, ‘মন তার শঙ্খিনী’, ‘মাটির তলার মাটি’, ‘শোণিত সেতু’, ‘ঘরগেরস্থি’, ‘সরল হিংসা’, ‘খনন’, ‘সমুখে শান্তির পারাবার’, ‘অচিন পাখি’, ‘মা-মেয়ের সংসার’, ‘বিধবাদের কথা’, ‘সারা দুপুর’ ও ‘কেউ আসেনি’। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। 

মৃত্যুর এ সারিতে নাম লেখান একুশে পদকপ্রাপ্ত নজরুল গবেষক, বাংলা একাডেমির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। দিনটি ছিল ৩০ নভেম্বর। ভাষা আন্দোলনে তাঁর তোলা ছবিগুলো ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। তাঁর রয়েছে অনেকগুলো গবেষণাগ্রন্থ। ভাষা আন্দোলন, কবি নজরুল ইসলাম, ভাষাতত্ত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর লেখা গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে। ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্ম হয়েছিল তাঁর। 

 ডিসেম্বরের ২০ তারিখে মারা যান একাত্তরের রণাঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখা শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী। ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী’, ‘চিঠি জাহানারা ইমামকে’, ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বই। তিনি ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। এখানেই শেষ নয়। বড়দিনের দিন চলে যান জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। ২৫ ডিসেম্বর মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সাংবাদিক নেতা। 

সব মিলিয়ে ২০২১ সালে বাংলাদেশ একের পর এক কৃতিকে হারিয়েছে। হ্যাঁ, করোনায় সারা বছরই নানা শ্রেণি-পেশার নানা বয়সী মানুষ মারা গেছেন। এই প্রতিটি মৃত্যুই বেদনাদায়ক। তারপরও কিছু মৃত্যু থাকে, যা জাতীয় জীবনে একটা শূন্যতার সৃষ্টি করে। এ বছর বিভিন্ন অঙ্গনের এমন বহু মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, যাঁদের অভাব বোধ হবে অনেক দিন। যাঁদের এই হারিয়ে যাওয়ার কারণেও ২০২১ সালকে মানুষ মনে রাখবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদানে নিহত ছয় সেনাসদস্যের মরদেহ ঢাকায়, সেনানিবাসে জানাজা কাল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ০১
এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে নিহতদের মরদেহ শনিবার দেশে পৌঁছায়। ছবি: আইএসপিআর
এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে নিহতদের মরদেহ শনিবার দেশে পৌঁছায়। ছবি: আইএসপিআর

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্যের মরদেহ রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছে।

এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে আজ শনিবার নিহতদের মরদেহ দেশে পৌঁছায় বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম বিমানবন্দরে শান্তিরক্ষীদের মৃতদেহ গ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশে জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি, আবেইতে মোতায়েনরত জাতিসংঘ মিশন ইউনিসফার ফোর্স কমান্ডারের প্রতিনিধি, চিফ কমিউনিটি লিয়াজোঁ অফিসারসহ অন্যরা।

সেনাবাহিনীর সদস্যদের মরদেহ নেওয়ার সময় সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন এবং সব সামরিক ব্যক্তি শাহাদাতবরণকারীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে স্যালুট দেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামীকাল রোববার ঢাকা সেনানিবাসে কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে নিহতদের মরদেহ নিজ নিজ ঠিকানায় হেলিকপ্টারে পাঠিয়ে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

সুদানের আবেই এলাকায় ১৩ ডিসেম্বর ড্রোন হামলায় ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হওয়ার পাশাপাশি নয়জন আহত হন; যাঁদের মধ্যে আটজন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বর্তমানে সবাই শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানায় আইএসপিআর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতীয় কবির পাশে সমাহিত ওসমান হাদি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৫
শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল ৪টার দিকে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

এর আগে বেলা ৩টা ২ মিনিটে হাদির মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলে পৌঁছায়। হাদির মরদেহ কবরে শায়িত করা হয় ৩টা ২০মিনিটের দিকে। সমাধিস্থলে নিয়ে আসা হয় ৩ টা ২ মিনিটে। দাফন শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন ওসমান হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।

আজ বেলা আড়াইটার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে হাদির জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় ইমামতি করেন ওসমান হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নেয় লাখো মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নেয় লাখো মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। তাঁর মরদেহ গতকাল সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনা হয়। রাখা হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের মর্গে। শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতি এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৩
মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকার
মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকার

মুক্তিযুদ্ধের উপসেনাপতি (ডেপুটি চিফ অব স্টাফ), স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমানবাহিনীর প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকারের (এ কে খন্দকার) মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, এ কে খন্দকার বীর উত্তম ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় সৈনিক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বগুণের পরিচয় দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তাঁর কৌশলগত সিদ্ধান্ত, সাংগঠনিক দক্ষতা ও অটল দেশপ্রেম স্বাধীনতার সংগ্রামকে আরও সুসংহত করেছিল।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীনতার পর এ কে খন্দকার বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং দেশের প্রথম বিমানবাহিনীর প্রধান হিসেবে এই বাহিনীকে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে অসামান্য অবদান রাখেন।

তিনি বলেন, এ কে খন্দকার রণাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে গ্রন্থ রচনা করে পতিত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ব্যাপক রোষানলে পড়েন। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরাই ছিল পতিত শাসনের দৃষ্টিতে তাঁর অপরাধ।

ড. ইউনূস বলেন, এ কে খন্দকার ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা মুক্তিযোদ্ধা, সৎ ও সাহসী এবং আদর্শনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক। তাঁর কর্ম, চিন্তা ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে একজন বীর সন্তানকে হারাল দেশ। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, সহযোদ্ধা ও গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওয়াদা করতে এসেছি—যা বলে গেছ, তা যেন পূরণ করতে পারি: হাদির জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৪
শহীদ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবেগঘন বক্তব্য দেন। ছবি: প্রেস উইং
শহীদ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবেগঘন বক্তব্য দেন। ছবি: প্রেস উইং

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো জনতার অংশগ্রহণে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন ওসমান হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।

শহীদ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবেগঘন বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘প্রিয় ওসমান হাদি, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছ এবং বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তুমি সব বাংলাদেশির বুকের মধ্যে থাকবে।’

ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আজকে পথে ঢেউয়ের মতো লোক আসছে, সারা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা তোমার কাছে ওয়াদা করতে এসেছি—তুমি যা বলে গেছ, আমরা যেন তা পূরণ করতে পারি। সেই ওয়াদা শুধু আমরা নয়, পুরুষানুক্রমে বাংলাদেশের সব মানুষ পূরণ করবে। তোমার মানবপ্রেম, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আমরা প্রাণে গ্রহণ করছি।’

জানাজায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। হাদিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ঢলে সংসদ ভবন এলাকা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশিরাও ভার্চ্যুয়ালি এই মুহূর্তের খবরাখবর রাখছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী জানাজা দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা আড়াইটায় শুরু হয়। জানাজা উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ১০০০টি বডি ওর্ন ক্যামেরা ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে পুরো এলাকা সুরক্ষিত রাখা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, জানাজায় অংশগ্রহণকারীরা কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু ছাড়াই অংশগ্রহণ করেন এবং সংসদ ভবন এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধির পাশে ওসমান হাদিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে মারা যান ওসমান হাদি। তাঁর মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত