Ajker Patrika

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ছড়াছড়ি ঢাকা ও চট্টগ্রামে, সিলেট হারাল বেশি

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭: ১৭
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ছড়াছড়ি ঢাকা ও চট্টগ্রামে, সিলেট হারাল বেশি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভা ৩৭ সদস্যের নাম গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা ছাড়া নতুন সরকারে ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাচ্ছেন। 

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে তাঁরা শপথ নেবেন। তাঁদের শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন নতুন মন্ত্রীদের। 

নতুন মন্ত্রিসভায় রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। পাশাপাশি মন্ত্রিসভায় বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল ও বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলেরও প্রাধান্য রয়েছে। 

বিভাগের হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রাধান্য বেশি। ঢাকা জেলায় চারজন পূর্ণমন্ত্রীর সঙ্গে আছে দুজন প্রতিমন্ত্রী। এর বাইরে এই বিভাগে গোপালগঞ্জ দুটি, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গাজীপুর, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ একটিসহ মোট ১০টি পূর্ণমন্ত্রী পেয়েছে।

প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যেও ঢাকা বিভাগের প্রাধান্য বেশি। ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে ঢাকা ও গাজীপুরের আছেন দুজন এবং টাঙ্গাইলে একজন মিলে ঢাকা বিভাগেরই আছেন ৫ জন।

চট্টগ্রাম বিভাগে বৃহত্তর কুমিল্লায় চারটি, নোয়াখালীতে একটি এবং চট্টগ্রাম জেলায় দুটিসহ মন্ত্রিত্ব মিলেছে সাতটি। বিদায়ী সরকারে সিলেটের গুরুত্ব এবার অনেকে কম। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের একই অবস্থা। এর বাইরে রংপুর, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ দুটি করে মন্ত্রিত্ব পেয়েছে। বরিশাল বিভাগ একটিও পায়নি।

উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর ও নাটোর, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বরিশাল ও পটুয়াখালীতে একজন করে প্রতিমন্ত্রী এবং সিলেট ও খাগড়াছড়িতে আছেন একজন করে। 

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ছড়াছড়ি ঢাকায়
রাজধানীর ১৬টি আসনের মধ্যে তিনটির সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), আসাদুজ্জামান খান (ঢাকা-১২) ও জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩) পূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন। 

রাজধানীর সংসদ সদস্যদের মধ্যে সদ্য বিদায়ী সরকারের একমাত্র মন্ত্রী হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন আসাদুজ্জামান। সম্ভবত নিজের পোর্টফোলিও তিনি ধরে রাখবেন। 

সাবের হোসেন আওয়ামী লীগে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, এর আগে উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এবার তাঁকে মন্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা। 

পুরান ঢাকার টিকাটুলিতে বেড়ে ওঠা ইয়াফেস ওসমানের টেকনোক্র্যাট হিসেবে মন্ত্রিসভায় ফিরছেন। গত মেয়াদের আগে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সেই হিসাবে ঢাকা শহর থেকে মন্ত্রী হচ্ছেন চারজন।

এ ছাড়া দুটি প্রতিমন্ত্রীও পাচ্ছে রাজধানী। ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবার মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে প্রতিমন্ত্রী করছেন শেখ হাসিনা। বিদায়ী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পোর্টফোলিও জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ঢাকা-৩ আসনের নসরুল হামিদ এবারও থাকছেন। 

গাজীপুর-১ আসনের এমপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবারও পদ ধরে রেখেছেন। নতুন দুজন প্রতিমন্ত্রী পেয়েছে গাজীপুর। তাঁরা হলেন গাজীপুর-৩ আসনের রুমানা আলী ও গাজীপুর-৪ আসনের সিমিন হোসেন রিমি। 

বৃহত্তর ঢাকার মধ্যে মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের কেউ মন্ত্রিত্ব পাননি। নরসিংদী-৪ আসনের নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন নতুন সরকারেও মন্ত্রিত্ব ধরে রেখেছেন।

ঢাকা বিভাগে কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য বর্তমানে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় এ জেলার কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। 

টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে টাঙ্গাইল-৭ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটো প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর বাবা মকবুল হোসেন ১৯৯৬ সালে ঢাকা-৯ (সে সময়ের ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। 

প্রাধান্য বৃহত্তর ফরিদপুরের
নতুন সরকারে বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল সবচেয়ে বেশি মন্ত্রী পেতে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য। গোপালগঞ্জ-১ আসনের ফারুক খান মন্ত্রিত্ব ফিরে পেয়েছেন। 

এ ছাড়া ফরিদপুর-১ আসনের মো. আব্দুর রহমান এবং রাজবাড়ী-২ আসনের জিল্লুল হাকিম মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। বিদায়ী সরকারে শেখ হাসিনা একাই এই অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেন। 

বৃহত্তর কুমিল্লাও পিছিয়ে নেই, চট্টগ্রাম নগর পেল মন্ত্রী
বিদায়ী সরকারে বৃহত্তর কুমিল্লা থেকে চার মন্ত্রী নতুন সরকারেও থাকছে। তবে কুমিল্লা থেকে একটি কমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি যোগ হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনিসুল হক ও র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কুমিল্লার তাজুল ইসলাম ও চাঁদপুরের দীপু মনি আছেন।

কুমিল্লা-৯ আসনের বর্তমানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা তাজুল ইসলাম পদ ধরে রেখেছেন। চাঁদপুর-৩ আসনের দীপু মনিও মন্ত্রিত্ব ধরে রেখেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনিসুল হকও তাই। এবার প্রথমবারের মতো মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। 

বিদায়ী সরকারে চট্টগ্রাম মহানগরে কোনো পূর্ণমন্ত্রী ছিল না। চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। তিনি এক লাফে হয়ে যাচ্ছেন মন্ত্রী।

চট্টগ্রাম-৭ আসনের হাছান মাহমুদ গত পাঁচ বছরে সামলেছেন তথ্য মন্ত্রণালয়। আবারও তিনি মন্ত্রিত্ব পেতে যাচ্ছেন। এবার নতুন মন্ত্রিসভায় ঢুকছেন খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। তবে পূর্ণমন্ত্রী নন, তিনি হতে যাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী। 

বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের সংসদ সদস্য হিসেবে গত তিন মেয়াদে একমাত্র মন্ত্রী ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নোয়াখালী-৫ আসনের এই এমপি এবারও আছেন। 

এ অঞ্চলে এবারও তিনি একমাত্র মন্ত্রী। এই জেলার ছয়টি আসনের অন্য কাউকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়নি। লক্ষ্মীপুর ও ফেনী থেকেও কাউকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়নি। 

মন্ত্রিসভায় উত্তরের মুখ কমল
বিদায়ী সরকারে উত্তরবঙ্গ তথা রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের চারজন মন্ত্রী এবং তিনজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। নতুন মন্ত্রিসভায় দুই বিভাগ মিলিয়ে মন্ত্রী আছেন দুজন। প্রতিমন্ত্রী আছেন কেবল একজন। 

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর উত্তরবঙ্গের চার মন্ত্রীর মধ্যে শুধু নওগাঁর সাধন চন্দ্র মজুমদার (খাদ্যমন্ত্রী) টিকে আছেন। তাঁর সঙ্গে এবার যোগ দিচ্ছেন নবম সংসদ নির্বাচনের পরের মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী (দিনাজপুর-৪)।

তিন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও জুনাইদ আহমেদ পলক নতুন মন্ত্রিসভায় আছেন। এবার রংপুর জেলায় কেউ মন্ত্রিত্ব পাননি। বগুড়া ও জয়পুরহাটেও মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নেই কোনো। 

রাজশাহী বিভাগে কেবল নওগাঁ একটি মন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রীর পদ পেয়েছে। রাজশাহী জেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জেও কারও ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েনি। বৃহত্তর পাবনাও কোনো মন্ত্রিত্ব পেল না। 

ময়মনসিংহ ফিরে পেল মন্ত্রী
বিদায়ী সরকারে এ বিভাগের চার জেলার সংসদ সদস্যদের মধ্যে কোনো মন্ত্রী ছিল না। তবে টেকনোক্র্যাট হিসেবে নেত্রকোনার মোস্তাফা জব্বার ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। বিদায়ী সরকারে ময়মনসিংহের দুজন, জামালপুরের দুজন এবং ময়মনসিংহের একজন ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। 

তবে এবার এই বিভাগের দুই এমপি মন্ত্রী হচ্ছেন। তাঁরা হলেন ময়মনসিংহ-৯ আসন থেকে নির্বাচিত আব্দুস সালাম এবং জামালপুর-২ আসনের মো. ফরিদুল হক খান। বিদায়ী সরকারে ফরিদুল ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। এবার এ বিভাগে কোনো প্রতিমন্ত্রী নেই। 

মন্ত্রী পেল খুলনা বিভাগ
বিদায়ী সরকারে গোটা বিভাগের ১০টি জেলায় কাউকে পূর্ণ মন্ত্রিত্ব দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবার দুজন মন্ত্রী পেতে যাচ্ছে বিভাগটি। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রথমে প্রতিমন্ত্রী ও পরে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে সরকারের পরের মেয়াদে মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি তিনি। 

মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন গত পাঁচ বছর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তিনি পুরো মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। 

চার মন্ত্রী হারিয়ে এক মন্ত্রী পেল সিলেট
সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্যরা টানা চারটি সরকারে পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন। এবার ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বাদ পড়েছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী সিলেট-৪ আসনের ইমরান আহমেদ বাদ পড়েছেন। 

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মান্নান ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। জোর গুঞ্জন ছিল, তিনি এবার অর্থমন্ত্রী হতে পারেন। কিন্তু দেখা গেল তিনি বাদই পড়ে গেছেন। আর মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন বিদায়ী সরকারে সামলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। তাকেও রাখা হয়নি নতুন সরকারে। 

এই বিভাগ থেকে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হচ্ছেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ। আর সিলেটের বিশ্বনাথের সন্তান চিকিৎসক সামন্তলাল সেন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হচ্ছেন। পৈতৃক বাড়ি সিলেট হলেও তাঁর পরিচিতি ঢাকা শহর ঘিরেই। সেই হিসেবে সিলেটবাসী একটি মন্ত্রী পাওয়ার কথা ভাবতেও পারে।

হবিগঞ্জ-৪ আসনে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের কাছে হারার পর দুবারের সংসদ সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়েছেন। এবার সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত শফিকুর রহমান চৌধুরী হচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী। 

বরিশাল বিভাগ এবারও মন্ত্রীশূন্য
বিদায়ী সরকারের মতো এবারও বরিশাল বিভাগের কাউকে মন্ত্রী করা হচ্ছে না। তবে বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক নতুন সরকারেও প্রতিমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। 

আর প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় ঢুকতে যাচ্ছেন পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিবুর রহমান। এই বিভাগের বাকি জেলা, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা থেকে কাউকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়নি। 

বিদায়ী সরকারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় বরিশাল অঞ্চল থেকে বেশ কয়েকজন পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মির্জা ফখরুলের জন্য মনটা কাল থেকে খুব বিষণ্ন হয়ে আছে: প্রেস সচিব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রেস সচিব শফিকুল আলম । ছবি: সংগৃহীত
প্রেস সচিব শফিকুল আলম । ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, ‘গতকাল থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্য আমার মনটা খুব বিষণ্ন হয়ে আছে। অনেক বছর ধরে তিনি আমার অন্যতম রাজনৈতিক আদর্শ। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, তিনি কতটা কষ্ট সহ্য করেছেন। কীভাবে দলের কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঠিক নিজের সন্তান বা নিকটাত্মীয়ের মতো।’

রাজধানীর জিয়া উদ্যানে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে আজ বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দাফন শেষে ফেসবুকে রাত ৮টার দিকে শফিকুল আলম এই পোস্ট দেন।

পোস্টে প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘শহীদ বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর থেকে আমার মনে হচ্ছে তিনি (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) ভীষণ একা হয়ে পড়েছেন। একত্রে এই দুই নেতা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম এক সম্মানিত ও নির্ভরযোগ্য অংশীদারিত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সহমর্মিতা এবং নীরবে ধৈর্য ধরার ক্ষমতার জন্য তাঁরা দুজনেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁরা খুব কমই মেজাজ হারাতেন। অহংকার তাঁদের ছুঁতে পারতো না বললেই চলে। কঠিন সময়ে তাঁরা অত্যন্ত যত্ন এবং সংযমের সাথে জনগণকে পথ দেখিয়েছেন।’

বিএনপির মহাসচিবের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে শফিকুল আলম আরও লেখেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মির্জা ফখরুলের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। তিনি এখন আর সেই চেনা মহাসচিব নেই, যিনি একসময় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চষে বেড়াতেন। খালেদা জিয়া যখন তাঁকে মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেন, তখন তিনি বিএনপির একজন মধ্যম সারির নেতা ছিলেন এবং তাঁর সেন্টার-লেফট আদর্শিক ঝোঁকের জন্য পরিচিত ছিলেন। তবুও সংকটের মুহূর্তে তিনিই সবচেয়ে দক্ষ কাণ্ডারি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। শহীদ বেগম খালেদা জিয়ার পাশে থেকে তিনি দলটিকে সুসংগঠিত ও অটল রেখেছিলেন। কিন্তু জুলাই মাস যখন এলো, তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায় ছিলেন এবং মির্জা ফখরুল নিজেও তাঁর শরীরের শক্তি অনেকটা হারিয়ে ফেলেছেন। এ এক যুগের অবসান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান আর নেই

বাসস, ঢাকা  
মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। ফাইল ছবি
মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান। ফাইল ছবি

টাঙ্গাইল-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

আজ বুধবার বেলা ৩টায় রাজধানীর নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু জানান, রাজধানীতে নিজ বাসায় বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের মৃত্যু হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাদ জোহর টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

মাহমুদুল হাসানের মৃত্যুতে টাঙ্গাইলে বিএনপির নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু ও প্রচার সম্পাদক ও টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

শোকবার্তায় তাঁরা বলেন, মাহমুদুল হাসান আজীবন আদর্শ টাঙ্গাইল গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন একজন সমাজসেবক, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল মানুষ। শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তাঁর মৃত্যুতে টাঙ্গাইল সদর একজন অভিভাবক হারাল।

সেই সঙ্গে তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

মাহমুদুল হাসান ১৯৩৬ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাকোরকোল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি এরশাদের শাসনামলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক জীবনে ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন এবং ২০১২ সালের উপনির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালে গণপিটুনি বেড়ে দ্বিগুণ: এমএসএফ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
২০২৫ সালে গণপিটুনি বেড়ে দ্বিগুণ: এমএসএফ

সদ্য সমাপ্ত ২০২৫ সালে সারা দেশে অন্তত ৪২৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। ২০২৪ সালে গণপিটুনির ১৬৯টি ঘটনায় নিহত হয়েছিল ১৪৬ জন এবং আহত ছিল ১২৬ জন। আর ২০২৫ সালে গণপিটুনিতে ১৬৬ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৪৬০ জন। ২২০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গণপিটুনির ঘটনায় আহত ৪৬০ জনের মধ্যে ৫৫ জন কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দল আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ সদস্য।

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালে গণপিটুনি বা মব সন্ত্রাস আশঙ্কাজনক বেড়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রশ্নাতীতভাবে এগিয়ে রয়েছে। প্রচলিত আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনির ঘটনাগুলোকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করা হয়। নাগরিকের ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার মূল উৎস এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মব সহিংসতা। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীদের পাওয়ামাত্র গণপিটুনি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার লক্ষণীয় প্রভাব থাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৯৯টি ঘটনায় শিকার হয়েছে ৫ হাজার ৬০৪ জন। তাদের মধ্যে ৮৬ জন নিহত ও ৫ হাজার ৫১৮ জন আহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৫ জন বিএনপি, আটজন আওয়ামী লীগ, তিনজন জামায়াতে ইসলামী এবং ১০ জন বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের সাধারণ নাগরিক, যাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। ২০২৫ সালে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর দুষ্কৃতকারীদের হামলার ১৬৯টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪৭ জন নিহত ও ১৮৭ জন আহত হয়েছেন।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সরকার পতন ও গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ৬৭টি মামলা হয়েছে। মামলায় ৭ হাজার ৭৮০ জনকে সুনির্দিষ্টভাবে আসামি করা হয়েছে এবং ১১ হাজার ১৭৯ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলাগুলোর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ২৯টি মামলা হয়েছে। সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পতন-সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৩ হাজার ৬৯৫ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’—এর আওতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ২২ হাজার ২৮৪ জন। গ্রেপ্তার ১১ হাজার ৩১৩ জন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় লোকজন।

এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের কমপক্ষে ১৯টি ঘটনা ঘটেছে। সংঘটিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছেন। এ বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কারা হেফাজতে ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে পালাতে গিয়ে আট যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ৬৪১ জন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হত্যা, হামলা, হুমকি, আইনি হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০২৫ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলাসহ মোট ২৫টি মামলায় ৫৫ জন অভিযুক্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজায় তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির শীর্ষ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় উপস্থিত হয়ে তাঁর শোকাহত জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সান্ত্বনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জানাজা শেষে প্রধান উপদেষ্টা তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন এবং এই কঠিন সময়ে তাঁর ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করে বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, কূটনৈতিক মহল এবং সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশ নেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত