Ajker Patrika

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ছড়াছড়ি ঢাকা ও চট্টগ্রামে, সিলেট হারাল বেশি

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭: ১৭
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ছড়াছড়ি ঢাকা ও চট্টগ্রামে, সিলেট হারাল বেশি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভা ৩৭ সদস্যের নাম গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা ছাড়া নতুন সরকারে ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাচ্ছেন। 

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে তাঁরা শপথ নেবেন। তাঁদের শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন নতুন মন্ত্রীদের। 

নতুন মন্ত্রিসভায় রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। পাশাপাশি মন্ত্রিসভায় বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল ও বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলেরও প্রাধান্য রয়েছে। 

বিভাগের হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রাধান্য বেশি। ঢাকা জেলায় চারজন পূর্ণমন্ত্রীর সঙ্গে আছে দুজন প্রতিমন্ত্রী। এর বাইরে এই বিভাগে গোপালগঞ্জ দুটি, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গাজীপুর, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ একটিসহ মোট ১০টি পূর্ণমন্ত্রী পেয়েছে।

প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যেও ঢাকা বিভাগের প্রাধান্য বেশি। ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে ঢাকা ও গাজীপুরের আছেন দুজন এবং টাঙ্গাইলে একজন মিলে ঢাকা বিভাগেরই আছেন ৫ জন।

চট্টগ্রাম বিভাগে বৃহত্তর কুমিল্লায় চারটি, নোয়াখালীতে একটি এবং চট্টগ্রাম জেলায় দুটিসহ মন্ত্রিত্ব মিলেছে সাতটি। বিদায়ী সরকারে সিলেটের গুরুত্ব এবার অনেকে কম। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের একই অবস্থা। এর বাইরে রংপুর, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ দুটি করে মন্ত্রিত্ব পেয়েছে। বরিশাল বিভাগ একটিও পায়নি।

উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর ও নাটোর, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বরিশাল ও পটুয়াখালীতে একজন করে প্রতিমন্ত্রী এবং সিলেট ও খাগড়াছড়িতে আছেন একজন করে। 

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ছড়াছড়ি ঢাকায়
রাজধানীর ১৬টি আসনের মধ্যে তিনটির সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), আসাদুজ্জামান খান (ঢাকা-১২) ও জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩) পূর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন। 

রাজধানীর সংসদ সদস্যদের মধ্যে সদ্য বিদায়ী সরকারের একমাত্র মন্ত্রী হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন আসাদুজ্জামান। সম্ভবত নিজের পোর্টফোলিও তিনি ধরে রাখবেন। 

সাবের হোসেন আওয়ামী লীগে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, এর আগে উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এবার তাঁকে মন্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা। 

পুরান ঢাকার টিকাটুলিতে বেড়ে ওঠা ইয়াফেস ওসমানের টেকনোক্র্যাট হিসেবে মন্ত্রিসভায় ফিরছেন। গত মেয়াদের আগে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সেই হিসাবে ঢাকা শহর থেকে মন্ত্রী হচ্ছেন চারজন।

এ ছাড়া দুটি প্রতিমন্ত্রীও পাচ্ছে রাজধানী। ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবার মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে প্রতিমন্ত্রী করছেন শেখ হাসিনা। বিদায়ী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পোর্টফোলিও জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ঢাকা-৩ আসনের নসরুল হামিদ এবারও থাকছেন। 

গাজীপুর-১ আসনের এমপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবারও পদ ধরে রেখেছেন। নতুন দুজন প্রতিমন্ত্রী পেয়েছে গাজীপুর। তাঁরা হলেন গাজীপুর-৩ আসনের রুমানা আলী ও গাজীপুর-৪ আসনের সিমিন হোসেন রিমি। 

বৃহত্তর ঢাকার মধ্যে মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের কেউ মন্ত্রিত্ব পাননি। নরসিংদী-৪ আসনের নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন নতুন সরকারেও মন্ত্রিত্ব ধরে রেখেছেন।

ঢাকা বিভাগে কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য বর্তমানে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় এ জেলার কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। 

টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে টাঙ্গাইল-৭ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটো প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর বাবা মকবুল হোসেন ১৯৯৬ সালে ঢাকা-৯ (সে সময়ের ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। 

প্রাধান্য বৃহত্তর ফরিদপুরের
নতুন সরকারে বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল সবচেয়ে বেশি মন্ত্রী পেতে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য। গোপালগঞ্জ-১ আসনের ফারুক খান মন্ত্রিত্ব ফিরে পেয়েছেন। 

এ ছাড়া ফরিদপুর-১ আসনের মো. আব্দুর রহমান এবং রাজবাড়ী-২ আসনের জিল্লুল হাকিম মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। বিদায়ী সরকারে শেখ হাসিনা একাই এই অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেন। 

বৃহত্তর কুমিল্লাও পিছিয়ে নেই, চট্টগ্রাম নগর পেল মন্ত্রী
বিদায়ী সরকারে বৃহত্তর কুমিল্লা থেকে চার মন্ত্রী নতুন সরকারেও থাকছে। তবে কুমিল্লা থেকে একটি কমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি যোগ হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনিসুল হক ও র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কুমিল্লার তাজুল ইসলাম ও চাঁদপুরের দীপু মনি আছেন।

কুমিল্লা-৯ আসনের বর্তমানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা তাজুল ইসলাম পদ ধরে রেখেছেন। চাঁদপুর-৩ আসনের দীপু মনিও মন্ত্রিত্ব ধরে রেখেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনিসুল হকও তাই। এবার প্রথমবারের মতো মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। 

বিদায়ী সরকারে চট্টগ্রাম মহানগরে কোনো পূর্ণমন্ত্রী ছিল না। চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। তিনি এক লাফে হয়ে যাচ্ছেন মন্ত্রী।

চট্টগ্রাম-৭ আসনের হাছান মাহমুদ গত পাঁচ বছরে সামলেছেন তথ্য মন্ত্রণালয়। আবারও তিনি মন্ত্রিত্ব পেতে যাচ্ছেন। এবার নতুন মন্ত্রিসভায় ঢুকছেন খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। তবে পূর্ণমন্ত্রী নন, তিনি হতে যাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী। 

বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের সংসদ সদস্য হিসেবে গত তিন মেয়াদে একমাত্র মন্ত্রী ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নোয়াখালী-৫ আসনের এই এমপি এবারও আছেন। 

এ অঞ্চলে এবারও তিনি একমাত্র মন্ত্রী। এই জেলার ছয়টি আসনের অন্য কাউকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়নি। লক্ষ্মীপুর ও ফেনী থেকেও কাউকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়নি। 

মন্ত্রিসভায় উত্তরের মুখ কমল
বিদায়ী সরকারে উত্তরবঙ্গ তথা রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের চারজন মন্ত্রী এবং তিনজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। নতুন মন্ত্রিসভায় দুই বিভাগ মিলিয়ে মন্ত্রী আছেন দুজন। প্রতিমন্ত্রী আছেন কেবল একজন। 

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর উত্তরবঙ্গের চার মন্ত্রীর মধ্যে শুধু নওগাঁর সাধন চন্দ্র মজুমদার (খাদ্যমন্ত্রী) টিকে আছেন। তাঁর সঙ্গে এবার যোগ দিচ্ছেন নবম সংসদ নির্বাচনের পরের মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী (দিনাজপুর-৪)।

তিন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও জুনাইদ আহমেদ পলক নতুন মন্ত্রিসভায় আছেন। এবার রংপুর জেলায় কেউ মন্ত্রিত্ব পাননি। বগুড়া ও জয়পুরহাটেও মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নেই কোনো। 

রাজশাহী বিভাগে কেবল নওগাঁ একটি মন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রীর পদ পেয়েছে। রাজশাহী জেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জেও কারও ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েনি। বৃহত্তর পাবনাও কোনো মন্ত্রিত্ব পেল না। 

ময়মনসিংহ ফিরে পেল মন্ত্রী
বিদায়ী সরকারে এ বিভাগের চার জেলার সংসদ সদস্যদের মধ্যে কোনো মন্ত্রী ছিল না। তবে টেকনোক্র্যাট হিসেবে নেত্রকোনার মোস্তাফা জব্বার ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। বিদায়ী সরকারে ময়মনসিংহের দুজন, জামালপুরের দুজন এবং ময়মনসিংহের একজন ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। 

তবে এবার এই বিভাগের দুই এমপি মন্ত্রী হচ্ছেন। তাঁরা হলেন ময়মনসিংহ-৯ আসন থেকে নির্বাচিত আব্দুস সালাম এবং জামালপুর-২ আসনের মো. ফরিদুল হক খান। বিদায়ী সরকারে ফরিদুল ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। এবার এ বিভাগে কোনো প্রতিমন্ত্রী নেই। 

মন্ত্রী পেল খুলনা বিভাগ
বিদায়ী সরকারে গোটা বিভাগের ১০টি জেলায় কাউকে পূর্ণ মন্ত্রিত্ব দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবার দুজন মন্ত্রী পেতে যাচ্ছে বিভাগটি। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রথমে প্রতিমন্ত্রী ও পরে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তবে সরকারের পরের মেয়াদে মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি তিনি। 

মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন গত পাঁচ বছর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তিনি পুরো মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। 

চার মন্ত্রী হারিয়ে এক মন্ত্রী পেল সিলেট
সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্যরা টানা চারটি সরকারে পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন। এবার ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বাদ পড়েছেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী সিলেট-৪ আসনের ইমরান আহমেদ বাদ পড়েছেন। 

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মান্নান ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। জোর গুঞ্জন ছিল, তিনি এবার অর্থমন্ত্রী হতে পারেন। কিন্তু দেখা গেল তিনি বাদই পড়ে গেছেন। আর মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন বিদায়ী সরকারে সামলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। তাকেও রাখা হয়নি নতুন সরকারে। 

এই বিভাগ থেকে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হচ্ছেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ। আর সিলেটের বিশ্বনাথের সন্তান চিকিৎসক সামন্তলাল সেন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হচ্ছেন। পৈতৃক বাড়ি সিলেট হলেও তাঁর পরিচিতি ঢাকা শহর ঘিরেই। সেই হিসেবে সিলেটবাসী একটি মন্ত্রী পাওয়ার কথা ভাবতেও পারে।

হবিগঞ্জ-৪ আসনে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের কাছে হারার পর দুবারের সংসদ সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়েছেন। এবার সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত শফিকুর রহমান চৌধুরী হচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী। 

বরিশাল বিভাগ এবারও মন্ত্রীশূন্য
বিদায়ী সরকারের মতো এবারও বরিশাল বিভাগের কাউকে মন্ত্রী করা হচ্ছে না। তবে বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক নতুন সরকারেও প্রতিমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। 

আর প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় ঢুকতে যাচ্ছেন পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিবুর রহমান। এই বিভাগের বাকি জেলা, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা থেকে কাউকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়নি। 

বিদায়ী সরকারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় বরিশাল অঞ্চল থেকে বেশ কয়েকজন পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তেজগাঁও বিমানবন্দরে এয়ার শো দেখতে জনস্রোত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৮
পুরাতন বিমানবন্দরে এয়ার শো দেখতে সকাল থেকেই মানুষের ভিড়। ছবি: ফেসবুক
পুরাতন বিমানবন্দরে এয়ার শো দেখতে সকাল থেকেই মানুষের ভিড়। ছবি: ফেসবুক

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে জমকালো ‘এয়ার শো’ দেখতে মানুষের ঢল নেমেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিমানবন্দরমুখী মানুষের স্রোত দেখা যায়। তবে নির্ধারিত সময়ের পরও এয়ার শো শুরু না হওয়ায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন হাজারো দর্শক।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল পৌনে ১০টার দিকে আগারগাঁও-সংলগ্ন পুরোনো বিমানবন্দরের ফটকে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে সবাইকে একে একে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ততক্ষণে শত শত পরিবার, শিশু ও উৎসুক জনতা বিমানবন্দরে প্রবেশ করে ভিড় জমিয়েছে।

আগত দর্শনার্থীদের হাতে শোভা পাচ্ছে জাতীয় পতাকা। অনেকের কপালে বাঁধা জাতীয় পতাকার আদলের ফিতা কিংবা ‘বিজয় দিবস’ লেখা কাপড়। অনেকেই পরিবারের সঙ্গে লাল-সবুজের পোশাক পরে এসেছে বিজয় উৎসবের এই বিশেষ প্রদর্শনী উপভোগ করতে।

গতকাল সোমবার এক তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়েছিল মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে এই জমকালো এয়ার শো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এয়ার শো শুরু হয়নি। জনসমাগম হলেও অনুষ্ঠান শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তথ্যবিবরণীতে সরকার জানিয়েছে, এই এয়ার শো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। একই সঙ্গে তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর ও এর আশপাশ এলাকায় আজ কোনো প্রকার ড্রোন না ওড়ানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিজয়ের ৫৪তম বছর উপলক্ষে এয়ার শোতে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে প্যারাট্রুপিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের শেষ ৬ জন পোশাকে নিজেদের নেমপ্লেটের পরিবর্তে সুদানের ইউএন ঘাঁটিতে নিহত ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের নেমপ্লেট পরে প্যারাট্র‍্যুপিং করবেন।

এই ৫৪ জনের একজন আশিক চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) বর্তমান নির্বাহী চেয়ারম্যান। আশিক চৌধুরী জাম্প করবেন শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মহান বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি।

এ সময় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদর্শন করে এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। এরপর রাষ্ট্রপতি সেখানে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাষ্ট্রপতি বের হয়ে যাওয়ার পর জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ৬টা ৫৬ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা।

বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও সরকারপ্রধান স্মৃতিসৌধে উপস্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্য, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও তিন বাহিনীর প্রধানেরা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপরই জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আজ ১৬ ডিসেম্বর। ৫৫তম মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধের পর এই দিনেই আমরা চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুদকের তদন্ত: ৭ দেশে জাবেদের আরও ৬১৫ সম্পদের সন্ধান

  • কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ সাতটি দেশে বিপুল সম্পদ।
  • নতুন ৩৮১টিসহ যুক্তরাজ্যে মোট সম্পদ ৭২৪টি।
  • নতুনগুলোসহ মোট ১ হাজার ১০০টি সম্পদের নথি দুদকের হাতে।
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩২
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ছবি: সংগৃহীত

পাচারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদ গড়ে আলোচনায় থাকা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নতুন করে ৬১৫টি সম্পদের তথ্য পাওয়ার গেছে। কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ সাতটি দেশে বিপুল এই সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নতুন করে ৬১৫টি সম্পদের নথিসহ মোট ১ হাজার ১০০টির মতো সম্পদের নথি রয়েছে তাদের কাছে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট, প্লট, বাড়ি এবং তাঁর নামে থাকা কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স। আর এসব সম্পদ রয়েছে প্রায় ১০টি দেশে। সম্পদগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা।

বিএফআইইউ ও দুদকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে যে ৬১৫টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, তার বেশির ভাগই যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে ৩৮১টি সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এর আগে একই দেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নামে ৩৪৩টি সম্পদের তথ্য পায় দুদক। সব মিলিয়ে শুধু যুক্তরাজ্যেই তাঁর ৭২৪টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেল।

এ ছাড়া, কম্বোডিয়ায় ১১১টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৪৮ মার্কিন ডলার। মালয়েশিয়ায় ৪৭টি সম্পদ পাওয়া গেছে, যার বাজারমূল্য ১০ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ২৪২ ডলার। ফিলিপাইনে ২টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯০ পেসো, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ কোটি টাকা। ভারতের হরিয়ানা, উত্তর চব্বিশপরগনাসহ দেশটিতে মোট ১১টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৪ ডলার।

সাইফুজ্জামান জাবেদের নামে থাইল্যান্ডে ২৪টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মূল্য ৩৬ কোটি ৩১ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯ থাই বাত। যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪টি সম্পদ ও ২টি কোম্পানির লাইসেন্স রয়েছে। ভিয়েতনামে ৩০টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুরে সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ। সুইজারল্যান্ডেও তাঁর সম্পদ রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নেতৃত্বে থাকা দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা তাঁর যে অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করছি, তার মধ্যে এখন পর্যন্ত সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নামে এক হাজারের বেশি সম্পদ থাকার নথি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি নথিতেই ভিয়েতনামে তাঁর ৩০টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা বলেন, সাইফুজ্জামান জাবেদ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচারের মাধ্যমে সম্পদ তৈরি করেন। অবৈধ অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের টাকা তিনি তাঁর সেসব দেশের এজেন্ট দিয়ে সংগ্রহ করেছেন, পরে দেশে প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে টাকা পরিশোধ করেছেন। তিনি জানান, জাবেদ তাঁর পাচারের অর্থ দিয়ে ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কোম্পানি ও ব্যবসা গড়ে তোলেন। পরে সেগুলো যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেন।

পাচারের অর্থ দেশে আনার বিষয়ে কথা বলেছেন দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পাচার করা অর্থ ফেরত আনার জন্য যথাযথ আইনিপ্রক্রিয়া শেষ করে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স পাঠাতে হবে। যদিও যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়, তাদের সঙ্গে চুক্তি থাকলে এটি সহজ হয়। আমাদের এমন চুক্তি নেই বললেই চলে। এ কারণে পাচারের অর্থ ফেরত আনা বেশ কঠিন।’

মঈদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি বলব, প্রক্রিয়া যত কঠিনই হোক, দুদককে সঠিক প্রক্রিয়ায় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের অর্থগুলো পাচার হয়ে যেসব দেশে যায়, সেসব দেশ দুর্নীতির সূচকে অত্যন্ত ভালো অবস্থানে। কিন্তু পাচারের অর্থ যখন তাদের দেশে যায়, তখন তারা তা ফেরতে সহযোগিতা না করে উল্টো সুরক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছে। এটা তাদের দ্বৈত নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।’

দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাজ্যে জাবেদ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা সম্পদ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে দুদক। এ লক্ষ্যে সে দেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে দুদক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রক্তসাগর পাড়ি দিয়ে পুব আকাশে স্বাধীনতার সূর্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বেলা পৌনে ১১টায় উপকণ্ঠ থেকে মূল ঢাকা শহরে প্রবেশ করেন বিজয়ী মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সেনারা। অন্যদিকে শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ে চলতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি।

১৫ ডিসেম্বর ছিল বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর সদর্প বিচরণের শেষ দিন। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর চূড়ান্ত অভিযানে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই কার্যত ঢাকায় পাকিস্তানি দুর্গের পতনের ক্ষণগণনা চলছিল। উপায় না দেখে পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান আবদুল্লাহ খান নিয়াজি শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ১৫ তারিখ আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দলিল এবং সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করার জন্য ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকব ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা এসে পৌঁছান। বিকেল ৪টার আগেই বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনীর দুটি ইউনিটসহ মোট চার ব্যাটালিয়ন সেনা ঢাকায় প্রবেশ করে। সঙ্গে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকার এত দিনের জনবিরল সড়কগুলো ক্রমেই জনাকীর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে। সবার মুখে একাত্তরের পরিচিতি রণধ্বনি’ জয় বাংলা’।

কারফিউ জারি থাকলেও মানুষ তার পরোয়া না করে রাস্তায় বেরিয়ে উল্লাস করতে থাকেন। পাকিস্তানি বাহিনীর নয় মাসের গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞের পর মুক্তির আনন্দে তাঁরা তখন আত্মহারা। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর কয়েক লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে তাঁরা পেয়েছেন নতুন দেশ—বাংলাদেশ। বিজয়ের আনন্দ, স্বজন হারানোর শোক আর অজানা আগামীর প্রত্যাশায় সবার মনে এক বিচিত্র অনুভূতি। এর মধ্যেও ঘটে কিছু দুঃখজনক ঘটনা। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পলায়নপর কিছু পাকিস্তানি সেনা ও বিহারি এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে অনেক বাঙালিকে হতাহত করে।

বিকেল ৪টায় বাংলাদেশের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার, ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও অন্য সামরিক কর্মকর্তারা বিমানে ঢাকা অবতরণ করেন। এর কিছু সময় পরই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল উৎফুল্ল জনতার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারত মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন পাকিস্তানি সমরাধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজি। পাকিস্তানি বাহিনীর দখল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হলো বাংলাদেশ। সগর্বে জায়গা করে নিল বিশ্বের মানচিত্রে।

ঢাকায় ১৬ ডিসেম্বরই ধীরে ধীরে সবাই জানতে পারেন আগের কয়েক দিনে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, লেখকসহ বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর। নিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনাদের এদেশীয় সহযোগীরা তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল; কিন্তু কেউই আর ফিরে আসেননি। দেশের এই মেধাবী, কৃতী সন্তানদের পরিণতির কথা ভেবে জনমনে ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ। পরদিনই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমির বীভৎস দৃশ্যের খবর। রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বিভিন্ন জায়গার অনেক বধ্যভূমিতে পাওয়া যায় নির্যাতিত মানুষের ক্ষতবিক্ষত দেহ। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের অনেকের হাত বা চোখ বাঁধা, বেয়নেট বা গুলিতে বিদ্ধ লাশের খোঁজ মেলে রায়েরবাজারে। বিজয়ের আনন্দের মধ্যে এই শোকের খবর, বধ্যভূমির ভয়াবহ দৃশ্য স্তম্ভিত করে মানুষকে।

এদিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই কাজে লেগে যায় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার। ১৬ ডিসেম্বরই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত প্রবাসী সরকার সদর দপ্তর থেকে গোটা দেশে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে। নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলি পাঠানো শুরু হয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ায় শুরু হয় পুরো সরকারের দেশে ফেরার প্রক্রিয়াও। ৭ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই উনিশটি জেলার জন্য জেলা প্রশাসকদের মনোনয়ন ও নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছিল। শুরু হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের নতুন কঠিন যুদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত