Ajker Patrika

ভিসা জটিলতায় ভ্রমণকর হারাচ্ছে সরকার

  • বাংলাদেশিদের ভিসা সীমিত করেছে ভারত। ভিসা সেন্টার ভারতে হওয়ায় ইউরোপের দেশে যেতেও জটিলতা।
  • কঠিন হয়েছে তুরস্ক, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার ভিসাপ্রাপ্তি। থাইল্যান্ডও দিনে ৪০০-র বেশি ভিসা দিচ্ছে না।
  • গত অক্টোবর ও নভেম্বরে ভ্রমণ কর বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে প্রায় ১২৬ কোটি টাকা।
মনজুরুল ইসলাম ঢাকা
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গত বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা সীমিত করে ভারত। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অনেক দেশের ভিসা সেন্টার ভারতে থাকায় সেসব দেশের ভিসা প্রাপ্তিতে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এ ছাড়া বিগত কয়েক মাসে কঠিন হয়েছে মালয়েশিয়া, তুরস্ক, মিসর, ইন্দোনেশিয়াসহ বাংলাদেশি পর্যটকদের নিয়মিত গন্তব্যের দেশগুলোর ভিসা প্রাপ্তিও। এতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশ ভ্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। যার প্রভাবে ধাক্কা লেগেছে সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত ভ্রমণকর সংগ্রহেও।

হজ, ওমরাহ এবং ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যতীত অন্য যেকোনো কাজে দেশের সীমানা পার হতে ভ্রমণকর পরিশোধ বাধ্যতামূলক। সেটি স্থল, রেল ও নৌপথ—সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আবার আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ক্ষেত্রেই ভ্রমণকর দিতে হয় যাত্রীদের। ফলে কোনো কারণে ভ্রমণ কমলে এ খাত থেকে আয় কমে সরকারের।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরের তুলনায় ২০২৪ সালের একই সময়ে ভ্রমণকর বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে প্রায় ১২৬ কোটি টাকা। কেবল গত নভেম্বর মাসেই আগের বছরের নভেম্বরের তুলনায় ভ্রমণকর আদায় কমেছে ৪৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ, টাকায় যা প্রায় ৯৩ কোটি।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে ভ্রমণকর বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ১৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা অক্টোবর মাসে এসে দাঁড়ায় ১৭৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর গত নভেম্বর মাসে ভ্রমণকর বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় ছিল মাত্র ১১৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।

দেশের পর্যটনশিল্পের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রফিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণ কমে গেছে মূলত ভিসা প্রাপ্তি জটিল হওয়ার কারণে। যার প্রভাব পড়েছে সরকারের ভ্রমণকর আদায়ের ক্ষেত্রে। বর্তমানে ভারত ভিসা দিচ্ছে না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম ভিসা দিচ্ছে না। ইন্দোনেশিয়া ভিসা ফি বাড়িয়েছে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার ভিসাপ্রাপ্তির হার কমে গেছে। দৈনিক মাত্র ৪০০ জন বাংলাদেশিকে ভিসা দিচ্ছে থাইল্যান্ড। এর পাশাপাশি আকাশপথে ভ্রমণে উড়োজাহাজের ভাড়া বাড়ার কারণেও পর্যটকেরা বিদেশভ্রমণ কমিয়েছেন।

বিদেশে কর্মী পাঠানো কমার করণেও ভ্রমণকর আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে উল্লেখ করে টোয়াব সভাপতি বলেন, সৌদি আরব ছাড়া বাকি দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে না। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও বাহরাইন এ মুহূর্তে বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দিচ্ছে না। ফলে কর্মী ভিসায় বিদেশগমনও কমেছে। যার প্রভাব পড়ছে সরকারের ভ্রমণকর আদায়ে। তিনি বলেন, অতীতে বিদেশভ্রমণ কমলে দেশের ভেতরে পর্যটকদের ভ্রমণ বাড়ত। এবার সেটিও আশানুযায়ী হচ্ছে না।

কারণ, সেন্ট মার্টিন, পার্বত্য এলাকাসহ একাধিক গন্তব্যে বিধিনিষেধ থাকায় পর্যটকেরা আগ্রহ হাচ্ছেন।

টোয়াব সূত্র বলছে, ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৪০ লাখ মানুষ বিদেশভ্রমণে যায়। যার মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশির গন্তব্য থাকে ভারত। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে (ফেব্রুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ভারতে ভ্রমণ করা বিদেশি পর্যটকের মধ্যে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশিরা, যা গত অক্টোবরে এসে পৌঁছায় দ্বিতীয় অবস্থানে। গত সেপ্টেম্বরে ভারত ভ্রমণে গিয়েছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৬২ বাংলাদেশি। এ সংখ্যা গত অক্টোবরে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৫৮ জনে।

খাতসংশ্লিষ্টরা অবশ্য বলছেন, গত কয়েক মাসে যাঁরা ভারত ভ্রমণ করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগের ভিসাই আগে ইস্যু করা। বর্তমানে ভারতের ভিসা সীমিত থাকায় সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশি পর্যটকের বিদেশযাত্রা আরও কমবে। ফলে কমে যাবে ভ্রমণকর বাবদ রাজস্ব আয়ও।

এদিকে সরাসরি ভিসা বন্ধ না করলেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে অনেক দেশ। ভিসা প্রসেসিং সহায়তাকারী একাধিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, বর্তমানে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া আগের মতো ভিসা দিচ্ছে না। প্রায় ৮০ শতাংশ ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে তুরস্ক, মিসর, ভিয়েতনামও। থাইল্যান্ডের ভিসা পেতে অনেক সময় ৪৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে। ভিসা ফি বাড়িয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কা।

শিক্ষার্থী ভিসায় প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যায়। তবে ইউরোপের বেশ কিছু দেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের ভিসা সেন্টার বাংলাদেশে নেই। এসব দেশের ভিসা নিতে হলে ভারতে গিয়ে সাক্ষাৎকার দিতে হয়। কিন্তু ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা প্রাপ্তির হার কম হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও কাঙ্ক্ষিত দেশে যেতে পারছেন না।

এদিকে যাত্রী কম থাকায় ভারতগামী সাপ্তাহিক ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো। ভিসা বন্ধ হওয়ার পরপরই গত বছর কলকাতা রুটের ফ্লাইট বন্ধ করে বেসরকারি আকাশ পরিবহন সংস্থা নভোএয়ার। আরেক বেসরকারি উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ভারতগামী সাপ্তাহিক ফ্লাইট ৩২ থেকে ১০টিতে নামিয়ে এনেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও ভারতে ফ্লাইট কমিয়েছে। গত জুলাই মাসেও এয়ারলাইনসটির ভারতে সপ্তাহে ৫৯টি ফ্লাইট ছিল, যা গত নভেম্বর মাসে কমে দাঁড়িয়েছে সাপ্তাহিক ২৮টিতে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম জানান, ভারত ভিসা দেওয়া বন্ধ করায় যাত্রী কমেছে। এ জন্য ফ্লাইটসংখ্যা কমানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের ‘অতিরঞ্জিত’ মন্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৬
সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের ‘অতিরঞ্জিত’ মন্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে অতিরঞ্জিত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে বর্ণনা করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন মহলকে সংখ্যালঘু বিষয়ে বিভ্রান্তিকর বর্ণনা ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।

আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। তিনি বিকেলে সাংবাদিকদের এই বিবৃতির কথা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সাম্প্রতিক মন্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাঁর মন্তব্য বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন নয়। বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে এমন কোনো বিভ্রান্তিকর, অতিরঞ্জিত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বর্ণনা বাংলাদেশ সরকার স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে।’

বিচ্ছিন্ন কিছু অপরাধমূলক ঘটনাকে পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়ন হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দিতে সেটার অপব্যবহার করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু মহলে বাছাই করা ও পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সাধারণ ভারতীয় জনগণকে বাংলাদেশ, ভারতের বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যে ব্যক্তির উদাহরণ দিয়েছেন, তিনি ছিলেন তালিকাভুক্ত অপরাধী। চাঁদাবাজির সময় তাঁর মুসলিম সহযোগীর সঙ্গে থাকা অবস্থায় তাঁর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ঘটে, যাঁকে পরে গ্রেপ্তার করা হয়। এই অপরাধমূলক ঘটনাকে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করা বাস্তবসম্মত নয়, বরং বিভ্রান্তিকর।

বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর বর্ণনা ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ভারতের বিভিন্ন মহলকে বিভ্রান্তিকর বর্ণনা ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে, যা সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক ও পারস্পরিক আস্থার চেতনাকে ক্ষুণ্ন করে।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনকে সামনে রেখে সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রেস ইউং
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রেস ইউং

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব ধরনের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিকে নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সব ধরনের সাইবার অপরাধকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’

ড. ইউনূস বলেন, সরকার সব ধরনের নাগরিক সেবাকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে অনেক সেবা দেশে ও বিদেশে অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। এসব সেবাকে সুরক্ষিত ও নির্বিঘ্ন রাখতে হলে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। নাগরিক সেবার খাতগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

ড. ইউনূস আরও বলেন, সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিসহ যেসব প্রতিষ্ঠান সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা নেবে, তাদের নিয়মিত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার হালনাগাদ করতে হবে। পাশাপাশি এসব ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত জনবলকে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট জনবলকে একটি রেটিং পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে, যাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাইবার সুরক্ষাসহ প্রকৃত মূল্যায়ন সহজ হয়। ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে কোনো অপরাধ করে যেন কেউ পার পেয়ে না যায়—সে বিষয়েও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিকে বিচার বিভাগের পাশাপাশি কার্যকর ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ইতিমধ্যে ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠান এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুজব, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশনসহ অন্যান্য সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি এবং বিটিআরসির মধ্যকার সমন্বয়সাধনের বিষয়ে জোর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরের সাইবার নিরাপত্তা আরও দৃঢ় করতে ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং আরও কিছু কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া তিনি সেক্টরাল সার্ট (সিইআরটি) গঠনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সদস্যসচিব ও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির মহাপরিচালক ড. মো. তৈয়বুর রহমান পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এজেন্সির কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনাসহ সাইবার পরিমণ্ডলে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রণীত ‘সাইবার ইনসিডেন্ট রিপোর্টিং অ্যান্ড রেস্পনস সিস্টেম’-এর বিস্তারিত উপস্থাপন করেন।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

২১ মে সাইবার সুরক্ষা অধ‍্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়নের পর এই সংশোধিত অধ‍্যাদেশের অধীনে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত ২৬ আগস্ট জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিল গঠিত হয়। ২৫ সদস্যের এই কাউন্সিলের নেতৃত্বে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয় পরিদর্শন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা

বাসস, ঢাকা 
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ফাইল ছবি
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ফাইল ছবি

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় আজ রোববার পরিদর্শন করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি বলেছেন, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টারের উপদেষ্টা সম্পাদক কামাল আহমেদ, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা।

প্রতিষ্ঠান দুটির ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পরিদর্শন শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, পক্ষে-বিপক্ষে মতভেদ থাকাটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে সহিংসতা ও হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়ায় সরকার এর ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকা উচিত। দেশ গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকার ও গণমাধ্যমকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, পত্রিকা প্রকাশের সক্ষমতা বড় সাহসিকতা ও পেশাদারত্বের পরিচয়। মিডিয়া সত্য তুলে ধরবে—এটাই জনগণের প্রত্যাশা। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

এ সময় ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃঢ়তার প্রশংসা করেন। ক্ষতিগ্রস্ত গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বলেন, গণমাধ্যম ঘুরে দাঁড়াবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মনোনয়নপত্রে সন্তানের আয়ের তথ্য দেওয়া ঐচ্ছিক—বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর ইসির চিঠি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে থাকা ‘সন্তানের আয়’ দেখানোর বাধ্যবাধকতা বিষয়ে স্পষ্টতা চেয়ে আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এর পরপরই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, এই তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক।

আজ রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আরপিওতে না থাকা সত্ত্বেও মনোনয়নপত্রে সন্তানেরও আয়ের হিসাব দেওয়ার বিষয়টি রাখা হয়েছে। যেটা নিয়ে সব জায়গায় একটা প্রশ্ন উঠেছে। কারণ অনেকের সন্তানেরা নিজেরাই উপার্জনক্ষম এবং তাঁরা নির্ভরশীল নন। অনেকেই দেশের বাইরে থাকেন। অনেকেই নিজেরা আলাদাভাবেই ট্যাক্স দেন। এই বিষয়টা নিয়ে একটা জটিলতা হয়ে গেছে। যার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছি এবং কথা বললাম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন নির্ভরশীল সন্তানদের বুঝিয়েছেন। তাঁরা এর ব্যাখ্যা দেবেন যে, এই ‘সন্তান’ শব্দটার অর্থ হলো ‘নির্ভরশীল সন্তান’।

সিইসির সঙ্গে বিএনপির এই বৈঠকের পর বিষয়টি স্পষ্ট করে বিকেলে সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, হলফনামার ক্রম ১০-এ আয়কর সংক্রান্ত তথ্যে সর্বশেষ আয়কর রিটার্ন জমার বিবরণ অংশে প্রদত্ত ছকের ক্রমিক ২,৩ ও ৪ এ উল্লিখিত যথাক্রমে স্বামী/স্ত্রী, সন্তান ও নির্ভরশীলদের আয়কর সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া ঐচ্ছিক মর্মে বিবেচিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত