Ajker Patrika

নব্য জেএমবির মূল শক্তি বোমা হামলা

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২১, ১০: ৪৯
নব্য জেএমবির মূল শক্তি বোমা হামলা

নব্য জেএমবির প্রত্যেক সদস্যকে আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বানানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে সংগঠিত হতে দলে ভেড়ানো হচ্ছে নতুন নতুন সদস্য। উদ্দেশ্য রাজধানীতে বড় হামলা করে আলোচনায় আসা। সংগঠনের আমির মাহাদী হাসান জন তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে এমন নির্দেশনাই দিচ্ছেন।

নির্দেশনা অনুযায়ী হামলার ছকও করেছেন দেশে থাকা নিষিদ্ধঘোষিত এই সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, হামলা চালানোর মতো অস্ত্র না থাকায় বোমা হামলাই ভরসা এই জঙ্গিদের। আর এ জন্য কম খরচেই বানিয়ে ফেলছে শক্তিশালী আইইডি, যা বিস্ফোরণ ঘটালে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।

তবে গোয়েন্দারা বলছেন, নিকট ভবিষ্যতে পূর্ণশক্তিতেই হামলা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর। পাশাপাশি টাকা হলে কিনে ফেলবে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রও। 
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার (বোম ডিসপোজাল) রহমত উল্লাহ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সাংগঠনিকভাবে সদস্যদের বোমা তৈরিতে দক্ষ করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য ফোরকান ও সাব্বির নামে দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফোরকান একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে নব্য জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। আর সাব্বির বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নব্য জেএমবির এই দুই বোমা বিশেষজ্ঞ অনলাইনের মাধ্যমে প্রত্যেক সদস্যকে বোমা বা আইইডি তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন।

সিটিটিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থের অভাবের প্রভাব পড়েছে মূল সংগঠনে। তাই কার্যক্রম ও নিজেদের হাতখরচ চালাতে চুরি, ছিনতাই, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণায়ও অংশ নিচ্ছে জঙ্গিরা। সেই টাকা দিয়েই বোমা তৈরির সরঞ্জাম কিনছে। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার জঙ্গি কাউসার হোসেন ওরফে মেজর ওসামা ও তাঁর সঙ্গী এক বৃদ্ধের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া ব্যাটারিচালিত অটোবাইক–ইজিবাইকে উঠে চালককে ইলেকট্রিক শক দিয়ে গাড়িও ছিনতাই করছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নব্য জেএমবির বর্তমান আমির মাহাদী হাসান জন তুরস্কে বসে জঙ্গিনেতাদের বিভিন্ন চ্যানেলে নিয়মিত টাকাও পাঠাচ্ছেন। প্রথম সারির নেতারা মাসে ১৫ হাজার করে টাকা পাচ্ছেন।

জঙ্গিদের টার্গেট এখনো পুলিশ
‘তাগুতের বাচ্চারা শুনে রাখ, বাংলায় একদিন তোদের সমাবেশগুলোতে সেকেন্ড অ্যাটাক করা হবে বিইযনিল্লাহ।’  ‘মরুর প্রান্তর ব্যাকআপ’ নামের একটি ফেসবুক আইডি দিয়ে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় পোস্ট করে পুলিশ সদস্যদের এভাবেই হুমকি দেয় জঙ্গিরা।

জঙ্গিদের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে করা একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গিদের পরিকল্পনার অন্যতম হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে সাংগঠনিক কাজে নিহত ও গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যদের পক্ষে প্রতিশোধ নেওয়া। তারা যেকোনো সময় এই সুযোগ নিতে চাইবে। এ ছাড়া সংগঠনের অর্থায়নে ড্রোন তৈরি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করা, ডিশলাইন হ্যাক করে জঙ্গিদের দাওয়াত প্রচারণা চালানোসহ এনজিওকর্মীদের টার্গেট করে হামলা করা পরিকল্পনা তো আছেই।

শিশুকিশোরদের সংগঠনে টানছে নব্য জেএমবি
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার নোয়াগাঁও ও সাতগ্রাম এলাকার অন্তত ২০-২৫ জন কিশোরের খোঁজ মিলছে না। তাদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

সিটিটিসি সূত্র বলছে, এই কিশোরেরা নব্য জেএমবির সদস্য হিসেবে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। অভিযুক্তরা শিশুকিশোর হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার না করে ডি-র‍্যাডিকালাইজেশন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, ওই উপজেলায় ৬৮টি গ্রাম রয়েছে। গ্রামগুলোয় আহলে হাদিসপন্থী সদস্যদের প্রভাব অনেক বেশি। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিখোঁজ কিশোরেরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে থাকতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। 

সংগঠনে ঢুকেই আক্রমণাত্মক হচ্ছে জঙ্গিরা
জঙ্গিদের নিয়ে কাজ করা সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, নব্য জেএমবির জঙ্গিরা তাদের ধরন বদলিয়েছে। আগে একজন জঙ্গি সদস্যকে অপারেশনে অংশ নিতে চার-পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হতো। এখন সংগঠনে ঢুকেই তিন-চার মাসের মধ্যে হামলায় অংশ নিচ্ছে। গত ১৯ মে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশ বক্সের সামনে যে আইইডি হামলার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে অংশ নেওয়া দুজনই সংগঠনের নতুন সদস্য।

ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জঙ্গিদের যত পরিকল্পনাই থাকুক না কেন, তাদের সব কার্যক্রম আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পরাশক্তিগুলোর পাল্টাপাল্টি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পরাশক্তিগুলোর পাল্টাপাল্টি

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ শেষে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনারা মেঘনা নদীর পূর্ব পারে আশুগঞ্জের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। পিছিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনী মেঘনার ওপর রেলসেতুটি বিধ্বস্ত করে দেয়। এ কারণে ১০ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর অগ্রবর্তী অংশ হেলিকপ্টারের সাহায্যে অস্ত্র-সরঞ্জাম নিয়ে মেঘনা পার হয়। স্থানীয় হাজারো গ্রামবাসীও শত শত নৌকা নিয়ে এতে সহায়তা করে। ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে যৌথ বাহিনীর ৪ ডিভিশন সেনা বেশ কিছু অস্ত্র-সরঞ্জামসহ নদী পার হতে সক্ষম হয়। নরসিংদী-ডেমরা অক্ষে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর যাত্রা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন তখন রীতিমতো ঘটনাবহুল। মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার ১১ ডিসেম্বর (উপমহাদেশে ১২ তারিখ পড়ে গেছে) সোভিয়েত কর্মকর্তাদের চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, মিত্র ভারতকে তারা অবশ্যই যেন পরদিন মধ্যাহ্নের আগে যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

মার্কিন হুমকিতে দমে না গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করতে ঢাকা অভিমুখে সামরিক অভিযানের গতি বৃদ্ধি করেন। ১১ ডিসেম্বরই দূত ডি.পি.ধরকে চুক্তি অনুযায়ী সহায়তা চেয়ে মস্কো পাঠিয়েছিলেন তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাবাহিনীর যুগ্ম কমান্ডব্যবস্থা।

যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের মোকাবিলায় সোভিয়েত ইউনিয়নও ভারত মহাসাগরে তার নিজের নৌবহর জোরদার করে। এ ছাড়া চীনকে পাকিস্তানের সাহায্যে সরাসরি এগিয়ে আসা থেকে ঠেকাতে সিংকিয়াং সীমান্তে সামরিক শক্তি বাড়ায়।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার নির্ধারিত সময়সীমার মাত্র দুঘণ্টা আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকার চরমপত্রের উত্তরে জানায়, পশ্চিম পাকিস্তানে ভারতের কোনো আক্রমণাত্মক অভিপ্রায় নেই। কিন্তু বাংলাদেশ, অর্থাৎ পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় ভারতকে বাধ্য করার প্রশ্নে মস্কো নীরব থাকে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১২ ডিসেম্বর বিকেলে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আয়োজনের ডাক দেন। সেই সঙ্গে তিনি আরও কঠোর ভাষায় পারমাণবিক বোমার ইঙ্গিত দিয়ে ক্রেমলিনে ‘গুরুতর পরিণতির’ সাবধানবাণী পাঠান। ঠিক এই সময়ে তখনকার মিত্র চীনের অবস্থান ওয়াশিংটনকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে দেয়। মার্কিন ভাবনা ছিল চীন পাকিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে এলে সোভিয়েতরা বসে থাকবে না। আর তখনই যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার অবকাশ পাবে। কিন্তু জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি হুয়াং হুয়া নিউইয়র্কে ১২ ডিসেম্বর মার্কিন কর্তৃপক্ষকে জানান, চীন শুধু নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আরেক-দফা আলোচনার ব্যাপারেই আগ্রহী। উপমহাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করার বিষয়ে নয়। চীনের এই ‘অপ্রত্যাশিত’ ভূমিকার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ওলট-পালট হয়ে যায়। বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার পথের দূরত্বে থাকা অবস্থায় সপ্তম নৌবহরকে থামিয়ে ফেলা হয়।

উত্তরে ময়মনসিংহ থেকে পাকিস্তানের একটি ব্রিগেড ঢাকা আসার সময় প্রথমে কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পরে ভারতীয় প্যারাস্যুট ব্যাটালিয়নের আক্রমণের শিকার হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পাকিস্তানি ব্রিগেড ঢাকা ফিরে আসে। পশ্চাদপসরণে ব্যস্ত পাকিস্তানি সেনাদের অনেকের লক্ষ্যস্থল ছিল দক্ষিণের উপকূলবর্তী অঞ্চল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জাহাজে অন্য দেশের পতাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে সচেষ্ট হতে দেখা যায় তাঁদের অনেককে।

এদিকে ঢাকার পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে ঘরে ঘরে তল্লাশি শুরু করে। সম্ভবত এই সময়েই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভূতিশীল বাঙালি পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের আটকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাকিস্তানিদের চূড়ান্ত পরাজয়ের প্রাক্কালে তাঁদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।

১১ ডিসেম্বর হঠাৎ ঢাকায় বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে কারফিউ ঘোষণা করে পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ। নানা কাজে বাইরে বের হওয়া অনেকে না জেনে বিপদে পড়ে যান। জানার পর শুরু হয় ছোটাছুটি করে ঘরে ফেরা।

রোজনামচাভিত্তিক বই ‘একাত্তরের দিনগুলি’তে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রুমির মা লেখিকা জাহানারা ইমাম এ বর্ণনা দিয়েছেন। হঠাৎ কারফিউর সময়সূচি পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি লিখেছেন, ‘এদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’ কারণ, এর কয়েক দিন আগেই কারফিউ বলবৎ থাকত বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত।

১২ ডিসেম্বর সকালে নরসিংদীর ওপর পাকিস্তানি সেনাদের দখলের অবসান ঘটে। ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর এই তিন দিনে ভারতীয় বাহিনীর মোট পাঁচটি ব্যাটালিয়ন, দুটি গোলন্দাজ রেজিমেন্ট ও ৫৭ ডিভিশনের ট্যাকটিক্যাল হেডকোয়ার্টার মেঘনা অতিক্রমে সমর্থ হয়। ট্যাংক রেজিমেন্টের মেঘনা পার হওয়ার প্রচেষ্টা তখনো সফল হয়নি। ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যার আগে জেনারেল নাগরার বাহিনী টাঙ্গাইলে প্যারাস্যুট ব্যাটালিয়ানের সঙ্গে যুক্ত হয়। এটি ছিল ঢাকা অভিযানের পথে বড় অগ্রগতি।

মিত্রবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা মেঘনা পার হওয়ার পর সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে ঢাকার পতন ঘটবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাংলাদেশ বাহিনীর সেনারা ফেনী নদী পার হয়ে এবং অন্যান্য দিক থেকে সদরের দিকে এগোতে থাকে। শুরুর দিকে মিরসরাই পাকিস্তানি সেনামুক্ত হয়। এর পরের লক্ষ্য ছিল সীতাকুণ্ড।

১২ ডিসেম্বর রোববার ঢাকায় সারা দিনই কারফিউ ছিল। রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তেজগাঁও বিমানবন্দরে কয়েকটি বিমান অনেক চেষ্টার পর অবতরণ করতে সক্ষম হয়। এগুলো জাতিসংঘের কর্মীদের সরিয়ে নিতে এসেছিল। পরে তাঁদের নিয়ে বিমানগুলো উড়ে যাওয়ার কিছু পরই ভারতীয় যুদ্ধবিমান রানওয়েতে আবার কয়েকটা বোমা ফেলে। কারফিউর মধ্যে নির্জন রাজপথে দেখা যায় বেশ কিছু মাইক্রোবাস চলতে। গাড়িগুলো বেসামরিক বলে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগায়।

তথ্যসূত্র: ১. লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে: আ টেল অব মিলিয়নস, লেখক–মেজর রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম); ২. মূলধারা ৭১, লেখক–মঈদুল হাসান; ৩. একাত্তরের দিনগুলি, লেখক–জাহানারা ইমাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথমবারের মতো ইসির তিন কর্মকর্তা পেলেন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ২৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার ইসির নিজস্ব তিন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।

ইসি কর্মকর্তা জানান, ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ঢাকা-১৩ ও ১৫ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম-১১ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। আর খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন খুলনা-৩ আসনে।

এ ছাড়া ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারসহ ৬৪ জেলার ডিসিরাও দায়িত্ব পালন করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে।

এবার মোট ৬৯ রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়েরের শেষ তারিখ ১১ জানুয়ারি আরও নিষ্পত্তি ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি, রিটার্নিং কর্মকর্তা দ্বারা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি, নির্বাচনী প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। আর ভোট গ্রহণ করা হবে ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রয়টার্সের প্রতিবেদন /নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে চান সাহাবুদ্দিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ২১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে চান মো. সাহাবুদ্দিন। তাঁর এ পরিকল্পনা তুলে ধরে আজ বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

রয়টার্স বলছে, রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে তিনি ‘অপমানিত বোধ’ করছেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। এর বাইরে পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। দেশের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে চলে যাওয়ার পর সাহাবুদ্দিনের অবস্থান গুরুত্ব পায়। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর সাহাবুদ্দিনই ছিলেন দেশের শেষ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ।

হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমি বিদায় নিতে আগ্রহী। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব রয়েছে বলেই আমি এ অবস্থানে আছি।’

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সঙ্গে প্রায় সাত মাস কোনো ধরনের সাক্ষাৎ করেননি। রাষ্ট্রপতির গণমাধ্যম বিভাগ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে নিজের ছবি সরিয়ে ফেলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাই কমিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল। এগুলো হঠাৎ করে এক রাতের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়। মানুষজন ভাবতে পারে, রাষ্ট্রপতিকে হয়ত সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি খুব অপমানিত বোধ করেছি।’

সাহাবুদ্দিনের ভাষ্য, ছবি সরিয়ে ফেলার বিষয়ে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রয়টার্স দাবি করেছে, রাষ্ট্রপতির মন্তব্যগুলো নিয়ে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রেস উইংয়ের কাছে মন্তব্য চেয়েছিল, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া মেলেনি।

রাষ্ট্রপতি জানান, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। জেনারেল ওয়াকার তাঁকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ক্ষমতা দখলের কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই।

রয়টার্স লিখেছে, ২০২৪ সালের আগস্টে প্রাণঘাতী বিক্ষোভের সময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার হস্তক্ষেপ না করায় শেখ হাসিনা সরকারের পতন নির্ধারিত হয়ে যায়। বাংলাদেশের সামরিক শাসনের ইতিহাস থাকলেও জেনারেল ওয়াকার ‘গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন চান’।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, শুরুতে কিছু শিক্ষার্থী তাঁর পদত্যাগের দাবি জানালেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কোনো রাজনৈতিক দল তাঁর পদত্যাগ চাননি।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীর আগামী সরকার গঠনের দৌড়ে এগিয়ে থাকতে পারে বলে জনমত জরিপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর আগে এই দুই দল ২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকারে ছিল।

শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন কি না জানতে চাইলে সাহাবুদ্দিন উত্তর দিতে চাননি। তিনি রয়টার্সকে বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকেই তিনি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।

বঙ্গভবনের দরবার হলে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: পিআইডি
বঙ্গভবনের দরবার হলে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: পিআইডি

৭৫ বছর বয়সী সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। চুপ্পু নামেই বেশি পরিচিত সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হন।

ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহাবুদ্দিন। পরে সামলেছেন পাবনা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি, মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে সে সময় ক্ষমতাদখলকারীরা। সাহাবুদ্দিনকেও তখন কারাবরণ করতে হয়।

পেশায় আইনজীবী মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।

২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তে যে কমিশন হয়েছিল, সাহাবুদ্দিন ছিলেন তার প্রধান।

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত করা সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুলশানে ফ্ল্যাট নেওয়ার মামলায় টিউলিপের নামে দুদকের অভিযোগপত্র

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং লন্ডনে উপহার পাওয়া দুটি ফ্ল্যাটের তথ্য গোপন করায় ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে ব্রিটেনের সিটি ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং লন্ডনে উপহার পাওয়া দুটি ফ্ল্যাটের তথ্য গোপন করায় ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে ব্রিটেনের সিটি ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত

ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে রাজধানীর গুলশান এলাকায় ‘পারিতোষিক’ হিসেবে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এবার চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। টিউলিপ ছাড়াও রাজউকের সাবেক দুই আইন উপদেষ্টার নামও রয়েছে দুদকের চার্জশিটে।

আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুদকের সেগুনবাগিচা প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে এসব তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল একই বিষয়ে কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ দুদকের সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এই সংক্রান্ত মামলাটি দায়ের করেন।

চার্জশিটে আসামিরা হলেন, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান এবং সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা-১ সরদার মোশারফ হোসেন।

এই তিন আসামি ছাড়াও মৃত্যুর কারণে মামলা ও তৎপরবর্তী চার্জশিট থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুই আসামিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. নাসিমের ভাই রাজউকের সাবেক আইন উপদেষ্টা ড. মো. সেলিম ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম।

চার্জশিট অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকার গুলশান-২-এর কূটনৈতিক এলাকায় ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডকে একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে দেন টিউলিপ। এর বিনিময়ে অবৈধ ‘পারিতোষিক’ হিসেবে ওই প্লটের একটি ফ্ল্যাট পান তিনি। ফ্ল্যাটের দাম ২৩ লাখ টাকা ধার্য করা করা হলেও এই ফ্ল্যাট বাবদ ইস্টার্ন হাউজিংকে এক টাকাও পরিশোধ করেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাগনি।

অনুমোদিত চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো টাকা পরিশোধ না করেই অবৈধ ঘুষ হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের একটি ফ্ল্যাট দখলে নেয়। এরপর অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে গুলশান-২-এর ফ্ল্যাটটি (ফ্ল্যাট নম্বর বি/ ২০১, বাড়ি নম্বর ৫এ ও ৫বি (পুরোনো), বর্তমানে ১১৩, ১১বি (নতুন), রোড নম্বর ৭১, রেজিস্ট্রি মূলে খতিয়ান গ্রহণ ও প্রদান করেছেন।

দুদকের চার্জশিটের সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, ইস্টার্ন হাউজিং গুলশানের যে জমিতে ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছেন সেটিও হাউজিং প্রতিষ্ঠানটির নয়। জমিটি মূলত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার সাবেক প্রধান বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরীকে ডিআইটি থেকে ১ বিঘা ১৯ কাঠা ১৩ ছটাক জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ প্রদান করে। ২০৬৩ সালের আগে এই জমি বিক্রি বা বরাদ্দের নিয়ম নেই। সেই জমি নিয়মবহির্ভূতভাবে রাজউকের সাবেক আইন উপদেষ্টার সহযোগিতায় আমমোক্তারনামা করে লিখে নেন ইস্টার্ন হাউজিং। ইস্টার্ন হাউজিংয়ের করা সেই জমিতে প্লট বরাদ্দ নেন টিউলিপ সিদ্দিক। তবে জমির ক্রয় বাবদ তিনি কোনো টাকা পরিশোধ করেননি।

দুদক সূত্রটি আরও জানায়, ১৯৯৭ সালে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে বরাদ্দ নেন টিউলিপ সিদ্দিক। সেই ফ্ল্যাট ২০০২ সালে তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে ফ্ল্যাট প্রদানের বিপরীতে ইস্টার্ন হাউজিং ফ্ল্যাট কেনা বাবদ টাকা প্রদানের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। দুদকের কাছে তাঁরা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এই ফ্ল্যাট বাবদ সর্বশেষ ২০২২ পর্যন্ত টাকা পরিশোধের তাগাদা দিলেও টিউলিপ টাকা প্রদান করেননি।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি ৪০৯/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫ (ক)/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত