নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। এখন সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করাটাই শুধু বাকি। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে শেষ সময়ের কাজটুকু সমাধা হওয়া নিয়েই দেখা দেয় গুরুতর সংকট। সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে গতকাল বুধবার দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শেষে আপাতত স্বস্তি এসেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল শুক্রবার সনদে স্বাক্ষর করবে দলগুলো।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে গত মঙ্গলবার রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর কাছে চূড়ান্ত সনদের অনুলিপি পাঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অনুলিপির সঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোর কাছে শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রও পাঠানো হয়। এর পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ দলটির কয়েক নেতা। এনসিপি নেতারা সেখানে এত দিনের আলোচনা বাদ দিয়ে বিদ্যমান সংবিধান স্থগিত করে নতুন সংবিধানের জন্য নতুন করে কাজ শুরুর দাবি জানান। এটা না হলে এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে না বলেও জানান দলটির নেতারা। সংকট সমাধানে মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন দল ও সরকারের কয়েক উপদেষ্টার সঙ্গে কমিশন যোগাযোগ করে। এ সময় ইতালি থেকে দেশের পথে রওনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। উপায় না পেয়ে তাঁর সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করে কমিশন। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে এনসিপিকে বোঝাতে কমিশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়। এরপরেও তারা তাদের অবস্থানেই অনড় থাকে। এ অবস্থায় সংকটের সমাধান খুঁজতে মঙ্গলবার রাতের আলোচনা গড়ায় বুধবারে। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর কমিশন সদস্যরা তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন। সংকটের বিষয়ে কমিশন প্রধান উপদেষ্টাকে জানায়। এই বৈঠকের আগেই এদিন সন্ধ্যায় দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে নাহিদ তাঁদের দলের অবস্থান তুলে ধরেন। সব শুনে এ সময় সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। তাঁদের দাবিদাওয়ার বিষয়েও এ সময় আশ্বস্ত করেন তিনি। নাহিদের সঙ্গে এই বৈঠকের মধ্য দিয়েই মূলত বিদ্যমান সংকটের আপাতত স্বস্তি মেলে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
একটি সূত্র দাবি করছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নাহিদ ইসলাম বিস্তারিত আলাপ করেছেন। তাতে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতির কিছুটা সমাধান হয়েছে। কিন্তু তাঁদের মনে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এদিকে আপাতত স্বস্তি মিললেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে কি করবে না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেনি এনসিপি। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা বললেও সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেনি জামায়াত। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস ও নেজামে ইসলাম পার্টিও একই অবস্থানে আছে। অন্যদিকে সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছে সিপিবি, বাসদ, বাসদ মার্ক্সবাদী, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম।
৩০ দল ও জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
জুলাই সনদ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ মার্ক্সবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, ১২ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ ৩১টি দল ও জোটের নেতারা বৈঠকে অংশ নেন।
উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে বলে বৈঠকে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আগামী শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর হবে। জাতির মধ্যে সঞ্চারিত করার জন্য আমাদের এই অনুষ্ঠান। আমরা সেখানে উৎসবমুখরভাবে যাব। এই দলিলে সই করব। উৎসবে সারা জাতি শরিক হবে।’
ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে জুলাই সনদেরই অংশ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে বারবার বলছি। যখন যেখানে গেছি বলেছি। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয়, তার সবই আমরা করব। এর সঙ্গে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করব না।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান না হলে অন্য কোনোভাবে এই সনদ রচনা করা সম্ভব ছিল না উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘কেউ আশা করেনি সত্যি এটা হবে। অনেকে এটা নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন। কেউ কেউ এটাকে তামাশা বলেছেন। তবে আমি আশাবাদী ছিলাম, একটা না একটা কিছু হবে। এটা না হলে কাজটা এলোমেলো হয়ে যেত। আমরা এলোমেলো না করে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে করতে পেরেছি। প্রকৃতপক্ষে কী সংস্কার হবে, আপনারা তা করে দিয়েছেন। আমরা জুলাই সনদের স্বাক্ষরের বড় উৎসবে শরিক হব। যে কলম দিয়ে স্বাক্ষরিত হবে, তা জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। আপনাদের ছবি জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।’
সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে বারবার বলছি। যখন যেখানে গেছি বলেছি। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। এটা ঐকমত্য কমিশনের সনদেরই একটি অংশ। সনদের সঙ্গে এটা (নির্বাচন) জড়িত। আমরা যে ঘোষণা করেছি, তা রক্ষা করতে হবে। এটা এমন নয় যে, কথার কথা বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে, দুই দিন পরে হবে...এটা ও রকম নয়। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয়, তার সবই আমরা করব। এর সঙ্গে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করব না। আপনারা সবাই মিলে সনদ তৈরি করেছেন।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের কন্টিনিউয়াস (ধারাবাহিক) সমর্থন আপনার প্রতি ছিল, আছে। কিন্তু এটা কন্ডিশনাল (শর্তযুক্ত)। আমাদের সমর্থন আরও অব্যাহত থাকবে, এটা সীমাহীন নয়। আমরা চাই, আপনার নেতৃত্বে একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন, এটাই হচ্ছে কন্ডিশন (শর্ত)। আপনার প্রতি আমাদের সীমাহীন সমর্থন নয়, আমাদের সীমারেখা আছে। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য এই সীমারেখার মধ্যে আপনাকে সমর্থন দিচ্ছি। আপনি দয়া করে এটা অনুধাবনের চেষ্টা করবেন।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সচিবালয়ে বদলি পদায়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ একটি ‘ক্যাবিনেট কমিটি’ করা হয়েছে। এটার কোনো চর্চা নেই, এটা কোনো নিয়ম বা রীতি নয়। এ বিষয়ে বিএনপি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘যাতে বাংলাদেশের সকল অর্গানের ব্যালেন্স (সব অঙ্গের মধ্যে ভারসাম্য) থাকে, সেটা আপনাকে চেষ্টা করতে হবে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। আমরা চাই না প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটি অ্যাফোর্ড করতে পারব না এই মুহূর্তে। আমরা চাই, আপনার সাথে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। রাষ্ট্র একটা ব্যালেন্স অবস্থায় থাকতে হবে। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না। যেতে পারব না।’
আলোচনায় সংস্কার বাস্তবায়ন প্রশ্নে বিএনপির আগের অবস্থানই তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট হলে আগামী সংসদ জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। নির্বাচনের বাকি আছে চার মাস। দুই মাস আগে তফসিল দিতে হবে। এর আগে আরেকটি নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কি না, তিনি সে প্রশ্ন রাখেন।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়; এক দিনে করার প্রস্তাব উদ্ভট আলোচনা। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিতে হবে। তাহের বলেন, বিএনপি জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে আগে দ্বিমত করলেও পরে গণভোটের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘শেষ মুহূর্তে কিছু বিষয় আমাদের মধ্যে সংশয়ের জায়গা তৈরি করেছে। আসলে জাতিকে অস্পষ্ট রেখে কোনো উদ্যোগ সফল করা সম্ভব নয়। আজকের এই দিনে আমরা আসতে পেরেছি এমন একটি অবস্থানে, যাতে বাংলাদেশে আর কখনো ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে। বাংলাদেশ যেন জবাবদিহিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হতে পারে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে ঐক্যবদ্ধ কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলো এক অভূতপূর্ব পদ্ধতিতে, সুন্দর সহনশীল পরিবেশের মধ্য দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে প্রণয়নের দিকে এগিয়েছি।’
আকতার বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য জুলাই সনদের বাস্তবায়নের পথকে পরিষ্কার করা, তারপরই আমরা সনদ স্বাক্ষরের দিকে অগ্রসর হব। সবকিছু পরিষ্কার হওয়ার পর যদি সনদ স্বাক্ষরিত হয়, তবে সেটিই হবে আমাদের সাফল্য।’
স্বাক্ষর শেষে নাগরিকদের মধ্যে বিলি হবে সনদ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, নাগরিকেরা যাতে বুঝতে পারেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কী ঐক্যমতে পৌঁছেছে, রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা কী এবং অগ্রগতি কত দূর হয়েছে, সেটি তাঁরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি, গতকাল ও আজকে কিছু তথ্য এদিক-সেদিক প্রচারিত হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সাংবাদিক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে আমি জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ এবং আপনাদের সহযোগিতায় আমরা আশাবাদী, যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আশা করি, আপনারা এই ঐক্যের ধারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সর্বোপরি, জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবেই, কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের শক্তিকে আমরা একত্রে বজায় রাখব, এই বিশ্বাসেই আমরা দাঁড়িয়ে আছি এবং সেটি অব্যাহত রাখব।’

চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। এখন সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করাটাই শুধু বাকি। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে শেষ সময়ের কাজটুকু সমাধা হওয়া নিয়েই দেখা দেয় গুরুতর সংকট। সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে গতকাল বুধবার দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শেষে আপাতত স্বস্তি এসেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল শুক্রবার সনদে স্বাক্ষর করবে দলগুলো।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে গত মঙ্গলবার রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর কাছে চূড়ান্ত সনদের অনুলিপি পাঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অনুলিপির সঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোর কাছে শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রও পাঠানো হয়। এর পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ দলটির কয়েক নেতা। এনসিপি নেতারা সেখানে এত দিনের আলোচনা বাদ দিয়ে বিদ্যমান সংবিধান স্থগিত করে নতুন সংবিধানের জন্য নতুন করে কাজ শুরুর দাবি জানান। এটা না হলে এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে না বলেও জানান দলটির নেতারা। সংকট সমাধানে মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন দল ও সরকারের কয়েক উপদেষ্টার সঙ্গে কমিশন যোগাযোগ করে। এ সময় ইতালি থেকে দেশের পথে রওনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। উপায় না পেয়ে তাঁর সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করে কমিশন। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে এনসিপিকে বোঝাতে কমিশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়। এরপরেও তারা তাদের অবস্থানেই অনড় থাকে। এ অবস্থায় সংকটের সমাধান খুঁজতে মঙ্গলবার রাতের আলোচনা গড়ায় বুধবারে। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর কমিশন সদস্যরা তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন। সংকটের বিষয়ে কমিশন প্রধান উপদেষ্টাকে জানায়। এই বৈঠকের আগেই এদিন সন্ধ্যায় দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে নাহিদ তাঁদের দলের অবস্থান তুলে ধরেন। সব শুনে এ সময় সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। তাঁদের দাবিদাওয়ার বিষয়েও এ সময় আশ্বস্ত করেন তিনি। নাহিদের সঙ্গে এই বৈঠকের মধ্য দিয়েই মূলত বিদ্যমান সংকটের আপাতত স্বস্তি মেলে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
একটি সূত্র দাবি করছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নাহিদ ইসলাম বিস্তারিত আলাপ করেছেন। তাতে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতির কিছুটা সমাধান হয়েছে। কিন্তু তাঁদের মনে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এদিকে আপাতত স্বস্তি মিললেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে কি করবে না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেনি এনসিপি। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা বললেও সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেনি জামায়াত। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস ও নেজামে ইসলাম পার্টিও একই অবস্থানে আছে। অন্যদিকে সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছে সিপিবি, বাসদ, বাসদ মার্ক্সবাদী, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম।
৩০ দল ও জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
জুলাই সনদ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ মার্ক্সবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, ১২ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ ৩১টি দল ও জোটের নেতারা বৈঠকে অংশ নেন।
উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে বলে বৈঠকে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আগামী শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর হবে। জাতির মধ্যে সঞ্চারিত করার জন্য আমাদের এই অনুষ্ঠান। আমরা সেখানে উৎসবমুখরভাবে যাব। এই দলিলে সই করব। উৎসবে সারা জাতি শরিক হবে।’
ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে জুলাই সনদেরই অংশ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে বারবার বলছি। যখন যেখানে গেছি বলেছি। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয়, তার সবই আমরা করব। এর সঙ্গে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করব না।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান না হলে অন্য কোনোভাবে এই সনদ রচনা করা সম্ভব ছিল না উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘কেউ আশা করেনি সত্যি এটা হবে। অনেকে এটা নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন। কেউ কেউ এটাকে তামাশা বলেছেন। তবে আমি আশাবাদী ছিলাম, একটা না একটা কিছু হবে। এটা না হলে কাজটা এলোমেলো হয়ে যেত। আমরা এলোমেলো না করে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে করতে পেরেছি। প্রকৃতপক্ষে কী সংস্কার হবে, আপনারা তা করে দিয়েছেন। আমরা জুলাই সনদের স্বাক্ষরের বড় উৎসবে শরিক হব। যে কলম দিয়ে স্বাক্ষরিত হবে, তা জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। আপনাদের ছবি জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।’
সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে বারবার বলছি। যখন যেখানে গেছি বলেছি। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। এটা ঐকমত্য কমিশনের সনদেরই একটি অংশ। সনদের সঙ্গে এটা (নির্বাচন) জড়িত। আমরা যে ঘোষণা করেছি, তা রক্ষা করতে হবে। এটা এমন নয় যে, কথার কথা বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে, দুই দিন পরে হবে...এটা ও রকম নয়। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয়, তার সবই আমরা করব। এর সঙ্গে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করব না। আপনারা সবাই মিলে সনদ তৈরি করেছেন।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের কন্টিনিউয়াস (ধারাবাহিক) সমর্থন আপনার প্রতি ছিল, আছে। কিন্তু এটা কন্ডিশনাল (শর্তযুক্ত)। আমাদের সমর্থন আরও অব্যাহত থাকবে, এটা সীমাহীন নয়। আমরা চাই, আপনার নেতৃত্বে একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন, এটাই হচ্ছে কন্ডিশন (শর্ত)। আপনার প্রতি আমাদের সীমাহীন সমর্থন নয়, আমাদের সীমারেখা আছে। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য এই সীমারেখার মধ্যে আপনাকে সমর্থন দিচ্ছি। আপনি দয়া করে এটা অনুধাবনের চেষ্টা করবেন।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সচিবালয়ে বদলি পদায়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ একটি ‘ক্যাবিনেট কমিটি’ করা হয়েছে। এটার কোনো চর্চা নেই, এটা কোনো নিয়ম বা রীতি নয়। এ বিষয়ে বিএনপি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘যাতে বাংলাদেশের সকল অর্গানের ব্যালেন্স (সব অঙ্গের মধ্যে ভারসাম্য) থাকে, সেটা আপনাকে চেষ্টা করতে হবে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। আমরা চাই না প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটি অ্যাফোর্ড করতে পারব না এই মুহূর্তে। আমরা চাই, আপনার সাথে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। রাষ্ট্র একটা ব্যালেন্স অবস্থায় থাকতে হবে। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না। যেতে পারব না।’
আলোচনায় সংস্কার বাস্তবায়ন প্রশ্নে বিএনপির আগের অবস্থানই তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট হলে আগামী সংসদ জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। নির্বাচনের বাকি আছে চার মাস। দুই মাস আগে তফসিল দিতে হবে। এর আগে আরেকটি নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কি না, তিনি সে প্রশ্ন রাখেন।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়; এক দিনে করার প্রস্তাব উদ্ভট আলোচনা। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিতে হবে। তাহের বলেন, বিএনপি জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে আগে দ্বিমত করলেও পরে গণভোটের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘শেষ মুহূর্তে কিছু বিষয় আমাদের মধ্যে সংশয়ের জায়গা তৈরি করেছে। আসলে জাতিকে অস্পষ্ট রেখে কোনো উদ্যোগ সফল করা সম্ভব নয়। আজকের এই দিনে আমরা আসতে পেরেছি এমন একটি অবস্থানে, যাতে বাংলাদেশে আর কখনো ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে। বাংলাদেশ যেন জবাবদিহিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হতে পারে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে ঐক্যবদ্ধ কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলো এক অভূতপূর্ব পদ্ধতিতে, সুন্দর সহনশীল পরিবেশের মধ্য দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে প্রণয়নের দিকে এগিয়েছি।’
আকতার বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য জুলাই সনদের বাস্তবায়নের পথকে পরিষ্কার করা, তারপরই আমরা সনদ স্বাক্ষরের দিকে অগ্রসর হব। সবকিছু পরিষ্কার হওয়ার পর যদি সনদ স্বাক্ষরিত হয়, তবে সেটিই হবে আমাদের সাফল্য।’
স্বাক্ষর শেষে নাগরিকদের মধ্যে বিলি হবে সনদ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, নাগরিকেরা যাতে বুঝতে পারেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কী ঐক্যমতে পৌঁছেছে, রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা কী এবং অগ্রগতি কত দূর হয়েছে, সেটি তাঁরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি, গতকাল ও আজকে কিছু তথ্য এদিক-সেদিক প্রচারিত হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সাংবাদিক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে আমি জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ এবং আপনাদের সহযোগিতায় আমরা আশাবাদী, যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আশা করি, আপনারা এই ঐক্যের ধারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সর্বোপরি, জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবেই, কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের শক্তিকে আমরা একত্রে বজায় রাখব, এই বিশ্বাসেই আমরা দাঁড়িয়ে আছি এবং সেটি অব্যাহত রাখব।’
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। এখন সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করাটাই শুধু বাকি। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে শেষ সময়ের কাজটুকু সমাধা হওয়া নিয়েই দেখা দেয় গুরুতর সংকট। সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে গতকাল বুধবার দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শেষে আপাতত স্বস্তি এসেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল শুক্রবার সনদে স্বাক্ষর করবে দলগুলো।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে গত মঙ্গলবার রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর কাছে চূড়ান্ত সনদের অনুলিপি পাঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অনুলিপির সঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোর কাছে শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রও পাঠানো হয়। এর পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ দলটির কয়েক নেতা। এনসিপি নেতারা সেখানে এত দিনের আলোচনা বাদ দিয়ে বিদ্যমান সংবিধান স্থগিত করে নতুন সংবিধানের জন্য নতুন করে কাজ শুরুর দাবি জানান। এটা না হলে এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে না বলেও জানান দলটির নেতারা। সংকট সমাধানে মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন দল ও সরকারের কয়েক উপদেষ্টার সঙ্গে কমিশন যোগাযোগ করে। এ সময় ইতালি থেকে দেশের পথে রওনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। উপায় না পেয়ে তাঁর সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করে কমিশন। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে এনসিপিকে বোঝাতে কমিশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়। এরপরেও তারা তাদের অবস্থানেই অনড় থাকে। এ অবস্থায় সংকটের সমাধান খুঁজতে মঙ্গলবার রাতের আলোচনা গড়ায় বুধবারে। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর কমিশন সদস্যরা তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন। সংকটের বিষয়ে কমিশন প্রধান উপদেষ্টাকে জানায়। এই বৈঠকের আগেই এদিন সন্ধ্যায় দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে নাহিদ তাঁদের দলের অবস্থান তুলে ধরেন। সব শুনে এ সময় সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। তাঁদের দাবিদাওয়ার বিষয়েও এ সময় আশ্বস্ত করেন তিনি। নাহিদের সঙ্গে এই বৈঠকের মধ্য দিয়েই মূলত বিদ্যমান সংকটের আপাতত স্বস্তি মেলে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
একটি সূত্র দাবি করছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নাহিদ ইসলাম বিস্তারিত আলাপ করেছেন। তাতে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতির কিছুটা সমাধান হয়েছে। কিন্তু তাঁদের মনে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এদিকে আপাতত স্বস্তি মিললেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে কি করবে না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেনি এনসিপি। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা বললেও সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেনি জামায়াত। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস ও নেজামে ইসলাম পার্টিও একই অবস্থানে আছে। অন্যদিকে সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছে সিপিবি, বাসদ, বাসদ মার্ক্সবাদী, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম।
৩০ দল ও জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
জুলাই সনদ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ মার্ক্সবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, ১২ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ ৩১টি দল ও জোটের নেতারা বৈঠকে অংশ নেন।
উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে বলে বৈঠকে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আগামী শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর হবে। জাতির মধ্যে সঞ্চারিত করার জন্য আমাদের এই অনুষ্ঠান। আমরা সেখানে উৎসবমুখরভাবে যাব। এই দলিলে সই করব। উৎসবে সারা জাতি শরিক হবে।’
ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে জুলাই সনদেরই অংশ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে বারবার বলছি। যখন যেখানে গেছি বলেছি। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয়, তার সবই আমরা করব। এর সঙ্গে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করব না।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান না হলে অন্য কোনোভাবে এই সনদ রচনা করা সম্ভব ছিল না উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘কেউ আশা করেনি সত্যি এটা হবে। অনেকে এটা নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন। কেউ কেউ এটাকে তামাশা বলেছেন। তবে আমি আশাবাদী ছিলাম, একটা না একটা কিছু হবে। এটা না হলে কাজটা এলোমেলো হয়ে যেত। আমরা এলোমেলো না করে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে করতে পেরেছি। প্রকৃতপক্ষে কী সংস্কার হবে, আপনারা তা করে দিয়েছেন। আমরা জুলাই সনদের স্বাক্ষরের বড় উৎসবে শরিক হব। যে কলম দিয়ে স্বাক্ষরিত হবে, তা জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। আপনাদের ছবি জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।’
সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে বারবার বলছি। যখন যেখানে গেছি বলেছি। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। এটা ঐকমত্য কমিশনের সনদেরই একটি অংশ। সনদের সঙ্গে এটা (নির্বাচন) জড়িত। আমরা যে ঘোষণা করেছি, তা রক্ষা করতে হবে। এটা এমন নয় যে, কথার কথা বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে, দুই দিন পরে হবে...এটা ও রকম নয়। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয়, তার সবই আমরা করব। এর সঙ্গে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করব না। আপনারা সবাই মিলে সনদ তৈরি করেছেন।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের কন্টিনিউয়াস (ধারাবাহিক) সমর্থন আপনার প্রতি ছিল, আছে। কিন্তু এটা কন্ডিশনাল (শর্তযুক্ত)। আমাদের সমর্থন আরও অব্যাহত থাকবে, এটা সীমাহীন নয়। আমরা চাই, আপনার নেতৃত্বে একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন, এটাই হচ্ছে কন্ডিশন (শর্ত)। আপনার প্রতি আমাদের সীমাহীন সমর্থন নয়, আমাদের সীমারেখা আছে। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য এই সীমারেখার মধ্যে আপনাকে সমর্থন দিচ্ছি। আপনি দয়া করে এটা অনুধাবনের চেষ্টা করবেন।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সচিবালয়ে বদলি পদায়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ একটি ‘ক্যাবিনেট কমিটি’ করা হয়েছে। এটার কোনো চর্চা নেই, এটা কোনো নিয়ম বা রীতি নয়। এ বিষয়ে বিএনপি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘যাতে বাংলাদেশের সকল অর্গানের ব্যালেন্স (সব অঙ্গের মধ্যে ভারসাম্য) থাকে, সেটা আপনাকে চেষ্টা করতে হবে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। আমরা চাই না প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটি অ্যাফোর্ড করতে পারব না এই মুহূর্তে। আমরা চাই, আপনার সাথে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। রাষ্ট্র একটা ব্যালেন্স অবস্থায় থাকতে হবে। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না। যেতে পারব না।’
আলোচনায় সংস্কার বাস্তবায়ন প্রশ্নে বিএনপির আগের অবস্থানই তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট হলে আগামী সংসদ জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। নির্বাচনের বাকি আছে চার মাস। দুই মাস আগে তফসিল দিতে হবে। এর আগে আরেকটি নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কি না, তিনি সে প্রশ্ন রাখেন।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়; এক দিনে করার প্রস্তাব উদ্ভট আলোচনা। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিতে হবে। তাহের বলেন, বিএনপি জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে আগে দ্বিমত করলেও পরে গণভোটের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘শেষ মুহূর্তে কিছু বিষয় আমাদের মধ্যে সংশয়ের জায়গা তৈরি করেছে। আসলে জাতিকে অস্পষ্ট রেখে কোনো উদ্যোগ সফল করা সম্ভব নয়। আজকের এই দিনে আমরা আসতে পেরেছি এমন একটি অবস্থানে, যাতে বাংলাদেশে আর কখনো ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে। বাংলাদেশ যেন জবাবদিহিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হতে পারে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে ঐক্যবদ্ধ কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলো এক অভূতপূর্ব পদ্ধতিতে, সুন্দর সহনশীল পরিবেশের মধ্য দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে প্রণয়নের দিকে এগিয়েছি।’
আকতার বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য জুলাই সনদের বাস্তবায়নের পথকে পরিষ্কার করা, তারপরই আমরা সনদ স্বাক্ষরের দিকে অগ্রসর হব। সবকিছু পরিষ্কার হওয়ার পর যদি সনদ স্বাক্ষরিত হয়, তবে সেটিই হবে আমাদের সাফল্য।’
স্বাক্ষর শেষে নাগরিকদের মধ্যে বিলি হবে সনদ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, নাগরিকেরা যাতে বুঝতে পারেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কী ঐক্যমতে পৌঁছেছে, রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা কী এবং অগ্রগতি কত দূর হয়েছে, সেটি তাঁরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি, গতকাল ও আজকে কিছু তথ্য এদিক-সেদিক প্রচারিত হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সাংবাদিক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে আমি জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ এবং আপনাদের সহযোগিতায় আমরা আশাবাদী, যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আশা করি, আপনারা এই ঐক্যের ধারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সর্বোপরি, জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবেই, কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের শক্তিকে আমরা একত্রে বজায় রাখব, এই বিশ্বাসেই আমরা দাঁড়িয়ে আছি এবং সেটি অব্যাহত রাখব।’

চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। এখন সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করাটাই শুধু বাকি। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে শেষ সময়ের কাজটুকু সমাধা হওয়া নিয়েই দেখা দেয় গুরুতর সংকট। সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে গতকাল বুধবার দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শেষে আপাতত স্বস্তি এসেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল শুক্রবার সনদে স্বাক্ষর করবে দলগুলো।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে গত মঙ্গলবার রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর কাছে চূড়ান্ত সনদের অনুলিপি পাঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অনুলিপির সঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোর কাছে শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রও পাঠানো হয়। এর পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ দলটির কয়েক নেতা। এনসিপি নেতারা সেখানে এত দিনের আলোচনা বাদ দিয়ে বিদ্যমান সংবিধান স্থগিত করে নতুন সংবিধানের জন্য নতুন করে কাজ শুরুর দাবি জানান। এটা না হলে এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে না বলেও জানান দলটির নেতারা। সংকট সমাধানে মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন দল ও সরকারের কয়েক উপদেষ্টার সঙ্গে কমিশন যোগাযোগ করে। এ সময় ইতালি থেকে দেশের পথে রওনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। উপায় না পেয়ে তাঁর সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করে কমিশন। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে এনসিপিকে বোঝাতে কমিশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়। এরপরেও তারা তাদের অবস্থানেই অনড় থাকে। এ অবস্থায় সংকটের সমাধান খুঁজতে মঙ্গলবার রাতের আলোচনা গড়ায় বুধবারে। প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর কমিশন সদস্যরা তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন। সংকটের বিষয়ে কমিশন প্রধান উপদেষ্টাকে জানায়। এই বৈঠকের আগেই এদিন সন্ধ্যায় দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে নাহিদ তাঁদের দলের অবস্থান তুলে ধরেন। সব শুনে এ সময় সংকট সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। তাঁদের দাবিদাওয়ার বিষয়েও এ সময় আশ্বস্ত করেন তিনি। নাহিদের সঙ্গে এই বৈঠকের মধ্য দিয়েই মূলত বিদ্যমান সংকটের আপাতত স্বস্তি মেলে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
একটি সূত্র দাবি করছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নাহিদ ইসলাম বিস্তারিত আলাপ করেছেন। তাতে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতির কিছুটা সমাধান হয়েছে। কিন্তু তাঁদের মনে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এদিকে আপাতত স্বস্তি মিললেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে কি করবে না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেনি এনসিপি। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা বললেও সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেনি জামায়াত। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস ও নেজামে ইসলাম পার্টিও একই অবস্থানে আছে। অন্যদিকে সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছে সিপিবি, বাসদ, বাসদ মার্ক্সবাদী, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম।
৩০ দল ও জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
জুলাই সনদ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ মার্ক্সবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, ১২ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ ৩১টি দল ও জোটের নেতারা বৈঠকে অংশ নেন।
উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে বলে বৈঠকে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আগামী শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর হবে। জাতির মধ্যে সঞ্চারিত করার জন্য আমাদের এই অনুষ্ঠান। আমরা সেখানে উৎসবমুখরভাবে যাব। এই দলিলে সই করব। উৎসবে সারা জাতি শরিক হবে।’
ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে জুলাই সনদেরই অংশ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে বারবার বলছি। যখন যেখানে গেছি বলেছি। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয়, তার সবই আমরা করব। এর সঙ্গে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করব না।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান না হলে অন্য কোনোভাবে এই সনদ রচনা করা সম্ভব ছিল না উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘কেউ আশা করেনি সত্যি এটা হবে। অনেকে এটা নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন। কেউ কেউ এটাকে তামাশা বলেছেন। তবে আমি আশাবাদী ছিলাম, একটা না একটা কিছু হবে। এটা না হলে কাজটা এলোমেলো হয়ে যেত। আমরা এলোমেলো না করে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে করতে পেরেছি। প্রকৃতপক্ষে কী সংস্কার হবে, আপনারা তা করে দিয়েছেন। আমরা জুলাই সনদের স্বাক্ষরের বড় উৎসবে শরিক হব। যে কলম দিয়ে স্বাক্ষরিত হবে, তা জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। আপনাদের ছবি জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।’
সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে বারবার বলছি। যখন যেখানে গেছি বলেছি। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। এটা ঐকমত্য কমিশনের সনদেরই একটি অংশ। সনদের সঙ্গে এটা (নির্বাচন) জড়িত। আমরা যে ঘোষণা করেছি, তা রক্ষা করতে হবে। এটা এমন নয় যে, কথার কথা বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে, দুই দিন পরে হবে...এটা ও রকম নয়। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয়, তার সবই আমরা করব। এর সঙ্গে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করব না। আপনারা সবাই মিলে সনদ তৈরি করেছেন।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের কন্টিনিউয়াস (ধারাবাহিক) সমর্থন আপনার প্রতি ছিল, আছে। কিন্তু এটা কন্ডিশনাল (শর্তযুক্ত)। আমাদের সমর্থন আরও অব্যাহত থাকবে, এটা সীমাহীন নয়। আমরা চাই, আপনার নেতৃত্বে একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন, এটাই হচ্ছে কন্ডিশন (শর্ত)। আপনার প্রতি আমাদের সীমাহীন সমর্থন নয়, আমাদের সীমারেখা আছে। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য এই সীমারেখার মধ্যে আপনাকে সমর্থন দিচ্ছি। আপনি দয়া করে এটা অনুধাবনের চেষ্টা করবেন।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সচিবালয়ে বদলি পদায়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ একটি ‘ক্যাবিনেট কমিটি’ করা হয়েছে। এটার কোনো চর্চা নেই, এটা কোনো নিয়ম বা রীতি নয়। এ বিষয়ে বিএনপি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘যাতে বাংলাদেশের সকল অর্গানের ব্যালেন্স (সব অঙ্গের মধ্যে ভারসাম্য) থাকে, সেটা আপনাকে চেষ্টা করতে হবে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। আমরা চাই না প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটি অ্যাফোর্ড করতে পারব না এই মুহূর্তে। আমরা চাই, আপনার সাথে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। রাষ্ট্র একটা ব্যালেন্স অবস্থায় থাকতে হবে। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না। যেতে পারব না।’
আলোচনায় সংস্কার বাস্তবায়ন প্রশ্নে বিএনপির আগের অবস্থানই তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট হলে আগামী সংসদ জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। নির্বাচনের বাকি আছে চার মাস। দুই মাস আগে তফসিল দিতে হবে। এর আগে আরেকটি নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কি না, তিনি সে প্রশ্ন রাখেন।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়; এক দিনে করার প্রস্তাব উদ্ভট আলোচনা। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিতে হবে। তাহের বলেন, বিএনপি জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে আগে দ্বিমত করলেও পরে গণভোটের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘শেষ মুহূর্তে কিছু বিষয় আমাদের মধ্যে সংশয়ের জায়গা তৈরি করেছে। আসলে জাতিকে অস্পষ্ট রেখে কোনো উদ্যোগ সফল করা সম্ভব নয়। আজকের এই দিনে আমরা আসতে পেরেছি এমন একটি অবস্থানে, যাতে বাংলাদেশে আর কখনো ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে। বাংলাদেশ যেন জবাবদিহিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হতে পারে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে ঐক্যবদ্ধ কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলো এক অভূতপূর্ব পদ্ধতিতে, সুন্দর সহনশীল পরিবেশের মধ্য দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে প্রণয়নের দিকে এগিয়েছি।’
আকতার বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য জুলাই সনদের বাস্তবায়নের পথকে পরিষ্কার করা, তারপরই আমরা সনদ স্বাক্ষরের দিকে অগ্রসর হব। সবকিছু পরিষ্কার হওয়ার পর যদি সনদ স্বাক্ষরিত হয়, তবে সেটিই হবে আমাদের সাফল্য।’
স্বাক্ষর শেষে নাগরিকদের মধ্যে বিলি হবে সনদ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, নাগরিকেরা যাতে বুঝতে পারেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কী ঐক্যমতে পৌঁছেছে, রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা কী এবং অগ্রগতি কত দূর হয়েছে, সেটি তাঁরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি, গতকাল ও আজকে কিছু তথ্য এদিক-সেদিক প্রচারিত হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সাংবাদিক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে আমি জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ এবং আপনাদের সহযোগিতায় আমরা আশাবাদী, যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আশা করি, আপনারা এই ঐক্যের ধারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সর্বোপরি, জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবেই, কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের শক্তিকে আমরা একত্রে বজায় রাখব, এই বিশ্বাসেই আমরা দাঁড়িয়ে আছি এবং সেটি অব্যাহত রাখব।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দিল অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে...
২ ঘণ্টা আগে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা বলয়। গত দুই দিনে ১০-১২টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সে ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেনি।
৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চার বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
৭ ঘণ্টা আগে
এক দিনে ২৩ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার রাতে নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
৭ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দিল অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ওই নির্বাচনের দিনই হবে গণভোট। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫ জারি করেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি এই আদেশ জারি করেন। আদেশে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠান, গণভোটের সময় ও ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্ন এবং গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য আইন প্রণয়নের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আদেশের ৪ অনুচ্ছেদে জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কারসম্পর্কিত চারটি প্রস্তাবের ওপর এক প্রশ্নে ‘হ্যাঁ বা না’ ভোটের কথা বলা হয়। আর ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘এই আদেশ জারির অব্যবহিত পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন এই আদেশ অনুসারে গণভোট অনুষ্ঠান করা হইবে।’ এ ছাড়া গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে যথোপযুক্ত আইন প্রণয়ন করবে বলে আদেশের ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়।
গণভোট প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমরা সকল বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোটও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে না। নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে। গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।’ তিনি এ সময় জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্নের চারটি বিষয়ও পড়ে শোনান। গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই প্রতিনিধিরা একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সংবিধান-সংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাবের সমাধান হয়েছে। যার মধ্যে ৩০টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, বাকি ১৮টি প্রস্তাবের দলগুলোর আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) ছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে গণভোটের আপত্তি বাদ দেওয়া হয়েছিল। গতকাল জারি হওয়া আদেশে কিছুটা সংশোধন করা হয়। যেখানে সাতটি প্রস্তাবে আপত্তি রাখা হয়নি। সেগুলো হলো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের গঠন; সংবিধান সংশোধন (সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ), তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা; ন্যায়পাল নিয়োগ; সরকারি কর্ম কমিশনে নিয়োগ; মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ; দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ। এসব প্রস্তাবে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দলের আপত্তি ছিল।
মূলনীতিগুলো: প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান; জাতীয় সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোটদান; আন্তর্জাতিক চুক্তি আইনসভায় অনুমোদনে দেওয়া দলগুলোর আপত্তির বিষয়টি গণভোটে রাখা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে গণভোটের ফলাফল ইতিবাচক হলে ক্ষমতাসীন দল প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। মূলনীতি ছাড়া বাকি তিনটিতে বিএনপির আপত্তি রয়েছে।
১৮০ দিন দ্বৈত ভূমিকা পালন করবে সংসদ
গণভোটের ফলাফল ইতিবাচক হলে আগামী সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তারা একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের পিআরের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।
রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলীয় স্বার্থ অতিক্রম করে, সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় চাওয়াকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ সিদ্ধান্ত জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে। একটি উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচনের দিকে জাতি এগিয়ে যাবে। এর মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করব। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছালাম।’
জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে জারি করার দাবি জানিয়ে আসছিল জামায়াত ও এনসিপি। অন্যদিকে বিএনপি আদেশ নয়, প্রজ্ঞাপনের কথা বলেছিল। কিন্তু গতকাল উপদেষ্টা পরিষদে আদেশ চূড়ান্ত করার পর সই করার জন্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পাঠানো হয়। দুপুরে আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আদেশ জারি করা হয়।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দিল অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ওই নির্বাচনের দিনই হবে গণভোট। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫ জারি করেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি এই আদেশ জারি করেন। আদেশে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠান, গণভোটের সময় ও ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্ন এবং গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য আইন প্রণয়নের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আদেশের ৪ অনুচ্ছেদে জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কারসম্পর্কিত চারটি প্রস্তাবের ওপর এক প্রশ্নে ‘হ্যাঁ বা না’ ভোটের কথা বলা হয়। আর ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘এই আদেশ জারির অব্যবহিত পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন এই আদেশ অনুসারে গণভোট অনুষ্ঠান করা হইবে।’ এ ছাড়া গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে যথোপযুক্ত আইন প্রণয়ন করবে বলে আদেশের ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়।
গণভোট প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমরা সকল বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোটও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে না। নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে। গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।’ তিনি এ সময় জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্নের চারটি বিষয়ও পড়ে শোনান। গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই প্রতিনিধিরা একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সংবিধান-সংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাবের সমাধান হয়েছে। যার মধ্যে ৩০টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, বাকি ১৮টি প্রস্তাবের দলগুলোর আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) ছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে গণভোটের আপত্তি বাদ দেওয়া হয়েছিল। গতকাল জারি হওয়া আদেশে কিছুটা সংশোধন করা হয়। যেখানে সাতটি প্রস্তাবে আপত্তি রাখা হয়নি। সেগুলো হলো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের গঠন; সংবিধান সংশোধন (সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ), তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা; ন্যায়পাল নিয়োগ; সরকারি কর্ম কমিশনে নিয়োগ; মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ; দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগ। এসব প্রস্তাবে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দলের আপত্তি ছিল।
মূলনীতিগুলো: প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান; জাতীয় সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোটদান; আন্তর্জাতিক চুক্তি আইনসভায় অনুমোদনে দেওয়া দলগুলোর আপত্তির বিষয়টি গণভোটে রাখা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে গণভোটের ফলাফল ইতিবাচক হলে ক্ষমতাসীন দল প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। মূলনীতি ছাড়া বাকি তিনটিতে বিএনপির আপত্তি রয়েছে।
১৮০ দিন দ্বৈত ভূমিকা পালন করবে সংসদ
গণভোটের ফলাফল ইতিবাচক হলে আগামী সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তারা একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের পিআরের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।
রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলীয় স্বার্থ অতিক্রম করে, সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় চাওয়াকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ সিদ্ধান্ত জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে। একটি উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচনের দিকে জাতি এগিয়ে যাবে। এর মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করব। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছালাম।’
জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে জারি করার দাবি জানিয়ে আসছিল জামায়াত ও এনসিপি। অন্যদিকে বিএনপি আদেশ নয়, প্রজ্ঞাপনের কথা বলেছিল। কিন্তু গতকাল উপদেষ্টা পরিষদে আদেশ চূড়ান্ত করার পর সই করার জন্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পাঠানো হয়। দুপুরে আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আদেশ জারি করা হয়।

চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। এখন সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করাটাই শুধু বাকি। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে শেষ সময়ের কাজটুকু সমাধা হওয়া নিয়েই দেখা দেয় গুরুতর সংকট। সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে গতকাল বুধবার দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের...
১৬ অক্টোবর ২০২৫
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা বলয়। গত দুই দিনে ১০-১২টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সে ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেনি।
৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চার বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
৭ ঘণ্টা আগে
এক দিনে ২৩ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার রাতে নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
৭ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা বলয়। গত দুই দিনে ১০-১২টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সে ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। তবে ঢাকার বাইরে রেললাইনে নাশকতার চেষ্টা, বাস-ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়ক ও প্রবেশপথে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেনাসদস্যদের টহল জোরদার করা হয়। সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয় সর্বত্র। গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৬০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা নিয়ে অনলাইনে কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। এরপর গত মঙ্গল ও বুধবার ২০টির বেশি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। তবে গতকাল এমন ঘটনা কম ঘটেছে। গতকাল সকালে মিরপুরে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট-সংলগ্ন (পিওএম) কাফরুল থানার সামনে দুটি ককটেল নিক্ষেপের চেষ্টা করেন এক যুবক। স্থানীয় জনতা ও পুলিশ সদস্যদের তৎপরতায় তাঁকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়। এ ছাড়া ধানমন্ডি ৩২ ও শাহবাগ থেকে সন্দেহভাজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুই সদস্যকে আটক করা হয়।
এদিকে গতকাল বেলা ১টার দিকে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেখানে ভবনের কয়েকটি ম্যুরাল ভাঙচুর এবং চতুর্থ তলার ফাঁকা স্থানে কাঠ, কাগজ ও ব্যানার জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ভবনের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, সুপ্রিম কোর্ট এলাকা, কাকরাইল, পল্টনসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রবেশপথে অবস্থান নেয় পুলিশের সাঁজোয়া যান; প্রবেশের সময় আইনজীবী ও সাংবাদিকদেরও তল্লাশি করা হয়। ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতেও একইভাবে কড়া তল্লাশি চলে। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, আবদুল্লাহপুর, শনির আখড়া, মাতুয়াইল, দোলাইরপাড় ও পোস্তগোলা ফ্লাইওভার এলাকায় বিশেষ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফের পরপর তিনটি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বিমানবন্দর গোলচত্বরসংলগ্ন প্রবেশ গেট ও সেন্টার পয়েন্ট ইউনিমার্ট মার্কেটের সামনে গতকাল রাত সোয়া ১০টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটে। এর আগে গোলচত্বরসংলগ্ন বিমানবন্দরে প্রবেশ পথের মূল গেটে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
গতকালের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিমানবন্দরের বিআরটি উড়াল সড়কের ওপর দিয়ে উত্তরার দিকে একটি ট্রাক যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে ট্রাক থেকে তিনটি ককটেল বিমানবন্দরের গেট লক্ষ্য করে ছোড়া হয়। এর পরপরই ট্রাকটি চলে যায়।
ককটেল বিস্ফোরণের সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গেটে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন এপিসি চন্দ্র শেখর মণ্ডল। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হঠাৎ উড়াল সড়কের ওপর থেকে তিনটি ককটেল মেরে কে বা কারা পালিয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে ডিএমপির বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাসলিমা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য পটকা ফোটানো হয়েছে।’
ট্রেনে নাশকতার চেষ্টা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের দুবলা এলাকায় বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে রেললাইনে আগুন দেওয়া হয়। এতে চট্টগ্রামগামী তূর্ণা নিশীথা পাঘাচং রেলস্টেশনে এবং একই পথের বিজয় এক্সপ্রেস ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে আটকা পড়ে। তবে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বগুড়ার সুখানপুকুর এলাকায় গতকাল ভোরে রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে নাশকতার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে রেলের কর্মীরা ফিশপ্লেটগুলো পুনরায় স্থাপন করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখেন।
পেট্রলবোমা হামলা
গোপালগঞ্জে গতকাল ভোরে গণপূর্ত অফিসে বেশ কয়েকটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় একটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। খুলনা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সেরেস্তায় বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পেট্রলবোমা হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরপরই টুটপাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
বাস-ট্রাকে আগুন
শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা এলাকায় গতকাল সকালে একটি চিনির ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়ের নাওডোবা এলাকায় মিছিল করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এতে আধা ঘণ্টার বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আনারপুরা এলাকায় গতকাল ভোরে থেমে থাকা একটি পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পুড়ে যায়।
টাঙ্গাইলের বাসাইলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাঐখোলা এলাকায় বুধবার রাত ১২টার দিকে চলন্ত বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। যশোর নতুন উপশহর পার্কসংলগ্ন এলাকায় গতকাল ভোরে পার্কিং করে রাখা একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া গতকাল সদর উপজেলার সুলতানপুর বাবুপাড়া গ্রাম থেকে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক তিতাস উদ্দিন।
সড়ক অবরোধ
ফরিদপুরে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের শুয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গতকাল সকালে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহাসড়ক অবরোধ করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে। জেলা যুবলীগ নেতা দেবাশীষ নয়ন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এই কর্মসূচি লাইভ করেন। এতে দেখায়, শতাধিক স্থানীয় নেতা-কর্মী দেশীয় অস্ত্র রামদা, ঢাল-সড়কি হাতে মহাসড়কে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে জানতে সকাল সোয়া ৯টার দিকে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফ হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে তিনি কেটে দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইলে কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুর জেলার শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সূর্যনগরসংলগ্ন স্থানে গতকাল ভোরে গাছ ফেলে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তবে খবর পেয়ে শিবচর উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে গাছ সরিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
অন্যদিকে গতকাল রাতে মাদারীপুর-বরিশাল মহাসড়কের মোস্তফাপুর এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করা হয়। খাগড়াছড়ির আলুটিলা এলাকায় বুধবার দিবাগত রাতে গাছ কেটে সড়ক বন্ধের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। চট্টগ্রামের মইজ্জ্যারটেক, ধলই ও জলিল গেট এলাকায় এবং চট্টগ্রাম-বাঁশখালী সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী টাউন হল মোড়ে বুধবার রাতে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কয়েক নেতা-কর্মী। এরপর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের ৪ নেতাসহ ১২ জনকে আটক করে পুলিশ।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা বলয়। গত দুই দিনে ১০-১২টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সে ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। তবে ঢাকার বাইরে রেললাইনে নাশকতার চেষ্টা, বাস-ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়ক ও প্রবেশপথে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেনাসদস্যদের টহল জোরদার করা হয়। সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয় সর্বত্র। গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৬০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা নিয়ে অনলাইনে কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। এরপর গত মঙ্গল ও বুধবার ২০টির বেশি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। তবে গতকাল এমন ঘটনা কম ঘটেছে। গতকাল সকালে মিরপুরে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট-সংলগ্ন (পিওএম) কাফরুল থানার সামনে দুটি ককটেল নিক্ষেপের চেষ্টা করেন এক যুবক। স্থানীয় জনতা ও পুলিশ সদস্যদের তৎপরতায় তাঁকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়। এ ছাড়া ধানমন্ডি ৩২ ও শাহবাগ থেকে সন্দেহভাজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুই সদস্যকে আটক করা হয়।
এদিকে গতকাল বেলা ১টার দিকে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেখানে ভবনের কয়েকটি ম্যুরাল ভাঙচুর এবং চতুর্থ তলার ফাঁকা স্থানে কাঠ, কাগজ ও ব্যানার জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ভবনের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, সুপ্রিম কোর্ট এলাকা, কাকরাইল, পল্টনসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রবেশপথে অবস্থান নেয় পুলিশের সাঁজোয়া যান; প্রবেশের সময় আইনজীবী ও সাংবাদিকদেরও তল্লাশি করা হয়। ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতেও একইভাবে কড়া তল্লাশি চলে। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, আবদুল্লাহপুর, শনির আখড়া, মাতুয়াইল, দোলাইরপাড় ও পোস্তগোলা ফ্লাইওভার এলাকায় বিশেষ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফের পরপর তিনটি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বিমানবন্দর গোলচত্বরসংলগ্ন প্রবেশ গেট ও সেন্টার পয়েন্ট ইউনিমার্ট মার্কেটের সামনে গতকাল রাত সোয়া ১০টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটে। এর আগে গোলচত্বরসংলগ্ন বিমানবন্দরে প্রবেশ পথের মূল গেটে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
গতকালের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিমানবন্দরের বিআরটি উড়াল সড়কের ওপর দিয়ে উত্তরার দিকে একটি ট্রাক যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে ট্রাক থেকে তিনটি ককটেল বিমানবন্দরের গেট লক্ষ্য করে ছোড়া হয়। এর পরপরই ট্রাকটি চলে যায়।
ককটেল বিস্ফোরণের সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গেটে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন এপিসি চন্দ্র শেখর মণ্ডল। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হঠাৎ উড়াল সড়কের ওপর থেকে তিনটি ককটেল মেরে কে বা কারা পালিয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে ডিএমপির বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাসলিমা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য পটকা ফোটানো হয়েছে।’
ট্রেনে নাশকতার চেষ্টা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের দুবলা এলাকায় বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে রেললাইনে আগুন দেওয়া হয়। এতে চট্টগ্রামগামী তূর্ণা নিশীথা পাঘাচং রেলস্টেশনে এবং একই পথের বিজয় এক্সপ্রেস ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে আটকা পড়ে। তবে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বগুড়ার সুখানপুকুর এলাকায় গতকাল ভোরে রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে নাশকতার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে রেলের কর্মীরা ফিশপ্লেটগুলো পুনরায় স্থাপন করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখেন।
পেট্রলবোমা হামলা
গোপালগঞ্জে গতকাল ভোরে গণপূর্ত অফিসে বেশ কয়েকটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় একটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। খুলনা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সেরেস্তায় বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পেট্রলবোমা হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরপরই টুটপাড়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
বাস-ট্রাকে আগুন
শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা এলাকায় গতকাল সকালে একটি চিনির ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়ের নাওডোবা এলাকায় মিছিল করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এতে আধা ঘণ্টার বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আনারপুরা এলাকায় গতকাল ভোরে থেমে থাকা একটি পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পুড়ে যায়।
টাঙ্গাইলের বাসাইলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাঐখোলা এলাকায় বুধবার রাত ১২টার দিকে চলন্ত বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। যশোর নতুন উপশহর পার্কসংলগ্ন এলাকায় গতকাল ভোরে পার্কিং করে রাখা একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া গতকাল সদর উপজেলার সুলতানপুর বাবুপাড়া গ্রাম থেকে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক তিতাস উদ্দিন।
সড়ক অবরোধ
ফরিদপুরে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের শুয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গতকাল সকালে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহাসড়ক অবরোধ করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে। জেলা যুবলীগ নেতা দেবাশীষ নয়ন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এই কর্মসূচি লাইভ করেন। এতে দেখায়, শতাধিক স্থানীয় নেতা-কর্মী দেশীয় অস্ত্র রামদা, ঢাল-সড়কি হাতে মহাসড়কে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে জানতে সকাল সোয়া ৯টার দিকে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফ হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে তিনি কেটে দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইলে কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুর জেলার শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সূর্যনগরসংলগ্ন স্থানে গতকাল ভোরে গাছ ফেলে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তবে খবর পেয়ে শিবচর উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে গাছ সরিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।
অন্যদিকে গতকাল রাতে মাদারীপুর-বরিশাল মহাসড়কের মোস্তফাপুর এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করা হয়। খাগড়াছড়ির আলুটিলা এলাকায় বুধবার দিবাগত রাতে গাছ কেটে সড়ক বন্ধের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। চট্টগ্রামের মইজ্জ্যারটেক, ধলই ও জলিল গেট এলাকায় এবং চট্টগ্রাম-বাঁশখালী সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী টাউন হল মোড়ে বুধবার রাতে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কয়েক নেতা-কর্মী। এরপর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের ৪ নেতাসহ ১২ জনকে আটক করে পুলিশ।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]

চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। এখন সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করাটাই শুধু বাকি। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে শেষ সময়ের কাজটুকু সমাধা হওয়া নিয়েই দেখা দেয় গুরুতর সংকট। সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে গতকাল বুধবার দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের...
১৬ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দিল অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে...
২ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চার বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
৭ ঘণ্টা আগে
এক দিনে ২৩ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার রাতে নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
৭ ঘণ্টা আগেবিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চার বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এ এন এম বজলুর রশিদকে রাজশাহী, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমানকে বরিশাল এবং বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মীকে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদকে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার পদে বদলি করা হয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চার বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এ এন এম বজলুর রশিদকে রাজশাহী, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমানকে বরিশাল এবং বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মীকে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদকে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার পদে বদলি করা হয়েছে।

চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। এখন সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করাটাই শুধু বাকি। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে শেষ সময়ের কাজটুকু সমাধা হওয়া নিয়েই দেখা দেয় গুরুতর সংকট। সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে গতকাল বুধবার দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের...
১৬ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দিল অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে...
২ ঘণ্টা আগে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা বলয়। গত দুই দিনে ১০-১২টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সে ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেনি।
৩ ঘণ্টা আগে
এক দিনে ২৩ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার রাতে নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
৭ ঘণ্টা আগেবিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

এক দিনে ২৩ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার রাতে নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
নতুন ডিসিদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে চট্টগ্রামের ডিসি পদে বদলি করা হয়েছে। বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক এস এম মেহেদী হাসানকে লক্ষ্মীপুর, পরিকল্পনা বিভাগের উপসচিব সৈয়দা নুরমহল আশরাফীকে মুন্সিগঞ্জ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুর রহমানকে নেত্রকোনায় এবং অর্থ বিভাগের উপসচিব মো. শাহাদাত হোসেন মাসুদকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নওগাঁ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আনোয়ার সাদাত খাগড়াছড়ি, রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসান কুমিল্লা এবং জনবিভাগের উপসচিব মো. রায়হান কবির নারায়ণগঞ্জের ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহেদ মোস্তফাকে পাবনা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রেজাউল করিমকে ঢাকা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ এনামুল আহসানকে রংপুর, ফরিদপুরের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মোহাম্মদ আশেক হাসানকে যশোর এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার একান্ত সচিব ড. সৈয়দ এনামুল কবিরকে মেহেরপুরের ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে নোয়াখালী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আলম হোসেনকে গাজীপুর, এস্টাব্লিশমেন্ট অব ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লাকে গাইবান্ধা, ভূমি সংস্কার বোর্ডের উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার অন্নপূর্ণা দেবনাথকে কুড়িগ্রাম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টার একান্ত সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে মাদারীপুর, দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক তৌহিদুজ্জামান পাভেলকে মৌলভীবাজার, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫) নর্দার্ন রুট প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুল আলম সুমনকে বরিশাল, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব তাছলিমা আক্তারকে বরগুনা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব নাজমা আশরাফীকে রাঙামাটির ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
৮ নভেম্বর মধ্যরাতে ১৫ জেলায় এবং ৯ নভেম্বর আরও ১৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এদের মধ্যে দুই ডিসির নিয়োগ আদেশ বাতিল করা হয়েছে। ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এক সপ্তাহের মধ্যে তিন দফায় ৫০ ডিসি নিয়োগ দিল সরকার।

এক দিনে ২৩ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার রাতে নতুন ডিসি নিয়োগ দিয়ে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
নতুন ডিসিদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে চট্টগ্রামের ডিসি পদে বদলি করা হয়েছে। বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক এস এম মেহেদী হাসানকে লক্ষ্মীপুর, পরিকল্পনা বিভাগের উপসচিব সৈয়দা নুরমহল আশরাফীকে মুন্সিগঞ্জ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুর রহমানকে নেত্রকোনায় এবং অর্থ বিভাগের উপসচিব মো. শাহাদাত হোসেন মাসুদকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নওগাঁ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আনোয়ার সাদাত খাগড়াছড়ি, রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসান কুমিল্লা এবং জনবিভাগের উপসচিব মো. রায়হান কবির নারায়ণগঞ্জের ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহেদ মোস্তফাকে পাবনা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রেজাউল করিমকে ঢাকা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ এনামুল আহসানকে রংপুর, ফরিদপুরের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মোহাম্মদ আশেক হাসানকে যশোর এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার একান্ত সচিব ড. সৈয়দ এনামুল কবিরকে মেহেরপুরের ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে নোয়াখালী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আলম হোসেনকে গাজীপুর, এস্টাব্লিশমেন্ট অব ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লাকে গাইবান্ধা, ভূমি সংস্কার বোর্ডের উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার অন্নপূর্ণা দেবনাথকে কুড়িগ্রাম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টার একান্ত সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে মাদারীপুর, দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক তৌহিদুজ্জামান পাভেলকে মৌলভীবাজার, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫) নর্দার্ন রুট প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুল আলম সুমনকে বরিশাল, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব তাছলিমা আক্তারকে বরগুনা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব নাজমা আশরাফীকে রাঙামাটির ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
৮ নভেম্বর মধ্যরাতে ১৫ জেলায় এবং ৯ নভেম্বর আরও ১৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এদের মধ্যে দুই ডিসির নিয়োগ আদেশ বাতিল করা হয়েছে। ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এক সপ্তাহের মধ্যে তিন দফায় ৫০ ডিসি নিয়োগ দিল সরকার।

চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। এখন সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করাটাই শুধু বাকি। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে শেষ সময়ের কাজটুকু সমাধা হওয়া নিয়েই দেখা দেয় গুরুতর সংকট। সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে গতকাল বুধবার দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের...
১৬ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দিল অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে...
২ ঘণ্টা আগে
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তা বলয়। গত দুই দিনে ১০-১২টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সে ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটেনি।
৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চার বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
৭ ঘণ্টা আগে