Ajker Patrika

মিয়ানমারের মর্টার-গোলায় সীমান্তে আতঙ্ক, পালাচ্ছে মানুষ

আমানুর রহমান রনি ও মাঈনুদ্দিন খালেদ, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ২৭
মিয়ানমারের মর্টার-গোলায় সীমান্তে আতঙ্ক, পালাচ্ছে মানুষ

ওপারে মিয়ানমারে লড়াই তীব্রতর হয়ে উঠেছে। একের পর এক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে সামরিক বাহিনী। লড়াইয়ের আঁচ লাগছে সীমান্তের এপার বাংলাদেশেও। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হওয়ার পর গতকাল উখিয়ায় আহত হয়েছেন সাতজন। এর পর থেকে সীমান্ত এলাকার মানুষ সরে যাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায়। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছেন মিয়ানমার বাহিনীর সদস্যরা। এ অবস্থায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে সতর্ক করে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার। 

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর বালুখালী জমিদারপাড়ায় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য প্রয়াত ইসলাম খানের বাড়ি। সীমান্ত লাগোয়া বাড়িটির পূর্ব দিকে আধা কিলোমিটার ধানখেত। এরপর নাফ নদী। ওপারে একটি সড়ক, তার পাশ ঘেঁষে মিয়ানমারের ডেকুবুনিয়া চেকপোস্ট। এই চেকপোস্ট দখলে নিতে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় গোলাগুলি শুরু হতেই স্থানীয় লোকজনকে হুড়মুড়িয়ে প্রয়াত ইসলাম খানের বাড়ির টিনের বেড়ার পাশে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। এ সময় সংঘাতে থাকা মিয়ানমারের দুই পক্ষই বাংলাদেশেও ঢুকে পড়ে।

স্থানীয় সূত্র বলেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়াসংলগ্ন এলাকায় মিয়ানমারের ভেতরে দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা স্যালভেশন অর্গানাইজেশনের (আরএসও) ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলছে। সেখান থেকে ছুটে আসা মর্টার শেলের আঘাতে বান্দরবানে গত সোমবার দুজন নিহত হয়েছেন। গত কয়েক দিনে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে গতকাল উখিয়া সীমান্ত এলাকায় সাত বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। এদিকে যুদ্ধে টিকতে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যসংখ্যা বেড়ে ২৬৪ জন হয়েছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

গতকাল উখিয়ার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দামনখালী, রহমতেরবিল, চাকমা কাটাসহ অন্তত সাতটি এলাকায় গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। গোলাগুলির একপর্যায়ে কয়েকটি গুলি বালুখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে পড়ে। অবশ্য স্কুলটি বন্ধ ছিল।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম গহুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রহমতেরবিলে সাত বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কজনক। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমাকে রহমতের বিলের বাসিন্দারা ফোন করে জানান, বৃষ্টির মতো গোলাগুলি হচ্ছে। আমি দৌড়ে সেখানে যাই। এ সময় মিয়ানমার বাহিনীর ১১১ জন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। আমরা, বিজিবি গিয়ে তাদের ধরে ফেলি। একই সময় একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ২৪ জনকে আটক করি। তাদের কাছে অস্ত্র ছিল। সেগুলো বিজিবি হেফাজতে নিয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার পর গোলাগুলির শব্দ আর পাওয়া যায়নি।’

এদিকে সকাল সোয়া ৯টার দিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টার শেল এসে পড়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের মধ্যমপাড়ায়। মর্টার শেলটি ঘুমধুম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়ির উঠানের আমগাছে লেগে মাটিতে গেঁথে যায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’

নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্ত এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি পাহারা দিচ্ছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। এই এলাকায় গতকাল কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। তবে সীমান্ত এলাকার মানুষ কেউ বাড়িঘরে থাকছে না।

গতকাল বিকেল ৪টায় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্ত এলাকায় সমস্যার কারণে সাময়িকভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য এলাকার লোকজনকে অনুরোধ করা হচ্ছে। দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে, সেখানেও যেতে পারবে স্থানীয় বাসিন্দারা।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতকাল বিকেল পর্যন্ত স্থানীয় কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি।

সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে 
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বিজিবির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা ধৈর্য ধারণ করে মানবিক দিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি।’

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘সোমবার রাত পর্যন্ত মিয়ানমারের বিজিপি, সেনাবাহিনী, অন্যান্যসহ ১১৫ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করে আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে ১১৪ জন যোগ হয়েছেন। দুপুরের মধ্যে আরও ৩৫ জন এসেছেন। বর্তমানে ২৬৪ জন আছেন। আমরা তাঁদের আশ্রয় ও খাবার দিয়েছি। তাঁদের মধ্যে আহত ১৫ জন। ৮ জনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের ৪ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এবং বাকিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় আসার পথে খবর পেলাম, ৬৫ জন রোহিঙ্গা নৌকায় করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। টেকনাফে বিজিবি তাদের ঠেকিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ করছে। আমরা আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেব না।’

রাষ্ট্রদূতকে তলব, মর্টার ছোড়ায় প্রতিবাদ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা জানান, সামরিক কাজে ব্যবহৃত হয় মিয়ানমারের এমন কোনো উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার যাতে বাংলাদেশের আকাশসীমায় না ঢোকে, সে জন্য দেশটিকে সতর্ক করে দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি সরকার মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির এ সতর্কতার কথা জানান। বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের জন্য রাষ্ট্রদূতের কাছে মহাপরিচালক একটি কূটনৈতিক চিঠিও হস্তান্তর করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষতি হয়, এমন কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। মিয়ানমার সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আর বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

বিজিবির সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ 
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা জানান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, সীমান্ত এলাকায় বিজিবির সঙ্গে পুলিশও কাজ করছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য রাজ্জাককে গতকাল রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সীমান্তে মর্টার শেলের আঘাতে নিহত দুজনের পরিবার কাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘কে মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। আমরা একটা মামলা নিয়েছি। আসামি অজ্ঞাতনামা। তদন্তে যাদের নাম আসবে, পরবর্তী সময়ে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যত বড় অপরাধীই হোক, পিটিয়ে মারা গ্রহণযোগ্য নয়: ধর্ম উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
সোমবার রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের জেলা কর্মশালায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ধর্ম উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সোমবার রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের জেলা কর্মশালায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ধর্ম উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গার্মেন্টস কর্মী দিপু চন্দ্র দাশকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘যত বড় অপরাধীই হোক, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

আজ সোমবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের জেলা কর্মশালায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন ধর্ম উপদেষ্টা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসান, হিন্দু ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, প্রকল্প পরিচালক নিত্য প্রকাশ বিশ্বাসসহ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা।

ময়মনসিংহে দিপু হত্যাকাণ্ড এবং রাজবাড়ীর পাংশায় সংঘটিত পৃথক ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘ময়মনসিংহে দিপু হত্যার ঘটনায় আমরা প্রথম দিন থেকেই দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমরা কোনো দিন চাই না এই কিলিং আউটসাইড দি জুডিশিয়ারি—ইট ইজ নট অ্যাক্সেপ্টেবল টু আস। ইন এনি সারকামস্ট্যান্স উই কান্ট অ্যালাও মব জাস্টিস। তাহলে তো দেশ থাকবে না, সরকার থাকবে না, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থাকবে না; আইন যদি আমি করি, বিচার যদি আমি করি।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘কেউ যদি ধর্ম অবমাননা করে থাকে—করতে পারে, ফেসবুক ওপেন প্ল্যাটফর্ম, করে—তার জন্য আমাদের তো নির্ধারিত আইন আছে। সরকার আছে, ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিজ আছে, জাস্টিস আছে, তার বিচার হবে যদি সে করে থাকে। কিন্তু এটার একটা অজুহাত তুলে কোনো মানুষকে পিটিয়ে মারা এবং তাকে পুড়িয়ে ফেলা—এটা জঘন্যতম কাজ। এটার নিন্দা জানাই।’

দিপু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমাদের গভর্নমেন্টের পক্ষ থেকে আমাদের মাননীয় শিল্প উপদেষ্টাকে দিপুর বাড়িতে পাঠিয়েছি। এই মানুষটাও দরিদ্র। তো ক্যাবিনেটেও আমরা এটা আলোচনা করেছি—দিপুর পরিবারের সমস্ত খরচ বাংলাদেশ সরকার বহন করবে।’

রাজবাড়ীর পাংশার ঘটনায় সাম্প্রদায়িক কোনো যোগ নেই উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে তিনি ঘটনাটির প্রকৃত চিত্র জানতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তি অমিত নামে পরিচিত এবং তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। ডাকাতির সময় গুলি ছোড়ার ঘটনায় স্থানীয়রা তাঁকে ধরে পিটিয়ে হত্যা করে।’

তবে এ প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমরা পিটিয়ে মারার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে চাই। যত বড় অপরাধী হোক, আমাদের তো আইন আছে, ল মাস্ট টেক ইটস ওউন কোর্স। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সে ডাকাত হলেও তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না থাকলে, এভাবে হলে তো আপনারে পিটিয়ে মারবে, আরেকজনকে পিটিয়ে মারবে, আরেকজনের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেবে। এই যে আগুন ধরিয়ে দেওয়া অথবা পিটিয়ে মারা—আমরা এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। আমরা রুল অব ল, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’

আগুন দেওয়া, পিটিয়ে হত্যা—এই সহিংস সংস্কৃতি পরিহার করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই সরকারের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে নমিনেশন পেপার সাবমিটের লাস্ট ডেট। জাতি একটা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একটা নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করছি, আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা, উৎসবমুখর পরিবেশে ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং যারাই ম্যান্ডেট পেয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবেন, আমরা তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমরা পুরোনো ঠিকানায় ফিরে যাব। এটা আমাদের কমিটমেন্ট। আমরা এভাবে এগোচ্ছি এবং ইলেকশন মাস্ট বি হেল্ড ফেয়ার, ফ্রি, ইমপারশিয়াল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ হবে। এটাই আমরা সমস্ত রিটার্নিং অফিসারদের, ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি যারা আছেন তাদের আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো শঙ্কা নেই। প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। কোনো রকমের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল(অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিজিবিও সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের প্রায় ৩৫ হাজার সদস্য নির্বাচনের সময় নিয়োজিত থাকবে। এর মধ্যেও দুই-চারটা অস্ত্র যে দেশে ঢুকছে না তা না। তবে এগুলো ধরাও হচ্ছে। প্রতিদিনই বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। কোনো রকমের কোথাও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

আজ ‎সোমবার বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো শঙ্কা নেই। এবারই নির্বাচনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

কেরানীগঞ্জ মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কেরানীগঞ্জে যেই ব্যক্তি অপকর্মটা ঘটিয়েছে সে পলাতক রয়েছে। কিন্তু তার সহযোগীকে ধরা হয়েছে। পলাতক ওই ব্যক্তিকেও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‎

এসব ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কিনা —এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্ট যারা আছে তারা সব সময়ই এটা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সবার সহযোগিতা যদি থাকে তবে নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর হবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এ রকম একটা নির্বাচনই এই সরকারের দেওয়ার ইচ্ছা এবং এটা বাস্তবায়ন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুয়াশায় গাড়ি চালানো নিরাপদ করতে বিআরটিএর নির্দেশনা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতকালে ঘন কুয়াশার কারণে চালকের দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। এ পরিস্থিতিতে নিরাপদে গাড়ি চালাতে মোটরযান চালক ও মালিকদের জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিআরটিএ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এসব নির্দেশনা প্রকাশ করে।

বিআরটিএ নির্দেশনায় বলা হয়েছে—

১. কুয়াশায় দৃষ্টিসীমার মধ্যে থামানো যায় এমন নিয়ন্ত্রণ উপযোগী ধীর গতিতে সর্বদা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হবে।

২. সর্বদা ‘লো-বিম বা ডিপার’ জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। ‘হাই-বিম বা আপার’ কুয়াশাকে আরও বেশি ঘন করে বিধায় ‘হাই-বিম বা আপার’ জ্বালিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না।

৩. লেন পরিবর্তন/ওভারটেকিং করা যাবে না। যেসব স্থানে দৃষ্টি যায় না বা বাঁক নেওয়ার আগে দেখা যায় না, সেসব স্থানে দরকার হলে বিপদ এড়ানোর জন্য হর্ন বাজাতে হবে।

৪. ঘন কুয়াশার কারণে একেবারেই দেখা না গেলে বা দৃষ্টিসীমা শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেলে নিরাপদ জায়গায় গাড়ি থামিয়ে হেডলাইট বন্ধ করে হ্যাজার্ড লাইট জ্বালাতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসীরা যেন পালাতে না পারে, সতর্ক থাকার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

‎সীমান্ত দিয়ে কোনো অপরাধী বা সন্ত্রাসী যেন পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ‎

আজ ‎সোমবার বিজিবি দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা ও দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবিকে আরও পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ‎

বক্তব্যের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির সাহস ও আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ‎স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং ওই আন্দোলনে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী ছাত্র-জনতার প্রতি সম্মান জানান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিজিবি একটি গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। বর্তমানে বিজিবি একটি “ত্রিমাত্রিক বাহিনী” হিসেবে সীমান্ত সুরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা এবং জনকল্যাণমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।’

বিজিবির সার্বিক উন্নয়নে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

‎স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে কোনো ধরনের মাদক দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা জোরদার করতে হবে।’

একই সঙ্গে অবৈধ পথে দেশীয় পণ্য বিদেশে পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

‎‎চোরাকারবারি ও মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে জড়িত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পাশাপাশি অধীনস্ত সদস্যদের কল্যাণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সর্বদা সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্তসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা অত্যন্ত কৌশল ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, যাতে দেশের স্বার্থ শতভাগ সুরক্ষিত থাকে। সীমান্ত ব্যবহারকারী চোরাকারবারিদের আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় বজায় রাখার নির্দেশ দেন তিনি। ‎

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবি সদস্যদের ‘চেইন অব কমান্ড’-এর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও আনুগত্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বিজিবি দেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে তার গৌরবময় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে এমন প্রত্যাশা তাঁর।

‎‎অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং বিজিবির মহাপরিচালকসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত