Ajker Patrika

অনিশ্চয়তায় ঢাকা বিআরটি কোম্পানি

  • প্রকল্প অসমাপ্ত রেখে শেষ হচ্ছে, কাজ থাকছে না বিআরটি কোম্পানির
  • প্রকল্পের তহবিল থেকে চলে কোম্পানির ব্যয়, অর্থ নিয়েও অনিশ্চয়তা
  • অন্য কাজে যুক্ত হতে চায় কোম্পানিটি, ডিটিসিএর একাধিক প্রস্তাব
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ফাইল ছবি
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ফাইল ছবি

বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প অসমাপ্ত অবস্থায় শেষ করার সরকারের সিদ্ধান্তে বিআরটি পরিচালনার জন্য গঠিত ঢাকা বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির (পিএলসি) ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রকল্পটি চালু না হলে কার্যত এই কোম্পানির কোনো কাজ থাকছে না। প্রকল্পের তহবিল থেকে কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও পরিচালন ব্যয় মেটানো হয় বলে এ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

সূত্র বলেছে, প্রকল্প বন্ধ হলে বিআরটি কোম্পানিকে অন্য কোনো কাজে যুক্ত করার বিষয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) একাধিক প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন বলেছেন, বিআরটি কোম্পানির ক্ষেত্রে আপাতত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে। যদি কোম্পানি নিজেরা অন্য কোনো কাজে অংশ নিতে চায়, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।

রাজধানীর যানজট নিরসন ও যাত্রীদের জন্য দ্রুতগতির গণপরিবহন নিশ্চিতের লক্ষ্যে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বিশেষ বাস চলাচলের জন্য এই করিডরের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। প্রকল্পটির নির্মাণকাজের জন্য প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা ও যাত্রীদের এক যুগ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা, যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকায়। কাজ শেষ না হলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিশেষ বাস চলাচলের করিডরের ধারণা বাতিল হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চার লেনের সড়ক সাধারণ যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা বিআরটি কোম্পানি (পিএলসি) গঠিত হয়েছিল বিআরটি রুট পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। কিন্তু প্রকল্প চালু না হলে কোম্পানির কাজও কার্যত শেষ হয়ে যাচ্ছে।

এই কোম্পানির মূল দায়িত্বের মধ্যে ছিল বাস কেনা, বিআরটি পরিচালনার জন্য আইটিএস সরঞ্জাম কেনা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র ও সিগন্যাল সিস্টেম স্থাপন, বিদ্যমান বাস অপারেটরদের সঙ্গে সমন্বয় এবং বিআরটি বাস অপারেটর নির্বাচন। কিন্তু গত ১২ বছরে এসব কাজের কোনোটিই সম্পন্ন করতে পারেনি কোম্পানিটি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করলেও এখনো একটি বাসও কেনা যায়নি। বর্তমানে ঢাকা বিআরটি কোম্পানিতে একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা) নেতৃত্বে ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. নূরুল আমিন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিআরটি প্রকল্প এগোবে কি না, সেটি আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানি না। যদি প্রকল্প স্থগিত হয়, তাহলে সরকার আমাদের অন্য কোনো দায়িত্ব দিতে পারে। তবে প্রকল্পের অর্থ থেকেই আমাদের বেতন ও পরিচালন ব্যয় মেটানো হতো। প্রকল্প বন্ধ হলে এই খাত থেকে অর্থ পাওয়া যাবে না, তখন কোম্পানির কার্যক্রম কীভাবে চলবে, সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’

প্রকল্প না এগোনোর সিদ্ধান্তের পর ঢাকা বিআরটি কোম্পানি বিআরটি প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা ডিটিসিএর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ডিটিসিএ সূত্র জানায়, প্রকল্প বন্ধ হলে কোম্পানিকে অন্য কোনো কাজে যুক্ত করার বিষয়ে একাধিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ডিটিসিএর ‘ক্লিয়ারিং হাউস’ প্রকল্পে কোম্পানিকে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাবও আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয়েছে।

বিআরটি প্রকল্প নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিআরটি প্রকল্পে আমরা কোনো বাস কিনছি না এবং টিকিট কাউন্টারগুলোও চালু করছি না। প্রকল্পের রাস্তাটি এখন চার লেনের একটি সাধারণ সড়ক হিসেবে খুলে দেওয়া হবে, যাতে অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে পারে। তবে প্রকল্পের অবকাঠামো যেমন আছে, তেমনই থাকবে, কোনো পরিবর্তন করা হচ্ছে না। ঢাকা বিআরটি কোম্পানির ক্ষেত্রেও আপাতত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তারা যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে। যদি কোম্পানি নিজেরা অন্য কোনো কাজে অংশ নিতে চায়, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।’ তিনি বলেন, ভবিষ্যতে নতুন সরকার চাইলে বিআরটি সেবা চালু করতে পারবে। তাদের শুধু বাস কিনতে হবে ও টিকিট কাউন্টারগুলো চালু করতে হবে। তখন ঢাকা বিআরটি কোম্পানিকেই ব্যবহার করা যেতে পারে।

বৃহৎ কাঠামোর অসমাপ্ত পরিসমাপ্তি

অসমাপ্ত এই প্রকল্পের আওতায় ২০ দশমিক ২০ কিলোমিটার করিডর নির্মাণ করা হয়েছে। এর ১৫ দশমিক ০৭ কিলোমিটার ভূমিতে এবং ৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার উড়ালসড়ক (এলিভেটেড) অংশ। রয়েছে ২৫টি স্টেশন, একটি বাস ডিপো (গাজীপুরে), দুটি টার্মিনাল (বিমানবন্দর ও গাজীপুরে), ছয়টি ফ্লাইওভার (বিমানবন্দর, জসীমউদ্দীন, কুনিয়া, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ভোগরা ও জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকায়), টঙ্গী সেতু ১০ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। আটটি অ্যাকসেস রোড, প্রায় ৫৬ কিলোমিটার নর্দমা ও ২৪ কিলোমিটার ফুটপাত করা হয়েছে।

শেখ মইনউদ্দিন বলেন, বিআরটি প্রকল্প শেষ করতে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৯ সাল পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছিল। সেটি অনুমোদন পায়নি। ফলে প্রকল্পটি এভাবেই শেষ করতে হচ্ছে। এখন ঠিকাদারের কিছু পাওনা ও অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্বল পরিকল্পনা, সমন্বয়ের অভাব, ঠিকাদারি বিলম্ব ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব—এসব কারণে বিআরটি প্রকল্প সফল হয়নি।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, বিআরটি প্রকল্প একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবহনব্যবস্থার ধারণা ছিল। সেটি বাতিল হলে পুরো পরিকল্পনাই অর্থহীন হয়ে যায়। এত বড় বিনিয়োগের পরও যদি প্রকল্পটি সেবা দিতে না পারে, তাহলে এটি হবে একধরনের ‘স্ট্রাকচারাল ওয়েস্ট’। এখন জরুরি হলো ঢাকা বিআরটি কোম্পানির মানবসম্পদ ও সক্ষমতাকে অন্য পরিবহন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজে লাগানো, যেন রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ পুরোপুরি ব্যর্থ না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি: আসিফ নজরুল

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রবাসীরা জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি বলে মন্তব্য করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় অর্জনে প্রবাসীদের সমর্থন ও ত্যাগ অতুলনীয়। তাঁদের কল্যাণে সরকার বদ্ধপরিকর।

আজ মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজিত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্সের সর্বোত্তম ব্যবহারবিষয়ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের জন্য ভোটাধিকার চালু করা। এর ফলে তাঁরা প্রবাসে থেকেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মীদের জন্য মাল্টিভিসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে সাধারণ কর্মী নিয়োগ-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে দক্ষ কর্মী নিয়োগ বাড়বে এবং কর্মী ও নিয়োগকর্তার অধিকার ও স্বার্থ অধিকতর সুরক্ষিত হবে।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো শুরু করেছি। দক্ষতার ভিত্তিতে শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জর্ডানে নারী শ্রমিকদের বিনা ফি-তে ও জরিমানা ছাড়া রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রবাসীরা দেশে আসার সময় আগে একটি মোবাইল ফোন আনতে পারতেন। আমরা এটি বাড়িয়ে দুটি আনতে পারার সুযোগ করেছি। এ ছাড়া বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী লাউঞ্জ স্থাপন করা হয়েছে এবং আংশিক মালিকানায় হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে এ ধারা অব্যাহত থাকলে প্রবাসীদের কল্যাণে মাইলফলক অগ্রগতি অর্জিত হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া। এ ছাড়া বক্তব্য দেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া ও ইফাদের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. আই আর ভ্যালেন্টাইন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা-দাফনে মোতায়েন থাকবেন ১০ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হবে। তাই তাঁর লাশবাহী গাড়ি এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা পর্যন্ত নেওয়া, জানাজা ও দাফন ঘিরে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার ১০ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন থাকবে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব তথ্য জানান।

শফিকুল আলম বলেন, খালেদা জিয়ার লাশবাহী গাড়িকে ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। ১০ হাজারের বেশি পুলিশ ও এপিবিএন সদস্য থাকবেন। কিছু কিছু জায়গায় সেনাবাহিনীর সদস্যও থাকবেন।

প্রেস সচিব বলেন, খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। আপসহীন নেত্রী। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। দেশের জন্য তিনি যা করেছেন, এটা অতুলনীয়। এভারকেয়ার থেকে খালেদা জিয়ার লাশবাহী গাড়ি সংসদে ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আসা পর্যন্ত জানাজা এবং দাফন—সবকিছু পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর জানাজা, দাফনসহ প্রতিটি অনুষ্ঠান সুচারুভাবে করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সরকার। এ জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়া হবে।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন, সাধারণ জনগণের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্বে করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নিরাপত্তা টিমের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ কে এম শামসুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

সার্বিক কার্যক্রম ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কা নেই জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, আগামীকাল সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ডিএমপির ১০ হাজারের বেশি পুলিশ, এপিবিএন এবং অন্য নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা থাকবেন। কিছু কিছু জায়গায় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে একটা ব্যবস্থাপনা থাকবে।

নিরাপত্তার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, পুলিশ, নিরাপত্তা সংস্থার তরফ থেকে প্রত্যেকটা বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে একটি বড় জানাজা হয়েছে। ফলে পুলিশের এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর নিজেদের মধ্যে কিছু প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল, এখন আরও বড় আকারে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে।

শফিকুল আলম বলেন, আগামীকাল সকালে তাঁর লাশবাহী গাড়ি এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে সংসদ ভবন এলাকায় নেওয়া হবে। নেওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হবে। তবে কখন লাশ সংসদ ভবন এলাকায় নেওয়া হবে, তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রীয় সম্মানে তাঁকে নিয়ে আসা হবে।

প্রেস সচিব বলেন, খালেদা জিয়ার জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা ও কূটনীতিকেরা উপস্থিত থাকবেন। কিছুদিন আগে সংসদ ভবন এলাকায় বড় একটি জানাজা হয়েছে। খালেদা জিয়ার জানাজা আরও বড় আকারে হবে। সে আলোকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তুতিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শামসুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী ছিলেন না, তিনি জাতীয় নেত্রী ছিলেন। বিএনপির দলীয় অবস্থান থেকে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে তাঁকে প্রাপ্য সম্মান দিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

শামসুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার লাশ যখন এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা নেওয়া হবে, তখন রাস্তার দুপাশে জনসাধারণ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ৫০
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আগামীকাল বুধবার ঢাকায় খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জানাজায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন। বিষয়টিকে বাংলাদেশ ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সৌজন্য ও রাজনৈতিক শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে খালেদা জিয়ার জানাজায় পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার যোগ দেবেন বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশন। হাইকমিশনের একটি সূত্র জানায়, ইসহাক দার আগামীকাল বুধবার ঢাকায় এসে সরাসরি জানাজায় অংশ নেবেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, একাধিক দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান ও দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রীয় ভূমিকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন।

এদিকে, জানাজা ঘিরে ঢাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, দেশি-বিদেশি অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোও জানাজা এবং সংশ্লিষ্ট আনুষ্ঠানিকতায় ব্যাপক জনসমাগমের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

খালেদা জিয়ার জানাজাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মতভেদ ছাপিয়ে দেশজুড়ে শোক ও শ্রদ্ধার আবহ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে নোয়াবের শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে নোয়াবের শোক

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করছে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন, নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সংগঠনটির সভাপতি এ. কে. আজাদের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর সংগ্রাম সকল গোষ্ঠী ও মতের ঊর্ধ্বে। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও দলের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’

আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর থেকে এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত