Ajker Patrika

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ

বাছাই কমিটির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব

  • নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন।
  • নির্বাচন না হলে আরও ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে ওই সরকার।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ২৩: ৪১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি করা হবে। ওই কমিটি একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চূড়ান্ত করবে এবং রাষ্ট্রপতি তাঁকেই প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত করবেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যে সংশোধিত প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে, তাতে এমনটিই বলা হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন আজ রোববার দলগুলোর কাছে লিখিতভাবে এই খসড়া প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটির বিষয়ে দলগুলোকে আজকের মধ্যে মতামত জানাতে বলা হয়েছে, যা নিয়ে আগামী মঙ্গলবার কমিশন তাদের অবস্থান জানাবে।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৫তম দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় আজ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে সংলাপ শুরু হয়। এতে আলোচ্য সূচি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান। আলোচনার শুরুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে একটি সমন্বিত প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়, যা নিয়ে বেলা ২টার পর পর্যন্ত আলোচনা হয়। সে সময় বলা হয়, আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি নতুন সমন্বিত প্রস্তাব দেওয়া হবে। দুপুরের বিরতিতে কমিশন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দলগুলোকে লিখিত আকারে প্রস্তাবটি দেয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কমিশনের দেওয়া সমন্বিত প্রস্তাবে বিদ্যমান সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধনের কথা বলা হয়। মেয়াদ শেষ বা অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে তার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। সংবিধানের ৫৮(খ) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদের মেয়াদ শেষের ১৫ দিন আগে কিংবা কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে তার ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ চূড়ান্ত করতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয় কমিশনের প্রস্তাবে।

কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ৭৫ বছরের বেশি বয়সী কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারবেন না। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে ৯০ দিন। তবে দৈবদুর্বিপাকের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে আরও সর্বোচ্চ ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে ওই সরকার। নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্যভার গ্রহণের তারিখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়, মেয়াদে শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগে স্পিকারের সভাপতিত্বে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে। এই কমিটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল এবং জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন একজন করে ব্যক্তির নাম নেবে। প্রস্তাবিত নাম নিয়ে বাছাই কমিটি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নির্ধারিত করতে পারবে এবং রাষ্ট্রপতি তাঁকে নিযুক্ত করবেন।

বাছাই কমিটি গঠনের পাঁচ দিনের (১২০ ঘণ্টা) মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করতে না পারলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য সংসদের সরকারি দল/জোট, প্রধান বিরোধী দল/জোট ৩ জন করে এবং তৃতীয় বৃহত্তম দল ২ ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার বৈঠক করে সরকারি দল তৃতীয় বৃহত্তম দল হতে একজনকে, একইভাবে বিরোধী দল বা জোট একজনকে বাছাই করবে। তৃতীয় বৃহত্তম দল সরকারি দল/জোট, বিরোধী দল/জোট প্রস্তাবিত তালিকা হতে আলাদা আলাদা দুজনকে বাছাই করবে। বাছাই করার ব্যক্তিদের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ হবেন। তা না হলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে বাছাই কমিটির সদস্যরা র‌্যাংঙ্কড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। সংসদ বহাল অবস্থায় তিনি শপথ নিতে পারবেন না। নিয়োগ লাভের পরে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটির পরামর্শে অনধিক ১৫ ব্যক্তিকে উপদেষ্টা পদের জন্য বাছাই করবেন।

বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, প্রস্তাবটিতে বিস্তারিতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে এবং এই প্রস্তাবের অধিকাংশ বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। এই খসড়া প্রস্তাবটির ওপর ভাষাগত ও খুঁটিনাটি দিক পর্যালোচনা করে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পর গতকাল পরে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান নিয়েও আলোচনা হয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁরা এর আগেও এ বিষয়ে দলীয় অবস্থান যৌক্তিকভাবে তুলে ধরেছেন। সংসদীয় ব্যবস্থায় সংসদনেতাকেই মূলত প্রধানমন্ত্রী করা হয়। তবে সব সময় সেটা হয় না। দলীয় প্রধান হওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য অযোগ্য হবেন, এটা গণতান্ত্রিক প্র্যাকটিসের সঙ্গে যায় না। গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্যেও দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হন। কোনো কোনো সময় এটা হয়নি। আর প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা একই ব্যক্তি হবেন, এটা একটি রীতি। সংসদনেতার কার্যত তেমন কোনো ভূমিকা নেই। তিনি মূলত সুপার হুইপ হিসেবে কাজ করেন, এটা আলংকারিক। একই ব্যক্তি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদনেতা হতে কোনো অসুবিধা নেই।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা একই ব্যক্তি হতে পারেন। এখানে দুজন হলে কিছু ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে। তবে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী এক ব্যক্তি যাতে না হন, তার প্রস্তাব দেন তিনি। বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে এটা আনা হয়েছে। দেশকে সংস্কারের চেষ্টা করছি ক্ষমতার ভারসাম্য বা কিছু ক্ষমতা সীমিত করে। দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে তেমন জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। এ ক্ষেত্রে দুজন আলাদা ব্যক্তি হলে সেটা উত্তম হবে। তারপরও তিনি দলীয় ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন।’

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব কমিশনের প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, তিনটি জায়গায় একই ব্যক্তি থাকলে বিকল্প নেতৃত্ব বিকশিত হয় না। তিনটি জায়গা আলাদা হলে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হবে। নির্বাচনের পরে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হলে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে বলেও মত দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তাঁকে তলব করা হয়েছে। ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম।

কূটনৈতিক একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি, কলকাতাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন নিয়ে উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রণয় ভার্মাকে তলব করা হয়।

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেদিন তাঁকে তলব করে বলা হয়, বাংলাদেশে আসন্ন সংসদ নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে পলাতক শেখ হাসিনা ভারতে বসে তার সমর্থকদের উসকানিমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়াতে আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে। তাকে এই ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্যের সুযোগ দেওয়ায় ভারত সরকারের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের গভীর উদ্বেগের কথা জানানো হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতে অবস্থানরত পলাতক শেখ হাসিনা তার সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়াতে আহ্বান জানিয়ে নিয়মিত উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। যা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ সময় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আদালতের দেওয়ার দণ্ডের মুখোমুখি করতে দ্রুত প্রত্যর্পণের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশ।

তলবকালে ভারতীয় হাইকমিশনারের ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের পলাতক সদস্যদের বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টিএফআই সেলে গুম

শেখ হাসিনা ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় অভিযুক্ত ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়। এ সময় হাইকোর্ট এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।	ছবি: আজকের পত্রিকা
গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় অভিযুক্ত ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়। এ সময় হাইকোর্ট এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে র‍্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই) গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের দিন নির্ধারণ রয়েছে আজ।

আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেবেন। ফলে আসামিদের বিচার শুরু হবে কি হবে না তা জানা যাবে।

এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট আসামি হলেন ১৭ জন। এর মধ্যে গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তা হলেন র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

শেখ হাসিনা ছাড়াও এই মামলায় পলাতক অন্য আসামীরা হলেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।

গত ১৪ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ ও সাতজনের হয়ে লড়েন তাবারক হোসেন। এছাড়া আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ তিনজনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম, তিনজনের পক্ষে সুজাদ মিয়া ও শেখ হাসিনার হয়ে লড়েন আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

প্রত্যেকেই শুনানিতে আলাদা আলাদা কারণ (গ্রাউন্ড) এনে নিজেদের মক্কেলের অব্যাহতি চেয়েছেন। তবে প্রসিকিউশনের পক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আবেদন করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য গত রোববার (২১ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

তবে ওই দিন আদেশের নির্ধারিত দিন থাকলেও আসামি ৩ সামরিক কর্মকাতার আইনজীবী জানান, অব্যাহতির আবেদনের শুনানি এখনো কিছুটা বাকি রয়েছে। কারণ আগে কারাগারে আসামিদের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তিনি।

আদালত আইনজীবীর এই আবেদন মঞ্জুর করে তাঁর আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন শোনেন। একইসঙ্গে আদেশের তারিখ দুদিন পিছিয়ে দেন।

গত ৩ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে টিএফআই সেলের বীভৎসতা তুলে ধরার পাশাপাশি গুমের অন্ধকার পেরিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক নতুন বাংলাদেশ উদিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্য দুভাবে নির্ধারণ হতো বলেও উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ভাগ্য ভালো হলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হতো। দ্বিতীয়ত সাত-আট বছর গুম রাখার পর ফেলে রাখা হতো অজানা কোনো স্থানে।

চলতি বছরের ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন আদালত। ৮ অক্টোবর এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: ফোকাস বাংলা
ছবি: ফোকাস বাংলা

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে এসে উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল করতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এই প্রক্রিয়ায় একজন উপদেষ্টার দায়িত্ব কমিয়ে নতুন করে একজনকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হতে পারে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি জানায়, নতুন উপদেষ্টা দু-এক দিনের মধ্যে শপথ নিতে পারেন। বর্তমান সরকারে থাকা একজনকে উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা একজন উপদেষ্টাকে একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ইনকিলাব মঞ্চের মখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার পর তাঁর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দুদিন ধরে গুঞ্জন আছে। কিন্তু গত রোববার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর বৈঠকে অংশ নেন তিনি। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৮তম সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করলে এখানে বসতাম না।’

১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় হাদির মাথায় গুলি করা হয়। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পর ১৮ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। হাদির হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই দিন রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় ছায়ানট, উচীদীর কার্যালয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

২০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে জানাজায় প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে হাদির খুনিদের ধরতে সরকারের পদক্ষেপ জানাতে স্বরাষ্ট্র এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের।

হাদি হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তারা এই দাবি জানায়।

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে সরিয়ে ২০২৪ সালের ১৭ আগস্ট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নয়াদিল্লি, আগরতলা ও শিলিগুড়িতে ভিসা কার্যাক্রম বন্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন বিজেপি ও বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে। ছবি: এএফপি
ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন বিজেপি ও বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে। ছবি: এএফপি

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশন ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির ভিসা সেন্টার থেকে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ।

ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, দিল্লির ভিসা কেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। গতকাল সোমবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভিসা কেন্দ্রের পাশাপাশি দিল্লিতে অন্য কনস্যুলার পরিষেবাও আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা। যদিও সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা করা হয়নি।

ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম শিলিগুড়ি টাইমস জানায়, গতকাল পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র ভাঙচুর করেছে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (বিএইচপি), হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের সদস্যরা ভিসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের পর সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনেও ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। সংশ্লিষ্ট মিশনে এ-সংক্রান্ত নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ঢাকায় ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি। পরে বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা। ওই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারতের ডেপুটি হাইকমিশন ঘেরাওয়ের ডাক দেয় সে দেশের একটি গোষ্ঠী। ওই পরিস্থিতির মাঝেই চট্টগ্রামে ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনের দপ্তর লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। উত্তেজনা ছড়ায় সিলেটেও। তার পরেই চট্টগ্রামের ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করে ভারত। নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয় সিলেটের উপদূতাবাসের কাছেও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত