Ajker Patrika

গরমে ভোগাবে অসহনীয় লোডশেডিং

  • গরমকালে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা থাকে গড়ে ১৮ হাজার মেগাওয়াট
  • চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহে দরকার হবে ৭০ হাজার কোটি টাকা
  • বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বকেয়া এই অর্থ শোধ করতে হবে ডলারে
আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৫, ১০: ১৩
গরমে ভোগাবে অসহনীয় লোডশেডিং

এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি—এই তিন মাস তীব্র গরম অনুভূত হয় দেশে। গ্রীষ্মের এ সময়ে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা থাকে গড়ে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদার এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রগুলোয় জ্বালানি সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে হবে। এজন্য দরকার হবে ৭০ হাজার কোটি টাকা, যার পুরোটাই বিদেশি মুদ্রা ডলারে পরিশোধযোগ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার এই অর্থ জোগাড় করতে না পারলে গ্রীষ্মকালে দিনে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট লোডশেড করতে হবে। আর এতে গরমে বাড়বে মানুষের ভোগান্তি।

বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাবদ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। আর গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পেট্রোবাংলা ২৪ হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানির অর্থ চেয়ে সরকারকে দিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে বকেয়া পরিশোধে। এই অর্থ পরিশোধ করতে পারলে গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সংকট গভীর হবে না। আর বৈদেশিক মুদ্রা জোগাড় করতে না পারলে সে ক্ষেত্রে জ্বালানি ঘাটতি বাড়বে, এতে বাড়বে লোডশেডিং।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সরকারি-বেসরকারি ও দেশি-বিদেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে পাইকারি বিদ্যুৎ কিনে তা বিতরণ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করে। বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের বকেয়া বিল জমেছে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। আর জ্বালানিতে গ্যাস কেনা বাবদ বাকি পড়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন গ্যাস বিক্রি বাবদ পেট্রোবাংলার কাছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পাবে। বাকি অর্থ বকেয়া পড়েছে এলএনজি আমদানিতে। এসব বকেয়া পরিশোধের জন্য পাওনাদার প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কাছে দফায় দফায় ধরনা দিয়েছে। কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এদিকে দেশের বেসরকারি কেন্দ্রগুলো পিডিবির কাছে পাবে ১২ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ মালিকানার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পিডিবির কাছে পাবে ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভারতের আদানি গ্রুপও ৪ হাজার কোটি টাকা পাবে। পিডিবির কেনা পাইকারি বিদ্যুৎ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি সমিতির মাধ্যমে দেশের বড় অংশে বিতরণ করা হয়।

এ ছাড়া ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা ও নারায়ণগঞ্জে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও রাজশাহী-রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো) গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। পিডিবি নিজেও চট্টগ্রামসহ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে।

পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, দেশে মোট বিদ্যুতের গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৭৯ লাখ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা আরইবির গ্রাহক ৩ কোটি ৬৭ লাখ। চলতি বছর গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। এ সময় আরইবির ৮০টি সমিতির বিতরণ এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা হবে সাড়ে ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট।

দেশে এ মুহূর্তে শীতাতপ যন্ত্র বা এসির কত লোড আছে বা তাদের পেছনে কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যয় হয়, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে এই লোড ৪ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেই বলে জানিয়েছেন পিডিবির প্রকৌশলীরা। তাঁরা বলছেন, গরম যত বাড়বে, এসির ব্যবহার তত বাড়বে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে বিদ্যুতের সংকট। এ কারণে সরকার নির্দেশ দিয়েছে, এসির তাপমাত্রা ২৫-এর নিচে না নিতে।

আমদানি করা বিদ্যুৎ ও দেশে স্থাপিত বিদ্যুতের ক্ষমতা সব মিলিয়ে ২৬ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত থাকলে ১৭ হাজার থেকে ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। কারণ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে পিক-আওয়ারে চালু রাখার জন্য, যেগুলোকে পিকিং বলা হয়। এসব কেন্দ্র একনাগাড়ে চালু রাখা যায় না। দেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল, এদিন ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। এই রেকর্ডও ১ ঘণ্টার উৎপাদনের।

পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, গ্রীষ্মে সব থেকে খারাপ অবস্থা হবে ময়মনসিংহ জোনে। পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এই দুই সংস্থার আওতায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় তাদের গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ৫০ লাখ। গ্রীষ্মকালে এই গ্রাহকের চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট। এই অঞ্চলে মোট ৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপিত ক্ষমতা ৬৪০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে দুটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষমতা ৫৩ মেগাওয়াট, বিকেলের পর এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসে না, পিক-আওয়ার সন্ধ্যায় এ দুটি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে। পিক-আওয়ার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গড়ে বিদ্যুতের প্রয়োজন ময়মনসিংহ জোনে দেড় হাজার মেগাওয়াট, এর বড় অংশ আনতে হয় ময়মনসিংহের বাইরে থেকে। কারণ বাকি পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ছাড়া বাকিগুলো তেলভিত্তিক। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর খরচ অনেক বেশি হওয়ায় এই কেন্দ্রগুলো বেশি সময় চালু রাখাও যায়নি। গত বছরের এপ্রিলে এই জোনে লোডশেড ছিল প্রায় ৭০০ মেগাওয়াট। এবার এই জোনে লোডশেড আরও বাড়তে পারে।

পিডিবির প্রকৌশলীরা উত্তরবঙ্গ নিয়েও এবার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, রংপুর জোনে ৯৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার স্থাপিত কেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে আবার দুটি সৌরবিদ্যুতের ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট, যা বিকেলের পর বন্ধ হয়ে যায়। ৭২০ মেগাওয়াট স্থাপিত ক্ষমতার কেন্দ্রের মধ্যে ৫২৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র, যার কয়লা আসে বড়পুকুরিয়া খনি থেকে। এই কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে সারা বছর কোনো না কোনো সংকট লেগে থাকে, হয় কেন্দ্রের মেরামতে বন্ধ থাকে, না হয় কেন্দ্রে কয়লাসংকট। চলতি মার্চ মাসেও কেন্দ্রটির ২৫০ মেগাওয়াট সংস্কারকাজে বন্ধ রয়েছে। ফলে রংপুর জোনের স্থাপিত ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ দিয়ে এই বিভাগের জেলাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়। সেখানে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়। এতে প্রয়োজনের অর্ধেক বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হয় না গ্রীষ্মকালে। গত বছরের অক্টোবরেও রংপুরসহ এই বিভাগের বিভিন্ন জেলায় তীব্র লোডশেড ছিল। এবারও সে আশঙ্কা রয়েছে। পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, এবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ বড় শহরগুলোতে লোডশেড কম রাখা হবে, তবে গ্রামে বাড়বে লোডশেড।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘দেশীয় গ্যাসের সংস্থান না করতে পারলে লোডশেডিং মুক্ত করা যাবে না। বিদেশ থেকে কয়লা ও গ্যাস কিনে এনে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে লোডশেড মুক্ত করা যাবে না, কারণ সে সক্ষমতা আমাদের নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক, থাকছেন মির্জা ফখরুল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে অন্তবর্তীকালীন সরকার উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন।

বৈঠক অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

ইতিমধ্য বৈঠকে অংশ নিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এভারকেয়ার হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান।

এদিকে দলের চেয়ারপারসনের মৃত্যুতে স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা ডেকেছে বিএনপি। দুপুর সাড়ে ১২টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি এক মহান অভিভাবককে হারাল: প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১২
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় এসব কথা জানানো হয়। শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি তার এক মহান অভিভাবককে হারাল। তাঁর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।’

প্রফেসর ইউনূস বলেন, খালেদা জিয়া শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রীই ছিলেন না; তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর অবদান, তাঁর দীর্ঘ সংগ্রাম এবং তাঁর প্রতি জনগণের আবেগ বিবেচনায় নিয়ে সরকার চলতি মাসে তাঁকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর আপসহীন নেতৃত্বের ফলে গণতন্ত্রহীন অবস্থা থেকে জাতি বারবার মুক্ত হয়েছে, মুক্তির অনুপ্রেরণা পেয়েছে। দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

ড. ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও জাতির কল্যাণে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং দৃঢ় মনোবল সব সময় পথ দেখিয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত রাজনীতিককে হারাল।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন, যিনি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, তাঁর স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে আসা খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব স্বৈরশাসক এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের দুঃশাসনের পতন ঘটাতে প্রধান ভূমিকা রাখে।

ড. ইউনূস বলেন, খালেদা জিয়ার বহু কর্ম ও সিদ্ধান্ত দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। তিনি মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করেন, যা বাংলাদেশের নারী শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া ভীষণভাবে সফল ছিলেন। তিনি কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে তিনি পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি যে তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, সেখানেই তিনি জয়লাভ করেছিলেন।

ড. ইউনূস বলেন, ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতির একটি মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে খালেদা জিয়া ছিলেন সংগ্রাম ও প্রতিরোধের এক অনন্য প্রতীক। তাঁর আপসহীন ভূমিকা দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে জাতিকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, রাজনৈতিক সাফল্যের কারণেই খালেদা জিয়া চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাঁকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং দীর্ঘদিন কারাবাস করতে হয়েছিল।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির দিনে ড. ইউনূস দেশবাসীকে শান্ত থাকার ও ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং যার যার অবস্থান থেকে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুই মাসের চুক্তিতে স্বাস্থ্যের ডিজি ও সচিব নিয়োগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
অধ্যাপক ডা. আবু জাফর ও মো. সাইদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
অধ্যাপক ডা. আবু জাফর ও মো. সাইদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানকে দুই মাসের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। একই মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরকে।

২৪ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সামিউল আমিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী মো. সাইদুর রহমানকে তাঁর অবসরোত্তর ছুটি ও তৎসংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থগিত এবং অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা সরকারি সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো।

একই আইনের সমধারায় দুই মাসের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফরও। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে অধ্যাপক ডা. মো. শাদরুল আলমকে। এত দিন তিনি সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশনের (সিএমই) পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

আজ সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের উপসচিব দূর-রে শাহওয়াজ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তাঁকে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন ২৫৮২ জন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ২ হাজার ৫৮২ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ৩ হাজার ৪০৭ জন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন এ তথ্য জানান।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক জানান, রংপুর অঞ্চলের ৮ জেলার ৩৩টি আসন থেকে ৩৩৮টি মনোনয়ন বিতরণ করা হয়েছিল। জমা পড়েছে ২৭৮টি। রাজশাহী অঞ্চলের ৮ জেলার ৩৯ আসন থেকে ৩২৯টি মনোনয়ন বিতরণ করা হয়েছিল। জমা পড়েছে ২৬০টি। বরিশাল অঞ্চলের ৬ জেলার ২১টি আসন থেকে বিতরণ করা হয় ২১২টি, জমা পড়েছে ১৬৬টি। ফরিদপুর অঞ্চলের ৫ জেলার ১৫টি আসন থেকে বিতরণ করা হয় ১৬৫টি, জমা পড়েছে ১৪২টি।

খুলনা অঞ্চলের ১০ জেলার ৩৬ আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৩৫৮টি, জমা পড়েছে ২৭৬টি। ঢাকা অঞ্চলের ৬ জেলার ৪১টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছে ৬৩৮টি, জমা পড়েছে ৪৪৪টি।

ময়মনসিংহের ৬টি জেলার ৩৮টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৪০২টি, জমা পড়েছে ৩১১টি। সিলেটের ৪ জেলার ১৯টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছে ১৭৬টি, জমা পড়েছে ১৪৬টি। কুমিল্লার ৬ জেলার ৩৫টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ৪৯৬টি, জমা পড়েছে ৩৬৫টি। চট্টগ্রামের ৫ জেলার ২৩টি আসন থেকে বিতরণ করা হয়েছিল ২৯৩টি, জমা পড়েছে ১৯৪টি।

ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত, রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল করার সময় ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি, আপিল নিষ্পত্তি ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি, নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগপর্যন্ত, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।

আর ভোট গ্রহণ করা হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। সেদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত