Ajker Patrika

‘ইউনূসের সরকার, ৫ বছর দরকার’: ফেসবুক পেজের এনগেজমেন্ট বাড়াতে বিজ্ঞাপন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ মে ২০২৫, ২০: ৫৫
এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ৪৭টি ফেসবুক পেজ ৫৫টি পেইড বিজ্ঞাপনে এই স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি: ডিসমিসল্যাবের সৌজন্যে
এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ৪৭টি ফেসবুক পেজ ৫৫টি পেইড বিজ্ঞাপনে এই স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছে। ছবি: ডিসমিসল্যাবের সৌজন্যে

বাংলাদেশে একাধিক ফেসবুক পেজ রাজনৈতিক স্লোগান ব্যবহার করে তাদের পেজে লাইক ও এনগেজমেন্ট বাড়াচ্ছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে এ তথ্য জানিয়েছে ডিসমিসল্যাব নামে বাংলাদেশের একটি অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্ল্যাটফর্ম। ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, ‘আমরা ড. ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় চাই’—এই রাজনৈতিক স্লোগান ব্যবহার করে এসব পেজ মূলত তাদের ব্যবসায়িক কনটেন্ট প্রচার করছে, যার সঙ্গে বাস্তবে রাজনীতির কোনো সম্পর্কই নেই।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রকাশিত ‘‘They want Dr Yunus for five years, but only to farm ’likes’ for their pages’’ শীর্ষক ডিসমিসল্যাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ৪৭টি ফেসবুক পেজ ৫৫টি পেইড বিজ্ঞাপনে এই স্লোগান ব্যবহার করেছে।

ডিসমিসল্যাব জানায়, এসব পেজ মূলত খাবার, কসমেটিকস, পোশাক ও ব্লগ-সম্পর্কিত কনটেন্ট পোস্ট করে থাকে। রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিজ্ঞাপনগুলোতে ড. ইউনূসের নাম ও ছবি ব্যবহার করে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় এবং ‘পেজ লাইক করুন’ বা ‘ফলো করুন’, এ ধরনের আহ্বান জানানো হয়।

ডিসমিসল্যাবের গবেষকেরা মেটার অ্যাড লাইব্রেরি ব্যবহার করে বাংলা কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনগুলো শনাক্ত করেন। এরপর তাঁরা প্রতিটি পেজের সর্বশেষ ২০টি পোস্ট বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, প্রায় ৯০ শতাংশ পেজের আগের কোনো পোস্টে রাজনীতি বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় ‘The Tasty Apron’ নামের ঢাকাভিত্তিক একটি রেস্টুরেন্টের পেজের বিজ্ঞাপন। তাদের বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, ‘যারা চান ডঃ ইউনূস ৫ বছর ক্ষমতায় থাকুক, ডান পাশে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।’ অথচ এই পেজের অন্য কোনো পোস্টে রাজনৈতিক বার্তা নেই।

মেটার নীতিমতে, রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুভিত্তিক বিজ্ঞাপনে স্পষ্টভাবে বিজ্ঞাপনদাতার নাম ও রাজনৈতিক কনটেন্ট-সংক্রান্ত সতর্কবার্তা থাকা উচিত। কিন্তু ডিসমিসল্যাব বলছে, এসব পেজের কোনো বিজ্ঞাপনেই এই ধরনের ডিসক্লেইমার ছিল না।

‘The Tasty Apron’ নামের একটি রেস্টুরেন্টের বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, ‘যারা চান ডঃ ইউনূস ৫ বছর ক্ষমতায় থাকুক, ডান পাশে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন’। অথচ এই পেজের অন্য কোনো পোস্টে রাজনৈতিক কোনো বার্তা নেই। ছবি: ছবি: ডিসমিসল্যাবের সৌজন্যে
‘The Tasty Apron’ নামের একটি রেস্টুরেন্টের বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, ‘যারা চান ডঃ ইউনূস ৫ বছর ক্ষমতায় থাকুক, ডান পাশে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন’। অথচ এই পেজের অন্য কোনো পোস্টে রাজনৈতিক কোনো বার্তা নেই। ছবি: ছবি: ডিসমিসল্যাবের সৌজন্যে

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু বিজ্ঞাপন পরে মেটা সরিয়ে ফেললেও অধিকাংশই তদন্ত চলাকালীন পর্যন্ত সক্রিয় ছিল এবং এগুলো মেটার শনাক্তকরণ ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে পেরেছে।

এই স্লোগান প্রথম আলোচনায় আসে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, যখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারজিস আলম এটি ফেসবুকে ব্যবহার করেন। যদিও তা শুরুতে রাজনৈতিক মতামত হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিল, পরে এটি অসংখ্য অরাজনৈতিক পেজের বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ফলে এটি একটি ‘ক্লিকবেইট’ স্লোগানে রূপ নেয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকে এই স্লোগানকে ‘অগণতান্ত্রিক ও অবাস্তব’ বলে আখ্যা দিলেও ডিসমিসল্যাবের অনুসন্ধান বলছে, এটি এখন আরও গভীর সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাজনৈতিক স্লোগানকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের পরিবেশকে প্রভাবিত করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্লোগানটি অরাজনৈতিক পেজে দেখা গেলেও এর রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা অস্বীকার করা যায় না, বিশেষত বাংলাদেশের বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ ও রূপান্তরকালীন রাজনৈতিক পরিবেশে।

ডিসমিসল্যাবের বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক মতকে ক্লিকবেইট বানিয়ে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করলে সেটি গণতান্ত্রিক চর্চায় বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যেভাবে পারফিউম এল আমাদের জীবনে

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ১৯
সুগন্ধি মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ লুকিয়ে আছে এর প্রাচীন ইতিহাস এবং আমাদের মস্তিষ্কের গভীর রহস্যে। ছবি: পেক্সেলস
সুগন্ধি মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ লুকিয়ে আছে এর প্রাচীন ইতিহাস এবং আমাদের মস্তিষ্কের গভীর রহস্যে। ছবি: পেক্সেলস

সুগন্ধি শুধু একটি প্রসাধনী নয়, বরং এটি মানব ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি স্মৃতি, বিজ্ঞান এবং আত্মপ্রকাশের এক চমৎকার মিশেল। এটি আমাদের মেজাজ ভালো করে এবং আমাদের দিনকে আরও আনন্দময় করে তোলে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পারফিউমের বাজার প্রায় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের; যা ২০৩৪ সাল নাগাদ ১০১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু কেন এই সুগন্ধি মানুষের কাছে এত জনপ্রিয়। এর উত্তর লুকিয়ে আছে এর প্রাচীন ইতিহাস এবং আমাদের মস্তিষ্কের গভীর রহস্যে।

সুগন্ধির প্রাচীন যাত্রা

পারফিউমের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, মিসর এবং সিন্ধু সভ্যতা থেকে। মিসরীয়রা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এটি ব্যবহার করত। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দের মিসরীয় সমাধিতে লিলি ফুলের সুগন্ধি তৈরির চিত্র পাওয়া গেছে। পরবর্তীকালে গ্রিক এবং রোমানরা এর ব্যবহারকে আরও মার্জিত করে তোলে এবং কসমেটিকস ও চিকিৎসার কাজে সুগন্ধি তেলের ব্যবহার শুরু করে। সাইপ্রাসের পাইরগোসে বিশ্বের প্রাচীনতম সুগন্ধি উৎপাদন কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে বিজ্ঞানীরা ৪ হাজার বছর আগের সুগন্ধির খোঁজ পেয়েছেন।

পারফিউমাররা শত শত কাঁচামাল যেমন ফুল, চুন ও ইলাং-ইলাং, বিভিন্ন ধরনের রেজিন এবং কাঠ ব্যবহার করে সুগন্ধি তৈরি করেন। ছবি: পেক্সেলস
পারফিউমাররা শত শত কাঁচামাল যেমন ফুল, চুন ও ইলাং-ইলাং, বিভিন্ন ধরনের রেজিন এবং কাঠ ব্যবহার করে সুগন্ধি তৈরি করেন। ছবি: পেক্সেলস

ইউরোপে পারফিউমের প্রসার

১২শ শতাব্দীতে ক্রুসেডাররা লেভান্ট অঞ্চল থেকে সুগন্ধি তৈরির শিল্প ইউরোপে নিয়ে আসে। তবে ১৬০০ শতাব্দীতে ইতালীয় অভিজাত নারী ক্যাথরিন ডি মেদিচি যখন ফ্রান্সে যান, তখন তাঁর ব্যক্তিগত সুগন্ধিশিল্পী রেনাতো ইল ফিওরেন্তিনোর হাত ধরে প্যারিসে পারফিউম জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ১৬৯৩ সালে ইতালীয় জিওভান্নি পাওলো ফেমিনিস লেবু, কমলা এবং বারগামোটের মিশ্রণে তৈরি করেন ‘অ্যাকুয়া অ্যাডমিরাবিলিস’, যা পরে ‘ইউ ডি কোলন’ নামে পরিচিতি পায়।

পারফিউম তৈরির শিল্প ও উপাদান

সুগন্ধি তৈরির শিল্পকে বলা হয় ‘পারফিউমারি’ এবং এর বিশেষজ্ঞদের ফরাসি ভাষায় বলা হয় ‘নেজ’ (Nez) বা ‘নাক’। পারফিউমাররা শত শত কাঁচামাল যেমন ফুল (জেসমিন, গোলাপ), চুন ও ইলাং-ইলাং, বিভিন্ন ধরনের রেজিন (ফ্রাঙ্কিনসেন্স, মাইর) এবং কাঠ (চন্দন, পাইন) ব্যবহার করে সুগন্ধি তৈরি করেন। অতীতে কস্তুরী হরিণ বা সিভেটের মতো প্রাণিজ উৎস ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে সিনথেটিক বা কৃত্রিম সুগন্ধির ব্যবহার বেশি পছন্দ করা হয়।

প্রতিদিনের সুগন্ধি ব্যবহারের এই ছোট রুটিন নিজেকে ভালো রাখার একটি মাধ্যম বা ‘সেলফ-কেয়ার’ হিসেবে কাজ করে। ছবি: পেক্সেলস
প্রতিদিনের সুগন্ধি ব্যবহারের এই ছোট রুটিন নিজেকে ভালো রাখার একটি মাধ্যম বা ‘সেলফ-কেয়ার’ হিসেবে কাজ করে। ছবি: পেক্সেলস

বিজ্ঞানের চোখে সুগন্ধি

সুগন্ধি কেন আমাদের ভালো লাগার অনুভূতি দেয়, তার পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ। আমাদের ঘ্রাণতন্ত্র সরাসরি মস্তিষ্কের ‘লিম্বিক সিস্টেম’-এর সঙ্গে যুক্ত, যা আবেগ এবং স্মৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। ল্যাভেন্ডার যেমন মনকে শান্ত করে, তেমনি সাইট্রাস বা লেবুজাতীয় ঘ্রাণ আমাদের শক্তি জোগায়। কোনো বিশেষ সুগন্ধি আমাদের শৈশব বা প্রিয় কোনো মুহূর্তের স্মৃতি মুহূর্তেই ফিরিয়ে আনতে পারে।

আত্মপ্রকাশ ও সামাজিক প্রভাব

পারফিউম শুধু ভালো ঘ্রাণ ছড়ানোর মাধ্যম নয়, এটি নিজের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের একটি উপায়। পোশাকের মতো পারফিউমও মানুষের পরিচয়ের অংশ হয়ে ওঠে। এটি মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং সামাজিক মেলামেশায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতিদিনের সুগন্ধি ব্যবহারের এই ছোট রুটিন নিজেকে ভালো রাখার একটি মাধ্যম বা ‘সেলফ-কেয়ার’ হিসেবে কাজ করে।

আধুনিক বাজার ও বিবর্তন

চ্যানেল নং ৫-এর মতো বিশ্বখ্যাত পারফিউম থেকে শুরু করে ভারতের সুগন্ধি রাজধানী কনৌজ পর্যন্ত পারফিউমের আবেদন বিশ্বজনীন। বর্তমানে একটি সুগন্ধিতে ৫০ থেকে ৩০০টি আলাদা রাসায়নিক থাকতে পারে। আধুনিক বিপণনব্যবস্থায় সুগন্ধিকে শুধু ঘ্রাণ হিসেবে নয়; এটি আবেগ, আভিজাত্য এবং জীবনধারার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

সূত্র: প্রেসিডেন্স রিসার্চ, ডিভাইনমি ফ্র্যাগরেন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন বছরে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে চান? এভাবে যত্ন নিলে উপকার মিলবে

ফারিয়া রহমান খান 
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

আসছে নতুন বছর। পুরোনো বছরের চুলের যত সমস্যা সব যেন নতুন বছরেই সমাধান হয়ে যায়. তাই তো চাইছেন? অন্ধভাবে চুলের যত্নের পণ্য কিনে হতাশ হওয়ার পর্ব শেষ করে কোন পণ্যটি আপনার চুলের জন্য আসলেই ভালো হবে, সেদিকে নজর দেওয়ার বছর হতে যাচ্ছে ২০২৬। ঘন ও স্বাস্থ্য়োজ্জ্বল চুল পেতে হলে ভালো অভ্যাস গড়ে তোলাও জরুরি। নতুন বছর হয়তো এ কথাটিই বারবার মনে করিয়ে দেবে। ২০২৬ সালে যে উপায়ে চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতে পারেন, তা দেখে নিন একনজরে।

স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বকের যত্ন

মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পেরও দরকার বিশেষ যত্ন। শুধু চুলের দৈর্ঘ্য আর উজ্জ্বলতা নিয়ে ব্যস্ত না থেকে দরকার চুলের গোড়ারও যত্ন নেওয়া। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, মাথার ত্বকে ময়লা জমা হওয়া, রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া বা রোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়া চুল পড়ার অন্যতম কারণ। ২০২৫ সালে স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশন বা স্ক্র্যাবিং বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আসছে বছরেও তা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কফি, চিনি বা নিমের গুঁড়া দিয়ে ঘরোয়া স্ক্র্যাব বানিয়ে খুব সহজেই স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখা যায়। স্ক্যাল্প পরিষ্কার থাকলে ঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন হয়, ফলে নতুন চুল গজানো সহজ হয়।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

সঠিকভাবে তেল ম্যাসাজ

চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করার বিকল্প নেই। তবে এখনকার ট্রেন্ড অনুযায়ী সারা রাত চুলে তেল রাখার বদলে গোসলের ৩০-৬০ মিনিট আগে কুসুম গরম তেল মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে গোসলের সময় শ্যাম্পু করে ফেললেই চলে। এতে একদিকে যেমন পুষ্টি নিশ্চিত হয়, তেমনি অতিরিক্ত তেলের কারণে রোমকূপ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না। নারকেল তেলের সঙ্গে ক্যাস্টর অয়েল বা তিলের তেলের সঙ্গে ভৃঙ্গরাজ মিশিয়ে মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।

চুলের যত্নে আমরা যত কিছুই করি না কেন, মানসিক স্বাস্থ্য যদি ঠিক রাখা না যায়, তাহলে সবই বিফলে যাবে। আমরা অনেকেই জানি না, মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব সরাসরি চুলের ওপর পড়ে। কাজের চাপ ও অন্যান্য স্ট্রেস অতিমাত্রায় ভর করলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে। এসব মানসিক চাপ কমাতে দৈনিক রুটিনে নিয়মিত হাঁটা, যোগব্যায়াম বা প্রাণায়াম যোগ করতে পারেন। পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম হচ্ছে কি না সেদিকেও নজর দিতে হবে নতুন বছরে। তাহলেই চুল থাকবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। শোভন সাহা কসমেটোলজিস্ট, শোভন মেকওভার

চুল ভালো রাখবে সঠিক খাদ্য়াভ্যাস

২০২৫ সালে আমরা একটি কঠিন সত্য শিখেছি—আপনি যতই দামি পণ্য ব্যবহার করুন না কেন, আপনার রোজকার ডায়েট যদি সঠিক না হয় তবে এর প্রভাব আপনার চুলের ওপর পড়বেই। চুল বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোটিন, আয়রন, ওমেগা-৩ এবং পেটের স্বাস্থ্য চুলের বৃদ্ধির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। খাবারের তালিকায় আমলকী, পেয়ারা, পেঁপে, কাঠবাদাম ও বিভিন্ন বীজ থাকে, তাদের চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্য়োজ্জ্বল থাকে। এ ছাড়াও মেথি ও জিরা ভেজানো পানি পান, কারিপাতার চাটনি বা কালো তিলের নাড়ু খেলে হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চলে ও চুল ভালো থাকে।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

চুলে রাসায়নিক ও তাপের ব্যবহার কমানো

২০২৫ সালে অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং, খুব শক্ত করে চুল বাঁধা, প্রতিদিন শ্যাম্পু করা এবং জোরে জোরে চুল আঁচড়ানোকে ‘চুলের নীরব ঘাতক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানুষ এখন সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করা, মোটা দাঁতের কাঠের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো এবং হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে এমনিতেই চুল শুকানোর ওপর জোর দিচ্ছে। ফলে চুল ভেঙে যাওয়া রোধ হয়েছে এবং চুল লম্বায় বাড়ছে। এই অভ্যাসগুলো আগামী বছরে অব্যাহত রাখতে পারলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন চুল বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজদরবার থেকে যেভাবে সাধারণের পাতে এল নান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ২০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নরম তুলতুলে নান দক্ষিণ এশিয়ার বেশ জনপ্রিয় ফ্ল্যাটব্রেড। মাখনে ভরপুর ঘন গ্রেভির বাটার চিকেনের সঙ্গে নানের জুটি এই অঞ্চলের অন্যতম সেরা খাবার। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরেও ভারতীয় খাবারের তালিকায় এর সুনাম রয়েছে।

সাধারণত টক-ঝাল আর সুগন্ধি গ্রেভিকে খাবারের মূল আকর্ষণ মনে করা হলেও এর সঙ্গী নান ছাড়া পুরো খাবারের আবেদনই ফিকে হয়ে যায়। নানের চটচটে ভাব প্রতিটি কামড়ে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। এর সূক্ষ্ম স্বাদ গ্রেভির মসলা ও গন্ধের সঙ্গে দারুণভাবে মিশে যায়। প্রকৃতপক্ষে বহুমুখী এই নান তার সঙ্গের মূল পদটিকে উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে।

সম্ভবত এ কারণে এই রুটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রেডগুলোর একটি হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি চিরাচরিত নানের সুস্বাদু সংস্করণ বাটার গার্লিক নান টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা রুটির তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে।

গরম নানের ওপর মাখন ব্রাশ করে তার ওপর কুচানো রসুন ছিটিয়ে এটি তৈরি করা হয়। এই তালিকায় আরও রয়েছে আলু নান, যা মসলা ও ধনেপাতা মাখানো আলুর পুর দিয়ে তৈরি।

আজকাল ভারতীয় বা মধ্যপ্রাচ্যের খাবার পরিবেশন করা রেস্তোরাঁগুলোতে নান ও এর বিভিন্ন সংস্করণ পাওয়া গেলেও একসময় এটি কেবল মুসলমান রাজাদের দরবারেই পরিবেশন করা হতো। তাহলে রাজকীয় রান্নাঘর থেকে কীভাবে এই নান আমাদের সাধারণের পাতে এসে পৌঁছাল?

নানের উৎস নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা থাকলেও অনেক খাদ্য ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন, এই রুটির জন্ম প্রাচীন পারস্যে (বর্তমান ইরান)। কারণ, নান শব্দটি ফারসি শব্দ ব্রেড বা রুটি থেকে এসেছে। পারস্যবাসীরা জল ও ময়দা দিয়ে এই রুটি তৈরি করত এবং সম্ভবত উত্তপ্ত নুড়ি পাথরের ওপর এটি সেঁকা হতো।

১৩ থেকে ১৬ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে যে সুলতানরা ভারতীয় উপমহাদেশের বিশাল অংশ শাসন করেছিলেন, তাঁদের হাত ধরেই নান এই অঞ্চলে আসে। মুসলিম শাসকেরা তাঁদের সঙ্গে পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার রন্ধনশৈলী নিয়ে এসেছিলেন; যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল তন্দুর বা মাটির উনুনে রান্না করা।

ইন্দো-পার্সিয়ান কবি আমির খসরু, যিনি আলাউদ্দিন খিলজি ও মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালের রাজদরবারের জীবন লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তাঁর লেখায় দুই ধরনের নানের কথা উল্লেখ করেছে—একটি নান-ই-তানুক, অন্যটি নান-ই-তানুরি।

এর মধ্যে প্রথমটি ছিল পাতলা ও সূক্ষ্ম আর দ্বিতীয়টি ছিল তন্দুরে সেঁকা মোটা ও ফোলা রুটি। সুলতানি আমলে নান সাধারণত বিভিন্ন মাংসের পদ, যেমন কাবাব বা কিমার সঙ্গে তৃপ্তিসহকারে খাওয়া হতো।

রাজকীয় রান্নাঘরের পাচক বা বাবুর্চিরা নান তৈরির কৌশলে আরও নতুনত্ব নিয়ে আসেন। তাঁরা মাখানোর বিশেষ ধরনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন এবং সেই সময়ে এক দুর্লভ উপকরণ ইস্ট ব্যবহার শুরু করেন, যাতে রুটিটি আরও নরম ও ফোলা হয়। অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল প্রস্তুতির কারণে সে সময় নান ছিল মূলত একটি বিলাসবহুল খাবার, যা কেবল অভিজাত শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

পরবর্তী তিন শতাব্দী ধরে মুঘল সম্রাটদের শাসনামলেও এই ধারা অব্যাহত ছিল।

দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসবিদ নেহা ভারমানি বলেন, বিশেষজ্ঞ পাচক, যাঁদের নানবাই বলা হতো, তাঁরা এই রুটি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন এবং তাঁদের উদ্ভাবনগুলো বোঝাতে বিভিন্ন বিশেষ্য ব্যবহার করতেন। উদাহরণস্বরূপ, নান-ই-ওয়ারকি ছিল পাতলা ও স্তরে স্তরে সাজানো একটি রুটি। অন্যদিকে নান-ই-তাঙ্গি ছিল তুলনামূলক ছোট, যা খুব সহজেই ঝোল বা গ্রেভি শুষে নিতে পারত।

নানের নামকরণ অনেক সময় সেইসব রাজকীয় রান্নাঘরের নামানুসারেও করা হতো, যেখানে এগুলো তৈরি হতো।

ভারমানি জানান, বাকরখানি বিস্কুটের মতো একটি রুটি। এর নামকরণ করা হয়েছিল বাকর নজম সাইনির রান্নাঘরের নাম অনুসারে, যিনি জাহাঙ্গীর ও শাহজাহানের দরবারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন।

ব্রিটিশ শাসনামলেও নান মূলত উচ্চবিত্তদের খাবার হিসেবে টিকে ছিল। তবে ইংরেজ পর্যটকদের মাধ্যমে এটি ধীরে ধীরে পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিতি পেতে শুরু করে। এদিকে ভারতেও ঔপনিবেশিক আমলের খাদ্যাভ্যাসে নান নিজের জায়গা করে নেয়। তখন এটি প্রক্রিয়াজাত মাংস কিংবা স্থানীয় মসলাযুক্ত সসের সঙ্গে পরিবেশন করা হতো।

ইতিহাসবিদ নেহা ভারমানি বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানের সেই জটিল রন্ধনশৈলীর বদলে সহজ পদ্ধতি চলে আসে। ফলে সাধারণ মানুষের কাছেও এটি সহজলভ্য হয়ে ওঠে; ঠিক যেমনটা আমরা বর্তমানে স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে দেখে থাকি।’

বর্তমানে ময়দা, দই ও ইস্ট মিশিয়ে একটি নরম খামির তৈরির মাধ্যমে নান প্রস্তুত করা হয়। খামির ফুলে ওঠার জন্য কিছুক্ষণ রেখে দেওয়া হয়। এরপর ছোট ছোট গোল্লা করে হাত দিয়ে চ্যাপ্টা আকার দেওয়া হয়। এরপর এটি অত্যন্ত গরম তন্দুরে দেওয়া হয়, যতক্ষণ না এটি ফুলে ওঠে এবং গায়ে বাদামি দাগ পড়ে। পরিবেশনের আগে এর ওপর হালকা করে মাখন বা ঘি ব্রাশ করে দেওয়া হয়।

তবে নানের গল্প এখানেই শেষ নয়।

১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে নানের ক্ষেত্রে নতুন এক উদ্ভাবনের জোয়ার আসে। ভারত ও বিদেশের নামী রেস্তোরাঁগুলো এই রুটি নিয়ে নতুন সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে।

রাঁধুনি সুবীর শরণ স্মরণ করেন, নিউইয়র্কে তাঁর রেস্তোরাঁ কীভাবে পালং শাক, পনির ও মাশরুম দিয়ে নান তৈরি শুরু করেছিল।

শরণ বলেন, অভারতীয়দের কাছে নানকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এটি ছিল একধরনের সাজসজ্জা। অন্যদিকে প্রবাসে থাকা ভারতীয়রা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী খাবারটি খাওয়ার সময় কিছুটা আধুনিকতার স্বাদ পেয়ে আনন্দিত হতেন।

এই ধারা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং আজ সারা বিশ্বের রেস্তোরাঁগুলো নানা ধরনের উপকরণে ঠাসা পরীক্ষামূলক নান পরিবেশন করছে।

শরণ বলেন, ‘আপনি গোয়ার কোনো রেস্তোরাঁয় পর্ক ভিন্দালু নান বা বাটার চিকেন নান পাবেন। আবার হংকংয়ের কোনো রেস্তোরাঁয় হয়তো পাবেন ট্রাফল চিজ নান। নান হলো বিশ্বের দরবারে ভারতের এক গৌরবময় রন্ধনশৈলীর উপহার।’

খাদ্য ঐতিহাসিকেরা হয়তো এতে পুরোপুরি একমত হবেন না, কারণ, নান অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর খাবারেরও অংশ। তবে ভারতের সঙ্গে এর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ও সুপ্রাচীন।

শরণ বলেন, ‘নান মূলত একাত্মতা ও ভারতীয় পরিচয়ের বার্তা বহন করে। নান আমাদের বহুত্ববাদের গল্প শোনায়। শোনায় কীভাবে বিভিন্ন সংস্কৃতি মিলেমিশে একত্রে থাকে। এটি আমাদের শেখায়, ভিন্নতা মানেই একে অপরকে বাতিল করে দেওয়া নয়; বরং সেই ভিন্নতাগুলোকে একসঙ্গে উদ্‌যাপন করা।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতের দিনে ঘরে মায়াবী সুগন্ধ আর পরিচ্ছন্নতার সহজ পাঠ

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ০৭
প্রাচীন রোমান উৎসব ‘স্যাটারনালিয়া’র সময় কমলার খোসা ও দারুচিনি পোড়ানো হতো। ছবি: পেক্সেলস
প্রাচীন রোমান উৎসব ‘স্যাটারনালিয়া’র সময় কমলার খোসা ও দারুচিনি পোড়ানো হতো। ছবি: পেক্সেলস

ঘরকে পরিপাটি রাখার জন্য বেশ কিছু বিষয়ের ওপরে নজর থাকতে হয়। ধুলা মোছা থেকে শুরু করে জায়গা বুঝে আসবাব রাখা পর্যন্ত সবকিছু। এর সঙ্গে একটি বিশেষ দিকে খেয়াল রাখতে হয়, তা হলো ঘরের বাতাসে যেন কোনো দুর্গন্ধ না থাকে। আর সে জন্য অনেকে ব্যবহার করেন বিভিন্ন স্প্রে। আবার কেউ কেউ প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরের বাতাসে একটা সুবাতাস নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এটি শুধু সেই ঘরে উপস্থিত মানুষকে আরাম দেয় এমন না। বিষয়টি সরাসরি রোগব্যাধি ও জীবাণুর থাকা না থাকার সঙ্গেও সম্পর্কিত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসের একটি প্রাচীন ধারণা থেকে এই বিষয়ে একটা বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যায়। আর সেই ধারণাকে বলা হয় মিয়াজমা তত্ত্ব।

মিয়াজমা তত্ত্ব কী

মিয়াজমা তত্ত্ব অনুযায়ী বিশ্বাস করা হতো যে রোগব্যাধি কোনো জীবাণু থেকে নয়, বরং পচা বা দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস থেকে ছড়ায়। এই তত্ত্ব ১৯০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রচলিত ছিল।’ মিয়াজমা’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে। যার অর্থ দূষণ বা কলুষতা। তখনকার মানুষ বিশ্বাস করত যে পচা জৈব পদার্থ, আবর্জনা বা মৃত প্রাণীর পচা গন্ধ থেকে এক ধরনের বিষাক্ত কুয়াশা বা বাতাস তৈরি হয়। এই খারাপ বাতাস বা দুর্গন্ধ যখন মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে, তখন সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। যেহেতু বিশ্বাস করা হতো যে দুর্গন্ধই রোগ ছড়ায়, তাই মানুষ এর প্রতিকার হিসেবে কিছু ব্যবস্থা নিত। এর জন্য সুগন্ধির ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ভেন্টিলেশনের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করা হয়।

উপাদান ও প্রাচীন বিশ্বাস

প্রাচীন রোমান উৎসব ‘স্যাটারনালিয়া’র সময় কমলার খোসা ও দারুচিনি পোড়ানো হতো। মূল্যবান ফল কমলা ছিল সমৃদ্ধির প্রতীক, আর এর সুগন্ধ ঘরের দুর্গন্ধ ঢেকে দিত দ্রুত। শীতের দিনে ঘরের পরিবেশ আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর করতে আপনিও এই প্রাচীন পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। এর জন্য একটি পাত্রে অর্ধেক পানি নিন। তাতে পাতলা করে কাটা কমলালেবু বা লেবু এবং দু-টুকরো দারুচিনি দিন। ২০ মিনিট মাঝারি আঁচে ফুটিয়ে শেষে কয়েক ফোঁটা ভ্যানিলা ওয়েল মিশিয়ে দিন। এই সুগন্ধ আপনার ঘরের পর্দা ও বিছানায় মিশে গিয়ে এক অদ্ভুত উষ্ণতা ছড়িয়ে দেবে। দারুচিনি এবং কমলার তেলের অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য বাতাসের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এটি হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে বর্তমানের এক সেতুবন্ধ তৈরি করবে। এ ছাড়া মিষ্টি ও মসলাযুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য ভ্যানিলা, ক্যারামেল এবং মধুর মিশ্রণে তৈরি করে নিতে পারেন সুগন্ধি যা শীতকালে অসম্ভব জনপ্রিয়। এটি কেবল উষ্ণতাই দেয় না, মনে এক ধরনের স্বস্তি আনে।

শীতে মানুষ ঘরের দরজা-জানালা বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখে। আর সেখান থেকেই ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে পারে অস্বস্তি। ছবি: পেক্সেলস
শীতে মানুষ ঘরের দরজা-জানালা বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখে। আর সেখান থেকেই ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে পারে অস্বস্তি। ছবি: পেক্সেলস

অস্বস্তিকর গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে

অতীতের ইউরোপে তীব্র শীত থেকে বাঁচতে ঘরের ভেতরে গবাদিপশু রাখা হতো। এতে পশুদের শরীরের তাপে ঘর গরম থাকত ঠিকই, কিন্তু বদ্ধ পরিবেশে তীব্র দুর্গন্ধ তৈরি হতো। তৎকালে চিকিৎসাবিদ্যা মিয়াজমা তত্ত্ব অনুযায়ী বিশ্বাস করা হতো যে এই দুর্গন্ধই হলো সব রোগের মূল কারণ। তাই বাতাসকে ‘শুদ্ধ’ করতে সুগন্ধি ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। ইউরোপিয়ানদের মতো শীত না পড়লেও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বেশ শীতের প্রকোপ খেয়াল করা যায়। এই শীতে মানুষ ঘরের দরজা-জানালা বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখে। আর সেখান থেকেই ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে পারে অস্বস্তি। ঘরে মেহমান আসার আগে যদি বিস্কুট বা কেক তৈরি করেন, তবে সেই মিষ্টি সুগন্ধ পুরো বাড়িতে আভিজাত্যের ছোঁয়া দেবে। এমনই কিছু টিপস থেকে ২০২৬ সালে আপনার প্রিয় ঘরটিকে সব সময় ফ্রেশ রাখতে পারেন।

আর্দ্রতা বা ময়শ্চার নিয়ন্ত্রণ করুন

ঘরের দুর্গন্ধের প্রধান কারণ হলো আর্দ্রতা। ভেজা তোয়ালে ভালোমতো শুকিয়ে ভাঁজ করুন। ডিশ স্পঞ্জ প্রতি এক-দুই সপ্তাহে বদলে ফেলুন। বাথরুমে কার্পেট বা ম্যাট এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো আর্দ্রতা ধরে রাখে। কার্পেট, সোফার কুশন বা পর্দা দুর্গন্ধের ম্যাগনেট হিসেবে কাজ করে। কার্পেটে বেকিং পাউডার ছিটিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে ভ্যাকিউম করুন। এটি গভীর থেকে দুর্গন্ধ শুষে নেবে। বছরে অন্তত একবার কার্পেট ও সোফা স্টিম ক্লিন করান।

ঘরকে সতেজ রাখতে জেসমিন, রোজ বা ল্যাভেন্ডার গাছ রাখতে পারেন। ছবি: পেক্সেলস
ঘরকে সতেজ রাখতে জেসমিন, রোজ বা ল্যাভেন্ডার গাছ রাখতে পারেন। ছবি: পেক্সেলস

ডাস্টবিন ও পোষা প্রাণীর দিকে খেয়াল রাখুন

বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে তাদের ডাস্টবিন বা লিটার বক্সের গন্ধে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। তাই নিয়মিত ডাস্টবিনের ভেতরটা ঢাকনাসহ পরিষ্কার করুন। গন্ধ শুষে নিতে বালতির নিচে কিছুটা ‘কিটি লিটার’ বা বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিতে পারেন। বড় বিনের বদলে ছোট ডাস্টবিন ব্যবহার করুন যাতে প্রতিদিন ময়লা ফেলতে আপনি বাধ্য হন।

ফ্রিজ পরিষ্কারের ম্যাজিক

মাসে অন্তত একবার ফ্রিজের সবকিছু চেক করুন। মেয়াদোত্তীর্ণ সস বা পুরোনো বেঁচে যাওয়া খাবার ফেলে দিন। ফ্রিজের ভেতরটা পরিষ্কার করতে ভিনেগার ও গরম জলের মিশ্রণ ব্যবহার করুন। ফ্রিজের পেছনে একটি তুলার বলে ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্ট ভিজিয়ে রেখে দিন, এতে চমৎকার সুগন্ধ ছড়াবে।

বাতাস চলাচলের সুযোগ দিন

সবচেয়ে সহজ উপায় হলো জানালা খুলে দেওয়া। শীতের কারণে এখন অনেকেই ঘরের জানালা বন্ধ রাখেন। কিন্তু এতে ঘরের মধ্যে একধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়। রান্নার গন্ধ বা ঘরের ভ্যাপসা ভাব কাটাতে জানালা খুলে দিলে ক্রস-ব্রিজ তৈরি হয়, যা নিমেষেই মন ভালো করে দেয়।

গাছ ও ফুলের ব্যবহার

ঘরকে সতেজ রাখতে জেসমিন, রোজ বা ল্যাভেন্ডার গাছ রাখতে পারেন। জানালার পাশে পুদিনা বা রোজমেরি গাছ থাকলে ঘর এমনিতেই ফ্রেশ থাকে।

ড্রেন ও টয়লেট পরিষ্কার

সিঙ্ক বা শাওয়ারের ড্রেনে জমে থাকা চুল বা সাবানের ময়লা থেকে দুর্গন্ধ আসে। মাসে অন্তত দুবার ভিনেগার ও বেকিং সোডা দিয়ে ড্রেন পরিষ্কার করুন। টয়লেটের শুধু প্যান নয়, ট্যাঙ্কের ভেতরের ময়লাও স্ক্রাব করে পরিষ্কার রাখুন।

সূত্র: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ, বিজনেস ইনসাইডার, রিয়্যাল সিম্পিল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত