Ajker Patrika

শুষ্ক-তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে যা করতে পারেন

ফিচার ডেস্ক
শুষ্ক-তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে যা করতে পারেন

অনেকের ত্বক শুষ্ক হলেও তেলতেলে ভাব থাকে। এমন ত্বককে বলে শুষ্ক-তৈলাক্ত ত্বক বা ডিহাইড্রেটেড অয়েলি স্কিন। এমন অবস্থায় ত্বক পানিশূন্যতায় ভুগলেও অতিরিক্ত সেবাম বা তেল উৎপাদন করে। এর ফলে একটি পরস্পরবিরোধী পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই অবস্থা হলে ত্বক চিটচিটে, রুক্ষ বা খসখসে হয়। অনেকে মনে করেন, তৈলাক্ত ত্বকে হাইড্রেশন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাস্তবে এমনও হয় যে পানির অভাবে ত্বক অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে নিজেকে রক্ষা করে।

এই ত্বকের ধরন বুঝবেন যেভাবে

  • ত্বকে হাইড্রেশন না থাকার কারণে, বিশেষত ধোয়ার পর, ত্বকে অস্বস্তি অনুভূত হবে।
  • অতিরিক্ত তেল উৎপাদন মুখে একটি স্পষ্ট শাইন তৈরি করবে, বিশেষ করে টি-জোন অর্থাৎ মাথার সামনে, নাক ও থুতনিতে।
  • তৈলাক্ত হওয়া সত্ত্বেও ডিহাইড্রেটেড ত্বক রুক্ষ, অসমান বা টেক্সচারযুক্ত দেখাবে।
  • সিবামের অতিরিক্ত উৎপাদন পোরগুলোকে বড় এবং আরও দৃশ্যমান করে তুলবে।
  • ডিহাইড্রেটেড অয়েলি স্কিন হলে ত্বক সহজে অমসৃণ ও লালচে ভাব হয়ে থাকে।
  • মেকআপ ভালোভাবে মিশবে না এবং শুষ্ক জায়গায় বসে যাবে।

পরিত্রাণের উপায়

ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন

মুখ ধোয়ার পর হালকা ও হাইড্রেটিং উপাদান, যেমন হায়ালুরোনিক অ্যাসিড দিয়ে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজি প্রকাশিত গবেষণামতে, ত্বকের ধরন তৈলাক্ত হলেও এটি হাইড্রেটেড রাখতে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই এমন একটি ময়শ্চারাইজারও খুঁজে নিতে হবে, যাতে ৩০ বা তার বেশি সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টরযুক্ত ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন থাকে।

সঠিক ত্বকচর্চার পণ্য

ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক বাধা মেরামত করতে এবং হাইড্রেশন ধরে রাখতে ত্বকের যত্নে সেরামাইড ও নিয়াসিনামাইডসমৃদ্ধ পণ্য খুঁজতে হবে। ‘ক্লিনিক্যাল, কসমেটিক অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনাল ডার্মাটোলজি’ জার্নালে ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সেরামাইডের টিপিকল ব্যবহার ত্বকের হাইড্রেশন বাড়াতে সহায়ক। এই উপাদানগুলোর নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের হাইড্রেশন ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং সংবেদনশীলতা ও প্রদাহ কমায়।

তেল নিয়ন্ত্রণ

হাইড্রেশন বজায় রেখে সিবাম নিয়ন্ত্রণ করতে নন-কমেডোজেনিক পণ্য ব্যবহার করতে হবে। স্যালিসিলিক অ্যাসিড কিংবা জিংক পিসিএ-সমৃদ্ধ পণ্য তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালোভাবে কাজ করে। এগুলো তেল উৎপাদন সমন্বয় করতে, উজ্জ্বলতা এবং পোরের উপস্থিতি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

পানি পান

যত সঠিক পণ্যের ব্যবহার ত্বক হাইড্রেট করতে সাহায্য করবে, ততটুকু কাজ করে পানি। প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। যদি সাধারণ পানি পান না করতে চান, তাহলে স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য ডিটক্স পানি গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া কফি ও অ্যালকোহল কম পান করতে হবে। কারণ, এগুলো ত্বক ডিহাইড্রেট করতে পারে।

শুষ্ক-তৈলাক্ত ত্বকের কারণ হতে পারে কম পানি পান বা ত্বক চর্চার অনুপযুক্ত পণ্য ব্যবহার। সঠিক পণ্য ব্যবহার এবং পানি পান ত্বকের যেকোনো সমস্যা খুব সহজে সমাধান করে দিতে পারে।

সূত্র: হেলথ শটস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের পর্যটক কমায় ভারতে নিম্নমুখী আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর সংখ্যা

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বছরের শেষের দিকে এসে পর্যটন খাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ভারতের পর্যটন প্রসার বাজেট সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়েছে। দেশটির এই অবস্থায় লাভবান হচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিযোগীরা।

ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘স্কিফট’ তাদের প্রতিবেদনে সরকারি মালিকানাধীন এক্সিম ব্যাংকের একটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, বৈশ্বিক ভ্রমণ দ্রুতগতিতে পুনরুদ্ধার করা সত্ত্বেও ভারত পর্যটনের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে।

২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটক ভ্রমণ করেছে। এ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। মহামারি-পরবর্তী ভ্রমণ প্রবণতার হার বাড়া, উন্নত বিমান সংযোগ এবং শিথিল ভিসা নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে।

‘স্কিফট’ জানিয়েছে, ভারত এই প্রবৃদ্ধির সামান্য অংশ ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ট্যাক্স টিএমআই জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চে ২৬ দশমিক ১৫ লাখ পর্যটকের তুলনায় এপ্রিল থেকে জুনে ভারতে বিদেশি পর্যটকের আগমন (এফটিএ) কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৪৮ লাখে। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে কিছুটা বেড়েছে। ১৫ ডিসেম্বর সংসদে একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেন, এ বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে মোট বিদেশি পর্যটক আগমন দাঁড়িয়েছে ৬১ দশমিক ৮৩ লাখ।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রান্তিক ভিত্তিতে ভারতে বিদেশি পর্যটকের আগমনের তথ্য পেশ করেন। সেই সংখ্যাগুলো হলো জানুয়ারি-মার্চ বা প্রথম প্রান্তিক: ২৬ দশমিক ১৫ লাখ, এপ্রিল-জুন বা দ্বিতীয় প্রান্তিক: ১৬ দশমিক ৪৮ লাখ এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর বা তৃতীয় প্রান্তিক: ১৯ দশমিক ২০ লাখ।

শেখাওয়াত সংসদে তাঁর লিখিত জবাবে আরও জানান, বিদেশি পর্যটকের আগমন কমে যাওয়ার মূল কারণ বাংলাদেশ থেকে আসার সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়া। এ ছাড়া তিনি আরও কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণের ধরনে মৌসুমি তারতম্য, চলমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন দেশ-নির্দিষ্ট গতিশীলতা।

শেখাওয়াত বলেন, পর্যটনমন্ত্রী ভারতকে একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আকর্ষণীয় বৈশ্বিক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রচারের জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে।

এদিকে ভ্রমণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারতের পর্যটনশিল্পের জন্য আরও একটি কঠিন বছর পার হতে চলেছে।

সূত্র: স্কিফট, ট্যাক্স টিএমআই, মিন্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: আত্মীয়রা কাঠি করবে, খিটখিটে মেজাজ বিচ্ছেদের কারণ হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আজকের রাশিফল: আত্মীয়রা কাঠি করবে, খিটখিটে মেজাজ বিচ্ছেদের কারণ হবে

মেষ

আত্মবিশ্বাস একেবারে হিমালয়ের চূড়ায়। পৈতৃক সম্পত্তি পাওয়ার যোগ আছে। বাতের ব্যথায় কষ্ট পেতে পারেন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় নিজেকে স্পাইডারম্যান ভাববেন না। বেশি লাফঝাঁপ করলে কপালে হাড়ের ডাক্তার আছে। সকাল-সন্ধ্যা রিজিক বৃদ্ধির দোয়া করতে থাকুন।

বৃষ

শরীর চনমনে থাকবে। জীবনসঙ্গীর দেখা পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। যারা সিঙ্গেল, তারা আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশি সময় নষ্ট করবেন। রাজনীতিবিদদের জন্য দিনটি ভালো, মানে আজ বেশি মিথ্যা বললেও কেউ ধরবে না! তবে অ্যাকাউন্ট্যান্টরা সাবধান! হিসাবে ভুল করলে বস আপনাকে ‘ডেবিট’ করে দেবে।

মিথুন

বুদ্ধির জোরে শত্রুকে কুপোকাত করবেন। তবে খরচ হবে পাগলের মতো। পকেট থেকে টাকা আজ যেন ডানার সাহায্যে উড়ে যেতে চাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের জন্য কর্মচারীদের সঙ্গে ঝগড়া হওয়ার চান্স আছে। চা খাওয়ার সময় চিনির বদলে কর্মচারীর ওপর ঝাল মেটাবেন না।

কর্কট

চাঁদ আর মঙ্গলের মিলন আপনার রাশিতেই হচ্ছে! আপনি আজ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। পছন্দের জায়গায় ট্রান্সফার বা ভ্রমণের সুযোগ আসতে পারে। মিথ্যা বদনাম থেকে সাবধান। কেউ যদি বলে ‘ভাই, তোর ফোনটা একটু দিবি?’ —দেবেন না! ওটা আপনার চরিত্রহননের প্রথম ধাপ হতে পারে।

সিংহ

আত্মীয়রা আজ আপনার পেছনে কাঠি করার চেষ্টা করবে। সন্তানের উন্নতিতে আপনার বুক আজ কয়েক ইঞ্চি উন্নত হবে। কর্মক্ষেত্রে একদম শেষ মুহূর্তে কাজ আটকে যেতে পারে। মানে—গোলপোস্ট পর্যন্ত গিয়ে বল বাইরে মেরে আসার মতো অবস্থা। শান্ত থাকুন, স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে সকালে ঝগড়া করে দিনটি মাটি করবেন না।

কন্যা

পড়াশোনায় সাফল্য আসবে। প্রেমের ক্ষেত্রে দিনটি দারুণ রোমান্টিক। স্ত্রীর কোনো কাজে থমকে যেতে পারেন (হয়তো ভালো রান্না, নয়তো বড় শপিং লিস্ট)।

পেশি বা স্নায়ুর সমস্যায় ভুগতে পারেন। জিমের ট্রেইনারের কথা শুনে বেশি ভারি ওজন তুলতে যাবেন না, কোমর সোজা করতে কালঘাম ছুটে যাবে।

তুলা

বিনিয়োগের জন্য দিনটি দারুণ। দীর্ঘদিনের কোনো ঝুলে থাকা কাজ আজ শেষ হবে। অন্যদের সঙ্গে খুশি ভাগ করুন, কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড ভাগ করবেন না। আজ কেউ আপনাকে উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে টাকা ধার নিতে পারে। মনে রাখবেন, ধার দেওয়া টাকা আর হারানো দাঁত—একই জিনিস!

বৃশ্চিক

উপার্জনের পথ মসৃণ হবে। মানে আজ দু-টাকা বেশি আসার সম্ভাবনা। প্রেমে বিবাদ এমনকি বিচ্ছেদ পর্যন্ত হতে পারে! আপনার খিটখিটে মেজাজ আজ বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই সঙ্গীকে ‘তুমি মোটা হয়ে গেছো’ বা ‘তোমার হাতের রান্না ভালো না’—এই জাতীয় আত্মঘাতী মন্তব্য আজ করবেন না।

ধনু

দিনটি প্রচণ্ড ব্যস্ততায় কাটবে। কাজ শেষ করতে করতে নাভিশ্বাস উঠবে। মানসিক চাপ বাড়তে পারে। অফিসের বসের চেহারা দেখলে যদি মনে হয় কামড়ে দিই, তবে একটা চকলেট খেয়ে নিন। গুরুজনদের সঙ্গে মনোমালিন্য এড়িয়ে চলুন।

মকর

ইতিবাচক শক্তি আপনার সঙ্গে আছে। গুরুত্বপূর্ণ কোনো মানুষের সঙ্গে দেখা হতে পারে যিনি আপনার জীবন বদলে দিতে পারেন। সবকিছু দ্রুত করার চক্করে জুতা উল্টো পায়ে পরে ফেলবেন না। পকেটমার থেকে সাবধান থাকুন, আজ আপনার পকেটে অনেকের নজর আছে।

কুম্ভ

শত বাধা সত্ত্বেও আজ সফল হবেনই। বাড়িতে আজ অতিথি সমাগম হতে পারে। সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলার সম্ভাবনা আছে। বাড়ির বড়দের সঙ্গে তর্কে যাবেন না, কারণ শেষ পর্যন্ত তাদের কথাই ঠিক হয় (নয়তো তাদের হাতে লাঠি থাকে)।

মীন

সঞ্চয় নিয়ে চিন্তা বাড়বে। খরচ নিয়ন্ত্রণ না করলে মাসের শেষে শুধু মুড়ি খেয়ে থাকতে হবে। সঞ্চয় খোয়ানোর ভয় আছে। আজ অনলাইনে ‘ডিসকাউন্ট’ দেখে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। মনে রাখবেন, যেটা আপনার দরকার নেই, সেটা ১ টাকায় পেলেও আসলে ওটা লোকসান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আকাশে ঘুরে বেড়ানো এক নিঃসঙ্গ বাবার গল্প

ফিচার ডেস্ক
আকাশে ঘুরে বেড়ানো এক নিঃসঙ্গ বাবার গল্প

কল্পনা করুন, আপনার কাছে এমন একটি জাদুর কার্ড আছে, যা দিয়ে সারা জীবন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে প্রথম শ্রেণিতে ভ্রমণ করতে পারবেন! আর সেই ভ্রমণ হবে কোনো খরচ ছাড়াই—যতবার খুশি।

শুনতে রূপকথার মতো মনে হলেও আশির দশকে আমেরিকান এয়ারলাইনস ঠিক এমন ধরনের সুযোগ দিয়েছিল। গল্পের শুরু ১৯৮১ সালে। আমেরিকান এয়ারলাইনস তখন গভীর আর্থিক সংকটে। জ্বালানি তেলের আকাশচুম্বী দাম আর তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে টিকে থাকতে তাদের জরুরি ভিত্তিতে বিপুল নগদ অর্থের প্রয়োজন ছিল। দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে তারা এক অভিনব বুদ্ধি বের করল।

চালু করা হলো এয়ার পাস। প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করল, মাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার দিলে মিলবে আজীবন আনলিমিটেড ফার্স্ট ক্লাস ভ্রমণের সুবিধা। বর্তমানে বাজারমূল্যে যা প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। প্রতিষ্ঠানটি ভেবেছিল, বড় বড় ব্যবসায়ী হয়তো তাঁদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য এগুলো কিনবেন। কিন্তু তারা যা কল্পনা করতে পারেনি তা হলো, তাদের দেওয়া সেই গোল্ডেন টিকিট অল্প দিনের মধ্যেই তাদের কোটি কোটি ডলারের লোকসানে রূপ নেবে।

গোল্ডেন টিকিটের সুযোগ লুফে নেওয়া ৬৬ জনের মধ্যে একজন ছিলেন শিকাগোর বিনিয়োগ ব্যাংকার স্টিভেন রথস্টাইন। ১৯৮৭ সালে তিনি ২ লাখ ৫০ হাজার ডলারে নিজের জন্য এবং পরে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারে একজন সঙ্গীর জন্য আজীবন পাস কেনেন। রথস্টাইনের স্ত্রী ন্যান্সির ভাষায়, স্টিভেন প্লেনে উঠতেন ঠিক সেভাবেই, যেভাবে সাধারণ মানুষ বাসে ওঠে। তবে পরবর্তী ২০ বছরে তিনি যা করেন, তা অবিশ্বাস্য। তিনি মোট ১০ হাজারের বেশিবার ফ্লাইটে ভ্রমণ করেছেন। তিনি বছরে গড়ে ৪৭৬টি ফ্লাইট অর্থাৎ দিনে অন্তত একটির বেশি ফ্লাইটে ভ্রমণ করেছেন। তাঁর মোট ভ্রমণের দূরত্ব ছিল প্রায় ৩ কোটি মাইল!

স্টিভেন নিউইয়র্কে গেছেন ১ হাজার বার, লন্ডনে ৫০০ বার, এমনকি টোকিও অথবা প্যারিসেও গেছেন শত শত বার। মাঝে মাঝে তিনি শিকাগো থেকে স্রেফ তাঁর প্রিয় রেস্তোরাঁ থেকে একটি স্যান্ডউইচ খাওয়ার জন্য অন্য শহরে পাড়ি দিতেন। আমেরিকান এয়ারলাইনসের জন্য তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক চলন্ত লোকসান। একসময় হিসাব করে দেখা গেল, তাঁর এই ভ্রমণ করার পেছনে এয়ারলাইনসটির ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ২১ মিলিয়ন ডলার।

তবে স্টিভেন রথস্টাইনের এই অবিরাম ছুটে চলার পেছনে শুধু বিলাসিতা ছিল না; ছিল এক গভীর বিষাদও। ২০০২ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় রথস্টাইনের কিশোর ছেলে জশ মারা যায়। এরপর রথস্টাইন আরও বেশি একা হয়ে পড়েন। রাতের বেলা যখন বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে থাকত, তিনি একাকিত্ব কাটাতে এয়ারলাইনসের বুকিং এজেন্টদের ফোন দিতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতেন তাঁদের সঙ্গে। ফোন রাখার আগে এজেন্টরা যখন জিজ্ঞাসা করতেন, কোনো বুকিং করতে চান কি না। তখন তিনি অবলীলায় বলে দিতেন, ‘আচ্ছা, পরের সপ্তাহে আমাকে সানফ্রান্সিসকোর একটা টিকিট দাও।’ আসলে তাঁর কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না, তিনি কেবল মানুষের কণ্ঠস্বর শুনতে চাইতেন।

রথস্টাইনের এই যাত্রায় ছেদ পড়ে ২০০৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর। সেবার ও’হারে বিমানবন্দরে স্টিভেন যখন তাঁর বন্ধুর সঙ্গে লন্ডন যাওয়ার জন্য গেটে পৌঁছালেন, তখন তাঁকে একটি চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হলো। চিঠিতে বলা ছিল, তাঁর আজীবন পাসের মেয়াদ আজ থেকে শেষ। এয়ারলাইনস অভিযোগ তুলল, রথস্টাইন ‘প্রতারণা’ করেছেন। তারা দাবি করে, রথস্টাইন ভুয়া নামে পাশের সিট বুক করতেন, যাতে কেউ তাঁর পাশে বসতে না পারেন। এ ছাড়া তিনি মাঝেমধ্যে বিমানবন্দরে অপরিচিত মানুষদের তাঁর ‘কম্প্যানিয়ন পাস’ দিয়ে ফার্স্ট ক্লাসে আপগ্রেড করে দিতেন; যাকে এয়ারলাইনস নিয়মবহির্ভূত বলে দাবি করে। এদিকে স্টিভেন পাল্টা মামলা করলেন। তাঁর দাবি ছিল, তিনি কেবল অভাবী মানুষদের সাহায্য করেছেন, কাউকে নিজের পাস ব্যবহার করতে দেননি। বছরের পর বছর ধরে চলা এই আইনি লড়াই ২০১২ সালে একটি গোপন মীমাংসার মাধ্যমে শেষ হয়।

এয়ারলাইনসটি ১৯৯৪ সালে এই স্কিম বন্ধ করে দেয়। ২০০৪ সালে একবার ৩ মিলিয়ন ডলারে এটি পুনরায় বিক্রির চেষ্টা করা হলেও কেউ তা কেনেনি। স্টিভেনের মতো আরেকজন গ্রাহক জ্যাক ভ্রুমও একইভাবে তাঁর পাস হারিয়ে আইনি লড়াইয়ে জড়ান। আজকের যুগে যেখানে প্রতিটি মাইলের হিসাব রাখা হয় এবং কঠোর পরিচয়পত্র ছাড়া বিমানে ওঠা অসম্ভব, সেখানে স্টিভেন রথস্টাইন কিংবা জ্যাক ভ্রুমের এই গল্প এক সোনালি অতীতের সাক্ষী হয়ে আছে।

সূত্র: এরোটাইম, ফোর্বস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হোটেল রুমের পরিচ্ছন্নতা ও শিষ্টাচার

ফিচার ডেস্ক
হোটেল রুমের পরিচ্ছন্নতা ও শিষ্টাচার

হোটেলে আপনার অবস্থানকে আরামদায়ক করতে পর্দার আড়ালে নিরলস কাজ করে চলেন হাউসকিপিং কর্মীরা। তাঁদের কাজ সহজ করার জন্য এবং আপনার অভিজ্ঞতা আরও সুন্দর করতে ছোট ছোট কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার।

ভেজা তোয়ালে অথবা সমুদ্রসৈকতে ব্যবহারের পোশাক যত্রতত্র ফেলে না রেখে নির্দিষ্ট হ্যাঙ্গারে কিংবা বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখা ভালো। এটি রুমে ভ্যাপসা আর্দ্রতা ছড়ানো রোধ করে এবং কর্মীদের কাজগুলো দ্রুত করতে সাহায্য করে।

ভ্যানিটি টেবিল বা ডেস্কের ওপর আপনার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ছড়িয়ে না রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ব্যবহৃত কাপ, পানির খালি বোতল অথবা অন্যান্য আবর্জনা ময়লার ঝুড়িতে রাখতে পারেন। এ ছাড়া রুমের দরজার কাছে এক পাশে গুছিয়ে রাখুন।

লন্ড্রিতে পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত তোয়ালেগুলো বাথরুমের মেঝেতে কিংবা বাথটাবের এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা ভালো। তবে রুমের নির্দিষ্ট জায়গায় তোয়ালে রাখলে কর্মীরা খুব সহজে বুঝতে পারবেন না যে কোন তোয়ালেগুলো বদল করা প্রয়োজন।

হাউসকিপিং একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে কাজ করে। আপনি যদি দীর্ঘ সময় রুমে থাকতে চান কিংবা দ্রুততম সময়ে রুম পরিষ্কারের প্রয়োজন হয়, তাহলে বিষয়টি আগেভাগে কর্মীদের জানান।

ছোট একটি ‘ধন্যবাদ’ লেখা চিরকুট কর্মীদের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে। অনেক হোটেলের কর্মীরাও এমন চিরকুটের মজাদার উত্তর দিয়ে থাকেন, যা আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করে তুলবে।

টিপস বা বকশিশ কর্মীদের পরিশ্রমের একটি স্বীকৃতি। তাই তাদের জন্য কিছু বকশিশ খামে ভরে ‘হাউসকিপিং’ লিখে টেবিলের ওপর রাখতে পারেন।

সূত্র: ট্রাভেল+লিজার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত