Ajker Patrika

যে স্মার্টফোনগুলো পনেরো হাজার টাকার মধ্যে পাবেন

প্রযুক্তি প্রতিবেদক
আপডেট : ২০ মে ২০২১, ১২: ২৯
যে স্মার্টফোনগুলো পনেরো হাজার টাকার মধ্যে পাবেন

ঢাকা: বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া আমরা এক মূহুর্ত কল্পনা করতে পারি না। সাধ্যের মধ্যে আমরা সবসময়য় ভালো স্মার্টফোন চাই। সময়ের সাথে সাথে স্মার্টফোনগুলোতে নানারকম সুবিধাযুক্ত হয়েছে। নাগালের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে নানা সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোন। মাত্র পনের হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে এই ফোনগুলো। পনের হাজার টাকার মধ্যে যে ফোনগুলো পাওয়া যাবে-

ওয়ালটন প্রিমো এনফাইভওয়ালটন:
সাশ্রয়ী দামে সেরা কনফিগারেশনের স্মার্টফোন দিয়ে প্রযুক্তিপ্রেমীদের মন জয় করতে চায় ওয়ালটন। ওয়ালটনের এরকম একটি ফোন হচ্ছে ‘প্রিমো এনফাইভ। ‘প্রিমো এনফাইভ’ মডেলের এই ফোনে ব্যবহৃত হয়েছে বিশাল ডিসপ্লে, শক্তিশালী র্যাম-রম ও ব্যাটারি, ট্রিপল ব্যাক ক্যামেরাসহ আকর্ষণীয় সব ফিচার।
ফোনটি অ্যান্ড্রয়েড ১১ অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত। ফলে এই ফোনের কার্যক্ষমতা ও গতি অনেক বেশি। এতে ব্যবহৃত হয়েছে ২.০ গিগাহার্জ গতির ১২ ন্যানোমিটারের হেলিও জি২৫ এসওসি অক্টাকোর প্রসেসর। যাতে রয়েছে হাইপারইঞ্জিন প্রযুক্তি। এর সঙ্গে ৪ জিবি র্যাম এবং পাওয়ার ভিআর জিই ৮৩২০ গ্রাফিক্স থাকায় বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, থ্রিডি গেমিং এবং দ্রুত ভিডিও লোড ও ল্যাগ-ফ্রি ভিডিও স্ট্রিমিং সুবিধা পাওয়া যাবে। ফোনটির অভ্যন্তরীণ মেমোরি ৬৪ জিবি। ‘প্রিমো এনফাইভ’ মডেলের ফোনটির দাম ১২ হাজার ৪৯৯ টাকা।

এই রেঞ্জে ওয়ালটনের আরেকটি সেট হচ্ছে ‘প্রিমো আরএইট’। ‘প্রিমো আরএইট’ মডেলের ফোনটি ওশেন গ্রিন, গ্রাডিয়েন্ট পার্পল এবং ম্যাজিক ব্লু-এই তিনটি আকর্ষণীয় রঙে বাজারে এসেছে। এর দাম মাত্র ১০ হাজার ৬৯৯ টাকা।


ফোনটি অ্যান্ড্রয়েড ১০ অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত। এতে ব্যবহৃত হয়েছে ২.৩ গিগাহার্জ গতির ১২ ন্যানোমিটারের হেলিও জি৩৫ এসওসি অক্টাকোর প্রসেসর। যাতে রয়েছে হাইপারইঞ্জিন প্রযুক্তি। এর সঙ্গে ৪ জিবি র্যাম এবং পাওয়ার ভিআর জিই ৮৩২০ গ্রাফিক্স থাকায় এই ফোনের কার্যক্ষমতা ও গতি হবে অনেক বেশি। ফলে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, থ্রিডি গেমিং এবং দ্রুত ভিডিও লোড ও ল্যাগ-ফ্রি ভিডিও স্ট্রিমিং সুবিধা পাওয়া যাবে। ফোনটির অভ্যন্তরীণ মেমোরি ৬৪ জিবি। যা মাইক্রো এসডি কার্ডের মাধ্যমে ১২৮ জিবি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।  

সিম্ফনি জেড ৩৫সিম্ফনি:
সিম্ফনির জেড সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোন সিম্ফনি জেড ৩৫। চার্মিং গ্রীন, ফ্যানটাস্টিক ব্লু, মর্ডান ব্লু এবং সুপার গ্রীন এই চার কালারে হ্যান্ডসেটটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আকর্ষণীয় বান্ডেল অফারসহ মাত্র ১০ হাজার ৪৯০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এই ফোনটি। এই ফোনটিতে অপারেটিং সিস্টেম থাকছে অ্যানড্রয়েড ১১.০। সেলফি তোলার জন্য এই স্মার্টফোনটিতে আছে ৮ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা।


সিম্ফনির নতুন এই স্মার্টফোনটিতে আছে ৩ জিবি ডিডিআর ফোর র্যাম এবং ৩২ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ যা মেমোরি কার্ড এর মাধ্যমে ১২৮ জিবি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। ৯.৪ মিলিমিটার পুরু হ্যান্ডসেটটিতে পাওয়ারে আছে ৬০০০ এমএএইচের লিথিয়াম পলিমার বিশাল ব্যাটারি। এই ব্যাটারি দিয়ে নর্মাল ব্যবহারে অনায়াসে তিনদিন ব্যবহার করা যাবে স্মার্টফোনটি। এছাড়াও সেটটিতে আছে ১৫ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সুবিধা যা দিয়ে এই বিশাল এমপিআর ব্যাটারি ৫০% চার্জ হতে সময় নিবে মাত্র ১ ঘন্টা।

টেকনো স্পার্ক সেভেন প্রোটেকনো:
পনেরো হাজার টাকার মধ্যে বাজারে স্মার্টফোন ব্র্যান্ড টেকনোর স্পার্ক সিরিজের বেশকিছু ফোন পাওয়া যাচ্ছে। টেকনো স্পার্ক সেভেন প্রো-তে রয়েছে ৬.৬ ইঞ্চির এইচডি প্লাস ডট ইন। স্পার্ক সেভেন প্রো ফোনের পিছনে রয়েছে ৩টি ক্যামেরা যার মূল সেন্সর ৪৮ মেগাপিক্সেলের। এছাড়া ফোনটির ক্যামেরায় রয়েছে ডেপথ সেন্সর এবং এআই লেন্স। ফোনটির সামনে থাকছে ৮ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা। এই স্মার্টফোনে আছে মিডিয়াটেক হেলিও জি৮০ গেমিং প্রসেসর।
এছাড়া স্মার্টফোনটিতে ১০ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সুবিধার সাথে থাকছে ৫০০০ এমএএইচ বিশাল ব্যাটারি। টেকনো স্পার্ক সেভেন প্রো ফোনটি ম্যাগনেট ব্ল্যাক, আল্পস ব্লু এবং স্প্রুচ গ্রিন রঙে বাজারে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। ফোনটির মূল্য ৪ জিবি/ ৬৪ জিবি ১৩,৪৯০ টাকা এবং ৬ জিবি/ ৬৪ জিবি ১৪ হাজার ৯৯০ টাকা।

রিয়েলমি সি২৫রিয়েলমি:
পনেরো হাজার টাকার মধ্যে গ্রাহকদের জন্য দারুণ স্মার্টফোন এনেছে রিয়েলমি। এরকম একটি স্মার্টফোন হচ্ছে রিয়েলমি সি২৫।
রিয়েলমি সি২৫ এর দুটি ভ্যারিয়েন্ট-৪ + ৬৪ জিবি ও ৪ + ১২৮ জিবির দাম যথাক্রমে মাত্র ১৩ হাজার ৯৯০ টাকা ও মাত্র ১৪ হাজার ৯৯০ টাকা।
রিয়েলমির গেমিং পাওয়ার হাউস হিসেবে পরিচিত স্মার্টফোন হচ্ছে রিয়েলমি নারজো ৩০ এ। সেটটির দাম ১২ হাজার ৯৯০ টাকা।
নারজো ৩০ এ-তে রয়েছে ২.০ গিগাহার্টজ বিশিষ্ট অক্টা-কোর, এআরএম মালি-জি ৫২ জিপিইউ এবং শক্তিশালী হেলিও জি৮৫ প্রসেসর।

রিয়েলমি নারজো ৩০ এ-তে রয়েছে ৬,০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি এবং ১৮-ওয়াটের টাইপ-সি কুইক চার্জার।

 আইটেল এ৪৮আইটেল:
বাজারে সাশ্রয়ী দামে সেরা কনফিগারেশনের স্মার্টফোন নিয়ে উপস্থিত রয়েছে আইটেল। তাদের স্মার্টফোনগুলো হলো ভিশন ২ সিরিজ, ভিশন ১ প্রো সিরিজ, আইটেল এ৩৬, আইটেল এ৪৮।
ভিশন ২ স্মার্টফোনটিতে ৬.৬ ইঞ্চির এইচডি + ডট নচ ফুলস্ক্রিন ডিসপ্লে এবং ১৩ মেগাপিক্সেলের এআই ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা + ৮ এমপি এআই সেলফি ক্যামেরা আছে। ফোনটিতে ৪০০০ এমএএইচ বিশাল ব্যাটারি রয়েছে। ফোনটি ২ জিবি র্যাম + ৩২ জিবি রম/ ৩ জিবি র্যাম + ৬৪ জিবি রম এ দুটি সংস্করণে পাওয়া যাচ্ছে। ভিশন ২ সিরিজের ২ / ৩২ জিবি সংস্করণ স্মার্টফোনটির দাম ৮,৪৯০ টাকা এবং ৩ / ৬৪ জিবি সংস্করণ স্মার্টফোনটির দাম ৯ হাজার ৪৯০ টাকা।

আইটেল ভিশন ১ প্রো-তে ৮ মেগাপিক্সেলের এআই ট্রিপল ক্যামেরা + ৫ এমপি সেলফি ক্যামেরা আছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে এতে মাল্টিফাংশনাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর + ফেস আনলক সুবিধা রয়েছে। অ্যান্ড্রয়েডটিএম ১০ (গো সংস্করণ) চালিত ১.৪ গিগাহার্জের কোয়াড-কোর প্রসেসর ফোনটিতে ৪ জি চালানো যাবে। ভিশন ১ প্রো ২ / ৩২ জিবি সংস্করণ স্মার্টফোনটির দাম ৭,২৯০ টাকা এবং ৩ / ৩২ জিবি সংস্করণ স্মার্টফোনটির দাম ৮ হাজার ৬৯০ টাকা।

আইটেল এ৩৬ ফোনটিতে ৩০২০ এমএএইচ ব্যাটারি আছে যা অন্যান্য এন্ট্রি-লেবেলের স্মার্টফোনে নেই বললেই চলে। আইটেল এ৩৬ ফোনটিতে ৫.৫ এইচডি + ডিসপ্লে আছে। স্মার্টফোনটিতে ৫ এমপি রিয়ার ক্যামেরা + ৫ এমপি সেলফি ক্যামেরা সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। স্মার্টফোনটির দাম ৫ হাজার ২৯০ টাকা।

আইটেল এ৪৮ ফোনটির আকর্ষণীয় ফিচারের মধ্যে রয়েছে ৬.১ ইঞ্চি এইচডি+ডিসপ্লে ফুলস্ক্রিন এবং ৫ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা + ৫ এমপি সেলফি ক্যামেরা। এছাড়া ২ জিবি র্যাম + ৩২ জিবি রম স্মার্টফোনটিতে ১.৪ গিগাহার্টজ কোয়াড কোর প্রসেসর এবং ৩০০০ এমএএইচ ব্যাটারি রয়েছে। স্মার্টফোনটির দাম ৬ হাজার ৯৯০ টাকা।


ভিভো ওয়াই ২০ভিভো:
ভিভো ওয়াই ২০ ও ওয়াই ১২ এস স্মার্টফোন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ১৩,৯৯০ টাকা এবং ১১ হাজার ৯৯০ টাকায়। ভিভো ওয়াই ২০ ও ওয়াই ১২ এস-এ ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারির সঙ্গে রয়েছে সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি। ভিভো ওয়াই ২০ ’তে রয়েছে ৪ গিগাবাইট (জিবি) র্যাম এবং ৬৪ জিবি’র রম। স্মার্টফোনটির সামনে ৮ এমপির একটি ও পেছনে ১৩.২ ও ২ এমপির তিনটি রিয়ার ক্যামেরা আছে।

অন্যদিকে ভিভো ওয়াই ১২ এস’এ রয়েছে ৩ জিবি’র র্যাম ও ৩২ জিবি’র রম। এই স্মার্টফোনে ৮ এমপির ফ্রন্ট ক্যামেরার সাথে দু’টি রিয়ার ক্যামেরা আছে।

ইনফিনিক্স হট ১০ইনফিনিক্স:
ইনফিনিক্স ব্র্যান্ডের দারুণ একটি স্মার্টফোন হচ্ছে ইনফিনিক্স হট ১০। বিশাল ব্যাটারি এবং ডিসপ্লের ইনফিনিক্স হট ১০ প্লে ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০ হাজার ৪৯০ টাকায়।
পিকাবু, স্টারলিংক এবং গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারসহ সারাদেশে পাওয়া যাচ্ছে সেটটি। ইনফিনিক্স হট ১০ প্লে স্মার্টফোনটি এজিয়ান ব্লু, মোরান্ডি গ্রিন, ওবসিডিয়ান ব্ল্যাক এবং ৭ ডিগ্রী পার্পল-এ চারটি রঙে গ্লাসের টেক্সচারযুক্ত ভেরিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে।

অপো এ ৩৩অপো:
দেশের বাজারে গ্লোবাল স্মার্টফোন ব্র্যান্ড অপোর এ ৩৩ মডেলের স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে। বাজেট-ফ্রেন্ডলি এ ফোনটিতে ৯০ হার্জের পাঞ্চ-হোল ডিসপ্লে, ১৮ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং, ৫, ০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারির পাশাপাশি আছে এআই ট্রিপল ক্যামেরা। ফোনটির মূল্য মাত্র ১৩ হাজার ৯৯০ টাকা।
পছন্দের ভিডিও কন্টেন্ট দেখা ও চমৎকার গেমিং অভিজ্ঞতার জন্যে অপো এ৩৩-তে আছে ৬.৫-ইঞ্চির বিশাল ডিসপ্লে। উন্নত পারফরম্যান্স নিশ্চিতে ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১.৮ গিগাহার্জ গতির ও ১১ ন্যানোমিটারের শক্তিশালী স্ন্যাপড্রাগন ৪৬০ অক্টা-কোর প্রসেসর, ৩ জিবি র্যাম এবং  ৩২ জিবি স্টোরেজ, যা মাইক্রোএসডি কার্ডের মাধ্যমে ২৫৬ জিবি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।

স্যামসাং এ ১২স্যামসাং:
পনেরো হাজার টাকার মধ্যে স্যামসাং এর দারুণ একটি স্মার্টফোন হচ্ছে স্যামসাং এ ১২। ফোনটির দাম ১৪ হাজার ৯৯৯। ফোনটিতে রয়েছে ৫০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি। এছাড়া ফোনটিতে রয়েছে ৪৮ মেগাপিক্সেলের এআই কোয়াড ক্যামেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডায়াবেটিসের রোগীদের কেন সময় মতো খাবার খাওয়া জরুরি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
খাবার খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
খাবার খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম—দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তে শর্করাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারলে জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেশির ভাগ মানুষ জানেন, কোন খাবার রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু অনেকে হয়তো জানেন না, খাবার খাওয়ার সময়ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যেখানে শর্করাজাতীয় খাবার বিপাকের জন্য শরীরে যতটুকু ইনসুলিন প্রয়োজন হয়, ততটুকু থাকে না। আপনারা জেনে থাকবেন, ডায়াবেটিস দুই ধরনের হয়—টাইপ-১ ও টাইপ-২। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন একেবারেই থাকে না। তাই রোগ ধরা পড়ার সময় থেকে ইনসুলিন নিতে হয়। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন থাকে, কিন্তু ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের জন্য তা কাজ করতে পারে না। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগে শর্করাজাতীয় খাবারের বিপাকে সমস্যা হয়, তাই আমরা চিকিৎসকেরা এ ধরনের খাবার; যেমন চিনি, মিষ্টি, ভাত, মিষ্টি ফল, মধু ইত্যাদি পরিমাণমতো খেতে বলি। ডা. মাজহারুল হক তানিম, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ

কেন খাবারের সময় মেনে চলা জরুরি

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একই সময়ে নিয়মিত খাবার ও প্রয়োজন অনুযায়ী হালকা নাশতা খেলে রক্তে শর্করা তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকে এবং শরীরের শক্তির মাত্রাও বজায় থাকে। বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এবং সেই সব টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, যারা ইনসুলিন বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ করেন।

খাবার বাদ দিলে কী সমস্যা হয়

খাবার না খেলে অনেক সময় পরে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এতে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। আবার নিয়মিত খাবার না খেলে রাতে ঘুমের মধ্যেও রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যাকে বলা হয় রাতের হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এটি বিপজ্জনক হতে পারে; কারণ, ঘুমের মধ্যে অনেক সময় বোঝা যায় না কী হচ্ছে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করা কমে গেলেও কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। একে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া আন অ্যাওয়ারনেস। এটি গাড়ি চালানো বা ব্যায়ামের সময় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

সকালের নাশতা গুরুত্বপূর্ণ

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সকালের নাশতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর নাশতা দিনের শুরুতে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সারা দিন শক্তি ধরে রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে ভালোভাবে খেয়ে দুপুর ও রাতের খাবার তুলনামূলক হালকা রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ইনসুলিনের প্রয়োজনও কমে। অন্যদিকে, নাশতা বাদ দিলে বিকেল ও রাতে রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ পরে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন।

দুপুর ও রাতের খাবার

দুপুর ও রাতের খাবারে প্রতিদিন প্রায় একই পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রাখা ভালো। এতে রক্তে শর্করার ওঠানামা কম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খুব দেরিতে রাতের খাবার খাওয়া উচিত নয়। ঘুমানোর খুব কাছাকাছি সময়ে রাতের খাবার খেলে ওজন এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নাশতার প্রয়োজন

সব ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত নাশতার প্রয়োজন হয় না। রক্তে শর্করার মাত্রা ও ক্ষুধার ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। তবে ইনসুলিন গ্রহণকারী বা যাঁদের রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে হালকা নাশতা উপকারী হতে পারে। রাতে রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলে ঘুমের আগে অল্প নাশতা উপকারী হতে পারে।

ব্যায়াম ও খাবারের সময়

খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর হালকা ব্যায়াম করলে রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে; বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। তবে যারা ইনসুলিন বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ নেন, তাঁদের ব্যায়ামের আগে বা পরে সামান্য খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ব্যায়ামের সময় পেশি বেশি গ্লুকোজ ব্যবহার করে, ফলে রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে। তাই ব্যায়ামের সময় খাবার ও ইনসুলিনের সমন্বয় চিকিৎসকের পরামর্শে করা উচিত।

নিজের জন্য সঠিক পরিকল্পনা কীভাবে করবেন

ডায়াবেটিসে খাবারের সময় ও ধরন ব্যক্তিভেদে আলাদা হতে পারে। তাই নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে পরিকল্পনা করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো—

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সুষম খাবার খান।
  • কী খাচ্ছেন ও কখন খাচ্ছেন, তার সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা নোট করুন।
  • প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্যকর নাশতা রাখুন।
  • ব্যায়ামের আগে ও পরে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করুন।

চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করে খাবারের সময়সূচি ঠিক করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।

সূত্র: হেলথ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গ্রামের নাম মহিষখোলা

সুমন্ত গুপ্ত
গ্রামের নাম মহিষখোলা

জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। স্নিগ্ধ সকাল। মহাসড়কে সূর্যের আভা পড়েছে তির্যকভাবে। আমরা যাচ্ছি সুনামগঞ্জ জেলার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে ভারত সীমান্ত গোয়া ধর্মপাশা উপজেলায় মহিষখোলা গ্রামে। সেখানে ঘুমিয়ে আছেন একাত্তরের বীর শহীদেরা।

প্রকৃতির পালাবদলে শীতকাল এসেছে। তাই প্রকৃতির মাঝে চলেছে ঋতুবরণের পালা। আমরা চলেছি নতুন গন্তব্যে। পাগলা বাজারে এসে নামলাম। ঢুকে পড়লাম দয়াল মিষ্টান্ন ভান্ডারে। গরম-গরম পরোটা আর ভাজি দেওয়া হলো। পেটপূজা শেষ করে আমরা এগিয়ে চললাম গন্তব্যের পানে। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসে পৌঁছালাম সুনামগঞ্জ শহরে। সেখান থেকে যেতে হবে তাহিরপুর। প্রায় আড়াই ঘণ্টা যাত্রা শেষে হাজির হলাম সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের রোজ গার্ডেনে। এখানে দুপুরের খাওয়া শেষে আবারও রওনা দিলাম তাহিরপুরের দিকে।

গ্রামীণ পথে চলার মজাই আলাদা। দুই পাশে ধানখেত। মাঝ দিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। প্রায়

দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে এসে আমরা পৌঁছালাম তাহিরপুর বাজারে। এবার আমাদের পাড়ি দিতে

হবে টাঙ্গুয়ার হাওর। সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। মনে মনে সবাই খুশিই হলাম টাঙ্গুয়ার হাওর দেখা যাবে বলে। বাহন রয়েছে দুই ধরনের—ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর স্পিডবোট। আমরা চেপে বসলাম ইঞ্জিন নৌকায়।

টাঙ্গুয়ার ঢেউয়ের তালে তালে এগিয়ে চলছি। নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবনধারা আমাদের মোহিত করছে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে পৌঁছালাম ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর গ্রামে। সেখানে জন্য অপেক্ষা করছিলেন সোহাগ আর মুনিম নামে দুজন। আমরা চেপে বসলাম দুই চাকার বাহনে। এখান থেকে মহিষখোলা গ্রামের দূরত্ব ১০ মিনিট। এই বাইকে করেই সেখানে যেতে হবে। সময়মতো পৌঁছানো গেল মহিষখোলা গ্রামে।

শান্ত নীরব পরিবেশ। ঘাসফড়িং মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে। এগিয়ে চললাম মহিষখোলা নদীর পূর্বপাড় ঘেঁষে একখানা প্রায় নিশ্চিহ্ন টিনের ঘরের উদ্দেশে। এর অস্তিত্ব সরেজমিনে দেখেও কল্পনায় তার পূর্ণ রূপ দেখা কল্পনাবিলাসীদের জন্যও হয়তো দুরূহ হবে। তার আশপাশে ৪২ বছর ধরে মানুষের ছোঁয়া পড়েনি, তাই জঙ্গলাকীর্ণ। সেই ঘরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নিতেন। পাকিস্তানি হানাদারদের মাঝেমধ্যে ধরে বন্দী করেও রাখতেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এই অঞ্চল ছিল ১১ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর সাব-সেক্টর। এর পশ্চিমে গা ঘেঁষে মহিষখোলা নদী, উত্তরে ২০০ গজের মধ্যে ভারত সীমান্তে মেঘালয় পর্বতমালা, পূর্বে সংখ্যাহীন খালবিল এবং বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওর। এর সঙ্গে রাগে-অনুরাগে জড়িয়ে আছে আরেকটি স্নিগ্ধ নদী—জাদুকাটা। শ্রীচৈতন্যের জ্যেষ্ঠ পার্ষদ অদ্বৈতাচার্য এই নদীপারের সন্তান ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক ভয়াল সংঘর্ষ হয়। এতে অনেক যোদ্ধা মারা যান। মহিষখোলা নদীর পাড়ঘেঁষা সেই বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় তখনই, শহীদ যোদ্ধাদের গণকবর রচিত হয় তারই এদিক-সেদিক। তারপর ৪২ বছর লতা-গুল্ম-বৃক্ষের চাদরে ঢাকা ছিল এই ইতিহাস। বলছিলেন আমাদের সঙ্গী স্থপতি রাজন দাস। তিনি এখানে তৈরি করেছেন মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মারক। এখানে শায়িত আছেন একাত্তরের শহীদ হওয়া বীর প্রাণেরা।

পূর্ব-পশ্চিম অক্ষ বরাবর সমান্তরাল দুটি সুউচ্চ দেয়াল ৯ ফুট বেদির ওপর এসে দাঁড়ায়, তার ওপর ছায়া হয়ে ছাদ এসে বসে। সিঁড়ি ভেঙে পূর্ব দিকের প্রবেশবিন্দুতে চোখ রাখলে পশ্চিমের নদী আর তার গায়ে এসে পড়া আকাশ দেখা যায়। পূর্ব-পশ্চিম উন্মুক্ত হওয়ায় দুই দেয়ালের ঘর রচিত হয়ে যায়। উত্তর-দক্ষিণের ২৭ ফুট উঁচু দেয়ালে ব্যাকরণ ভেঙে অনেক ছোট-বড় জানালা আড়াল খুলে আলোর উৎস হয়ে ওঠে। ঠিক চোখ মেলে তাকানোর মতো। ‘যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ’ তারা তো বদ্ধ ঘরে থাকে না, যে ঘরে দোর-জানালায় অর্গল টানা, যে ঘরে আলোর ঝলক নেই, দোলা নেই, সে ঘরে স্বাধীনতা প্রবেশ করে না! তাই ‘সব কয়টা জানালা’ই খুলে রাখা হয়েছে। জানালা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যাংশ, যার ব্যবহারিক ও মনস্তাত্ত্বিক মূল্য অতুলনীয়। এটি আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়ের মতো।

চোখ দিয়ে যেমন আমাদের দেহ-ঘরে আলো প্রবেশ করে, আমাদের প্রথম অভিজ্ঞতা চোখ দিয়ে হয়, তেমনই দেয়ালকে মুক্তি দেয় জানালা। তবেই দেয়ালের চোখ ফুটে আলো-বাতাস প্রবেশ করে গৃহে প্রাণের সঞ্চার হয়। এ জন্যই ‘খোলা জানালা’ আর ‘স্বাধীনতার চেতনা’ সমার্থক হয়ে উঠেছে। বেদির তিন দিক ঘিরে রয়েছে পানির আধার, যা পশ্চিমে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। প্রতি বর্ষাতেই মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল নামলে নদী উপচে বেদির তলায় কিছুক্ষণের জন্য হাঁটুপানি জমে। এটা হাওরাঞ্চলের চেনা দৃশ্য। এভাবে হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে ‘সব কটা জানালা’ খুলে আমাদের ডাকছে ওরা, ‘যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ’।

যাবেন কীভাবে

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ সরাসরি এনা, হানিফ, শ্যামলী, ইউনিকসহ অনেক কোম্পানির বাস এই পথে চলাচল করে। তবে অবশ্যই অগ্রিম টিকিট কেটে রাখুন। তাহলে ঝামেলায় পড়তে হবে না। সুনামগঞ্জ শহরে এসে এম এ খান সেতুর কাছে পাবেন মোটরবাইক অথবা গাড়ি। সেগুলোতে যেতে হবে তাহিরপুর বাজার। সেখান থেকে নৌকায় করে যেতে হবে মধ্যনগর গ্রামে। মধ্যনগর থেকে মহিষখোলা গ্রাম ১০ মিনিটের রাস্তা। দল বেঁধে ঘুরতে গেলেই বেশি আনন্দ করতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাধবকুণ্ড ঝরনার পানিতে বিরল ঝরনাপাখি

নাকিব বাপ্পি
মাধবকুণ্ড ঝরনার পানিতে বিরল ঝরনাপাখি

ঝরনাপাখি। নামে যার সঙ্গে ঝরনা জড়িয়ে, তার সঙ্গে ঝরনার সম্পর্ক যে নিবিড় হবে, সেটা না বললেও চলে। এই অপার্থিব সুন্দর পাখির বাহারি বাংলা নামের তালিকাও বেশ সমৃদ্ধ—নীলাম্বর জলখঞ্জরী, নীল পানগির্দি, ঝরনাপাখি, নীল কপালিগির্দি, নীলচে লালগির্দি ইত্যাদি।

ইংরেজিতে এর নাম প্লাম্বিয়াস ওয়াটার রেডস্টার্ট; আর দাঁতভাঙা বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিকিউরাস ফুলিগিনোসাস।

ডিসেম্বরের শুরুর দিকের ঘটনা। মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ডে এই পাখির আগমন ঘটেছে—খবরটি পেয়েই মন অস্থির হয়ে উঠল। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন আলোকচিত্রী এর ছবি পোস্ট করে যেন সেই অস্থিরতার আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন। ভাবছি কী করা যায়! ঠিক তখন কাকতালীয়ভাবে সিলেট থেকে অতি প্রিয় এক আলোকচিত্রীর কল পেলাম। আমি কল রিসিভ করতেই তিনি বললেন, ‘চলে আসো।’ তারপর জানালেন কারা কারা থাকবেন, কখন উপস্থিত হবেন ইত্যাদি তথ্য।

পরদিন রাতের বাসে কয়েকজন মিলে রওনা দিলাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।

ভোরে পৌঁছে দেখি, ফটোগ্রাফার শামীম ভাই আর তাঁর সঙ্গী-সাথিরা ছবি তোলা শুরু করে দিয়েছেন। ফলে ‘মহাশয়কে’ খুঁজে পেতে বিশেষ বেগ পেতে হলো না। দীর্ঘ সময় নিয়ে মন-প্রাণ ভরে ছবি তুললাম। মাঝেমধ্যে ক্যামেরার শাটার চাপা থামিয়ে চর্মচক্ষু দিয়েও তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভুলিনি।

আকারে অত্যন্ত ছোট এই পাখির পুরুষ প্রজাতির গড় ওজন প্রায় ২২ গ্রাম আর স্ত্রী পাখির ১৮ গ্রাম। এত হালকা শরীরে কী পাহাড়সম সৌন্দর্যই না বয়ে বেড়ায় এরা!

শীতকালে পাহাড়ি নদীর ধারে এই ঝরনাপাখি অস্থায়ী নীড় বানায়। শীত বিদায় নিতেই চলে যায় গ্রীষ্মের গন্তব্যে। সেখানে পৌঁছেই সংসার গড়ায় মনোযোগী হয়। মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। স্ত্রী নীল পানগির্দি সাধারণত তিন অথবা চারটি হালকা গোলাপি-ধূসর কিংবা হালকা হলদে রঙের ডিম পাড়ে। ডিমে তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সে একাই দায়িত্ব পালন করে। তবে ছানা লালন-পালনের দায়িত্ব পুরুষটির কাঁধেও সমানভাবে বর্তায়।

বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, ভুটান, চীন, ভারত, লাওস, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এদের দেখা মেলে।

সবশেষে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে সাগরনালে নীলপরীর সন্ধানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, যা প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ভিন্ন এক গল্প। সেটি অন্য সময়ের জন্য তোলা থাক।

ক্যামেরা ব্যাগে নেওয়ার আগমুহূর্তে পাখিটি পানি আর মাটির সীমানাস্থলে এমনভাবে এসে বসল, দৃশ্যটা যেন এক ইলিউশন। মনে হলো, একটি পাখি হুট করে দুটো পাখি হয়ে গেছে। মনে মনে ‘ঝরনার জলে কার ছায়া গো’ বলতে বলতে সেদিনের মতো ক্লিক করলাম ঝরনাপাখির শেষ ছবিটি।

ছবি ও লেখা: নাকিব বাপ্পি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের পর্যটক কমায় ভারতে নিম্নমুখী আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর সংখ্যা

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বছরের শেষের দিকে এসে পর্যটন খাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ভারতের পর্যটন প্রসার বাজেট সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়েছে। দেশটির এই অবস্থায় লাভবান হচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিযোগীরা।

ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘স্কিফট’ তাদের প্রতিবেদনে সরকারি মালিকানাধীন এক্সিম ব্যাংকের একটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, বৈশ্বিক ভ্রমণ দ্রুতগতিতে পুনরুদ্ধার করা সত্ত্বেও ভারত পর্যটনের সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে।

২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটক ভ্রমণ করেছে। এ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। মহামারি-পরবর্তী ভ্রমণ প্রবণতার হার বাড়া, উন্নত বিমান সংযোগ এবং শিথিল ভিসা নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে।

‘স্কিফট’ জানিয়েছে, ভারত এই প্রবৃদ্ধির সামান্য অংশ ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ট্যাক্স টিএমআই জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চে ২৬ দশমিক ১৫ লাখ পর্যটকের তুলনায় এপ্রিল থেকে জুনে ভারতে বিদেশি পর্যটকের আগমন (এফটিএ) কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৪৮ লাখে। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে কিছুটা বেড়েছে। ১৫ ডিসেম্বর সংসদে একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত বলেন, এ বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে মোট বিদেশি পর্যটক আগমন দাঁড়িয়েছে ৬১ দশমিক ৮৩ লাখ।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রান্তিক ভিত্তিতে ভারতে বিদেশি পর্যটকের আগমনের তথ্য পেশ করেন। সেই সংখ্যাগুলো হলো জানুয়ারি-মার্চ বা প্রথম প্রান্তিক: ২৬ দশমিক ১৫ লাখ, এপ্রিল-জুন বা দ্বিতীয় প্রান্তিক: ১৬ দশমিক ৪৮ লাখ এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর বা তৃতীয় প্রান্তিক: ১৯ দশমিক ২০ লাখ।

শেখাওয়াত সংসদে তাঁর লিখিত জবাবে আরও জানান, বিদেশি পর্যটকের আগমন কমে যাওয়ার মূল কারণ বাংলাদেশ থেকে আসার সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়া। এ ছাড়া তিনি আরও কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণের ধরনে মৌসুমি তারতম্য, চলমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন দেশ-নির্দিষ্ট গতিশীলতা।

শেখাওয়াত বলেন, পর্যটনমন্ত্রী ভারতকে একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আকর্ষণীয় বৈশ্বিক পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রচারের জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে।

এদিকে ভ্রমণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারতের পর্যটনশিল্পের জন্য আরও একটি কঠিন বছর পার হতে চলেছে।

সূত্র: স্কিফট, ট্যাক্স টিএমআই, মিন্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত