Ajker Patrika

‘না’ বলাটা এত কঠিন কেন

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ৪২
‘না’ বলাটা এত কঠিন কেন

নবদম্পতি নীলা ও নাহিদ। দুজনেই কর্মজীবী। এক সপ্তাহ্ ধরে অপেক্ষা করছেন ছুটির দিনের, একটা নতুন সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা। কিন্তু ছুটির দিনের সকালেই নীলার মায়ের ফোন। সন্ধ্য়েবেলায় আত্মীয়স্বজনের একটা গেটটুগেদার আছে। নীলা আর নাহিদ না থাকলেই নয়। মায়ের ভাষ্য, ‘সিনেমা তো পরে দেখতেই পারবে, আত্মীয়স্বজন তোমাদের একসঙ্গে দেখতে চাইছে। চলে এসো সময়মতো।’ মন খারাপ হলেও নীলা বা নাহিদ কেউ ‘না’ বলতে পারল না। শুধু সেবারই নয়, বিয়ের পর পর প্রায় প্রতি সপ্তাহেই এ ধরনের ঘটনা চলতে লাগল।

ঘটনা কেবল এমনই হয় তা নয়; ধরুন–আপনার শরীর খারাপ। কিন্তু দিন পনেরো আগেই একটা দাওয়াতে যাবেন বলে কথা দিয়েছেন। কিন্তু শরীর খারাপ হওয়ায় সেখানে যেতে পারবেন না বলে জানালেন। কিন্তু পীড়াপিড়ি, জোর-জবরদস্তি এড়াতে পারলেন না। শরীর খারাপ নিয়েই গেলেন। বাড়ি ফেরার পর শরীর আরও খারাপ করল। এর দায় আসলে কার? আমাদের ‘না’ বলতে না পারার দায় ও ফলাফল কিন্তু আমাদেরই। কিন্তু ছোট্ট এই শব্দ, মানে ‘না’ বলা এত কঠিন কেন? ভিনদেশিরা আমাদের এই ভূমি শাসন করতে বারবারই এসেছে। ভূমিপুত্র হিসেবে প্রজন্মের পর প্রজন্মান্তর ‘না’ বলতে আমরা পারিনি। সেই প্রজন্মান্তর ক্ষত (ইন্টার জেনারেশনাল ট্রমা) এখনো আমাদের ডিএনএ বহন করছে এপিজেনেটিকসের মতো। কাজেই না বলতে না পারাটা অনেকখানি মজ্জাগত আমাদের।

কেন ‘না’ বলাটা এত কঠিন?
আমাদের মন মাত্র ৫ শতাংশ সচেতন, বাকি ৯৫ শতাংশ অবচেতন। শৈশবের বেড়ে ওঠার ধাপে চারপাশের পরিবেশ আমাদের শেখায় যে, ‘অন্যকে খুশি করাটা জরুরি।’ মনস্তাত্ত্বিক ভাষায় একে চালিকাশক্তি বলে। ঠিক গাড়ি যেরকম চালায় ড্রাইভার, এই মনস্তাত্ত্বিক চালিকাশক্তি আমাদের চালাতে শুরু করে। পাঁচ ধরনের চালিকাশক্তির মধ্যে, একটি হলো  প্লিজ আদারস অর্থাৎ অন্যকে তুষ্ট করো। আর অন্যকে তুষ্ট করতে যেয়েই আমরা ক্রমাগত অবচেতনভাবে শিখি ‘না’ বলা যাবে না; অথবা ‘না’ বলাটা বুঝি অভদ্রতা। এমনকি আমাদের সংস্কৃতিতে বড়দের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলাটাও ক্ষেত্রবিশেষে অভদ্রতা ধরা হয়। ছোট্ট একটি উদাহরণ দেই। বলা চলে, ছোটবেলা থেকেই শিশুর মেরুদন্ডটা ভেঙ্গে দেয়া হয় এই বলে ‘না’ মানেই অভদ্রতা, বেয়াদবি বা নেতিবাচক কিছু। সত্য কথা চোখে চোখ রেখে বলা যে একটি সহজাত গুণ, তা আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইনা। ফলে কিভাবে আশা করা যায়, শিশুটি প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে প্রয়োজন অনুযায়ী না বলতে পারবে?

‘না’ বলতে পারাটা জরুরি কেন
নিজের সক্ষমতার সীমারেখা বজায় রাখার জন্য ‘না’ বলতে পারাটা খুব জরুরি। কারণ আমি বা আমরা চাইলেই একসাথে দশটা কাজ করতে পারিনা। আর দশটা কাজের দায়িত্ব নিলে তার গুণগত মানও ঠিক থাকবে না। কাজেই যতটুকু পারি সেটুকু করতে রাজি হওয়াটাই বাস্তববাদীর লক্ষণ।

নিজেকে মানসিকভাবে চাপমুক্ত রাখার প্রয়োজনেও ‘না’ বলতে শেখাটা গুরুত্বপূর্ণ। যেই মুহূর্তে থেকে আমরা ‘না’ বলতে পারব সেই মুহূর্ত থেকে একটি স্বাস্থ্যকর আন্ত-সম্পর্কের সীমারেখা তৈরি হবে। এই সীমারেখা আমাদের সম্পর্কের সুস্থতা নিশ্চিত করে।

কর্ম পরিবেশে না বলাটা ভীষণ জরুরি। নয়ত আশেপাশের মানুষ আপনাকে পেয়ে বসবে। সেটা হতে পারে বাড়তি কাজের চাপ চাপিয়ে, বদলি ডিউটি বা ওভারটাইম দিয়ে।  
অনেকেই না বলার পরে আত্ম গ্লানিতে ভোগেন। আহা আমি বোধহয় ভালো ছেলে বা মেয়ে হতে পারলাম না। তাইতো একে, ওকে বা তাঁকে ‘না’ বললাম। কাজেই নিজের সীমারেখা সম্পর্কে আত্মসচেতন হওয়া আগে বেশি দরকার। আমি কত দূর পা বাড়াতে পারবো নিজের সক্ষমতা বুঝে ততদূরই পা বাড়ানো উচিৎ। আমি এক কিলোমিটার হাঁটতে পারলে যদি দশ কিলোমিটার একসাথে যাওয়ার কথা দিয়ে ফেলি তাহলে তো মুশকিল। অনেক সময় অনেকেই হয়ত আপনাকে দারুণ সক্ষম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করবেন, ‘উনি তো এটা পারেন, তো আপনি পারেন না কেন?’ কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে আমরা প্রত্য়েকেই তো আলাদা তাইনা? ফলে অন্য়ের কথায় নিজেকে কখনও ছাপিয়ে যাবেন না।

শিশুকে ‘না’ বলতে ও সিদ্ধান্ত নিতে শেখান 
ছোটবেলা থেকেই আপনার শিশুর মতামত গ্রহণ করুন। অনেকেই বলেন, ‘ও তো খুবই ছোট, ও কী বোঝে?’ কিন্তু শিশুরাও কিন্তু আত্মসচেতন, যথেষ্ট বুঝদার। কাজেই আপনার শিশুকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন বাইরে যাওয়ার সময় সে কোন জামাটা পরবে। হয়তো প্রচণ্ড গরমে সে একটা গরম জামা পরতে চাচ্ছে। সেটাই পরে বের হোক। সাথে আপনি একটি পাতলা জামা রাখুন। শিশু যখন ঘেমে যাবে তখন তাকে প্রশ্ন করুন তুমি কি এখন জামাটা বদলাতে চাও? কখনোই বলবেন না যে– ‘ওই যে মানা করেছিলাম দেখলে তো এখন।’ বরং যখন আপনি প্রশ্ন করবেন তুমি এখন ঘেমে যাচ্ছ জামাটা কি বদলে নেবে? তখন আপনি সন্তানকে চিন্তার সুযোগ করে দিচ্ছেন। তার চিন্তার জায়গাটা বিকশিত হচ্ছে যে, হ্যাঁ এই গরমে এত ভারী জামা পড়ে বের হওয়া যায় না। কিন্তু এর পরিবর্তে যদি আপনি শিশুর দোষ ধরেন, তাহলৈ সেও পরবর্তীতে আপনার এবং অন্যান্যদের দোষ ধরতে চেষ্টা করবে।

অনেক সময় বাড়িতে অতিথি এলে যদি শিশুকে কোলে নিতে চান তখন কোনো কোনো সময় শিশুরা নির্দিষ্ট কারো কারো কোলে উঠতে চায় না। এই না চাওয়াকে বেশিরভাগ অভিভাবকই আমলে নেন না। জোর করেন, বকাবকিও করেন। কিন্তু শিশুর এই ‘না’ কে গুরুত্ব না দেওয়ার ফলেই কিন্তু পরবর্তীতে তারা নিকটাত্মীয়দের দ্বারা যৌন নিগ্রহের স্বীকার হয় এবং সেকথাও বাবা–মাকে বলতে পারে না। অনেক সময় বললেও, বাবা–মায়েরা সেখানেও তাদের ‘না’ বলতে শেখান না।

‘না’ কে গ্রহণও করা চাই
‘না’ বলা শেখার সঙ্গে সঙ্গে অন্য কেউ যখন ‘না’ বলে সেটাকে গ্রহণ করতে শেখাটাও কিন্তু জরুরি। জীবনে চলতে চলতে আমরা হয়ত ‘না’ বলতে শিখে যাই অনেকটা বাধ্য হয়ে। কিন্তু অন্য়ের বলা ‘না’কে গ্রহণ করতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা শিখিনা। রবীন্দ্রনাথের কথা অনুযায়ী, ‘আমরা মেনে নেই, কিন্তু মনে নেই না।’

কাজেই ‘না’ বলতে পারাটা যেমন জরুরি, তেমনি নিজের ভেতরে ‘না’ গ্রহণ করতে শেখাটাও জরুরি।

লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বে বেশি উৎপাদন হয় কোন ৬টি ফল

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাথায় কোন ফলগুলোর কথা ঘুরেফিরে আসছে? আম নাকি কমলা? নাকি কাঁঠাল, বাঙ্গি বা তরমুজ? সে যাই হোক, আগে বলুন তো, এ পর্যন্ত কত ধরনের ফল খেয়েছেন? গুনে গুনে মাথা খাটিয়ে সেটা হয়তো বের করেও ফেলতে পারেন। তবে বিশ্বে কোন ফলগুলো বেশি উৎপাদন হয়, তা বলতে পারেন? ফলের পুষ্টিগুণ এবং জলীয় উপাদান বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের সুস্থতার একটি অপরিহার্য উপকরণে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ফল উৎপাদন বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলোর মধ্যে একটি। মূলত উষ্ণ, সূর্যস্নাত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে চাষ করা ফলগুলো অনেক দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নগদ অর্থ উপার্জনকারী ফসল। যেগুলো কৃষকদের জীবনধারণ এবং রপ্তানি রাজস্ব আয়ে ভূমিকা রাখে। বৈশ্বিক খাদ্যশিল্প বিশাল ও বৈচিত্র্যময় এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে নির্দিষ্ট কিছু ফল এখন প্রচুর উৎপাদন করা হচ্ছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক ফলগুলোর নাম।

১. কলা

তালিকার এক নম্বরে আছে কলা। হ্যাঁ, বিশ্বব্যাপী যে ফল উৎপাদন হয়, তার প্রথমে রয়েছে এর নাম। এই ফল বছরে ১৪৮ মিলিয়ন টন উৎপাদন করা হয় সারা বিশ্বে। কলা যে অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল, তাতে কারও কোনো সন্দেহ নেই। এতে আছে ভিটামিন সি এবং বি কমপ্লেক্স; সেই সঙ্গে আছে ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম। কলার শীর্ষ উৎপাদক ভারত। দেশটিতে ৩৩ মিলিয়ন টনের বেশি কলা উৎপাদন হয় প্রতিবছর। এরপর রয়েছে যথাক্রমে চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিল।

২. তরমুজ

বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বাধিক উৎপাদিত ফল তরমুজ। অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের দেশে পরিমাণে কম উৎপাদন হলেও পুরো বিশ্বে এর উৎপাদন প্রায় ১১০ মিলিয়ন টন! উচ্চ জলীয় উপাদানের জন্য পরিচিত তরমুজে আছে ভিটামিন এ ও সি, লাইকোপিন এবং সিট্রুলিন। এ ফল উৎপাদনের শীর্ষে আছে চীন। দেশটি বৈশ্বিক উৎপাদনের ৬০ শতাংশ সরবরাহ করে। এরপর রয়েছে তুরস্ক, ভারত ও ব্রাজিল।

৩. আপেল

ফলটির র‍্যাঙ্কিং নিয়ে আপেলপ্রেমীরা আশাহত হতেই পারেন। খুব বেশি কষ্ট নেবেন না মনে। আপনার প্রিয় এই ফল সারা পৃথিবীতে উৎপাদিত হয় প্রায় ১০৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন। এর প্রায় ৫৩ শতাংশ উৎপন্ন হয় আবার চীনে। তালিকায় এর পরের দেশগুলো হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও ভারত। এই সুস্বাদু ফলটিতে আছে প্রাকৃতিক চিনি ও ভিটামিন সি। এ ছাড়া এটি প্রদাহরোধী ও বার্ধক্যবিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত এবং প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরা।

৪. কমলা

এই শীতকালে বাজারে এর উপস্থিতি দেখে মনেই হয় না যে এটি উৎপাদনের সেরা তালিকায় আছে চার নম্বরে। তাই না? কিন্তু সেরাদের তালিকাতেই তো আছে, তাই চিন্তা করবেন না। না বললেও চলে যে কমলা অনেক উপকারী ফল। এতে আছে ভিটামিন সি, বি৯ (ফোলেট), পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ৮৪ মিলিয়ন টনের বেশি কমলা উৎপাদিত হয়। এ ফল উৎপাদনে শীর্ষে আছে ব্রাজিল। এরপর আছে ভারত, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

৫. নারকেল

অনেকের কাছেই খুব অদ্ভুত মনে হতে পারে যে উৎপাদিত ফলের শীর্ষ তালিকায় নাম আছে নারকেলের! তাও আবার সেরা পাঁচে! বলে রাখা ভালো যে সমুদ্র তীরবর্তী প্রায় সব দেশের অন্যতম প্রধান ফল এটি। এটি আবার বিশ্বের অন্যতম পুষ্টিকর ফলও বটে। এতে সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইট, সেই সঙ্গে ভিটামিন, মিনারেল এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি রয়েছে। বিশ্বে প্রায় ৬৯ মিলিয়ন টন নারকেল উৎপাদিত হয় প্রতিবছর। এ ফল উৎপাদনে শীর্ষে আছে ইন্দোনেশিয়া। এরপর আছে ফিলিপাইন, ভারত ও শ্রীলঙ্কা।

৬. আম

হ্যাঁ, অনেক সংস্কৃতিতে ‘ফলের রাজা’ হিসেবে পরিচিত আম আমাদের কাছেও ফলের রাজা হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু উৎপাদনের পরিমাণের হিসাবে এই ফল পুরো বিশ্বের তালিকায় আছে ছয় নম্বরে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন টন আম উৎপাদিত হয়। আমের শীর্ষ উৎপাদক ভারত। মোট আম উৎপাদনের ৪০ শতাংশের বেশি ভারতে উৎপাদিত হয়। উৎপাদক দেশ হিসেবে এরপর আছে ইন্দোনেশিয়া, চীন ও থাইল্যান্ডের নাম। আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কোনো কোনো দেশে এর ফলন হয়। আমে আছে ভিটামিন এ, বি৯, সি, বিটা-ক্যারোটিন, আঁশ এবং প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফল

সেরা তালিকায় জায়গা না হলেও পৃথিবীতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ফল আছে। সেগুলোর মধ্যে আনারসের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৩২ মিলিয়ন টন। ফলটির শীর্ষ উৎপাদক দেশ ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও কোস্টারিকা।

পিচ ও নেকটারিনের বার্ষিক উৎপাদন ২৯ মিলিয়ন টনের বেশি। মোট উৎপাদনের ৬৫ শতাংশই হয় চীনে। এ ছাড়া স্পেন ও তুরস্কে এসব ফল উৎপন্ন হয়।

পৃথিবীতে নাশপাতির বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৯ মিলিয়ন টন। চীন, আর্জেন্টিনা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ফলের শীর্ষ উৎপাদক দেশ।

লেবু ও লাইমের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২১ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন। মেক্সিকো, ভারত, চীন এর শীর্ষ উৎপাদক।

পেঁপের বার্ষিক উৎপাদন ১৫ মিলিয়ন টনের বেশি। বৈশ্বিক উৎপাদনের ৪০ শতাংশ উৎপাদিত হয় ভারতে। এর পরে আছে ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ও মেক্সিকো।

আলুবোখারা ও স্লোর বার্ষিক উৎপাদন ১৩ মিলিয়ন টনের বেশি। এর শীর্ষ উৎপাদক দেশ চীন, রোমানিয়া ও সার্বিয়া।

জাম্বুরা ও গ্রেপফ্রুটের বার্ষিক উৎপাদন ১০ মিলিয়ন টনের বেশি। এ ফলের বৈশ্বিক উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ উৎপন্ন হয় চীনে। এর পরেই আছে মেক্সিকো।

খেজুরের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ১০ মিলিয়ন টন। মিসর, সৌদি আরব ও ইরান এ ফলের শীর্ষ উৎপাদক।

অ্যাভোকাডোর বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৯ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন। মেক্সিকো, কলম্বিয়া ও পেরু রয়েছে এর শীর্ষ উৎপাদক দেশের তালিকায়।

সূত্র: ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ, ইইউএফআইসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্যটকের স্রোতে বিপর্যস্ত শহর

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শহরে ওভার ট্যুরিজম বা অতিরিক্ত পর্যটনের কারণে চাপ বাড়ছে শহরের অবকাঠামো, পরিবেশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার ওপর। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শহরে ওভার ট্যুরিজম বা অতিরিক্ত পর্যটনের কারণে চাপ বাড়ছে শহরের অবকাঠামো, পরিবেশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার ওপর। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

ভ্রমণ এখন আর ইবনে বতুতার যুগে পড়ে নেই। যতই সময় গেছে, ততই পৃথিবী হয়েছে ভ্রমণবান্ধব। এখন তো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পর্যটনকে নিজেদের রাজস্ব বাড়ানোর উপায় হিসেবে দেখছে। ফলে চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম বা শ্রীলঙ্কার মতো ভ্রমণবান্ধব দেশগুলো ভিসাব্যবস্থা করেছে সহজ। এতে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে দেশগুলোতে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশগুলোর রাজস্ব; কিন্তু এতে সমস্যাও বেড়েছে কিছু।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শহরে দেখা দিয়েছে ওভার ট্যুরিজম বা অতিরিক্ত পর্যটন। এতে শহরগুলোতে ঘুরছেন ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক পর্যটক। ফলে চাপ বাড়ছে শহরের অবকাঠামো, পরিবেশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার ওপর। কয়েক বছর ধরে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ করেছেন। ফলে সরকার বাধ্য হয়েছে ব্যবস্থা নিতে। কোনো কোনো শহরে ভ্রমণ কর বাড়ানো হয়েছে। কোথাও স্থায়ীভাবে হোটেল তৈরির ওপর দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কোনো কোনো ভ্রমণ গন্তব্যে প্রবেশ ফি বাড়ানো হয়েছে। কোথাও কোথাও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলো। এ সবকিছুই করা হয়েছে অতিরিক্ত পর্যটক ঠেকানোর জন্য।

প্রাচুর্য ও ঐতিহ্যের শহরে জনজোয়ারের ঢেউ ইউরোপজুড়ে।

ইউরোপ মহাদেশে ওভার ট্যুরিজমের সমস্যা প্রকট। সে অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ছোট শহর এবং বেশ কিছু দেশের রাজধানী পর্যটকের চাপে হিমশিম খাচ্ছে। ইতালির শহর ভেনিস ওভার ট্যুরিজমের’ পোস্টার চাইল্ড’ হিসেবে পরিচিত। এই ছোট দ্বীপ শহরে অতিরিক্ত ভিড় পরিস্থিতিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, কর্তৃপক্ষ এখন সব পর্যটকের জন্য পর্যটন কর আরোপ করেছে। বিশাল আকারের প্রমোদতরি বা ক্রুজ শিপগুলোর ডকিং নিষিদ্ধ করার জন্য ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে। স্পেনের বার্সেলোনাও অতিরিক্ত পর্যটনের কারণে মারাত্মকভাবে ভুগছে। শহরটি আকারে খুব বেশি বড় না হওয়ায় পর্যটকের বিপুল প্রবাহ সামলাতে পারছে না। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।

বার্সেলোনার স্থানীয় বাসিন্দারা ওভারটুরিজমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। ছবি: এএফপি
বার্সেলোনার স্থানীয় বাসিন্দারা ওভারটুরিজমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। ছবি: এএফপি

ভেনিস ও বার্সেলোনার মতো নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম অতিরিক্ত পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। শহরটির সহনশীলতার সুনাম প্রায়ই অনাকাঙ্ক্ষিত পর্যটনকে আকর্ষণ করে সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে। গ্রিসের রোমে পর্যটকদের খারাপ আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেমন ফোয়ারার ওপর ওঠা বা বসে থাকা, নির্দিষ্ট সময়ের পর মদপান ইত্যাদি। অন্যদিকে, এথেন্সে এয়ারবিএনবি ভাড়ার কারণে ভাড়া বাজারে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে, যা স্থানীয়দের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এদিকে ক্রোয়েশিয়ার ডুব্রোভনিক ভুগছে খ্যাতির বিড়ম্বনায়। জনপ্রিয় টিভি শো ‘গেম অব থ্রোনস’-এর কারণে এই শহরে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ৪৩ হাজারেরও কম জনসংখ্যার একটি ছোট শহরের জন্য এটি এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।

লন্ডন বড় শহর হলেও প্রধান সড়ক, গণপরিবহন ও কেন্দ্রীয় এলাকাগুলোতে তীব্র যানজট ও ভিড় সৃষ্টি হচ্ছে। প্যারিসে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে লুভর জাদুঘরের কর্মীরা ধর্মঘট করেছিলেন এবং শহর কর্তৃপক্ষ পর্যটন বাসকে সিটি সেন্টার থেকে নিষিদ্ধ করেছে। বার্লিনে লং উইকেন্ড পর্যটকদের কারণে শব্দদূষণ এবং এয়ারবিএনবি ভাড়া নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। লিসবন তুলনামূলকভাবে ছোট শহর, যেখানে পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। ফলে ভাড়া বৃদ্ধি এবং জেন্ট্রিফিকেশন বা আভিজাত্যের সৃষ্টি হয়েছে। ফ্লোরেন্সে অনেক বাড়িওয়ালা পর্যটকদের কাছে বাড়িভাড়া দিয়ে বেশি টাকা উপার্জনের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করেছে। এ ছাড়া ব্রুজেস, প্রাগ, ভিয়েনা, ডাবলিন, কোপেনহেগেন, অক্সফোর্ড এবং মাদ্রিদের মতো শহরগুলোতেও ক্রুজ শিপ ডকিং সীমিত করা হয়েছে। শহরগুলো পর্যটকদের খারাপ আচরণ নিয়ন্ত্রণ বা পর্যটন কর আরোপের মতো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।

এশিয়ার সংস্কৃতি ও প্রকৃতি চাপের মুখে

এশিয়ার দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া শহরগুলোতে ওভার ট্যুরিজমের প্রভাব বাড়ছে, যা পরিবেশ ও সামাজিক কাঠামোকে আঘাত করছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হয় থাইল্যান্ডের কথা। পর্যটক আকর্ষণকারী শহরের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে ব্যাংকক। এর খাও সান রোডের মতো বিখ্যাত জায়গাগুলোতে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাপানে পর্যটকের হার বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। কিছু পর্যটকের আচরণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। টোকিওর অবস্থা এদিক থেকে বেশি বিপজ্জনক। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের অনেক বাসিন্দা তাদের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পর্যটকের ভিড় এবং আচরণ নিয়ে অসন্তুষ্ট। ফলে কিছু স্থানীয় মানুষ স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন বা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে ট্রেন স্ট্রিট নামে পরিচিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা অতিরিক্ত ভিড়ের সমস্যার কারণে পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

উত্তর আমেরিকার বড় শহরগুলোতে ভবিষ্যতের উদ্বেগ

উত্তর আমেরিকার বড় শহরগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি ভবিষ্যতে বড় সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরটি ছোট ইউরোপীয় শহরগুলোর তুলনায় বেশি পর্যটক ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। তবে প্রতিবছর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকা পর্যটকের সংখ্যা ভবিষ্যতে বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নিউ অরলিন্স শহরে সৃষ্টি হয়েছে প্রচণ্ড ভিড়। সে সঙ্গে পর্যটকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ স্থানীয় বাসিন্দাদের অসন্তোষের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। হাওয়াই দ্বীপে অতিরিক্ত পর্যটকের আগমন স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পর্যটন ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ওপর আঘাত

অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের নিকটবর্তী দ্বীপ এবং শহরগুলোতে প্রকৃতির ওপর পর্যটনের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আইসল্যান্ডকে বলা হয় প্রাকৃতিকভাবে অক্ষত দেশ। সেখানেও অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড় পরিবেশতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউনের সমুদ্রসৈকতগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় দেখা যাচ্ছে। পর্যটন বাড়ার কারণে সম্পত্তির দামও লক্ষণীয়ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন একটি সুন্দর এবং তুলনামূলকভাবে সস্তা শহর। আর সে জন্যই এটি বহু পর্যটককে আকর্ষণ করে। কিন্তু পর্যটকদের সম্পত্তি কেনা বা ভাড়া নেওয়ার কারণে অনেক স্থানীয় মানুষ আবাসন বাজার থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিবছর জনসংখ্যার প্রায় ৫ গুণ বেশি পর্যটক ভ্রমণ করে মাল্টার রাজধানী ভ্যালেটায়!

নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা

পর্যটন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনে। তবে এর নিয়ন্ত্রণহীন বৃদ্ধি পরিবেশ, অবকাঠামো এবং স্থানীয় জীবনযাত্রাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ইউরোপ হোক বা এশিয়া, সবখানেই এখন সেটা দেখা যাচ্ছে। অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড়ে এখন পর্যুদস্ত অনেক শহর আর তার স্থানীয় বাসিন্দারা। কর্তৃপক্ষ যদিও অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু কত দূর কী হচ্ছে, তা সময়ই বলে দেবে।

সূত্র: সিএনএন, দ্য লোকাল, দ্য ইনডিপেনডেন্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ত্বক টান টান আর উজ্জ্বল রাখতে চান? ব্যবহার করুন এই ঘরোয়া ফেসপ্যাকগুলো

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বাজার চলতি সৌন্দর্যপণ্য ব্যবহার না করেও ত্বকের কোলাজেনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। ছবি: পেক্সেল
বাজার চলতি সৌন্দর্যপণ্য ব্যবহার না করেও ত্বকের কোলাজেনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। ছবি: পেক্সেল

আমাদের বয়স যত বাড়ে, ত্বকের লাবণ্যও তত কমতে থাকে। পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ত্বক নির্জীব ও নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন কমে গেলে তাতে বলিরেখা দেখা দেয় আবার তার উজ্জ্বলতা কমে গিয়ে কুঁচকে বা ঝুলেও যেতে পারে।

কোলাজেনের ঘাটতি মিটিয়ে ত্বকের টান টান ভাব ফিরিয়ে আনতে এখন বাজারে কোলাজেন ক্রিম, শিট মাস্ক ও প্যাক পাওয়া যায়। বাজার চলতি এসব সৌন্দর্যপণ্য ব্যবহার না করেও ত্বকের কোলাজেনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু কী এই কোলাজেন, যার কমতিতে ত্বকে নানাভাবে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়? এর উত্তর হলো, কোলাজেন এমন একটি প্রোটিন, যা ত্বক টান টান ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। তবে বয়স বাড়লে প্রাকৃতিক কারণে কমতে থাকে এর উৎপাদন। তা ছাড়া সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব, ধোঁয়া ও দূষণসহ নানা কারণে যেকোনো বয়সী মানুষের ত্বকেই কোলাজেনের মাত্রা কমে যেতে পারে।

এবার আসা যাক আসল প্রসঙ্গে—ঘরোয়া টোটকায় যেভাবে ত্বকের কোলাজেনের মাত্রা ঠিক রাখবেন। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি কিছু ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহারে ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কোন উপাদানে তৈরি সেই জাদুকরী ফেসপ্যাক? জেনে নিন এখানে—

ত্বক নরম ও সুন্দর রাখতে টক দই এবং মধুর মিশ্রণ যে দারুণ কার্যকর। ছবি: পেক্সেলস
ত্বক নরম ও সুন্দর রাখতে টক দই এবং মধুর মিশ্রণ যে দারুণ কার্যকর। ছবি: পেক্সেলস

টক দইয়ের সঙ্গে মেশান মাত্র দুটি উপাদান

ত্বক নরম ও সুন্দর রাখতে টক দই এবং মধুর মিশ্রণ যে দারুণ কার্যকর, সে কথা কারওরই অজানা নয়। ত্বকের কোলাজেনের ঘাটতি পূরণেও এই উপাদানগুলো খুব ভালো কাজ করে। একটি পাত্রে ১ টেবিল চামচ টক দইয়ের সঙ্গে আধা চা-চামচ মধু ও আধা চা-চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে নিন। এবার ত্বক ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে তারপর এ প্যাকটি মুখ, গলা ও ঘাড়ে মেখে নিন। ১০ মিনিট রেখে পানির ঝাপটায় ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এ প্যাকটি কিন্তু পুরো শরীরে ব্যবহার করতে পারেন।

পেঁপে ও মধুর ফেসপ্যাক

পেঁপে পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। এক চামচ পেঁপের ক্বাথ নিয়ে তার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে ক্রিমের মতো বানিয়ে নিন। ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধোয়ার পর মিশ্রণটি ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। বিশেষত শীতের দিনে রুক্ষ ত্বকের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি প্যাক।

ডিম, ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল ও অলিভ অয়েলের মিশ্রণ

প্রোটিনের অন্যতম উৎস ডিম। এতে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। একটি পাত্রে ডিমের সাদা অংশ নিয়ে তার সঙ্গে আধা চা-চামচ অলিভ অয়েল ও একটি ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা তরল মিশিয়ে নিন। বাইরে থেকে ফিরে মুখ ক্লিনজার দিয়ে ধোয়ার পর মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। মুখে লাগিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করে রেখে দিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার এ প্যাক ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।

জেনে রাখা ভালো

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, অতিরিক্ত ধূমপান, বয়স বাড়তে থাকা, শরীরে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ভিটামিন ‘সি’র অভাব ত্বকে কোলাজেনের ঘাটতির প্রধান কারণ। এর উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ত্বক টান টান রাখতে শুধু ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহারই যথেষ্ট নয়। নিয়ম করে ক্লিনজিং, টোনিং এবং ময়শ্চারাইজিং অর্থাৎ সিটিএম রুটিন মেনে চলা জরুরি। পাশাপাশি মৌসুমি ফল ও শাকসবজি খাওয়ায় মনোযোগ দিতে হবে। নজর রাখতে হবে দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করার দিকে। এসব মেনে চলার পরও যদি ত্বক অতিরিক্ত রুক্ষ হয়ে ওঠে, কিংবা বলিরেখা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করে, তাহলে ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। অনেক সময় হরমোনের ভারসাম্যের সমস্যা থাকলেও ত্বকে কোলাজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বলিরেখা কমাতে ইদানীং নানা রকম চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ হচ্ছে। ত্বক বিশেষজ্ঞ আপনার ত্বকের অবস্থা বুঝে সেসব চিকিৎসা দেবেন।

সূত্র: অনলি মাই হেলথ ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিমানযাত্রার অলিখিত নিয়মগুলো জেনে নিন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বিমানে উঠে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টকে ধন্যবাদ জানানো শুধু ভদ্রতা নয়; পুরো যাত্রার পরিবেশ ইতিবাচক রাখতে তা ভূমিকা রাখে। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি
বিমানে উঠে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টকে ধন্যবাদ জানানো শুধু ভদ্রতা নয়; পুরো যাত্রার পরিবেশ ইতিবাচক রাখতে তা ভূমিকা রাখে। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

বিমানের ভেতর সংকীর্ণ জায়গায় বহু মানুষকে একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে হয়। তাই ব্যক্তিগত আচরণে সচেতন না থাকলে সামান্য বিষয় থেকেও বড় অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে। মার্কিন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট এবং ভ্রমণ বিশেষজ্ঞদের মতে, যাত্রীদের কিছু অলিখিত নিয়ম মানলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়ানো সম্ভব।

ভদ্রতা দিয়ে যাত্রা শুরু হোক

ক্যাবিনে প্রবেশের মুহূর্ত থেকে হাসিমুখ ও নরম স্বরের আচরণ যাত্রী ও কর্মীদের সম্পর্ক সহজ করে তোলে। প্রটোকল বিশেষজ্ঞ ডায়ান গটসম্যান বলেন, ‘বিমানে উঠেই যদি ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টকে ধন্যবাদ জানানো হয়, তা শুধু ভদ্রতা নয়; পুরো যাত্রার পরিবেশ ইতিবাচক রাখতে বড় ভূমিকা রাখে।’ ২২ বছরের অভিজ্ঞ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট অ্যান্ড্রু হেন্ডারসনের মতে, ‘অনেকেই প্রথম মুহূর্তে সামান্য একটি ‘হ্যালো’ বলেন। অনেকেই বেশ হাসিখুশি মন নিয়ে প্রবেশ করেন। এতেই বোঝা যায় যাত্রীর মনোভাব কেমন হবে।’

বিমানে ভ্রমণের সময় মাঝে মাঝে নয়েজ ক্যানসেলিং হেড ফোন বা ইয়ার প্লাগ খুলে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হোন। ছবি: পেক্সেলস
বিমানে ভ্রমণের সময় মাঝে মাঝে নয়েজ ক্যানসেলিং হেড ফোন বা ইয়ার প্লাগ খুলে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হোন। ছবি: পেক্সেলস

হেডফোনে ডুবে থাকা

নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন এখন বিমানে জনপ্রিয়। এগুলো যাত্রাকে নিরিবিলি স্বাদ দেয় ঠিকই; কিন্তু কখনো কখনো বিপদ ডেকে আনে। জরুরি ঘোষণা, সেবার ডাক বা বেভারেজ কার্ট আসার সংকেত—এসব মিস হতে পারে এই হেডফোনের জন্য। বিমান পরামর্শক রিচ হেন্ডারসন জানান, অনেক যাত্রী পুরো ফ্লাইটে হেডফোনে ডুবে থাকেন। জরুরি পরিস্থিতি হলেও তাঁরা নড়াচড়া করেন না, যেন বাইরের জগৎ সম্পর্কে তাঁরা সম্পূর্ণ আলাদা। তাই সার্ভিস কার্ট কাছে এলে হেডফোন সামান্য খুলে কর্মীদের দিকে তাকানো এবং প্রস্তুত থাকা ভদ্রতার অংশ।

শিশু নিয়ে বিমানে

ফ্লাইটে শিশু কাঁদলে বিরক্ত হওয়া স্বাভাবিক। তবে অভিভাবকদের দোষারোপ করাটা সঠিক নয় বলে মনে করেন ডায়ান গটসম্যান। তিনি বলেন, ‘কোনো মা-বাবা চান না তাঁদের শিশু অন্যকে বিরক্ত করুক।’ তবে শিশুকে পুরো ক্যাবিনে দৌড়াতে দেওয়া বা সিটে লাথি মারতে দেওয়া একেবারেই অনুচিত। এতে অন্যরা বিরক্ত হন। এ ধরনের অবস্থায় অভিভাবকদের দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি। অন্যদিকে, যাত্রীদের প্রতি পরামর্শ হলো, কেউ সিটে লাথি মারলে ঝগড়া না বাড়িয়ে ভদ্রভাবে অনুরোধ করুন।

জানালার পর্দা

দীর্ঘ ফ্লাইটে জানালার পর্দা খোলা বা বন্ধ নিয়ে যাত্রীরা প্রায়ই দ্বিধায় থাকেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জানালার পাশের যাত্রী সাধারণত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। তবে অ্যান্ড্রু হেন্ডারসন কঠোর হওয়ার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত পর্দা বন্ধ রাখি। কিন্তু পাশে বসা কেউ খুলতে চাইলে আমরা আলোচনা করি কখন খোলা থাকবে, কখন বন্ধ থাকবে।’

তিন সিটের দ্বন্দ্ব

এ বিষয়টি নিয়ে প্রায় সবাই একমত, মাঝের সিটে বসা যাত্রীর প্রাধান্য বেশি। কারণ তার না রয়েছে জানালার দেয়ালে হেলান দেওয়ার সুবিধা, না রয়েছে পা বাড়ানোর জায়গা। তাই দুই পাশের আর্ম রেস্ট তাকে দিতে হবে, এটিই শিষ্টাচার।

সিট পেছনে হেলানোর আগে

বিমানের সিট পেছনে হেলানো স্বাভাবিক। তাই রিচ হেন্ডারসন মনে করেন, যাত্রীরা এটি ব্যবহার করবেন বটে। তবে বিবেচনায় রাখতে হবে, পেছনে কেউ খাবার খাচ্ছেন কি না, ট্রে টেবিল নামানো রয়েছে কি না। এসব দেখে রিক্লাইন করলে ঝামেলা কম হয়। খাবারের সময় সিট সোজা রাখা ভালো, যাতে পেছনের যাত্রী আরামে খেতে পারেন।

গন্ধ এবং খাবারের রুচি

বিমানের ভেতর মাছ, সেদ্ধ ডিম বা তীব্র গন্ধযুক্ত খাবার অন্যদের জন্য কষ্টদায়ক হতে পারে। একইভাবে অনেকে শক্তিশালী পারফিউম ব্যবহার করেন, যা আরও বিরক্তির কারণ হয়।

অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান

এয়ারপোর্টে বেশি অ্যালকোহল পান করে বিমানে উঠলে যাত্রী নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তাই বিশেষজ্ঞরা সীমিত পান করার মতো অভ্যাস বজায় রাখতে বলেন। তা না হলে এটি নিজের জন্য এবং অন্যের জন্যও বেশ নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হয়ে দেখা দিতে পারে।

বিমান ভ্রমণে গুরুত্বপূর্ণ হলো পারস্পরিক সম্মান। রিচ হেন্ডারসনের কথায়, ‘একটি সংকীর্ণ জায়গায় আমরা সবাই একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। সামান্য সহমর্মিতা এবং সুন্দর আচরণ পুরো যাত্রার অভিজ্ঞতা বদলে দিতে পারে।’

সূত্র: সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত