অলাত এহ্সান

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ।
বহুল প্রচার, আর ফেসবুকে মুহুর্মুহু মুখ দেখানো তো আছেই। রয়েছে অনলাইন জরিপ, মুহূর্তেই যা বদলে দিতে পারে যেকোনো হিসাব। এমনকি লেখালেখি হয়ে গেছে প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত সুবিধা আদায়ের মাধ্যম। এর ভেতর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কী করে স্মরণ করা যায়?
গত শতাব্দীর ত্রিশ–চল্লিশের দশক বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে যেমন, সাহিত্যের ইতিহাসেও তেমনি ঘটনাবহুল ও অবিস্মরণীয় কাল। বাংলা সাহিত্যেও এ কথা সমান সত্য। এ সময় বাংলা কবিতায় যেমন ‘আধুনিক’ ধারা সূচিত হয়, কথাসাহিত্যে তেমনি আবির্ভূত হয় ঈপ্সিত আধুনিকতা।
কবিতায় অনুবাদনির্ভর আধুনিকতার তুলনায় কথাসাহিত্য অনেক বেশি প্রাচুর্যময় ছিল। আসলে একই সময়ে কোনো একটি ভাষায় এতজন কর্মচঞ্চল ও শক্তিশালী লেখক-কবির উপস্থিতি বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিশ্বস্বীকৃত ও বিপুল কর্মরাজীর মহাপুরুষ সচল থাকার পরও সে সময় রবীন্দ্র-উত্তর আধুনিকতা বিস্তার লাভ করে।
বিশেষত তাঁর ভাব নির্ভরতার বিপরীতে মানুষের বহির্জীবন ও অন্তর্জীবনের বৈচিত্র্য এবং সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চলছিল। আর এই ক্ষেত্রেই দক্ষতা দেখিয়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাত্র ৪৮ বছরের সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কাল। এর মধ্যে ৩৭টি উপন্যাস, দুই শতাধিক গল্প, কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছেন মানিক। এগুলো বিশ্বের যেকোনো সৃষ্টিবহুল লেখকের সমৃদ্ধ সম্ভারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তা ছাড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর শতাধিক সম্পূর্ণ-অসম্পূর্ণ কবিতা ও খসড়া পাওয়া যায়। অবশ্য এগুলো তাঁর যুবক বয়সেই (১৬–২১ বছর) রচিত। মৃত্যুর পরও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক অপ্রকাশিত সাহিত্য পাওয়া গেছে। তা ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পত্রিকায় লিখতেন। যদিও লেখাগুলো পরে আর সংগ্রহ করা যায়নি। তাতেই ‘জীবনঘনিষ্ঠ কথাশিল্পী’ অভিধা তাঁর নামের সঙ্গে স্থায়ী হয়ে গেছে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০৮ সালের ১৯ মে, বঙ্গাব্দ ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৩১৫। বাবা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মস্থল ভারতের সাঁওতাল পরগণার দুমকা শহরে তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকার তৎকালীন বিক্রমপুর মহকুমার (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা) মালদপিয়া গ্রামে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তাঁদের পরিবার দেশ ত্যাগ করেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি খুঁজে পাওয়া নিয়ে চমৎকার গল্প আছে প্রয়াত কথাশিল্পী কায়েস আহমেদের; নাম—‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে ও মালদপিয়ার রমণী মুখুজ্জে’। গল্পের কোথাও সাম্প্রদায়িকতার কথা নেই। তবু গল্পটা পড়লেই বোঝা যায় তাঁরা কেন দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন।
সাহিত্যের সূচনা বিচারে এ তথ্য সত্য যে, কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে প্রথম গল্প ‘অতসীমামী’ লিখেছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই বাজিমাত। প্রথম গল্প গ্রন্থভুক্ত ‘মহাসংগম’ গল্পটি সম্পর্কে অধ্যাপক নির্মাল্য আচার্য বলেন, ‘এর তুল্য গল্প বিশ্বসাহিত্যে কদাচিৎ মিলবে।’ এই শুরুর গল্পটি ইঙ্গিত দেয়—সাহিত্যের জগতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চলা হঠাৎ করেই শুরু হয়েছিল। সাধারণ্যে অন্তত এমন ধারণা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। প্রশ্ন হলো—সত্যি কি হঠাৎ করে লেখকের জন্ম হয়? এই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন মানিক। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে তিনি লেখেন—‘আমি বলব, না, এ রকম হঠাৎ কোনো লেখকই গজান না। রাতারাতি লেখক পরিণত হওয়ার ম্যাজিকে আমি বিশ্বাস করি না। অনেক কাল আগে থেকেই প্রস্তুতি চলে। লেখক হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আসলেই কেবল একজনের পক্ষে হঠাৎ একদিন লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব।’
‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাসটি ধারাবাহিক প্রকাশের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক মানিকের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩৪ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাসটি সম্পর্কে আরেক অগ্রগণ্য ঔপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য কিছু নন, তিনি ঔপন্যাসিক।’ পরের বছর ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি। ১৯৩৫ সালে ‘জননী’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাস এবং ‘অতসীমামী ও অন্যান্য গল্প’ গল্পগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর গ্রন্থকার হিসেবে যাত্রা শুরু হয়।
মনে রাখা দরকার, গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক সাহিত্যের মতো ভারতবর্ষে রাজনীতিরও উত্থান–পতনের সময়। তখনই প্রকাশ হয় মানিকের প্রথম উপন্যাস। এর অন্তত একটি দিক তাঁর ‘নিজস্ব ধরন’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তা হলো, সমসাময়িক ইতিহাস ও সমাজের সঙ্গে তাঁর সাহিত্যের নিবিড় যোগ। সমাজের তল খুঁজতে গিয়ে, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তাঁর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া ছিল প্রায় অবধারিত। এর একটা উত্তর পাওয়া যাবে তাঁর ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে। তিনি লেখেন, ‘মার্কসবাদ যেটুকু বুঝেছি তাতেই আমার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে যে, আমার সৃষ্টিতে কত মিথ্যা, বিভ্রান্তি আর আবর্জনা আমি আমদানি করেছি– জীবন ও সাহিত্য এগিয়ে নেবার উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও।’
আজকের দিনে রাষ্ট্রের বিরাজনীতিকরণ প্রকল্প (বলা যায়, রাজনীতিহীনতার রাজনীতি) কিংবা রাজনীতিবিমুখ নৈনাগরিকের সময়ে দাঁড়িয়ে মানিকের এই উপলব্ধির অনুধাবন খানিকটা কঠিন। তবে অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, সেই সময় রাজনীতির ভেতরই মানুষের মুক্তির দিশা ছিল। তা ছিল মানবমুক্তি-সমাজ প্রগতির রাজনীতি। তাই রাজনৈতিক সংস্রব তাঁর সাহিত্যের মান কমিয়েছে, নিন্দুকের এমন প্রচার সত্য নয়। বরং তাঁর লেখনী এতটা উর্বর ছিল যে, সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি সাবলীল সাড়া দিতে পেরেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁর সাহিত্যে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষাতত্ত্ব ও মার্কসীয় বিশ্ববীক্ষা সফলভাবে যুক্ত হয়েছে। সাহিত্যে উঠে এসেছে সেসব মানুষের জীবন ও সংগ্রাম।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখক হিসেবে, সাহিত্যের প্রতি ‘সৎ’ থেকেই কমিউনিজমে আস্থাশীল হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক চর্চা তাঁর সাহিত্যকে দলীয় প্রচারপত্রে নামিয়ে আনেনি। চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে তিনি ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ’-এ যুক্ত হন। ১৯৪৪ সালের শেষের দিকে যুক্ত হন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে। যুগপৎ লেখক ও রাজনীতিক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। তিনি পরবর্তীতে ‘প্রগতি লেখক সংঘ’–এর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
মূলত শ্রমিক ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে দু–খণ্ডের ‘শহরতলি’ উপন্যাসটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী মহলে তাঁর সাড়া পড়ে। দাঙ্গার পটভূমিতে কলকাতার বেহাল নগরজীবন নিয়ে তাঁর প্রখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাস ‘স্বাধীনতার স্বাদ’। বাঙালি সমাজের হতাশা, গ্রামীণ জীবনের অবহেলা, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অসারতা নিয়ে লেখেন শ্লেষাত্মক উপন্যাস ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’।
শব্দ নির্বাচন, উপমা ও ভাষাশৈলীর কারণে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। ‘ভিটেমাটি’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক। যুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা বিধ্বস্ত অবস্থা নিয়ে রচিত ‘আজ কাল পরশুর গল্প’ গল্পগ্রন্থটি তাঁর বিপ্লবী চেতনার অনন্য দলিল। কোনো কোনো গল্পে তাঁর জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা ও মানসের সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর অনেক উপন্যাস, গল্পই পরে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। জানিয়ে রাখা যেতে পারে, তাঁর জীবদ্দশাতেই ১৯৪৮ সালে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র তৈরি হয়।
বিএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এবং লেখক হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কারণে পরিবারের সঙ্গে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর কারণে দ্রুতই তাঁকে পেশাজীবন বেছে নিতে হয়। ১৯৩৫ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকায় সম্পাদকীয় পদে পাঁচ বছর যুক্ত থাকেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেটা ছেড়ে দিয়ে পরে ভাইয়ের সঙ্গে প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করেছিলেন। যদিও আড়াই বছরের মাথায় তা গোটাতে হয়। পরে স্বল্পকালীন নানা পেশায় যুক্ত হলেও কোনোটাই আর স্থায়ী হয়নি। লেখক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই কেটেছে তাঁর আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাঁর এই জীবনযুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে পড়ল। একদিকে অর্থ সংস্থানের জন্য প্রচুর পরিশ্রম, অন্যদিকে বিদ্যমান বাস্তবতায় পার্টির কাচের ক্রমবর্ধমান চাপ; সব মিলিয়ে মানিক এক ত্রিশঙ্কু দশায় পড়লেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দশা থেকে তাঁর মুক্তি মেলেনি। বলা যায়, চিকিৎসার অভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়। দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর। বঙ্গাব্দ ১৭ অগ্রহায়ণ ১৩৬৩।
এমনকি এই মৃত্যুর খবরটি পর্যন্ত মানিকের পার্টি কমরেড ও লেখকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি অর্থাভাবে। শুনতে যেমনই লাগুক এটাই সত্য। মানিকের মৃত্যুর খবর প্রথম পেয়েছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তিনি মানিকের স্ত্রী কমলার (ডলি) কাছে জানতে চান, তাঁকে কেন ফোন করে আগে জানানো হয়নি? কমলার উত্তর ছিল—‘তাতেও যে পাঁচ আনা লাগাত দাদা।’
এই বঙ্গে যে শুধু লিখে বাঁচা যায় না, তা কি সমাজঘনিষ্ঠ মানিক জানতেন না? জানতেন নিশ্চয়। তারপরও তিনি এই লেখালিখির জীবনই বেছে নিয়েছিলেন। কমিউনিস্ট রাজনীতিতে আস্থাশীল মানিকের কলম–শ্রমিকের জীবন বেছে নেওয়া তো স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু শুধু এটুকুই কি? না, আরও কিছু তাড়না ছিল। কী সেই তাড়না? উত্তর জানতে মানিকেরই শরণ নেওয়া যাক। ‘লেখকের কথা ও প্রগতি সাহিত্যের আত্মকথা’ শীর্ষক তাঁর প্রবন্ধ সংকলনে থাকা ‘কেন লিখি’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি, অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে আমি লিখি। আমি যা জেনেছি, এ জগতে কেউ তা জানে না (জল পড়ে পাতা নড়ে জানা নয়)। কিন্তু সকলের সে আমার জানার এক শব্দার্থক ব্যাপক সম ভিত্তি আছে। তাকে আশ্রয় করে আমার খানিকটা উপলব্ধি অন্যকে দান করি।’
এবার ফেরা যাক শুরুর প্রসঙ্গে। এই সময়ে কেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করা? এর উত্তর আছে ‘এই সময়’ শব্দের ভেতর। ‘এই সময়’ ও সাহিত্যকে আমরা কীভাবে দেখি, তার মীমাংসার ওপরই আসলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা ও তাঁর স্মরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি দাঁড়িয়ে আছে। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, ‘এই সময়’ প্রতিটি মানুষ প্রচণ্ড মানসিক দ্বন্দ্বের ভেতর বাস করেন। বাজার সংস্কৃতির প্রভাব, পুঁজির প্রবল চাপ, রাষ্ট্রের দুঃশাসন, বৈষম্যের ক্ষমতা চর্চা, প্রতিষ্ঠার ইঁদুর দৌড়, পণ্যের ভিড়ে বিপন্ন জীবনে স্বস্তির কোনো সুযোগ নেই। সমাজের উচ্চকোটি থেকে নিম্নকোটির সবার ভেতর এই দ্বন্দ্ব আছে। ভেতরে-ভেতরে সবাই পুড়ে খাক হয়ে গেলেও প্রকাশ্যে শ্রেণিবৈষম্য বাড়ছে। মানুষের নির্বুদ্ধিতা, শঠতা, প্রতারণা, লোভে খোদ মানবতাই আজ বিপন্ন। যাদের সঙ্গে মিশছে, থাকছে, তাকেও মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারে না।
বিষয়টির চমৎকার তাত্ত্বিক ভিত্তি দিয়েছেন ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো তাঁর ‘ধ্রুপদি যুগে উন্মাদনার ইতিহাস’ বইয়ে। বইটির আলোচনায় অমল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘উত্তর আধুনিক চিন্তা ও কয়েকজন ফরাসি ভাবুক’ বইতে বলছেন: ‘আমরা যাকে প্রাতিস্বিকতা বলতে অভ্যস্ত, যাকে আমরা ধরে নিই মানুষের অনড়, ধ্রুব চরিত্র বলে, সেটি মূলত কিছু সামাজিক ও নৈতিক বিধিনিষেধের প্রত্যাদেশে আমাদের ওপর আরোপিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মুহূর্তে, একজন সামাজিক প্রাণী তার নিজের কাছে বিদেশি ও বিচ্ছিন্ন।’
সেই পথ ধরে মিশেল ফুকো রীতিমতো ঘোষণা করেছেন, ‘আমাদের চিন্তার কাঠামো খুব সহজেই বলে দেয় যে, মানুষ সাম্প্রতিক সময়ের এক আবিষ্কার। আর যা সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।’
এই বাস্তবতায় আমাদের তথাকথিত ‘বেস্ট সেলার’ সাহিত্যের লেখকেরা কী দিচ্ছেন? এই বাস্তবতা কি তাঁরা ধরতে পারছেন? মনে হয় না। এর কিছুই তাঁরা ব্যাখ্যা করার সাধ্য রাখেন না। তাঁরা বিদ্যমান বাস্তবতাকে উদ্যাপন করছেন। এই সাহিত্য আরও সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে চিন্তাকে। তা ছাড়া আমাদের সাহিত্য ঘুরপাক খাচ্ছে মধ্যবিত্তীয় সংকটে। যে কারণে গল্পের চরিত্রগুলো আবর্তিত হয় পলাতক ধরনের ফ্যান্টাসিতে। আর এখানেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব। তিনি এই ব্যবস্থা ও বাস্তবতা ব্যাখ্যা করেন। সাহিত্যের কাজ যে নিছক আনন্দ দেওয়া নয়, বরং মনকে সমৃদ্ধ করা, চিন্তাকে জাগ্রত করা—সেই কাজ করে মানিকের সাহিত্য।
শেষটা হোক মানিকেরই ভাষ্যে। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ভদ্র জীবনকে ভালোবাসি, ভদ্র আপনজনদেরই আপন হতে চাই, বন্ধুত্ব করি ভদ্র ঘরের ছেলেদের সঙ্গেই, এই জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বপ্নকে নিজস্ব করে রাখি, অথচ এই জীবনের সংকীর্ণতা, কৃত্রিমতা, যান্ত্রিকতা, প্রকাশ্য ও মুখোশ পরা হীনতা, স্বার্থপরতা প্রভৃতি মনটাকে বিষিয়ে তুলেছে। এই জীবন আমার আপন অথচ এই জীবন থেকেই মাঝে মাঝে পালিয়ে ছোটলোক চাষা-ভূষাদের মধ্যে গিয়ে যেন নিশ্বাস ফেলে বাঁচি। আবার ওই ছোটলোকদের অমার্জিত রিক্ত জীবনের রুক্ষ কঠোর নগ্ন বাস্তবতার চাপে অস্থির হয়ে নিজের জীবনে ফিরে এসে হাঁফ ছাড়ি।’
অলাত এহ্সান: গল্পকার ও সমালোচক

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ।
বহুল প্রচার, আর ফেসবুকে মুহুর্মুহু মুখ দেখানো তো আছেই। রয়েছে অনলাইন জরিপ, মুহূর্তেই যা বদলে দিতে পারে যেকোনো হিসাব। এমনকি লেখালেখি হয়ে গেছে প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত সুবিধা আদায়ের মাধ্যম। এর ভেতর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কী করে স্মরণ করা যায়?
গত শতাব্দীর ত্রিশ–চল্লিশের দশক বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে যেমন, সাহিত্যের ইতিহাসেও তেমনি ঘটনাবহুল ও অবিস্মরণীয় কাল। বাংলা সাহিত্যেও এ কথা সমান সত্য। এ সময় বাংলা কবিতায় যেমন ‘আধুনিক’ ধারা সূচিত হয়, কথাসাহিত্যে তেমনি আবির্ভূত হয় ঈপ্সিত আধুনিকতা।
কবিতায় অনুবাদনির্ভর আধুনিকতার তুলনায় কথাসাহিত্য অনেক বেশি প্রাচুর্যময় ছিল। আসলে একই সময়ে কোনো একটি ভাষায় এতজন কর্মচঞ্চল ও শক্তিশালী লেখক-কবির উপস্থিতি বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিশ্বস্বীকৃত ও বিপুল কর্মরাজীর মহাপুরুষ সচল থাকার পরও সে সময় রবীন্দ্র-উত্তর আধুনিকতা বিস্তার লাভ করে।
বিশেষত তাঁর ভাব নির্ভরতার বিপরীতে মানুষের বহির্জীবন ও অন্তর্জীবনের বৈচিত্র্য এবং সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চলছিল। আর এই ক্ষেত্রেই দক্ষতা দেখিয়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাত্র ৪৮ বছরের সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কাল। এর মধ্যে ৩৭টি উপন্যাস, দুই শতাধিক গল্প, কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছেন মানিক। এগুলো বিশ্বের যেকোনো সৃষ্টিবহুল লেখকের সমৃদ্ধ সম্ভারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তা ছাড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর শতাধিক সম্পূর্ণ-অসম্পূর্ণ কবিতা ও খসড়া পাওয়া যায়। অবশ্য এগুলো তাঁর যুবক বয়সেই (১৬–২১ বছর) রচিত। মৃত্যুর পরও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক অপ্রকাশিত সাহিত্য পাওয়া গেছে। তা ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পত্রিকায় লিখতেন। যদিও লেখাগুলো পরে আর সংগ্রহ করা যায়নি। তাতেই ‘জীবনঘনিষ্ঠ কথাশিল্পী’ অভিধা তাঁর নামের সঙ্গে স্থায়ী হয়ে গেছে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০৮ সালের ১৯ মে, বঙ্গাব্দ ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৩১৫। বাবা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মস্থল ভারতের সাঁওতাল পরগণার দুমকা শহরে তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকার তৎকালীন বিক্রমপুর মহকুমার (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা) মালদপিয়া গ্রামে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তাঁদের পরিবার দেশ ত্যাগ করেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি খুঁজে পাওয়া নিয়ে চমৎকার গল্প আছে প্রয়াত কথাশিল্পী কায়েস আহমেদের; নাম—‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটে ও মালদপিয়ার রমণী মুখুজ্জে’। গল্পের কোথাও সাম্প্রদায়িকতার কথা নেই। তবু গল্পটা পড়লেই বোঝা যায় তাঁরা কেন দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন।
সাহিত্যের সূচনা বিচারে এ তথ্য সত্য যে, কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে প্রথম গল্প ‘অতসীমামী’ লিখেছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই বাজিমাত। প্রথম গল্প গ্রন্থভুক্ত ‘মহাসংগম’ গল্পটি সম্পর্কে অধ্যাপক নির্মাল্য আচার্য বলেন, ‘এর তুল্য গল্প বিশ্বসাহিত্যে কদাচিৎ মিলবে।’ এই শুরুর গল্পটি ইঙ্গিত দেয়—সাহিত্যের জগতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চলা হঠাৎ করেই শুরু হয়েছিল। সাধারণ্যে অন্তত এমন ধারণা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। প্রশ্ন হলো—সত্যি কি হঠাৎ করে লেখকের জন্ম হয়? এই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন মানিক। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে তিনি লেখেন—‘আমি বলব, না, এ রকম হঠাৎ কোনো লেখকই গজান না। রাতারাতি লেখক পরিণত হওয়ার ম্যাজিকে আমি বিশ্বাস করি না। অনেক কাল আগে থেকেই প্রস্তুতি চলে। লেখক হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আসলেই কেবল একজনের পক্ষে হঠাৎ একদিন লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব।’
‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাসটি ধারাবাহিক প্রকাশের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক মানিকের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৩৪ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাসটি সম্পর্কে আরেক অগ্রগণ্য ঔপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য কিছু নন, তিনি ঔপন্যাসিক।’ পরের বছর ‘পূর্বাশা’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি। ১৯৩৫ সালে ‘জননী’, ‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাস এবং ‘অতসীমামী ও অন্যান্য গল্প’ গল্পগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর গ্রন্থকার হিসেবে যাত্রা শুরু হয়।
মনে রাখা দরকার, গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক সাহিত্যের মতো ভারতবর্ষে রাজনীতিরও উত্থান–পতনের সময়। তখনই প্রকাশ হয় মানিকের প্রথম উপন্যাস। এর অন্তত একটি দিক তাঁর ‘নিজস্ব ধরন’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তা হলো, সমসাময়িক ইতিহাস ও সমাজের সঙ্গে তাঁর সাহিত্যের নিবিড় যোগ। সমাজের তল খুঁজতে গিয়ে, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তাঁর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া ছিল প্রায় অবধারিত। এর একটা উত্তর পাওয়া যাবে তাঁর ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে। তিনি লেখেন, ‘মার্কসবাদ যেটুকু বুঝেছি তাতেই আমার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে যে, আমার সৃষ্টিতে কত মিথ্যা, বিভ্রান্তি আর আবর্জনা আমি আমদানি করেছি– জীবন ও সাহিত্য এগিয়ে নেবার উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও।’
আজকের দিনে রাষ্ট্রের বিরাজনীতিকরণ প্রকল্প (বলা যায়, রাজনীতিহীনতার রাজনীতি) কিংবা রাজনীতিবিমুখ নৈনাগরিকের সময়ে দাঁড়িয়ে মানিকের এই উপলব্ধির অনুধাবন খানিকটা কঠিন। তবে অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, সেই সময় রাজনীতির ভেতরই মানুষের মুক্তির দিশা ছিল। তা ছিল মানবমুক্তি-সমাজ প্রগতির রাজনীতি। তাই রাজনৈতিক সংস্রব তাঁর সাহিত্যের মান কমিয়েছে, নিন্দুকের এমন প্রচার সত্য নয়। বরং তাঁর লেখনী এতটা উর্বর ছিল যে, সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি সাবলীল সাড়া দিতে পেরেছেন। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁর সাহিত্যে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষাতত্ত্ব ও মার্কসীয় বিশ্ববীক্ষা সফলভাবে যুক্ত হয়েছে। সাহিত্যে উঠে এসেছে সেসব মানুষের জীবন ও সংগ্রাম।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখক হিসেবে, সাহিত্যের প্রতি ‘সৎ’ থেকেই কমিউনিজমে আস্থাশীল হয়ে ওঠেন। রাজনৈতিক চর্চা তাঁর সাহিত্যকে দলীয় প্রচারপত্রে নামিয়ে আনেনি। চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে তিনি ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ’-এ যুক্ত হন। ১৯৪৪ সালের শেষের দিকে যুক্ত হন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে। যুগপৎ লেখক ও রাজনীতিক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। তিনি পরবর্তীতে ‘প্রগতি লেখক সংঘ’–এর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
মূলত শ্রমিক ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে দু–খণ্ডের ‘শহরতলি’ উপন্যাসটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী মহলে তাঁর সাড়া পড়ে। দাঙ্গার পটভূমিতে কলকাতার বেহাল নগরজীবন নিয়ে তাঁর প্রখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাস ‘স্বাধীনতার স্বাদ’। বাঙালি সমাজের হতাশা, গ্রামীণ জীবনের অবহেলা, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অসারতা নিয়ে লেখেন শ্লেষাত্মক উপন্যাস ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’।
শব্দ নির্বাচন, উপমা ও ভাষাশৈলীর কারণে ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। ‘ভিটেমাটি’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক। যুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা বিধ্বস্ত অবস্থা নিয়ে রচিত ‘আজ কাল পরশুর গল্প’ গল্পগ্রন্থটি তাঁর বিপ্লবী চেতনার অনন্য দলিল। কোনো কোনো গল্পে তাঁর জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা ও মানসের সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর অনেক উপন্যাস, গল্পই পরে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। জানিয়ে রাখা যেতে পারে, তাঁর জীবদ্দশাতেই ১৯৪৮ সালে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র তৈরি হয়।
বিএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এবং লেখক হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কারণে পরিবারের সঙ্গে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর কারণে দ্রুতই তাঁকে পেশাজীবন বেছে নিতে হয়। ১৯৩৫ সালে ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকায় সম্পাদকীয় পদে পাঁচ বছর যুক্ত থাকেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেটা ছেড়ে দিয়ে পরে ভাইয়ের সঙ্গে প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করেছিলেন। যদিও আড়াই বছরের মাথায় তা গোটাতে হয়। পরে স্বল্পকালীন নানা পেশায় যুক্ত হলেও কোনোটাই আর স্থায়ী হয়নি। লেখক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই কেটেছে তাঁর আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাঁর এই জীবনযুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে পড়ল। একদিকে অর্থ সংস্থানের জন্য প্রচুর পরিশ্রম, অন্যদিকে বিদ্যমান বাস্তবতায় পার্টির কাচের ক্রমবর্ধমান চাপ; সব মিলিয়ে মানিক এক ত্রিশঙ্কু দশায় পড়লেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দশা থেকে তাঁর মুক্তি মেলেনি। বলা যায়, চিকিৎসার অভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়। দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর। বঙ্গাব্দ ১৭ অগ্রহায়ণ ১৩৬৩।
এমনকি এই মৃত্যুর খবরটি পর্যন্ত মানিকের পার্টি কমরেড ও লেখকদের কাছে পৌঁছানো যায়নি অর্থাভাবে। শুনতে যেমনই লাগুক এটাই সত্য। মানিকের মৃত্যুর খবর প্রথম পেয়েছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তিনি মানিকের স্ত্রী কমলার (ডলি) কাছে জানতে চান, তাঁকে কেন ফোন করে আগে জানানো হয়নি? কমলার উত্তর ছিল—‘তাতেও যে পাঁচ আনা লাগাত দাদা।’
এই বঙ্গে যে শুধু লিখে বাঁচা যায় না, তা কি সমাজঘনিষ্ঠ মানিক জানতেন না? জানতেন নিশ্চয়। তারপরও তিনি এই লেখালিখির জীবনই বেছে নিয়েছিলেন। কমিউনিস্ট রাজনীতিতে আস্থাশীল মানিকের কলম–শ্রমিকের জীবন বেছে নেওয়া তো স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু শুধু এটুকুই কি? না, আরও কিছু তাড়না ছিল। কী সেই তাড়না? উত্তর জানতে মানিকেরই শরণ নেওয়া যাক। ‘লেখকের কথা ও প্রগতি সাহিত্যের আত্মকথা’ শীর্ষক তাঁর প্রবন্ধ সংকলনে থাকা ‘কেন লিখি’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি, অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে আমি লিখি। আমি যা জেনেছি, এ জগতে কেউ তা জানে না (জল পড়ে পাতা নড়ে জানা নয়)। কিন্তু সকলের সে আমার জানার এক শব্দার্থক ব্যাপক সম ভিত্তি আছে। তাকে আশ্রয় করে আমার খানিকটা উপলব্ধি অন্যকে দান করি।’
এবার ফেরা যাক শুরুর প্রসঙ্গে। এই সময়ে কেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করা? এর উত্তর আছে ‘এই সময়’ শব্দের ভেতর। ‘এই সময়’ ও সাহিত্যকে আমরা কীভাবে দেখি, তার মীমাংসার ওপরই আসলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা ও তাঁর স্মরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি দাঁড়িয়ে আছে। অস্বীকারের সুযোগ নেই যে, ‘এই সময়’ প্রতিটি মানুষ প্রচণ্ড মানসিক দ্বন্দ্বের ভেতর বাস করেন। বাজার সংস্কৃতির প্রভাব, পুঁজির প্রবল চাপ, রাষ্ট্রের দুঃশাসন, বৈষম্যের ক্ষমতা চর্চা, প্রতিষ্ঠার ইঁদুর দৌড়, পণ্যের ভিড়ে বিপন্ন জীবনে স্বস্তির কোনো সুযোগ নেই। সমাজের উচ্চকোটি থেকে নিম্নকোটির সবার ভেতর এই দ্বন্দ্ব আছে। ভেতরে-ভেতরে সবাই পুড়ে খাক হয়ে গেলেও প্রকাশ্যে শ্রেণিবৈষম্য বাড়ছে। মানুষের নির্বুদ্ধিতা, শঠতা, প্রতারণা, লোভে খোদ মানবতাই আজ বিপন্ন। যাদের সঙ্গে মিশছে, থাকছে, তাকেও মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারে না।
বিষয়টির চমৎকার তাত্ত্বিক ভিত্তি দিয়েছেন ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো তাঁর ‘ধ্রুপদি যুগে উন্মাদনার ইতিহাস’ বইয়ে। বইটির আলোচনায় অমল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘উত্তর আধুনিক চিন্তা ও কয়েকজন ফরাসি ভাবুক’ বইতে বলছেন: ‘আমরা যাকে প্রাতিস্বিকতা বলতে অভ্যস্ত, যাকে আমরা ধরে নিই মানুষের অনড়, ধ্রুব চরিত্র বলে, সেটি মূলত কিছু সামাজিক ও নৈতিক বিধিনিষেধের প্রত্যাদেশে আমাদের ওপর আরোপিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মুহূর্তে, একজন সামাজিক প্রাণী তার নিজের কাছে বিদেশি ও বিচ্ছিন্ন।’
সেই পথ ধরে মিশেল ফুকো রীতিমতো ঘোষণা করেছেন, ‘আমাদের চিন্তার কাঠামো খুব সহজেই বলে দেয় যে, মানুষ সাম্প্রতিক সময়ের এক আবিষ্কার। আর যা সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।’
এই বাস্তবতায় আমাদের তথাকথিত ‘বেস্ট সেলার’ সাহিত্যের লেখকেরা কী দিচ্ছেন? এই বাস্তবতা কি তাঁরা ধরতে পারছেন? মনে হয় না। এর কিছুই তাঁরা ব্যাখ্যা করার সাধ্য রাখেন না। তাঁরা বিদ্যমান বাস্তবতাকে উদ্যাপন করছেন। এই সাহিত্য আরও সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে চিন্তাকে। তা ছাড়া আমাদের সাহিত্য ঘুরপাক খাচ্ছে মধ্যবিত্তীয় সংকটে। যে কারণে গল্পের চরিত্রগুলো আবর্তিত হয় পলাতক ধরনের ফ্যান্টাসিতে। আর এখানেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব। তিনি এই ব্যবস্থা ও বাস্তবতা ব্যাখ্যা করেন। সাহিত্যের কাজ যে নিছক আনন্দ দেওয়া নয়, বরং মনকে সমৃদ্ধ করা, চিন্তাকে জাগ্রত করা—সেই কাজ করে মানিকের সাহিত্য।
শেষটা হোক মানিকেরই ভাষ্যে। ‘সাহিত্য করার আগে’ প্রবন্ধে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ভদ্র জীবনকে ভালোবাসি, ভদ্র আপনজনদেরই আপন হতে চাই, বন্ধুত্ব করি ভদ্র ঘরের ছেলেদের সঙ্গেই, এই জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বপ্নকে নিজস্ব করে রাখি, অথচ এই জীবনের সংকীর্ণতা, কৃত্রিমতা, যান্ত্রিকতা, প্রকাশ্য ও মুখোশ পরা হীনতা, স্বার্থপরতা প্রভৃতি মনটাকে বিষিয়ে তুলেছে। এই জীবন আমার আপন অথচ এই জীবন থেকেই মাঝে মাঝে পালিয়ে ছোটলোক চাষা-ভূষাদের মধ্যে গিয়ে যেন নিশ্বাস ফেলে বাঁচি। আবার ওই ছোটলোকদের অমার্জিত রিক্ত জীবনের রুক্ষ কঠোর নগ্ন বাস্তবতার চাপে অস্থির হয়ে নিজের জীবনে ফিরে এসে হাঁফ ছাড়ি।’
অলাত এহ্সান: গল্পকার ও সমালোচক

পুরোনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার ব্যাপারটি সত্যিই বিশেষ। একটি বছর ঘুরে যখন নতুন বছর আসে, তখন আমাদের মনে জাগে একরাশ প্রত্যাশা। এই নতুন সময়ে আমরা বেশ কিছু ছোট ছোট কাজ করে নিজের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি। বছরের প্রথম দিন প্রতিটি কাজই আমরা এমনভাবে করার চেষ্টা করি যাতে পুরো বছরে
৬ ঘণ্টা আগে
আর মাত্র এক দিন পর আসছে নতুন বছর। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমরা কতই না আয়োজন করে থাকি। এর একটি অংশের আয়োজন হয় রান্নাঘরে। অনেক কিছু না হোক, ব্যস্ত জীবন থেকে একটু সময় বের করে প্রিয়জনের সঙ্গে প্রিয় খাবার খেয়ে হলেও আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ভালোবাসি। কোনো কিছুর শুরু ভালো দিয়ে করতে চাইলে মিষ্টি খাওয়া
৭ ঘণ্টা আগে
গেল বছর থেকে জেন-জিরা গোটা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনায়। তাদের ফ্যাশন, স্টাইল, খাবার, চলাফেরা, কথা বলা, চিন্তা, ভ্রমণ নিয়ে হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। তুলনা করতে গিয়ে কথা এসেছে অন্যান্য প্রজন্মের। এবার সেই জেন-জিদের পরের প্রজন্মের আলোচনায় আসা যাক। কারণ, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই নতুন
১০ ঘণ্টা আগে
নতুন বছর মানেই নতুন শুরুর সতেজতা। আমরা অনেকেই চাই আমাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। নতুন ডায়েট, নতুন জামা, নতুন বছর। ২০২৬ সালে আপনার সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে আপনার নিজের ঘর। বড় কোনো বিপ্লবের প্রয়োজন নেই। ছোট ছোট এবং চিন্তাশীল কিছু অভ্যাসই পারে আপনার ঘরকে আরও সবুজ ও টেকসই করে তুল
১২ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

পুরোনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার ব্যাপারটি সত্যিই বিশেষ। একটি বছর ঘুরে যখন নতুন বছর আসে, তখন আমাদের মনে জাগে একরাশ প্রত্যাশা। এই নতুন সময়ে আমরা বেশ কিছু ছোট ছোট কাজ করে নিজের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি। বছরের প্রথম দিন প্রতিটি কাজই আমরা এমনভাবে করার চেষ্টা করি যাতে পুরো বছরে তার একটা রেশ থাকে। পোশাকের রং নির্বাচনের বেলায়ও কিন্তু এ কথাটা খাটে। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, আসছে বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালে পৃথিবীর ওপর সূর্যের প্রভাব থাকবে। ফলে কয়েকটি শুভ রঙের পোশাক আলমারিতে রাখলে পুরো বছরটাই চনমনে কাটবে বলে আশা করা হচ্ছে। কয়েকটি বিশেষ রংকে শক্তি, সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির প্রতীক বলে মনে করা হয়। তবে পোশাকের রং নির্বাচনের মাধ্যমেই যে আপনি সফল হয়ে যাবেন, বিষয়টা এমন নয়। বরং, এই প্রতীকী ভঙ্গিটি আপনার মানসিক সংকল্পকে দৃঢ় করবে। ২০২৬ সালকে বরণ করতে যে ৭টি রং আপনার জীবনে শুভ বার্তা নিয়ে আসতে পারে, তা নিয়েই আজকের এই ফিচার।

যেসব রঙের পোশাক আলমারিতে রাখতে পারেন
লাল
জীবনীশক্তি ও সুরক্ষার প্রতীক লাল রংকে এশিয়ান সংস্কৃতিতে বিশেষ করে চীনে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। বিয়ে থেকে শুরু করে নববর্ষ—সব শুভ উপলক্ষেই লাল রং প্রাধান্য পায়। এটি নেতিবাচকতা ও অশুভ শক্তিকে দূরে রাখার শক্তিশালী ঢাল হিসেবেও কাজ করে। এই নতুন বছরে লাল রঙের পোশাক আপনার মধ্যে সাহস ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে।
সোনালি
প্রাচুর্য ও ধারাবাহিক সাফল্যের প্রতীক এই রং যুগ যুগ ধরে স্বর্ণ বা মূল্যবান ধাতুর সমার্থক, যা সরাসরি সম্পদ ও ক্ষমতার জানান দেয়। নতুন বছরে যারা ক্যারিয়ার বা ব্যবসায় বিশেষ উন্নতি ও সমৃদ্ধি খুঁজছেন, তাঁদের জন্য সোনালি রঙের পোশাক হবে আত্মবিশ্বাসের এক চমৎকার উৎস।
রুপালি
মানসিক স্বচ্ছতা এবং অন্তর্দৃষ্টির প্রতীক রুপালি রঙের সঙ্গে চাঁদের স্নিগ্ধ আভার সম্পর্ক রয়েছে। অন্ধকারে যেমন চাঁদের আলো পথ দেখায়, তেমনই রুপালি রং প্রতিকূলতার মধ্যেও সঠিক পথ দেখায় বলে মনে করা হয়। ভারসাম্যপূর্ণ ও শান্ত নতুন বছরের জন্য রুপালি রঙের পোশাক বেছে নেওয়া হতে পারে বুদ্ধিমানের কাজ।

সবুজ
প্রকৃতির মতোই সবুজ রং নবজীবন, বিকাশ ও সুস্থতার প্রতীক। এটি হঠাৎ আসা কোনো সৌভাগ্য নয়, বরং ধারাবাহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে পাওয়া টেকসই সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। যাঁরা নতুন বছরে নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ওপর জোর দিতে চান এবং জীবনে স্থিতিশীল সমৃদ্ধি আনতে চান, তাঁদের পোশাকে সবুজের ছোঁয়া থাকা জরুরি।
নীল
মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে হাজার বছর ধরে নীল রংকে অশুভ দৃষ্টি ও ঈর্ষা থেকে বাঁচার এক শক্তিশালী কবচ হিসেবে দেখা হয়। এ ছাড়া নীল রঙের মাহাত্ম্য মানসিক প্রশান্তি, ভারসাম্য ও স্থিরতার ধারক হিসেবেও রয়েছে। আধুনিক জীবনের চরম অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা কাটিয়ে যাঁরা নতুন বছরে স্থিতিশীল থাকতে চান, নীল রঙের পোশাক হবে তাঁদের জন্য এক ধরনের আশ্রয়ের মতো, যা আপনাকে সুরক্ষার অনুভূতি দিয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
সাদা
সাদা রঙের দুটি বিশেষ দিক রয়েছে। এটি যেমন বিদায়কে সম্মান জানায়, তেমনই নতুনের পবিত্রতাকেও তুলে ধরে। পুরোনো বছরের সব ক্লান্তি মুছে ফেলে যারা একেবারে নতুন করে জীবন শুরু করতে চান, সাদা রং তাদের জন্য সেরা। এটি যেন জীবনের এক ‘ব্ল্যাঙ্ক পেজ’ বা সাদা পাতার মতো, যেখানে আপনি নিজের মতো করে নিজের জীবনের গল্প লিখতে পারবেন।
বেগুনি
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, বেগুনি রং একসময় সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। এটি শুধু রাজপরিবার, সম্রাট এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের পোশাকের জন্যই বরাদ্দ থাকত। এর মূল কারণ ছিল এই রঙের দুষ্প্রাপ্যতা এবং উচ্চমূল্য। এখনো এই রংকে ক্ষমতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর ব্যক্তিগত আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়। ২০২৬ সালে নিজের ব্যক্তিত্বকে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে এই রং হতে পারে এক অনবদ্য পছন্দ।
সূত্র: গ্ল্যামার ও অন্যান্য

পুরোনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার ব্যাপারটি সত্যিই বিশেষ। একটি বছর ঘুরে যখন নতুন বছর আসে, তখন আমাদের মনে জাগে একরাশ প্রত্যাশা। এই নতুন সময়ে আমরা বেশ কিছু ছোট ছোট কাজ করে নিজের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি। বছরের প্রথম দিন প্রতিটি কাজই আমরা এমনভাবে করার চেষ্টা করি যাতে পুরো বছরে তার একটা রেশ থাকে। পোশাকের রং নির্বাচনের বেলায়ও কিন্তু এ কথাটা খাটে। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, আসছে বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালে পৃথিবীর ওপর সূর্যের প্রভাব থাকবে। ফলে কয়েকটি শুভ রঙের পোশাক আলমারিতে রাখলে পুরো বছরটাই চনমনে কাটবে বলে আশা করা হচ্ছে। কয়েকটি বিশেষ রংকে শক্তি, সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির প্রতীক বলে মনে করা হয়। তবে পোশাকের রং নির্বাচনের মাধ্যমেই যে আপনি সফল হয়ে যাবেন, বিষয়টা এমন নয়। বরং, এই প্রতীকী ভঙ্গিটি আপনার মানসিক সংকল্পকে দৃঢ় করবে। ২০২৬ সালকে বরণ করতে যে ৭টি রং আপনার জীবনে শুভ বার্তা নিয়ে আসতে পারে, তা নিয়েই আজকের এই ফিচার।

যেসব রঙের পোশাক আলমারিতে রাখতে পারেন
লাল
জীবনীশক্তি ও সুরক্ষার প্রতীক লাল রংকে এশিয়ান সংস্কৃতিতে বিশেষ করে চীনে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। বিয়ে থেকে শুরু করে নববর্ষ—সব শুভ উপলক্ষেই লাল রং প্রাধান্য পায়। এটি নেতিবাচকতা ও অশুভ শক্তিকে দূরে রাখার শক্তিশালী ঢাল হিসেবেও কাজ করে। এই নতুন বছরে লাল রঙের পোশাক আপনার মধ্যে সাহস ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে।
সোনালি
প্রাচুর্য ও ধারাবাহিক সাফল্যের প্রতীক এই রং যুগ যুগ ধরে স্বর্ণ বা মূল্যবান ধাতুর সমার্থক, যা সরাসরি সম্পদ ও ক্ষমতার জানান দেয়। নতুন বছরে যারা ক্যারিয়ার বা ব্যবসায় বিশেষ উন্নতি ও সমৃদ্ধি খুঁজছেন, তাঁদের জন্য সোনালি রঙের পোশাক হবে আত্মবিশ্বাসের এক চমৎকার উৎস।
রুপালি
মানসিক স্বচ্ছতা এবং অন্তর্দৃষ্টির প্রতীক রুপালি রঙের সঙ্গে চাঁদের স্নিগ্ধ আভার সম্পর্ক রয়েছে। অন্ধকারে যেমন চাঁদের আলো পথ দেখায়, তেমনই রুপালি রং প্রতিকূলতার মধ্যেও সঠিক পথ দেখায় বলে মনে করা হয়। ভারসাম্যপূর্ণ ও শান্ত নতুন বছরের জন্য রুপালি রঙের পোশাক বেছে নেওয়া হতে পারে বুদ্ধিমানের কাজ।

সবুজ
প্রকৃতির মতোই সবুজ রং নবজীবন, বিকাশ ও সুস্থতার প্রতীক। এটি হঠাৎ আসা কোনো সৌভাগ্য নয়, বরং ধারাবাহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে পাওয়া টেকসই সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। যাঁরা নতুন বছরে নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ওপর জোর দিতে চান এবং জীবনে স্থিতিশীল সমৃদ্ধি আনতে চান, তাঁদের পোশাকে সবুজের ছোঁয়া থাকা জরুরি।
নীল
মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে হাজার বছর ধরে নীল রংকে অশুভ দৃষ্টি ও ঈর্ষা থেকে বাঁচার এক শক্তিশালী কবচ হিসেবে দেখা হয়। এ ছাড়া নীল রঙের মাহাত্ম্য মানসিক প্রশান্তি, ভারসাম্য ও স্থিরতার ধারক হিসেবেও রয়েছে। আধুনিক জীবনের চরম অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা কাটিয়ে যাঁরা নতুন বছরে স্থিতিশীল থাকতে চান, নীল রঙের পোশাক হবে তাঁদের জন্য এক ধরনের আশ্রয়ের মতো, যা আপনাকে সুরক্ষার অনুভূতি দিয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
সাদা
সাদা রঙের দুটি বিশেষ দিক রয়েছে। এটি যেমন বিদায়কে সম্মান জানায়, তেমনই নতুনের পবিত্রতাকেও তুলে ধরে। পুরোনো বছরের সব ক্লান্তি মুছে ফেলে যারা একেবারে নতুন করে জীবন শুরু করতে চান, সাদা রং তাদের জন্য সেরা। এটি যেন জীবনের এক ‘ব্ল্যাঙ্ক পেজ’ বা সাদা পাতার মতো, যেখানে আপনি নিজের মতো করে নিজের জীবনের গল্প লিখতে পারবেন।
বেগুনি
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, বেগুনি রং একসময় সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। এটি শুধু রাজপরিবার, সম্রাট এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের পোশাকের জন্যই বরাদ্দ থাকত। এর মূল কারণ ছিল এই রঙের দুষ্প্রাপ্যতা এবং উচ্চমূল্য। এখনো এই রংকে ক্ষমতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর ব্যক্তিগত আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়। ২০২৬ সালে নিজের ব্যক্তিত্বকে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে এই রং হতে পারে এক অনবদ্য পছন্দ।
সূত্র: গ্ল্যামার ও অন্যান্য

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ
১৯ মে ২০২১
আর মাত্র এক দিন পর আসছে নতুন বছর। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমরা কতই না আয়োজন করে থাকি। এর একটি অংশের আয়োজন হয় রান্নাঘরে। অনেক কিছু না হোক, ব্যস্ত জীবন থেকে একটু সময় বের করে প্রিয়জনের সঙ্গে প্রিয় খাবার খেয়ে হলেও আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ভালোবাসি। কোনো কিছুর শুরু ভালো দিয়ে করতে চাইলে মিষ্টি খাওয়া
৭ ঘণ্টা আগে
গেল বছর থেকে জেন-জিরা গোটা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনায়। তাদের ফ্যাশন, স্টাইল, খাবার, চলাফেরা, কথা বলা, চিন্তা, ভ্রমণ নিয়ে হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। তুলনা করতে গিয়ে কথা এসেছে অন্যান্য প্রজন্মের। এবার সেই জেন-জিদের পরের প্রজন্মের আলোচনায় আসা যাক। কারণ, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই নতুন
১০ ঘণ্টা আগে
নতুন বছর মানেই নতুন শুরুর সতেজতা। আমরা অনেকেই চাই আমাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। নতুন ডায়েট, নতুন জামা, নতুন বছর। ২০২৬ সালে আপনার সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে আপনার নিজের ঘর। বড় কোনো বিপ্লবের প্রয়োজন নেই। ছোট ছোট এবং চিন্তাশীল কিছু অভ্যাসই পারে আপনার ঘরকে আরও সবুজ ও টেকসই করে তুল
১২ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

আর মাত্র এক দিন পর আসছে নতুন বছর। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমরা কতই না আয়োজন করে থাকি। এর একটি অংশের আয়োজন হয় রান্নাঘরে। অনেক কিছু না হোক, ব্যস্ত জীবন থেকে একটু সময় বের করে প্রিয়জনের সঙ্গে প্রিয় খাবার খেয়ে হলেও আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ভালোবাসি। কোনো কিছুর শুরু ভালো দিয়ে করতে চাইলে মিষ্টি খাওয়া ভালো। অনেকে এই ধারণায় এখনো বিশ্বাসী। কফি ও মিষ্টি খাবার খেতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য থাকছে কফি দিয়ে তৈরি কিছু ডেজার্টের রেসিপি।
কফি মাফিন কেক
স্বাস্থ্যকর এবং দারুণ স্বাদের কফি মাফিন হতে পারে আপনার উদ্যাপনের সঙ্গী। এর জন্য দরকার—
১ কাপ সাধারণ ময়দা
আধা চা চামচ বেকিং সোডা
এক চিমটি লবণ
স্বাদ বাড়াতে সামান্য দারুচিনি গুঁড়া
১ টেবিল চামচ এসপ্রেসো বা কফি পাউডার
কোয়ার্টার কাপ টক দই
মিষ্টি প্রয়োজনমতো।
কোয়ার্টার কাপ কড়া লিকারের কফি
কোয়ার্টার কাপ সোডা ওয়াটার বা স্পার্কলিং ওয়াটার
মাখন গলিয়ে তাতে কফি বিন ভিজিয়ে রেখে কফি বাটার (ঐচ্ছিক) তৈরি করে নিন।

প্রস্তুত প্রণালি
ওভেন ২২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৪২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় প্রি-হিট করতে দিন। মাফিন টিনে সামান্য তেল বা মাখন ব্রাশ করে নিন। একটি বড় পাত্রে আটা, বেকিং সোডা, লবণ, দারুচিনি গুঁড়া এবং কফি পাউডার একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। আলাদা একটি পাত্রে টক দই, মধু এবং তৈরি করা কড়া লিকারের কফি মিশিয়ে নিন। শুকনো উপকরণের মিশ্রণে দই ও কফির মিশ্রণটি ঢালুন। এরপর এতে সোডা ওয়াটার যোগ করুন। খুব দ্রুত হালকা হাতে মেশান (বেশি ঘুঁটবেন না)। দেরি না করে দ্রুত ব্যাটারটি মাফিন টিনে ঢালুন। প্রথমে ২২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ৫ মিনিট বেক করুন। এরপর তাপমাত্রা কমিয়ে ১৯০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) করে আরও ৮-১০ মিনিট বেক করুন। একটি কাঠি মাফিনের ভেতর ঢুকিয়ে দেখুন, কাঠি পরিষ্কার বের হয়ে এলে বুঝবেন, মাফিন তৈরি। মাফিনগুলো ঠান্ডা হলে ওপরে কফি-মাখন বা ক্রিম চিজ লাগিয়ে সকালের নাশতায় উপভোগ করুন।

চকলেট কফি মউজ
মাত্র ৫টি উপকরণ দিয়ে কোনো জেলাটিন বা হেভি ক্রিম ছাড়াই শুধু ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করে তৈরি করতে পারেন কফি মউজ। উপকরণসমূহ—
১. ডার্ক চকলেট (৭০-৮০% কোকো হলে ভালো)।
২. ঘরোয়া তাপমাত্রায় থাকা ডিমের সাদা অংশ (ফ্রিজ থেকে ৩০ মিনিট আগে বের করে রাখা)।
৩. ১ টেবিল চামচ ম্যাপেল সিরাপ (মিষ্টি ও ক্যারামেল ফ্লেভারের জন্য)।
৪. আধা কাপ কড়া লিকারের কফি
৫. সাজানোর জন্য টাটকা বা ফ্রোজেন বেরি বা স্ট্রবেরি
প্রস্তুত প্রণালি (মাত্র ১০ মিনিটে)
একটি সস প্যানে অল্প আঁচে চকলেট গলিয়ে নিন। এতে ম্যাপেল সিরাপ ও কফি দিয়ে নাড়ুন। মসৃণ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন। একটি পরিষ্কার কাচ বা মেটালের পাত্রে ডিমের সাদা অংশগুলো ইলেকট্রিক হুইস্ক দিয়ে বিট করুন, যতক্ষণ না এটি ঘন সাদা ফেনার মতো হয়। এবার গলানো চকলেটের মিশ্রণটি অল্প অল্প করে ডিমের সাদা অংশে যোগ করুন। একটি স্প্যাচুলা দিয়ে আলতো হাতে চকলেট এবং ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিন। খুব জোরে নাড়বেন না, তাহলে ফুরফুরে ভাব নষ্ট হয়ে যাবে। মিশ্রণটি ছোট ছোট গ্লাস বা কাপে ভাগ করে ঢালুন। ফ্রিজে অন্তত ৩০ মিনিট রাখুন। পুরো রাত রাখলে আরও ভালো টেক্সচার আসবে।

কেটো তিরামিসু মুস
তিরামিসু নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। তার মধ্যে একটি হলো তিরামিসু কি আসলে কেক? এর সহজ উত্তর হলো, সঠিক প্রণালিতে তিরামিসু তৈরি করে খেয়ে বোঝা। কেটো ডায়েট যাঁরা অনুসরণ করছেন, তাঁদের জন্য ‘কেটো তিরামিসু মুস’ হতে পারে বিকেলের নাশতা বা ডিনারের পর এক দুর্দান্ত ডেজার্ট। এটি যেমন দেখতে অভিজাত, খেতেও তেমনি ক্রিমি এবং রিচ। এসপ্রেসো কফি, মাস্কারপোন চিজ এবং কোকো পাউডারের স্তরে সাজানো এই মুসটি লো-কার্ব বা কম শর্করাযুক্ত ঘরানার।
প্রস্তুত প্রণালি
একটি বড় পাত্রে চিজ, হেভি হুইপিং ক্রিম, চিনির পরিবর্তে এরিথ্রিটল, এক চিমটি লবণ এবং এসপ্রেসো কফি একসঙ্গে নিন। একটি ইলেকট্রিক বিটার বা হ্যান্ড হুইস্ক দিয়ে মিশ্রণটিকে ততক্ষণ পর্যন্ত বিট করুন, যতক্ষণ না এটি ঘন এবং ফুরফুরে হয়ে ওঠে। এবার পরিবেশনের গ্লাস নিন। প্রথমে কিছুটা মাস্কারপোন মিশ্রণ দিন, তার ওপর সামান্য কোকো পাউডার ছিটিয়ে দিন। এভাবে কয়েকবার স্তর তৈরি করুন। সবশেষে ওপরে সামান্য এসপ্রেসো পাউডার ছিটিয়ে দিন এবং সুন্দর দেখানোর জন্য কয়েকটি কফি বিন বসিয়ে দিন। বানিয়েই পরিবেশন করতে পারেন অথবা ফ্রিজে রেখে কিছুটা ঠান্ডা করে উপভোগ করুন। যাঁরা খুব দ্রুত কিন্তু স্পেশাল কিছু তৈরি করতে চান, তাঁদের জন্য এটি পারফেক্ট। সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশনের গ্লাসে সাজিয়ে নিন এবং ওপরে কিছুটা এসপ্রেসো পাউডার ছিটিয়ে দিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল চমৎকার স্বাদের এই মিষ্টি পদ। মিষ্টি, ক্রিমি এবং কফির ফ্লেভারের এই মেলবন্ধন এড়িয়ে যাওয়া সত্যিই অসম্ভব।
সূত্র: মাই শেফস এপ্রোন

আর মাত্র এক দিন পর আসছে নতুন বছর। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমরা কতই না আয়োজন করে থাকি। এর একটি অংশের আয়োজন হয় রান্নাঘরে। অনেক কিছু না হোক, ব্যস্ত জীবন থেকে একটু সময় বের করে প্রিয়জনের সঙ্গে প্রিয় খাবার খেয়ে হলেও আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ভালোবাসি। কোনো কিছুর শুরু ভালো দিয়ে করতে চাইলে মিষ্টি খাওয়া ভালো। অনেকে এই ধারণায় এখনো বিশ্বাসী। কফি ও মিষ্টি খাবার খেতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য থাকছে কফি দিয়ে তৈরি কিছু ডেজার্টের রেসিপি।
কফি মাফিন কেক
স্বাস্থ্যকর এবং দারুণ স্বাদের কফি মাফিন হতে পারে আপনার উদ্যাপনের সঙ্গী। এর জন্য দরকার—
১ কাপ সাধারণ ময়দা
আধা চা চামচ বেকিং সোডা
এক চিমটি লবণ
স্বাদ বাড়াতে সামান্য দারুচিনি গুঁড়া
১ টেবিল চামচ এসপ্রেসো বা কফি পাউডার
কোয়ার্টার কাপ টক দই
মিষ্টি প্রয়োজনমতো।
কোয়ার্টার কাপ কড়া লিকারের কফি
কোয়ার্টার কাপ সোডা ওয়াটার বা স্পার্কলিং ওয়াটার
মাখন গলিয়ে তাতে কফি বিন ভিজিয়ে রেখে কফি বাটার (ঐচ্ছিক) তৈরি করে নিন।

প্রস্তুত প্রণালি
ওভেন ২২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৪২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় প্রি-হিট করতে দিন। মাফিন টিনে সামান্য তেল বা মাখন ব্রাশ করে নিন। একটি বড় পাত্রে আটা, বেকিং সোডা, লবণ, দারুচিনি গুঁড়া এবং কফি পাউডার একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। আলাদা একটি পাত্রে টক দই, মধু এবং তৈরি করা কড়া লিকারের কফি মিশিয়ে নিন। শুকনো উপকরণের মিশ্রণে দই ও কফির মিশ্রণটি ঢালুন। এরপর এতে সোডা ওয়াটার যোগ করুন। খুব দ্রুত হালকা হাতে মেশান (বেশি ঘুঁটবেন না)। দেরি না করে দ্রুত ব্যাটারটি মাফিন টিনে ঢালুন। প্রথমে ২২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ৫ মিনিট বেক করুন। এরপর তাপমাত্রা কমিয়ে ১৯০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) করে আরও ৮-১০ মিনিট বেক করুন। একটি কাঠি মাফিনের ভেতর ঢুকিয়ে দেখুন, কাঠি পরিষ্কার বের হয়ে এলে বুঝবেন, মাফিন তৈরি। মাফিনগুলো ঠান্ডা হলে ওপরে কফি-মাখন বা ক্রিম চিজ লাগিয়ে সকালের নাশতায় উপভোগ করুন।

চকলেট কফি মউজ
মাত্র ৫টি উপকরণ দিয়ে কোনো জেলাটিন বা হেভি ক্রিম ছাড়াই শুধু ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করে তৈরি করতে পারেন কফি মউজ। উপকরণসমূহ—
১. ডার্ক চকলেট (৭০-৮০% কোকো হলে ভালো)।
২. ঘরোয়া তাপমাত্রায় থাকা ডিমের সাদা অংশ (ফ্রিজ থেকে ৩০ মিনিট আগে বের করে রাখা)।
৩. ১ টেবিল চামচ ম্যাপেল সিরাপ (মিষ্টি ও ক্যারামেল ফ্লেভারের জন্য)।
৪. আধা কাপ কড়া লিকারের কফি
৫. সাজানোর জন্য টাটকা বা ফ্রোজেন বেরি বা স্ট্রবেরি
প্রস্তুত প্রণালি (মাত্র ১০ মিনিটে)
একটি সস প্যানে অল্প আঁচে চকলেট গলিয়ে নিন। এতে ম্যাপেল সিরাপ ও কফি দিয়ে নাড়ুন। মসৃণ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন। একটি পরিষ্কার কাচ বা মেটালের পাত্রে ডিমের সাদা অংশগুলো ইলেকট্রিক হুইস্ক দিয়ে বিট করুন, যতক্ষণ না এটি ঘন সাদা ফেনার মতো হয়। এবার গলানো চকলেটের মিশ্রণটি অল্প অল্প করে ডিমের সাদা অংশে যোগ করুন। একটি স্প্যাচুলা দিয়ে আলতো হাতে চকলেট এবং ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিন। খুব জোরে নাড়বেন না, তাহলে ফুরফুরে ভাব নষ্ট হয়ে যাবে। মিশ্রণটি ছোট ছোট গ্লাস বা কাপে ভাগ করে ঢালুন। ফ্রিজে অন্তত ৩০ মিনিট রাখুন। পুরো রাত রাখলে আরও ভালো টেক্সচার আসবে।

কেটো তিরামিসু মুস
তিরামিসু নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। তার মধ্যে একটি হলো তিরামিসু কি আসলে কেক? এর সহজ উত্তর হলো, সঠিক প্রণালিতে তিরামিসু তৈরি করে খেয়ে বোঝা। কেটো ডায়েট যাঁরা অনুসরণ করছেন, তাঁদের জন্য ‘কেটো তিরামিসু মুস’ হতে পারে বিকেলের নাশতা বা ডিনারের পর এক দুর্দান্ত ডেজার্ট। এটি যেমন দেখতে অভিজাত, খেতেও তেমনি ক্রিমি এবং রিচ। এসপ্রেসো কফি, মাস্কারপোন চিজ এবং কোকো পাউডারের স্তরে সাজানো এই মুসটি লো-কার্ব বা কম শর্করাযুক্ত ঘরানার।
প্রস্তুত প্রণালি
একটি বড় পাত্রে চিজ, হেভি হুইপিং ক্রিম, চিনির পরিবর্তে এরিথ্রিটল, এক চিমটি লবণ এবং এসপ্রেসো কফি একসঙ্গে নিন। একটি ইলেকট্রিক বিটার বা হ্যান্ড হুইস্ক দিয়ে মিশ্রণটিকে ততক্ষণ পর্যন্ত বিট করুন, যতক্ষণ না এটি ঘন এবং ফুরফুরে হয়ে ওঠে। এবার পরিবেশনের গ্লাস নিন। প্রথমে কিছুটা মাস্কারপোন মিশ্রণ দিন, তার ওপর সামান্য কোকো পাউডার ছিটিয়ে দিন। এভাবে কয়েকবার স্তর তৈরি করুন। সবশেষে ওপরে সামান্য এসপ্রেসো পাউডার ছিটিয়ে দিন এবং সুন্দর দেখানোর জন্য কয়েকটি কফি বিন বসিয়ে দিন। বানিয়েই পরিবেশন করতে পারেন অথবা ফ্রিজে রেখে কিছুটা ঠান্ডা করে উপভোগ করুন। যাঁরা খুব দ্রুত কিন্তু স্পেশাল কিছু তৈরি করতে চান, তাঁদের জন্য এটি পারফেক্ট। সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশনের গ্লাসে সাজিয়ে নিন এবং ওপরে কিছুটা এসপ্রেসো পাউডার ছিটিয়ে দিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল চমৎকার স্বাদের এই মিষ্টি পদ। মিষ্টি, ক্রিমি এবং কফির ফ্লেভারের এই মেলবন্ধন এড়িয়ে যাওয়া সত্যিই অসম্ভব।
সূত্র: মাই শেফস এপ্রোন

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ
১৯ মে ২০২১
পুরোনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার ব্যাপারটি সত্যিই বিশেষ। একটি বছর ঘুরে যখন নতুন বছর আসে, তখন আমাদের মনে জাগে একরাশ প্রত্যাশা। এই নতুন সময়ে আমরা বেশ কিছু ছোট ছোট কাজ করে নিজের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি। বছরের প্রথম দিন প্রতিটি কাজই আমরা এমনভাবে করার চেষ্টা করি যাতে পুরো বছরে
৬ ঘণ্টা আগে
গেল বছর থেকে জেন-জিরা গোটা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনায়। তাদের ফ্যাশন, স্টাইল, খাবার, চলাফেরা, কথা বলা, চিন্তা, ভ্রমণ নিয়ে হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। তুলনা করতে গিয়ে কথা এসেছে অন্যান্য প্রজন্মের। এবার সেই জেন-জিদের পরের প্রজন্মের আলোচনায় আসা যাক। কারণ, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই নতুন
১০ ঘণ্টা আগে
নতুন বছর মানেই নতুন শুরুর সতেজতা। আমরা অনেকেই চাই আমাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। নতুন ডায়েট, নতুন জামা, নতুন বছর। ২০২৬ সালে আপনার সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে আপনার নিজের ঘর। বড় কোনো বিপ্লবের প্রয়োজন নেই। ছোট ছোট এবং চিন্তাশীল কিছু অভ্যাসই পারে আপনার ঘরকে আরও সবুজ ও টেকসই করে তুল
১২ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

গেল বছর থেকে জেন-জিরা গোটা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনায়। তাদের ফ্যাশন, স্টাইল, খাবার, চলাফেরা, কথা বলা, চিন্তা, ভ্রমণ নিয়ে হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। তুলনা করতে গিয়ে কথা এসেছে অন্যান্য প্রজন্মের। এবার সেই জেন-জিদের পরের প্রজন্মের আলোচনায় আসা যাক। কারণ, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই নতুন প্রজন্ম আমাদের চারপাশে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। যাদের আমরা বলছি ‘জেন আলফা’। বয়সে ছোট হলেও এখনই তারা আমাদের কেনাকাটা, খাদ্যাভ্যাস এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এক বিশাল পরিবর্তনের ঢেউ নিয়ে এসেছে। ২০২৯ সালের মধ্যে যখন এই প্রজন্মের একটি বড় অংশ প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন বিশ্ববাজারে তাদের খরচ করার ক্ষমতা ৫.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম কেবল মাউস বা স্ক্রিনেই দক্ষ নয়, তাদের খাবারের থালায় কী থাকবে, সেটিও তারা এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করছে।
জেন আলফা আমাদের শেখাচ্ছে যে খাবার কেবল বেঁচে থাকার রসদ নয়। এটি পরিবারকে কাছে আনার একটি মাধ্যম, পরিবেশকে রক্ষার হাতিয়ার এবং নিজের পরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। ফার্ম থেকে টেবিল পর্যন্ত খাবারের প্রতিটি ধাপে এই সচেতন প্রজন্ম যে পরিবর্তন আনছে, তা আমাদের সবার জন্যই এক স্বাস্থ্যকর ও টেকসই ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারা স্রেফ সস্তা বিজ্ঞাপন দেখে নয়, বরং নিজের ভালো লাগা এবং নৈতিক অবস্থান থেকেই ঠিক করছে তারা কী খাবে।

ছোট্ট কণ্ঠের বড় প্রভাব
আগেকার দিনে শিশুরা সাধারণত মা-বাবা যা পাতে দিতেন তাই খেত। হাতে গোনা কয়েকজন এমন হতো যারা, ‘আমি চাই’ বলার সাহস করত। তবে নিমিষেই তাদের ইচ্ছাকে দাবিয়ে দিতেন অভিভাবকেরা। জেন আলফার ক্ষেত্রে এই চিত্রটা ভিন্ন। বর্তমানে অভিভাবকেরা তাদের প্রতি অনেক বেশি নমনীয় এবং তারা সন্তানদের মতামতকে গুরুত্ব দেন। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণা বলছে, ৬৩ শতাংশ মা-বাবা সন্তানদের পছন্দের ওপর ভিত্তি করে পরিবারের খাবারের তালিকা ঠিক করেন। ভারতেও প্রায় অর্ধেক মা-বাবা বিশ্বাস করেন যে তাঁদের সন্তানদের সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতে বড় পরিবর্তন আনবে। এটি কেবল একগুঁয়েমি নয়, নিজের ভালো-মন্দ বোঝার এক নতুন সচেতনতা। আধুনিক প্যারেন্টিং স্টাইল বা মা-বাবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কারণে জেন আলফা এখন অনেক বেশি স্বাধীন।
শৈশব থেকেই সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টির পাঠ
জেন আলফা প্রজন্মের কাছে ‘গাট হেলথ’ বা পেটের সুস্থতা একটি অত্যন্ত পরিচিত বিষয়। তারা প্রিবায়োটিক পানীয় এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ স্ন্যাকসের কথা জেনেই বড় হচ্ছে। ফিটনেস ট্রেন্ডের কারণে হাই-প্রোটিন খাবারের চাহিদা বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গত এক দশকে প্রোটিন নিয়ে আলোচনার হার প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এমনকি যুক্তরাজ্যের ‘বেলি বাগস’-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অন্ত্রের অণুজীব বা মাইক্রোবায়োমকে ‘পোষা প্রাণীর’ মতো যত্ন নেওয়ার বিষয়টিকে গেমে রূপান্তর করেছে। ফলে ছোটবেলা থেকেই তারা বোঝে যে কোন খাবার শরীর ও মনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। করোনা মহামারির পর থেকে পরিবারের এই স্বাস্থ্য সচেতনতা আরও বেড়েছে। ২০২৪ সালের তথ্য মতে, শিশুদের জন্য বাজারে আসা প্রতি তিনটি নতুন খাবারের একটিতে বাড়তি পুষ্টি বা নিউট্রিয়েন্টস যোগ করা হয়েছে। চীন ও যুক্তরাজ্যের অভিভাবকেরা ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্টের দিকে ঝুঁকছেন, আর এই চাহিদা মেটাতে ব্র্যান্ডগুলো সাপ্লিমেন্টকে এখন ক্যান্ডি বা মুখরোচক স্ন্যাকসের মতো করে তৈরি করছে।

জলবায়ু সচেতনতা ও খাবারের নৈতিকতা
এই প্রজন্ম একটি জলবায়ু সংকটের মধ্যে জন্ম নিয়েছে। তাই পরিবেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। তারা কেবল খাবারের স্বাদ দেখে না, তারা সেই ব্র্যান্ডের নৈতিকতা ও স্বচ্ছতাও বিচার করে। যুক্তরাজ্যে প্রায় অর্ধেক অভিভাবক বলছেন যে তাঁদের সন্তানেরা পরিবেশের কথা ভেবে প্রাণিজ খাবার কমিয়ে উদ্ভিজ্জ বা প্ল্যান্ট-বেজড খাবার খেতে উৎসাহিত হচ্ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ যখন খাদ্যের চাহিদা ৫০ শতাংশ বাড়বে। তখন এই জেন আলফাই হয়তো ল্যাব-গ্রোন মিট (ল্যাবে তৈরি মাংস) বা জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্যকে স্বাভাবিক সমাধান হিসেবে গ্রহণ করবে। ইতিমধ্যে জার্মানির অর্ধেক অভিভাবক কৃত্রিমভাবে তৈরি টেকসই খাবার গ্রহণে আগ্রহী।
বৈচিত্র্যময় স্বাদ ও অভিজ্ঞতার খোঁজে
সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফুড ডেলিভারি অ্যাপের কারণে জেন আলফার স্বাদ এখন বিশ্বজনীন। বাড়ির বাইরে না গিয়েই তারা বিশ্বের নানা প্রান্তের খাবারের স্বাদ নিচ্ছে। তাদের কাছে খাবার কেবল পেট ভরানোর মাধ্যম নয়, বরং একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে চীন ও জাপানে ‘ইমারসিভ ডাইনিং’ বা গল্পের মাধ্যমে খাবার পরিবেশনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ডিজিটাল যুগে বড় হলেও তারা বাস্তব জীবনের ছোঁয়া পেতে চায়, আর খাবার তাদের সেই সংযোগের সুযোগ করে দেয়।
বিদ্রোহী কিন্তু সচেতন
জেন আলফা পূর্ববর্তী জেন জি প্রজন্মের চেয়েও অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং স্বতন্ত্র। তারা কেবল ট্রেন্ড অনুসরণ করে না, বরং তারা নিজেদের মূল্যবোধের সঙ্গে মিলে এমন ব্র্যান্ডই পছন্দ করে। যদিও অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং শৈশবকালীন স্থূলতার মতো চ্যালেঞ্জগুলো এখনো রয়ে গেছে, তবুও আশার কথা হলো ব্র্যান্ডগুলো এখন ‘নো অ্যাডেড সুগার’ বা চিনিহীন খাবারের দিকে ঝুঁকছে। ২০২৪ সালে এ ধরনের পণ্যের হার ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র: শোবিজ ডেইলি, ফুড নেভিগেটর

গেল বছর থেকে জেন-জিরা গোটা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনায়। তাদের ফ্যাশন, স্টাইল, খাবার, চলাফেরা, কথা বলা, চিন্তা, ভ্রমণ নিয়ে হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। তুলনা করতে গিয়ে কথা এসেছে অন্যান্য প্রজন্মের। এবার সেই জেন-জিদের পরের প্রজন্মের আলোচনায় আসা যাক। কারণ, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই নতুন প্রজন্ম আমাদের চারপাশে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। যাদের আমরা বলছি ‘জেন আলফা’। বয়সে ছোট হলেও এখনই তারা আমাদের কেনাকাটা, খাদ্যাভ্যাস এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এক বিশাল পরিবর্তনের ঢেউ নিয়ে এসেছে। ২০২৯ সালের মধ্যে যখন এই প্রজন্মের একটি বড় অংশ প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন বিশ্ববাজারে তাদের খরচ করার ক্ষমতা ৫.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম কেবল মাউস বা স্ক্রিনেই দক্ষ নয়, তাদের খাবারের থালায় কী থাকবে, সেটিও তারা এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করছে।
জেন আলফা আমাদের শেখাচ্ছে যে খাবার কেবল বেঁচে থাকার রসদ নয়। এটি পরিবারকে কাছে আনার একটি মাধ্যম, পরিবেশকে রক্ষার হাতিয়ার এবং নিজের পরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। ফার্ম থেকে টেবিল পর্যন্ত খাবারের প্রতিটি ধাপে এই সচেতন প্রজন্ম যে পরিবর্তন আনছে, তা আমাদের সবার জন্যই এক স্বাস্থ্যকর ও টেকসই ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারা স্রেফ সস্তা বিজ্ঞাপন দেখে নয়, বরং নিজের ভালো লাগা এবং নৈতিক অবস্থান থেকেই ঠিক করছে তারা কী খাবে।

ছোট্ট কণ্ঠের বড় প্রভাব
আগেকার দিনে শিশুরা সাধারণত মা-বাবা যা পাতে দিতেন তাই খেত। হাতে গোনা কয়েকজন এমন হতো যারা, ‘আমি চাই’ বলার সাহস করত। তবে নিমিষেই তাদের ইচ্ছাকে দাবিয়ে দিতেন অভিভাবকেরা। জেন আলফার ক্ষেত্রে এই চিত্রটা ভিন্ন। বর্তমানে অভিভাবকেরা তাদের প্রতি অনেক বেশি নমনীয় এবং তারা সন্তানদের মতামতকে গুরুত্ব দেন। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণা বলছে, ৬৩ শতাংশ মা-বাবা সন্তানদের পছন্দের ওপর ভিত্তি করে পরিবারের খাবারের তালিকা ঠিক করেন। ভারতেও প্রায় অর্ধেক মা-বাবা বিশ্বাস করেন যে তাঁদের সন্তানদের সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতে বড় পরিবর্তন আনবে। এটি কেবল একগুঁয়েমি নয়, নিজের ভালো-মন্দ বোঝার এক নতুন সচেতনতা। আধুনিক প্যারেন্টিং স্টাইল বা মা-বাবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কারণে জেন আলফা এখন অনেক বেশি স্বাধীন।
শৈশব থেকেই সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টির পাঠ
জেন আলফা প্রজন্মের কাছে ‘গাট হেলথ’ বা পেটের সুস্থতা একটি অত্যন্ত পরিচিত বিষয়। তারা প্রিবায়োটিক পানীয় এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ স্ন্যাকসের কথা জেনেই বড় হচ্ছে। ফিটনেস ট্রেন্ডের কারণে হাই-প্রোটিন খাবারের চাহিদা বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গত এক দশকে প্রোটিন নিয়ে আলোচনার হার প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এমনকি যুক্তরাজ্যের ‘বেলি বাগস’-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অন্ত্রের অণুজীব বা মাইক্রোবায়োমকে ‘পোষা প্রাণীর’ মতো যত্ন নেওয়ার বিষয়টিকে গেমে রূপান্তর করেছে। ফলে ছোটবেলা থেকেই তারা বোঝে যে কোন খাবার শরীর ও মনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। করোনা মহামারির পর থেকে পরিবারের এই স্বাস্থ্য সচেতনতা আরও বেড়েছে। ২০২৪ সালের তথ্য মতে, শিশুদের জন্য বাজারে আসা প্রতি তিনটি নতুন খাবারের একটিতে বাড়তি পুষ্টি বা নিউট্রিয়েন্টস যোগ করা হয়েছে। চীন ও যুক্তরাজ্যের অভিভাবকেরা ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্টের দিকে ঝুঁকছেন, আর এই চাহিদা মেটাতে ব্র্যান্ডগুলো সাপ্লিমেন্টকে এখন ক্যান্ডি বা মুখরোচক স্ন্যাকসের মতো করে তৈরি করছে।

জলবায়ু সচেতনতা ও খাবারের নৈতিকতা
এই প্রজন্ম একটি জলবায়ু সংকটের মধ্যে জন্ম নিয়েছে। তাই পরিবেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। তারা কেবল খাবারের স্বাদ দেখে না, তারা সেই ব্র্যান্ডের নৈতিকতা ও স্বচ্ছতাও বিচার করে। যুক্তরাজ্যে প্রায় অর্ধেক অভিভাবক বলছেন যে তাঁদের সন্তানেরা পরিবেশের কথা ভেবে প্রাণিজ খাবার কমিয়ে উদ্ভিজ্জ বা প্ল্যান্ট-বেজড খাবার খেতে উৎসাহিত হচ্ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ যখন খাদ্যের চাহিদা ৫০ শতাংশ বাড়বে। তখন এই জেন আলফাই হয়তো ল্যাব-গ্রোন মিট (ল্যাবে তৈরি মাংস) বা জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্যকে স্বাভাবিক সমাধান হিসেবে গ্রহণ করবে। ইতিমধ্যে জার্মানির অর্ধেক অভিভাবক কৃত্রিমভাবে তৈরি টেকসই খাবার গ্রহণে আগ্রহী।
বৈচিত্র্যময় স্বাদ ও অভিজ্ঞতার খোঁজে
সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফুড ডেলিভারি অ্যাপের কারণে জেন আলফার স্বাদ এখন বিশ্বজনীন। বাড়ির বাইরে না গিয়েই তারা বিশ্বের নানা প্রান্তের খাবারের স্বাদ নিচ্ছে। তাদের কাছে খাবার কেবল পেট ভরানোর মাধ্যম নয়, বরং একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে চীন ও জাপানে ‘ইমারসিভ ডাইনিং’ বা গল্পের মাধ্যমে খাবার পরিবেশনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ডিজিটাল যুগে বড় হলেও তারা বাস্তব জীবনের ছোঁয়া পেতে চায়, আর খাবার তাদের সেই সংযোগের সুযোগ করে দেয়।
বিদ্রোহী কিন্তু সচেতন
জেন আলফা পূর্ববর্তী জেন জি প্রজন্মের চেয়েও অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং স্বতন্ত্র। তারা কেবল ট্রেন্ড অনুসরণ করে না, বরং তারা নিজেদের মূল্যবোধের সঙ্গে মিলে এমন ব্র্যান্ডই পছন্দ করে। যদিও অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং শৈশবকালীন স্থূলতার মতো চ্যালেঞ্জগুলো এখনো রয়ে গেছে, তবুও আশার কথা হলো ব্র্যান্ডগুলো এখন ‘নো অ্যাডেড সুগার’ বা চিনিহীন খাবারের দিকে ঝুঁকছে। ২০২৪ সালে এ ধরনের পণ্যের হার ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র: শোবিজ ডেইলি, ফুড নেভিগেটর

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ
১৯ মে ২০২১
পুরোনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার ব্যাপারটি সত্যিই বিশেষ। একটি বছর ঘুরে যখন নতুন বছর আসে, তখন আমাদের মনে জাগে একরাশ প্রত্যাশা। এই নতুন সময়ে আমরা বেশ কিছু ছোট ছোট কাজ করে নিজের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি। বছরের প্রথম দিন প্রতিটি কাজই আমরা এমনভাবে করার চেষ্টা করি যাতে পুরো বছরে
৬ ঘণ্টা আগে
আর মাত্র এক দিন পর আসছে নতুন বছর। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমরা কতই না আয়োজন করে থাকি। এর একটি অংশের আয়োজন হয় রান্নাঘরে। অনেক কিছু না হোক, ব্যস্ত জীবন থেকে একটু সময় বের করে প্রিয়জনের সঙ্গে প্রিয় খাবার খেয়ে হলেও আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ভালোবাসি। কোনো কিছুর শুরু ভালো দিয়ে করতে চাইলে মিষ্টি খাওয়া
৭ ঘণ্টা আগে
নতুন বছর মানেই নতুন শুরুর সতেজতা। আমরা অনেকেই চাই আমাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। নতুন ডায়েট, নতুন জামা, নতুন বছর। ২০২৬ সালে আপনার সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে আপনার নিজের ঘর। বড় কোনো বিপ্লবের প্রয়োজন নেই। ছোট ছোট এবং চিন্তাশীল কিছু অভ্যাসই পারে আপনার ঘরকে আরও সবুজ ও টেকসই করে তুল
১২ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

নতুন বছর মানেই নতুন শুরুর সতেজতা। আমরা অনেকেই চাই আমাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। নতুন ডায়েট, নতুন জামা, নতুন বছর। ২০২৬ সালে আপনার সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে আপনার নিজের ঘর। বড় কোনো বিপ্লবের প্রয়োজন নেই। ছোট ছোট এবং চিন্তাশীল কিছু অভ্যাসই পারে আপনার ঘরকে আরও সবুজ ও টেকসই করে তুলতে। নতুন বছরে আপনার যাপিত জীবন ও গৃহকোণকে প্রকৃতিবান্ধব করতে সহজ কিছু সংকল্প গ্রহণ করতে পারেন। সেটা হতে পারে আপনার রান্নাঘরে বর্জ্য কমানো, ঘরের আসবাব কমিয়ে আনা কিংবা পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া। আপনার ছোট ছোট এই পদক্ষেপগুলোই ২০২৬ সালে আপনার ঘরকে করে তুলবে প্রাণবন্ত এবং পৃথিবীকে আরও সবুজ করে তুলবে।
রান্নাঘরে আনুন সচেতন পরিবর্তন
পরিবর্তনের শুরুটা হতে পারে আপনার রান্নাঘর থেকে। রান্নাঘরের বর্জ্য কমিয়ে পরিবেশবান্ধব করে তোলা মোটেও কঠিন কিছু নয়। ছোট ছোট কিছু স্মার্ট বদল আপনার রান্নাঘরকে দিতে পারে এক নতুন সজীবতা। যেমন খাবারের সতেজতা ধরে রাখতে প্লাস্টিকের ক্লিন ফিল্মের বদলে মৌমাছির মোমের তৈরি র্যাপ ব্যবহার করুন। এগুলো ধুয়ে বারবার ব্যবহার করা যায় এবং নষ্ট হলে অনায়াসেই মাটিতে মিশে যায়। স্যান্ডউইচ মোড়ানো বা বেঁচে যাওয়া খাবার ঢেকে রাখতে এটি সেরা। এমনকি সুতি কাপড়ে গলানো মোম লাগিয়ে আপনি নিজেই বাড়িতে এটি বানিয়ে নিতে পারেন।
অনেক টি-ব্যাগে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে। তাই টি-ব্যাগ বর্জন করে সরাসরি খোলা চা-পাতা ব্যবহার শুরু করুন। এতে চায়ের স্বাদ যেমন অটুট থাকে, তেমনি পরিবেশও বাঁচে। একবার ব্যবহারযোগ্য স্পঞ্জের বদলে কাঠের তৈরি ডিশ ব্রাশ এবং কম্পোস্টেবল (পচনশীল) ডিশ ক্লথ বা বাসন মোছার কাপড় ব্যবহার করুন। লিকুইড সাবানের প্লাস্টিক বোতলের ঝামেলা এড়াতে সলিড ডিশ সোপ ব্লক ব্যবহার করুন। এগুলো লিকুইড সাবানের মতোই কার্যকর কিন্তু প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি করে না। এই সামান্য পরিবর্তনগুলোই আপনার রান্নাঘরকে একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব রূপ দিতে পারে। মৌসুমি ফল বা সবজি বেশি থাকলে তা সংরক্ষণের অভ্যাস গড়ে তুলুন। সবজি হালকা ভাপিয়ে ফ্রিজে রাখা কিংবা উদ্বৃত্ত ফল দিয়ে জ্যাম বা আচার তৈরি করা খাবার অপচয় রোধের অন্যতম সেরা উপায়।

পরিচ্ছন্নতায় আনুন প্রাকৃতিক সমাধান
বাজারের কড়া রাসায়নিকযুক্ত ক্লিনারের বদলে বেকিং সোডা এবং সাদা ভিনেগার ব্যবহার করুন। এগুলো দাগ দূর করতে এবং কার্পেট সতেজ রাখতে জাদুর মতো কাজ করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সুগন্ধের জন্য জলে টি-ট্রি বা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে স্প্রে তৈরি করুন। টিস্যু পেপারের বদলে বাঁশের তৈরি কাপড় বা মাইক্রোফাইবার ক্লথ ব্যবহার করুন। আপনার বাগানের পুরোনো কাঠের প্যালেট দিয়ে বেঞ্চ বা টেবিল বানিয়ে নিতে পারেন। পুরোনো আসবাবের ওপর স্রেফ রঙের এক পোঁচ দিলেই তার হারানো জেল্লা ফিরে আসে। নতুন কেনার আগে বাড়িতে থাকা জিনিসের সৃজনশীল ব্যবহার পরিবেশের জন্য দারুণ এক উপহার। শাকসবজির খোসা, ডিমের খোসা বা কফির তলানি না ফেলে দিয়ে তা থেকে জৈব সার তৈরি করুন। এটি আপনার ঘরের বর্জ্য বহুগুণ কমিয়ে দেবে এবং বাগানের মাটিকে দেবে প্রচুর পুষ্টি। জায়গার অভাব থাকলে ছোট কম্পোস্ট বিন বা ‘ওয়ার্মারি’ ব্যবহার করতে পারেন।
ঘর গোছানো হোক উদ্দেশ্যপূর্ণ
নতুন বছরে ঘর থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলা বা ‘ডিক্লাটারিং’ করাটা মনের জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক হতে পারে। তবে পরিবেশের কথা মাথায় রাখলে, কোনো কিছু রিসাইকেল করার চেয়ে তার ব্যবহার কমিয়ে আনা বা অন্য কাজে লাগানো বেশি জরুরি। মনে রাখবেন টেকসই জীবনের মূলমন্ত্র হলো রিডিউস (কমানো), রিইউজ (পুনরায় ব্যবহার) এবং রিসাইকেল (পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ)। একটি পুরোনো কাঠের বাক্স অনায়াসেই গাছের টব বা স্টোরেজ বক্সে রূপান্তরিত হতে পারে। বন্ধুদের সঙ্গে পোশাক অদলবদল করুন অথবা চ্যারিটিতে দান করুন। সারা বছর পুদিনা, পার্সলে বা থাইম চাষ করে আপনি যেমন টাটকা স্বাদ পাবেন, তেমনি ঘরের বাতাসও থাকবে সতেজ। রোদ উজ্জ্বল জায়গায় এই ছোট ভেষজ বাগান (Herb garden) গড়ে তোলা সম্ভব। তবে মনে রাখবেন, পুদিনা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তাই একে আলাদা টবে রাখাই ভালো।

বাথরুম হোক প্লাস্টিকমুক্ত
প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোর কথা উঠলে আমরা প্রায়ই বাথরুমের কথা ভুলে যাই। অথচ প্লাস্টিকমুক্ত জীবন শুরু করার জন্য এটিই সবচেয়ে সহজ জায়গা। ২০২৬ সালে আপনার বাথরুমকে প্লাস্টিকমুক্ত এবং স্টাইলিশ করে তুলতে এই ছোট পরিবর্তনগুলো করতে পারেন। প্লাস্টিকের টুথব্রাশ বা নখের ব্রাশের বদলে কাঠের ব্রাশ ব্যবহার শুরু করুন। এগুলো যেমন দীর্ঘস্থায়ী, তেমনি দেখতেও বেশ নান্দনিক। প্লাস্টিকের বোতলের ঝামেলা চিরতরে দূর করতে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারের বার (সাবানের মতো শক্ত বার) ব্যবহার করুন। এটি বাথরুম থেকে প্লাস্টিকের বোতলের স্তূপ কমাতে জাদুর মতো কাজ করে। একবার ব্যবহারযোগ্য বা ওয়ান-টাইম প্লাস্টিক রেজারের বদলে সেফটি রেজার কিংবা বাঁশের হাতলওয়ালা রেজার বেছে নিন। এগুলো অনেক বেশি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব। এই সামান্য পরিবর্তনগুলো কেবল প্লাস্টিক বর্জ্যই কমাবে না, আপনার বাথরুমে যোগ করবে এক চমৎকার ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি’ আভিজাত্য।
নতুন বছরে সাসটেইনেবল ইন্টেরিয়র টিপস
নতুন বছরে ঘরের সাজসজ্জায় পরিবর্তন আনতে চাইলে কিছু বাড়তি বিষয় মাথায় রাখতে পারেন:
এনার্জি অ্যাসেসমেন্ট: আপনার ঘরের বিদ্যুৎ খরচ কোথায় কমানো সম্ভব তা বুঝতে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন।
সেকেন্ড-হ্যান্ড ফার্নিচার: নতুন আসবাবের বদলে পুরোনো বা অ্যান্টিক দোকান থেকে আসবাব সংগ্রহ করুন। এটি ঘরে একটি অনন্য আভিজাত্য যোগ করে।
গ্রে-ওয়াটার সিস্টেম: বাথরুমের ব্যবহৃত পানি বা বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে তা বাগানে ব্যবহারের কথা ভাবুন।
ঘর সংস্কারের সময় স্থানীয় জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণিকুলের কথা মাথায় রেখে অ-বিষাক্ত উপাদান এবং নেটিভ গাছপালা ব্যবহার করুন।
সূত্র: কান্ট্রি লিভিং ম্যাগাজিন, আর্থ সায়েন্স ডিজাইন

নতুন বছর মানেই নতুন শুরুর সতেজতা। আমরা অনেকেই চাই আমাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। নতুন ডায়েট, নতুন জামা, নতুন বছর। ২০২৬ সালে আপনার সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে আপনার নিজের ঘর। বড় কোনো বিপ্লবের প্রয়োজন নেই। ছোট ছোট এবং চিন্তাশীল কিছু অভ্যাসই পারে আপনার ঘরকে আরও সবুজ ও টেকসই করে তুলতে। নতুন বছরে আপনার যাপিত জীবন ও গৃহকোণকে প্রকৃতিবান্ধব করতে সহজ কিছু সংকল্প গ্রহণ করতে পারেন। সেটা হতে পারে আপনার রান্নাঘরে বর্জ্য কমানো, ঘরের আসবাব কমিয়ে আনা কিংবা পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া। আপনার ছোট ছোট এই পদক্ষেপগুলোই ২০২৬ সালে আপনার ঘরকে করে তুলবে প্রাণবন্ত এবং পৃথিবীকে আরও সবুজ করে তুলবে।
রান্নাঘরে আনুন সচেতন পরিবর্তন
পরিবর্তনের শুরুটা হতে পারে আপনার রান্নাঘর থেকে। রান্নাঘরের বর্জ্য কমিয়ে পরিবেশবান্ধব করে তোলা মোটেও কঠিন কিছু নয়। ছোট ছোট কিছু স্মার্ট বদল আপনার রান্নাঘরকে দিতে পারে এক নতুন সজীবতা। যেমন খাবারের সতেজতা ধরে রাখতে প্লাস্টিকের ক্লিন ফিল্মের বদলে মৌমাছির মোমের তৈরি র্যাপ ব্যবহার করুন। এগুলো ধুয়ে বারবার ব্যবহার করা যায় এবং নষ্ট হলে অনায়াসেই মাটিতে মিশে যায়। স্যান্ডউইচ মোড়ানো বা বেঁচে যাওয়া খাবার ঢেকে রাখতে এটি সেরা। এমনকি সুতি কাপড়ে গলানো মোম লাগিয়ে আপনি নিজেই বাড়িতে এটি বানিয়ে নিতে পারেন।
অনেক টি-ব্যাগে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে। তাই টি-ব্যাগ বর্জন করে সরাসরি খোলা চা-পাতা ব্যবহার শুরু করুন। এতে চায়ের স্বাদ যেমন অটুট থাকে, তেমনি পরিবেশও বাঁচে। একবার ব্যবহারযোগ্য স্পঞ্জের বদলে কাঠের তৈরি ডিশ ব্রাশ এবং কম্পোস্টেবল (পচনশীল) ডিশ ক্লথ বা বাসন মোছার কাপড় ব্যবহার করুন। লিকুইড সাবানের প্লাস্টিক বোতলের ঝামেলা এড়াতে সলিড ডিশ সোপ ব্লক ব্যবহার করুন। এগুলো লিকুইড সাবানের মতোই কার্যকর কিন্তু প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি করে না। এই সামান্য পরিবর্তনগুলোই আপনার রান্নাঘরকে একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব রূপ দিতে পারে। মৌসুমি ফল বা সবজি বেশি থাকলে তা সংরক্ষণের অভ্যাস গড়ে তুলুন। সবজি হালকা ভাপিয়ে ফ্রিজে রাখা কিংবা উদ্বৃত্ত ফল দিয়ে জ্যাম বা আচার তৈরি করা খাবার অপচয় রোধের অন্যতম সেরা উপায়।

পরিচ্ছন্নতায় আনুন প্রাকৃতিক সমাধান
বাজারের কড়া রাসায়নিকযুক্ত ক্লিনারের বদলে বেকিং সোডা এবং সাদা ভিনেগার ব্যবহার করুন। এগুলো দাগ দূর করতে এবং কার্পেট সতেজ রাখতে জাদুর মতো কাজ করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সুগন্ধের জন্য জলে টি-ট্রি বা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে স্প্রে তৈরি করুন। টিস্যু পেপারের বদলে বাঁশের তৈরি কাপড় বা মাইক্রোফাইবার ক্লথ ব্যবহার করুন। আপনার বাগানের পুরোনো কাঠের প্যালেট দিয়ে বেঞ্চ বা টেবিল বানিয়ে নিতে পারেন। পুরোনো আসবাবের ওপর স্রেফ রঙের এক পোঁচ দিলেই তার হারানো জেল্লা ফিরে আসে। নতুন কেনার আগে বাড়িতে থাকা জিনিসের সৃজনশীল ব্যবহার পরিবেশের জন্য দারুণ এক উপহার। শাকসবজির খোসা, ডিমের খোসা বা কফির তলানি না ফেলে দিয়ে তা থেকে জৈব সার তৈরি করুন। এটি আপনার ঘরের বর্জ্য বহুগুণ কমিয়ে দেবে এবং বাগানের মাটিকে দেবে প্রচুর পুষ্টি। জায়গার অভাব থাকলে ছোট কম্পোস্ট বিন বা ‘ওয়ার্মারি’ ব্যবহার করতে পারেন।
ঘর গোছানো হোক উদ্দেশ্যপূর্ণ
নতুন বছরে ঘর থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলা বা ‘ডিক্লাটারিং’ করাটা মনের জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক হতে পারে। তবে পরিবেশের কথা মাথায় রাখলে, কোনো কিছু রিসাইকেল করার চেয়ে তার ব্যবহার কমিয়ে আনা বা অন্য কাজে লাগানো বেশি জরুরি। মনে রাখবেন টেকসই জীবনের মূলমন্ত্র হলো রিডিউস (কমানো), রিইউজ (পুনরায় ব্যবহার) এবং রিসাইকেল (পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ)। একটি পুরোনো কাঠের বাক্স অনায়াসেই গাছের টব বা স্টোরেজ বক্সে রূপান্তরিত হতে পারে। বন্ধুদের সঙ্গে পোশাক অদলবদল করুন অথবা চ্যারিটিতে দান করুন। সারা বছর পুদিনা, পার্সলে বা থাইম চাষ করে আপনি যেমন টাটকা স্বাদ পাবেন, তেমনি ঘরের বাতাসও থাকবে সতেজ। রোদ উজ্জ্বল জায়গায় এই ছোট ভেষজ বাগান (Herb garden) গড়ে তোলা সম্ভব। তবে মনে রাখবেন, পুদিনা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তাই একে আলাদা টবে রাখাই ভালো।

বাথরুম হোক প্লাস্টিকমুক্ত
প্লাস্টিক বর্জ্য কমানোর কথা উঠলে আমরা প্রায়ই বাথরুমের কথা ভুলে যাই। অথচ প্লাস্টিকমুক্ত জীবন শুরু করার জন্য এটিই সবচেয়ে সহজ জায়গা। ২০২৬ সালে আপনার বাথরুমকে প্লাস্টিকমুক্ত এবং স্টাইলিশ করে তুলতে এই ছোট পরিবর্তনগুলো করতে পারেন। প্লাস্টিকের টুথব্রাশ বা নখের ব্রাশের বদলে কাঠের ব্রাশ ব্যবহার শুরু করুন। এগুলো যেমন দীর্ঘস্থায়ী, তেমনি দেখতেও বেশ নান্দনিক। প্লাস্টিকের বোতলের ঝামেলা চিরতরে দূর করতে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনারের বার (সাবানের মতো শক্ত বার) ব্যবহার করুন। এটি বাথরুম থেকে প্লাস্টিকের বোতলের স্তূপ কমাতে জাদুর মতো কাজ করে। একবার ব্যবহারযোগ্য বা ওয়ান-টাইম প্লাস্টিক রেজারের বদলে সেফটি রেজার কিংবা বাঁশের হাতলওয়ালা রেজার বেছে নিন। এগুলো অনেক বেশি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব। এই সামান্য পরিবর্তনগুলো কেবল প্লাস্টিক বর্জ্যই কমাবে না, আপনার বাথরুমে যোগ করবে এক চমৎকার ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি’ আভিজাত্য।
নতুন বছরে সাসটেইনেবল ইন্টেরিয়র টিপস
নতুন বছরে ঘরের সাজসজ্জায় পরিবর্তন আনতে চাইলে কিছু বাড়তি বিষয় মাথায় রাখতে পারেন:
এনার্জি অ্যাসেসমেন্ট: আপনার ঘরের বিদ্যুৎ খরচ কোথায় কমানো সম্ভব তা বুঝতে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন।
সেকেন্ড-হ্যান্ড ফার্নিচার: নতুন আসবাবের বদলে পুরোনো বা অ্যান্টিক দোকান থেকে আসবাব সংগ্রহ করুন। এটি ঘরে একটি অনন্য আভিজাত্য যোগ করে।
গ্রে-ওয়াটার সিস্টেম: বাথরুমের ব্যবহৃত পানি বা বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে তা বাগানে ব্যবহারের কথা ভাবুন।
ঘর সংস্কারের সময় স্থানীয় জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণিকুলের কথা মাথায় রেখে অ-বিষাক্ত উপাদান এবং নেটিভ গাছপালা ব্যবহার করুন।
সূত্র: কান্ট্রি লিভিং ম্যাগাজিন, আর্থ সায়েন্স ডিজাইন

বিজ্ঞাপনী বাণিজ্যের যুগে বইও প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। বইয়ের মান নির্ধারিত হচ্ছে মূলত বিক্রির সংখ্যা দিয়ে। লেখালেখির জগতে ‘জনপ্রিয় ধারা’ শব্দটি আগেও ছিল। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বেস্ট সেলার, দু–চারটি সংস্করণের তকমার প্রবল প্রতাপ
১৯ মে ২০২১
পুরোনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার ব্যাপারটি সত্যিই বিশেষ। একটি বছর ঘুরে যখন নতুন বছর আসে, তখন আমাদের মনে জাগে একরাশ প্রত্যাশা। এই নতুন সময়ে আমরা বেশ কিছু ছোট ছোট কাজ করে নিজের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি। বছরের প্রথম দিন প্রতিটি কাজই আমরা এমনভাবে করার চেষ্টা করি যাতে পুরো বছরে
৬ ঘণ্টা আগে
আর মাত্র এক দিন পর আসছে নতুন বছর। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমরা কতই না আয়োজন করে থাকি। এর একটি অংশের আয়োজন হয় রান্নাঘরে। অনেক কিছু না হোক, ব্যস্ত জীবন থেকে একটু সময় বের করে প্রিয়জনের সঙ্গে প্রিয় খাবার খেয়ে হলেও আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ভালোবাসি। কোনো কিছুর শুরু ভালো দিয়ে করতে চাইলে মিষ্টি খাওয়া
৭ ঘণ্টা আগে
গেল বছর থেকে জেন-জিরা গোটা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনায়। তাদের ফ্যাশন, স্টাইল, খাবার, চলাফেরা, কথা বলা, চিন্তা, ভ্রমণ নিয়ে হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। তুলনা করতে গিয়ে কথা এসেছে অন্যান্য প্রজন্মের। এবার সেই জেন-জিদের পরের প্রজন্মের আলোচনায় আসা যাক। কারণ, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই নতুন
১০ ঘণ্টা আগে