Ajker Patrika

শোকাহত পরিবারের আশ্রয় ছিলেন নবীজি

কাউসার লাবীব
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০: ২৮
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জীবনে সবচেয়ে কষ্টকর মুহূর্তগুলোর একটি হলো আপনজন হারানোর বেদনা। এমন শোকের সময় মানুষ থাকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, দুর্বল ও অনেকটা একা। ঠিক তখনই সে আশায় থাকে কারও সহানুভূতির, সান্ত্বনার কিংবা একটু অনুভব করার মতো মানবিক উপস্থিতির। এই বিপদ ও কষ্টের সময়টিতে একজন মুসলমান কীভাবে শোকাহত ভাই বা বোনের পাশে দাঁড়াবে, তার সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।

দয়ার নবী (সা.) শোকার্তদের পাশে দাঁড়াতেন, তাদের ঘরে যেতেন, খাবারের ব্যবস্থা করতেন, তাদের দুঃখ নিজের দুঃখ মনে করে দোয়া করতেন। শোকগ্রস্ত পরিবারকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়ে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করাতেন।

স্বজন হারানো পরিবারকে সান্ত্বনা

উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, আবু সালামার ইন্তেকালের পর আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের বাড়িতে আসেন। শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। তার জন্য দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ, আবু সালামাকে ক্ষমা করুন এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা উঁচু করে দিন। আপনি তার বংশধরদের অভিভাবক হয়ে যান। হে রাব্বুল আলামিন, তাকে ও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। তার কবর প্রশস্ত করুন এবং তা আলোকোজ্জ্বল করুন।’ (সহিহ মুসলিম: ৯২০)

সন্তান হারানোর পর মায়েরা অতিমাত্রায় ভেঙে পড়েন। বারবার তাদের হৃদয় ব্যাকুল হয়ে পড়ে। নবীজি তাদের হৃদয় শান্ত করার জন্য আশার বাণী শোনান, ‘যদি কোনো নারীর তিনটি সন্তান মারা যায়, তাহলে সেই সন্তানেরা তাদের মায়ের জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। মায়ের জন্য জাহান্নামের রক্ষাকবচ হবে।’ এক নারী তখন জানতে চান, ‘যদি দুটি সন্তান মারা যায়?’ নবীজি বলেন, ‘দুটি হলেও।’ (সহিহ বুখারি: ১০১)

শোকার্ত পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা

স্বজন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়া পরিবার শুধু মানসিকভাবে নয়, দৈনন্দিন কাজেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমন সময়ে তাদের খাবারেরও খোঁজ থাকে না। তাই নবীজি (সা.) শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের খাবারদাবারের ব্যবস্থাও করতেন।

হজরত জাফর ইবনে আবু তালিব (রা.) মুতার যুদ্ধে শহীদ হলে রাসুল (সা.) তাঁর প্রতিবেশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করো। কেননা তাদের কাছে এমন একটি সংবাদ এসেছে, যা তাদের ব্যস্ত করে রেখেছে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৬১০)

মৃতের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা

নবী করিম (সা.)-এর হৃদয় ছিল অতুলনীয় মমত্ববোধে পূর্ণ। তিনি শুধু জীবিত মুসলমানদের নয়, মৃতদের কথাও গভীরভাবে ভাবতেন। বিশেষ করে যেসব মৃত ব্যক্তির ঋণ ছিল, তাদের দায়ভার নিজেই গ্রহণ করতেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ঋণগ্রস্ত কোনো মৃত ব্যক্তির লাশ জানাজা আদায়ের জন্য আনা হলে তিনি জিজ্ঞেস করতেন, ‘সে কি ঋণ পরিশোধ করার মতো অতিরিক্ত কিছু রেখে গেছে?’ যদি বলা হতো ‘সে ঋণ পরিশোধ করার মতো সম্পদ রেখে গেছে।’ তাহলে তিনি তার জানাজা আদায় করতেন। অন্যথায় তিনি সাহাবিদের বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের সাথির জানাজা আদায় করো।’

তারপর আল্লাহ যখন তাঁকে অনেক বিজয় দান করলেন, তখন তিনি বললেন, ‘আমি মুমিনদের জন্য তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠজন। কাজেই মুমিনদের কেউ ঋণ রেখে মারা গেলে, তা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমারই। আর যে ব্যক্তি সম্পদ রেখে যাবে, তা তার ওয়ারিশরা পাবে। (সহিহ বুখারি)

শোকার্তদের জন্য দোয়া

স্বজন হারিয়ে শোকার্ত পরিবার পড়ে যায় চরম দিশাহীনতায়। তাদের হৃদয়ে বয়ে যায় বেদনার ঝড়, মন হয়ে পড়ে খণ্ড-বিখণ্ড। সেই বিপর্যস্ত মনে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই শান্তি ও স্বস্তি বর্ষণ করতে পারেন। তাই শোকার্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন এবং অন্যদেরও তা করার জন্য উৎসাহ দিতেন।

হাদিসে বর্ণিত দোয়ার মধ্যে রয়েছে ‘ইন্না লিল্লাহি মা-আখাজা, ওয়ালাহু মা-আতা, ওয়া কুল্লু শাইয়িন ইংদাহু বিআজালিম মুসাম্মা, ফালতাসবির, ওয়াল তাহতাসিব।’ অর্থ: ‘নিশ্চয়ই যা আল্লাহ নিয়েছেন, তা তাঁরই মালিকানা। তিনি যা দিয়েছেন, তাও তাঁরই দান। প্রতিটি বিষয়ই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাঁর কাছে নির্ধারিত। অতএব আপনি ধৈর্য ধরুন, সওয়াবের প্রত্যাশা করুন।’ (সহিহ বুখারি: ১২৮৪)

দাফন-কাফনের ব্যবস্থা

পরিবারের কেউ ইন্তেকাল করলে স্বজনেরা গভীর শোকে ভেঙে পড়েন। অনেক সময় শোকের ভারে পরিবার এতটাই বিপর্যস্ত হয় যে মৃতের দাফন-কাফনের ব্যবস্থাপনায়ও হিমশিম খেতে হয়। তাই ইসলাম এই দায়িত্ব কেবল পরিবার নয়, বরং পুরো সমাজের ওপর সমবণ্টিত করেছে। মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো, কাফন পরানো, জানাজার নামাজ আদায় এবং দাফনের ব্যবস্থা করা ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ সমষ্টিগত দায়িত্ব।

একজন মুসলমানের জানাজা ও দাফনে অংশ নেওয়া মুসলিম সমাজের প্রতি তার অধিকার। এটি শুধু তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনই নয়, বরং মৃতের স্বজনদের জন্যও হয় সান্ত্বনার এক উজ্জ্বল উৎস। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক রয়েছে: সালামের জবাব দেওয়া, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, জানাজায় অংশ নেওয়া, দাওয়াতে সাড়া দেওয়া এবং হাঁচির জবাব দেওয়া।’ (সহিহ বুখারি: ১২৪০)

মৃতের জন্য দোয়া

নবীজি (সা.) মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের জন্য নিজে দোয়া করতেন এবং অন্যদেরও তা করতে উৎসাহিত করতেন। কেননা মৃত্যুর পর দোয়া সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পাথেয়। তিনি বলতেন, ‘তোমরা যখন কোনো মৃত ব্যক্তির জানাজা আদায় করবে, নিষ্ঠার সঙ্গে তার জন্য দোয়া করবে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩২০১)। দাফনের পর উপস্থিত সবার উদ্দেশে নবী করিম (সা.) বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তার স্থিরতা কামনায় দোয়া করো। কারণ এখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩২২১)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজায় ৫০০ কোরআনের হাফেজকে রাজকীয় সংবর্ধনা

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গাজা শহরের পশ্চিমে অবস্থিত আশ-শাতি শরণার্থীশিবিরে এক বিশাল কোরআনিক শোভাযাত্রা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আয়োজনে প্রায় ৫০০ জন পবিত্র কোরআনের হাফেজ ও হাফেজা অংশগ্রহণ করেন। দুই বছর ধরে ইসরায়েলি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের কবলে পিষ্ট এই জনপদে শোভাযাত্রাটি আনন্দ ও উদ্‌যাপনের এক নতুন আমেজ নিয়ে আসে।

আইয়াদুল খাইর ফাউন্ডেশন এবং কুয়েতভিত্তিক চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন আলিয়ার যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘গাজা কোরআনের হাফেজদের মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হচ্ছে’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত হয় অনুষ্ঠানটি।

তাকবির ও তাহলিলের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে আশ-শাতি শিবিরের ভেতর থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। সুশৃঙ্খলভাবে হাফেজ ও হাফেজারা সারিবদ্ধ হয়ে এতে অংশ নেন। তাঁদের হাতে ছিল পবিত্র কোরআন, ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা এবং ধৈর্য ও আশার প্রতীকসংবলিত নানা ফেস্টুন।

রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ করতালি ও দোয়ার মাধ্যমে এই গর্বের মুহূর্তের সঙ্গী হন। দীর্ঘদিনের বোমাবর্ষণ আর ধ্বংসস্তূপে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া রাস্তাগুলো এদিন এক স্বর্গীয় প্রশান্তি আর জন-উৎসবে রূপ নেয়।

অনুষ্ঠানের শেষে হাফেজ ও হাফেজাদের মধ্যে সম্মাননা সনদ ও বিশেষ উপহার বিতরণ করা হয়।

আয়োজকেরা জানান, গাজা উপত্যকার এই কঠিন বাস্তবতায় ধর্মীয় পরিচয় রক্ষা এবং নৈতিক মূল্যবোধকে জাগ্রত রাখাই ছিল এ সামাজিক উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য।

সূত্র: আল-আহেদ নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তাবলিগ জামাতের খুরুজের জোড় শুরু ২ জানুয়ারি

ইসলাম ডেস্ক 
তাবলিগ জামাতের শুরায়ি নেজামের জোড় ইজতেমা। ছবি: সংগৃহীত
তাবলিগ জামাতের শুরায়ি নেজামের জোড় ইজতেমা। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২, ৩ ও ৪ জানুয়ারি তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ি নেজাম) ব্যবস্থাপনায় খুরুজের জোড় অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে প্রয়োজনীয় মাঠ প্রস্তুতির কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ি নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, এই জোড়ে তাঁরাই অংশগ্রহণ করবেন, যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় এক চিল্লা, তিন চিল্লা ও বিদেশ সফরের উদ্দেশ্যে বের হবেন এবং যাঁরা মেহনতের মাধ্যমে সাথিদের এই কাজে উদ্বুদ্ধ করে সঙ্গে নিয়ে আসবেন।

একটি মহল শুরায়ি নেজামের এই খুরুজের জোড়কে বিশ্ব ইজতেমা বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে জানিয়ে সবাইকে সতর্ক করে হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, এটি কোনো ইজতেমা নয়; বরং সীমিত পরিসরে খুরুজের প্রস্তুতিমূলক জোড়।

এদিকে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী টঙ্গীতে ৫৯তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের পর তা আয়োজন করা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ (শুরায়ি নেজাম) গত ৩ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি দেশবাসীকে অবহিত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আকাশপথে মুসলিম যাত্রীদের জন্য এমিরেটসের বিশেষ ব্যবস্থা

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আকাশপথে ভ্রমণরত মুসলিম যাত্রীদের ধর্মীয় প্রয়োজনীয়তা ও স্বাচ্ছন্দ্যকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন উন্নত সংস্করণের পকেট জায়নামাজ চালু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিমান সংস্থা এমিরেটস এয়ারলাইনস। আগের সংস্করণের তুলনায় জায়নামাজটি অধিক টেকসই ও আরামদায়ক হলেও এটি ওজনে হালকা এবং বহনে অত্যন্ত সুবিধাজনক।

এমিরেটস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের বহরের প্রতিটি ফ্লাইটে এখন থেকে এই বিশেষ পকেট জায়নামাজ পাওয়া যাবে। ফার্স্ট ক্লাস, বিজনেস ক্লাস কিংবা ইকোনমি—সব শ্রেণির যাত্রীদের জন্য এই সুবিধা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ফ্লাইট চলাকালে নামাজের প্রয়োজন হলে যাত্রীরা কর্তব্যরত কেবিন ক্রুদের কাছে অনুরোধ করলেই দ্রুত এই জায়নামাজ সরবরাহ করা হবে।

এমিরেটস কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, যাত্রীদের সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে জায়নামাজটির মান ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সূত্র: ইসলামিক ইনফরমেশন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতের টুপি পরে নামাজ আদায় করা যাবে কি?

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ১৯
ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি
ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি

শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডার প্রকোপে অনেকেই কানটুপি, উলের টুপি কিংবা হুডি পরে থাকেন। এসব পরিধান করা অবস্থায় অনেক সময় নামাজের সময় হয়ে যায়। তাই নানা সময়ে মনে প্রশ্ন জাগে, শীতের টুপি বা হুডি পরে নামাজ আদায় করলে কি তা শুদ্ধ হবে?

ইসলামের বিধান হলো, নামাজে মাথা ঢাকা পুরুষের জন্য ফরজ নয়, বরং এটি নামাজের আদব ও সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত মাথা ঢেকেই নামাজ আদায় করতেন। আবু দাউদ শরিফে এসেছে, নবীজি (সা.) পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় নামাজ আদায় করতেন। ফিকহের দৃষ্টিতে কানটুপি, উলের টুপি বা সাধারণ টুপি—সবই মাথা ঢাকার পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে কানটুপি পরে নামাজ আদায় করা সম্পূর্ণ জায়েজ।

কানটুপি বা হুডি পরে নামাজ আদায় করার সময় একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি—সেটি হলো সিজদা। সিজদার সময় কপাল সরাসরি মাটিতে বা জায়নামাজে লাগানো আবশ্যক। যদি টুপিটি এমনভাবে পরা হয়, যা কপালকে ঢেকে রাখে এবং মাটিতে কপাল ঠেকতে বাধা দেয়, তবে সিজদা অপূর্ণ থেকে যেতে পারে। তাই সিজদার সময় কপাল উন্মুক্ত রাখা উত্তম। তবে কপাল সামান্য আবৃত থাকলেও নামাজ হয়ে যাবে।

শীত থেকে বাঁচতে নাক-মুখ ঢেকে নামাজ আদায় করা অনুচিত। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মুখ ঢেকে নামাজ আদায় করা মাকরুহ। তাই কান ও গলা আবৃত থাকলেও নাক-মুখ খোলা রাখা উচিত।

তাই শৈত্যপ্রবাহের সময় নিশ্চিন্তে কানটুপি পরা যাবে যদি টুপিটি পবিত্র (পাক-সাফ) হয়, এটি অহংকার বা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে না হয়ে কেবল শীত নিবারণের জন্য হয় এবং সিজদার সময় কপাল মাটিতে স্থাপনে কোনো বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত