Ajker Patrika

কখন কাকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে

ইসলাম ডেস্ক
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৪: ৪৬
কখন কাকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে

হজ করা ফরজ হওয়া সত্ত্বেও শরিয়ত নির্দিষ্ট কারণে অপারগ হলে অন্য কাউকে পাঠিয়ে যে হজ আদায় করা হয়, তা ইসলামের পরিভাষায় বদলি হজ নামে পরিচিত। বদলি হজ শর্তসাপেক্ষে বৈধ। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধি-নিষেধও রয়েছে। এখানে এ সংক্রান্ত ১০টি জরুরি মাসায়েল তুলে ধরা হলো। 

১. বদলি হজ কখন করাবেন
ধরুন, হজ ফরজ ছিল কিন্তু শারীরিকভাবে সমর্থ থাকতে হজ করেননি। এখন শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন, এখন আপনার পক্ষ থেকে অন্য কাউকে হজ করতে পাঠানো আপনার জন্য ফরজ। তা করতে না পারলে মৃত্যুর সময় বদলি হজের অসিয়ত করে যাওয়া আবশ্যক। এক নারী মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমার বাবার হজ ফরজ হয়েছে, কিন্তু বুড়ো হয়ে যাওয়ায় তিনি স্থির হয়ে বসতেই পারেন না, এখন আমি তাঁর পক্ষে হজ করতে পারব?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ (বুখারি ও মুসলিম) 

২. কখন অক্ষম বিবেচিত হবেন
চার কারণে আপনি হজ করতে অক্ষম বলে বিবেচিত হবেন। তখন আপনার পক্ষে অন্য কাউকে হজ করতে পাঠাতে পারবেন। এক. বেশি অসুস্থ কিংবা বুড়ো হয়ে গেলে, নিজের শক্তিতে বাহনে ওঠার সক্ষমতা হারিয়ে ফেললে এবং তা থেকে মুক্তির কোনো সম্ভাবনাই না থাকলে। দুই. জোর করে কেউ আপনাকে আটকে রাখলে এবং হজ করতে না দিলে। তিন. যাওয়ার পথ অনিরাপদ হলে। চার. নারীর ক্ষেত্রে হজে যাওয়ার জন্য মাহরাম পুরুষ সঙ্গে না পেলে। (মানাসিক লি-মোল্লা আলি কারি) 

তবে শেষোক্ত তিন কারণের ক্ষেত্রে শর্ত হলো—এসব বাধা মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়ী হতে হবে। কারণ, এসব সমস্যা মৃত্যুর আগে সমাধা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং আপনি যদি এই তিন কারণে বদলি হজ করিয়ে ফেলেন এবং পরে সেই বাধা দূর হয়, তাহলে আপনার বদলি হজটি নফল হয়ে যাবে এবং আবার হজ করতে হবে। (আল বাহরুর রায়েক, রদ্দুল মুহতার) 

 ৩. মৃত্যুর আগে অসিয়ত না করলে
আপনার জন্য হজ ফরজ ছিল, কিন্তু আদায় করেননি। বদলি হজ করার জন্য অসিয়তও করেননি। এখন আপনার মৃত্যুর পর যদি ওয়ারিশেরা আপনার পক্ষে বদলি হজ করে, তবে তা আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে কি না নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে তা আপনার পক্ষ থেকে কবুল হওয়ার আশা করা যায়। ওপরে বর্ণিত হাদিসে থেকে বিষয়টি আঁচ করা যায়।

তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো—ওয়ারিশদের সবার স্বতঃস্ফূর্ত অনুমোদন লাগবে এবং কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকলে তার ভাগের সম্পদ থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না। (আদ্দুররুল মুখতার) 

 ৪. বদলি হজের খরচ কে বহন করবে
যার পক্ষ থেকে হজ করা হবে, তাঁকেই খরচ বহন করতে হবে। অসিয়ত করে গেলে প্রথমে তাঁর রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ আদায় করতে হবে। এরপর অসিয়তের বিধান অনুযায়ী বাকি সম্পদ তিন ভাগ করতে হবে। এর মধ্যে এক ভাগ থেকে অসিয়তের অংশ নিতে হবে। হজের অসিয়ত করে গেলে সেই খরচও এই অংশ থেকে নিতে হবে। আলি (রা.) অশীতিপর বৃদ্ধ সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি তাঁর পক্ষ থেকে খরচ দিয়ে কাউকে হজ করাবেন।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা) 

 ৫. বদলি হজের জন্য মজুরি নেওয়া
বদলি হজের জন্য মজুরি নেওয়া নাজায়েজ। কারণ ইবাদতের বিনিময়ে কোনো মজুরি নেওয়া যায় না। কেউ দিলে এবং নিলে দুজনেই গুনাহগার হবেন। হজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের বাইরে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। অবশ্য মজুরি নিয়ে হজে গেলে হজ আদায় হয়ে যাবে। (আল-বাহরুল আমিক) 

অবশ্য যার হয়ে বদলি হজ করা হচ্ছে তিনি অধিকাংশ খরচ দিলে এবং বদলি হজকারী কিছু নিজের পকেট থেকে খরচ করলেও অসুবিধা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে বদলি হজকারী খরচের পুরোটা বহন করলে বদলি হজ আদায় হবে না। (সুনানে বায়হাকি) 

 ৬. খরচের টাকা বদলি হজকারীকে হাদিয়া দিলে
টাকা-পয়সার হিসাবের ঝামেলা এড়ানোর জন্য হজে পাঠানো ব্যক্তি যদি বদলি হজকারীকে বলেন—আপনাকে পুরো টাকা হাদিয়া হিসেবে দিলাম, তাহলে এই টাকা দিয়ে বদলি হজ আদায় হবে না। কারণ হাদিয়া দেওয়ার কারণে বদলি হজকারী ওই টাকার মালিক হয়ে যান। আর তাঁর টাকা দিয়ে বদলি হজ সহিহ হবে না। তাই প্রেরকের মালিকানায় রেখেই তাঁকে হজে পাঠাতে হবে। আর টাকা-পয়সার ঝামেলা এড়াতে বড়জোর বলা যেতে পারে—কিছু টাকা বাকি থেকে গেলে ফেরত দিতে হবে না। (যুবদাতুল মানাসিক) 

 ৭. বদলি হজকারী নিজ দেশের হতে হবে
যিনি বদলি হজ করবেন, তিনি প্রেরকের নিজ দেশের বাসিন্দা হতে হবে। অন্য দেশে অবস্থানকারী কাউকে বদলি হজের জন্য পাঠালে হজ আদায় হবে না। (গুনইয়াতুন নাসিক) 

তবে মৃতের অসিয়ত না থাকলে বা অসিয়ত আছে কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে নিজ দেশ থেকে হজে পাঠানোর মতো খরচ জোগাড় না হয়, তাহলে যে দেশের বাসিন্দাকে দিয়ে হজ করা সহজ হয়, সেই দেশ থেকে কাউকে নিয়োগ করতে পারবেন। (আল-বাহরুল আমিক) 

 ৮. নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে অসিয়ত করলে
বদলি হজ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম বলে গেলে এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে না পাঠানোর অসিয়ত করলে সেই ব্যক্তিকে দিয়েই হজ করাতে হবে। তবে অন্য কাউকে পাঠানো যাবে না—এমনটি না বললেও যার নাম বলা হয়েছে, তাঁকে পাঠানোই উত্তম। তাঁকে পাঠানো সম্ভব না হলে অন্য কাউকে পাঠাতে হবে। অবশ্য প্রথম ব্যক্তি রাজি থাকা সত্ত্বেও অন্য কাউকে পাঠালেও হজ আদায় হয়ে যাবে। (আল বাহরুল আমিক) 

 ৯. বদলি হজে কেমন ব্যক্তি পাঠানো উচিত
হজ করেছেন এমন নেককার ব্যক্তিকেই বদলি হজের জন্য পাঠানো উচিত। হজ করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানোও বৈধ। তবে হজ ফরজই হয়নি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহে তানজিহি। আর হজ ফরজ হয়েও আদায় করেননি এমন ব্যক্তিকে পাঠানো মাকরুহ তাহরিমি তথা নাজায়েজ। তবে এমন কাউকে পাঠালেও হজ আদায় হয়ে যাবে। (আবু দাউদ) 

 ১০. মানত হজের বদলি করা
হজ করার মানত করেছেন, কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার কারণে যেতে পারছেন না, তাঁর জন্যও বদলি হজ করানো যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, জুহাইনা গোত্রের এক নারী রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘আমার মা হজের মানত করেছিলেন। কিন্তু হজ আদায় করার আগেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে হজ করতে পারব?’ রাসুল (সা.) জবাবে বললেন, ‘তুমি তাঁর পক্ষ থেকে হজ করো। যদি তোমার মায়ের কোনো অনাদায়ি ঋণ থাকত, তাহলে তুমি কি তা পরিশোধ করতে না? আল্লাহর ঋণও আদায় করো। আল্লাহর ঋণ আরও বেশি আদায়যোগ্য।’ (বুখারি)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জন্ম যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি তার মৃত্যুও পৃথিবীর এক অমোঘ সত্য। জীবনে চলার পথে যত সাফল্য, ব্যস্ততা বা আকাঙ্ক্ষা থাকুক; মৃত্যুর মুহূর্তে সবকিছু থেমে যায়। ইসলাম এই বাস্তবতাকে অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরেছে এবং আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে প্রতিটি প্রাণী একদিন তার প্রভুর কাছে ফিরে যাবে।

মৃত্যু অবধারিত ‎সত্য। তা থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। কোনো বস্তু জীবনের অস্তিত্ব লাভ করলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

কেউ যখন মারা যায়, তার মৃত্যুর খবর শুনলে একটি দোয়া পড়তে হয়, দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে।

দোয়াটি হলো: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’

দোয়ার অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত