Ajker Patrika

আধুনিক আরবি ক্যালিগ্রাফির পথিকৃৎ এল সাইদ

এল সাইদ একালের সবচেয়ে প্রভাবশালী আরবি ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের একজন। আরবি ক্যালিগ্রাফির প্রথাগত ধারা ভেঙে মুক্ত হস্তশৈলীকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় করতে বড় অবদান রাখছেন। তাঁর অনন্য শিল্পকর্মগুলো বিশ্বের সামনে আরবি ভাষাকে মানবিকতার ভাষ্যকার রূপে প্রতিষ্ঠিত করছে। ভাষিক গণ্ডির খোলস ছেড়ে আরবি অক্ষর বিশ্বজনীন হয়ে উঠছে তাঁরই জাদুকরি ছোঁয়ায়। তাঁর কাজের চুম্বকাংশ তুলে ধরেছেন ইজাজুল হক।

ইজাজুল হক
এল সাইদ। ছবি: সংগৃহীত
এল সাইদ। ছবি: সংগৃহীত

বেড়ে ওঠা

এল সাইদের জন্ম প্যারিসে, ১৯৮১ সালে। মা-বাবা দুজনই আরব তিউনিশিয়ান। ছোটকাল থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি ঝোঁক ছিল। ফরাসি মাধ্যমে পড়াশোনা করেন এবং প্যারিসের বিভিন্ন আর্ট স্কুলে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। পারিবারিক পরিবেশে তিউনিশিয়ান আঞ্চলিক আরবিতে কথা বলা শিখলেও ১৮ বছর পর্যন্ত প্রমিত আরবির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। পরে নিজের শিকড় খুঁজতে গিয়ে আরবি ক্যালিগ্রাফির দিকে ঝোঁকেন। প্রাথমিক সময়ে প্রথাগত ক্যালিগ্রাফি চর্চা করলেও পরে নিজেকে সেই বেষ্টনীতে আটকে রাখতে পারেননি। শুরু করেন প্রথা ভাঙার কাজ।

প্রথাভাঙা শৈলীর যাত্রা

আরবি ক্যালিগ্রাফির প্রথাগত ধারায় যেসব শৈলী চর্চিত হয়, সেগুলোর কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে। ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই কোরআন লিপিবদ্ধ করাকে কেন্দ্র করে আরবি অক্ষরশিল্প বিকশিত হতে থাকে। বিগত ১৪০০ বছর ধরে আরব বিশ্বে অনেক খত্ব বা অক্ষরশৈলী তৈরি হয়েছে। এসব খত্বে ক্যালিগ্রাফি চর্চাকারী শিল্পীর সংখ্যাও বিপুল। তবে আধুনিক শিল্পকলা সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এল সাইদ দীর্ঘ চর্চার মধ্য দিয়ে সেই ধরাবাঁধা নিয়ম ভেঙে নতুন শৈলী গড়ে তোলেন, যা বিশ্বজুড়ে মুক্ত হস্তশৈলী নামে পরিচিত। এতে কোনো নিয়মকানুন নেই, যে অক্ষরটি যেভাবে করলে শিল্পীর মন সন্তুষ্ট হয়, সেভাবেই শিল্পী সাজাতে পারেন। এই ধারা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।

তাঁর শিল্পকর্মের ধরন

এল সাইদ ক্যালিগ্রাফিকে আর্টবোর্ড ও ক্যানভাস থেকে মুক্ত পরিসরে নিয়ে গেছেন। আরবি অক্ষরকে মুক্তভাবে বিশ্বমননের কাছে নিয়ে যাওয়াই তাঁর লক্ষ্যে পরিণত হয়। ফলে প্রথম প্রথম বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরবি অক্ষরের গ্রাফিতি করতে শুরু করেন। পরে তা ম্যুরাল ও ভাস্কর্যেও গড়ায়। এখন এল সাইদ একজন চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের নিবেদিত শিল্পী। তিনি আরবি অক্ষরকে ক্যালিগ্রাফির ঐতিহ্যগত ধারার অনুপ্রেরণা নিয়ে আধুনিক শিল্পকলার মধ্য দিয়ে বিকশিত করে যাচ্ছেন। স্থান নির্বাচন, রং ও কম্পোজিশনের নান্দনিকতায় এল সাইদ নিজেই নিজের উদাহরণ। এ ছাড়া তাঁর প্রতিটি শিল্পকর্ম ঐক্য, শান্তি, সহাবস্থান ও স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো বার্তা দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরবি ভাষাকে মানবিকতার আহ্বানে উচ্চকিত করছে এসব কাজ।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাণকেন্দ্র দুবাই অপেরায় ক্যালিগ্রাফিক ম্যুরাল ‘ডিক্লারেশন’। ছবি: সংগৃহীত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাণকেন্দ্র দুবাই অপেরায় ক্যালিগ্রাফিক ম্যুরাল ‘ডিক্লারেশন’। ছবি: সংগৃহীত

উল্লেখযোগ্য কাজ

এল সাইদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্যালিগ্রাফি, ক্যালিগ্রাফিতি, ভাস্কর্য ও ম্যুরাল তৈরি করেছেন। বড় আকারে ক্যালিগ্রাফিতি করার ধারণা তিনিই প্রথম দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি তিউনিশিয়া, কানাডা, ব্রাজিল, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে—

পারসেপশন: এটি সম্ভবত বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যালিগ্রাফিতি। মিসরের কায়রোর মানশিয়াত নাসর নামক স্থানে এটি আঁকা হয়। মূলত এটি হলো শহরের আবর্জনা সংগ্রহকারী খ্রিষ্টানদের একটি সম্প্রদায়ের বসতি। জায়গাটি ভীষণ নোংরা ও অবহেলিত। ভাঙাচোরা ভবনে ঠাসা। সেখানে আলো ফেলতেই বড় বড় ৫০টি ভবনজুড়ে আঁকেন একটি রঙিন আরবি বাণী, যা কায়রোর মোকাত্তাম পর্বতের একটি পয়েন্ট থেকে পুরোপুরি দেখা যায়। তাতে লেখা আছে, ‘যে ব্যক্তি সূর্যের আলো স্পষ্ট করে দেখতে চায়, তাকে প্রথমে নিজের চোখ মুছে নিতে হবে।’

ব্রিজ: উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মাঝে একটি নিরপেক্ষ অঞ্চল আছে, যাকে ডিএমজেড বলা হয়। সেখানে কাঁটাতারের পাশে স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে দীর্ঘ এক ক্যালিগ্রাফিক ম্যুরাল তৈরি করেছেন এল সাইদ। এক অবিভক্ত কোরিয়ান কবির কয়েকটি পঙ্‌ক্তির আরবি অনুবাদের মাধ্যমে দুই কোরিয়াকে শান্তির বার্তা দেওয়া হয়েছে।

ডিক্লারেশন: এই ক্যালিগ্রাফিক ম্যুরাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাণকেন্দ্র দুবাই অপেরার সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজার কাব্বানির একটি ভালোবাসার কবিতা রঙিন থ্রি-ডি ম্যুরালে এখানে জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়।

মিরাজ আল-উলা: সৌদি আরবে গড়ে ওঠা নতুন পর্যটনকেন্দ্র আল-উলায় তৈরি হয়েছে এই ভাস্কর্য। মরুর বালুর রঙের সঙ্গে মিল রেকে প্যাঁচানো আরবি শব্দের বুননে গোল করে তৈরি এই শিল্পকর্ম আল-উলার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। আরব পুরাণের একটি প্রেমের পঙ্‌ক্তি দিয়ে এটি সাজানো হয়।

মিসরের কায়রোর মানশিয়াত নাসরে ৫০টি ভবনজুড়ে আঁকা ক্যালিগ্রাফিতি ‘পারসেপশন’। ছবি: সংগৃহীত
মিসরের কায়রোর মানশিয়াত নাসরে ৫০টি ভবনজুড়ে আঁকা ক্যালিগ্রাফিতি ‘পারসেপশন’। ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়া এল সাইদের ক্যালিগ্রাফি নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, ভার্জিনিয়ার ক্রাইসলার মিউজিয়াম অব আর্ট, ল্যুভর মিউজিয়াম আবুধাবিসহ বিশ্বখ্যাত বহু শিল্প জাদুঘরের সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে।

স্বীকৃতি ও সম্মাননা

২০১৩ সালে এল সাইদ দুবাইয়ের রাজপরিবারের আমন্ত্রণে দুবাই চলে আসেন এবং সেখানকার একাধিক প্রজেক্টে যুক্ত হন। পরে তিনি দুবাইয়ে নিজের অফিস ও স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করে কার্যক্রম চালাতে শুরু করেন এবং সেখানেই থিতু হন। ২০১৫ সালে তিনি মার্কিন প্রভাবশালী মিডিয়া টিইডির ফেলো ও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর মনোনীত হন। কায়রোতে করা ক্যালিগ্রাফিতি ‘পারসেপশন’-এর জন্য তিনি অসংখ্য স্বীকৃতি লাভ করেন। বিশেষ করে ২০১৬ সালে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন কর্তৃক বৈশ্বিক চিন্তাবিদ স্বীকৃতি পান, ২০১৭ সালে ইউনেসকো শারজাহ প্রাইস ফর আরব কালচার এবং ২০১৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর পাবলিক আর্ট লাভ করেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তরুণ বিশ্বনেতাদের একজন মনোনীত হন। এ ছাড়া বিশ্বের বহু আর্ট প্ল্যাটফর্মে তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জন্ম যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি তার মৃত্যুও পৃথিবীর এক অমোঘ সত্য। জীবনে চলার পথে যত সাফল্য, ব্যস্ততা বা আকাঙ্ক্ষা থাকুক; মৃত্যুর মুহূর্তে সবকিছু থেমে যায়। ইসলাম এই বাস্তবতাকে অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরেছে এবং আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে প্রতিটি প্রাণী একদিন তার প্রভুর কাছে ফিরে যাবে।

মৃত্যু অবধারিত ‎সত্য। তা থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। কোনো বস্তু জীবনের অস্তিত্ব লাভ করলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

কেউ যখন মারা যায়, তার মৃত্যুর খবর শুনলে একটি দোয়া পড়তে হয়, দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে।

দোয়াটি হলো: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’

দোয়ার অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতকালে কখন তায়াম্মুম করা যাবে, কখন যাবে না

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৮
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইসলামি শরিয়তে পানি না থাকলে অথবা পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে অজু ও গোসলের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যদি পীড়িত হও বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ শৌচালয় থেকে আসে বা তোমরা স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হও এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে; অর্থাৎ তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিতে চান না; তিনি শুধু তোমাদের পবিত্র করতে এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।’ (সুরা মায়িদা: ৬)

পবিত্র কোরআনের এই আয়াত এবং সংশ্লিষ্ট হাদিসগুলোর আলোকে ফকিহরা শীতকালে তায়াম্মুমের বিধান সম্পর্কে যে সমাধান দিয়েছেন, তার সারমর্ম নিচে তুলে ধরা হলো:

তায়াম্মুম কখন বৈধ?

যদি প্রচণ্ড ঠান্ডায় পানি ব্যবহার করলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে অথবা শরীরের কোনো অঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তবে তায়াম্মুম করা যাবে। অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে পানি ব্যবহারে রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বা সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগার অকাট্য প্রমাণ বা প্রবল ধারণা থাকলে তায়াম্মুম বৈধ।

তায়াম্মুম কখন বৈধ নয়?

ক্ষতি হওয়ার নিশ্চিত বা প্রবল আশঙ্কা না থেকে কেবল সাধারণ ঠান্ডার ভয় বা অলসতাবশত তায়াম্মুম করা জায়েজ নয়। (আল বাহরুর রায়েক: ১/১৪৮, ফাতাওয়া কাজিখান: ১/৫৮)

প্রতিকূলতায় অজুর সওয়াব

আমাদের দেশে সাধারণত যে মাত্রার শীত পড়ে, তাতে পানি ব্যবহার করলে মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি খুব একটা থাকে না। সামান্য কষ্ট হলেও তা সহ্য করে অজু করা ইমানি দৃঢ়তার পরিচয়। এই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা দ্বিগুণ সওয়াব দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রচণ্ড ঠান্ডার মৌসুমে যে ব্যক্তি পূর্ণরূপে অজু করবে, তাকে দ্বিগুণ সওয়াব দেওয়া হবে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ)

অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিকূল পরিবেশে পূর্ণরূপে অজু করাকে পাপ মোচন এবং মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম আমল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (জামে তিরমিজি)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত