Ajker Patrika

প্রাচীনতম আধুনিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মুসতানসিরিয়া

কাউসার লাবীব
প্রাচীনতম আধুনিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মুসতানসিরিয়া

বাগদাদের দজলা নদীর তীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক অনন্য কীর্তি—মুসতানসিরিয়া। আব্বাসীয় খলিফা আল-মুসতানসির বিল্লাহর অমর স্মৃতি বহনকারী এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু একটি পুরোনো স্থাপনা নয়, বরং এটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও শ্রেষ্ঠ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আব্বাসীয় খিলাফতের শেষ সময়ে জ্ঞান ও সভ্যতার যে অসাধারণ নিদর্শনগুলো গড়ে উঠেছিল, তার মধ্যে এই মুসতানসিরিয়া আজও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে।

আল-মুসতানসির বিল্লাহ ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ ও দূরদর্শী শাসক। তিনি তাঁর পিতা আল-জাজিরের মতোই রাষ্ট্রীয় জীবনের দুর্নীতি ও অন্যায় দূর করে জনগণের কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট ছিলেন। ১৭ বছর ধরে শাসনকার্য পরিচালনা করার সময় তিনি অসংখ্য জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। সেতু, সরাইখানা, অতিথিশালা—এমন সব জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি তিনি শিক্ষার প্রসারেও মনোযোগী হন। তাঁর সেই দূরদর্শী চিন্তা থেকেই মুসতানসিরিয়ার মতো এক মহাকীর্তির জন্ম হয়।

প্রতিষ্ঠা ও জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধন

৬২৫ হিজরি (১২২৭ খ্রি.) সালে খলিফা আল-মুসতানসির বাগদাদের দজলা নদীর পাশে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির নির্মাণকাজ শুরু করেন। খিলাফতের তৎকালীন প্রধান স্থপতি মুহাম্মদ ইবনুল আলকামি এর নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধান করেন। এর নির্মাণব্যয় ছিল প্রায় ৭ লাখ দিনার। ৬৩১ হিজরি (১২৩৩ খ্রি.) সালে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়। সেদিন এক হাজার ছাগল জবাই করা হয়েছিল এবং নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার দিয়ে বিশাল ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। পুরো বাগদাদ শহরে সেই খাবার বিতরণ করা হয়েছিল।

জ্ঞানচর্চার এক সমন্বিত কেন্দ্র

মুসতানসিরিয়া শুধু একটি মাদ্রাসা ছিল না, বরং এটি ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে কোরআন, হাদিস, ফিকহ (আইন), চিকিৎসাবিজ্ঞান, গণিতসহ বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হতো। মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম এখানে চারটি প্রধান ফিকহ (হানাফি, শাফেয়ি, মালিকি ও হাম্বলি) একসঙ্গে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া এখানে কোরআন ও হাদিস গবেষণার জন্য আলাদা দুটি ভবন ছিল। এই সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা তৎকালীন জ্ঞানচর্চাকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে মুসতানসিরিয়ার অনুসরণে মিসর ও বাগদাদে আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, যেখানে ফিকহের চারটি মাজহাবই পড়ানো হতো।

অতুলনীয় শিক্ষাব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা

মুসতানসিরিয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ই ছিলেন খুবই উচ্চমানের। তৎকালীন শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ ও আলেমদের এখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি মাজহাবের জন্য একজন করে শিক্ষক এবং চারজন করে সহযোগী শিক্ষক বা ‘মুইদ’ ছিলেন। ছাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রেও মেধার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হতো।

শিক্ষার প্রসারে মুসতানসিরিয়া যেন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছিল। এখানে ৮০ হাজার বইয়ের বিশাল একটি গ্রন্থাগার ছিল, যা শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও জ্ঞানার্জনের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। শুধু তা-ই নয়, এখানে একটি হাসপাতালও ছিল, যেখানে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে চিকিৎসাবিজ্ঞান শিখতে পারত। শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রা যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সে জন্য খলিফা এর জন্য বিশাল সম্পত্তি ওয়াক্‌ফ করে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জন্য নিয়মিত বেতন, খাবার, বাসস্থান এবং পড়াশোনার সব উপকরণ যেমন কালি, কাগজ, কলম ইত্যাদি সরবরাহ করা হতো। এমনকি গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা পানি এবং শীতকালে গরম পানির ব্যবস্থা ছিল।

কালের আবর্তনে মুসতানসিরিয়ার নীরবতা

মুসতানসিরিয়া প্রায় চার শতাব্দী ধরে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ছিল। যদিও মাঝে মাঝে এর কার্যক্রমে ছেদ পড়েছিল। ১২৫৮ সালে মোগলদের আক্রমণে বাগদাদ ধ্বংস হলে এর স্বাভাবিক কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তৈমুর লংয়ের আক্রমণে এটি আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর মহামূল্যবান গ্রন্থাগারটি হারিয়ে যায়। এরপর প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এটি বন্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে এটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। কখনো যাত্রীদের সরাইখানা, কখনো সামরিক বাহিনীর ব্যারাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অবহেলা ও অযত্নে এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।

অবশেষে ১৯৪০ সালে ইরাকের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে পুনরুদ্ধার করে এবং সংস্কারের পর এটিকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। মুসতানসিরিয়া আজও তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যা আব্বাসীয় সভ্যতার জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মানবিকতার এক অনন্য নিদর্শন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ১০ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৯ মিনিট
ফজর০৫: ২০ মিনিট০৬: ৩৯ মিনিট
জোহর১২: ০২ মিনিট০৩: ৪৫ মিনিট
আসর০৩: ৪৬ মিনিট০৫: ২১ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৩ মিনিট০৬: ৪২ মিনিট
এশা০৬: ৪৩ মিনিট০৫: ১৯ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত