Ajker Patrika

ইসলামে জুয়া কেন হারাম

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
ইসলামে জুয়া কেন হারাম

জুয়া সমাজবিধ্বংসী এক নেশা। ইসলামে জুয়া হারাম করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইনেও এ কাজ নিষিদ্ধ। তবুও সমাজে জুয়ার সঙ্গে জড়িত মানুষের অভাব নেই। প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে জুয়ার নতুন নতুন ধরন সৃষ্টি হচ্ছে। এ লেখায় ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়ার পরিচয়, বিধান, হারাম হওয়ার কারণ ও আধুনিক কালের জুয়ার ধরন তুলে ধরেছেন মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ

জুয়ার পরিচয়
জুয়া এমন এক খেলা, যা লাভ-লোকসানের মধ্যে ঝুলন্ত থাকে। জুয়া খেলায় মূলত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা বস্তু (যা পুরস্কার হিসেবে ধার্য করা হয়) নির্ধারণ করা হয়। এরপর কোনো একটি বিষয়ে দুই পক্ষ চুক্তি করে হার-জিত নির্ধারণ করে। যে পক্ষ হেরে যায়, সে পক্ষ অপর পক্ষকে পূর্বনির্ধারিত অর্থ বা বস্তু প্রদান করে। জুয়া খেলায় তিনটি উপাদান থাকা প্রয়োজন—বিবেচনা (বাজির পরিমাণ), ঝুঁকি (সুযোগ) ও পুরস্কার।

জুয়ার আরবি প্রতিশব্দ মাইসির ও কিমার। মাইসির মানে সহজলভ্যতা। জুয়ার মাধ্যমে খুব সহজে অন্যের সম্পদ গ্রাস করা যায় বলে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। কিমার মানে হার-জিতের খেলা, বাজি ধরা, ঝুঁকি নেওয়া। কিমার মূলত কমর ধাতু থেকে উদগত, যার অর্থ চাঁদ। জুয়া খেলায় সম্পদ চাঁদের মতো বাড়ে-কমে বলে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে। (আল বাহরুর রায়েক)

ইসলামে এমন প্রতিটি বিষয়কে জুয়া বলা হয়, যার ফলাফল হয়তো লাভ নয়তো ক্ষতি। (জাওয়াহিরুল ফিকহ) অর্থাৎ প্রতিটি এমন প্রতিযোগিতা বা খেলা, যেখানে ফলাফল নিজের পক্ষে এলে অংশগ্রহণকারী লাভবান হবে, আর বিপক্ষে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা জুয়া হবে। যদি এমন হয় যে ফলাফল নিজের পক্ষে এলে লাভবান হবে, কিন্তু বিপক্ষে গেলে কোনো ক্ষতি হবে না, সেটা জুয়া নয়। (আল কিমার ওয়া সোয়ারুহুল মুহাররামাহ) 

জুয়ার শরিয়া বিধান
ইসলামে জুয়া এবং তা থেকে অর্জিত টাকাপয়সা সম্পূর্ণরূপে হারাম। পবিত্র কোরআনে একে শয়তানি কাজ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি ও জুয়ার তিরসমূহ অপবিত্র, শয়তানি কাজ। সুতরাং এসব পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা মায়িদা: ৯০)

জুয়ায় অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করা হয়, যা সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না।’ (সুরা নিসা: ২৯)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি কাউকে বলে, এসো জুয়া খেলি, তখন তার ওপর সদকা করা আবশ্যক।’ (বুখারি) শুধু খেলার আমন্ত্রণ জানালেই যেখানে কাফফারা দিতে হচ্ছে, সেখানে খেললে কী পরিমাণ গুনাহ হবে, তা সহজেই অনুমেয়। 

জুয়া কেন হারাম
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা জুয়া হারাম হওয়ার দুটি হিকমত উল্লেখ করেছেন। এক. জুয়া মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি করে। দুই. আল্লাহর জিকির ও নামাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শয়তান তো মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজ বপন করতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর জিকির ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে চায়। সুতরাং তোমরা কি এসব থেকে নিবৃত্ত হবে?’ (সুরা মায়িদা: ৯১)

এ ছাড়া আলিমগণ জুয়া হারাম হওয়ার পেছনে আরও কিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন। যেমন—

  • রাষ্ট্রীয় সম্পদের যে অংশ জুয়াড়িদের হাতে থাকে, তা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করা হয় না বলে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
  • জুয়ায় আসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অলসতা, কর্মে অনীহা ইত্যাদি জঘন্য রোগ বাসা বাঁধে, যা উৎপাদনের জন্য চরম হুমকি।
  • জুয়ার কারণে অনেকে নিমেষেই সর্বহারা হয়ে যায়। এতে তারা অনন্যোপায় হয়ে চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি সমাজবিধ্বংসী অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। অনেকে আত্মহত্যা করে বসে।
  • জুয়ায় আসক্ত ব্যক্তি মাদকসেবন, ব্যভিচারসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।

একালে জুয়ার ধরন

ক্যাসিনো: ক্যাসিনো হলো আধুনিক কালে বিভিন্ন ধরনের জুয়ার একটি নির্দিষ্ট স্থান, যাকে বাংলায় জুয়ার আসর বলা যায়। তবে সেটা হয় বিশাল পরিসরে। সাধারণত ক্যাসিনো এমনভাবে বানানো হয়, যেখানে পাশাপাশি হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, আনন্দভ্রমণ জাহাজ এবং অন্যান্য পর্যটন আকর্ষণ থাকে। কিছু কিছু ক্যাসিনোয় সরাসরি বিনোদন দেওয়া হয়। যেমন স্ট্যান্ডআপ কমেডি, কনসার্ট, খেলাধুলা ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকে। খরিদ্দারেরা ক্যাসিনো গেমস দ্বারা জুয়া খেলে থাকে। স্লট মেশিন বা ভিডিও লটারি মেশিন ক্যাসিনোর জনপ্রিয় জুয়া খেলা। 

লটারি: কোনো কোম্পানি বা ব্যক্তি মোটা অঙ্কের পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে ব্যাপক আকারে নির্ধারিত মূল্যে কুপন বিক্রি করে। এরপর কুপন বিক্রির টাকা দিয়ে লটারির মাধ্যমে কয়েকজনকে নগদ টাকা কিংবা মূল্যবান সামগ্রী প্রদান করে। বাকিরা কিছুই পায় না। গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন উৎসবের সময় ছোট পরিসরে এভাবে লটারির নামে জুয়া খেলা চলে। 

বাজি ধরা: ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলার ফলাফলের ওপর অনলাইনে-অফলাইনে বাজি ধরা হয়। এমনকি নির্দিষ্ট খেলোয়াড় গোল করবে কি না, কত রান করবে, কত উইকেট পাবে—এসব নিয়েও জুয়াড়িরা বাজি ধরে। 

জুয়ার অ্যাপস: আজকাল কিছু অ্যাপস বের হয়েছে, যেখানে নির্দিষ্ট টাকা বিনিয়োগ করে জুয়া খেলা যায়।

কিছু অ্যাপে কেবল স্পিন করে খেলা যায়, আর কিছু অ্যাপে লুডু, ঘর মেলানো ইত্যাদি বিভিন্ন গেম খেলে জুয়া খেলা হয়। 

ইসলামের মূলনীতি অনুসারে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় স্পষ্ট জুয়া ও হারাম। (আল কিমার ওয়া সোয়ারুহুল মুহাররামাহ) 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জন্ম যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি তার মৃত্যুও পৃথিবীর এক অমোঘ সত্য। জীবনে চলার পথে যত সাফল্য, ব্যস্ততা বা আকাঙ্ক্ষা থাকুক; মৃত্যুর মুহূর্তে সবকিছু থেমে যায়। ইসলাম এই বাস্তবতাকে অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরেছে এবং আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে প্রতিটি প্রাণী একদিন তার প্রভুর কাছে ফিরে যাবে।

মৃত্যু অবধারিত ‎সত্য। তা থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। কোনো বস্তু জীবনের অস্তিত্ব লাভ করলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

কেউ যখন মারা যায়, তার মৃত্যুর খবর শুনলে একটি দোয়া পড়তে হয়, দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে।

দোয়াটি হলো: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’

দোয়ার অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত