Ajker Patrika

প্রতিবন্ধীদের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
প্রতিবন্ধীদের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন, ‘আমি মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য মিলিত শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি। (সুরা দাহর: ২) এ পরীক্ষারই অংশ হিসেবে কিছু মানুষকে তিনি শারীরিক বিভিন্ন নেয়ামত থেকে বঞ্চিত রেখেছেন—যাদের আমরা শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে শনাক্ত করি।

তবে শারীরিকভাবে কিছুটা অক্ষম হলেও ইসলামে এ শ্রেণির মানুষকে অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্য করার কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম প্রতিবন্ধীদের সব মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করার কথা বলে এবং তাঁদের অক্ষমতা অনুসারে বিধিবিধানে ছাড় দেয়। এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হলো—

স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার
সমাজে প্রতিবন্ধীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলে ইসলাম। তাফসিরকার জাহহাক (রহ.) বলেন, নবীজির মদিনা আগমনের আগে মদিনার লোকজন খাবারের অনুষ্ঠানে অন্ধ, খোঁড়া ও রোগীদের সঙ্গে বসে খাবার খেত না। এ ব্যাপারে কিছু মানুষের যুক্তি ছিল, এ শ্রেণির মানুষের শরীরে ময়লা-আবর্জনা থাকে, তাই তাদের সঙ্গে খাবার খাওয়া যাবে না। কেউ মনে করত, অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ ব্যক্তির মতো পূর্ণভাবে খাবার খেতে পারে না, খোঁড়া লোক খাওয়া-দাওয়ার সময়ের ভিড় সহ্য করতে পারে না, আর অন্ধ ব্যক্তি ভালো খাবার দেখতে পায় না, তাই তাদের সঙ্গে বসে খাবার খেলে খাবারের পরিমাণে তারতম্য হয়ে তাদের প্রতি জুলুম হতে পারে। উদ্দেশ্য যেটাই হোক, এতে প্রতিবন্ধীরা মানসিকভাবে খুব কষ্ট পেত। তাই তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। 

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছে, ‘অন্ধের দোষ নেই, খোঁড়ার দোষ নেই, রোগীর দোষ নেই এবং তোমাদের নিজেদেরও দোষ নেই এ ব্যাপারে যে, তোমরা আহার করবে তোমাদের ঘরে, তোমাদের বাবাদের ঘরে, তোমাদের মায়েদের ঘরে, তোমাদের ভাইদের ঘরে, তোমাদের বোনদের ঘরে, তোমাদের চাচাদের ঘরে, তোমাদের ফুফুদের ঘরে, তোমাদের মামাদের ঘরে, তোমাদের খালাদের ঘরে বা এমন কোনো ঘরে যার চাবি তোমাদের হাতে রয়েছে বা তোমাদের বন্ধুদের ঘরে।’ (সুরা নুর: ৬১; তাফসিরে তাবারি) 

প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব নেওয়া ফরজে কেফায়া
মুসলিম সমাজব্যবস্থায় প্রতিবন্ধীর দায়িত্ব নেওয়া ফরজে কেফায়া। রাষ্ট্র যদি এই দায়িত্ব পালন না করে এবং কোনো নাগরিকই তাদের সেবায় এগিয়ে না আসে, তাহলে সমাজের প্রতিটি মুসলমান গুনাহগার হবে। মহানবী (সা.) প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর মুসলিম খলিফারাও প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে তাঁর পথ অনুসরণ করেন। তাঁরা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবন্ধীদের শারীরিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক সব ধরনের প্রয়োজন পূরণ করেছেন।

খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) সব প্রদেশে ফরমান জারি করে সব অন্ধ, অক্ষম, প্লেগ রোগী ও এমন অঙ্গবৈকল্য, যা তাকে সালাতে যেতে বাধা দেয়, তাদের পরিসংখ্যান তৈরির আদেশ দেন। ফলে তারা এসব লোকের তালিকা করে খলিফার কাছে পেশ করলে তিনি প্রত্যেক অন্ধের জন্য একজন সাহায্যকারী নিয়োগ করেন, আর প্রতি দুজন প্রতিবন্ধীর জন্য একজন খাদেম নিযুক্ত করেন, যে তাদের দেখাশোনা ও সেবা করবে। 

উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ ইবন আবদুল মালিকও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করেছেন। তিনি সর্বপ্রথম প্রতিবন্ধীদের দেখাশোনার জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। ৮৮ হিজরি মোতাবেক ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এসব শিক্ষাকেন্দ্রে চিকিৎসক ও সেবক নিয়োগ করেন। প্রতিবন্ধীদের নিয়মিত ভাতা প্রদান করেন। সব অক্ষম, পঙ্গু ও অন্ধের জন্য খাদেম নিযুক্ত করেন। 

ড. আবদুল্লাহ নাসেহ ‘উলওয়ান তাকাফুল ইজতিমায়ি ফিল ইসলাম’ বইয়ে বলেন, প্রতিবন্ধীরা রাষ্ট্র, সমাজ ও ধনীদের থেকে সাহায্য-সহযোগিতা, ভালোবাসা ও অনুগ্রহ পাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ দয়ালুদের ওপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা জমিনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো, তাহলে যিনি আকাশে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে, আল্লাহও তার সঙ্গে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহও তার সঙ্গে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯২৪) 

অবজ্ঞা করা যাবে না
প্রতিবন্ধীদের কোনোভাবেই অবজ্ঞা করা যাবে না। তাদের অবস্থানকে ছোট করা বা কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করা ইসলামে নিন্দনীয়। প্রতিবন্ধীর প্রতি সামান্য অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণের কারণে মহানবী (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা কঠোর কথা বলেছেন। হাদিসে এসেছে, একদিন রাসুল (সা.) কুরাইশের এক নেতৃস্থানীয় লোকের সঙ্গে কথা বলছিলেন এবং তার ইসলাম গ্রহণের আশা করছিলেন। তখন সেখানে অন্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উম্ম মাকতুম (রা.) উপস্থিত হলেন। এসেই তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে একটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলেন এবং উত্তর জানার জন্য খুব পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। রাসুল (সা.) যেহেতু কুরাইশের লোকটির হিদায়াতের আশা করছিলেন, তাই ইবনে উম্মে মাকতুম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে লোকটার প্রতি মনোনিবেশ করলেন। 

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেন এবং মহানবী (সা.)-কে মৃদু তিরস্কার করে বলেন, ‘সে ভ্রূকুঞ্চিত করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল, কারণ তার কাছে অন্ধ লোকটি এসেছে। তোমার জানা আছে কি, সে হয়তো শুদ্ধ হতো অথবা উপদেশ গ্রহণ করত। ফলে উপদেশ তার উপকারে আসত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অগ্রাহ্য করছিল, তুমি তার প্রতি মনোযোগ দিয়েছ। অথচ সে নিজেকে না শোধরালে তোমার কোনো দায়িত্ব নেই। অন্য পক্ষে, যে তোমার কাছে আল্লাহর ভয় নিয়ে ছুটে এলো, তার প্রতি তুমি অবজ্ঞা-প্রদর্শন করলে! কিছুতেই এমন করা উচিত নয়। কোরআন তো এক উপদেশবাণী।’ (সুরা আবাসা: ১-১১) এ ঘটনার পর থেকে রাসুল (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)-কে অনেক সমীহ করতেন। 

তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও হাসি-ঠাট্টা করা যাবে না
প্রতিবন্ধীদের অসহায়ত্ব নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও হাসি-ঠাট্টা করতে নিষেধ করেছেন মহানবী (সা.)। এক হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর পায়ের নলা খুব চিকন ছিল। একদিন তিনি একটি গাছ থেকে মিসওয়াকের জন্য ডাল সংগ্রহ করছিলেন, এমন সময় দমকা বাতাস এসে তাঁকে ফেলে দিতে চাইল। তা দেখে লোকজন হেসে উঠল। রাসুল (সা.) তাদের হাসির কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, ‘ওর চিকন নলা দেখে হাসছি।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, তাঁর এ চিকন নলা দুটি আমলের পাল্লায় উহুদ পাহাড়ের চেয়ে বেশি ভারি হবে।’ (মুসনাদে আহমদ) 

প্রতিবন্ধীদের দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করে ‘অন্ধ’ ‘বধির’ ইত্যাদি নামে ডাকা অনুচিত। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনেরা, তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না। ইমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তওবা করে না, তারাই জালিম।’ (সুরা হুজুরাত: ১১) 

অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (ঠাট্টার ছলে) অন্ধ ব্যক্তিকে ভুল পথ দেখায়, সে অভিশপ্ত।’ (মুসনাদে আহমদ) 

নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার
প্রতিবন্ধীদের নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকারও রয়েছে। রাসুল (সা.) কোনো প্রয়োজনে মদিনার বাইরে গেলে শাসনকার্য ও ইমামতি পরিচালনার জন্য কাউকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যেতেন। একাধিকবার তিনি অন্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)-এর কাঁধে এ গুরুদায়িত্ব তুলে দিয়ে মদিনার বাইরে গিয়েছিলেন। (আবু দাউদ) 

এ ছাড়া রাসুল (সা.) এ অন্ধ সাহাবিকে মসজিদে নববির মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করেন। নেতৃত্বের যোগ্যতা থাকলে প্রতিবন্ধীরাও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার অধিকার রাখে, তা তিনি প্রমাণ করেছেন। (বুখারি, মুসলিম) 

ক্ষমা, সহমর্মিতা ও উদারতা পাওয়ার অধিকার
প্রতিবন্ধীদের দুর্ব্যবহার ও রূঢ় আচরণে শাস্তি না দিয়ে উদারতা ও ক্ষমা দেখানোর কথা বলে ইসলাম। অমুসলিম প্রতিবন্ধীর প্রতি ক্ষমা দেখিয়েছেন মহানবী (সা.)। একদিন তিনি মুসলিম সেনাবাহিনী নিয়ে একটি অভিযানে যাচ্ছিলেন। পথে মারবা বিন কাইজি নামক এক প্রতিবন্ধীর বাগানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। মারবা বললেন, ‘হে মুহাম্মদ, তুমি যদি নবী হওয়ার দাবি করো, তাহলে আমি তোমাকে আমার বাগানের ওপর দিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেব না।’ এক মুঠো মাটি নিয়ে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি যদি জানতাম, এই মাটি শুধু তোমার ওপরই পড়বে, তবে আমি তোমাকে লক্ষ্য করে তা নিক্ষেপ করতাম।’ এমন ঔদ্ধত্য দেখে সাহাবিরা তাঁর ওপর আঘাত করতে চাইলে রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাকে ছেড়ে দাও, বেচারার বিবেক ও চোখ দুটোই অন্ধ।’ (জাদুল মাআদ)

মহানবী (সা.) প্রতিবন্ধীদের প্রতি সম্মান ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করতেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক নারীর বুদ্ধিতে কিছু ত্রুটি ছিল। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার সঙ্গে আমার প্রয়োজন আছে।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হে অমুকের মা, তুমি কোনো রাস্তা দেখে নাও, আমি তোমার কাজ করে দেব।’ তারপর তিনি কোনো পথের মধ্যে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর কাজ সম্পাদন করে দেন।’ (মুসলিম) 

ইসলামের ফরজ বিধানেও ছাড় রয়েছে
অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য শরিয়তের বিধিবিধান পালনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ফরজ বিধান তাদের সাধ্যের ওপর নির্ভর করবে। তাই নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ও জিহাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিধানগুলো প্রতিবন্ধীদের জন্য পালন করা আবশ্যক নয়। মানসিক ভারসাম্যহীন হলে তো কোনো বিধানই তার জন্য প্রযোজ্য নয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তি থেকে কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে অর্থাৎ, বিধিবিধান প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে— ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, নাবালেগ যতক্ষণ না সে বালেগ হয় এবং পাগল যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায় বা সুস্থ হয়।’ (ইবনে মাজাহ) 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ (যুদ্ধ না করলে) অন্ধের জন্য গুনাহ নেই, খোঁড়ার জন্য গুনাহ নেই এবং রুগ্নের জন্যও গুনাহ নেই।’ (সুরা ফাতহ: ১৭) খোঁড়া সাহাবি আমর বিন জামুহ (রা.)-কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাকে আল্লাহ তাআলা অপারগ করেছেন, সুতরাং তোমার ওপর যুদ্ধ করা বাধ্যতামূলক নয়।’ (ইবনে হিশাম) 

পরকালে প্রতিবন্ধী থাকবে না
অঙ্গবৈকল্য ও প্রতিবন্ধিতা পৃথিবীতে আল্লাহর শক্তিমত্তার নিদর্শন। পরকালে কোনো প্রতিবন্ধী থাকবে না। সাহাবি আমর ইবনে জামুহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে শহীদ হই, তাহলে জান্নাতে আমি কি সুস্থ ও স্বাভাবিক পায়ে হাঁটতে পারব?’ আমর পঙ্গু ছিলেন। রাসুল (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ।’ ওহুদের যুদ্ধে তিনি, তাঁর এক ভাতিজা ও তাঁদের একজন দাস শহীদ হন। তাঁর মৃতদেহের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় রাসুল (সা.) তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমি যেন তোমাকে জান্নাতে সুস্থ ও স্বাভাবিক পায়ে হাঁটতে দেখছি।...’ (মুসনাদে আহমাদ) 

ইসলাম শুধু প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি, বরং তাদের উপস্থিতিকে পৃথিবীর জন্য রহমত ও আশীর্বাদ বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক দেওয়া হয় কেবল তোমাদের দুর্বল শ্রেণির লোকদের অসিলায়।’ (বুখারি) প্রতিবন্ধীরা পৃথিবীতে আল্লাহর রহমত প্রবেশের দরজা। তাই সর্বদা তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা উচিত। 

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রস্রাবের চাপ নিয়ে নামাজ আদায়ের বিধান

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৭
নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: সংগৃহীত
নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: সংগৃহীত

অনেক সময় মসজিদে জামাত শুরু হওয়ার পর প্রস্রাবের বেগ বা চাপ অনুভূত হয়। এ অবস্থায় নামাজ আদায় বা জামাতে শরিক হওয়ার বিষয়ে ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে—

চাপের পরিমাণ ও বিধান: যদি প্রস্রাবের চাপ খুব সামান্য হয় এবং তাতে নামাজের মনোযোগ বা একাগ্রতা (খুশুখুজু) বিঘ্নিত না হয়, তবে ওই অবস্থায় নামাজ আদায় দোষণীয় নয়। কিন্তু চাপের পরিমাণ যদি এমন হয় যে মনোযোগসহকারে নামাজ আদায় কঠিন হয়ে পড়ে, তবে জামাত ছেড়ে দিয়ে আগে হাজত বা জরুরত সেরে নেওয়া আবশ্যক। কারণ, প্রস্রাবের তীব্র চাপ নিয়ে নামাজ আদায় মাকরুহ।

হাদিসের নির্দেশনা: প্রস্রাবের বেগ নিয়ে নামাজ আদায় করার বিষয়ে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ও পরকালের বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য প্রস্রাবের চাপ থেকে স্বস্তি লাভ করা পর্যন্ত নামাজ আদায় বৈধ নয়।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৯১)। অন্য এক হাদিসে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নামাজের জামাত শুরু হওয়ার পর তোমাদের কারও শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে সে যেন আগে তা সেরে নেয়।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৮৮)

নামাজের মূল প্রাণ হলো আল্লাহর সামনে বিনয় ও একাগ্রতার সঙ্গে দাঁড়ানো। শারীরিক অস্বস্তি নিয়ে নামাজ আদায় করলে একাগ্রতা বজায় থাকে না। তাই আগে প্রয়োজন সেরে, নতুনভাবে অজু করে নামাজ আদায় করাই উত্তম; এতে জামাত ছুটে গেলেও পরে একা বা অন্য জামাতে আদায় করা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ০৭ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ০১ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৫ মিনিট
ফজর০৫: ১৬ মিনিট০৬: ৩৬ মিনিট
জোহর১১: ৫৮ মিনিট০৩: ৪০ মিনিট
আসর০৩: ৪১ মিনিট০৫: ১৬ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৮ মিনিট০৬: ৩৭ মিনিট
এশা০৬: ৩৮ মিনিট০৫: ১৫ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক আজ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১১
ছবি: বাসস
ছবি: বাসস

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক বসছে আজ। রোববার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৫টায় (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে ১৪৪৭ হিজরি সনের রজব মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা ও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

বাংলাদেশের আকাশে কোথাও রজব মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা ০২-৪১০৫৩২৯৪, ০২-২২৬৬৪০৫১০ ও ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ টেলিফোন নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতকালে মুমিনের আত্মিক শিক্ষা ও নৈতিক দায়িত্ব

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৫০
শীতকালে মুমিনের আত্মিক শিক্ষা ও নৈতিক দায়িত্ব

শীতকাল কেবল আবহাওয়ার একটি পরিবর্তন নয়, বরং এটি মুমিনের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রশিক্ষণের এক বিশেষ ঋতু। প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমাদের মহান আল্লাহর অসীম মহিমা ও শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পালাবদলে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা নুর: ৪৪)

ইসলামে সুস্থতার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একজন সবল ও সুস্থ মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক উত্তম ও প্রিয়।’ (সহিহ মুসলিম)। শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, তাই মুমিনের উচিত সতর্ক থাকা। পর্যাপ্ত উষ্ণ কাপড় পরিধান করা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, বিশুদ্ধ পানি পান এবং নিয়মিত হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে ইবাদতের উপযোগী রাখা জরুরি।

শীতকালকে মুমিনের ইবাদতের বসন্ত বলা হয়। কেননা এ সময় দিন ছোট হওয়ায় সহজে রোজা রাখা যায় এবং রাত দীর্ঘ হওয়ায় আরামের ঘুম বিসর্জন দিয়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে তাহাজ্জুদ আদায় করা সহজ হয়।

শীতের তীব্রতায় সমাজের অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষগুলো নিদারুণ কষ্টে ভোগে। মুমিনের ইবাদত কেবল নামাজ-রোজায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং আর্তমানবতার সেবাও ইবাদতের অংশ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা যা উপার্জন করো এবং যা আমি তোমাদের জন্য জমিন থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উত্তম বস্তু ব্যয় করো।’ (সুরা বাকারা: ২৬৭)। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষের দুঃখ দূর করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুঃখ দূর করে দেবেন।’ (জামে তিরমিজি)। তাই সাধ্যানুযায়ী শীতবস্ত্র ও খাদ্য দিয়ে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ইমানি দায়িত্ব।

শীতকাল আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা, ধৈর্য, সহমর্মিতা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির শিক্ষা দেয়। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত এই ঋতুকে অবহেলায় না কাটিয়ে ইবাদত, আর্তমানবতার সেবা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সার্থক করে তোলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত