Ajker Patrika

ইরানে হামলা: বিভক্ত হয়ে পড়েছে ট্রাম্পের ‘ম্যাগা’ শিবির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ১২: ৩৮
আমেরিকাকে আবার মহান করার অঙ্গীকার নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
আমেরিকাকে আবার মহান করার অঙ্গীকার নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক সামরিক হামলার পর তার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ (এমএজিএ) শিবিরের রক্ষণশীল গণমাধ্যম ও প্রভাবশালী মহলে বিভেদ দেখা দিয়েছে। অনেকেই পূর্বে এই ধরনের সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও, এখন কেউ কেউ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আবার কেউ কেউ তীব্র সমালোচনা করছেন এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যার দাবি জানাচ্ছেন।

গত শনিবারের হামলার আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে ফাটল তৈরি করেছিল। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী থাকাকালীন ট্রাম্প নিজেই মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সংগতি রেখে ‘ম্যাগাপন্থী’ আন্দোলনের অনেক সদস্যই ছিলেন আন্তর্জাতিক সংঘাত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পক্ষে। তবে সম্প্রতি, রিপাবলিকান পার্টির কট্টরপন্থীরা যারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বন্ধে ইসরায়েলকে জোরালো মার্কিন সমর্থন দেওয়ার পক্ষে ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে এই বিচ্ছিন্ন থাকার পক্ষের কণ্ঠস্বরগুলোর মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

অবশ্য, ট্রাম্পের গত শনিবার রাতের ঘোষণার পর, কিছু বিশিষ্ট ম্যাগাপন্থী প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

এর মধ্যে ট্রাম্পপন্থী গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ-এর প্রতিষ্ঠাতা চার্লি কার্ক এক্স-এ লিখেছেন, ‘ইরান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামনে কোনো বিকল্প রাখেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক দশক ধরে তিনি দৃঢ় ছিলেন যে ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র পাবে না। ইরান বোমা তৈরির জন্য কূটনীতি পরিহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি একটি সুনির্দিষ্ট আক্রমণ, নিখুঁতভাবে পরিচালিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিচক্ষণতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করেছেন।’

ফ্লোরিডার সাবেক কংগ্রেস সদস্য ম্যাট গেটজ, যিনি ট্রাম্পের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত হয়েও পরে সরে দাঁড়িয়েছিলেন, এক্স-এ ইরানের ওপর হামলাকে তাঁর প্রথম মেয়াদে ইরানি সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। সোলেইমানি হত্যার পর অনেকেই আঞ্চলিক সংঘাতের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যা সত্যি হয়নি। গেটজ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মূলত এটিকে সোলেইমানি হামলার মতো “একবারই” করতে চেয়েছেন। (ইরানের) শাসন পরিবর্তনের কোনো যুদ্ধ এটি নয়। ট্রাম্পই শান্তির প্রতীক!’

তবে, গতকাল রোববার গেটজ ইরানের যেকোনো বৃহত্তর অভিযানের বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘শুধু মনে রাখবেন: প্রতিটি শাসন পরিবর্তনের যুদ্ধ শুরুতেই অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু ঐতিহাসিক গতিপথ ভালো নয়।’ পরে তিনি যোগ করেন, ‘বোমা ফেলার জন্য নব্য রক্ষণশীলদের হাতে আরও একটি ইরানি পর্বত সব সময়ই থাকবে!’

জর্জিয়ার রিপাবলিকান প্রতিনিধি মার্জরি টেলর গ্রিন, যিনি ট্রাম্পের একজন কট্টর মিত্র, গত শনিবার রাতে এক্স-এ পোস্ট করেন: ‘যদি নেতানিয়াহু প্রথমে ইরানের জনগণের ওপর বোমা না ফেলতেন, তাহলে ইসরায়েলের জনগণের ওপর বোমা পড়ত না। ইসরায়েল একটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ। এটি আমাদের যুদ্ধ নয়। শান্তিই সমাধান।’

মার্কিন জনগণ এবং বিশেষ করে ট্রাম্পের ম্যাগাপন্থী আন্দোলনের কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের ইরান হামলার প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা এখনই বলা কঠিন।

গত বুধবার, হামলার আগে, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং এসএসআরএস-এর এক দিনের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪৫ শতাংশ আমেরিকান ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলার বিরোধিতা করেছেন, ২৫ শতাংশ সমর্থন করেছেন এবং ৩০ শতাংশ অনিশ্চিত। ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে রিপাবলিকানরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখেন এবং বিমান হামলাকে সমর্থন করার সম্ভাবনা তাঁদের বেশি ছিল।

এদিকে ট্রাম্পের ম্যাগাপন্থী আন্দোলনের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রেসিডেন্টের কাছে তাঁর সিদ্ধান্তের আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, এটি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল।

ট্রাম্পের সাবেক প্রধান কৌশলবিদ এবং বর্তমানে ট্রাম্পপন্থী পডকাস্টার স্টিভ ব্যানন গত শনিবার রাতে বলেছেন, তাঁর সমর্থকদের কাছে এই সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করার জন্য প্রেসিডেন্টের ‘কিছু কাজ আছে’। ট্রাম্প শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি তাঁর পডকাস্টে বলেন, ‘আমি মনে করি প্রেসিডেন্টকে এই হামলার একটি গভীর ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত, বিশেষ করে কেন এটি ইসরায়েলের জন্য আমাদের একটা কঠিন কাজ বা বোঝা মনে হচ্ছে—সেটির ব্যাখ্যা দরকার।’

স্টিভ ব্যানন ‘ধাপে ধাপে বৃদ্ধি’ এবং ইরান যদি পাল্টা হামলা চালায় ও যুক্তরাষ্ট্র আরও পদক্ষেপ নেয় তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অনন্ত যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ এজেন্ডা থেকে মনোযোগ সরে যেতে পারে। ব্যানন বলেন, ‘এভাবেই আপনি আপনার পক্ষের শহরগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন না। এভাবেই আপনি সেই বিশাল, সুন্দর বিল–আপনার যা কিছু করার দরকার, সেদিকে মনোযোগ দিতে পারবেন না।’

তিনি যোগ করেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া ভুল নয়। কখনো কখনো আপনাকে এই পদক্ষেপগুলো নিতেই হয়। আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে তাঁকে এই পদক্ষেপগুলো নিতেই হবে।’

ট্রাম্পপন্থী ভাষ্যকার জ্যাক পসোবিয়েক ইরানে হামলাকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিচালিত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তবে ইরানি নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টার প্রথম ধাপ নয় বলেই মনে করেন তিনি। পসোবিয়েক এক্স-এ লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেমনটি তিনি বরাবরই করেছেন, তিনি ইরানে শাসন পরিবর্তনের লক্ষ্যে কোনো যুদ্ধের বিরোধিতা করেন। এটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কিত, যা তিনি প্রথম দিন থেকেই বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।’

ট্রাম্পপন্থী কর্মী লরা লুমার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ইরানকে বোমা মেরে ‘আমাদের সবাইকে পারমাণবিক হলোকাস্ট থেকে বাঁচিয়েছেন’, তিনি ট্রাম্পের আন্দোলনের কিছু সদস্যের নীরবতার কথা উল্লেখ করেছেন যারা যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে জড়ানোর বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, ‘কেউ কি টাকার কার্লসন, ডেভ স্মিথ, ক্যান্ডেস ওয়েন্স এবং পুরো মাহা ক্রুদের (মেক আমেরিকা হেলথি অ্যাগেইন মুভমেন্ট) জন্য একটি সুস্থতার পরীক্ষা চালাতে পারবেন!’

ফক্স নিউজ সাবেক হোস্ট টাকার কার্লসন ইরানে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানোর বিরোধিতাকারী অন্যতম জোরালো কণ্ঠস্বর। গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত ট্রাম্পের বোমা হামলা সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো মন্তব্য করেননি।

রক্ষণশীল ভাষ্যকার ক্যান্ডেস ওয়েন্স গত সপ্তাহে তাঁর ইউটিউব শোতে বলেছিলেন, ম্যাগা হচ্ছে নব্য রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা। ট্রাম্পকে তাঁর সেই ভিত্তি ভেঙে দিয়েছেন। গত শনিবার হামলার সবচেয়ে সোচ্চার সমালোচক ছিলেন তিনি।

নিয়মিত ইসরায়েলবিরোধী মতামত প্রকাশ করেন ওয়েন্স। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ইসরায়েলপন্থী দাতা মিরিয়াম অ্যাডেলসন ট্রাম্পপন্থী সুপার পিএসিকে যে ১০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে ওয়েন্স এক্স-এ লিখেছেন, ‘যদি আমরা গো ফান্ড মি-তে অ্যাডেলসনের দেওয়া ১০০ মিলিয়ন ডলারের সমান সংগ্রহ করতে পারতাম, তাহলে হয়তো তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেন। অনুমান করি, আমরা তা কখনোই জানতে পারব না।’ ট্রুথ সোশ্যালে বোমা হামলার ঘোষণা দেওয়া ট্রাম্পের পোস্টটিকে ‘স্রেফ উন্মাদনা’ বলেও অভিহিত করেন ওয়েন্স।

ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, রিপাবলিকান পার্টি তাঁর পক্ষে আছে। তিনি তাঁর বিশাল ট্যাক্স ও ব্যয়ের প্যাকেজ পাসের আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প গতকাল রোববার ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘রিপাবলিকান পার্টিতে অসাধারণ ঐক্য, হয়তো এমন ঐক্য আমরা আগে কখনো দেখিনি। এখন চলুন, এই বিশাল, সুন্দর বিলটি শেষ করি। আমাদের দেশ অসাধারণ উন্নতি করছে। ম্যাগা!’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৭ বছরের সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আপিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) পৃথক দুটি আপিল করেছেন ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি।

আপিল আবেদনে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই সাজা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইমরান খানকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এ ‘পরিকল্পিত’ রায় দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা ইমরান খান ও বুশরা বিবির পক্ষে কিছু যুক্তি উত্থাপন করেছেন।

আইনজীবীদের দাবি, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) কোনো এফআইআর ছাড়াই ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মাত্র দুই দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে চালানো তদন্তের ভিত্তিতে এই মামলা হয়, যা স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী।

আপিল আবেদনে বলা হয়েছে, তোশাখানাসংক্রান্ত এটি চতুর্থ মামলা। একই বিষয়ে বারবার মামলা করা আইনের লঙ্ঘন এবং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে, যাতে ইমরান খানকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।

আইনজীবীদের দাবি, ২০১৮ সালের তোশাখানা নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করেই উপহারগুলো রাখা হয়েছিল। এখানে কোনো ধরনের বিশ্বাসভঙ্গ বা ‘ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ ঘটেনি।

আপিলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তান পেনাল কোড অনুযায়ী ইমরান খান ও বুশরা বিবি এই উপহার নেওয়ার সময় প্রচলিত সংজ্ঞায় ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন না। বিশেষ করে, বুশরা বিবি একজন গৃহিণী হিসেবে কোনো সরকারি পদের দায়িত্বে ছিলেন না।

প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলাটি মূলত ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি দামি বুলগারি জুয়েলারি সেট নিয়ে। প্রায় ৮ কোটি রুপি মূল্যের এই নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুলের সেটটি ইমরান দম্পতি মাত্র ২৯ লাখ রুপি পরিশোধ করে নিজের কাছে রেখেছিলেন।

এই মামলায় পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ তাঁদের প্রত্যেককে প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়। তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। বর্তমানে ইমরান খান ১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। বুশরা বিবিও একই মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত।

ইমরানের দল পিটিআইয়ের দাবি, তোশাখানা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ‘ক্যাঙারু কোর্টে’র মতো রুদ্ধদ্বার কক্ষে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত