Ajker Patrika

ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কার কী ক্ষতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রস্তাব পাস করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। ছবি: এএফপি
হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রস্তাব পাস করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। ছবি: এএফপি

পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব কী দেবে ইরান, এই প্রশ্ন পুরো বিশ্বের। তবে প্রথম প্রতিক্রিয়া হিসেবে হরমুজ প্রণালি বন্ধের প্রস্তাব পাস করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি দিয়েছে, বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্যিক পথটি বন্ধ করা হবে ইরানের ‘অর্থনৈতিক আত্মহত্যা’। ইরানের ‘তুরুপের তাস’ বলা হয় বিশ্ব বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রণালিকে। পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস হলেও যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে ইরান এই পথে এগোবে কি না সেটা দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব।

হরমুজ প্রণালি

বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহন পথগুলোর একটি হলো হরমুজ প্রণালি। এই প্রণালি মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানির প্রধান পথ এবং বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওমান ও ইরানের মাঝখানে অবস্থিত এই প্রণালি উত্তরে পারস্য উপসাগরকে দক্ষিণের ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে।

কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রণালি

হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বের মোট তেল সরবরাহের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি, প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল এবং বিপুল পরিমাণ তরল গ্যাস পরিবাহিত হয়। সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ইরাক বিশেষ করে ওপেকভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলো এই পথেই বেশির ভাগ তেল রপ্তানি করে।

জ্বালানি বাজার বিশ্লেষণকারী সংস্থা ভরটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শুরু থেকে গত মাস পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ কোটি ৭৮ লাখ থেকে ২ কোটি ৮ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল, কনডেনসেট (একধরনের হালকা তেল) ও জ্বালানি এই পথে বহন করা হয়েছে।

হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে যা হবে

প্রণালিটি বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বজুড়ে বেড়ে যাবে তেলের দাম। জ্বালানি সরবরাহে বড় ধরনের ব্যাঘাত দেখা যাবে।

হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার অর্থ হচ্ছে ট্রাম্পের ওপর সরাসরি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা। কারণ, এতে সঙ্গে সঙ্গেই তেলের দাম বেড়ে যাবে, যা যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির (মুদ্রাস্ফীতি) ঝুঁকি তৈরি করবে।

ইরান যখন হরমুজ প্রণালি বন্ধের চিন্তা করছে তখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা ইরানকে এই পদক্ষেপ থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করে। ফক্স নিউজে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য আমি বেইজিংকে আহ্বান জানাই। তেল আমদানির জন্য চীন নিজেও হরমুজ প্রণালির ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি ইরান এটা করে, সেটা হবে আরেকটি ভয়ানক ভুল। এটা তাদের জন্য অর্থনৈতিক আত্মহত্যার মতো হবে।’

তবে এটি ইরানের নিজের জন্যও এক ধরনের অর্থনৈতিক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে। কারণ, ইরানের নিজের তেল রপ্তানিও এই একই প্রণালি দিয়ে হয়। প্রণালি বন্ধ হলে পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলোরও যুদ্ধের মধ্যে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এশিয়ার পরাশক্তি চীনের জন্যও এই পদক্ষেপটি বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনবে। ইরানের মোট তেল রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনে হয়ে থাকে।

এরই মধ্যে কিছু সুপার ট্যাংকার (বিশাল তেলবাহী জাহাজ) হরমুজ প্রণালি থেকে ঘুরে ফেরত গিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহে হরমুজ প্রণালি দিয়ে চলাচলকারী জাহাজগুলো ইতিমধ্যেই ইরানের জিপিএস সিগন্যাল জ্যামিং-এর কারণে সমস্যা মোকাবিলা করেছে।

সমুদ্র তথ্য সরবরাহকারী উইন্ডওয়ার্ডের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার ওই অঞ্চলের প্রায় ২৩ শতাংশ বা ৭,০০০ টির মধ্যে প্রায় ১,৬০০টি জাহাজ জ্যামিং-এর শিকার হয়েছে। এটি শুক্রবারের তুলনায় ৬০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি।

যা বলছেন বিশ্লেষকেরা

বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলেন, ইরান এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো থেকে ‘কঠিন সামরিক প্রতিক্রিয়া’ আসার ঝুঁকি রয়েছে।

রাজনৈতিক ঝুঁকি বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়া গ্রুপ জানিয়েছে, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র পারস্য উপসাগর ও আশপাশের অঞ্চলে বিপুল সামরিক শক্তি জড়ো করেছে। ইরান যদি হরমুজ প্রণালি নিয়ে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে সেটি প্রায় নিশ্চিতভাবেই একটি বড় ধরনের সামরিক প্রতিক্রিয়ার সূচনা করবে।

ইরান হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ করুক বা না করুক, এমনকি যদি শুধু হামলার শঙ্কাই তৈরি হয় তাতেও জাহাজ চলাচলে বড় প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করেছেন সামুদ্রিক তথ্য বিশ্লেষণ সংস্থা উইন্ডওয়ার্ডের প্রধান নির্বাহী অ্যামি ড্যানিয়েল।

তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলছেন, তারা প্রণালিটি বন্ধ করবে কিনা। কিন্তু ধরুন, তারা শুধু এটিকে খুব ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে, তাহলে কী হবে?’

হরমুজ প্রণালি নিয়ে ইরান কী বলছে

গত সপ্তাহের শেষ দিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রেস টিভি জানায়, ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নিতে হবে দেশের শীর্ষ নেতাদের।

গতকাল রোববার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ট্রাম্পের হামলার দীর্ঘস্থায়ী পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। অনেকে এই মন্তব্যকে ইঙ্গিতপূর্ণ ও উন্মুক্ত প্রতিশোধের বার্তা হিসেবে দেখছেন।

অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ইসরায়েল মারাত্মক ভুল করেছে এবং তাদের শাস্তি পেতেই হবে। তবে এই শাস্তির অংশ হিসেবে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হতে চলেছে কি না সে ইঙ্গিত খামেনির বক্তব্যে মেলেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত