Ajker Patrika

এবার ইলন মাস্ক ও জাকারবার্গের পর সবচেয়ে বেশি সম্পদ অর্জন করেছেন যিনি

জেনসেন হুয়াং। ছবি: এএফপি
জেনসেন হুয়াং। ছবি: এএফপি

ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এআই চিপ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রায় বিশ্বজুড়ে ৯০ ভাগ বাজার দখল করে রেখেছে এনভিডিয়া। এই সাফল্য কোম্পানিটিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কোম্পানিতে পরিণত করেছে। এ ক্ষেত্রে এনভিডিয়ার আগে রয়েছে শুধু অ্যাপল ও মাইক্রোসফট।

কোম্পানিসমার্কেটক্যাপের তথ্য অনুসারে, এনভিডিয়ার এই উত্থান প্রযুক্তি জগতে নজির স্থাপন করেছে।

এনভিডিয়ার সাফল্য সরাসরি এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেনসেন হুয়াংয়ের সম্পদ বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালে হুয়াংয়ের সম্পদ ৭৬ বিলিয়ন ডলার বেড়ে মোট ১১৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

এ বিষয়ে ব্লুমকার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—হুয়াংয়ের সম্পদ বৃদ্ধির হার অ্যামাজনের জেফ বেজোসের চেয়েও বেশি। বেজোস এই বছর ৭০ বিলিয়ন ডলার সম্পদ অর্জন করেছেন।

এনভিডিয়ার এআই বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তাদের উদ্ভাবনী গ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি উন্নত এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য অপরিহার্য। কোম্পানিটি ২০১২ সালে প্রথম অ্যালেক্সনেট নিউরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এআই-ভিত্তিক সেবা চালু করেছিল, ১ হাজার ধরনের চিত্র শ্রেণিবদ্ধ করতে পারত। পরবর্তীতে ধারাবাহিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে এনভিডিয়া জেনারেটিভ এআই, ক্লাউড কম্পিউটিংসহ অন্যান্য রূপান্তরকারী প্রযুক্তির ভিত্তি গড়ে তুলেছে।

২০২৪ সালের অক্টোবরে এনভিডিয়ার বাজার মূল্যে ৩.৫৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। সে সময় অল্প সময়ের জন্য এটি অ্যাপল কোম্পানিকেও টপকে গিয়েছিল। ওই মাসেই এনভিডিয়ার শেয়ারমূল্য ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। মূলত তাদের এআই চিপের ব্যাপক চাহিদা এবং ওপেনএআই-এর ৬.৬ বিলিয়ন ডলারের ফান্ডিং ঘোষণার প্রভাবেই কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য দ্রুত বেড়েছিল।

এই বছর হুয়াংয়ের ৭৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বাড়লেও, ইলন মাস্কের সম্পদ সবচেয়ে বেশি ২২৬ বিলিয়ন ডলার বেড়ে হয়েছে ৪৫৫ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে আয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জাকারবার্গ অর্জন করেছেন ৯১ বিলিয়ন ডলার। জাকারবার্গের মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে এখন ২১৯ বিলিয়ন ডলার।

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ইলন মাস্ক এই বছর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ অতিক্রম করেছেন। মূলত বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ও বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রবৃদ্ধির ফলেই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন মাস্ক।

এনভিডিয়ার শেয়ার পারফরম্যান্সই হুয়াংয়ের সম্পদ বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি। ২০২৪ সালে এনভিডিয়ার শেয়ারের মূল্য ১৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ২০২৩ সালে এই বৃদ্ধির হার ছিল ২৪০ শতাংশ।

জানা গেছে, পারিবারিক ট্রাস্টের মাধ্যমে হুয়াং এনভিডিয়া কোম্পানির ৩.৫ শতাংশ মালিকানা ধরে রেখেছেন।

১৯৯৩ সালে জেনসেন হুয়াং, ক্রিস মালাকোভস্কি এবং কার্টিস প্রিয়েম এনভিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি এআই প্রযুক্তির নেতৃত্বস্থানীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে। সেমিকন্ডাক্টর এবং এআই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্ব আগামী দিনের বৈশ্বিক প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ গঠনে ভূমিকা রাখবে।

এআই সমাধানের চাহিদা দ্রুত বাড়তে থাকায় এনভিডিয়ার প্রবৃদ্ধির গতি জেনসেন হুয়াংয়ের দক্ষ নেতৃত্বে থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন /৮০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গুদামে রাখার পরিকল্পনা ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোস্টগার্ডের জাহাজ ভিগোরাসে আটক অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। ছবি: সংগৃহীত
কোস্টগার্ডের জাহাজ ভিগোরাসে আটক অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী আটক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে ঠিকাদার খুঁজছে। এই পরিকল্পনায় বিশাল সব শিল্প গুদাম বা ওয়্যারহাউস সংস্কার করে একসঙ্গে ৮০ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে আটকে রাখার কথা বলা হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের হাতে আসা এক খসড়া প্রস্তাবনার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

বর্তমানে আটককৃতদের দেশের যেখানে জায়গা পাওয়া যায় সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) এখন সেই পদ্ধতি বদলে একটি সুশৃঙ্খল ‘ফিডার সিস্টেম’ বা সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় যাতে দ্রুত দেশান্তর (ডিপোর্টেশন) নিশ্চিত করা যায়।

নথিতে বলা হয়েছে, নতুন গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের প্রথমে কয়েক সপ্তাহের জন্য প্রসেসিং সাইটে রাখা হবে। এরপর তাদের ৭টি বিশাল গুদামের কোনো একটিতে পাঠানো হবে, যার প্রতিটিতে ৫ থেকে ১০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা থাকবে। সেখান থেকেই মূলত তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

বিশাল এই গুদামগুলো ভার্জিনিয়া, টেক্সাস, লুইজিয়ানা, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া এবং মিজৌরির প্রধান লজিস্টিক হাবগুলোর কাছাকাছি স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া ১৬টি ছোট গুদামে দেড় হাজার করে মানুষ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

মার্কিন স্বরাষ্ট্র বিভাগ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র ট্রিশা ম্যাকলাফলিন জানিয়েছেন, তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের এই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারছেন না এবং গুদাম পরিকল্পনা নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতেও রাজি হননি। তবে এর আগে এনবিসি এবং ব্লুমবার্গ নিউজ গুদামগুলোকে আটক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে আইসিই-এর অভ্যন্তরীণ আলোচনার খবর দিয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাখ লাখ অভিবাসীকে আটক ও বিতাড়ন অভিযানের পরবর্তী পদক্ষেপ হলো এই গুদাম পরিকল্পনা। এ বছর কংগ্রেস অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য ৪৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। সেই অর্থ ব্যবহার করে প্রশাসন পরিত্যক্ত কারাগার সচল করেছে, সামরিক ঘাঁটির অংশ বিশেষ সংস্কার করেছে এবং রিপাবলিকান গভর্নরদের সঙ্গে মিলে দুর্গম এলাকায় অভিবাসীদের জন্য তাঁবু শিবির তৈরি করেছে।

বর্ডার জার টম হোমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, চলতি বছর প্রশাসন ৫ লাখ ৭৯ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। আইসিই-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড এম লিয়নস গত এপ্রিলে এক সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমাদের এটাকে ব্যবসার মতো পরিচালনা করতে শিখতে হবে।’ প্রশাসনের লক্ষ্য হলো আমাজন যেভাবে তাদের প্যাকেজ পৌঁছে দেয়, ঠিক সেভাবেই অভিবাসীদের দ্রুত ফেরত পাঠানো।

তবে রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুদামে বিপুলসংখ্যক মানুষকে রাখা লজিস্টিক সমস্যা তৈরি করবে। এসব স্থাপনা মূলত মালামাল রাখার জন্য তৈরি, মানুষের বসবাসের জন্য নয়। সেখানে বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা বা সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের অভাব থাকে। এ ছাড়া আবাসিক এলাকা থেকে দূরে হওয়ায় হাজার হাজার মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা সেখানে নাও থাকতে পারে।

নিউ অরলিন্সের একজন অধিকারকর্মী তানিয়া উলফ বলেন, ‘এটি অমানবিক। মানুষকে পশুর মতো বিবেচনা করা হচ্ছে।’ আইসিই অবশ্য বলছে, তারা এই কাঠামোতে অনেক পরিবর্তন আনবে। সেখানে গোসলখানা, টয়লেট, রান্নাঘর, ডাইনিং এরিয়া, মেডিকেল ইউনিট এবং বিনোদন কেন্দ্রসহ প্রশাসনিক অফিস তৈরি করা হবে। কোনো কোনো কেন্দ্রে পরিবারের জন্য বিশেষ আবাসন ব্যবস্থাও থাকবে।

পরিকল্পিত গুদামগুলোর বেশির ভাগই রিপাবলিকান শাসিত এলাকায় হলেও দুটি বড় গুদাম ডেমোক্র্যাট শাসিত ভার্জিনিয়ার স্ট্যাফোর্ড এবং মিজৌরির ক্যানসাস সিটিতে করার কথা রয়েছে। আইসিই-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের শুরুতে আটক অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজারেরও বেশি, যা এযাবৎকালের রেকর্ড। তাদের মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের সাজা বা অভিযোগ নেই।

অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা বলছেন, এত বড় স্থাপনা পরিচালনা করা কঠিন হবে। বিশেষ করে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা কর্মী ও চিকিৎসা কর্মী পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যেমন, ফোর্ট ব্লিস সাইটে বর্তমানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা কর্মীর মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সাবেক আইসিই চিফ অব স্টাফ জেসন হাউজারের মতে, ‘গুদাম হয়তো অনেক পাওয়া যাবে, কিন্তু সেগুলো নিরাপদে চালানোর সক্ষমতা সব সময়ই জনবলের ওপর নির্ভর করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে ‘অপরাধ’ গণ্য করে আলজেরিয়ায় আইন পাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৭
আলজেরিয়ায় ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে অপরাধ আখ্যা দিয়ে আইন পাশ করেছে আলজিয়ার্স। ছবি: সংগৃহীত
আলজেরিয়ায় ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনকে অপরাধ আখ্যা দিয়ে আইন পাশ করেছে আলজিয়ার্স। ছবি: সংগৃহীত

আলজেরিয়ার পার্লামেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে একটি আইন পাস করেছে। এই আইনে দেশটির ওপর ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসনকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার আলজেরীয় আইনপ্রণেতারা এই আইন পাস করেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

গত বুধবার আইনপ্রণেতারা জাতীয় পতাকার রঙের স্কার্ফ গলায় জড়িয়ে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ‘আলজেরিয়া দীর্ঘজীবী হোক’ স্লোগান দেন এবং বিলটি অনুমোদন করেন। একই সঙ্গে পার্লামেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্যারিসের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানান তাঁরা। ইতিহাসকে আড়াল করার সব চেষ্টা রুখে দিতেই এই পদক্ষেপ।

নতুন এই আইনে আলজেরিয়ার ঔপনিবেশিক অতীত এবং এর ফলে সৃষ্ট ট্র্যাজেডির জন্য ফ্রান্সকে ‘আইনিভাবে দায়ী’ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইনি কাঠামোর কেন্দ্রে রাখা হয়েছে ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতাকে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে এই আইনের প্রয়োগযোগ্যতা না থাকলেও এর রাজনৈতিক প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ঔপনিবেশিক স্মৃতি নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে আলজেরিয়ার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বিচ্ছেদ বা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এপিএসের তথ্য অনুযায়ী, পার্লামেন্ট স্পিকার ইব্রাহিম বুগালি বলেছেন, এই আইন দেশের ভেতরে ও বাইরে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে, আলজেরিয়ার জাতীয় স্মৃতি মুছে ফেলার মতো নয় এবং এ নিয়ে কোনো আপস হবে না।

আইনের খসড়ায় ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের নানা অপরাধের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক পরীক্ষা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং পদ্ধতিগতভাবে সম্পদ লুণ্ঠন। এতে আরও জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ফরাসি উপনিবেশের কারণে সৃষ্ট সব বস্তুগত ও নৈতিক ক্ষতির জন্য ‘পূর্ণাঙ্গ ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাওয়া আলজেরীয় রাষ্ট্র ও জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার।’

ফ্রান্স ১৮৩০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে আলজেরিয়া শাসন করেছে। নির্যাতন, গুম, গণহত্যা, অর্থনৈতিক শোষণ এবং এ দেশের আদিবাসী মুসলিম জনগোষ্ঠীকে প্রান্তিক করে রাখার মধ্য দিয়ে সেই শাসনব্যবস্থা টিকে ছিল। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধেই গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছিল। আলজেরিয়ার দাবি অনুযায়ী, সেই যুদ্ধে ১৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এর আগে আলজেরিয়ায় উপনিবেশ স্থাপনকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বারবার অস্বীকার করেছেন। ২০২৩ সালেও তিনি নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘ক্ষমা চাওয়া আমার কাজ নয়।’

গত সপ্তাহে ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র পাস্কাল কনফাভ্রেক্স এই ভোটাভুটি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, বিদেশের মাটিতে চলমান কোনো ‘রাজনৈতিক বিতর্ক’ নিয়ে তিনি কথা বলবেন না।

এক্সেটার ইউনিভার্সিটির ঔপনিবেশিক ইতিহাস গবেষক হোসনি কিতুনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ফ্রান্সের ওপর এই আইনের কোনো বাধ্যতামূলক প্রভাব নেই। তবে এর রাজনৈতিক ও প্রতীকী গুরুত্ব অপরিসীম। স্মৃতির লড়াইয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন মোড়।

দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংকটের মধ্যেই এই ভোটাভুটি হলো। মূলত অভিবাসনকে কেন্দ্র করে আলজেরিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক টিকে থাকলেও বর্তমানে তাতে চরম টানাপোড়েন চলছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে মরক্কোর পশ্চিম সাহারা পরিকল্পনাকে প্যারিস স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকেই উত্তেজনা তুঙ্গে। ১৯৭৫ সালে স্পেন ওই অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার পর মরক্কো তা দখল করে নেয়, যা নিয়ে সেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে।

আলজেরিয়া পশ্চিম সাহারার সাহরাউই জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করে এবং পলিসারিও ফ্রন্টকে মদদ দেয়, যারা মরক্কোর স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। গত এপ্রিলে প্যারিসে একজন আলজেরীয় কূটনীতিক ও দুই নাগরিককে গ্রেপ্তারের পর এই উত্তেজনা সংকটে রূপ নেয়। অথচ তার মাত্র এক সপ্তাহ আগে মাখোঁ এবং আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেলমাজিদ তেবুন সংলাপ শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আশপাশে ১৫ হাজার সেনা, ‘কোয়ারেন্টিন’ আরোপের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০২
ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

হোয়াইট হাউস মার্কিন সামরিক বাহিনীকে আগামী অন্তত দুই মাস ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর ‘কোয়ারেন্টিন’ বা অবরোধ আরোপের দিকেই প্রায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করার নির্দেশ দিয়েছে। রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন বর্তমানে কারাকাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সামরিক শক্তির চেয়ে অর্থনৈতিক পথকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

গতকাল বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সামরিক পথ এখনো খোলা আছে সত্যি, তবে হোয়াইট হাউসের লক্ষ্য অর্জনে আপাতত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে।’

ভেনেজুয়েলা নিয়ে নিজের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জনসমক্ষে কিছুটা অস্পষ্টতার রাখলেও গোপনে তিনি নিকোলাস মাদুরোকে দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে রয়টার্স খবর প্রকাশ করেছে। গত সোমবার ট্রাম্প বলেন, মাদুরোর জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপগুলো মাদুরোর ওপর প্রবল চাপ তৈরি করেছে। আমাদের বিশ্বাস, জানুয়ারির শেষ নাগাদ ভেনেজুয়েলা এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, যদি না তারা আমেরিকার কাছে নতি স্বীকার করে বড় কোনো আপস করতে রাজি হয়।’

ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার করছে। গত কয়েক মাস ধরে তাঁর প্রশাসন দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা এবং মাদক বহনকারী হিসেবে অভিযুক্ত নৌকাগুলোর ওপর বোমা হামলা চালাচ্ছে। অনেক দেশই এই আক্রমণকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।

এ ছাড়া, ট্রাম্প প্রায়ই স্থলের মাদক অবকাঠামোতে বোমা হামলার হুমকি দিয়েছেন এবং কারাকাস অভিমুখে সিআইএর গোপন তৎপরতার অনুমোদন দিয়েছেন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত মার্কিন কোস্ট গার্ড ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেলবোঝাই দুটি ট্যাংকার জব্দ করেছে।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তার এই মন্তব্য এমন সময়ে এল যখন রয়টার্স খবর দিয়েছে যে, কোস্ট গার্ড ‘বেলা-১’ নামে একটি খালি ও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজ জব্দের জন্য অতিরিক্ত বাহিনীর অপেক্ষায় রয়েছে। গত রোববার তারা প্রথম এটি আটকের চেষ্টা করেছিল।

মঙ্গলবার জাতিসংঘে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল মনকাডা বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা কোনো হুমকি নয়। আসল হুমকি হলো মার্কিন সরকার।’

এদিকে পেন্টাগন ক্যারিবীয় অঞ্চলে ১৫ হাজারের বেশি সৈন্যের এক বিশাল সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি বিমানবাহী রণতরি, ১১টি যুদ্ধজাহাজ এবং এক ডজনের বেশি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। এই সম্পদের অনেকগুলো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সহায়ক হলেও যুদ্ধবিমানের মতো কিছু সরঞ্জাম এই কাজের জন্য খুব একটা উপযুক্ত নয়।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে জানিয়েছে, তারা মাদুরোকে সম্পদহীন করার জন্য ‘সর্বোচ্চ সীমা’ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তা কার্যকর করবে। চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় আসা-যাওয়া করা সব নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত তেল ট্যাংকারের ওপর ‘অবরোধ’ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তবে হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তার মুখে এখন ‘কোয়ারেন্টিন’ শব্দের ব্যবহার ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল সংকটের স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি সংঘাত এড়াতে এই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। কেনেডির তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট ম্যাকনামারা ২০০২ সালে বলেছিলেন, ‘আমরা একে কোয়ারেন্টিন বলেছিলাম; কারণ ‘ব্লকেড’ বা অবরোধ একটি যুদ্ধের শব্দ।’

বুধবার জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এই অবরোধের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের শক্তি প্রয়োগকে ‘অবৈধ সশস্ত্র আগ্রাসন’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে বাসে আগুন, জীবন্ত দগ্ধ হয়ে ৯ জনের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আগুন ধরে যাওয়া বাস। ছবি: সংগৃহীত
আগুন ধরে যাওয়া বাস। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কর্ণাটকের চিত্রদুর্গ জেলায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৯ জন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে ৪৮ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি ট্রাকের ধাক্কায় একটি বেসরকারি স্লিপার বাসে আগুন ধরে গেলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। বাসটি বেঙ্গালুরু থেকে শিমোগা যাচ্ছিল।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ডিভাইডার টপকে বাসটিকে সজোরে ধাক্কা মারে। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘বৃহস্পতিবার ভোরে একটি লরি ডিভাইডার পার হয়ে বাসটিকে ধাক্কা দেয়। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, লরিটি বাসের তেলের ট্যাংকে আঘাত করেছিল, যার ফলে জ্বালানি ছড়িয়ে পড়ে আগুন ধরে যায়। কয়েকজন যাত্রী কোনোমতে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হলেও এখন পর্যন্ত আটজন যাত্রী এবং ট্রাকচালকের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।’

সেই ভয়াবহ মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে আদিত্য নামের এক যাত্রী বলেন, ‘চারপাশে শুধু মানুষের আর্তনাদ। দুর্ঘটনার পর আমি পড়ে গিয়েছিলাম এবং দেখি চারদিকে আগুন। দরজা খোলা যাচ্ছিল না। আমরা জানালার কাচ ভেঙে পালানোর চেষ্টা করি...মানুষ একে অপরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তা কঠিন হয়ে পড়ে।’

এই দুর্ঘটনার জেরে তুমকুর রোডে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গোকর্ণগামী এক নারী পর্যটক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমাদের সামনে একটি বাসে আগুন লেগেছে। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আমরা আটকে আছি, যা পরিষ্কার হতে আরও ঘণ্টা দু-এক সময় লাগতে পারে।’

এর আগে নভেম্বরেও তেলেঙ্গানাতেও একই ধরনের এক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। হায়দরাবাদ-বিজাপুর মহাসড়কে পাথরবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়। তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন নিগমের সেই বাসটিতে প্রায় ৭০ জন যাত্রী ছিলেন। ট্রাকের ওপর থাকা পাথর বাসের ভেতরে পড়ে যাওয়ায় অনেক যাত্রী চাপা পড়ে মারা যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত