Ajker Patrika

‘ডিপ স্টেট’ ভেঙে মার্কিন প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে পরিকল্পনা সাজালেন ট্রাম্প

আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ০০
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পর থেকেই দেশটির ফেডারেল সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করতে প্রস্তুত। ট্রাম্প ও তাঁর মিত্রদের দাবিকৃত ‘ডিপ স্টেট’ ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনায়ও তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। জো বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে কাজ করা দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই একটি নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন। যার মাধ্যমে ফেডারেল সরকারের প্রায় ৫০ হাজার স্থায়ী কর্মীর চাকরির সুরক্ষা বাতিল করা হবে। এতে এসব পদে স্থায়ী কর্মীদের পরিবর্তনে নিজের পছন্দের ও অনুগত লোকদের নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

এ ছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন যত দ্রুত সম্ভব ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন বিভাগে হাজারো রাজনৈতিক নিয়োগ সম্পন্ন করার পরিকল্পনাও করছে। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হলো, সরকারের বিভিন্ন স্তরে গভীরভাবে অনুগত লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা, যা সাম্প্রতিক কোনো প্রেসিডেন্টের তুলনায় অনেক বেশি।

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ট্রাম্পের দল এরই মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের শীর্ষ ৩ কূটনীতিকের পদত্যাগ চেয়েছে। তারা দপ্তরের কর্মী ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম দেখভাল করতেন। এটি ভবিষ্যতে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্পের মিত্ররা বিশ্বাস করেন, তাঁর প্রথম মেয়াদে বিচার বিভাগ, শিক্ষা বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল অসহযোগী আমলাদের কারণে।

প্রায় এক ডজন শীর্ষ পর্যায়ের নিয়োগপ্রাপ্তদের ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ফেডারেল কর্মক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার দায়িত্ব দিয়েছেন বা এই পরিকল্পনার প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। এর আগে, ২০২০ সালে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট মেয়াদ শেষে তিনি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, যা ‘শিডিউল এফ’ নামে পরিচিত। এটি ছিল ফেডারেল কর্মীদের চাকরির ধরন পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে স্থায়ী কর্মচারীদের চাকরি থেকে সরানো এবং তাদের স্থলে রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হতো।

ট্রাম্পের আগের প্রশাসনে অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেটের পরিচালক রাশেল ভাউট শিডিউল এফ আদেশ পুনরায় চালু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এ ছাড়া, সার্জিও গোর এবং জেমস শার্ক তাঁর সহযোগী হিসেবে কাজ করবেন। শার্ক ২০২১ সালে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। যেখানে তিনি দাবি করেন, প্রথম মেয়াদে ফেডারেল কর্মচারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাম্পের নীতিগুলো বাধাগ্রস্ত করেছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ‘গভীর রাষ্ট্র’ নির্মূলের দায়িত্বে যাদের রাখা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মনোনীত পাম বন্ডি, এফবিআইয়ের পরিচালক মনোনীত কাশ প্যাটেল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনোনীত মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ, শিক্ষামন্ত্রী প্রার্থী লিন্ডা ম্যাকমাহন এবং ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামী। তাঁরা ট্রাম্পের প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানোর কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেবেন। ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিম এ বিষয়ে নির্ধারিত সময়সূচি নিয়ে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ, এই পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নিয়মকানুন অনুযায়ী কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।

সমালোচক এবং ফেডারেল কর্মচারীদের ইউনিয়ন বলছে, ‘ডিপ স্টেট’ বলে কিছু নেই। ট্রাম্প এবং তাঁর মিত্ররা এটি একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাহী শাখার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছেন। ফেডারেল কর্মনীতি বিশেষজ্ঞ জেমস আইজেনম্যান বলেন, ‘ট্রাম্প ভুলভাবে মনে করছেন যে, বেশির ভাগ সরকারি কর্মচারীর একটি আদর্শগত এজেন্ডা রয়েছে। বর্তমান আইনের আওতায় অযোগ্য বা অসহযোগী কর্মীদের বরখাস্ত করা সম্ভব।’

ফেডারেল নিয়মকানুন মেনে এই পরিবর্তন আনতে মাসের পর মাস সময় লাগতে পারে। তবে ট্রাম্পের দল বলেছে, তাদের লক্ষ্য এমন কর্মী নিয়োগ দেওয়া যারা আমেরিকান জনগণের অধিকার রক্ষা, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি বাস্তবায়ন এবং করদাতাদের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে।

শিডিউল এফ—নিয়ে আইজেনম্যান বলেন, এটি ভয় ও নীরবতার সংস্কৃতি তৈরি করবে, যা কর্মচারীদের কাজের দক্ষতায় প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, ‘মানুষ নিজের মতামত প্রকাশ করতে বা সহায়ক কোনো পরামর্শ দিতে ভয় পাবে, কারণ তারা চাকরি হারানোর আশঙ্কায় থাকবে। যখন মানুষ ভয় পায়, তখন তাদের দিয়ে কাজ করানো সহজ হয় না।’

ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফেডারেল ওয়ার্কার্সের নির্বাহী পরিচালক স্টিভ লেনকার্ট এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নতুন এই শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্য হলো ফেডারেল সরকারের ভেতরে ‘গোপন পুলিশ বাহিনী’ তৈরি করা। তিনি বলেন, ‘আগামী প্রশাসন খোলাখুলিভাবে বলেছে যে, তারা শিডিউল এফ ব্যবহার করে পেশাদার কর্মীদের রাজনৈতিক আনুগত্য যাচাইয়ের আওতায় আনবে এবং যাদের পছন্দ নয়, তাদের বাদ দিয়ে দেবে।’

ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোনীত ব্যক্তিরা কী ভূমিকা পালন করবেন, কিংবা ‘গোপন পুলিশ’ গঠনের অভিযোগের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের মুখপাত্র হিউজেস।

এদিকে, গত বুধবার মার্কিন সিনেটের শুনানিতে রাশেল ভাউট এবং পাম বন্ডি শিডিউল এফ-এর নীতিগুলোকে সমর্থন করেছেন। ভাউট তাঁর বক্তব্যে বলেন, তিনি মনে করেন, ফেডারেল সরকারের কিছু অংশ ‘অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত’ হয়েছে। ট্রাম্পকে গণহারে চাকরিচ্যুতির পরামর্শ দিয়েছেন কি না—এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, স্থায়ী কর্মীদের নতুনভাবে শ্রেণিবিন্যাস করলে নিশ্চিত করা যাবে যে, নীতি প্রণয়নে প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গি ও এজেন্ডা প্রতিফলিত হবে।

বন্ডি তাঁর শুনানিতে বলেন, বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথের ট্রাম্প-সংক্রান্ত তদন্ত বিচার বিভাগের পক্ষপাতিত্বের প্রমাণ। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন না, কিন্তু ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের তদন্ত করার বিষয়ে সরাসরি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। বাইডেন প্রশাসনের বিচার বিভাগ অনেক আগে থেকেই বলে আসছে যে, তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেনি। তবে শুক্রবার এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

নতুন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারী ফেডারেল কর্মীদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ডিসেম্বরে রক্ষণশীল মার্কিনিদের একটি সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত আমেরিকান অ্যাকাউন্টেবিলিটি ফাউন্ডেশন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত পিট হেগসেথকে একটি চিঠি পাঠায়। এতে তারা মার্কিন সামরিক বাহিনীর ২০ জন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে। ফাউন্ডেশনটি মনে করে, এসব কর্মকর্তা বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগে অতিরিক্ত মনোযোগী।

বিদায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এ ধরনের উদ্যোগকে সমর্থন করে বলেছেন, বৈচিত্র্যপূর্ণ সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের বৈচিত্র্যের প্রতিফলন। তবে পেন্টাগন এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়ে ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের কাছে লোক পাঠিয়েছে।

আমেরিকান অ্যাকাউন্টেবিলিটি ফাউন্ডেশন তাদের ওয়েবসাইটে ‘শীর্ষ ১০ লক্ষ্যবস্তু’ শিরোনামে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে স্বরাষ্ট্র ও বিচার বিভাগের কর্মীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের দাবি, এই কর্মীরা সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছেন। সংগঠনের মুখপাত্র ইটজ ফ্রিডম্যান বলেছেন, আরও নাম প্রকাশ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পথচারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সশস্ত্র হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন এক পথচারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেই পথচারী হাজারো মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা ওই পথচারী পার্কিং লট থেকে দৌড়ে গিয়ে রাইফেল হাতে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। এরপর তিনি হামলাকারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং সেটি হামলাকারীর দিকেই তাক করেন।

অকস্মাৎ পেছন থেকে জাপটে ধরায় হামলাকারী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পিছু হটেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পথচারীর এমন সাহসী পদক্ষেপে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

যদিও ওই পথচারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তাঁর এই অবিশ্বাস্য সাহসিকতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হিরো (একজন সাধারণ বেসামরিক) হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন। কেউ কেউ সাহসী আর কেউ কেউ...এই ধরনের।’ অন্য একজন বলেছেন, ‘এই অস্ট্রেলিয়ান বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসীদের একজনকে নিরস্ত্র করে অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছেন। হিরো।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স এটিকে তাঁর দেখা ‘সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই লোকটি একজন প্রকৃত হিরো। তিনি নির্ভয়ে হামলাকারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করলেন এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করলেন। আমি নিশ্চিত যে, ওই ব্যক্তির সাহসিকতার জন্যই অনেক মানুষ বেঁচে আছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও হামলার সময় অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নাগরিকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই অস্ট্রেলীয়রা বিপদেও ছুটে গেছেন অন্যদের রক্ষা করতে। তাঁদের সাহসিকতাই অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

উল্লেখ্য, গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত হামলাকারীসহ ১২ জন নিহত বলে জানা গেছে। দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো বন্দুকধারী জড়িত ছিলেন কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শান্তির জন্য ন্যাটোর আশা ছাড়ার ইঙ্গিত দিল ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে শান্তি আলোচনার পথ সুগম করতে গিয়ে ন্যাটো জোটে যোগদানের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জার্মানির বার্লিনে বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি জানান—ন্যাটো সদস্যপদের বদলে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে সেটিকে একটি সমঝোতা হিসেবে বিবেচনা করতে প্রস্তুত কিয়েভ।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জেলেনস্কি বলেন, শুরু থেকেই ইউক্রেনের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ন্যাটো সদস্যপদ, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর গ্যারান্টি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই পথে সমর্থন না দেওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে। তাঁর ভাষায়—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘আর্টিকেল ফাইভ’-এর মতো প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি এবং ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব নিশ্চয়তা অবশ্যই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হতে হবে।

এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। কারণ দেশটির সংবিধানেই ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে এটি রাশিয়ার যুদ্ধলক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল রুশ বাহিনী। তবে বর্তমানে তারা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের দখলও নিতে চাইছে। তবে মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছাড় না দিতে এখনো অনড় রয়েছে ইউক্রেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার দাবি করে আসছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে হবে এবং সেখানে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা যাবে না।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের চাপের মুখে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বার্লিনে আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রায় চার বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের অবসানে অগ্রগতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন—ইউক্রেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে একটি ২০ দফা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যার শেষ ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, ইউক্রেন সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে না।

ইউরোপীয় মিত্ররা এই সময়টিকে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য একটি ‘সংকটজনক মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছে। একই সঙ্গে রুশ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, তাপ ও পানিসেবা অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানবিক সংকটও গভীর হচ্ছে। জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে ইউক্রেনের জনগণের ওপর সর্বোচ্চ ক্ষতি চাপিয়ে দিতে চাইছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় সংঘটিত এই হামলায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী ডেস্কের নিচে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তবে ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা অন্তত দুই শিক্ষার্থীর কাছে নতুন কিছু ছিল না। এর আগেও তাঁরা স্কুল জীবনে এই ধরনের গোলাগুলির মুখে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সী মিয়া ট্রেটা এবং ২০ বছর বয়সী জোয়ে ওয়েইসম্যান—দুজনেই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে বন্দুক হামলার শিকার হয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা হলো—এই দেশ কীভাবে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে দিল?’

শনিবার কালো পোশাক পরা এক বন্দুকধারী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে গুলি চালানো শুরু করলে ক্যাম্পাসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন হামলাকারী দীর্ঘ সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় শত শত পুলিশ রাতভর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায়।

ওয়েইসম্যান তখন নিজের ডরমিটরিতেই ছিলেন। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তিনি জানতে পারেন ক্যাম্পাসে গুলিবর্ষণ চলছে। প্রথমে ভয় পেলেও সেই আতঙ্ক দ্রুত ক্ষোভে রূপ নেয়। এনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আর কখনো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে না। আট বছর পর আবারও সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’

২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে নিজের মিডল স্কুলের পাশের একটি হাইস্কুলে ভয়াবহ শুটিং প্রত্যক্ষ করেছিলেন ওয়েইসম্যান। ওই ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিল।

অন্যদিকে, মিয়া ট্রেটা ২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সগাস হাইস্কুলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখন ১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করে, যাদের একজন ছিলেন ট্রেটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গুলিতে ট্রেটার পেট গুরুতরভাবে জখম হয়েছিল।

শনিবারের ঘটনার সময় নিজের ডরমিটরিতে পড়াশোনা করছিলেন ট্রেটা। তিনি মূলত যে ভবনে হামলাটি ঘটে সেখানে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ক্লান্ত বোধ করায় শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান—যা কার্যত তার প্রাণ বাঁচায়।

এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘদিনের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যমতে, চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৯টি গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০-এর বেশি।

ট্রেটা ও ওয়েইসম্যান দুজনই বলছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি দ্বিতীয়বার এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমি নিজেকে বোঝাতাম—পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা আর কখনো ঘটবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আর কেউই এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে গুলির শব্দকে শুরুতে আতশবাজি ভেবেছিলেন অনেকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৪৪
হামলার সময় বন্ডি সৈকত আতঙ্কিত মানুষদের ছোটাছুটি। ছবি: সংগৃহীত
হামলার সময় বন্ডি সৈকত আতঙ্কিত মানুষদের ছোটাছুটি। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত বন্ডাই বিচে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে হামলার সময়টিতে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁরা বলছেন, শুরুতে অনেকেই বুঝতেই পারেননি কী ঘটছে। অনেকেই ভেবেছিলেন আতশবাজি ফাটছে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে যায়, আর মানুষ প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে শুরু করে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে হামলার মুহূর্তটির বর্ণনা দিয়েছেন মার্কোস কারভালহো নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী। গুলির শব্দকে আতশবাজি ভেবেছিলেন তিনিও। কারভালহো জানান, সারা দিন সমুদ্রসৈকতে থাকার পর তিনি নিজের জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলেন। এমন সময়ই গুলির শব্দ ভেসে আসে।

তিনি বলেন, ‘এক মিলিয়ন বছরেও ভাবিনি, বন্ডির মতো জায়গায় এমন গুলিবর্ষণ হতে পারে।’ তিনি জানান, মানুষ যখন বুঝতে শুরু করে কী হচ্ছে, তখনই সবাই দিগ্‌বিদিক ছুটে পালাতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে শুরু করেন তিনি নিজেও।

কারভালহো বলেন, ‘আমি প্রাণ বাঁচাতে নর্থ বন্ডি গ্রাসি নলের দিকে দৌড়াই। পরে আরও কয়েকজন সহ আমরা একটি একটি আইসক্রিম ভ্যানের পেছনে লুকাই।’

জরুরি সেবা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরই গুলির শব্দ থামে। এরপর হামলার জায়গাটির পাশ দিয়েই বাড়ি ফেরেন কারভালহো। এ সময় তিনি মাটিতে বেশ কয়েকটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে, বন্ডাই বিচে উপস্থিত ছিলেন হাইম লেভি। তিনি ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-কে জানান, হানুকা উৎসবের সময় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি সৈকতে বসেছিলেন। তখনই হামলা শুরু হয়। লেভি বলেন, ‘হঠাৎ ধোঁয়া দেখলাম, আর গুলির শব্দ শুনলাম। প্রথমে বুঝতে পারিনি গুলি আকাশে ছোড়া হচ্ছে নাকি ভিড়ের দিকে। তবে তাৎক্ষণিকভাবেই বোঝা গেল ভয়াবহ কিছু ঘটছে।’

লেভি জানান, তিনি স্ত্রীকে দৌড়াতে বলেন। পরে মেয়েকে নিয়ে ছুটতে শুরু করেন স্ত্রী, আর ছেলেকে নিয়ে একটি গাড়ির পেছনে লুকিয়ে পড়েন তিনি। প্রায় ২০ মিনিট ধরে তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরে একটি বেড়া টপকে ছেলেকে নিয়ে গাড়ির কাছে পৌঁছান। খুঁজে পান স্ত্রীকেও। তাঁরা দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়েন।

লেভি আরও জানান, হামলার মুহূর্তটিকে তাঁর দুই বছর বয়সী ছেলে কান্না করছিল। গুলিবর্ষণকারীরা শুনে ফেললে মেরে ফেলতে পারে—এমন ভয়ে তিনি ছেলের মুখ চেপে ধরেন।

অস্ট্রেলিয়ায় ক্রমবর্ধমান ইহুদিবিদ্বেষের সমালোচনা করে লেভি বলেন, ‘এমন কিছু যে ঘটবে, তা স্পষ্ট ছিল। কিন্তু কখনো ভাবিনি আমি নিজে পরিবার নিয়ে এর মাঝখানে পড়ব।’ গুলিবর্ষণের মধ্যে দিয়ে বেঁচে ফেরাকে তিনি ‘অলৌকিক’ বলেই মনে করছেন লেভি।

অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ জানিয়েছে, বন্ডাই বিচে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৪ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যেই দুজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বন্ডি বিচ ও এর সংলগ্ন এলাকায় বড় আকারের অপারেশন শুরু করেছে।

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ ‘এক্স’ হ্যান্ডলে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পুলিশি অভিযান এখনো চলছে এবং জনসাধারণকে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত