Ajker Patrika

সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন এইচটিএস গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আহমেদ আল শারা। ছবি: সংগৃহীত
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আহমেদ আল শারা। ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামকে (এইচটিএস) সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।

গত বছর ডিসেম্বরে হায়াত তাহরির আল শামের নেতৃত্বেই মাত্র ১১ দিনের বিদ্রোহে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। আসাদ সরকারের পতনের পর বর্তমানে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এইচটিএস নেতা আহমেদ আল শারা।

উল্লেখ্য, এইচটিএস নুসরা ফ্রন্ট হিসেবেও পরিচিত। শুরুতে এটি আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদার অংশ ছিল। ২০১৬ সালে আল-শারার নেতৃত্বে আল কায়েদা থেকে বেরিয়ে আসে এইচটিএস।

গত মাসের শেষের দিকে সিরিয়ার ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থিতিশীলতা ও শান্তির পথে সিরিয়ার যাত্রা সহজ করতেই ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা থেকে শুরু করে, ফিলিস্তিনি ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীসহ অন্য বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের ব্যাপারে দামেস্কের অবস্থান কেমন তার ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হবে বলেও জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

গত শুক্রবার সিরিয়া সরকার জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহার চুক্তি পুনরায় কার্যকর করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে ১৯৭৪ সালের ৩১ মে স্বাক্ষরিত চুক্তি উভয় পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিবদমান পক্ষগুলোকে সংঘাত থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই চুক্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে, ‘এই চুক্তিটি কোনো শান্তি চুক্তি নয়। এটি ১৯৭৩ সালের ২২ অক্টোবর নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই শান্তির দিকে একটি পদক্ষেপ।’

৫০ বছর পর, আসাদ সরকারের পতনের পর, ইসরায়েল ঘোষণা দেয়, তারা সিরিয়ায় শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত চুক্তিটি অকার্যকর মনে করে। ২০২৪ সালে এই ঘোষণার পর ইসরায়েল সিরিয়ায় বিমান হামলা চালায়।

গত রোববার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সিরিয়া সফর করেন। গত ১৪ বছরে প্রথম কোনো ব্রিটিশ মন্ত্রীর সিরিয়া সফর এটি। তিনি বৈঠক করেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারার সঙ্গে। বৈঠকের পর সিরিয়ার জন্য ৯৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি নতুন সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই অর্থ মূলত দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠন ও সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয়দানকারী দেশগুলোকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হচ্ছে। এর আগেই যুক্তরাজ্য সিরিয়ার প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।

১৩ বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ ও আসাদ সরকারের পতনে দেশটির ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আল শারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘নতুন সিরিয়া’ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তাঁর সরকারের আচরণ নিয়ে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আল-শারা তাঁর প্রশাসনে মাত্র একজন নারী মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন এবং অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিজেই সরাসরি নিয়োগ করেছেন। এ নিয়ে প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সম্প্রতিকালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ওপর একাধিক সহিংস হামলার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে। এ ছাড়া, চলতি বছরের মার্চে নতুন নিরাপত্তা বাহিনী ও সাবেক শাসক বাশার আল-আসাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে সংখ্যালঘু আলাউই সম্প্রদায়ের শতাধিক বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারান। গত এপ্রিলে ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী, নিরাপত্তা বাহিনী এবং দ্রুজ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। গত জুনে রাজধানী দামেস্কের একটি গির্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দ্বিতীয়বার যুদ্ধবিরতিতে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাথফন নার্কফানিট ও কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী চা সেইহা সীমান্তবর্তী একটি চেকপয়েন্টে তিন দিন আলোচনার পর এই চুক্তিতে সই করেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাথফন নার্কফানিট ও কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী চা সেইহা সীমান্তবর্তী একটি চেকপয়েন্টে তিন দিন আলোচনার পর এই চুক্তিতে সই করেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার তিন সপ্তাহের ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষের পর অবশেষে একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের স্বাক্ষরিত একটি যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী—থাইল্যান্ডের নাথফন নার্কফানিট এবং কম্বোডিয়ার চা সেইহা সীমান্তবর্তী একটি চেকপয়েন্টে তিন দিন আলোচনার পর এই চুক্তিতে সই করেন। চুক্তির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো—উভয় পক্ষ বর্তমানে যে অবস্থানে রয়েছে, সেখানেই অবস্থান করবে। কোনো পক্ষই নতুন করে সেনা মোতায়েন বা অগ্রসর হতে পারবে না। যুদ্ধবিরতি টানা ৭২ ঘণ্টা টিকে থাকলে থাইল্যান্ড তাদের কাছে বন্দী ১৮ জন কম্বোডীয় সেনাকে মুক্তি দেবে।

সীমান্ত এলাকার বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিরাপদে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরার সুযোগ করে দেওয়া হবে এবং ল্যান্ডমাইন অপসারণে সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি কোনো পক্ষই সামরিক উদ্দেশে অন্যের আকাশসীমা ব্যবহার বা লঙ্ঘন করতে পারবে না।

গত জুলাই মাসেও প্রতিবেশী দুই দেশের সীমান্তে সংঘাত হয়েছিল। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ট্রাম্প এই চুক্তির নাম দেন ‘কুয়ালালামপুর শান্তিচুক্তি’। এতে বিতর্কিত এলাকা থেকে ভারী অস্ত্র প্রত্যাহার এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি অন্তর্বর্তী পর্যবেক্ষক দল গঠনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতে সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায় এবং সংঘাত নতুন মাত্রা পায়।

থাই কর্তৃপক্ষের মতে, ৭ ডিসেম্বরের পর থেকে তাদের ২৬ জন সেনা এবং অন্তত ৪৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া জানিয়েছে তাদের ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, তবে সামরিক হতাহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি। দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সংঘাত চলাকালে থাইল্যান্ড এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে বিমান হামলা এবং ভারী কামানের গোলাবর্ষণ করেছে। পাল্টা জবাবে কম্বোডিয়া বিএম-২১ রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে আক্রমণ চালায়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের একটি পর্যবেক্ষক দল এই শান্তি প্রক্রিয়া তদারকি করবে। থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই যুদ্ধবিরতিকে কম্বোডিয়ার ‘সততার পরীক্ষা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হলে থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।

তবে, দীর্ঘ এক শতাব্দী ধরে চলা এই সীমান্ত বিরোধের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শান্তি কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বর্তমান এই চুক্তিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ কূটনৈতিক সমর্থন ছিল বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনা প্রযুক্তির প্রথম যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের ককপিটে প্রথম নারী ক্যাপ্টেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউ ইউয়ে সি৯১৯ উড়োজাহাজের প্রথম নারী ক্যাপ্টেন। ছবি: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
ইউ ইউয়ে সি৯১৯ উড়োজাহাজের প্রথম নারী ক্যাপ্টেন। ছবি: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি সি৯১৯ জেট পরিচালনায় প্রথমবারের মতো নারী ক্যাপ্টেন নিয়োগ দিয়েছে চীন। বিমান চালনা খাতের সক্ষমতা বাড়াতে বোয়িং ও এয়ারবাস চালানো অভিজ্ঞ পাইলটদের এই উড়োজাহাজ চালনায় নিয়ে আসছে দেশটি। এরই অংশ হিসেবে নিয়োগ পেলেন প্রায় এক দশকের বোয়িং ৭৩৭ চালানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইউ ইউয়ে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউয়ে ২০১৫ সালে গুয়াংজুভিত্তিক চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের পাইলট হিসেবে যোগ দেন। এরপর থেকে ‘জিরো এরর’ বা কোনো ভুল ছাড়াই বিমান চালানোর রেকর্ড নিয়ে এক দশকের পথ পাড়ি দিয়েছেন।

এই ন্যারোবডি উড়োজাহাজ প্রকল্প নিয়ে চীন পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছে। আর ইউ ইউয়ের মতো অনেক নারী পাইলট এই জেট চালানোর সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। চীন নিজস্ব উড়োজাহাজ কর্মসূচি সম্প্রসারণের পাশাপাশি ধাপে ধাপে নারী পাইলটদের এগিয়ে আনতে চাইছে।

চলতি বছরের শুরুতে শীর্ষস্থানীয় পাইলটদের বাছাইয়ের সময় নির্বাচিত হন সিভিল এভিয়েশন ফ্লাইট ইউনিভার্সিটি অব চায়না থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইউ ইউয়ে। এরপর বোয়িং ৭৩৭ এবং এয়ারবাস এ৩২০-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীনের তৈরি সি৯১৯ উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য তাঁকে নিবিড় প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট করপোরেশন অব চায়না (কমাক) নির্মিত সি৯১৯ ২০২৩ সালের মে মাসে অভ্যন্তরীণ রুটে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু করে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সফলভাবে পরিচালনার পর দেশটির তিন বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা চায়না সাউদার্ন, এয়ার চায়না ও চায়না ইস্টার্ন এই বিমানের ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও বেশি সি৯১৯ বিমান বহরে যুক্ত হওয়ায় চায়না সাউদার্ন তাদের পাইলটদের পুনরায় প্রশিক্ষিত করার পরিকল্পনাও সম্প্রসারণ করছে।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম চায়না সিভিল অ্যাভিয়েশন নিউজ গত অক্টোবরে জানায়, কমাক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে দেশজুড়ে দক্ষ পাইলটদের সি৯১৯ পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। চীনের শীর্ষ তিনটি বিমান সংস্থা প্রত্যেকে অন্তত ১০০টি করে সি৯১৯ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা ২০৩০-এর দশক পর্যন্ত সরবরাহ করা হবে।

এই মাসে কমাকের একটি প্রকাশনীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউ ইউয়ে বলেন, ‘যখন আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমি এই বিমান (সি ৯১৯) চালানো দায়িত্ব নিতে আগ্রহী কি না, আমি এক সেকেন্ডের জন্যও দ্বিধা করিনি।’

সি ৯১৯ উড়োজাহাজ চালানোর লাইসেন্স পেতে সাংহাইয়ে কমাকের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কয়েক মাস ধরে নিবিড় প্রশিক্ষণ নেন ইউ ইউয়ে। শ্রেণীকক্ষের আলোচনার পাশাপাশি ফুল-ফ্লাইট সিমুলেটরের মাধ্যমে ইঞ্জিন বিকল হওয়া বা বৈরী আবহাওয়ার মতো সম্ভাব্য জরুরি পরিস্থিতি প্রস্তুতিও ছিল এই প্রশিক্ষণের অংশ।

সাক্ষাৎকারে ইউ ইউয়ে জানান, চীনের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর গুয়াংজু বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছে তাঁর শৈশব কেটেছে। সে সময়ই পাইলট হওয়ার স্বপ্ন মনে দানা বাঁধে। যদিও পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় নারী ক্যাডেটদের অনেক বেশি বাধা অতিক্রম করতে হয়, তবুও তিনি দমে যাননি।

চীনের সিভিল এভিয়েশন সেক্টরে নারী পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার ও প্রশিক্ষক বাড়তে থাকায় তিনি বেশ খুশি। এই নারী পাইলট বলেন, ‘২০১১ সালে যখন আমি ফ্লাইট কলেজে ভর্তি হই, তখন নারী ক্যাডেট খুব কম ছিল। কিন্তু এরপর আরও অনেক তরুণী এই পুরুষপ্রধান পেশায় যুক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে ক্যাপ্টেনও হয়েছেন। কমাকে আমার প্রশিক্ষকেরাও সবাই নারী ছিলেন।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘নারী পাইলটদের সাধারণত ক্যারিয়ার এবং পরিবার বা সন্তান লালন-পালনের মতো দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও যদি কেউ সফল হতে পারেন, তাহলে বলা যায়, তাঁরাই সবচেয়ে দৃঢ়চেতা নারী।’

চীন ১৯৫১ সালে পিপলস লিবারেশন আর্মির জন্য প্রথম ব্যাচে মোট ১৪ জন নারী পাইলটকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। ২০২৪ সালে চীনে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে কর্মরত নারী পাইলটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৪১ জনে। তাঁদের অধিকাংশেরই জন্ম ১৯৮৫ সালের পরে, যা তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের গড় বয়সের তুলনায় অনেক কম।

বর্তমানে বৈধ লাইসেন্সধারী চীনের সবচেয়ে বয়সী নারী বেসামরিক পাইলটের জন্ম ১৯৫৩ সালে, আর সবচেয়ে কম বয়সীদের জন্ম ২০০৫ সালে। তবুও, চীনের সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই খাতে নারী পাইলটের অনুপাত ২ শতাংশেরও কম।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এর তুলনায় ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সনদপ্রাপ্ত বেসামরিক পাইলটদের মধ্যে নারীর হার ছিল প্রায় ৯ শতাংশ।

তবে চীনের এভিয়েশন খাতের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি নারী নেতৃত্বের ভূমিকায় উঠে আসছেন। কমাকের নির্মাণাধীন ওয়াইডবডি উড়োজাহাজ সি৯২৯, যাকে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে, এর প্রধান নকশাবিদ একজন নারী। যাঁর নাম ঝাও চুনলিং। তিনি এর আগেও সি৯১৯ উড়োজাহাজের নকশা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২ সেকেন্ডে ঘণ্টায় ৭০০ কিমি গতি, চোখের পলকে ছুটে বিশ্ব রেকর্ড গড়ল চীনের ট্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চীন তাদের সবচেয়ে দ্রুতগতির ম্যাগলেভ ট্রেনের মাধ্যমে নতুন এক বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। মাত্র দুই সেকেন্ডেই ট্রেনটির গতি উঠেছে ঘণ্টায় ৭০০ কিলোমিটার। গতি এতটাই দ্রুত যে চোখের পলক ফেলতেই তা দৃষ্টির বাইরে চলে যায়।

চীনের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ডিফেন্স টেকনোলজির গবেষকেরা এই ম্যাগনেটিক লেভিটেশন (ম্যাগলেভ) ট্রেনের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে প্রায় এক টন ওজনের যানকে এই অবিশ্বাস্য গতিতে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, ৪০০ মিটার (প্রায় ১ হাজার ৩১০ ফুট) দীর্ঘ ম্যাগলেভ ট্র্যাকে এই পরীক্ষা চালানো হয়। সর্বোচ্চ গতি অর্জনের পর ট্রেনটিকে নিরাপদে থামানো হয়। এর মধ্য দিয়ে এটি বিশ্বের দ্রুততম সুপারকন্ডাক্টিং বৈদ্যুতিক ম্যাগলেভ ট্রেন হিসেবে স্বীকৃতি পেল।

পরীক্ষার ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্রেনটি অনেকটা রুপালি বিদ্যুতের ঝলকের মতো চোখের নিমেষে বেরিয়ে যাচ্ছে। খালি চোখে এর গতি অনুসরণ করা প্রায় অসম্ভব এবং এটি পেছনে একটি হালকা কুয়াশার রেখা রেখে যায়। পুরো বিষয়টি দেখতে অনেকটা সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্রের দৃশ্যের মতো মনে হয়।

ট্রেনটি সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেট বা শক্তিশালী চৌম্বক শক্তির সাহায্যে ট্র্যাকের ওপর ভেসে থাকে। কোনো স্পর্শ ছাড়াই এই চৌম্বক শক্তি ট্রেনটিকে ওপরে তুলে ধরে এবং সামনের দিকে ঠেলে দেয়।

এর ত্বরণ এতটাই শক্তিশালী যে এটি রকেট উৎক্ষেপণেও সক্ষম। এই গতিতে চললে ম্যাগলেভ ট্রেনগুলো দূরবর্তী শহরগুলোকে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সংযুক্ত করতে পারবে।

এই প্রযুক্তি হাইপারলুপের মতো ভবিষ্যৎ যাতায়াত ব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করছে, যেখানে ট্রেনগুলো শূন্যস্থান বা ভ্যাকুয়াম টিউবের ভেতর দিয়ে অতি উচ্চগতিতে চলাচল করবে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, এই সাফল্য অতি উচ্চগতির ইলেকট্রোম্যাগনেটিক প্রপালশন, ইলেকট্রিক সাসপেনশন গাইডেন্স ও হাই-ফিল্ড সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেটের মতো জটিল প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করেছে।

এই প্রযুক্তি শুধু ট্রেন চলাচলেই নয়, বরং মহাকাশবিজ্ঞান এবং বিমান চালনার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে রকেট বা প্লেন অনেক কম জ্বালানি খরচ করে আরও সহজে এবং দ্রুত উড্ডয়ন করতে পারবে।

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ডিফেন্স টেকনোলজির প্রফেসর লি জি বলেন, অতি উচ্চগতির সুপারকন্ডাক্টিং ইলেকট্রিক ম্যাগলেভ সিস্টেমের এই সফল উদ্ভাবন চীনের পরিবহনব্যবস্থার গবেষণাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দেবে।

গবেষণা দলটি ১০ বছর ধরে এই প্রজেক্টে কাজ করছে। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে একই ট্র্যাকে পরীক্ষা চালিয়ে তারা ৬৪৮ কিমি/ঘণ্টা গতিবেগ অর্জন করেছিল।

প্রায় তিন দশক আগে এই একই বিশ্ববিদ্যালয় চীনের প্রথম যাত্রীবাহী ম্যাগলেভ ট্রেন তৈরি করে, যা চীনকে বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে এই প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তোলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসী হামলার হুমকি, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় শিক্ষার্থী মনোজ সাই গ্রেপ্তার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩০
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট ডালাসের সিনিয়র শিক্ষার্থী মনোজ সাঁই লেল্লা। ছবি: লিংকড ইন
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট ডালাসের সিনিয়র শিক্ষার্থী মনোজ সাঁই লেল্লা। ছবি: লিংকড ইন

বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পরিবারকে সন্ত্রাসী হামলার হুমকির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, গ্রেপ্তার ওই শিক্ষার্থীর নাম মনোজ সাই লেল্লা। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট ডালাসের সিনিয়র শিক্ষার্থী ২২ বছর বয়সী মনোজ।

গত সোমবার মনোজকে গ্রেপ্তার করে ফ্রিস্কো পুলিশ। পুলিশ জানায়, পরিবারের সদস্যরা মনোজের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং সন্ত্রাসী হামলার হুমকির অভিযোগ নিয়ে ফোন করলে তারা ওই বাড়িতে যায়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এর কয়েক দিন আগে বাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে মনোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

মনোজ সাই লেল্লার বিরুদ্ধে বসবাসযোগ্য স্থান বা উপাসনালয় ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি প্রথম ডিগ্রির একটি গুরুতর অপরাধ। পাশাপাশি পরিবারের সদস্য বা একই গৃহের বাসিন্দার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হুমকির অভিযোগও রয়েছে, যা ক্লাস ‘এ’ মিসডিমিনার হিসেবে বিবেচিত।

তবে কোনো উপাসনালয়কে লক্ষ্য করে হুমকির প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আদালতের নথি অনুযায়ী, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মনোজের জামিনের জন্য দিতে হবে এক লাখ মার্কিন ডলার। আর সন্ত্রাসী হুমকির অভিযোগে জামিনে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ ডলার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত