Ajker Patrika

ভারত-পাকিস্তান

সিঁদুরের জবাবের পর যুদ্ধবিরতি

  • পাল্টা জবাবে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনিয়ান আল-মারসুস’
  • ভারতের তিন ঘাঁটিতে হামলা, পাকিস্তানেও তিন ঘাঁটিতে হামলা
  • যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি: ট্রাম্প
যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় আনন্দের জোয়ার বয়ে গেছে পাকিস্তানে। উচ্ছ্বসিত মানুষ সড়কে নেমে এসে মিষ্টি বিতরণ করেন। গতকাল পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতানে। ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় আনন্দের জোয়ার বয়ে গেছে পাকিস্তানে। উচ্ছ্বসিত মানুষ সড়কে নেমে এসে মিষ্টি বিতরণ করেন। গতকাল পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতানে। ছবি: এএফপি

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে ভারত পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করেছিল। তাৎক্ষণিক সে হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। পাশাপাশি হুংকার দিয়েছিল, ‘যথোপযুক্ত’ জবাব দেবে তারা। সেই জবাব ইসলামাবাদ গত শুক্রবার দিবাগত রাতে দিয়েছে ‘অপারেশন বুনিয়ান আল-মারসুস’। এই নাম আরবি ভাষা থেকে নেওয়া। এর অর্থ ‘দুর্ভেদ্য প্রাচীর’।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের জন্য তিনি উভয় পক্ষকে অভিনন্দন জানান। ভারত ও পাকিস্তানের তরফ থেকেও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলা হয়। এর পর থেকেই উপমহাদেশের পারমাণবিক শক্তিধর দুই বৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। সন্ত্রাসী হামলার দুই দিন পর দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) এপার-ওপার থেকে গুলিবিনিময় শুরু হয়। টানা প্রায় দুই সপ্তাহ এই অবস্থা চলার পর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারতীয় বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে। ভারত সে সময় দাবি করেছিল, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’ লক্ষ্য করে অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতীয় বাহিনী বেসামরিক বাড়িঘর ও মসজিদ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

পাকিস্তান বাহিনী ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবিও করে সে সময়। তবে ভারত গতকাল শনিবার পর্যন্ত এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি। ভারতের ওই অভিযানের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। রাত নামলেই দুই পক্ষের মধ্যে গোলা বিনিময় চলতে থাকে। একপর্যায়ে এই উত্তেজনা ‘ড্রোন যুদ্ধে’ পরিণত হয়। পাকিস্তানের দাবি, তারা দুই দিনে ভারতের ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। আর ভারত দাবি করেছে, তারা লাহোরে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। এই ড্রোন যুদ্ধের মধ্যেও দুই বাহিনীর গোলা বিনিময় অব্যাহত থাকে। কাশ্মীরে ভারতের সামরিক স্থাপনায় পাকিস্তানের গোলা আঘাতও হেনেছে। এ ছাড়া কাশ্মীরের জম্মু ও পাঞ্জাবের পাঠানকোট রাত নামলেই হয়ে উঠছে ভুতুড়ে নগরী। হামলার আশঙ্কায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ, স্থানীয়দের বাড়িঘরের আলো নিভিয়ে রাখতে পরামর্শ দিচ্ছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থার মধ্যেই গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জবাবে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ান আল-মারসুস’ পরিচালনার দাবি করল।

বার্তা সংস্থা এএফপি সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, এবার ভারত ও পাকিস্তান যে সংঘাতে জড়িয়েছে, তা গত কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ। এরই মধ্যে উভয় পক্ষ মিলিয়ে মোটের ওপর ৬০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অনেকে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ৩২টি বিমানবন্দর বন্ধ রেখেছে, সীমান্তবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও আজ রোববার স্থানীয় সময় দুপুর (গ্রিনিচ সময় সকাল ৭টা) পর্যন্ত আকাশসীমা বন্ধ রেখেছে।

পাকিস্তানের পাল্টা জবাব

পাকিস্তান গতকাল শনিবার দাবি করেছে, তাদের তিনটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ভারত শুক্রবার দিবাগত রাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দিয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ভৌমিকা সিং গতকাল এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের উচ্চগতির কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের কয়েকটি বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। তবে খুব সামান্যই ক্ষতি হয়েছে।

এর আগে পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এসব ঘাঁটির একটি রাওয়ালপিন্ডিতে, যা রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভারতীয় গোলার আঘাতে শুক্রবার দিবাগত রাতে আজাদ কাশ্মীরে ১১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

মধ্যরাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরিফ ভারতকে সতর্ক করে বলেন, ‘এবার আপনারা আমাদের জবাবের অপেক্ষায় থাকুন।’

পরে গতকাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘আমরা ভারতকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছি এবং নিরপরাধ নাগরিকদের রক্তের প্রতিশোধ নিয়েছি।’

এএফপি জানায়, গত রাতে গোলাগুলির সময় বার্তা সংস্থাটির প্রতিনিধিরা ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, শ্রীনগরের পাশেই অবস্থিত ভারতীয় বাহিনীর অবন্তীপোরা সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) ভারতীয় সেনাবাহিনী এক পোস্টে বলেছে, ‘পাকিস্তানের ড্রোন ও অন্যান্য গোলা হামলা আমাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তে অব্যাহত রয়েছে।’ সেনাবাহিনী দাবি করেছে, পাঞ্জাবের অমৃতসরে সামরিক ঘাঁটির ওপর দিয়ে শত্রুবাহিনীর বেশ কয়েকটি ড্রোন উড়তে দেখা গেছে। সেগুলো ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে।

পাকিস্তানের গোলার আঘাতে প্রাণ গেছে স্বজনের। প্রিয়জন হারানোর শোকে আর্তনাদ করছেন পরিবারের সদস্যরা। গতকাল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মুতে। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের গোলার আঘাতে প্রাণ গেছে স্বজনের। প্রিয়জন হারানোর শোকে আর্তনাদ করছেন পরিবারের সদস্যরা। গতকাল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মুতে। ছবি: এএফপি

জম্মু ছাড়ার হিড়িক

এএফপি জানায়, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর জম্মুতে পাকিস্তানের হামলায় আতঙ্কিত হয়ে গতকাল শহর ত্যাগের হিড়িক পড়ে। জম্মু থেকে ছাড়া বিশেষ ট্রেনে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না এ দিন। ৪১ বছর বয়সী করণ ভার্মা বলেন, রাতজুড়ে বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে। জম্মু ত্যাগ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

ট্রেনে চেপে বসা যাত্রীদের বেশির ভাগই ছিলেন দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ। তাঁদের অনেকেই ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে এসে কাশ্মীরে কাজ করছিলেন। পাকিস্তানের হামলায় আতঙ্কিত হয়ে তাঁরা ঘরে ফেরার চেষ্টা করছিলেন।

যুদ্ধবিরতিতে রাজি উভয় পক্ষ

বিবিসি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাতজুড়ে আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি অবিলম্বে কার্যকরে সম্মত হয়েছে। সাধারণ বোধবুদ্ধি ও অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগানোর জন্য আমি উভয় দেশকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

সিএনএন জানায়, ট্রাম্পের পোস্টের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেন, পাকিস্তান ও ভারত তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তান সব সময়ই নিজের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রশ্নে ছাড় না দিয়ে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে।

বিবিসি জানায়, ভারতও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রী বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের বিরুদ্ধে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে সব ধরনের গোলাগুলি ও সামরিক পদক্ষেপ বন্ধের বিষয়ে একমত হয়েছে। ভারতীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।

এএফপি জানায়, ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্পের পোস্টের আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকবার ফোন করে উভয় পক্ষকে পরস্পরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে আহ্বান জানান। মার্কো রুবিওর ফোনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। তিনি জানান, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন।

পরে এক্সে এক পোস্টে মার্কো রুবিও লেখেন, ‘প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণাবলি ব্যবহার করে শান্তির পথ বেছে নেওয়ার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেহবাজ শরিফের প্রশংসা করছি।’ তিনি জানান, তিনি এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বিগত ৪৮ ঘণ্টা ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শেহবাজ শরিফসহ ভারতীয় ও পাকিস্তানি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কথা বলেছেন।

এদিকে চীন এবং শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ও উত্তেজনা কমাতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়ার, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।

গত বছর রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার সিঙ্ক্রো ইভেন্টে সোনা জেতেন ইউক্রেনীয় ডাইভার সোফিয়া লাইসকুন (২৩)। তবে সম্প্রতি আকস্মিকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য দেখানোর পর তাঁকে চরম শাস্তির মুখে পড়তে হলো। ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশন (ইউডিএফ) ফেডারেশনের অধীনে পাওয়া তাঁর সমস্ত খেতাব, পদক ও পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

ইউডিএফ জানিয়েছে, লাইসকুন দেশের ক্রীড়া মহলের কোনো পক্ষকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ দলবদলের বিষয়ে ফেডারেশন, কোচিং স্টাফ এমনকি ইউক্রেনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও অবগত করেননি। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত দলবদলের ঘটনায় ফেডারেশন ‘তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা’ জানিয়েছে।

ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে: ‘এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্যই নয়, এগুলো জাতীয় দল এবং ইউক্রেনের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। যে মুহূর্তে পুরো ইউক্রেনীয় দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করছে, ঠিক তখনই একজন চ্যাম্পিয়নের এমন পদক্ষেপ পুরো প্রচেষ্টাকেই হেয় করে।’

ইউক্রেনীয় ফেডারেশনের এই সমালোচনার বিপরীতে লাইসকুন তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। রাশিয়ার সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনে তিনি তাঁর কোচদের অধীনে আর পেশাদারভাবে ‘উন্নতি’ করতে পারছিলেন না।

লাইসকুন অভিযোগ করেন, তাঁর ইউক্রেনীয় কোচিং স্টাফে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ‘সবাই জিমন্যাস্ট বা ট্রাম্পোলিন ক্রীড়াবিদ ছিলেন’, এটি আন্তর্জাতিক ডাইভিং-এর মতো বিশেষায়িত খেলার জন্য অনুকূল ছিল না। তাঁর মতে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অভাবই তাঁকে দলবদলে উৎসাহিত করেছে।

লাইসকুনের দলবদলের পর ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইউক্রেন জাতীয় দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি, ফেডারেশনের অধীনে সোফিয়া লাইসকুনের অর্জিত সমস্ত খেতাব ও পুরস্কার বাতিল করার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবে, যাতে বর্তমান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ক্রীড়াবিদের ওপর ‘স্পোর্টস কোয়ারেন্টাইন’ আরোপ করা হয়। এর অর্থ হলো, ইউক্রেন চাচ্ছে, লাইসকুন যেন কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর রাশিয়া এবং বেলারুশের ক্রীড়াবিদদের ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিক্স ইভেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ ছিল। তবে সেই বিধিনিষেধগুলো সম্প্রতি শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে রুশ এবং বেলারুশীয় ক্রীড়াবিদদের তাঁদের জাতীয় পতাকা বা প্রতীক ছাড়াই নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে তাঁরা দলগত ইভেন্টেও নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশ নিতে পারবেন। লাইসকুন-এর এই দলবদল এমন এক সময়ে ঘটল, যখন রাশিয়ার ক্রীড়াবিদেরা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন বাহিনীর প্রধান হয়েই পাকিস্তানকে ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছানোর ঘোষণা আসিম মুনিরের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৬
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছেন, পাকিস্তান এখন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আওয়াইন-ই-সদরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিম মুনির বলেন, ‘সবই তো ঠিক আছে, আপনাদের চোখের সামনেই তো সব। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, আর এখন থেকে পাকিস্তান আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।’ তাঁর এই মন্তব্য এল ঠিক এমন এক সময়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি নোট প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির কাছে পাঠিয়েছিলেন। তাতে সেনাপ্রধান মুনিরকে পাকিস্তানের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসেবে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হয়। এরপরই প্রেসিডেন্ট এই অনুমোদন দেন।

সত্তরের দশকের পর দেশটির সামরিক কমান্ডে এটি হলো সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এই নিয়োগে অনুমোদন দেন। খবর দ্য ডনের

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে পাঁচ বছরের জন্য সেনাপ্রধানের (সিওএএস) সঙ্গে সমান্তরালভাবে সিডিএফ হিসেবেও নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন।’ এই বিবৃতি বহুদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাল। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজই প্রেসিডেন্টকে এই নতুন দ্বৈত দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে সেনাবাহিনীর প্রধান এবং চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবে নিয়োগের সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।’

এই নতুন ব্যবস্থা পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীতে ২৪৩ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে একটি অফিসের অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও কৌশলগত ক্ষমতাকে একত্র করা হয়েছে। সংশোধিত ২৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করবেন, যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবেও কাজ করবেন।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল থেকে চালু থাকা তিন বাহিনীর সমন্বয় ব্যবস্থা—চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) অফিস বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে যৌথ কমান্ডের ইন্টিগ্রেশন সিডিএফের হাতে চলে এল।

সাংবিধানিক এই আমূল পরিবর্তনকে সামরিক বাহিনীর আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য সরকার ২৭তম সংশোধনীর পরপরই ১৯৫২ সালের পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টেও (পিএএ) সংশোধন আনে। পিএএর ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (১) এখন জানাচ্ছে, ‘প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর প্রধান যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হবেন [...], তাঁর মেয়াদ এই ধারার অধীনে ওই পদের বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে শুরু হবে।’

আরও বলা হয়েছে, এই প্রথম সিওএএসসহ-সিডিএফের বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ‘বর্তমান সেনাপ্রধানের বিদ্যমান মেয়াদ ওই বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে বলে গণ্য হবে।’ ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (৩) অনুযায়ী, সিওএএস যিনি একই সঙ্গে সিডিএফেরও দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর ‘শর্তাবলি ও নিয়ম’ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট স্থির করবেন।

ফিল্ড মার্শাল মুনির ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর ১৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সরকার পিএএ-তে পরিবর্তন আনে, যেখানে সিজেসিএসসির মেয়াদ তিন বছর অপরিবর্তিত রেখে বাকি তিন বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। একই সংশোধনীতে সার্ভিস চিফদের পুনর্নিয়োগ বা তাঁদের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়, যা আগে সর্বোচ্চ তিন বছর ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ায় ইউরোভিশন বয়কট ৪ দেশের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউরোভিশনে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি গায়িকা ইউভাল রাফায়েল। ছবি: এএফপি
ইউরোভিশনে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি গায়িকা ইউভাল রাফায়েল। ছবি: এএফপি

আগামী বছরের অর্থাৎ, ২০২৬ সালের ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা বয়কট করবে আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও স্লোভেনিয়া। কারণ আয়োজকেরা ইসরায়েলকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দিয়েছে। দেশগুলোর অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালানো ইসরায়েলকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া ঠিক হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধ এবং নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে এসব দেশ ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার দাবি করেছিল। জেনেভায় এক বৈঠকে গোপন ভোটের দাবি তোলে স্পেনের সম্প্রচার সংস্থা আরটিভিই। তারা জানায়, আয়োজনকারীরা সেই দাবি মানেনি। এতে উৎসবের প্রতি তাদের অবিশ্বাস আরও বেড়েছে।

আয়ারল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম আরটিই জানায়, গাজার ভয়াবহ প্রাণহানি এবং চলমান মানবিক সংকটের সময়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। স্পেন ইউরোভিশনের ‘বিগ ফাইভ’ দেশের একটি। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে স্পেনের শিল্পীরা সরাসরি ফাইনালে ওঠে। কারণ এসব দেশের সম্প্রচার সংস্থা ইবিইউকে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রায় ৫০টি সম্প্রচার সংস্থা—যার মধ্যে বিবিসিও আছে—ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের (ইবিইউ) বৈঠকে যোগ দেয়। প্রতিবছর ১৫ কোটির বেশি দর্শক এই প্রতিযোগিতা দেখে, তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। ইসরায়েল তাদের অংশগ্রহণকারী ইউভাল রাফায়েলের পক্ষে ভোট বাড়াতে অন্যদের সাহায্য নিয়েছে, এমন অভিযোগের পর সরকার ও তৃতীয় পক্ষের প্রভাব ঠেকাতে নতুন নিয়মে সম্মতি চাইছিল ইবিইউ।

বিবিসি জানায়, এই নিয়ম মানার ভোটের সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। সদস্যরা রাজি হলে ইসরায়েলকে নিয়ে আর কোনো ভোট হবে না। ইবিইউ জানায়, যারা নতুন নিয়ম মানতে সম্মত, তারা ইউরোভিশন ২০২৬-এ অংশ নিতে পারবে। ইউরোভিশন পরিচালক মার্টিন গ্রিন বলেন, সদস্যরা ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিয়ে খোলামেলা বিতর্কের সুযোগ পেয়েছে। ভোটে দেখা গেছে, অধিকাংশই চায় এই প্রতিযোগিতা রাজনৈতিক মঞ্চ না হোক, নিরপেক্ষতা বজায় থাকুক।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এটি সংহতি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতীক। ইসরায়েল বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার যোগ্য। ইসরায়েলের সম্প্রচার সংস্থা কান–এর প্রধান গলান ইয়োখপাজ বলেন, ইসরায়েলকে সরাতে চাওয়া সংস্কৃতিগত বয়কট ছাড়া কিছু নয়। আজ বয়কট শুরু হলে কাল অন্যদেরও ক্ষতি হতে পারে। ইউরোভিশনের ৭০ তম বছরে কি এমন স্মৃতি আমরা চাই?

যুক্তরাজ্যে ইউরোভিশন দেখায় বিবিসি। তারা জানায়, ইবিইউর নিয়ম কার্যকরে তারা সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। তবে এই সিদ্ধান্ত ইউরোভিশন সম্প্রদায়ের ভেতর বড় বিভাজন তৈরি করেছে। ডাচ সম্প্রচার সংস্থা অ্যাভরোট্রস জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণ তাদের মূল মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না।

স্পেনের আরটিভিই জানায়, গত সেপ্টেম্বরেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল—ইসরায়েল থাকলে স্পেন ইউরোভিশন থেকে সরে দাঁড়াবে। এই কারণে ২০২৬ সালের ফাইনাল ও সেমিফাইনাল তারা সম্প্রচারও করবে না। স্লোভেনিয়ার আরটিভিও জানায়, তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত। নিয়ম বদলালেও মত বদলায়নি। ন্যায়নীতি রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। বেলজিয়ামের সম্প্রচার সংস্থা বলেছে, তারা কয়েক দিনের মধ্যে অবস্থান জানাবে।

অন্যদিকে নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ডসহ নর্ডিক দেশগুলো নিয়ম সংশোধনকে সমর্থন করেছে। তবে আইসল্যান্ড এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। জার্মানি, যারা আগে বলেছিল ইসরায়েল বাদ গেলে তারাও সরে দাঁড়াবে, সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের সংস্থা এআরডি জানায়, তারা পরের বছর অংশ নিতে আগ্রহী এবং বৈচিত্র্য ও সংহতির উৎসব হিসেবে এটিকে দেখে। তবে যারা সরে দাঁড়িয়েছে, তাদের সিদ্ধান্তকে তারা সম্মান করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুবই সাধারণ খাবার খান পুতিন, দেশে-বিদেশে খাদ্যতালিকায় যা থাকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে যখন ভ্লাদিমির পুতিনের ৪-৫ ডিসেম্বরের রাষ্ট্রীয় সফর ও ২৩ তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তখন কূটনৈতিক আলোচনার বাইরেও একটি বিষয় নজর কেড়েছে—রুশ প্রেসিডেন্টের খাবার সংক্রান্ত অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্য বিশ্বনেতাদের মতো তিনিও আনুষ্ঠানিক ভোজসভায় অংশ নেন, তবে তাঁর খাবার সবচেয়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

পুতিন হোটেল বা আয়োজক দেশের কর্মীদের তৈরি খাবার গ্রহণ করেন না। তাঁর খাবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করা হয়।

বিদেশ সফরে পুতিনের খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রায় সামরিক নির্ভুলতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কঠোরতার মূল কারণ হলো নিরাপত্তা—বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য বিষক্রিয়া বা গুপ্তহত্যার চেষ্টা এড়াতে এই ব্যবস্থা অপরিহার্য। পুতিনের জন্য খাবার পরিবেশনের আগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়:

বিশেষ শেফ ও লজিস্টিকস: প্রশিক্ষিত রুশ শেফ, পুষ্টিবিদ এবং সহযোগী কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ফ্লাইটে আসেন। তাঁরাই বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত রান্নাঘরে পুতিনের খাবার তৈরি করেন।

মোবাইল পরীক্ষাগার: তিনি ভ্রমণের সময় একটি অত্যাধুনিক মোবাইল খাদ্য পরীক্ষাগারও সঙ্গে রাখেন। এই ল্যাব পরিবেশনের আগে প্রতিটি খাদ্য এবং পানীয়ের উপাদান দ্রুত পরীক্ষা করে সম্ভাব্য বিষ বা ক্ষতিকারক বস্তুর উপস্থিতি যাচাই করে।

নিয়ন্ত্রিত উপাদান: খাবারের উপাদান হয় সরাসরি রাশিয়া থেকে আনা হয়, নতুবা আয়োজক দেশে দীর্ঘ পরীক্ষার মাধ্যমে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। শুধু অনুমোদিত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা উপাদানই তাঁর রান্নাঘরে প্রবেশাধিকার পায়।

বিশেষ পরিবেশন: আনুষ্ঠানিক ভোজসভার ক্ষেত্রেও এই সতর্কতা বজায় থাকে। যদিও তিনি উপস্থিত থাকেন, কিন্তু সাধারণত তাঁর প্লেটে পরিবেশিত খাবারটি নিজস্ব শেফদের দ্বারা পৃথকভাবে প্রস্তুতকৃত হয়। খাদ্য পরিবেশনের আগে প্রশিক্ষিত পরীক্ষকদের দ্বারা চূড়ান্ত যাচাই করা হয়। এই প্রক্রিয়া মস্কো এবং বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হয়।

পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস

খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে এত কড়াকড়ি থাকলেও, পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা কিন্তু বেশ সাধারণ। তাঁর জীবনযাপনও সুশৃঙ্খল। তিনি জমকালো ভোজের পরিবর্তে পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাবার পছন্দ করেন।

সকালের নাশতা: তাঁর সকাল শুরু হয় উচ্চ-প্রোটিন এবং কম-চিনিযুক্ত খাবার দিয়ে। সাধারণত মধুসহ ভরোগ (Tvorog, রুশ কটেজ চিজ) অথবা পরিজ (স্টার্চ ও পানি বা দুধ সহযোগে তৈরি) প্রধান খাদ্য। এ ছাড়া তিনি তাজা ফলের রস এবং মাঝে মাঝে কাঁচা কোয়েলের ডিম বা অমলেট গ্রহণ করেন। তাঁর খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত মিষ্টি বা চর্বিযুক্ত খাবারের স্থান নেই।

দুপুরের ও রাতের খাবার: পুতিন লাল মাংসের চেয়ে মাছ বেশি পছন্দ করেন, বিশেষত গ্রিলড বা স্মোকড মাছের পদ। ভেড়ার মাংসও তাঁর প্রিয়। তবে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত রান্না তিনি এড়িয়ে চলেন। তাঁর বেশির ভাগ খাবারেই টমেটো, শসা এবং অন্যান্য সাধারণ সবজির সালাদ বাধ্যতামূলক। এই সবজিগুলো ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দেয়।

পানীয় ও ডেজার্ট: পুতিন মিষ্টি বেক করা সামগ্রী, কেক বা বাটারি পেস্ট্রি একদম পছন্দ করেন না। পানীয়ের ক্ষেত্রে তাজা জুস, সাধারণ ভেষজ পানীয় এবং কেফির (এক প্রকার ফার্মেন্টেড দুগ্ধজাত পানীয়) পান করেন। তবে তাঁর সুশৃঙ্খল রুটিনের মাঝেও একটি ছোট দুর্বলতা রয়েছে—তা হলো পেস্তা আইসক্রিম!

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুতিনের এই খাদ্যাভ্যাস তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ: সংযত, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ঐতিহ্যমুখী। পুষ্টি, প্রোটিন এবং সহজলভ্যতা ওপর তাঁর এই জোর, তাঁর দীর্ঘ ও অনিয়মিত কর্মঘণ্টার জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতিশীল ক্যালরির জোগান নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত