Ajker Patrika

সিরিয়ায় এক বছরে ৬০০ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, দখল করেছে ভূমি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিদ্রোহী জোটের ঝটিকা অভিযানে আল-আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে দামেস্কের পতন হওয়ার পর এক বছর পূর্ণ হলো। তবে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের সুযোগ নিয়ে প্রতিবেশী সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে উল্লেখযোগ্যভাবে সামরিক অভিযান বাড়িয়েছে ইসরায়েল। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, প্রধান বিমানবন্দর এবং যুদ্ধবিমানসহ সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে চলেছে এসব হামলা।

আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা-এর তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে (৮ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ২৮ নভেম্বর ২০২৫) ইসরায়েল সিরিয়া জুড়ে ৬০০ টিরও বেশি বিমান, ড্রোন বা আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে। এর অর্থ, প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুটি করে আক্রমণ চালানো হয়েছে সিরিয়ার ভূখণ্ডে।

ইসরায়েলি আক্রমণের বেশির ভাগই হয়েছে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে—কুনেইত্রা, দেরা ও দামেস্কের গভর্নরশিপগুলোতে। রেকর্ড করা মোট হামলার প্রায় ৮০ শতাংশই এই অঞ্চলে সংঘটিত। দেখা গেছে—

কুনেইত্রা: ইসরায়েল-অধিকৃত গোলান মালভূমির সীমান্তবর্তী এই গভর্নরশিপটি কমপক্ষে ২৩২ বার হামলার শিকার হয়েছে।

দেরা: ১৬৭টি হামলার শিকার হয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক লক্ষ্যবস্তু ছিল দেরা, যেখানে সাবেক সরকারের সামরিক স্থাপনা এবং সন্দেহজনক অস্ত্র সমাবেশ স্থলগুলোয় নজর দেওয়া হয়।

দামেস্ক: গুরুত্বপূর্ণ সামরিক মহাসড়ক এবং লজিস্টিক হাব রয়েছে দামেস্ক গভর্নরশিপে। এই এলাকায় কমপক্ষে ৭৭ বার হামলা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী দামেস্ক শহরেই ২০ বার হামলা চালানো হয়েছে। গত ১৬ জুলাই ইসরায়েলি বিমান হামলায় সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি একটি স্থানে আঘাত হানে।

ইসরায়েল বহু বছর ধরেই সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে আসছে। তারা বরাবরই যুক্তি দেয়, ইরানি সামরিক ঘাঁটিগুলো নির্মূল করার লক্ষ্যেই তাদের এই অভিযান। কিন্তু আসাদ সরকারের পতনের পর তেল আবিব দাবি করছে, তারা অস্ত্র যাতে ‘চরমপন্থীদের’ হাতে না যায়, তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। ইসরায়েলের এই ‘চরমপন্থী’ তালিকায় সম্প্রতি আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার নেতৃত্ব দেওয়া প্রধান বিরোধী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-ও রয়েছে।

আসাদের পতনের মাত্র চার দিন পরেই ইসরায়েল ঘোষণা করে, তারা সিরিয়ার ৮০ শতাংশেরও বেশি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, যার ফলে নতুন সিরিয়া কোনো সামরিক হুমকি তৈরি করতে পারবে না।

অন্যদিকে, আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া আহমেদ আল-শারা ক্রমাগত বলে আসছেন, তাঁর সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সংঘাত চায় না এবং কোনো বিদেশি শক্তিকে সিরিয়ার ভূমি ব্যবহার করে হামলা চালানোর অনুমতি দেবে না।

আসাদের পতনের পরের দিনগুলোতে ইসরায়েলি সেনারা গোলান মালভূমির সিরিয়া অংশে প্রবেশ করে, যা ১৯৭৪ সালের জাতিসংঘ-মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জাতিসংঘ-নিয়ন্ত্রিত ডিমিলিটারাইজড জোনের (অসামরিক অঞ্চল) মধ্যে জাবাল আল-শেখ এবং সংলগ্ন গ্রামগুলোতে বেশ কয়েকটি সামরিক চৌকি স্থাপন করেছে। এখানে তারা প্রায়শই বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালায়।

ইসরায়েলের এই ভূমি দখলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। জাতিসংঘ এবং বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্র ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন ও সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে নিন্দা করেছে।

তবে এই নিন্দা সত্ত্বেও, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা দেন, ইসরায়েলি বাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্য এই এলাকায় থাকবে—যাতে তারা ‘ইসরায়েলি নাগরিকদের রক্ষা করতে’ পারে এবং ‘শত্রু শক্তিকে সীমান্তে ঘাঁটি স্থাপন করা থেকে বিরত রাখতে’ পারে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েল-অধিকৃত গোলান মালভূমি ১ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এর সঙ্গে, তারা জাতিসংঘ বাফার জোনের ২৩৫ বর্গ কিলোমিটার এবং বাফার জোনের বাইরে সিরিয়ার আরও প্রায় ৪২০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল দখল করেছে। এই অতিরিক্ত দখল করা অঞ্চলটির আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার শহরের আকারের প্রায় সমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুর ট্র্যাজেডি: নাটোরে পৌঁছাল মা-মেয়ের মরদেহ, দুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল চাবি

পদোন্নতির ডাক পেলেন শেখ হাসিনার সাজা প্রত্যাখ্যান করা শিক্ষক মাসুদ রানা

শাজাহানপুরে পিস্তলসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা আটক

আজকের রাশিফল: বিনিয়োগে মায়ের পরামর্শ মেনে চলুন, অতি রোমান্টিকতা বিপত্তি ডাকবে

ভারতের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি, এবার টার্গেট কৃষিপণ্য

এলাকার খবর
Loading...