Ajker Patrika

আসাদকে উৎখাতের সম্মুখ সমর ও নেপথ্যে কারা, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ কী

আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৩২
হামা শহরে বিদ্রোহীদের একটি সামরিক যান। ছবি: এএফপি
হামা শহরে বিদ্রোহীদের একটি সামরিক যান। ছবি: এএফপি

সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে লড়াইরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আজ রোববার রাজধানী দামেস্ক দখলের ঘোষণা দিয়েছে। ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের নেতৃত্বে বিদ্রোহী জোটের অগ্রগতি দীর্ঘদিনের স্থবিরতা ভেঙে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি হঠাৎ পাল্টে দিয়েছে।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৩ বছর আগে, আরব বসন্তের সময়। যা পরে এক রক্তাক্ত, বহুমুখী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এই সংঘর্ষে দেশীয় বিরোধী গোষ্ঠী, চরমপন্থী গোষ্ঠী এবং যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক শক্তি জড়িয়ে পড়ে। এই যুদ্ধে পাঁচ লাখেরও বেশি সিরিয়ান নিহত হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।

মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনী দ্রুতগতিতে আক্রমণ চালিয়ে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পাশাপাশি দেশটির রাজধানী দখল করে নিয়েছে। যা দেশটিতে এক যুগের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতা ভেঙে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশত্যাগ করেছেন।

আপাতদৃষ্টিতে সিরিয়ায় সরকারবিরোধী গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির সূচনা মনে হলেও দেশটি আসলে কোন দিকে যাবে তা জানার জন্য আরও অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে দেশটিতে বিভিন্ন স্থানীয় শক্তি ও আন্তর্জাতিক শক্তি জড়িত থাকায় আগামী দিন যে খুব একটা সহজ হবে না তা অনুমেয়।

কে কার বিরুদ্ধে লড়েছে

বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বে সরকারি বাহিনী

বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বে সিরিয়ার সরকার ২০১১ সালে শুরু হওয়া দীর্ঘস্থায়ী এবং ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধের অন্যতম পক্ষ। তিনি ২০০০ সালে তাঁর বাবা হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন। হাফিজ আল-আসাদ ১৯৭১ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। হাফিজ মারা যান ২০০০ সালে। আসাদ শুরুতে নিজেকে আধুনিক সংস্কারক হিসেবে উপস্থাপন করলেও আরব বসন্তের সময় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেন, যা দেশজুড়ে বিদ্রোহের সৃষ্টি করে।

হামায় একটি সরকারি ভবনে আসাদের ছবিতে আগুন লাগিয়ে দেয় স্থানীয়রা। ছবি: এএফপি
হামায় একটি সরকারি ভবনে আসাদের ছবিতে আগুন লাগিয়ে দেয় স্থানীয়রা। ছবি: এএফপি

যুদ্ধের কয়েক বছর পর ইরান, রাশিয়া এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার সহায়তায় আসাদ সরকার বিদ্রোহীদের কাছ থেকে হারানো বেশির ভাগ অঞ্চল পুনর্দখল করে। তবে সম্প্রতি বাশার আল-আসাদের মিত্ররা বিভিন্ন সংঘাতে দুর্বল হয়ে পড়েছে বা অন্যদিকে মনোযোগ দেওয়ায় আসাদ সরকার আবার বিপদে পড়ে।

হায়াত তাহরির আল-শাম

হায়াত তাহরির আল-শাম (শাম মুক্তির সংগঠন) সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের শুরুতে জিহাদি গোষ্ঠী আল-নুসরা ফ্রন্ট হিসেবে গঠিত হয়েছিল। এটি আসাদবিরোধী বাহিনীর বিরুদ্ধে শত শত আক্রমণ চালিয়েছে, যার মধ্যে আত্মঘাতী হামলাও ছিল। প্রথমদিকে ইসলামিক স্টেট ও পরে আল-কায়েদার সঙ্গে গোষ্ঠীটির যোগসূত্র ছিল। তবে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি আল-নুসরা ফ্রন্ট তাদের চরমপন্থী পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এবং অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে হায়াত তাহরির আল-শাম গঠন করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এটিকে এখনো একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করে।

গোষ্ঠীটির নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জালানি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, তাঁর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে নিপীড়নমূলক শাসন থেকে সিরিয়াকে মুক্ত করা। তিনি ইদলিব অঞ্চলে সরকারি সেবা দিয়ে করে বৈধতা অর্জনের চেষ্টা করছেন।

কুর্দি বাহিনী

সিরিয়ার কুর্দি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাহিনী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্থানীয় মিত্র হয়ে ওঠে এবং সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের অধীনে লড়াই চালায়। গোষ্ঠীটি পরাজিত হওয়ার পর কুর্দি-নেতৃত্বাধীন বাহিনী উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলে। তবে তাদের দীর্ঘদিনের শত্রু তুরস্ক। কারণ দেশটি মনে করে, সিরিয়ার এই গোষ্ঠীটির সঙ্গে তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। এই বিষয়টি কুর্দি যোদ্ধাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এ ছাড়াও সিরিয়ার বিভিন্ন মিলিশিয়া দল রয়েছে, যাদের নিজস্ব এজেন্ডা ও মিত্র রয়েছে।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিদেশি খেলোয়াড়

তুরস্ক

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তুরস্ক একাধিকবার সীমান্ত পেরিয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ চালিয়েছে, মূলত কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে। বর্তমানে তুরস্ক কার্যত সিরিয়ার উত্তর সীমান্ত বরাবর একটি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে। তুরস্ক সিরিয়ার কুর্দিদের বিরোধিতা করলেও সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মির মতো গোষ্ঠীগুলোকেও সমর্থন করে। এটি সিরিয়ার বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট। বিশ্লেষকেরা বলছেন, হায়াত তাহরির আল-শামের নেতৃত্বাধীন আক্রমণেও তুরস্ক সম্ভবত পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছে।

দামেস্কের উপকণ্ঠে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জনতার উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি
দামেস্কের উপকণ্ঠে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জনতার উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান শুক্রবার বিদ্রোহীদের অগ্রগতিকে সরাসরি সমর্থন দেন। ইস্তাম্বুলে শুক্রবারের জুমার নামাজ শেষে তিনি তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘...ইদলিব, হামা, হোমস এবং অবশ্যই লক্ষ্য হলো দামেস্ক। বিরোধীদের মার্চ অব্যাহত রয়েছে। আমাদের ইচ্ছা, সিরিয়ায় এই অগ্রগতি কোনো দুর্ঘটনা বা বিপর্যয় ছাড়াই চলতে থাকবে।’ সিরিয়ার নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা (বাশার আল— ) আসাদকে আহ্বান জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আসুন, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ একসঙ্গে নির্ধারণ করি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা ইতিবাচক সাড়া পাইনি।’

রাশিয়া

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বিদেশি সমর্থকদের একটি রাশিয়া। আসাদের বাহিনীকে সমর্থন দিতে রুশ সৈন্য ও যুদ্ধবিমান পাঠানোর পাশাপাশি সিরিয়ায় কৌশলগত সামরিক উপস্থিতি ধরে রেখেছে রাশিয়া। এ অঞ্চলে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য তারা বিমান ও নৌঘাঁটি ব্যবহার করে।

তবে ইউক্রেনের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের কারণে রাশিয়া সিরিয়ার সরকারকে পূর্বের মতো সক্রিয়ভাবে সমর্থন করতে পারছে না বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। বিদ্রোহীদের অগ্রগতি ঠেকাতে রুশ বিমান হামলা তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে।

ইরান ও হিজবুল্লাহ

সিরিয়া হিজবুল্লাহ, হামাস এবং ইয়েমেনের হুতিদের নিয়ে গঠিত ইরানের নেতৃত্বে ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধ অক্ষের’ একটি মূল অংশ। এই অক্ষের লক্ষ্য হলো ইসরায়েল ধ্বংস করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান প্রভাব হ্রাস করা। ইরান সিরিয়া এবং ইরাক হয়ে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র পাচার করে। এর বিনিময়ে ইরান ও হিজবুল্লাহ সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আসাদের পক্ষে হাজার হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছে। গত শুক্রবার ইরান তার সামরিক কমান্ডার ও কর্মীদের সিরিয়া থেকে সরিয়ে নেওয়া শুরু করে। এটি সিরিয়ায় ইরানের অবস্থান হারানোর একটি ইঙ্গিত ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। ওবামা প্রশাসন শুরুতে বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করেছিল, যদিও তাতে সীমিত ফলাফল মিলেছিল। আবার ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা ও কুর্দি বাহিনীর সহায়তায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তেলক্ষেত্র এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ইরাক ও জর্ডান সীমান্তের কাছে একটি ঘাঁটিতে প্রায় ৯০০ সৈন্য এখনো মোতায়েন রয়েছে।

ইসরায়েল সিরিয়ায় বেশির ভাগ সময় হিজবুল্লাহ ও ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। বিশেষত শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের, অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রগুলো এবং ইরান থেকে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র পাঠানোর করিডর লক্ষ্যবস্তুতে রয়েছে।

বিদ্রোহীদের বিজয় কী অর্থ বহন করে?

বিদ্রোহীরা বলছে, তাদের লক্ষ্য হলো আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা। তবে তাঁর পতন হলে কী ঘটবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই তাঁকে সিরিয়ার নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিল, যদিও তিনি বিরোধীদের দমন এবং আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছেন।

অনেক দেশের কাছে আসাদ কিছুটা স্থিতিশীলতার প্রতীক, ফলে বিদ্রোহীদের ক্ষমতা দখল অঞ্চলে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। গত বছর কিছু আরব দেশ দীর্ঘকাল আসাদের সরকারকে বয়কট করার পর কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা শুরু করেছে।

সরকারিভাবে আমেরিকান কর্মকর্তারা হায়াত তাহরির আল-শামের বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। তবে মার্কিন সরকারের কিছু অংশ মনে করে, গোষ্ঠীটির বাস্তববাদী হওয়ার প্রবণতা সত্যিকারের হতে পারে। নেতারা জানেন, যদি তাদের জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে তারা সিরিয়ার সরকারে যোগদান বা নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে না।

বিদ্রোহীরা সফল হোক বা না হোক, ইসরায়েল, ইরান ও তুরস্কের মতো প্রধান আঞ্চলিক শক্তিগুলোর এই যুদ্ধে বড় ধরনের স্বার্থ রয়েছে। ফলে এর প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো বৈশ্বিক শক্তিতেও পড়বে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে এক শান্তিপূর্ণ সরকারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পরে এই যুদ্ধ সশস্ত্র বিদ্রোহী, চরমপন্থী এবং অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে জটিল সংঘাতে রূপ নেয়। এই সংঘাত শুরু হয় যখন সিরিয়ার জনগণ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে নামে। আন্দোলনের জবাবে সহিংস দমন চালানো হয় এবং নিজেদের রক্ষার জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায় অস্ত্র তুলে নেয়। এর পরপরই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।

এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে সিরিয়ার জাতিগত কুর্দি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী অস্ত্র হাতে তুলে নেয় এবং ধীরে ধীরে তাদের নিজেদের বলে দাবি করা এলাকা দখল করে। ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেট (আইএস) সিরিয়া ও ইরাকের কিছু অংশ দখল করে এবং সেই অঞ্চলকে নিজেদের ‘খেলাফত’ ঘোষণা করে, যা এই অঞ্চলে আরও অস্থিরতা তৈরি করে।

আল-আসাদ সরকার ইরান, রাশিয়া এবং লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন পেয়েছে। অন্যদিকে, বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মতো তেলসমৃদ্ধ আরব রাষ্ট্রগুলো। কুর্দি মিলিশিয়াদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে তুরস্কও হস্তক্ষেপ করে।

এই যুদ্ধে কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আসাদপন্থী বাহিনীই সবচেয়ে বেশি নৃশংসতার জন্য দায়ী। সরকার সাধারণ মানুষকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে রাসায়নিক অস্ত্র, ব্যারেল বোমা এবং ক্ষুধা নীতি ব্যবহার করেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথমবারের মতো বিচ্ছিন্ন কান পায়ে প্রতিস্থাপন, ফের যথাস্থানে স্থাপন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চীনা শল্যচিকিৎসকেরা এক অভাবনীয় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এক নারীর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কান প্রথমে তাঁর পায়ে প্রতিস্থাপন করে, পরবর্তীকালে তা পুনরায় যথাস্থানে ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁরা বিশ্বের প্রথম এই ধরনের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন। হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মেডিকেল নিউজ প্ল্যাটফর্ম মেড-জে সোমবার জানিয়েছে, গত এপ্রিলে কর্মক্ষেত্রে এক দুর্ঘটনায় ওই নারীর কান শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তাঁর মাথার খুলির চামড়ার বড় একটি অংশও উপড়ে গিয়েছিল। জিনানের শানদং প্রাদেশিক হাসপাতালের মাইক্রোসার্জারি ইউনিটের উপপরিচালক কিউ শেনকিয়াং জানান, ভারী যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ওই নারী আঘাত পেয়েছিলেন, যা ছিল প্রাণঘাতী। তাঁর মাথার চামড়া, ঘাড় এবং মুখের ত্বক ছিঁড়ে একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং কানটি মাথার চামড়াসহ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

হাসপাতালে পৌঁছানোর পর মাইক্রোসার্জারিতে বিশেষজ্ঞ একদল চিকিৎসক তাৎক্ষণিকভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাথার চামড়া মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ঘটনার ফলে মাথার টিস্যু এবং রক্তনালির জালিকা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এর ফলে মাথার টিস্যু সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কানটি পুনরায় স্থাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় কানটিকে বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হন চিকিৎসকেরা। অবশেষে কিউয়ে দল সিদ্ধান্ত নেয়, কানটিকে ওই নারীর পায়ের উপরিভাগে প্রতিস্থাপন করার। এরপর শুরু হয় মাসব্যাপী পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া।

চিকিৎসকদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ—পায়ের ধমনি ও শিরাগুলোর গঠন কান প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ছাড়া পায়ের ত্বক ও নরম টিস্যু মাথার ত্বকের মতোই পাতলা, যা স্থানান্তরের পর সামান্য কাটাছেঁড়াতেই মানিয়ে যায়।

অত্যন্ত জটিল এই প্রক্রিয়ার কোনো পূর্ববর্তী নজির বা নথিবদ্ধ সফল ঘটনা ছিল না। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানটি পায়ে প্রতিস্থাপনের প্রাথমিক ধাপটি সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল দশ ঘণ্টা। কিউ জানান, কানের রক্তনালীগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম—ব্যাস মাত্র ০.২ থেকে ০.৩ মিলিমিটার। এগুলোকে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ, যার জন্য প্রয়োজন ছিল উচ্চতর দক্ষতা ও মাইক্রোসার্জারির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা।

অস্ত্রোপচারের পাঁচ দিন পর দলটি আরও একটি সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। শিরার রক্ত সঞ্চালনে সমস্যার কারণে কানের রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং কানটি কালচে-বেগুনি রং ধারণ করে। কানটিকে বাঁচাতে চিকিৎসকেরা রক্তক্ষরণ করানোর এক শ্রমসাধ্য কৌশল অবলম্বন করেন, যা পাঁচ দিনে প্রায় ৫০০ বার প্রয়োগ করতে হয়েছিল।

এরই মধ্যে চিকিৎসকেরা রোগীর পেট থেকে চামড়া নিয়ে মাথায় প্রতিস্থাপন করে মাথার খুলির ক্ষত সারিয়ে তোলেন। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় পর যখন প্রতিস্থাপিত মাথার চামড়া ও ঘাড়ের ত্বক সুস্থ হয়ে ওঠে, ফোলা কমে যায় এবং পা ও কানের ক্ষত সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়, তখন চিকিৎসকেরা কানটিকে পুনরায় যথাস্থানে স্থাপনের উদ্যোগ নেন। গত অক্টোবরে কিউয়ে নেতৃত্বে সফলভাবে ৬ ঘণ্টার এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়, যা বিশ্বজুড়ে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সান ছদ্মনামের ওই রোগী এখন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর মুখমণ্ডল ও টিস্যুর কার্যক্ষমতা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে তাঁর এখনো কিছু ছোটখাটো অস্ত্রোপচার বাকি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভ্রু পুনর্গঠন এবং পায়ের ক্ষতচিহ্ন কমানো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওডিশায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম তরুণকে ‘বাংলাদেশি’ বলে পিটিয়ে হত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জুয়েল রানা। ছবি: সংগৃহীত
জুয়েল রানা। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের সুতি থানার বিশ বছরের তরুণ জুয়েল রানা। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। মাত্র ৫ দিন আগে রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে ওডিশার সম্বলপুরে পা রেখেছিলেন। নিজ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে বাইরে কাজ করতে যাওয়া সেই প্রথম। কিন্তু এই যাওয়াই তাঁর শেষ যাওয়া। গত মঙ্গলবার রাতে একদল উন্মত্ত জনতার হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে তাঁকে। অভিযোগ—জুয়েল রানা ‘বাংলাদেশি।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, জুয়েল রানার সঙ্গে থাকা পশ্চিমবঙ্গের আরও দুই পরিযায়ী শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এই ঘটনায় ওডিশা পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

সুতি থানায় দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে জুয়েল রানার মা নাজমা বিবি জানিয়েছেন, ২০ ডিসেম্বর তাঁর ছেলে সম্বলপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তিনি বলেন, ‘২৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটা নাগাদ একটা ফোন পাই। জানতে পারি ওডিশায় যেখানে ওরা থাকত, তার কাছেই সাত-আটজন স্থানীয় লোক আমার ছেলে আর ওর সহকর্মীদের ওপর চড়াও হয়েছে। ওরা আমার ছেলেকে ‘বাংলা বলা বাংলাদেশি’ বলে গালি দিচ্ছিল আর মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিল।’

নাজমা বিবি আরও বলেন, ‘এ কথা বলতে বলতেই ওরা লাঠি, লোহার রড আর ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার ছেলে আর ওর বন্ধুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার ছেলে ওখানেই মারা যায়, বাকিরা এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।’ জুয়েলের বাবা জিয়াউল হক নিজেও একজন রাজমিস্ত্রি, তিনি বর্তমানে কেরালায় কর্মরত।

ওডিশা পুলিশের দাবি, দানিপালি এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ ভবনে এই ঝামেলার সূত্রপাত। স্থানীয় কিছু যুবক ওই শ্রমিকদের কাছে বিড়ি চেয়েছিল। এরপর তর্কের মাঝেই যুবকেরা শ্রমিকদের আধার কার্ড দেখতে চায় এবং মুহূর্তেই সেই বিবাদ সহিংস রূপ নেয়। সম্বলপুরের এসপি মুকেশ ভামু বলেন, ‘একজন মারা গেছেন এবং দুজন আহত। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর সঙ্গে আর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও ছাড়া হবে না।’

নওশাদ আলি নামে মুর্শিদাবাদের এক যুবক এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি জানান, শ্রমিকেরা আগুনের পাশে বসে শরীর গরম করছিল। তখন কিছু স্থানীয় যুবক এসে বিড়ি চায়। বিড়ি নেওয়ার পরপরই তারা লোকগুলোকে বাংলাদেশি বলে গালি দিতে শুরু করে এবং মারধর শুরু করে।

বৃহস্পতিবার সুতি ব্লকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ এবং তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস নিহত জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়ক অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা শ্রমিকদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে বাধ্য করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুত মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

এই ঘটনায় সম্বলপুরে থাকা বাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মাজহার খান নামে অন্য এক রাজমিস্ত্রি আক্ষেপ করে বললেন, ‘আমাদের প্রায়ই বাংলাদেশি মনে করে হেনস্তা করা হয়। মানুষ সন্দেহ করে, গালি দেয়, আক্রমণ করে। আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাইছি।’

পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবারও বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের ওপর হামলা হলো। বিজেপি গুন্ডারা তাদের ওপর আক্রমণ করে অনুপ্রবেশকারী তকমা দিচ্ছে। আর কত প্রাণ চায় ওরা? বাঙালিদের প্রতি বিজেপির মনোভাব ঠিক কেমন, এটা তারই প্রমাণ।’

রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালি শ্রমিকেরা ক্রমাগত নিগৃহীত হচ্ছে, খুন হচ্ছে। বিজেপির নেতারা কেন চুপ? কেন বারবার এমন জঘন্য অপরাধ ঘটছে?’ তবে ওডিশার আইজিপি হিমাংশু লাল দাবি করেছেন, ঝামেলার মূলে ছিল টাকার লেনদেন নিয়ে কোনো বিবাদ, যা হুট করেই চরমে পৌঁছায়। তিনি আরও জানান, এই ঘটনার পেছনে সাম্প্রদায়িক বা ভাষাগত কোনো কারণ নেই এবং সায়েন্টিফিক তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘বাংলাদেশি’ তকমায় এক বছরে ২২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরে ভারতের বিজেপি সরকার তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুতে বেশ সরব ছিল। নানা রাজনৈতিক বক্তব্যে এবং আলোচনায় তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুটিকে তুলে আনা হয়েছে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণার মোদ্দা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে এই তকমা। তবে ভারত সরকার সেখানেই থেকে থাকেনি। কোনো ধরনের প্রমাণাদি ছাড়াই তারা ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে অন্তত ২ হাজার ২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, তথাকথিত ‘অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানে ২০২৫ সালে রেকর্ড সংখ্যক ২ হাজার ২০০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দিল্লি পুলিশ।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। বৈধ অনুমতি ছাড়া দেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের শনাক্ত ও প্রত্যাবাসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশের পরই এই তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যানের তুলনায় এবারের অভিযানের ব্যাপকতা নজিরবিহীন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে ১৪ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, ২০২৩ সালে ৫ জন এবং ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫০ জন। ২০২৫ সালে এই নাটকীয় বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে, জাতীয় রাজধানীর সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের নামে দিল্লি পুলিশ লক্ষ্যবস্তু করে তথাকথিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

দিল্লি পুলিশের মতে, যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা জাল নথিপত্র ব্যবহার করে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছিল। তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, এই ব্যক্তিরা স্থানীয় জনসমষ্টির সঙ্গে মিশে যেতে এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে ভুয়া আধার কার্ড, জাল ভোটার আইডি কার্ড এবং অন্যান্য জাল সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিল।

তবে কোনো তথ্যপ্রমাণ হাজির করেনি দিল্লি পুলিশ। এমনকি দিল্লি পুলিশ বা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো কখনোই যাদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে তাদের পরিচয়ের ব্যাপারে কোনো তথ্য–প্রমাণ দেয়নি। বরং, এমনও একাধিক ঘটনা আছে, যেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম বাঙালিদের বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল। এমনকি আসামেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে প্রমাণ আছে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের সোনালী খাতুন এবং আসামের সকিনা বিবি ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে জোর করে ভারতীয় বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর জাজ্বল্যমান প্রমাণ।

খোদ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যই বলছে, অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নাগরিক সোনালী খাতুন এবং তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয় চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে। প্রায় চার মাস ধরে চরম দুর্ভোগ পোহানোর পর অবশেষে বিচারিক আদেশে তাঁদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি ভারতেও ফিরে যান। আদালতের আদেশ থেকে স্পষ্ট যে, দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এই দরিদ্র বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ তাঁদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।

একইভাবে সকিনা বিবিকেও বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। বাংলাভাষী ভারতীয় মুসলিম এই নারী ২০১৬ সাল থেকে সকিনা কোকরাঝাঁড় ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে নিয়মিতভাবে নলবাড়ি থানায় হাজিরা দিতে হতো। তিনি সর্বশেষ এই বছরের ২৫ মে থানায় হাজিরা দেন—এরপর থেকে তাঁর পরিবার তাঁকে খুঁজে পায়নি।

আসামের নলবাড়ি জেলার বারকুরা গ্রামের বাসিন্দা সকিনা বেগমকে গত মে মাসে তাঁর বাড়ি থেকে হেফাজতে নেয় আসাম পুলিশ। এরপর তিনি দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। জুনের প্রথম সপ্তাহে সকিনাকে ঢাকার মিরপুর ভাষানটেক এলাকায় রাস্তার পাশে একজন পথচারী খুঁজে পান। এরপর তিনি কাশিমপুর কারাগারে কিছুদিন বন্দী ছিলেন। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে তাঁর মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৭
অরুণাচলকে চীনের মূল স্বার্থ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি
অরুণাচলকে চীনের মূল স্বার্থ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি

মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে অরুণাচল প্রদেশের ওপর চীনের দাবিকে তাদের ‘কোর ইন্টারেস্ট’ বা মূল স্বার্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই স্বার্থগুলোর বিষয়ে চীন কোনো ধরনের আলোচনা বা আপস করতে রাজি নয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের নেতৃত্ব তাদের ‘মূল স্বার্থে’র পরিধি আরও বাড়িয়ে এখন তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগরের সার্বভৌমত্ব ও সামুদ্রিক বিরোধ, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ২০৪৯ সালের মধ্যে ‘চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণের’ জন্য চীন ও এই বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর একীকরণ একটি ‘স্বাভাবিক আবশ্যকতা।’ এই ‘পুনর্জাগরণ’ সম্পন্ন হলে চীন বিশ্বমঞ্চে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং এমন এক ‘বিশ্বমানের’ সামরিক বাহিনী গড়ে তুলবে, যা যেকোনো যুদ্ধে ‘লড়তে ও জিততে’ সক্ষম হবে। একই সঙ্গে এই বাহিনী বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ অত্যন্ত ‘দৃঢ়ভাবে রক্ষা’ করবে।

নথিতে চীনের পুনর্জাগরণের জন্য তিনটি মূল স্বার্থের কথা বলা হয়েছে, যেখানে কোনো সমঝোতার সুযোগ নেই। এর মধ্যে রয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসার এবং চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক দাবির প্রতিরক্ষা ও সম্প্রসারণ।

মূল্যায়নে আরও দেখা গেছে, সিপিসি তাদের শাসনের প্রতি যেকোনো অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক হুমকি বা সমালোচনার বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। বিশেষ করে চীনা স্বার্থ রক্ষায় তারা ব্যর্থ হচ্ছে, এমন কোনো সমালোচনা তারা সহ্য করে না।

ভারত-চীন সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিবেদনে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের দুই দিন আগে ভারত সরকার চীনের সঙ্গে এলএসির অমীমাংসিত স্থানগুলো থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার চুক্তির কথা ঘোষণা করে।

এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের মাসিক আলোচনার পথ উন্মুক্ত হয়। যেখানে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সরাসরি বিমান চলাচল, ভিসা সুবিধা সহজীকরণ এবং শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

যদিও চীন এলএসিতে উত্তেজনা কমিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চায়, যার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ভারত-মার্কিন সম্পর্ক যেন আরও গভীর হতে না পারে। তবে প্রতিবেদনটিতে এ-ও বলা হয়েছে, ভারত সম্ভবত চীনের কাজ ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান থাকবে। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অন্যান্য অস্বস্তিকর বিষয়গুলো দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতিকে সীমিত করে রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে পেন্টাগনের এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান ছড়িয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা দাবি করেছে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়টি ব্যবহার করে বেইজিং ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছে—পেন্টাগনের এমন দাবি ভিত্তিহীন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘পেন্টাগনের এই প্রতিবেদন চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে বিকৃত করেছে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। মূলত নিজেদের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখতেই যুক্তরাষ্ট্র এমন অজুহাত খুঁজছে।’ চীন এই প্রতিবেদনের তীব্র বিরোধিতা করছে বলে তিনি জানান।

পৃথকভাবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাংও এই প্রতিবেদনের নিন্দা জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে পাকিস্তান ও চীনের প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ গবেষণার সহযোগিতা এবং সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনার যে উল্লেখ রয়েছে, ঝাং সেটিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর ধরে এসব মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তারা চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে এবং আমাদের সামরিক বাহিনীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডকে কলঙ্কিত করছে।’

ঝাং আরও বলেন, প্রতিবেদনটি ভূরাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে ‘চীনা সামরিক হুমকি’র বিষয়টি বাড়িয়ে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এই ধরনের মিথ্যা বয়ান এবং উসকানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে লিন জিয়ান জানান, বেইজিং দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ শক্তিশালী করতে, পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে এবং মতপার্থক্য সঠিকভাবে পরিচালনা করে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।’

এলএসি প্রসঙ্গে লিন স্পষ্ট করে বলেন, ‘সীমান্ত সমস্যা চীন ও ভারতের নিজস্ব বিষয়। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি মোটের ওপর স্থিতিশীল এবং দুই দেশের যোগাযোগের পথও খোলা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো দেশের ভিত্তিহীন মন্তব্য চীন মেনে নেবে না।’

২০২৫ সালের জন্য প্রকাশিত এই বার্ষিক প্রতিবেদনে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ আরও বলেছে, চীন সম্ভবত পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে অতিরিক্ত সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেখানে বেইজিং সামরিক সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত