Ajker Patrika

ইসরায়েলের শহরেও গাজার ছাপ

  • হরমুজ প্রণালি বন্ধ করতে পারে ইরান।
  • ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৪ ইসরায়েলি।
  • ইরানজুড়ে নতুন করে ইসরায়েলি হামলা।
  • ‘ইসরায়েলের পেন্টাগনে’ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত।
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৫, ১২: ৩৪
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে ইসরায়েলি সেনারা। গতকাল ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের রামাতগানে। ছবি: এএফপি
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে ইসরায়েলি সেনারা। গতকাল ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের রামাতগানে। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলে গতকাল শনিবার ভোরে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরান। শুক্রবারের হামলার প্রতিশোধ নিতে চালানো এই আক্রমণে অন্তত ৪ ইসরায়েলি নিহত এবং ১৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে বাড়িঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তু ছাড়াও গ্যাস ক্ষেত্র ও বন্দরে আঘাত হেনেছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করলেও তা শেষ করবে ইরান। আর ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রাখলে আরও কড়া জবাব দেওয়া হবে। অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরও ভয়াবহ হামলার হুমকি দিয়েছেন।

ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের তেল আবিব, এর কাছের রামাত গান, রিশন লেজিঅনসহ বিভিন্ন স্থানে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোনো কোনো স্থান এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার তুলনা কেবল গাজার ধ্বংসস্তূপের সঙ্গেই চলে। এ ধরনের ঘটনায় অনভ্যস্ত ইসরায়েলি নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও বিহ্বলতা দেখা যায়।

আল জাজিরা ও এএফপির খবরে বলা হয়, শনিবার ভোরে ইসরায়েলের শহরগুলোতে বিমান হামলার সতর্কবার্তা বাজতে শুরু করে। এরপরই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। তেল আবিবের বিভিন্ন ছবিতে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখা যায়। বেশ কিছু বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা একের পর এক ভবন থেকে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করেন। তবে দক্ষ আগাম সতর্কব্যবস্থা এবং সুরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্রের সুবিধার কারণে ইসরায়েলিদের মধ্যে হতাহতের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

তবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তেল আবিবের কাছের শহর রিশনের বাসিন্দা অভি গাতেনিও বলেন, ‘সাইরেন বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিচে নেমে নিরাপদ কক্ষে চলে যাই। পাঁচ মিনিট পর বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। এরপর বাইরে বেরিয়ে দেখি, ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে গেছে।’

এদিকে ইরানের হামলার সময় সুরক্ষিত বাংকারে বসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন নেতানিয়াহু। পরে সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ইরানকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখলে তেহরান পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।

সিএনএনের যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ‘ইসরায়েলের পেন্টাগন’ হিসেবে পরিচিত তেল আবিবের কিরিয়া এলাকায় আঘাত হানে। ওই এলাকাতেই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদর দপ্তর। এই অফিসের একটি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে সেনারা টিভি সাংবাদিকদের দ্রুত সরিয়ে দেয়।

ইরানের ক্ষয়ক্ষতি

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ইরানের ১০টির বেশি শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা মেহরসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বলেছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় বুশেহর প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রে হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে সেখানে আগুন ধরে যায়। বুশেহরের কাঙ্গান বন্দরেও হামলা করেছে ইসরায়েল। সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ এলএনজি প্ল্যান্ট আছে। ইসরায়েলি সেনা মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি ডেফরিন গতকাল বলেছেন, ইরানের বিমানবিধ্বংসী ব্যবস্থা, কমান্ড অবকাঠামোসহ ৪০টির বেশি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তাঁর দেশ।

ইরানের জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েল ইরানের দুটি গ্যাসক্ষেত্রে হামলা চালিয়েছে। একটি বুশেহর প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্র, অন্যটি একটি প্রদেশের ফজর জাম গ্যাস পরিশোধন কেন্দ্র।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের গ্যাস অবকাঠামোয় আঘাত হানায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এতে একদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম লাফিয়ে বাড়বে, অন্যদিকে ইরানও ইসরায়েলের তেল-গ্যাস অবকাঠামোয় হামলা শুরু করতে পারে। এতে ইরান ও ইসরায়েলের সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকি আরও বাড়বে। ইরানের কর্মকর্তারা আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন, তাঁদের জ্বালানি অবকাঠামোয় আঘাত হানলে ইরানও সমান ও পাল্টা জবাব দেবে। ইসরায়েলের তেল-গ্যাস সম্পদ খুব বেশি না থাকলেও যা-ই আছে, তাতেই ইরান হামলা করে বসতে পারে। এমনকি ইসরায়েলের অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতও হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। পাশাপাশি হরমুজ প্রণালি বন্ধের যে হুমকি ইরান দিয়ে রেখেছে, সেটাও বাস্তবায়ন করে বসতে পারে তারা।

এদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) নিশ্চিত করেছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া নাতাঞ্জ কেন্দ্রেও হামলা হয়েছে। যদিও এসব কেন্দ্রের আশপাশে এখনো তেজস্ক্রিয়তার হেরফের ঘটেনি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে টেলিফোনে বলেছেন, ইসরায়েলি আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে আরও কড়া ও শক্তিশালী জবাব দেবে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী।

নেতানিয়াহুর হুমকি

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল এক ভিডিও বার্তায় ইরানকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্ভবত বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছে। আরও বড় আঘাত আসতে এখনো বাকি।

বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা ইরানি শাসকদের প্রতিটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করব। তারা এখন পর্যন্ত যা অনুভব করেছে, তা আগামী দিনে যা আসবে, তার তুলনায় কিছুই নয়।’

নেতানিয়াহু বলেন, তাদের সামরিক বাহিনী এখন ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ধ্বংস করছে।

নেতানিয়াহু এর আগে ইরানে তাঁর দেশের হামলার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এই অভিযান অপরিহার্য ছিল। ইরানি জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকুন।’

গতকাল ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে শহীদ চামরান শহরের একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় ২০ শিশুসহ ৬০ জন নিহত হয়েছে। এর আগে শুক্রবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ইসরায়েলি হামলায় তাঁর দেশে সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জন আহত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ইরান তিন দফায় প্রায় ১৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তাদের প্রায় ২ হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মজুত রয়েছে। তবে ইসরায়েলও আরও হামলা চালাতে প্রস্তুত।

এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি

ইসরায়েলের তিনটি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। এ ছাড়া দুই ইসরায়েলি পাইলটকেও আটকের দাবি করেছে তারা। ইরানের সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে তেহরান টাইমসের খবরে বলা হয়, শুক্রবার দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর গতকাল শনিবার আরেকটি এফ-৩৫ ভূপাতিত করা হয়। তিন যুদ্ধবিমানের পাইলটদের মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ইসরায়েল তাদের কোনো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে।

হরমুজ প্রণালি বন্ধের ইঙ্গিত

চলমান সংঘাতে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই নৌপথ ইরানসংলগ্ন পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরকে যুক্ত করেছে। ইরানি পার্লামেন্টের নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য ইসমাইল কোসারি বলেছেন, তাঁর দেশ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পথ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করছে।

বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রায় ২০ শতাংশই হয় হরমুজ প্রণালি দিয়ে। ফলে এই নৌপথে কোনো অস্থিরতা গোটা বিশ্বে জ্বালানির সরবরাহ চক্রের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক তৌফিক রহিম আল জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েল এখনো ইরানের তেলের অবকাঠামোয় হামলা চালায়নি। যদি হামলা হয়, তার প্রভাব হবে ভয়াবহ ও ব্যাপক।

পরমাণু আলোচনা বাতিল

এদিকে মধ্যস্থতাকারী ওমান গতকাল রাতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। এর আগে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ইসরায়েলে আক্রমণের মুখে থাকা অবস্থায় এই আলোচনা হবে অর্থহীন। আজ রোববার আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।

শুরু হয়েছে কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ। গতকাল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টেলিফোনে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধ হওয়া উচিত। জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, এই সংঘাত বন্ধের পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধও বন্ধ হওয়া উচিত।

পরে ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে বলেছে, টেলিফোনে আলোচনার সময় পুতিন ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানান। দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে ৫০ মিনিট আলোচনা হয়।

এদিকে গতকাল সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। আলোচনায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানান বলে জানিয়েছে বিবিসি। যুবরাজ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উত্তেজনা নিরসনের বিষয়ে একমত হন।

এদিকে, এরদোয়ান যুবরাজের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনার সময় নেতানিয়াহুকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আলোচনায় এরদোয়ান সৌদি যুবরাজকে বলেন, ইসরায়েলকে থামতে হবে। এদিন এরদোয়ান ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন। কাতারের আমির শেখ তামিমও এদিন ইরানের প্রেসিডেন্টকে টেলিফোন করেন। এ সময় তিনি ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানান।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুরো ইউক্রেন দখলের পরিকল্পনা বাদ দেননি পুতিন: মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনার তোড়জোড় চললেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর মূল লক্ষ্য থেকে একচুলও সরে আসেননি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, পুতিন এখনো পুরো ইউক্রেন দখল এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখছেন।

গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে পরিচিত ছয়টি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর প্রকাশ করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর শান্তি আলোচকেরা বারবার দাবি করছেন, পুতিন এই যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহী। তবে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার সময় পুতিনের যে লক্ষ্য ছিল, তা এখনো অপরিবর্তিত। তিনি কেবল ইউক্রেন নয়, বরং ন্যাটোর জোটভুক্ত বাল্টিক দেশগুলো ও পোল্যান্ডের মতো অঞ্চলের জন্যও হুমকি।

ট্রাম্প প্রশাসন চলমান যুদ্ধের ইতি টানার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সর্বশেষ প্রতিবেদন (সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ প্রস্তুতকৃত) বলছে, পুতিন দীর্ঘমেয়াদি আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এদিকে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বর্তমানে ইউক্রেন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ২০ দফার একটি শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন।

সম্প্রতি বার্লিনে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ইউক্রেনকে ন্যাটোর বাইরে কিন্তু ‘আর্টিকেল ৫’-এর মতো শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর অধীনে ইউক্রেনের সীমান্তে ইউরোপীয় বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হতে পারে। পাশাপাশি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে সেনার সংখ্যা সর্বোচ্চ ৮ লাখে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব রয়েছে, তবে রাশিয়া একে আরও কমানোর দাবি তুলছে।

আলোচনার সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দখল করা ভূখণ্ড। অভিযোগ উঠেছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে দনবাসের অন্য অংশ (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) থেকে সেনা সরিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছেন।

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেন কোনোভাবেই তাদের সার্বভৌম ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে তুলে দেবে না। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা গ্যারান্টি বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তার উত্তর এখনো আমি পাইনি।’

মার্কিন গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে বড় কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না এবং বর্তমানে তাদের সেই সক্ষমতাও নেই। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্বীকার করেছেন, পুতিন কি সত্যিই চুক্তি করতে চান, না পুরো দেশ দখল করতে চান—তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ধনী খদ্দেরদের জন্য কিশোরীদের যেভাবে বাছাই করতেন এপস্টেইন—উঠে এল এফবিআইয়ের তদন্তে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেফরি এপস্টেইন। ছবি: এএফপি
জেফরি এপস্টেইন। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গত শুক্রবার যে নথিগুলো প্রকাশ করেছে, তাতে জেফরি এপস্টেইনের যৌন নিপীড়নের জন্য মানুষ পাঠিয়ে কীভাবে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে জোগাড় করতেন, তার বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে। তদন্ত নথিগুলো এপস্টেইন ও তাঁর সহযোগীদের কর্মকাণ্ডের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। বিশেষ করে তরুণী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের তাঁকে সরবরাহ করার প্রক্রিয়া এতে স্পষ্ট হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, নথিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কালে বিচার বিভাগের দীর্ঘদিন ধরে প্রতীক্ষিত প্রকাশনার অংশ। তবে এই প্রকাশনা আংশিক এবং ব্যাপকভাবে সম্পাদিত হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে।

প্রকাশিত নথিগুলোর মধ্যে একটি নথি বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। নথিটির নম্বর ইএফটিএ–০০০০৪১৭৯। এতে রয়েছে এফবিআইয়ের একটি প্রমাণ-সংক্রান্ত কভার শিট এবং ১৩ পৃষ্ঠার হাতে লেখা তদন্ত নোট। ২০১৯ সালের ২ মে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এসব নোট তৈরি করা হয়। সাক্ষাৎকারদাতার পরিচয় এবং নথির কিছু অংশ গোপন রাখা হয়েছে।

তবে নোটগুলোতে কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে মেয়েদের নিয়োগ, ‘ম্যাসাজ’-এর আড়ালে যৌন নিপীড়ন এবং বয়স ও গায়ের রং নিয়ে এপস্টেইনের নির্দিষ্ট পছন্দ। নোট অনুযায়ী সাক্ষী বলেন, ‘ (এই অংশ মুছে ফেলা হয়েছে)–এর বন্ধুদের বন্ধু। বড় ব্রাজিলিয়ান গ্রুপ। খুবই মরিয়া সময় যাচ্ছে। মেয়েদের সংখ্যা ফুরিয়ে আসছিল।’ নোটে জেফরি এপস্টেইনকে ‘জেই’ আদ্যক্ষরে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই তথাকথিত ‘মরিয়া সময়ে’ একজন ‘বাদামি ত্বকের ডমিনিকান’ মেয়েকে আনা হয়েছিল। কিন্তু নোটে বলা হয়েছে, ‘জেই স্প্যানিশ বা গাঢ় রঙের মেয়ে চায়নি।’ যিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের এপস্টেইনের কাছে নিয়ে আসতেন, তাঁর পরিচয় নথিতে গোপন রাখা হয়েছে। ওই ব্যক্তি এপস্টেইনকে জানান, তিনি তাঁর জন্য ‘তরুণী মেয়েদের’ নিয়ে আসছেন। তবে এপস্টেইন অভিযোগ করেন, ‘হ্যাঁ, কিন্তু বাদামি রঙের না।’

সাক্ষী জানান, তিনি নিশ্চিত নন এপস্টেইন ওই জোগাড়দারকে কোনো অর্থ দিয়েছিলেন কি না। তবে মেয়েটিকে অর্থ দেওয়া হয়েছিল। নোটে আরও উল্লেখ আছে, একটি বাথরুমে ঘটে যাওয়া ঘটনার। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘বাথটাবের কাছে স্তন ও যোনি…সে শাওয়ারে ঢুকে পড়ে এবং তাকে বলে, সে যেন এমন মেয়েদের না আনে যাদের সে পছন্দ করে না…তাকে বলে, খুঁজে যেতে।’

আরও বলা হয়, ‘একপর্যায়ে (নাম মুছে ফেলা হয়েছে) তাকে একটি মেয়ের পরিচয়পত্র চাইতে দেখেছে।’ নোট অনুযায়ী, এপস্টেইন নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন মেয়েটি ১৮ বছরের নিচে কি না। কারণ আগে বেশি বয়সী মেয়েদের আনার ঘটনায় তাঁর আস্থা নষ্ট হয়েছিল।

নোটে সাক্ষী যৌন নিপীড়নের বিবরণও দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, এপস্টেইন ‘অদ্ভুত শব্দ করতেন’ এবং ভুক্তভোগীদের ‘রূঢ়ভাবে’ স্পর্শ করতেন। নথিটিতে কয়েকজন মেয়ের ছবি সংযুক্ত রয়েছে। নোট অনুযায়ী, তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। ছবিগুলোতে তাদের শহরের বিভিন্ন জায়গায় এবং সৈকতে বিকিনিতে দেখা যায়। নোটে নিউইয়র্কের একাধিক স্থানের উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে আছে ম্যানহাটনের ৪১ তম স্ট্রিটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট, রচেস্টার, ব্রাইটন বিচ এবং একটি হাইস্কুল প্রম।

সাক্ষীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে নোটে থাকা তথ্য এপস্টেইনের ব্রাজিলের শিশুদের প্রতি আগ্রহের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। ফেডারেল অভিযোগপত্রে ‘মাইনর ভিকটিম–১’ হিসেবে চিহ্নিত ব্রাজিলের অভিবাসী মারিনা লাসেরদা ছিলেন মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। তিনি গত সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বলেন। তিনি জানান, ১৪ বছর বয়স থেকে এপস্টেইনের হাতে নির্যাতনের শিকার হন। তিনি আরও বলেন, এপস্টেইনের সঙ্গে তিনি একাধিকবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখেছেন। তবে ট্রাম্প এপস্টেইনের কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতেন বলে অস্বীকার করেছেন।

লাসেরদার সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই শেষ পর্যন্ত এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে এপস্টেইন আত্মহত্যা করেন। এপস্টেইনের সহযোগী জ্যাঁ-লুক ব্রুনেল, যিনি তাঁর অর্থায়নে একটি মডেলিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ২০২২ সালে ফ্রান্সে গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের পাচার ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি এপস্টেইনের জন্য এক হাজারের বেশি মেয়ে ও তরুণী সরবরাহ করেছিলেন।

২০১৯ সালের এপ্রিলে ব্রুনেল ব্রাজিলের একটি মডেলিং এজেন্সিতে যান, যেটির সঙ্গে তাঁর কোম্পানির আগে কাজ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন মডেল পাঠানোর উদ্দেশ্যেই এই সফর করা হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এপস্টেইনের মৃত্যুর পর তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও দণ্ডিত ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েলকেও ব্রাজিলের রিভিয়েরা এলাকায় দেখা গেছে বলে জানা যায়। ২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্যারিসের একটি কারাগারে জ্যাঁ-লুক ব্রুনেল আত্মহত্যা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত