Ajker Patrika

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার পক্ষে কী প্রমাণ দিল ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বুধবার ভারতের জম্মু অঞ্চলের পুঞ্চ জেলার প্রধান শহরে একটি আর্টিলারি শেল আঘাত হানার পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ছবি: এএফপি
বুধবার ভারতের জম্মু অঞ্চলের পুঞ্চ জেলার প্রধান শহরে একটি আর্টিলারি শেল আঘাত হানার পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ছবি: এএফপি

কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটির বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। বুধবার (৭ মে) মধ্যরাত ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এই পাল্টা হামলা চালানো হয় পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু কাশ্মীর অঞ্চলে।

তবে পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার পেছনে কী প্রমাণ ছিল ভারতের কাছে? যেই প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালাল দেশটি? চলুন, জানি পুরো বিষয়টির আদ্যোপান্ত।

গত ২২ এপ্রিল ট্যুরিস্ট মৌসুমের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এই হামলাকে বলা হচ্ছে কয়েক দশকের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, চার থেকে ছয়জন সশস্ত্র ব্যক্তি সামরিক পোশাকে একটি নিকটবর্তী জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে এবং কাছ থেকে নির্বিচার গুলি চালায়।

বুধবার ভারতের জম্মু অঞ্চলের পুঞ্চ জেলার প্রধান শহরে একটি আর্টিলারি শেল আঘাত হানার পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ছবি: এএফপি
বুধবার ভারতের জম্মু অঞ্চলের পুঞ্চ জেলার প্রধান শহরে একটি আর্টিলারি শেল আঘাত হানার পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ছবি: এএফপি

প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করেছে। এই অপারেশন কাশ্মীর সীমান্তবর্তী ভারতের আকাশসীমা থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত হেনেছে। আঘাত হানা স্থাপনাগুলো সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ও অবকাঠামো ছিল। এসব এলাকা থেকে ভারতের ওপর আরও সন্ত্রাসী হামলা পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা হচ্ছিল।

তারা আরও জানায়, ভারতীয় সেনাবাহিনী মোট নয়টি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। বুধবার রাজধানী দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা সন্ত্রাসী ক্যাম্পগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে এবং বিমান হামলার কিছু আকাশচিত্র প্রদর্শন করে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং বলেন, ‘অপারেশন সিন্দুরের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং এগুলোর সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায় জড়িত থাকার প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে। যেসব স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, সেগুলো বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এটা ছিল অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করা একটি কাজ। এখন যেসব ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলোর ছবি আমরা আপনাদের দেখাব।’

বুধবার জম্মুর উপকণ্ঠে আখনুরের কাছে একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ধ্বংসাবশেষ থেকে ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন দমকলকর্মীরা। ছবি: এএফপি
বুধবার জম্মুর উপকণ্ঠে আখনুরের কাছে একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ধ্বংসাবশেষ থেকে ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন দমকলকর্মীরা। ছবি: এএফপি

তিনি আরও জানান, ভারতের এই সীমান্তবর্তী অভিযানে ‘নির্ভুল প্রযুক্তি’ ব্যবহার করা হয়েছে। সুনিপণ যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে কোনো অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি না হয়। প্রতিটি লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে একটি নির্দিষ্ট ভবন বা ভবনগোছের ওপর। এতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারত্বের প্রমাণ মেলে। ভারত অনেক সহনশীলতা দেখিয়েছে এই প্রতিক্রিয়ায়। তবে এটা স্পষ্ট করে বলা দরকার, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের কোনো ‘দুঃসাহসিকতা’র জবাব দিতে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত, যদি তাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।

ভারতের পক্ষ থেকে যেসব জায়গায় হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান-অধিকৃত মুজাফফরাবাদ, কোটলি, রাওয়ালকোট, চাকস্বাড়ি, ভিম্বার, নীলম উপত্যকা, ঝেলম ও চকওয়াল এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরের বাহাওয়ালপুর।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের এই বিমান হামলাকে ‘যুদ্ধের ঘোষণাস্বরূপ’ বলে আখ্যায়িত করে জানিয়েছেন, ইসলামাবাদের ‘উপযুক্ত ও কড়া জবাব’ দেওয়ার অধিকার রয়েছে।

দ্য ইনডিপেনডেন্ট প্রকাশিত মানচিত্রে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় সামরিক হামলার লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
দ্য ইনডিপেনডেন্ট প্রকাশিত মানচিত্রে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় সামরিক হামলার লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

পেহেলগাম হামলার পরদিন ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে। তখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ভারতের শাস্তিমূলক পদক্ষেপকে ‘অপরিপক্ব’ ও ‘তড়িঘড়ি’ বলে অভিহিত করেন। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভারত কোনো প্রমাণ দেয়নি। তারা প্রতিক্রিয়ায় কোনো পরিপক্বতা দেখায়নি। এটি একেবারে কাঁচা পদক্ষেপ। ঘটনাটির পরপরই তারা উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।’

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সৈয়দ আসিম মুনির জানিয়েছেন, ভারতের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের বিমান হামলাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাঁরা শুধু পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত ভূখণ্ডে অবস্থিত সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করেছে। পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামোতে কোনো আঘাত হানা হয়নি।

ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের পদক্ষেপ ছিল সুপরিকল্পিত, নিয়ন্ত্রিত এবং উত্তেজনা প্রশমিত করার উদ্দেশ্যে। কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। লক্ষ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবং হামলা পরিচালনায় ভারত যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে। পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই হামলায় জড়িতদের জবাবদিহি করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

ভারতের ওয়াশিংটন দূতাবাস বিমান হামলার পর এক বিবৃতিতে জানায়, পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার দৃঢ় তথ্যপ্রমাণ রয়েছে ভারতের কাছে। এসবের মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত ইনপুট, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সাক্ষ্য এবং অন্যান্য প্রমাণ—যেগুলো এই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীদের স্পষ্ট জড়িত থাকার বিষয়টি নির্দেশ করে।

বুধবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকে শহরে একটি সন্দেহজনক ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা ও উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: এএফপি
বুধবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকে শহরে একটি সন্দেহজনক ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা ও উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: এএফপি

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ডের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বিরুদ্ধে আরও হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। তাই আমাদের পক্ষে প্রতিরোধ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। আজ সকালে, যেমনটি আপনারা জানেন, ভারত তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে এবং সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধ ও প্রতিহত করেছে।

বিক্রম মিশ্রি আরও বলেন, এই বিমান হামলাগুলো মূলত সন্ত্রাসী অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এবং যেসব সন্ত্রাসী ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য প্রস্তুত ছিল, তাদের নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় নিহতদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক। এই হামলার পর থেকে ভারতের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

এনডিটিভি ও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সূত্রের বরাতে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, হামলাটি সম্ভবত পাঁচজন জঙ্গি চালিয়েছে—তিনজন পাকিস্তানি এবং দুজন কাশ্মীরি। পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজনদের মধ্যে রয়েছে অনন্তনাগের আদিল হুসেইন ঠোকার এবং পাকিস্তানের হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই।

পুলিশ দাবি করেছে, এই ব্যক্তিরা পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সদস্য। যদিও সংগঠনটি দায় অস্বীকার করেছে। এখন পর্যন্ত এই হামলার ঘটনায় ভারত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

গত সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, পেহেলগাম হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বুধবার ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের কাছে ওয়ুয়ানে বিমানবাহিনীর একটি অংশ দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: এএফপি
বুধবার ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের কাছে ওয়ুয়ানে বিমানবাহিনীর একটি অংশ দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: এএফপি

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি প্রকাশের পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেওয়া হয়, যেখানে লেখা ছিল—‘ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জয় হিন্দ।’ সঙ্গে #PahalgamTerrorAttack শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, পেহেলগাম হামলার দায় সংক্ষেপে স্বীকার করে পরে মুছে ফেলে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা টিআরএফ। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবা এবং জইশ-ই-মুহাম্মদ অতীতেও ভারতের বিরুদ্ধে বহু প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। তারাই টিআরএফের মাধ্যমে কাজ করছিল।

মিশ্রি বলেন, পেহেলগাম হামলার তদন্তে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগের তথ্য উঠে এসেছে। রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের দায় স্বীকার এবং পরে লস্করের পরিচিত সামাজিক মাধ্যম হ্যান্ডেল থেকে সেটি পুনরায় পোস্ট করা—এসবই অনেক কিছু বলে দেয়।

তিনি আরও জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে থাকা অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে হামলাকারীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলেছে। এই হামলার ধরন পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসের সঙ্গে মিলে যায়, যা বিস্তৃতভাবে প্রমাণিত এবং প্রশ্নাতীত। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সারা বিশ্বের সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীরা সেখানে অবাধে ঘোরাফেরা করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়ার, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।

গত বছর রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার সিঙ্ক্রো ইভেন্টে সোনা জেতেন ইউক্রেনীয় ডাইভার সোফিয়া লাইসকুন (২৩)। তবে সম্প্রতি আকস্মিকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য দেখানোর পর তাঁকে চরম শাস্তির মুখে পড়তে হলো। ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশন (ইউডিএফ) ফেডারেশনের অধীনে পাওয়া তাঁর সমস্ত খেতাব, পদক ও পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

ইউডিএফ জানিয়েছে, লাইসকুন দেশের ক্রীড়া মহলের কোনো পক্ষকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ দলবদলের বিষয়ে ফেডারেশন, কোচিং স্টাফ এমনকি ইউক্রেনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও অবগত করেননি। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত দলবদলের ঘটনায় ফেডারেশন ‘তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা’ জানিয়েছে।

ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে: ‘এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্যই নয়, এগুলো জাতীয় দল এবং ইউক্রেনের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। যে মুহূর্তে পুরো ইউক্রেনীয় দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করছে, ঠিক তখনই একজন চ্যাম্পিয়নের এমন পদক্ষেপ পুরো প্রচেষ্টাকেই হেয় করে।’

ইউক্রেনীয় ফেডারেশনের এই সমালোচনার বিপরীতে লাইসকুন তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। রাশিয়ার সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনে তিনি তাঁর কোচদের অধীনে আর পেশাদারভাবে ‘উন্নতি’ করতে পারছিলেন না।

লাইসকুন অভিযোগ করেন, তাঁর ইউক্রেনীয় কোচিং স্টাফে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ‘সবাই জিমন্যাস্ট বা ট্রাম্পোলিন ক্রীড়াবিদ ছিলেন’, এটি আন্তর্জাতিক ডাইভিং-এর মতো বিশেষায়িত খেলার জন্য অনুকূল ছিল না। তাঁর মতে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অভাবই তাঁকে দলবদলে উৎসাহিত করেছে।

লাইসকুনের দলবদলের পর ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইউক্রেন জাতীয় দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি, ফেডারেশনের অধীনে সোফিয়া লাইসকুনের অর্জিত সমস্ত খেতাব ও পুরস্কার বাতিল করার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবে, যাতে বর্তমান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ক্রীড়াবিদের ওপর ‘স্পোর্টস কোয়ারেন্টাইন’ আরোপ করা হয়। এর অর্থ হলো, ইউক্রেন চাচ্ছে, লাইসকুন যেন কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর রাশিয়া এবং বেলারুশের ক্রীড়াবিদদের ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিক্স ইভেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ ছিল। তবে সেই বিধিনিষেধগুলো সম্প্রতি শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে রুশ এবং বেলারুশীয় ক্রীড়াবিদদের তাঁদের জাতীয় পতাকা বা প্রতীক ছাড়াই নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে তাঁরা দলগত ইভেন্টেও নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশ নিতে পারবেন। লাইসকুন-এর এই দলবদল এমন এক সময়ে ঘটল, যখন রাশিয়ার ক্রীড়াবিদেরা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন বাহিনীর প্রধান হয়েই পাকিস্তানকে ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছানোর ঘোষণা আসিম মুনিরের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৬
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছেন, পাকিস্তান এখন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আওয়াইন-ই-সদরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিম মুনির বলেন, ‘সবই তো ঠিক আছে, আপনাদের চোখের সামনেই তো সব। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, আর এখন থেকে পাকিস্তান আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।’ তাঁর এই মন্তব্য এল ঠিক এমন এক সময়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি নোট প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির কাছে পাঠিয়েছিলেন। তাতে সেনাপ্রধান মুনিরকে পাকিস্তানের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসেবে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হয়। এরপরই প্রেসিডেন্ট এই অনুমোদন দেন।

সত্তরের দশকের পর দেশটির সামরিক কমান্ডে এটি হলো সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এই নিয়োগে অনুমোদন দেন। খবর দ্য ডনের

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে পাঁচ বছরের জন্য সেনাপ্রধানের (সিওএএস) সঙ্গে সমান্তরালভাবে সিডিএফ হিসেবেও নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন।’ এই বিবৃতি বহুদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাল। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজই প্রেসিডেন্টকে এই নতুন দ্বৈত দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে সেনাবাহিনীর প্রধান এবং চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবে নিয়োগের সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।’

এই নতুন ব্যবস্থা পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীতে ২৪৩ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে একটি অফিসের অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও কৌশলগত ক্ষমতাকে একত্র করা হয়েছে। সংশোধিত ২৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করবেন, যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবেও কাজ করবেন।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল থেকে চালু থাকা তিন বাহিনীর সমন্বয় ব্যবস্থা—চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) অফিস বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে যৌথ কমান্ডের ইন্টিগ্রেশন সিডিএফের হাতে চলে এল।

সাংবিধানিক এই আমূল পরিবর্তনকে সামরিক বাহিনীর আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য সরকার ২৭তম সংশোধনীর পরপরই ১৯৫২ সালের পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টেও (পিএএ) সংশোধন আনে। পিএএর ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (১) এখন জানাচ্ছে, ‘প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর প্রধান যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হবেন [...], তাঁর মেয়াদ এই ধারার অধীনে ওই পদের বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে শুরু হবে।’

আরও বলা হয়েছে, এই প্রথম সিওএএসসহ-সিডিএফের বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ‘বর্তমান সেনাপ্রধানের বিদ্যমান মেয়াদ ওই বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে বলে গণ্য হবে।’ ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (৩) অনুযায়ী, সিওএএস যিনি একই সঙ্গে সিডিএফেরও দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর ‘শর্তাবলি ও নিয়ম’ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট স্থির করবেন।

ফিল্ড মার্শাল মুনির ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর ১৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সরকার পিএএ-তে পরিবর্তন আনে, যেখানে সিজেসিএসসির মেয়াদ তিন বছর অপরিবর্তিত রেখে বাকি তিন বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। একই সংশোধনীতে সার্ভিস চিফদের পুনর্নিয়োগ বা তাঁদের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়, যা আগে সর্বোচ্চ তিন বছর ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ায় ইউরোভিশন বয়কট ৪ দেশের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউরোভিশনে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি গায়িকা ইউভাল রাফায়েল। ছবি: এএফপি
ইউরোভিশনে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি গায়িকা ইউভাল রাফায়েল। ছবি: এএফপি

আগামী বছরের অর্থাৎ, ২০২৬ সালের ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা বয়কট করবে আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও স্লোভেনিয়া। কারণ আয়োজকেরা ইসরায়েলকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দিয়েছে। দেশগুলোর অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালানো ইসরায়েলকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া ঠিক হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধ এবং নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে এসব দেশ ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার দাবি করেছিল। জেনেভায় এক বৈঠকে গোপন ভোটের দাবি তোলে স্পেনের সম্প্রচার সংস্থা আরটিভিই। তারা জানায়, আয়োজনকারীরা সেই দাবি মানেনি। এতে উৎসবের প্রতি তাদের অবিশ্বাস আরও বেড়েছে।

আয়ারল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম আরটিই জানায়, গাজার ভয়াবহ প্রাণহানি এবং চলমান মানবিক সংকটের সময়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। স্পেন ইউরোভিশনের ‘বিগ ফাইভ’ দেশের একটি। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে স্পেনের শিল্পীরা সরাসরি ফাইনালে ওঠে। কারণ এসব দেশের সম্প্রচার সংস্থা ইবিইউকে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রায় ৫০টি সম্প্রচার সংস্থা—যার মধ্যে বিবিসিও আছে—ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের (ইবিইউ) বৈঠকে যোগ দেয়। প্রতিবছর ১৫ কোটির বেশি দর্শক এই প্রতিযোগিতা দেখে, তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। ইসরায়েল তাদের অংশগ্রহণকারী ইউভাল রাফায়েলের পক্ষে ভোট বাড়াতে অন্যদের সাহায্য নিয়েছে, এমন অভিযোগের পর সরকার ও তৃতীয় পক্ষের প্রভাব ঠেকাতে নতুন নিয়মে সম্মতি চাইছিল ইবিইউ।

বিবিসি জানায়, এই নিয়ম মানার ভোটের সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। সদস্যরা রাজি হলে ইসরায়েলকে নিয়ে আর কোনো ভোট হবে না। ইবিইউ জানায়, যারা নতুন নিয়ম মানতে সম্মত, তারা ইউরোভিশন ২০২৬-এ অংশ নিতে পারবে। ইউরোভিশন পরিচালক মার্টিন গ্রিন বলেন, সদস্যরা ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিয়ে খোলামেলা বিতর্কের সুযোগ পেয়েছে। ভোটে দেখা গেছে, অধিকাংশই চায় এই প্রতিযোগিতা রাজনৈতিক মঞ্চ না হোক, নিরপেক্ষতা বজায় থাকুক।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এটি সংহতি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতীক। ইসরায়েল বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার যোগ্য। ইসরায়েলের সম্প্রচার সংস্থা কান–এর প্রধান গলান ইয়োখপাজ বলেন, ইসরায়েলকে সরাতে চাওয়া সংস্কৃতিগত বয়কট ছাড়া কিছু নয়। আজ বয়কট শুরু হলে কাল অন্যদেরও ক্ষতি হতে পারে। ইউরোভিশনের ৭০ তম বছরে কি এমন স্মৃতি আমরা চাই?

যুক্তরাজ্যে ইউরোভিশন দেখায় বিবিসি। তারা জানায়, ইবিইউর নিয়ম কার্যকরে তারা সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। তবে এই সিদ্ধান্ত ইউরোভিশন সম্প্রদায়ের ভেতর বড় বিভাজন তৈরি করেছে। ডাচ সম্প্রচার সংস্থা অ্যাভরোট্রস জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণ তাদের মূল মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না।

স্পেনের আরটিভিই জানায়, গত সেপ্টেম্বরেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল—ইসরায়েল থাকলে স্পেন ইউরোভিশন থেকে সরে দাঁড়াবে। এই কারণে ২০২৬ সালের ফাইনাল ও সেমিফাইনাল তারা সম্প্রচারও করবে না। স্লোভেনিয়ার আরটিভিও জানায়, তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত। নিয়ম বদলালেও মত বদলায়নি। ন্যায়নীতি রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। বেলজিয়ামের সম্প্রচার সংস্থা বলেছে, তারা কয়েক দিনের মধ্যে অবস্থান জানাবে।

অন্যদিকে নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ডসহ নর্ডিক দেশগুলো নিয়ম সংশোধনকে সমর্থন করেছে। তবে আইসল্যান্ড এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। জার্মানি, যারা আগে বলেছিল ইসরায়েল বাদ গেলে তারাও সরে দাঁড়াবে, সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের সংস্থা এআরডি জানায়, তারা পরের বছর অংশ নিতে আগ্রহী এবং বৈচিত্র্য ও সংহতির উৎসব হিসেবে এটিকে দেখে। তবে যারা সরে দাঁড়িয়েছে, তাদের সিদ্ধান্তকে তারা সম্মান করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুবই সাধারণ খাবার খান পুতিন, দেশে-বিদেশে খাদ্যতালিকায় যা থাকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে যখন ভ্লাদিমির পুতিনের ৪-৫ ডিসেম্বরের রাষ্ট্রীয় সফর ও ২৩ তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তখন কূটনৈতিক আলোচনার বাইরেও একটি বিষয় নজর কেড়েছে—রুশ প্রেসিডেন্টের খাবার সংক্রান্ত অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্য বিশ্বনেতাদের মতো তিনিও আনুষ্ঠানিক ভোজসভায় অংশ নেন, তবে তাঁর খাবার সবচেয়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

পুতিন হোটেল বা আয়োজক দেশের কর্মীদের তৈরি খাবার গ্রহণ করেন না। তাঁর খাবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করা হয়।

বিদেশ সফরে পুতিনের খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রায় সামরিক নির্ভুলতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কঠোরতার মূল কারণ হলো নিরাপত্তা—বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য বিষক্রিয়া বা গুপ্তহত্যার চেষ্টা এড়াতে এই ব্যবস্থা অপরিহার্য। পুতিনের জন্য খাবার পরিবেশনের আগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়:

বিশেষ শেফ ও লজিস্টিকস: প্রশিক্ষিত রুশ শেফ, পুষ্টিবিদ এবং সহযোগী কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ফ্লাইটে আসেন। তাঁরাই বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত রান্নাঘরে পুতিনের খাবার তৈরি করেন।

মোবাইল পরীক্ষাগার: তিনি ভ্রমণের সময় একটি অত্যাধুনিক মোবাইল খাদ্য পরীক্ষাগারও সঙ্গে রাখেন। এই ল্যাব পরিবেশনের আগে প্রতিটি খাদ্য এবং পানীয়ের উপাদান দ্রুত পরীক্ষা করে সম্ভাব্য বিষ বা ক্ষতিকারক বস্তুর উপস্থিতি যাচাই করে।

নিয়ন্ত্রিত উপাদান: খাবারের উপাদান হয় সরাসরি রাশিয়া থেকে আনা হয়, নতুবা আয়োজক দেশে দীর্ঘ পরীক্ষার মাধ্যমে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। শুধু অনুমোদিত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা উপাদানই তাঁর রান্নাঘরে প্রবেশাধিকার পায়।

বিশেষ পরিবেশন: আনুষ্ঠানিক ভোজসভার ক্ষেত্রেও এই সতর্কতা বজায় থাকে। যদিও তিনি উপস্থিত থাকেন, কিন্তু সাধারণত তাঁর প্লেটে পরিবেশিত খাবারটি নিজস্ব শেফদের দ্বারা পৃথকভাবে প্রস্তুতকৃত হয়। খাদ্য পরিবেশনের আগে প্রশিক্ষিত পরীক্ষকদের দ্বারা চূড়ান্ত যাচাই করা হয়। এই প্রক্রিয়া মস্কো এবং বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হয়।

পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস

খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে এত কড়াকড়ি থাকলেও, পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা কিন্তু বেশ সাধারণ। তাঁর জীবনযাপনও সুশৃঙ্খল। তিনি জমকালো ভোজের পরিবর্তে পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাবার পছন্দ করেন।

সকালের নাশতা: তাঁর সকাল শুরু হয় উচ্চ-প্রোটিন এবং কম-চিনিযুক্ত খাবার দিয়ে। সাধারণত মধুসহ ভরোগ (Tvorog, রুশ কটেজ চিজ) অথবা পরিজ (স্টার্চ ও পানি বা দুধ সহযোগে তৈরি) প্রধান খাদ্য। এ ছাড়া তিনি তাজা ফলের রস এবং মাঝে মাঝে কাঁচা কোয়েলের ডিম বা অমলেট গ্রহণ করেন। তাঁর খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত মিষ্টি বা চর্বিযুক্ত খাবারের স্থান নেই।

দুপুরের ও রাতের খাবার: পুতিন লাল মাংসের চেয়ে মাছ বেশি পছন্দ করেন, বিশেষত গ্রিলড বা স্মোকড মাছের পদ। ভেড়ার মাংসও তাঁর প্রিয়। তবে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত রান্না তিনি এড়িয়ে চলেন। তাঁর বেশির ভাগ খাবারেই টমেটো, শসা এবং অন্যান্য সাধারণ সবজির সালাদ বাধ্যতামূলক। এই সবজিগুলো ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দেয়।

পানীয় ও ডেজার্ট: পুতিন মিষ্টি বেক করা সামগ্রী, কেক বা বাটারি পেস্ট্রি একদম পছন্দ করেন না। পানীয়ের ক্ষেত্রে তাজা জুস, সাধারণ ভেষজ পানীয় এবং কেফির (এক প্রকার ফার্মেন্টেড দুগ্ধজাত পানীয়) পান করেন। তবে তাঁর সুশৃঙ্খল রুটিনের মাঝেও একটি ছোট দুর্বলতা রয়েছে—তা হলো পেস্তা আইসক্রিম!

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুতিনের এই খাদ্যাভ্যাস তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ: সংযত, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ঐতিহ্যমুখী। পুষ্টি, প্রোটিন এবং সহজলভ্যতা ওপর তাঁর এই জোর, তাঁর দীর্ঘ ও অনিয়মিত কর্মঘণ্টার জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতিশীল ক্যালরির জোগান নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত