Ajker Patrika

বায়ুদূষণ সূচকে সর্বোচ্চ সীমায় দিল্লি, জনজীবন বিপর্যস্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভয়াবহ বায়ুদূষণে সৃষ্ট ধোঁয়াশার কারণে ভোর বেলাতেও দৃষ্টসীমা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ছবি: এক্স
ভয়াবহ বায়ুদূষণে সৃষ্ট ধোঁয়াশার কারণে ভোর বেলাতেও দৃষ্টসীমা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ছবি: এক্স

ভারতের রাজধানী দিল্লির আকাশ ঘন ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা। শহরটির বাতাসের মান ‘সিভিয়ার বা গুরুতর’ শ্রেণিতেই আটকে আছে বেশ কয়েক দিন ধরে। আজ রোববার সকালের ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) জানায়, সকাল ৬টায় দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই ছিল ৪৬২।

দিল্লির ৪০টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সব কটিতেই বাতাসের দূষণ নির্দেশক সূচক ‘লাল’, অর্থাৎ বাতাসের মান ‘গুরুতর’ পর্যায়ে রয়েছে। উত্তর-পশ্চিম দিল্লির রোহিণীতে একিউআই রেকর্ড করা হয়েছে ৪৯৯। সেখানে প্রধান দূষক ছিল পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ বা পিএম ২.৫ কণা। এর পরেই আছে জাহাঙ্গীরপুরী ও বিবেক বিহার, যেখানে একিউআই ছিল ৪৯৫।

স্মগ বা ধোঁয়াশার কারণে দিল্লির একাধিক এলাকায় দৃষ্টিসীমা কমে গেছে। পূর্ব দিল্লির পাটপারগঞ্জ থেকে পাওয়া দৃশ্যে দেখা যায়, সকাল ৬টায় সেখানে একিউআই ছিল ৪৮৮ এবং মানুষজন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছেন।

একিউআই বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স হলো—জনস্বাস্থ্যের একটি সূচক, যার মাধ্যমে বাতাসে দূষণের মাত্রা বা বায়ুর গুণমান সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানো হয়। সিপিসিবির তথ্য অনুযায়ী, কোনো এলাকার একিউআই নির্ধারণে আটটি দূষককে প্রধান সূচক হিসেবে ধরা হয়। এগুলো হলো পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএস) ১০, পিএম ২.৫, ওজোন, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা এবং অ্যামোনিয়া।

সিপিসিবি জানায়, একিউআই যদি ০ থেকে ৫০—এর মধ্যে থাকে, তবে তা ‘ভালো।’ ৫১ থেকে ১০০ হলে ‘সন্তোষজনক’, ১০১ থেকে ২০০ ‘মাঝারি’, ২০১ থেকে ৩০০ ‘খারাপ’, ৩০১ থেকে ৪০০ ‘অত্যন্ত খারাপ’ এবং ৪০১ থেকে ৫০০ হলে তা ‘গুরুতর’ হিসেবে ধরা হয়। এই প্রতিটি স্তরই দূষণের মাত্রা এবং তার সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। যেমন, একিউআই যদি ‘গুরুতর’ পর্যায়ে থাকে, তাহলে তা সুস্থ মানুষের জন্যও বিপজ্জনক। এ অবস্থায় বাইরে বের হওয়া বা খোলা জায়গায় শরীরচর্চা না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এই অবস্থায় দিল্লির দূষণ বর্তমানে একিউআইয়ের সর্বোচ্চ সীমা ৫০০ ছাড়াতে পারে কী—এই প্রশ্নও সামনে এসেছে। ভারতের একিউআই স্কেল সর্বোচ্চ ৫০০ পর্যন্ত নির্ধারিত। অর্থাৎ ৫০০-এর বেশি হলে সেটিও ‘গুরুতর’ শ্রেণির মধ্যেই ধরা হয়, যা একটি জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের চেয়ার প্রফেসর অধ্যাপক ড. গুফরান বেগ বলেন, ‘৪০০-এর ওপরে একিউআই অত্যন্ত বিপজ্জনক। ধরে নেওয়া হয়, একিউআই ৫০০ আর একিউআই ৯০০-এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব প্রায় একই। তাই বেশি সংখ্যা দেখিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করার প্রয়োজন নেই।’

তবে এনভায়রোক্যাটালিস্টসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বিশ্লেষক সুনীল দাহিয়া বলেন, একিউআই ৫০০-তে সীমাবদ্ধ রাখার পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই, যদিও প্রযুক্তিগতভাবে এর চেয়েও বেশি মান নির্ণয় করা সম্ভব। তাঁর ভাষায়, ‘এটা ঠিক যে, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব তুলনামূলক কম ঘনত্বে বেশি হয় এবং খুব উচ্চ ঘনত্বে বাড়লেও তা ধীরে বাড়ে। কিন্তু তাৎক্ষণিক ঝুঁকি তখন অনেক বেশি হয়। বিশেষ করে দূষণ হঠাৎ খুব বেড়ে গেলে হৃদ্‌রোগী, শ্বাসকষ্টে ভোগা মানুষ এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য তা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা চিকিৎসাজনিত জরুরি অবস্থার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। খড় পোড়ানোর মৌসুম বা দীপাবলির সময় আমরা এমন পরিস্থিতি বারবার দেখেছি।’

দিল্লিতে বাড়তে থাকা বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে শনিবার বায়ু মান ব্যবস্থাপনা কমিশন গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান বা গ্র্যাপ-এর তৃতীয় ধাপের বিধিনিষেধ জারি করে। পরে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেটি আরও কঠোর করে গ্র্যাপ-৪ কার্যকর করা হয়।

একিউআই হঠাৎ খারাপ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংস্থাটি জানায়, উত্তর-পশ্চিম ভারতে ধেয়ে আসা দুর্বল পশ্চিমা ঝঞ্ঝাই ছিল এর প্রধান কারণ, স্থানীয় নির্গমন নয়। কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান আবহাওয়াজনিত পরিস্থিতিতে বাতাসের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, অনেক সময় একেবারেই স্থির হয়ে পড়ছে। বাতাসের দিক পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে ঘুরেছে এবং নিম্ন বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়েছে। শীতকালীন এ ধরনের পরিস্থিতি ধোঁয়াশা ও কুয়াশা তৈরির জন্য অনুকূল, ফলে দূষকগুলো সহজে ছড়িয়ে না পড়ে ভূপৃষ্ঠের কাছেই আটকে থাকে। এই বিরূপ আবহাওয়ার কারণেই হঠাৎ করে বায়ুর মানের অবনতি ঘটেছে।

গ্র্যাপ-৪-এর আওতায় একাধিক কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। দিল্লিতে অপ্রয়োজনীয় ট্রাকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে যেসব ট্রাক জরুরি পণ্য বা পরিষেবা বহন করে, অথবা এলএনজি, সিএনজি, বিদ্যুৎ চালিত কিংবা বিএস-ফাইভ ডিজেলে চলে, সেগুলো এর বাইরে থাকবে। দিল্লিতে নিবন্ধিত মাঝারি ও ভারী পণ্যবাহী ডিজেলচালিত যানবাহন, বিশেষ করে বিএস-৪ ও তার আগের মানের যান, নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু জরুরি পরিষেবায় ব্যবহৃত যানবাহন এ ক্ষেত্রে ছাড় পাবে। দিল্লির বাইরে নিবন্ধিত হালকা বাণিজ্যিক যান, যেগুলো ইভি, সিএনজি বা বিএস-৬ ডিজেল মান পূরণ করে না, সেগুলোর প্রবেশও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বন্ধ থাকবে।

এ ছাড়া সব ধরনের নির্মাণ ও ভাঙচুর কার্যক্রম, এমনকি মহাসড়কের মতো সরকারি প্রকল্পও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লি ও ভারতের কেন্দ্রীয় রাজধানী অঞ্চল যেসব রাজ্যের মধ্যে পড়েছে সেসব রাজ্যের সরকারগুলোতে ষষ্ঠ থেকে নবম এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সশরীরে ক্লাসের বদলে অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সরকারি, পৌর এবং বেসরকারি দপ্তরগুলোকে অন্তত ৫০ শতাংশ কর্মী দিয়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি অফিসের সময় ধাপে ধাপে নির্ধারণ করার কথাও বলা হয়েছে, যাতে ব্যস্ত সময়ের যানজট ও দূষণ কিছুটা কমানো যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...