Ajker Patrika

সেনাপতি বিপিন ভারতের কী ছিলেন

বিভাস রায় চৌধুরী
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ২৯
সেনাপতি বিপিন ভারতের কী ছিলেন

ভারতের অন্যতম সম্মানীয় সেনাপতি জেনারেল বিপিন রাওয়াত, যিনি ৪৩ বছরের সেনাজীবনে দেশের প্রায় সব প্রান্তে কাজ করেছেন। সঙ্গে এক বছর কঙ্গোতে রাষ্ট্রসংঘের শান্তি সেনাবাহিনীতে ভারতীয় সেনাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর পাওয়া পদকের মধ্যে আছে পরম বিশিষ্ট সেবা মেডেল, উত্তম যুদ্ধ সেবা মেডেল, অতি বিশিষ্ট সেবা মেডেল, যুদ্ধ সেবা মেডেল, সেনা মেডেল, বিশিষ্ট সেনা মেডেল ইত্যাদি। 

স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো ভারতে কখনোই চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ ছিল না। বরং তিন বাহিনীর তিন প্রধানের মধ্যে সিনিয়র ব্যক্তি চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান হতেন। কিন্তু কার্গিলের পর থেকেই একজন সর্বাধিনায়কের প্রয়োজন ভারত অনুভব করছিল। বেশ কয়েক বছরের টালবাহানার পরে বর্তমান সরকার এই পদের মঞ্জুরি দেয়। তত দিনে তিন বাহিনীর আলাদা আলাদা কমান্ড ভাগ থেকে সরে এসে চীন বা আমেরিকার স্টাইলে থিয়েটার কমান্ড গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এতে আর্মি, এয়ারফোর্স, নেভি সম্মিলিতভাবে একই কমান্ডের অধীনে মুখ্যত আর্মি কমান্ডারের আদেশানুযায়ী কাজ করবে বলে ঠিক হয়। 

সেই অবস্থায় একজনকে দেশের সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদে আসীন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। আর সে ক্ষেত্রে সাবেক আর্মি চিফ জেনারেল রাওয়াত ছিলেন একমাত্র পছন্দের ব্যক্তি। রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, সরকার, প্রশাসন, সেনাকাঠামো, বৈদেশিক সেনানায়কদের সঙ্গে সম্পর্ক—সব মিলিয়ে তাঁর চেয়ে দক্ষ সেনাপতি ২০১৯ সালের শেষে ভারতে আর কেউ ছিলেন না বললেই চলে। তাই ১ জানুয়ারি ২০২০ সালে তাঁকেই ভারতের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। 

উত্তর ভারতের গাড়োয়ালিরা এমনিতেই যোদ্ধা জাতি। তাতে জেনারেল রাওয়াত নিজে ছিলেন চতুর্থ প্রজন্মের ভারতীয় সেনা। উত্তর ভারতে সেনাবাহিনীতে ‘সেবা’ করা অত্যন্ত গর্বের বলে মনে করা হয়। জেনারেল রাওয়াতের বাবা ছিলেন গোর্খা রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট জেনারেল। তাঁর পিতামহ ও প্রপিতামহ দুজনেই কাজ করেছেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে। ওদিকে তাঁর মামাদাদু ছিলেন উত্তরকাশীর বিধায়ক। রাজনীতি আর যুদ্ধনীতি একসঙ্গে তাঁর ধমনিতে বইছিল। ফলে যথারীতি বিপিন রাওয়াত নিজেও ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি (যা ভারতের প্রায় সমস্ত চিফের প্রথম ট্রেনিং অ্যাকাডেমি) থেকে পাস করে এবং পরে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে ট্রেনিং নিয়ে তাঁর বাবা যে রেজিমেন্টের কমান্ডার ছিলেন, সেই ১১ গোর্খা রেজিমেন্টে যোগ দেন।

পরে জেনারেল বিপিন ৫/১১ গোর্খা রাইফেলস কমান্ড করেন। এ ছাড়া তিনি রাষ্ট্রীয় রাইফেলস, কঙ্গোতে ভারতীয় শান্তি সেনাবাহিনী, নম্বর ৩ কোর, দক্ষিণ সেনা কমান্ড ইত্যাদিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফ আর চিফ অব আর্মি স্টাফে উন্নীত হন তিনি। 

বিপিন রাওয়াতের শিক্ষাগত যোগ্যতা যেকোনো শিক্ষাবিদকে লজ্জায় ফেলবে। জেনারেল রাওয়াত ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে ‘সোর্ড অব অনার’ পেয়েছিলেন। তারপর ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন, তিনি সেই কলেজেই বক্তৃতা দিতে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া ডিফেন্স স্টাডিজে এমফিল করেছিলেন মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ডক্টরেট করেন মিলিটারি-মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ওপরে চরণ সিংহ বিশ্ববিদ্যালয় মীরাট থেকে। আমেরিকান আর্মি কমান্ড অ্যান্ড জেনারেল স্টাফ কলেজ থেকে হায়ার কমান্ড কোর্স করেন তিনি। নিজে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন অনেক দিন। ফিল্ড মার্শাল মানেকশ ও জেনারেল সুহাগের পরে ভারতীয় গোর্খা রেজিমেন্ট থেকে উঠে আসা বিপিন রাওয়াত ছিলেন তৃতীয় সেনাপ্রধান। 

১৯৮৭ সালে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমা নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে সুমদরং ছু ভ্যালিতে। যেখানে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি ভারতীয় সেনাকে ম্যাকমোহন লাইন থেকে এক ইঞ্চিও নড়াতে পারেনি। সেখানে তখন পাহাড়া দিচ্ছিল রাওয়াতের ব্যাটালিয়ন। কঙ্গোতে ভারতীয় শান্তি সেনা বেশ কয়েকবার অসীম সাহস ও কুশলতা দেখিয়ে সেই দেশের সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচায়। ২০১৫ সালে মিয়ানমারে যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল, তাঁর মাস্টারমাইন্ড ছিলেন নম্বর ৩ কোরের কোর কমান্ডার লে. জেনারেল বিপিন রাওয়াত। 

৮ ডিসেম্বর সকালে জেনারেল রাওয়াত দিল্লি থেকে ভিআইপি ফ্লাইটে দক্ষিণ ভারতের কোয়েমাবটুরে আসেন। এখানে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বানানো রানওয়ে ও ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৪৩ নম্বর উয়িং। এখান থেকে শুরু হয় নীলগিরি পাহাড়। তাঁর গন্তব্য ছিল সেই পাহাড়ের গায়ে ওয়েলিংটনে অবস্থিত ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ। সেখানে তাঁকে বর্তমান ট্রেনি অফিসারদের সম্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু নিয়তির ইচ্ছে ছিল ভিন্ন। 

সুলুরের ১০৯ নম্বর হেলিকপ্টার ইউনিটের কমান্ডিং অফিসার একটি মি-১৭ ভি-৫ হেলিকপ্টার নিয়ে তাঁকে পৌঁছে দিতে টেক অফ করেন। ওয়েলিংটনে পৌঁছানোর আগেই পাহাড়ের গায়ে হেলিকপ্টার এক অজানা কারণে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে ভেঙে পড়ে। হেলিকপ্টারে আগুন ধরে যায় এবং ১৪ জন যাত্রীর মধ্যে একজন বাদে সবাই মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে জেনারেল বিপিওন রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকা আছেন। 

উটির উচ্চতা ২২৪০ মিটার। এই উচ্চতায় মেঘ ও কুয়াশার এক অসাধারণ প্রাকৃতিক খেলা দেখা যায়। দুর্ঘটনার কারণ এখনই বলা মুশকিল। তবে পাহাড়ের খাঁজে দুপুরের দিকে বাতাসের ঘনত্ব হঠাৎ পালটে যাওয়া বা মেঘ কুয়াশার ফলে দৃশ্যমানতার অভাব ঘটতে পারে। তার মধ্য দিয়ে হেলিকপ্টারের উড়ে যাওয়া পাহাড়ি খাদে অবশ্যই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি করে। অনেকেই অবশ্য সন্দেহ করছেন কোনো অন্তর্ঘাতমূলক কাজের। তবে সেই আশঙ্কা একবারে উড়িয়ে না দিলেও জেনারেল রাওয়াতের ওপরে এতটা হুমকি ছিল বলে মনে হয় না। 

একজন সেনানায়কের যে ভূমিকা থাকা দরকার, তিনি ঠিক সেই ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে এই দুর্ঘটনা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্বের সেনা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।

লেখক: প্রাক্তন ভারতীয় বিমান সেনা। বর্তমানে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালের জ্যেষ্ঠ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল আমেরিকানেরা—কতটুকু মিলল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সেসময় মার্কিনিরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষপ্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনটা মিলেছে, আর কোনটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসা সেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৭ বছরের সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আপিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) পৃথক দুটি আপিল করেছেন ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি।

আপিল আবেদনে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই সাজা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইমরান খানকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এ ‘পরিকল্পিত’ রায় দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা ইমরান খান ও বুশরা বিবির পক্ষে কিছু যুক্তি উত্থাপন করেছেন।

আইনজীবীদের দাবি, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) কোনো এফআইআর ছাড়াই ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মাত্র দুই দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে চালানো তদন্তের ভিত্তিতে এই মামলা হয়, যা স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী।

আপিল আবেদনে বলা হয়েছে, তোশাখানাসংক্রান্ত এটি চতুর্থ মামলা। একই বিষয়ে বারবার মামলা করা আইনের লঙ্ঘন এবং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে, যাতে ইমরান খানকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।

আইনজীবীদের দাবি, ২০১৮ সালের তোশাখানা নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করেই উপহারগুলো রাখা হয়েছিল। এখানে কোনো ধরনের বিশ্বাসভঙ্গ বা ‘ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ ঘটেনি।

আপিলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তান পেনাল কোড অনুযায়ী ইমরান খান ও বুশরা বিবি এই উপহার নেওয়ার সময় প্রচলিত সংজ্ঞায় ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন না। বিশেষ করে, বুশরা বিবি একজন গৃহিণী হিসেবে কোনো সরকারি পদের দায়িত্বে ছিলেন না।

প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলাটি মূলত ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি দামি বুলগারি জুয়েলারি সেট নিয়ে। প্রায় ৮ কোটি রুপি মূল্যের এই নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুলের সেটটি ইমরান দম্পতি মাত্র ২৯ লাখ রুপি পরিশোধ করে নিজের কাছে রেখেছিলেন।

এই মামলায় পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ তাঁদের প্রত্যেককে প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়। তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। বর্তমানে ইমরান খান ১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। বুশরা বিবিও একই মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত।

ইমরানের দল পিটিআইয়ের দাবি, তোশাখানা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ‘ক্যাঙারু কোর্টে’র মতো রুদ্ধদ্বার কক্ষে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত