Ajker Patrika

সংখ্যাগরিষ্ঠের সহিংসতায় বিভক্ত হচ্ছে ভারত

ফয়সাল হাসান
সংখ্যাগরিষ্ঠের সহিংসতায় বিভক্ত হচ্ছে ভারত

ভারতে নতুন বছর শুরু হয়েছিল দেশটির মুসলিমদের ওপর বিকৃত আক্রমণের মধ্য দিয়ে। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনই ‘দাসী হিসেবে বিক্রির জন্য’ শতাধিক ভারতীয় মুসলিম নারীর ছবি আপলোড করা হয় ‘বুল্লি বাই’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে। সেখানে টার্গেট করা হয়েছিল বিশিষ্ট সাংবাদিক, অভিনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীদেরও। 

রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সক্রিয় মুসলিম নারীদের মুখ বন্ধ করার এমন ঘৃণ্য প্রচেষ্টা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ করেছে ভারতের ২০ কোটি জনসংখ্যার শক্তিশালী মুসলিম সম্প্রদায়কে। যদিও এ ঘটনার পর তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে সরিয়ে নেওয়া হয় বিতর্কিত ওই অ্যাপ। গ্রেপ্তারও করা হয় ঘটনার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে। 

কিন্তু এটি ছিল ভারতে ইসলামোফোবিয়ার সর্বশেষ একটি উদাহরণ মাত্র। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কলামিস্ট অপূর্বানন্দ জানান, ২০২১ সালের শেষ দিনে; অর্থাৎ, গত ৩১ ডিসেম্বর ইসলামোফোবিক একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করে ভারতের শীর্ষস্থানীয় এক জাতীয় দৈনিক, যার অর্থায়ন করেছিল ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের সরকার। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, উত্তর ভারতের হরিদ্বার শহরে অনুষ্ঠিত তিন দিনের এক ধর্মীয় সম্মেলনে প্রকাশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন উগ্র ডানপন্থী হিন্দু নেতারা। 

আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক কলামে অপূর্বানন্দ লিখেছেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুটি জনসভায় অংশ নিয়ে দেশটির অতীত এবং বর্তমান সময়ে ‘সন্ত্রাসবাদ এবং ধর্মীয় চরমপন্থার’ সঙ্গে মুসলিমদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে ভাষণ দেন। এ সময় মুসলমানদের তাদের ‘পূর্বপুরুষদের’ দ্বারা সংঘটিত কথিত অপরাধের জন্য দায়ী করা এবং শাস্তি দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

এদিকে উত্তর প্রদেশের (ইউপি) মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদ যোগী আদিত্যনাথ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ‘৮০ বনাম ২০ শতাংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। রাজ্যটির ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং ২০ শতাংশ মুসলিম। তবে নির্বাচনে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিমদের লড়াইয়ের কথা সরাসরি উল্লেখ করেননি ইউপির মুখ্যমন্ত্রী। 

অধ্যাপক অপূর্বানন্দের মতে, গত বছর ভারতে নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত অনেক নেতার মুসলিমবিরোধী প্রচারকে সমর্থন দিয়েছে দেশটির ইসলামোফোবিক অনেক মিডিয়া। সেই সঙ্গে অনেক রাজ্যে পাস বা প্রস্তাবিত হয়েছে মুসলিমবিরোধী বিভিন্ন আইন ও নীতি। 

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হুমকির মুখে রয়েছেন ভারতের মুসলমানেরা। কিন্তু গত এক বছরে এই সম্প্রদায়ের প্রতি বৈরিতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। উগ্র ডানপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সমর্থন এবং উৎসাহ পেয়ে মুসলিমদের কাছে এটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, নিজ দেশেই তাঁদের আর সমান নাগরিক হিসেবে দেখা হয় না। মুসলিমদের খাদ্যাভ্যাসের বিরোধিতা এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেও আক্রমণ করা হচ্ছে। মুসলিম নারীরা শুধু মুসলিম বলেই অপমানিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। হুমকির মুখে তাঁদের জীবন-জীবিকাও। 

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুটি জনসভায় দেশটির অতীত এবং বর্তমান সময়ে ‘সন্ত্রাসবাদ এবং ধর্মীয় চরমপন্থার’ সঙ্গে মুসলিমদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে ভাষণ দেন

আক্রমণের সম্মুখীন খ্রিষ্টানরাও
অপূর্বানন্দ তাঁর কলামে লিখেছেন, মুসলিমরাই একমাত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘু নয়, যারা ভারতে ক্রমবর্ধমান উগ্র ডানপন্থীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। ভারতজুড়ে একই রকম ঘৃণা ও সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছেন খ্রিষ্টানরাও। একের পর এক রাজ্যে ধর্মান্তর নিষিদ্ধ করার আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। দরিদ্র হিন্দু ও আদিবাসীদের ‘জোর করে’ ধর্মান্তরিত করার জন্য খ্রিষ্টানদের দায়ী করা হচ্ছে, যা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে। ফলে চার্চে হামলা এবং যাজকদের মারধর করার ঘটনাও বাড়ছে। 

প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিক জন দয়াল সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, গত মাসে ভারতের অন্তত ১৬টি শহরে বড় দিনের উৎসবে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি থেকে শুরু করে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ঘটেছে এমন ঘটনা। 

বিজেপির নেতৃত্বে ভারত বিশ্বের মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের জন্য সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক’ দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে বলেও মনে করেন অপূর্বানন্দ। এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ভারতে প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা। ২০২১ সাল ছিল ভারতের মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের জন্য ভয়, সহিংসতা ও হয়রানির একটি বছর। এবং ‘বুল্লি বাই’ কাণ্ডের পর আশঙ্কা রয়েছে, নতুন বছরেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হিন্দু উগ্র ডানপন্থীদের আক্রমণ অব্যাহত থাকার। 

তবে ভারতের পরিচয় ও আত্মার লড়াই এখনো শেষ হয়নি। দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে প্রতিরোধও গড়ে উঠছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী অনেকেই ভারতের জাতীয় ঐক্য ও ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় রক্ষার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। 

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদ যোগী আদিত্যনাথ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ‘৮০ বনাম ২০ শতাংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেনসামনের পথ
ভারতের মুসলিমরা এখন আর তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না জানিয়ে অপূর্বানন্দ বলেন, ইতিমধ্যে মুসলিম অনেক সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সারা দেশে ইসলামফোবিক নানা ঘটনা, হামলা নথিভুক্ত করা শুরু করেছেন এবং রাষ্ট্রের কাছে জবাবদিহি দাবি করছেন। তাঁদের এ প্রচেষ্টার কারণেই, ক্রমবর্ধমানভাবে মুসলিমরা যে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন, তা আর উপেক্ষা করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। 

এ ছাড়া ভারতের নেতৃস্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠান, যারা এখনো দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান সমুন্নত রেখেছে, তারা সংখ্যালঘুদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের নিপীড়ন ও সহিংসতা প্রতিরোধে সহায়তা করছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, হরিদ্বারে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিংসা এবং ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়ানো ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের জন্য একটি আবেদনের দ্রুত শুনানি করা হবে। এ এমনকি গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে ত্রিপুরায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতার ঘটনা সম্পর্কে কথা বলেছেন বা লিখেছেন—এমন মুসলিমদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকতে রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় অতীতে দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করেছে এবং সব পক্ষের সমর্থন পেলে আবারও আগের সেই জায়গায় ফিরে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন অধ্যাপক ও কলামিস্ট অপূর্বানন্দ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতা ও প্রত্যাখ্যানের মধ্যে মিয়ানমারে চলছে ‘প্রহসনের’ নির্বাচন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে শুরু হয়েছে এক বিতর্কিত নির্বাচন, যা দেশ-বিদেশে ‘প্রহসন’ হিসেবে প্রত্যাখ্যাত। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতি, শীর্ষ নেতাদের কারাবাস এবং চলমান সংঘাতের কারণে প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকারবঞ্চিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচন হচ্ছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে সামরিক জান্তা সরকার। ওই অভ্যুত্থান দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল, যা পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, চীনের সমর্থনে জান্তা সরকার তাদের ক্ষমতাকে বৈধতা দিতে চাইছে, তা সুসংহত করতে চাইছে, যাতে তারা চলমান অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়।

বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারে আজ রোববার শুরু হওয়া ভোট গ্রহণের মধ্যে দেশটির একাধিক অঞ্চলে বিস্ফোরণ ও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।

মান্দালয় অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী বিবিসিকে নিশ্চিত করেন, আজ ভোরে ওই অঞ্চলের একটি জনশূন্য বাড়িতে রকেট হামলার পর তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এর আগে গতকাল রাতে থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে মায়াওয়াদ্দি শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ১০টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, ওই হামলায় এক শিশু নিহত হয়েছে এবং তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

তবে কিছু ভোটার বিবিসির কাছে দাবি করেছেন, এবারের নির্বাচন আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘সুশৃঙ্খল’।

মান্দালয় অঞ্চলের বাসিন্দা মা সু জারচি বলেন, ‘ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা এবার অনেক বদলে গেছে। ভোট দেওয়ার আগে আমি ভয়ে ছিলাম। এখন ভোট দিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি। দেশের জন্য নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছি—এমন একজন নাগরিক হিসেবে আমি আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছি।’

২২ বছর বয়সে প্রথমবার ভোট দিয়ে পেয়ি ফিয়ো মাউং বিবিসিকে জানান, তিনি ভোট দিয়েছেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন ভোট দেওয়া ‘প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব’।

মাউং বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। আমি এমন কাউকে সমর্থন করতে চাই, যিনি লড়াই করা এসব মানুষের জন্য নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে পারবেন। আমি এমন একজন প্রেসিডেন্ট চাই, যিনি সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবেন।’

এদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এই নির্বাচন ঘিরে সব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য দেশকে ‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা’।

রাজধানী নেপিডোর এক কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত ভোটকেন্দ্রে আজ ভোট দিয়ে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বিবিসিকে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

জান্তাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। একজন সরকারি চাকরিজীবী। আমি চাইলেই বলতে পারি না, আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই।’

এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, যারা ভোট প্রত্যাখ্যান করছে, তারা আসলে ‘গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতিকে’ প্রত্যাখ্যান করছে।

মিয়ানমারে নতুন এক আইনের অধীনে নির্বাচনে বাধা দেওয়া বা বিরোধিতা করার অভিযোগে দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই আইনে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধর্ষণের শিকার নারীকে বিজেপি নেত্রীর স্বামী বললেন, ‘আমার কিছুই হবে না’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি

এক নারীকে ছুরির মুখে ধর্ষণ, সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পরে বারবার যৌন সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই নারী যখন ক্যামেরার সামনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং তাঁদের কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের কথা বলেন তখন ওই ব্যক্তি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার কিছুই হবে না।’

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। তিনি রামপুর বাঘেলান নগর পরিষদের এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামী। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে অশোক সিংকে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করতে এবং ভুক্তভোগী নারীকে হুমকি দিতে দেখা যায়। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ওই ক্লিপটিতে অভিযুক্তকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কী হবে? কিছুই হবে না। যেখানে খুশি অভিযোগ করো, আমার কিছুই হবে না।’ ভিডিওর নেপথ্যে ভুক্তভোগী নারীকে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ দায়েরের কথা বলতে শোনা যায়।

গত সোমবার সাতনার পুলিশ সুপার (এসপি) হংসরাজ সিংয়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী। অভিযোগে তিনি বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে ওই ঘটনা ঘটেছে। নিজের ও পরিবারের প্রাণনাশের হুমকির কারণে এতদিন তিনি মুখ খোলেননি। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এসপি তদন্তের দায়িত্ব ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) মনোজ ত্রিবেদীর কাছে হস্তান্তর করেন।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ অনুযায়ী, কারহি এলাকার বাসিন্দা অশোক সিং তাঁর বাড়িতে ঢুকে ছুরির মুখে তাঁকে ধর্ষণ করে। মোবাইল ফোনে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে এবং এই বিষয়ে মুখ খুললে নারী ও তাঁর পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

ওই নারী অভিযোগে আরও বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর অশোক সিং আবার তাঁর কাছে আসেন, তাঁর শ্লীলতাহানি করেন এবং আবারও ভিডিওটি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেন। বলেন, তাঁর কথামতো না চললে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

ভুক্তভোগীর দাবি, অশোক সিংয়ের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল এবং একসময় তাঁকে জেলা থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। এই কারণেই সে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে প্রকাশ্যে তাঁকে হুমকি দিতে সাহস পেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী নারী জানান, অশোক সিং নিয়মিত তাঁর দোকানে এসে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বারবার হুমকি দেন। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার ভীতি ও হয়রানির মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

ওই নারী আরও অভিযোগ করেছেন, পাঁচ দিন আগে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। তিনি বলেন, তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনো ক্ষতি হলে এর জন্য পুলিশই দায়ী থাকবে।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে এবং সব প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এখনো পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানে তুষারপাতে পিচ্ছিল রাস্তায় ৫০টি গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫১
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত

তীব্র তুষারপাত ও পিচ্ছিল রাস্তার কারণে জাপানের মধ্যাঞ্চলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। দেশটির কান-এৎসু এক্সপ্রেসওয়েতে অন্তত ৫০টি গাড়ির স্তূপ তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরে যায়।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টোকিও থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গুনমা প্রিফেকচারের মিনাকামিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে দুটি ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পেছনে থাকা গাড়িগুলো একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকে। এই চেইন রিঅ্যাকশনের ফলে অন্তত ১০টি গাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাড়ে সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে টোকিওর একজন ৭৭ বছর বয়সী নারী রয়েছেন। এ ছাড়া একটি পুড়ে যাওয়া ট্রাকের চালকের আসন থেকে আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ২৬ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি ২১ জন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় ভারী তুষারপাতের সতর্কতা জারি ছিল। পুলিশের ধারণা, রাস্তার ওপর বরফ জমে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকগুলো পিছলে যায়। যার ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ষাটোর্ধ্ব এক প্রত্যক্ষদর্শী জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-কে জানান, সংঘর্ষের সময় তিনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন এবং দেখেন সামনের গাড়িগুলোতে আগুন ধরে গেছে। দ্রুত সেই আগুন অন্যান্য গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, তাঁকেসহ প্রায় ৫০ জনকে নিকটবর্তী একটি টোল প্লাজায় সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা সারা রাত অবস্থান করেন।

দুর্ঘটনার পর এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। রাস্তা পরিচালনাকারী সংস্থা নেক্সকো জানিয়েছে, আগুনের তাপে রাস্তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংস্থাটি আপাতত ওই রুট ব্যবহার না করার জন্য ভ্রমণকারীদের সতর্ক করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান, তবে আপত্তি হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্তে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বাহিনীতে যোগ দিতে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে পাকিস্তান। তবে এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে যদি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্ত থাকে, তবে পাকিস্তান তাতে অংশ নেবে না। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এ কথা বলেছেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেসের ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সাফল্য পর্যালোচনা করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়াজন করা হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার বলেন, গাজা শান্তি চুক্তির আওতায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ (আইএসএফ) গঠন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। পাকিস্তান যেকোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘পিস এনফোর্সমেন্ট’ (শান্তি বলবৎকরণ) নয়, বরং ‘পিসকিপিং’ (শান্তি রক্ষা) শব্দ ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে।

হামাসকে নিরস্ত্র করা প্রসঙ্গে ইশাক দার স্পষ্ট করে বলেন, ‘যদি এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে হামাসকে নিরস্ত্র করার কোনো ভূমিকা থাকে, তবে আমরা তাতে অংশ নেব না। এটি আমাদের কাজ নয়। হামাসকে নিরস্ত্র করার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা সেখানকার স্থানীয় সরকারের।’

ইশাক দার আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের ভূমিকা শুধু শান্তি বজায় রাখায় সহায়তা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কাউকে নিরস্ত্র করার কোনো অভিযানে পাকিস্তান তার সৈন্যদের জড়াতে চায় না।’

ইশাক দার জানান, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নীতিগতভাবে সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পাকিস্তান এই বাহিনীর ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ (টিওআর) এবং ম্যান্ডেট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবে।

প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজল্যুশন পাস হয়। পাকিস্তানসহ ১৩টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিলেও রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল। ওই পরিকল্পনারই একটি অন্যতম অংশ হলো এই ‘আইএসএফ’ গঠন। এখানে মূলত মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সৈন্যদের প্রাধান্য থাকবে।

ইশাক দার জানান, ইন্দোনেশিয়া এই বাহিনীতে ২০ হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও তারাও হামাসকে নিরস্ত্র করার বিষয়ে পাকিস্তানের মতোই আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং অভিজ্ঞ সামরিক বাহিনীর অধিকারী হওয়ায় গাজা শান্তি মিশনে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ ওয়াশিংটনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতিবাদ এবং হামাসের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে পাকিস্তান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই পথে এগোচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার দাবি করেন, একসময় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ বলে বিবেচিত হলেও বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় দেশটি পুনরায় বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে। তিনি জানান, প্রধান বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে পাকিস্তানের নীতিগত ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে ইসলামাবাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত