Ajker Patrika

সংখ্যাগরিষ্ঠের সহিংসতায় বিভক্ত হচ্ছে ভারত

ফয়সাল হাসান
সংখ্যাগরিষ্ঠের সহিংসতায় বিভক্ত হচ্ছে ভারত

ভারতে নতুন বছর শুরু হয়েছিল দেশটির মুসলিমদের ওপর বিকৃত আক্রমণের মধ্য দিয়ে। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনই ‘দাসী হিসেবে বিক্রির জন্য’ শতাধিক ভারতীয় মুসলিম নারীর ছবি আপলোড করা হয় ‘বুল্লি বাই’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে। সেখানে টার্গেট করা হয়েছিল বিশিষ্ট সাংবাদিক, অভিনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীদেরও। 

রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সক্রিয় মুসলিম নারীদের মুখ বন্ধ করার এমন ঘৃণ্য প্রচেষ্টা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ করেছে ভারতের ২০ কোটি জনসংখ্যার শক্তিশালী মুসলিম সম্প্রদায়কে। যদিও এ ঘটনার পর তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে সরিয়ে নেওয়া হয় বিতর্কিত ওই অ্যাপ। গ্রেপ্তারও করা হয় ঘটনার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে। 

কিন্তু এটি ছিল ভারতে ইসলামোফোবিয়ার সর্বশেষ একটি উদাহরণ মাত্র। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কলামিস্ট অপূর্বানন্দ জানান, ২০২১ সালের শেষ দিনে; অর্থাৎ, গত ৩১ ডিসেম্বর ইসলামোফোবিক একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করে ভারতের শীর্ষস্থানীয় এক জাতীয় দৈনিক, যার অর্থায়ন করেছিল ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের সরকার। এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, উত্তর ভারতের হরিদ্বার শহরে অনুষ্ঠিত তিন দিনের এক ধর্মীয় সম্মেলনে প্রকাশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন উগ্র ডানপন্থী হিন্দু নেতারা। 

আল-জাজিরায় প্রকাশিত এক কলামে অপূর্বানন্দ লিখেছেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুটি জনসভায় অংশ নিয়ে দেশটির অতীত এবং বর্তমান সময়ে ‘সন্ত্রাসবাদ এবং ধর্মীয় চরমপন্থার’ সঙ্গে মুসলিমদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে ভাষণ দেন। এ সময় মুসলমানদের তাদের ‘পূর্বপুরুষদের’ দ্বারা সংঘটিত কথিত অপরাধের জন্য দায়ী করা এবং শাস্তি দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

এদিকে উত্তর প্রদেশের (ইউপি) মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদ যোগী আদিত্যনাথ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ‘৮০ বনাম ২০ শতাংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। রাজ্যটির ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং ২০ শতাংশ মুসলিম। তবে নির্বাচনে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিমদের লড়াইয়ের কথা সরাসরি উল্লেখ করেননি ইউপির মুখ্যমন্ত্রী। 

অধ্যাপক অপূর্বানন্দের মতে, গত বছর ভারতে নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত অনেক নেতার মুসলিমবিরোধী প্রচারকে সমর্থন দিয়েছে দেশটির ইসলামোফোবিক অনেক মিডিয়া। সেই সঙ্গে অনেক রাজ্যে পাস বা প্রস্তাবিত হয়েছে মুসলিমবিরোধী বিভিন্ন আইন ও নীতি। 

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হুমকির মুখে রয়েছেন ভারতের মুসলমানেরা। কিন্তু গত এক বছরে এই সম্প্রদায়ের প্রতি বৈরিতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। উগ্র ডানপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সমর্থন এবং উৎসাহ পেয়ে মুসলিমদের কাছে এটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, নিজ দেশেই তাঁদের আর সমান নাগরিক হিসেবে দেখা হয় না। মুসলিমদের খাদ্যাভ্যাসের বিরোধিতা এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেও আক্রমণ করা হচ্ছে। মুসলিম নারীরা শুধু মুসলিম বলেই অপমানিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। হুমকির মুখে তাঁদের জীবন-জীবিকাও। 

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুটি জনসভায় দেশটির অতীত এবং বর্তমান সময়ে ‘সন্ত্রাসবাদ এবং ধর্মীয় চরমপন্থার’ সঙ্গে মুসলিমদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়ে ভাষণ দেন

আক্রমণের সম্মুখীন খ্রিষ্টানরাও
অপূর্বানন্দ তাঁর কলামে লিখেছেন, মুসলিমরাই একমাত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘু নয়, যারা ভারতে ক্রমবর্ধমান উগ্র ডানপন্থীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। ভারতজুড়ে একই রকম ঘৃণা ও সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছেন খ্রিষ্টানরাও। একের পর এক রাজ্যে ধর্মান্তর নিষিদ্ধ করার আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। দরিদ্র হিন্দু ও আদিবাসীদের ‘জোর করে’ ধর্মান্তরিত করার জন্য খ্রিষ্টানদের দায়ী করা হচ্ছে, যা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে। ফলে চার্চে হামলা এবং যাজকদের মারধর করার ঘটনাও বাড়ছে। 

প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিক জন দয়াল সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, গত মাসে ভারতের অন্তত ১৬টি শহরে বড় দিনের উৎসবে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি থেকে শুরু করে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ঘটেছে এমন ঘটনা। 

বিজেপির নেতৃত্বে ভারত বিশ্বের মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের জন্য সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক’ দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে বলেও মনে করেন অপূর্বানন্দ। এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ভারতে প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা। ২০২১ সাল ছিল ভারতের মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের জন্য ভয়, সহিংসতা ও হয়রানির একটি বছর। এবং ‘বুল্লি বাই’ কাণ্ডের পর আশঙ্কা রয়েছে, নতুন বছরেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হিন্দু উগ্র ডানপন্থীদের আক্রমণ অব্যাহত থাকার। 

তবে ভারতের পরিচয় ও আত্মার লড়াই এখনো শেষ হয়নি। দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে প্রতিরোধও গড়ে উঠছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী অনেকেই ভারতের জাতীয় ঐক্য ও ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় রক্ষার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। 

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদ যোগী আদিত্যনাথ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ‘৮০ বনাম ২০ শতাংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেনসামনের পথ
ভারতের মুসলিমরা এখন আর তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না জানিয়ে অপূর্বানন্দ বলেন, ইতিমধ্যে মুসলিম অনেক সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সারা দেশে ইসলামফোবিক নানা ঘটনা, হামলা নথিভুক্ত করা শুরু করেছেন এবং রাষ্ট্রের কাছে জবাবদিহি দাবি করছেন। তাঁদের এ প্রচেষ্টার কারণেই, ক্রমবর্ধমানভাবে মুসলিমরা যে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন, তা আর উপেক্ষা করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। 

এ ছাড়া ভারতের নেতৃস্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠান, যারা এখনো দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান সমুন্নত রেখেছে, তারা সংখ্যালঘুদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের নিপীড়ন ও সহিংসতা প্রতিরোধে সহায়তা করছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, হরিদ্বারে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিংসা এবং ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়ানো ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের জন্য একটি আবেদনের দ্রুত শুনানি করা হবে। এ এমনকি গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে ত্রিপুরায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতার ঘটনা সম্পর্কে কথা বলেছেন বা লিখেছেন—এমন মুসলিমদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকতে রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় অতীতে দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করেছে এবং সব পক্ষের সমর্থন পেলে আবারও আগের সেই জায়গায় ফিরে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন অধ্যাপক ও কলামিস্ট অপূর্বানন্দ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৫২ শতাংশ, দাবি মিয়ানমারের জান্তা সরকারের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত রোববার মিয়ানমারে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
গত রোববার মিয়ানমারে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৫২ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম দেশটিতে তিন ধাপে বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটার উপস্থিতি কম।

জান্তা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে জানান, ১০২টি টাউনশিপের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রথম ধাপে ভোট দিয়েছেন। তিনি এই উপস্থিতিকে ‘গর্বের বিষয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে জান্তা সরকার। গত রোববার (২৮ ডিসেম্বর) প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ২০১৫ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে মিয়ানমারে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এবার তা ৫২ শতাংশে নেমে আসায় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতিসংঘ, পশ্চিমের দেশগুলো এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিরোধী দলগুলোকে অংশ নিতে না দেওয়া এবং নির্বাচনের সমালোচনা করাকে বেআইনি ঘোষণা করায় আন্তর্জাতিক মহলে এই ভোট কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

তবে জান্তা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেন, ‘অনেক উন্নত গণতান্ত্রিক দেশেও ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের বেশি হয় না। সেই তুলনায় আমাদের এই হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।’

নির্বাচনের গতিবিধি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের নেতৃত্বাধীন ‘ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির’ (ইউএসডিপি) হাতেই এবার ক্ষমতা যাবে। কারণ, জনপ্রিয় বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

পরবর্তী রাউন্ডের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১১ জানুয়ারি এবং ২৫ জানুয়ারি। মোট ৩৩০টি শহরের মধ্যে ২৬৫টিতে ভোট হবে। যদিও এর অনেক অঞ্চলেই জান্তা সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।

এদিকে ২০২০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ী এনএলডি নেত্রী অং সান সু চি এখনো বন্দী অবস্থায় আছেন। তখন থেকেই মিয়ানমারের জান্তা সরকারের অধীনে ব্যাপক গৃহযুদ্ধ চলছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দখল করে নিয়েছে।

এই অস্থিতিশীলতার মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করে আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা করছে সামরিক সরকার। তবে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস জানিয়েছে, জান্তা সরকারের নির্বাচনী আইনে ভোটার উপস্থিতির কোনো ন্যূনতম সীমা নেই। এটি তাদের ভোটার উপস্থিতির যেকোনো হারকেই বৈধতা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ০২
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ শহরে চলন্ত গাড়িতে ২৮ বছর বয়সী এক নারীকে তুলে নিয়ে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবাহিত ওই নারী রাতে বাড়ি যাওয়ার জন্য যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় একটি গাড়ি থামে এবং দুজন যুবক তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলেন। কিন্তু গাড়িটি তাঁর গন্তব্যের বদলে গুড়গাঁও সড়কের দিকে যেতে শুরু করে।

অভিযোগ অনুযায়ী, ওই নারী দুই ঘণ্টা গাড়িটির ভেতরে আটকে ছিলেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত তাঁকে ধর্ষণ করেন। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা থামেননি, উল্টো তাঁকে হুমকি দেন। এরপর এস জি এম নগরের রাজা চকের কাছে ওই নারীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে তাঁর মুখে গুরুতর আঘাত লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

এ সময় ভুক্তভোগী নারী বারবার তাঁর বোনকে ফোন করছিলেন। পরে তাঁর বোন যখন ফিরতি ফোন করেন, তখন তিনি পুরো বিষয়টি জানতে পারেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁর মুখে ১০ থেকে ১২টি সেলাই দিতে হয়েছে।

বর্তমানে ওই নারীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও ট্রমায় ভুগছেন। এ জন্য এখন পর্যন্ত তাঁর জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ভুক্তভোগীর বোন অভিযোগে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর বোন তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হওয়ায় তিনি বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছেন। তিন ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসবেন বলেও বোনকে জানিয়েছিলেন তিনি।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই নারী বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জননী। পারিবারিক কলহের কারণে তিনি স্বামী থেকে আলাদা থাকেন।

পুলিশ এরই মধ্যে অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার ও অপরাধে ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জার্মানিতে হলিউড স্টাইলে ডাকাতি, ব্যাংকের ভল্ট কেটে ৩ কোটি ইউরো লুট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। ছবি: গেলসেনকির্শেন পুলিশ
ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। ছবি: গেলসেনকির্শেন পুলিশ

হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে হরহামেশাই ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তেমন হওয়াটা অসম্ভব মনে হলেও এমন সিনেমাটিক স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে জার্মানির এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।

পশ্চিম জার্মানির গেলসেনকির্শেন শহরের স্পারকাসে সেভিংস ব্যাংকে এ ঘটনা ঘটেছে। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বড় ড্রিল ব্যবহার করে আনুমানিক ৩ কোটি ইউরো (৪৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা) নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এই ঘটনাকে ডাকাতির কাহিনিনির্ভর হলিউডের সিনেমা ‘ওশানস ইলেভেন’-এর সঙ্গে তুলনা করে এএফপি বার্তা সংস্থাকে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটি অত্যন্ত পেশাদারভাবে করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই ডাকাতির সময় অর্থ, স্বর্ণ ও গহনা রাখা ৩ হাজারেরও বেশি সেফ ডিপোজিট বক্স ভেঙে ফেলা হয়েছে।

গেলসেনকির্শেন পুলিশ জানায়, গত সোমবার ভোররাতে ফায়ার অ্যালার্ম সক্রিয় হলে তারা ঘটনার বিষয়ে জানতে পারে। তখন ক্রিসমাসের ছুটি চলছিল। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বুয়ের জেলায় নিয়েনহোফস্ট্রাসে অবস্থিত ওই ভবনে ডাকাতি চালায়।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তারা পাশের একটি পার্কিং গ্যারেজ ব্যবহার করে ব্যাংকে ঢোকে এবং সেখান দিয়েই পালিয়ে যায়।

তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিবিসি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শনিবার রাত থেকে গত রোববার ভোর পর্যন্ত ওই ভবনটির গ্যারেজের সিঁড়িঘরে কয়েকজন পুরুষকে বড় বড় ব্যাগ বহন করতে দেখা গেছে।

পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজে সোমবার ভোরে ডে-লা-শেভালারি-স্ট্রাসে অবস্থিত গ্যারেজ থেকে একটি কালো অডি আরএস ৬ গাড়িকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। সোমবার ভোররাতে একটি ফায়ার-অ্যালার্ম বাজলে ভূগর্ভস্থ ভল্ট রুমে ঢোকার জন্য করা গর্তটি ধরা পড়ে। এরপর পুলিশ ও দমকল বাহিনী ভবনটিতে তল্লাশি চালায়।

চুরির ঘটনায় ব্যাংকের শাখাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রাহকদের প্রায় ৯৫ শতাংশ সেফ ডিপোজিট বক্স খুলে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজা-পশ্চিম তীরের ৩৭ ত্রাণ সংস্থার লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করেছে ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।

বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যাকশনএইড, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মতো পরিচিত আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (আইএনজিও) গুলোর লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করা হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশ। তারা বলছে, নতুন নিয়মগুলো ‘অতিরিক্তভাবে কঠোর’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’।

এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করে দিলে স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনো ‘বিপর্যয়কর’ উল্লেখ করে তাঁরা ইসরায়েল সরকারকে আহ্বান জানান, যাতে এনজিওগুলো টেকসই এবং আগের মতো কাজ করতে পারে।

এদিকে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই পদক্ষেপগুলোর ফলে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহে কোনো প্রভাব পড়বে না। মন্ত্রণালয়টি জানায়, জাতিসংঘের সংস্থা, দ্বিপক্ষীয় অংশীদার এবং মানবিক সংগঠনসহ ‘অনুমোদিত ও যাচাইকৃত চ্যানেল’ দিয়ে সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।

তাদের দাবি, সহায়তা সংস্থাগুলোর লাইসেন্স বাতিলের প্রধান কারণ হলো, তাদের কর্মীদের বিষয়ে সম্পূর্ণ ও যাচাইযোগ্য তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো যা মানবিক কাঠামোয় ‘সন্ত্রাসী অপারেটিভদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইসরায়েল।

এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা বলেন, অক্টোবর মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় পুষ্টি ও খাদ্য সরবরাহে কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে পরের মাসেও প্রায় ১ লাখ মানুষ ‘চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মুখোমুখি ছিল।

তবে গাজার সীমান্ত ক্রসিংগুলো নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাত দাবি করেছে, যেসব সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করা হবে, তারা বর্তমান যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কোনো সহায়তা আনেনি। সংস্থাটি আরও জানায়, অতীতেও তাদের সম্মিলিত অবদান মোট সহায়তার মাত্র প্রায় ১ শতাংশ ছিল।

ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশেরও কম নতুন নিয়ন্ত্রক কাঠামো লঙ্ঘন করেছে।

ওই নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে লাইসেন্স বাতিলের একাধিক ভিত্তি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

১. ইসরায়েলকে একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার না করা

২. হলোকাস্ট বা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলা অস্বীকার করা

৩. শত্রু রাষ্ট্র বা সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে সমর্থন করা

৪. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অবৈধতা আরোপের প্রচারণা’ চালানো

৫. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান জানানো বা তাতে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করা

৬. বিদেশি বা আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাকে সমর্থন করা

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের সংস্থা এবং ২০০টিরও বেশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম আগেই সতর্ক করে বলেছিল, নতুন নিবন্ধন নীতিমালা গাজা ও পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রমকে মৌলিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

তাদের ভাষায়, ‘এই ব্যবস্থা অস্পষ্ট, খামখেয়ালি ও অত্যন্ত রাজনৈতিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভরশীল এবং এমন সব শর্ত আরোপ করছে, যা মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন না করে বা মানবিক নীতির মূল ভিত্তি ক্ষুণ্ন না করে পূরণ করা সম্ভব নয়।’

হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিমের মতে, বর্তমানে গাজায় অধিকাংশ ফিল্ড হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা বা সহায়তা, জরুরি আশ্রয় কার্যক্রম, পানি ও স্যানিটেশন সেবা, তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুষ্টি স্থিতিশীলকরণ কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইন অপসারণ কার্যক্রম আইএনজিওগুলোর মাধ্যমেই পরিচালিত বা সমর্থিত হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক ও ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি বলেন, ‘বার্তাটি স্পষ্ট: মানবিক সহায়তা স্বাগত কিন্তু সন্ত্রাসবাদের জন্য মানবিক কাঠামোর অপব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।’

কার্যক্রম স্থগিত হতে যাচ্ছে এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে কেয়ার, মেডিকো ইন্টারন্যাশনাল এবং মেডিক্যাল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত