Ajker Patrika

রাশিয়া-ইউক্রেনের সরাসরি আলোচনায় উপস্থিত থাকতে চান ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ১৪: ১৭
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর সেই আহ্বানে এক প্রকার সরাসরিই সাড়া দিয়েছেন ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। উভয় দেশই আশাবাদী, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে হতে যাওয়া সরাসরি আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। এদিকে, এই আলোচনায় উপস্থিত থাকার আগ্রহ দেখিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনায় যোগ দেওয়ার প্রস্তাব ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে নতুন কূটনৈতিক তৎপরতা সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই সংঘাতের সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন। ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এই প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কথা বলার পর জেলেনস্কি রাজি হন। তবে তিনি শর্ত দেন যে, পুতিনকেও ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকতে হবে। এরপর গতকাল সোমবার আকস্মিকভাবে ট্রাম্প নিজেও এই আলোচনায় যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু আগে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার অনেক মিটিং আছে, কিন্তু আমি আসলে সেখানে (ইস্তাম্বুলে) উড়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। এটা সম্ভব হতে পারে, যদি আমি মনে করি কিছু ঘটতে পারে। আমাদের এটা শেষ করতে হবে।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার তুরস্কে কী হয়, তাকে ছোট করে দেখবেন না।’

ট্রাম্পের প্রস্তাবের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ইউক্রেনে ‘যুদ্ধবিরতির জন্য ভবিষ্যতের পথ’ নিয়ে আলোচনা করেন। এই আলোচনায় ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধানও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে সিবিহা, জার্মানি ও পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ক্রেমলিন বারবার মধ্যস্থতায় সহায়তার জন্য চীন এবং সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

এর আগে, ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সেনা পাঠান। এর ফলে যে যুদ্ধ শুরু হয় তাতে উভয় পক্ষে লক্ষাধিক সৈন্য নিহত হয়েছে। এটি রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর সবচেয়ে মারাত্মক সংঘাতের সৃষ্টি করেছে।

ট্রাম্প জেলেনস্কিকে পুতিনের আলোচনার প্রস্তাব মেনে নিতে বলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইস্তাম্বুলে পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে ইচ্ছুক বলে জানান। যদিও পুতিন নিজে সেখানে যাবেন কি না সে বিষয়ে ক্রেমলিন কোনো মন্তব্য করেনি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপায় খুঁজতে আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ প্রস্তাবিত আলোচনা সম্পর্কে সাংবাদিকেরা আরও প্রশ্ন করার আগেই পেসকভ বলেন, ‘এটুকুই। এই গল্পটি সম্পর্কে আমার যা বলার ছিল সবই বলেছি।’

পুতিন ও ক্রেমলিন বারবার ২০২২ সালের খসড়া চুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। এই চুক্তিটি রুশ আক্রমণের পরপরই রাশিয়া ও ইউক্রেন আলোচনা করে তৈরি করেছিল। রয়টার্স এই খসড়া চুক্তির একটি অনুলিপি পর্যালোচনা করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনকে স্থায়ী নিরপেক্ষতা মেনে নিতে হবে। বিনিময়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য—ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাবে।

জেলেনস্কি ও পুতিন একে অপরের প্রতি চরম অবজ্ঞা পোষণ করেন। যদি তারা বৃহস্পতিবার দেখা করেন, তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর এটি হবে তাদের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। তবে, ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়াকে জানিয়েছে, সোমবার থেকে নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে হবে। অন্যথায় নতুন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে। তবে ক্রেমলিন বলেছে, তাদের সঙ্গে আল্টিমেটামের সুরে কথা বলা যাবে না।

রাশিয়ার বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে—পুরো ক্রিমিয়া, প্রায় সমগ্র লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ৭০ শতাংশের বেশি এলাকা। রাশিয়ার অনুমান অনুযায়ী, দেশটি খারকিভ অঞ্চলের একটি ক্ষুদ্র অংশও নিয়ন্ত্রণ করে। রাশিয়া এখনো এগিয়ে চলেছে, যদিও ২০২৪ সালের চেয়ে ধীর গতিতে। উভয় পক্ষই বলেছে, লড়াই চলছে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, ইস্তাম্বুলের আলোচনা রক্তপাত বন্ধ করার একটি সম্ভাব্য সুযোগ করে দিয়েছে।

রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান কনস্ট্যান্টিন কোসাচভ মঙ্গলবার ইজভেস্তিয়া সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক মন্তব্যে বলেন, মস্কো এবং কিয়েভের মধ্যে আলোচনা ২০২২ সালের চেয়ে আরও এগিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল কোনো আল্টিমেটাম ছাড়াই এবং সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করার ম্যান্ডেট নিয়ে এই আলোচনায় আসে, আমি নিশ্চিত যে আমরা আরও অনেক এগিয়ে যেতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২ সেকেন্ডে ঘণ্টায় ৭০০ কিমি গতি, চোখের পলকে ছুটে বিশ্ব রেকর্ড গড়ল চীনের ট্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চীন তাদের সবচেয়ে দ্রুতগতির ম্যাগলেভ ট্রেনের মাধ্যমে নতুন এক বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। মাত্র দুই সেকেন্ডেই ট্রেনটির গতি উঠেছে ঘণ্টায় ৭০০ কিলোমিটার। গতি এতটাই দ্রুত যে চোখের পলক ফেলতেই তা দৃষ্টির বাইরে চলে যায়।

চীনের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ডিফেন্স টেকনোলজির গবেষকেরা এই ম্যাগনেটিক লেভিটেশন (ম্যাগলেভ) ট্রেনের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে প্রায় এক টন ওজনের যানকে এই অবিশ্বাস্য গতিতে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, ৪০০ মিটার (প্রায় ১ হাজার ৩১০ ফুট) দীর্ঘ ম্যাগলেভ ট্র্যাকে এই পরীক্ষা চালানো হয়। সর্বোচ্চ গতি অর্জনের পর ট্রেনটিকে নিরাপদে থামানো হয়। এর মধ্য দিয়ে এটি বিশ্বের দ্রুততম সুপারকন্ডাক্টিং বৈদ্যুতিক ম্যাগলেভ ট্রেন হিসেবে স্বীকৃতি পেল।

পরীক্ষার ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্রেনটি অনেকটা রুপালি বিদ্যুতের ঝলকের মতো চোখের নিমেষে বেরিয়ে যাচ্ছে। খালি চোখে এর গতি অনুসরণ করা প্রায় অসম্ভব এবং এটি পেছনে একটি হালকা কুয়াশার রেখা রেখে যায়। পুরো বিষয়টি দেখতে অনেকটা সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্রের দৃশ্যের মতো মনে হয়।

ট্রেনটি সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেট বা শক্তিশালী চৌম্বক শক্তির সাহায্যে ট্র্যাকের ওপর ভেসে থাকে। কোনো স্পর্শ ছাড়াই এই চৌম্বক শক্তি ট্রেনটিকে ওপরে তুলে ধরে এবং সামনের দিকে ঠেলে দেয়।

এর ত্বরণ এতটাই শক্তিশালী যে এটি রকেট উৎক্ষেপণেও সক্ষম। এই গতিতে চললে ম্যাগলেভ ট্রেনগুলো দূরবর্তী শহরগুলোকে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সংযুক্ত করতে পারবে।

এই প্রযুক্তি হাইপারলুপের মতো ভবিষ্যৎ যাতায়াত ব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করছে, যেখানে ট্রেনগুলো শূন্যস্থান বা ভ্যাকুয়াম টিউবের ভেতর দিয়ে অতি উচ্চগতিতে চলাচল করবে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, এই সাফল্য অতি উচ্চগতির ইলেকট্রোম্যাগনেটিক প্রপালশন, ইলেকট্রিক সাসপেনশন গাইডেন্স ও হাই-ফিল্ড সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেটের মতো জটিল প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করেছে।

এই প্রযুক্তি শুধু ট্রেন চলাচলেই নয়, বরং মহাকাশবিজ্ঞান এবং বিমান চালনার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে রকেট বা প্লেন অনেক কম জ্বালানি খরচ করে আরও সহজে এবং দ্রুত উড্ডয়ন করতে পারবে।

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ডিফেন্স টেকনোলজির প্রফেসর লি জি বলেন, অতি উচ্চগতির সুপারকন্ডাক্টিং ইলেকট্রিক ম্যাগলেভ সিস্টেমের এই সফল উদ্ভাবন চীনের পরিবহনব্যবস্থার গবেষণাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দেবে।

গবেষণা দলটি ১০ বছর ধরে এই প্রজেক্টে কাজ করছে। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে একই ট্র্যাকে পরীক্ষা চালিয়ে তারা ৬৪৮ কিমি/ঘণ্টা গতিবেগ অর্জন করেছিল।

প্রায় তিন দশক আগে এই একই বিশ্ববিদ্যালয় চীনের প্রথম যাত্রীবাহী ম্যাগলেভ ট্রেন তৈরি করে, যা চীনকে বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে এই প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তোলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসী হামলার হুমকি, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় শিক্ষার্থী মনোজ সাই গ্রেপ্তার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩০
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট ডালাসের সিনিয়র শিক্ষার্থী মনোজ সাঁই লেল্লা। ছবি: লিংকড ইন
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট ডালাসের সিনিয়র শিক্ষার্থী মনোজ সাঁই লেল্লা। ছবি: লিংকড ইন

বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পরিবারকে সন্ত্রাসী হামলার হুমকির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, গ্রেপ্তার ওই শিক্ষার্থীর নাম মনোজ সাই লেল্লা। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট ডালাসের সিনিয়র শিক্ষার্থী ২২ বছর বয়সী মনোজ।

গত সোমবার মনোজকে গ্রেপ্তার করে ফ্রিস্কো পুলিশ। পুলিশ জানায়, পরিবারের সদস্যরা মনোজের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং সন্ত্রাসী হামলার হুমকির অভিযোগ নিয়ে ফোন করলে তারা ওই বাড়িতে যায়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এর কয়েক দিন আগে বাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে মনোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

মনোজ সাই লেল্লার বিরুদ্ধে বসবাসযোগ্য স্থান বা উপাসনালয় ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি প্রথম ডিগ্রির একটি গুরুতর অপরাধ। পাশাপাশি পরিবারের সদস্য বা একই গৃহের বাসিন্দার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হুমকির অভিযোগও রয়েছে, যা ক্লাস ‘এ’ মিসডিমিনার হিসেবে বিবেচিত।

তবে কোনো উপাসনালয়কে লক্ষ্য করে হুমকির প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আদালতের নথি অনুযায়ী, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মনোজের জামিনের জন্য দিতে হবে এক লাখ মার্কিন ডলার। আর সন্ত্রাসী হুমকির অভিযোগে জামিনে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ ডলার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৫
সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহি ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল
সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহি ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল

সোমালিল্যান্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নতুন নজির স্থাপন করেছে ইসরায়েল। এর মধ্য দিয়ে আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী ভূখণ্ডটি ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো কোনো রাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্বীকৃতি পেল।

শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, ইসরায়েল ও সোমালিল্যান্ড একটি যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। নেতানিয়াহু একে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গড়ে ওঠা ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। এই চুক্তির আওতায় দুই দেশ রাষ্ট্রদূত নিয়োগ ও পরস্পরের দেশে দূতাবাস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুক্রবার রাতে (২৬ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে আল-জাজিরা জানিয়েছে, ১৯৯১ সালে সোমালিয়া থেকে একতরফাভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও সোমালিল্যান্ড এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।

সোমালিয়া সরকার বরাবরই সোমালিল্যান্ডের স্বাধীনতাকে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। ইসরায়েলের ঘোষণার পর সোমালিয়ার সরকার একটি জরুরি বৈঠক ডাকে। এই বৈঠক থেকে ফোনালাপে মিসর, তুরস্ক ও জিবুতির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দেশটির ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ইসরায়েলের এমন স্বীকৃতিকে জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী এবং ‘বিপজ্জনক নজির’ বলে আখ্যা দিয়েছে মিসর।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, ভিডিও কলে সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহিকে (আব্দিরাহমান সিরো) অভিনন্দন জানান নেতানিয়াহু এবং তাঁকে ইসরায়েল সফরের আমন্ত্রণ জানান। সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট একে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ উল্লেখ করে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার পর এই স্বীকৃতি সোমালিল্যান্ডের জন্য বড় সাফল্য হলেও এটি সোমালিয়ার ভেতরে নতুন বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতাকে উসকে দিতে পারে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান দলের কিছু প্রভাবশালী নেতা বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাজিব রাজাকের ১৫ বছরের কারাদণ্ড, জটিল সমীকরণে মালয়েশিয়ার সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বর্তমানে অন্য একটি মামলায় জেল খাটছেন; যার মেয়াদ ২০২৮ সালে শেষ হবে। ছবি: এএফপি
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বর্তমানে অন্য একটি মামলায় জেল খাটছেন; যার মেয়াদ ২০২৮ সালে শেষ হবে। ছবি: এএফপি

মালয়েশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থ কেলেঙ্কারি মামলায় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) কুয়ালালামপুর হাইকোর্টের বিচারক কলিন লরেন্স সেকুয়েরাহ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাঁকে ১১ দশমিক ৪ বিলিয়ন রিঙ্গিত (প্রায় ২৮০ কোটি মার্কিন ডলার) জরিমানা করা হয়েছে।

৭২ বছর বয়সী নাজিব রাজাককে ক্ষমতার অপব্যবহারের চারটি ও অর্থ পাচারের ২১টিসহ মোট ২৫টি অভিযোগের সব কটিতেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই রায় মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, নাজিবের দল ইউএমএনও বর্তমান সরকারের একটি বড় অংশীদার।

পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক সেকুয়েরাহ নাজিবের আত্মপক্ষ সমর্থনের সব যুক্তি নাকচ করে দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক দাবি করেছিলেন, ওয়ানএমডিবির কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কিন্তু বিচারক তাঁর এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এটি বিশ্বাস করা মানে কল্পনাকে রূপকথার রাজ্যে নিয়ে যাওয়া। ব্রিটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসেবে নাজিব মোটেও কোনো ‘অবুঝ গ্রাম্য লোক’ নন, তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান।

বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, নাজিবের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো কোনো ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বিষয় নয়, বরং ‘কঠিন ও অকাট্য’ দালিলিক প্রমাণ বলছে তিনি নিজের ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করেছেন।

আদালত নাজিবকে ১১ দশমিক ৪ বিলিয়ন রিঙ্গিত জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই জরিমানা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাঁকে অতিরিক্ত আরও ১০ বছরের জেল খাটতে হতে পারে।

আদালত ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য প্রতিটি অভিযোগে ১৫ বছর এবং অর্থ পাচারের জন্য পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। তবে সব সাজার মেয়াদ একই সঙ্গে কার্যকর হবে, ফলে তাঁকে মোট ১৫ বছর জেল খাটতে হবে।

এদিকে নাজিব বর্তমানে অন্য একটি মামলায় জেল খাটছেন যার মেয়াদ ২০২৮ সালে শেষ হবে। নতুন এই সাজা সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে কার্যকর হবে।

তবে এই রায়ের ফলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে অস্থিরতা বাড়তে পারে। কারণ, নাজিবের দল ইউএমএনও বর্তমান সরকারের একটি বড় অংশীদার। ফলে দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তি নিয়ে ক্ষমতায় আসা আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য এটি একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

২০২২ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে কোনো দল বা জোটই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন নিশ্চিত করতে না পারায়, শেষমেশ আনোয়ার ইব্রাহিমের দল পাকাতান হারাপান (পিএইচ) জোট সরকার গঠন করে। এর মধ্যে পিএইচর ৮২টি, ইউনাইটেড মালয়জ ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (ইউএমএনও) ২৬টি ও বারিসান ন্যাসিওনালের (বিএন) চারটি আসন নিয়ে এই জোট সরকার গঠিত হয়।

জেলখানায় থাকলেও দলের ওপর নাজিবের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এই রায়ের পর দলের ভেতর থেকে আনোয়ার ইব্রাহিমের ওপর চাপ সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি কোনো কারণে ইউএমএনও বর্তমান জোট সরকার থেকে সরে যায়, তবে বিপাকে পড়বেন আনোয়ার ইব্রাহিম।

নাজিবের প্রধান আইনজীবী মুহাম্মদ শাফি আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আগামী সোমবার আপিল করবেন।

রায়ের পর এক বিবৃতিতে নাজিব রাজাক দেশবাসীকে শান্ত ও ধৈর্যশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই লড়াই দায়িত্ব এড়ানোর জন্য নয়, বরং ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য।’ তবে এই দণ্ডাদেশের ফলে নাজিবের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বারহাদ বা ওয়ানএমডিবি হলো মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রমালিকানাধীন একটি কৌশলগত উন্নয়ন সংস্থা। মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটি তৈরি হয়েছিল, কিন্তু পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকসহ সংশ্লিষ্টরা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন।

২০১৫ সালে ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারির ঘটনাটি প্রথম সামনে আসে, যা ২০১৮ সালের নির্বাচনে নাজিব রাজাকের দলের দীর্ঘ ছয় দশকের শাসনের অবসান ঘটায়। এর আগে ২০২০ সালে অন্য একটি মামলায় নাজিবকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা পরে কমিয়ে ছয় বছর করা হয়। সাত বছর ধরে চলা এই দীর্ঘ আইনিপ্রক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত