Ajker Patrika

গাজায় ১০ ব্রিটিশ নাগরিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর টহল। ছবি: আনাদলুর সৌজন্যে
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর টহল। ছবি: আনাদলুর সৌজন্যে

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ১০ ব্রিটিশ নাগরিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাজ্যের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার আইনজীবীরা লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই আইনজীবীদের দলের সদস্য মাইকেল ম্যানসফিল্ড কেসি, আজ সোমবার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের যুদ্ধাপরাধ ইউনিটের কাছে ২৪০ পৃষ্ঠার একটি নথি হস্তান্তর করবেন। নথিতে বেসামরিক নাগরিক এবং ত্রাণকর্মীদের হত্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। স্নাইপার দিয়ে গুলি করা এবং হাসপাতালসহ বেসামরিক এলাকায় নির্বিচারে হামলার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।

হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুক্তরাজ্যের আইনজীবী এবং গবেষকদের একটি দলের প্রস্তুত করা এই প্রতিবেদনে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপনাসহ সুরক্ষিত স্থানগুলোতে সমন্বিত হামলা এবং বেসামরিক নাগরিকদের জোরপূর্বক স্থানান্তর ও বাস্তুচ্যুতির অভিযোগও আনা হয়েছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাও রয়েছে। তবে আইনি কারণে তাঁদের পরিচয় ও সম্পূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

ইসরায়েল বরাবর গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ থেকে এ পর্যন্ত তারা ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। অক্টোবরের ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক এবং আরও ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।

যুক্তরাজ্যে গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকাণ্ড, স্টিফেন লরেন্স এবং বার্মিংহাম সিক্সের মতো উল্লেখযোগ্য মামলায় কাজের জন্য পরিচিত আইনজীবী ম্যানসফিল্ড। তিনি বলেছেন, ‘যদি আমাদের কোনো নাগরিক অপরাধ করে থাকে, তাহলে আমাদের উচিত সে বিষয়ে কিছু করা। এমনকি আমরা যদি অন্য দেশগুলোর সরকারকে খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত রাখতে নাও পারি, আমরা অন্তত আমাদের নাগরিকদের খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত রাখতে পারি।’

ম্যানসফিল্ড বলেন, ‘ব্রিটিশ নাগরিকেরা ফিলিস্তিনে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে যোগসাজশ না করার আইনি বাধ্যবাধকতার অধীনে রয়েছেন। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন।’

গাজায় অবস্থিত ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস (পিসিএইচআর) এবং যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক পাবলিক ইন্টারেস্ট ল সেন্টার (পিআইএলসি)–এর পক্ষ থেকে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত ফিলিস্তিনে সংঘটিত অপরাধগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব সংকলন করতে ছয় মাস সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ জন ব্রিটিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অপরাধ, যাদের মধ্যে কয়েকজন দ্বৈত নাগরিক, যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল।

একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে উপস্থিত এক সাক্ষী বলেছেন, বিশেষ করে হাসপাতালের উঠানের মাঝখানে মৃতদেহগুলো মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখেছেন, যেখানে অনেক মৃতদেহ গণকবরে সমাহিত করা হয়েছিল।

সাক্ষীরা বলেন, একটি বুলডোজার দিয়ে মৃতদেহগুলোকে পিষিয়ে দেওয়া হয়েছে। বুলডোজার দিয়ে হাসপাতালের একটি অংশ ভেঙেও দেওয়া হয়েছে।

ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের ব্যারিস্টার শন সামারফিল্ড, নথিটি সংকলন করতে সাহায্য করেছেন, তিনি বলেন, স্বাধীন উৎসের তথ্যপ্রমাণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে এই নথি তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, মানুষ এটা জেনে হতবাক হবেন যে, ব্রিটিশরা সেই নৃশংসতার কিছু ঘটানোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনকারীদের বিষয়ে তদন্ত এবং বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসারে ব্রিটেনের একটি দায়িত্ব রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইন ২০০১–এর ৫১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ করলে তা ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ, এমনকি যদি সেটি অন্য দেশেও ঘটে থাকে।

পিসিএইচআর–এর পরিচালক রাজি সোরানি বলেন, ‘এটি অবৈধ, এটি অমানবিক। সরকার বলতে পারে না যে তারা জানত না; আমরা তাদের সমস্ত প্রমাণ দিচ্ছি।’

পিআইএলসি-এর আইনি পরিচালক পল হেরন বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদন দাখিল করছি এটা স্পষ্ট করার জন্য যে, এই যুদ্ধাপরাধগুলো আমাদের তরফ থেকে ঘটছে না।’

আইনজীবী এবং মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের অনেকে অভিযোগগুলোর তদন্ত করার জন্য যুদ্ধাপরাধ দলকে অনুরোধ জানিয়ে একটি সমর্থনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনে এক সন্তান নীতির প্রবক্তার মৃত্যু, শ্রদ্ধার চেয়ে সমালোচনাই বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৬
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

চীনে বিতর্কিত এক সন্তান নীতির প্রবক্তা পেং পেইইউনের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা নিবেদনের বদলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীতিটি ঘিরে তীব্র সমালোচনা দেখা গেছে। গত রোববার বেইজিংয়ে ৯৬তম জন্মদিনের ঠিক আগমুহূর্তে পেংয়ের মৃত্যুতে চীনাদের প্রতিক্রিয়া অনেকটা নেতিবাচক।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে পেং পেইইউনকে নারী ও শিশুবিষয়ক কাজে ‘একজন অসাধারণ নেতা’ হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি।

তবে চীনের জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং ওয়েবসাইট ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ভূমিষ্ঠ হতে না পারা শিশুরা ওপারে নগ্ন দেহে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

এনডিটিভি জানিয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীনে দম্পতিদের কেবল একটি সন্তান নেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা কার্যকর করতে স্থানীয় কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে নারীদের গর্ভপাত ও বন্ধ্যাকরণ করতে বাধ্য করতেন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় বেইজিং এই এক সন্তান নীতি চালু করেছিল।

এর ফলে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ থাকার পর চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে পড়ে এবং গত বছর টানা তৃতীয়বারের মতো জনসংখ্যা পড়তির দিকে ছিল।

ওয়েইবোতে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘যদি এই নীতি অন্তত ১০ বছর আগে শেষ করা হতো, তাহলে চীনের জনসংখ্যা আজ এভাবে ধসে পড়ত না!’

গত বছর চীনের জনসংখ্যা কমে ১৩৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সামনের বছরগুলোতে এই নিম্নগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।

জনসংখ্যার নীতিনির্ধারক হিসেবে পেং জোর দিয়েছিলেন গ্রামীণ এলাকায়। একসময় চীনের গ্রামগুলোতে বড় পরিবার গড়ে তোলা দম্পতিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, যাতে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানেরা তাঁদের দেখাশোনা করতে পারে। এ ছাড়া বংশ রক্ষার জন্য ছেলেসন্তানের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকায় মেয়েশিশুদের অবহেলা, এমনকি কন্যা ভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটত।

ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ওই শিশুগুলো যদি জন্ম নিত, তাহলে আজ তাদের বয়স প্রায় ৪০ হতো—জীবনের সেরা সময়।’

২০১০-এর দশকে এসে পেং প্রকাশ্যে তাঁর অবস্থান বদলান এবং বলেন, এক সন্তান নীতি শিথিল করা উচিত। বর্তমানে বেইজিং কমে যাওয়া জন্মহার বাড়াতে শিশু পরিচর্যা ভর্তুকি, দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও করছাড়ের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে।

জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ায় বিষ্ণুমূর্তি গুঁড়িয়ে দিল থাই সেনারা, ভারতের তীব্র নিন্দা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৫
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট

কম্বোডিয়ায় হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতের জেরে থাই সেনাবাহিনী এটি ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধপূর্ণ এলাকায় সম্প্রতি নির্মিত একটি হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের খবর আমাদের নজরে এসেছে। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতার ঐতিহ্যের অংশ। এই ধরনের কাজ সারা বিশ্বের অনুসারীদের মনে আঘাত দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কম্বোডিয়ার প্রেহ বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা জানান, ২০১৪ সালে নির্মিত মূর্তিটি থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার সীমানায় ছিল। তিনি এই ঘটনাকে প্রাচীন ও পবিত্র স্থাপত্যের ওপর আঘাত হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত জুলাই মাস থেকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি হলেও চলতি মাসে পুনরায় সংঘাত শুরু হয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করে, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পদের বিনাশ রোধ করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত