Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন হেরে গেছেন: হারারি

আপডেট : ০১ মার্চ ২০২২, ২৩: ৪০
ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন হেরে গেছেন: হারারি

ইউক্রেন-রাশিয়া প্রথম আলোচনা কোনো ফল ছাড়াই শেষ হয়েছে। যুদ্ধ চলছে। গোটা বিশ্ব ভীষণ উদ্বেগ নিয়ে সে যুদ্ধের দিকে তাকিয়ে। মুদ্রাবাজার থেকে শুরু করে অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে এরই মধ্যে পড়েছে ভয়াবহ প্রভাব, যা সামনের দিনগুলোতে আরও বাজে আকার নিতে পারে বলে জোর আশঙ্কা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, গোলা ফুটছে, বারুদের গন্ধ এখন বাস্তব এবং মানুষ মরছে। সামরিক হোক, বেসামরিক হোক, ইউক্রেনীয় হোক কিংবা রুশ, মানুষই মরছে। এই যুদ্ধকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দম্ভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন অনেকে, অনেকে আবার নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রত্যাশায় শিহরিত। যুক্তরাষ্ট্র ও গোটা ইউরোপ এর সঙ্গে জড়িয়ে গেলে এ যুদ্ধের ফল কী হবে, কেউ জানে না। কিন্তু ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ ইয়ুভাল নোয়াহ হারারি বলছেন, যুদ্ধে পুতিনের পরাজয় এরই মধ্যে হয়ে গেছে। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত হারারির এই লেখায় উঠে এসেছে যুদ্ধের বাস্তবতা যেমন, তেমনি এসেছে গোটা বিশ্বের ভবিষ্যতের ওপর এর প্রভাবের বিষয়টিও। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য থাকল তাঁর পুরো লেখাটির অনুবাদ—

ইউক্রেন যুদ্ধে এরই মধ্যে হেরে গেছেন পুতিন

ইয়ুভাল নোয়াহ হারারি

এখনো হয়তো ইউক্রেন দখল করতে পারবে রুশরা। কিন্তু গত কয়েক দিনে ইউক্রেনীয়রা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তারা এটি ধরে রাখতে পারবে না। 

যুদ্ধ শুরুর এক সপ্তাহেরও কম সময় গেলেও যত সময় যাচ্ছে, ততই মনে হচ্ছে, ভ্লাদিমির পুতিন ক্রমেই এক ঐতিহাসিক পরাজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। সবগুলো লড়াইয়ে জিতলেও তিনি এ যুদ্ধে হেরে যাবেন। পুতিনের রুশ সাম্রাজ্য পুনঃপত্তনের স্বপ্ন সব সময়ই একটি মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে—ইউক্রেন সত্যিকারের কোনো জাতি নয়, ইউক্রেনীয়রা সত্যিকারের কোনো মানুষ নয়, আর কিয়েভ, খারকিভ, লভিভের বাসিন্দাদের জন্ম মস্কোর শাসনে থাকার জন্যই। এটি একটি ডাহা মিথ্যা। ইউক্রেন একটি জাতি, যার রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। আর যখন মস্কো একটা অজ গ্রামও নয়, তখনই কিয়েভ মহানগর। কিন্তু রুশরা এই মিথ্যা তাদের এতবার বলেছে যে, ইউক্রেনীয়রাও এখন এটি বিশ্বাস করে। 

ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনার সময় পুতিন হয়তো অনেক জানা বিষয়কে বিবেচনা করতে পারতেন। তিনি জানতেন, সামরিক দিক থেকে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেন অতি ক্ষুদ্র। তিনি জানতেন, ইউক্রেনকে সাহায্য করতে সেনা পাঠাবে না ন্যাটো। তিনি জানতেন, রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ওপর ইউরোপের নির্ভরশীলতা জার্মানির মতো দেশগুলোকে রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপে দোনোমনায় ফেলবে। এই সব জানা সত্ত্বেও তাঁর পরিকল্পনা ছিল ইউক্রেনে দ্রুততম সময়ে জোরালো হামলা চালানো, এর সরকারকে উৎখাত করা, কিয়েভে একটি পুতুল সরকার বসানো এবং এর মাধ্যমে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জের কাটিয়ে ওঠা। 

কিন্তু এই পরিকল্পনার সঙ্গে জুড়ে ছিল আরেকটি বড় অজানা বিষয়ও। ইরাক থেকে মার্কিনরা যেমন, তেমনি আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার পাওয়া শিক্ষা থেকে এটা পরিষ্কার যে, কোনো দেশকে হয়তো দখল করা যায়, কিন্তু তা ধরে রাখা অনেক কঠিন। পুতিন জানতেন, ইউক্রেন দখলের শক্তি তাঁর আছে। কিন্তু ইউক্রেনের মানুষ কি মস্কোর পুতুল সরকারকে মেনে নেবে? পুতিন বাজি ধরেছেন যে, তারা (তাঁর সে সরকার) মেনে নেবে। যেহেতু যেকোনো শ্রোতাকেই পুতিন এই কথাই বারবার ব্যাখ্যা করেছেন যে, ইউক্রেন বাস্তব কোনো জাতি নয়, আর ইউক্রেনীয়রা নয় বাস্তবের জনতা। ২০১৪ সালে রুশ বাহিনী ক্রিমিয়ায় তেমন প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়নি। তাহলে ২০২২ সালে অন্য কিছু কেন হতে যাবে? 

এই যুদ্ধকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দম্ভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন অনেকেপ্রতিটি দিন যাচ্ছে, আর এটা পরিষ্কার হচ্ছে যে, পুতিন বাজিতে হেরে যাচ্ছেন। ইউক্রেনের মানুষেরা তাদের সমস্তটা দিয়ে লড়ছে, যা দিয়ে গোটা বিশ্বের প্রশংসা কুড়াচ্ছে তারা, আর জিতে যাচ্ছে যুদ্ধেও। সামনে আছে অগণিত কালো দিন। রুশরা হয়তো এরপরও ইউক্রেন দখলে নিতে পারবে। কিন্তু এই যুদ্ধে জয় পেতে হলে তাদের ইউক্রেনকে ধরে রাখতে হবে। আর এটা তারা তখনই করতে পারবে, যদি তাতে ইউক্রেনীয়রা সম্মত হয়। এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হচ্ছে। 

প্রতিটি রুশ ট্যাংক ধ্বংস হওয়ার সঙ্গে এবং প্রতিটি রুশ সেনার মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ যুদ্ধের সাহস। আর প্রতিটি ইউক্রেনীয়র মৃত্যুর সঙ্গে বাড়বে রুশদের প্রতি তাদের ঘৃণার মাত্রা। আর কে না জানে ঘৃণাই সবচেয়ে কদর্য আবেগ। কিন্তু নিপীড়িত জাতির জন্য ঘৃণা এক গোপন রত্ন। হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থেকে এটি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার জ্বালানি দেয়। রুশ সাম্রাজ্য পুনঃপত্তনের জন্য পুতিনকে তুলনামূলক রক্তপাতহীন জয় পেতে হবে, যাতে দখলটি তুলনামূলক ঘৃণাহীন হয়। ইউক্রেনীয়দের রক্ত ঝরানোর মধ্য দিয়ে পুতিন তাঁর স্বপ্নের বাস্তবে রূপ না পাওয়ার বিষয়টিই নিশ্চিত করছেন। রুশ সাম্রাজ্যের মৃত্যুর সনদে তখন আর মিখাইল গর্বাচেভ নন, লেখা থাকবে পুতিনের নাম। গর্বাচেভ যখন যান, তখন রুশ ও ইউক্রেনীয়দের মধ্যে ছিল পরস্পরের প্রতি সহদোরের অনুভূতি। আর পুতিন তাদের শত্রুতে পরিণত করেছেন। ইউক্রেনীয় জাতি এখন থেকে নিজেকে রাশিয়ার বিরোধী পক্ষ হিসেবেই যেন ভাবে, সে বিষয়টিও তিনি নিশ্চিত করেছেন। 

জাতি মূলত গড়ে ওঠে গল্পের ভিতে। প্রতিটি দিন যাবে, আর নতুন নতুন গল্পের নির্মাণ হবে, যা এই অন্ধকার দিনগুলোতেই শুধু নয়, পরবর্তী দশকগুলোতেও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ইউক্রেনীয়রা বলে যাবে। রাজধানী ছেড়ে যেতে না চাওয়া প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গোলাবারুদ চেয়েছেন, কোনো ফ্লাইট নয়; স্নেক আইল্যান্ডের সৈনিকেরা রুশ যুদ্ধজাহাজের উদ্দেশে বলেছে, ‘দূরে গিয়ে মরো’; আর বেসামরিক লোকেরা পথের ওপর বসে থেকে রুশ ট্যাংককে থামাতে চেয়েছে। এ হলো সেই সব গল্প, যা থেকে একটি জাতি গড়ে ওঠে। দীর্ঘ যাত্রায় এই গল্পগুলোর মূল্য ট্যাংক বাহিনীর চেয়ে বেশি। 

অন্য যে কারও মতো রুশ স্বৈরশাসকেরও এটি জানার কথা। তিনি সেই সময়ে বেড়ে ওঠা শিশু, যখন অবরুদ্ধ লেনিনগ্রাদে চালানো জার্মান নৃশংসতা ও রুশ বীরত্বের গল্পগুলো ঘুরে বেড়াত। তিনিই এখন একই ধরনের গল্পের উৎপাদন করছেন, তবে নিজেকে বসিয়ে হিটলারের আসনে। 

ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ ইয়ুভাল নোয়াহ হারারিইউক্রেনীয়দের বীরত্বগাথা শুধু তাদের জন্যই নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই সমাধান হয়ে আসবে। তারা সাহস জোগাবে ইউরোপের জাতিগুলোকে, মার্কিন প্রশাসনকে এবং এমনকি রাশিয়ার নিপীড়িত নাগরিকদেরও। যদি ইউক্রেনীয়রা খালি হাতে একটি ট্যাংককে থামানোর সাহস দেখাতে পারে, তবে জার্মান সরকারও তাদের ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের সাহস দেখাতে পারে, মার্কিন সরকার পারে সুইফট থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়ার সাহস দেখাতে, আর রুশ নাগরিকেরাও পারে এই নির্বোধ যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করতে। 

আমরা সবাই তখন কিছু না কিছু করার সাহস পাব, হোক সেটা অনুদান, হোক শরণার্থীদের স্বাগত জানানো, কিংবা হোক অনলাইনে এ লড়াইয়ের প্রতি সমর্থন জানানো। ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো বিশ্বের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে। যদি অত্যাচার ও আগ্রাসনকে জয়ী হতে দেওয়া হয়, তবে তার জন্য আমাদের সবাইকেই ভুগতে হবে। শুধু পর্যবেক্ষক হয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এখন উঠে দাঁড়ানোর সময়, নিজ অবস্থান প্রকাশের সময়। 

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে হচ্ছে। ধরন পাল্টে এটি বছরের বছর ধরে চলতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে হয়ে গেছে। গত কয়েক দিনের ঘটনাবলি গোটা বিশ্বের কাছে এটা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, ইউক্রেনীয় জাতি খুবই বাস্তব এবং ইউক্রেনীয়রাও বাস্তব মানুষই এবং তারা নিশ্চিতভাবেই রুশ সাম্রাজ্যের অধীনে বাস করতে চায় না। এখন মূল প্রশ্নটি হলো—ক্রেমলিনের চওড়া দেয়াল ভেদ করতে এই বার্তার কত সময় লাগবে? 

লেখক: ইতিহাসবিদ ও লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ফরিদাবাদ শহরে চলন্ত গাড়িতে ২৮ বছর বয়সী এক নারীকে তুলে নিয়ে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবাহিত ওই নারী রাতে বাড়ি যাওয়ার জন্য যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় একটি গাড়ি থামে এবং দুজন যুবক তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলেন। কিন্তু গাড়িটি তাঁর গন্তব্যের বদলে গুড়গাঁও সড়কের দিকে যেতে শুরু করে।

অভিযোগ অনুযায়ী, ওই নারী দুই ঘণ্টা গাড়িটির ভেতরে আটকে ছিলেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত তাঁকে ধর্ষণ করেন। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা থামেননি, উল্টো তাঁকে হুমকি দেন। এরপর এস জি এম নগরের রাজা চকের কাছে ওই নারীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে তাঁর মুখে গুরুতর আঘাত লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

এ সময় ভুক্তভোগী নারী বারবার তাঁর বোনকে ফোন করছিলেন। পরে তাঁর বোন যখন ফিরতি ফোন করেন, তখন তিনি পুরো বিষয়টি জানতে পারেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁর মুখে ১০ থেকে ১২টি সেলাই দিতে হয়েছে।

বর্তমানে ওই নারীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও ট্রমায় ভুগছেন। এ জন্য এখন পর্যন্ত তাঁর জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ভুক্তভোগীর বোন অভিযোগে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর বোন তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হওয়ায় তিনি বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছেন। তিন ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসবেন বলেও বোনকে জানিয়েছিলেন তিনি।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই নারী বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জননী। পারিবারিক কলহের কারণে তিনি স্বামী থেকে আলাদা থাকেন।

পুলিশ এরই মধ্যে অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার ও অপরাধে ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জার্মানিতে হলিউড স্টাইলে ডাকাতি, ব্যাংকের ভল্ট কেটে ৩ কোটি ইউরো লুট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। ছবি: গেলসেনকির্শেন পুলিশ
ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা। ছবি: গেলসেনকির্শেন পুলিশ

হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা-সিরিজে হরহামেশাই ব্যাংক ডাকাতির কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তেমন হওয়াটা অসম্ভব মনে হলেও এমন সিনেমাটিক স্টাইলে ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেছে জার্মানির এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায়। ড্রিল দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৩ কোটি ইউরো মূল্যের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাতেরা।

পশ্চিম জার্মানির গেলসেনকির্শেন শহরের স্পারকাসে সেভিংস ব্যাংকে এ ঘটনা ঘটেছে। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বড় ড্রিল ব্যবহার করে আনুমানিক ৩ কোটি ইউরো (৪৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা) নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এই ঘটনাকে ডাকাতির কাহিনিনির্ভর হলিউডের সিনেমা ‘ওশানস ইলেভেন’-এর সঙ্গে তুলনা করে এএফপি বার্তা সংস্থাকে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটি অত্যন্ত পেশাদারভাবে করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই ডাকাতির সময় অর্থ, স্বর্ণ ও গহনা রাখা ৩ হাজারেরও বেশি সেফ ডিপোজিট বক্স ভেঙে ফেলা হয়েছে।

গেলসেনকির্শেন পুলিশ জানায়, গত সোমবার ভোররাতে ফায়ার অ্যালার্ম সক্রিয় হলে তারা ঘটনার বিষয়ে জানতে পারে। তখন ক্রিসমাসের ছুটি চলছিল। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বুয়ের জেলায় নিয়েনহোফস্ট্রাসে অবস্থিত ওই ভবনে ডাকাতি চালায়।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তারা পাশের একটি পার্কিং গ্যারেজ ব্যবহার করে ব্যাংকে ঢোকে এবং সেখান দিয়েই পালিয়ে যায়।

তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিবিসি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শনিবার রাত থেকে গত রোববার ভোর পর্যন্ত ওই ভবনটির গ্যারেজের সিঁড়িঘরে কয়েকজন পুরুষকে বড় বড় ব্যাগ বহন করতে দেখা গেছে।

পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজে সোমবার ভোরে ডে-লা-শেভালারি-স্ট্রাসে অবস্থিত গ্যারেজ থেকে একটি কালো অডি আরএস ৬ গাড়িকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। সোমবার ভোররাতে একটি ফায়ার-অ্যালার্ম বাজলে ভূগর্ভস্থ ভল্ট রুমে ঢোকার জন্য করা গর্তটি ধরা পড়ে। এরপর পুলিশ ও দমকল বাহিনী ভবনটিতে তল্লাশি চালায়।

চুরির ঘটনায় ব্যাংকের শাখাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রাহকদের প্রায় ৯৫ শতাংশ সেফ ডিপোজিট বক্স খুলে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজা-পশ্চিম তীরের ৩৭ ত্রাণ সংস্থার লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করেছে ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এমন ৩৭টি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির দাবি, এসব সংস্থা নতুন নিবন্ধন বিধিমালার আওতায় নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এসব সংস্থা তাদের কর্মীদের ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।

বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যাকশনএইড, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি এবং নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মতো পরিচিত আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (আইএনজিও) গুলোর লাইসেন্স ১ জানুয়ারি থেকে স্থগিত করা হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যসহ ১০টি দেশ। তারা বলছে, নতুন নিয়মগুলো ‘অতিরিক্তভাবে কঠোর’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’।

এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করে দিলে স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি সেবায় প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনো ‘বিপর্যয়কর’ উল্লেখ করে তাঁরা ইসরায়েল সরকারকে আহ্বান জানান, যাতে এনজিওগুলো টেকসই এবং আগের মতো কাজ করতে পারে।

এদিকে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন এই পদক্ষেপগুলোর ফলে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহে কোনো প্রভাব পড়বে না। মন্ত্রণালয়টি জানায়, জাতিসংঘের সংস্থা, দ্বিপক্ষীয় অংশীদার এবং মানবিক সংগঠনসহ ‘অনুমোদিত ও যাচাইকৃত চ্যানেল’ দিয়ে সহায়তা সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।

তাদের দাবি, সহায়তা সংস্থাগুলোর লাইসেন্স বাতিলের প্রধান কারণ হলো, তাদের কর্মীদের বিষয়ে সম্পূর্ণ ও যাচাইযোগ্য তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো যা মানবিক কাঠামোয় ‘সন্ত্রাসী অপারেটিভদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইসরায়েল।

এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা বলেন, অক্টোবর মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় পুষ্টি ও খাদ্য সরবরাহে কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে পরের মাসেও প্রায় ১ লাখ মানুষ ‘চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মুখোমুখি ছিল।

তবে গাজার সীমান্ত ক্রসিংগুলো নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাত দাবি করেছে, যেসব সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করা হবে, তারা বর্তমান যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় কোনো সহায়তা আনেনি। সংস্থাটি আরও জানায়, অতীতেও তাদের সম্মিলিত অবদান মোট সহায়তার মাত্র প্রায় ১ শতাংশ ছিল।

ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ১৫ শতাংশেরও কম নতুন নিয়ন্ত্রক কাঠামো লঙ্ঘন করেছে।

ওই নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে লাইসেন্স বাতিলের একাধিক ভিত্তি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

১. ইসরায়েলকে একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার না করা

২. হলোকাস্ট বা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলা অস্বীকার করা

৩. শত্রু রাষ্ট্র বা সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকে সমর্থন করা

৪. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অবৈধতা আরোপের প্রচারণা’ চালানো

৫. ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান জানানো বা তাতে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করা

৬. বিদেশি বা আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাকে সমর্থন করা

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের সংস্থা এবং ২০০টিরও বেশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম আগেই সতর্ক করে বলেছিল, নতুন নিবন্ধন নীতিমালা গাজা ও পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রমকে মৌলিকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

তাদের ভাষায়, ‘এই ব্যবস্থা অস্পষ্ট, খামখেয়ালি ও অত্যন্ত রাজনৈতিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভরশীল এবং এমন সব শর্ত আরোপ করছে, যা মানবিক সংস্থাগুলোর পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন না করে বা মানবিক নীতির মূল ভিত্তি ক্ষুণ্ন না করে পূরণ করা সম্ভব নয়।’

হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিমের মতে, বর্তমানে গাজায় অধিকাংশ ফিল্ড হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা বা সহায়তা, জরুরি আশ্রয় কার্যক্রম, পানি ও স্যানিটেশন সেবা, তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুষ্টি স্থিতিশীলকরণ কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইন অপসারণ কার্যক্রম আইএনজিওগুলোর মাধ্যমেই পরিচালিত বা সমর্থিত হচ্ছে।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক ও ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই চিকলি বলেন, ‘বার্তাটি স্পষ্ট: মানবিক সহায়তা স্বাগত কিন্তু সন্ত্রাসবাদের জন্য মানবিক কাঠামোর অপব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।’

কার্যক্রম স্থগিত হতে যাচ্ছে এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে কেয়ার, মেডিকো ইন্টারন্যাশনাল এবং মেডিক্যাল এইড ফর প্যালেস্টিনিয়ানস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইয়েমেন সংঘাতে মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি ও আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৬
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।

অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত