Ajker Patrika

কাবুল বিস্ফোরণ: ১৩ মার্কিন সেনাসহ নিহত কমপক্ষে ১১০

আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২১, ১৭: ১১
কাবুল বিস্ফোরণ: ১৩ মার্কিন সেনাসহ  নিহত কমপক্ষে ১১০

কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে জোড়া বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৩ মার্কিন সেনাও রয়েছেন। 

আফগানিস্তানে আল জাজিরার প্রতিনিধিদের একটি দল ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে। তাঁরা হতাহতের এই পরিসংখ্যান দিয়েছেন।

তালেবান কাবুল দখলের পর আফগানিস্তান ছাড়তে মরিয়া মার্কিন নাগরিক ও আফগান সহযোগীদের নিরাপত্তায় বিমানবন্দর এলাকায় কাজ করছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের গেটের সামনে শরণার্থীদের ভিড়ের মধ্যে এবং পার্শ্ববর্তী ব্যারন হোটেলের সামনে বিস্ফোরণ ঘটে। এ কারণে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আল জাজিরার সাংবাদিক চার্লস স্ট্র্যাটফোর্ড জানিয়েছেন, উদ্ধার তৎপরতা আবার শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ এরই মধ্যে বিমানবন্দর ত্যাগ করেছে। গতকালের পর বিমানবন্দরে লোক সমাগম অনেক বেড়েছে। বাকি কয়েকটি বিমানে ওঠার জন্য হাজার হাজার মানুষ দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন। 

গতকালের হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএসআইএল বা আইএসআইএসের আফগানিস্তান শাখা। এরা মূলত খোরাসান প্রদেশ ভিত্তিক তৎপরতা চালাচ্ছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর সহযোগী এবং অনুবাদক হিসেবে যারা কাজ করেছিল তাদের বিনাশ করার উদ্দেশ্যেই এই আত্মঘাতী হামলা ছিল বলে জানিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি।


তালেবানের কেউ হতাহত হয়নি জানিয়েছেন যাবিউল্লাহ মুজাহিদ   

তালেবানের কেউ হতাহত হয়নি, গোষ্ঠীর মুখপাত্র যাবিউল্লাহ মুজাহিদ বিবিসির পশতু সার্ভিসকে এ কথা বলেছেন। 

মুজাহিদ বলেন, 'আমাদের (তালেবান) কেউ হতাহত হয়নি। ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সে এলাকা মার্কিন বাহিনী নিয়ন্ত্রিত।' 

মুজাহিদের এই বক্তব্য রয়টার্সের আগের একটি প্রতিবেদনের সঙ্গে সরাসরি বিপরীত। রয়টার্স নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তালেবান কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেছে এই হামলায় তালেবানের ২৮ জন সদস্য নিহত হয়েছে।


বিস্ফোরণ সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য তাদের অভিযান অব্যাহত রাখবে  

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরে 'নিন্দনীয়' হামলা সত্ত্বেও আফগানিস্তান থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্য তাদের অভিযান অব্যাহত রাখবে।  

বিস্ফোরণের পর প্রধানমন্ত্রী একটি জরুরি সভা করেন, এরপর তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে যুক্তরাজ্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাবে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের  তথ্যমতে, বিস্ফোরণে যুক্তরাজ্যের কোনো সামরিক বা সরকারি কেউ হতাহত হননি


ফুটবলার এবং ক্রীড়াবিদদের সরিয়ে নেওয়া 'জটিল'  

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা বলেছে, আফগানিস্তান থেকে ফুটবলার এবং অন্যান্য ক্রীড়াবিদদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য তারা আলোচনা করছে। কিন্তু এটি 'অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং'।  

গত সপ্তাহে আফগান জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড় জাকি আনওয়ারি মার্কিন সামরিক বিমান থেকে পড়ে মারা যান। তালেবান দখলের পর তিনি কাবুল থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন।

তালেবান শাসনের অধীনে ক্রীড়াবিদরা তাদের নিরাপত্তার আশঙ্কা প্রকাশ করার পর অস্ট্রেলিয়া সরকার মঙ্গলবার ৫০ জন নারী ক্রীড়াবিদকে সরিয়ে নেয়। 


 

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন

 

বিস্ফোরণের আগেই অস্ট্রেলিয়ার সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়  

গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেয় তালেবান। এরপর থেকেই দেশত্যাগ করতে কাবুল বিমানবন্দরে উপচে পরা ভিড় লক্ষ্য করা যায়। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে কাবুল বিমানবন্দর। বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে কাবুল বিমানবন্দরে হামলার আশঙ্কা করা হয়। এরপরেও থামানো যায়নি জনস্রোত। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দেশত্যাগ করতে কাবুল বিমানবন্দরে ভিড় করতে থাকে মানুষ। 

গতকাল বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে এখনো পর্যন্ত ৯০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। 

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের আগেই হামলার বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য থাকায় সেনাদের সরিয়ে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কাবুল থেকে সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শেষ করেছে দেশটি। আজ শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এ কথা জানান। 

সংবাদ সম্মেলনে স্কট মরিসন বলেন, আমরা রাতের মধ্যেই অবশিষ্ট সেনাদের কাবুল থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের অনেকক্ষণ আগেই আমরা আমাদের সেনাদের সরিয়ে নেই। 

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তালেবান ক্ষমতা দখলের পর কাবুল থেকে নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে মার্কিন এবং ব্রিটিশ সেনাবাহিনী সহযোগিতা করেছে। তাঁদের সহযোগিতায় আমরা ৪ হাজার ১০০ জনকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ভিসাধারী ৩ হাজার ২০০ জন আফগান নাগরিকও ছিল।


যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আমরা বেশি মানুষ হারিয়েছি বলেছে তালেবান

কাবুল বিমানবন্দরে বোমা হামলায় তালেবানের কমপক্ষে ২৮ জন সদস্য নিহত হয়েছেন বলে একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে।   

নাম প্রকাশ না করে তালেবানের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি লোককে হারিয়েছি।'  

এই পরিস্থিতিতে তিনি বলেন, সেনা প্রত্যাহার ও জনগণকে সরানো সম্পন্ন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সময়সীমা বাড়ানোর প্রয়োজন নেই।  

বৃহস্পতিবার রাতে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে দুটি বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৩ মার্কিন সেনাসহ ৯০ জন নিহত হয়েছেন। 

ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায় শিকার করেছে।

 


জাস্টিন ট্রুডো

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো আফগানিস্তানের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বৃহস্পতিবার কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। 

ট্রুডো বলেন, 'এই জঘন্য হামলায় অনেক নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের সুস্থতা কামনা করছি।'

 


জো বাইডেন

'সময় এসেছে ২০ বছরের যুদ্ধ শেষ করার' 

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বৃহস্পতিবারের হামলার আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আফগানিস্তানে কোনো আমেরিকান যুদ্ধে হতাহত হয়নি। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। 

হামলা না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন ১ মে আফগানিস্তান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি ছিল। 

ওই চুক্তির কারণে আমেরিকানরা হামলার শিকার হয়নি। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, 'সময় এসেছে ২০ বছরের যুদ্ধ শেষ করার।'


আমাদের তালেবানের 'স্বার্থের' ওপর নির্ভর করতে হবে বলেছেন বাইডেন 

মার্কিন সেনাবাহিনী কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় তালেবানকে বিশ্বাস করে ভুল করেছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, 'কেউ তাদের ওপর বিশ্বাস করে না। আমরা কেবল তাদের স্বার্থের ওপর নির্ভর করে কার্যক্রম তৈরি করতে থাকি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, 'হামলাকারী কারা তা জানার প্রয়োজন আছে। আমরা তাদের খুঁজে পাব।' 


'আমেরিকা এই হামলা ভুলবে না'   

'আমরা ক্ষমা করবো না। আমরা ভুলব না।' 

হামলাকারীরা আফগানিস্তানের বিজয়ের সময় তালেবানদের দ্বারা খোলা কারাগার থেকে এসেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাইডেন। 

বাইডেন আইএসআইএস-কেও উল্লেখ করেছেন, যারা এই হামলার কৃতিত্ব নিয়েছে। 

তিনি বলেন, 'আমরা সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডে নিরাশ হব না। আমরা মিশন বন্ধ করব না। আমরা জনগণকে সরানোর অভিযান অব্যাহত রাখব।'


আফগানদের হত্যায় ক্ষুব্ধ বাইডেন 

জো বাইডেন বলেছেন, 'এই হামলায় যে আফগান পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছে তাদের জন্য আমাদের হৃদয় ব্যথিত হয়েছে। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'আমরা ক্ষুব্ধ হওয়ার পাশাপাশি ভারাক্রান্ত।' 


মার্কিন ভুক্তভোগীদের প্রশংসা করেছেন জো বাইডেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'স্থল পরিস্থিতি এখনও বিকশিত হচ্ছে এবং আমি প্রতিনিয়ত খবর রাখছি।'  

তিনি সৈন্যদের প্রশংসা করে বলেছেন, 'অন্যের জীবন বাঁচানোর জন্য একটি বিপজ্জনক মিশনে নিযুক্ত ছিলেন তারা।'

জো বাইডেন


বিশ্ব নেতারা কাবুল হামলার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন

বিশ্বব্যাপী রাজনীতিবিদরা কাবুল বিমানবন্দরে বোমা হামলার বিরুদ্ধে কথা বলছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শিগিগির কথা বলবেন। আমরা আপনাদের তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাব।

ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ ঘটনাটিকে 'ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা' হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে 'যতটা সম্ভব মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া' অগ্রাধিকার হিসাবে রয়ে গেছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একটি বিবৃতি বলেন 'চরম দৃঢ়তার সঙ্গে সন্ত্রাসী হামলা' হয়েছে। সেখানে যারা মানুষের নিরাপত্তা দিতে আছেন তাদের সম্মান জানান তিনি। 

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব  বলেছেন 'সন্ত্রাসীদের কাপুরুষোচিত কাজ আমাদের থামতে দেবে না।' 

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, তার সরকার বিস্ফোরণে নিহতদের প্রতি 'আন্তরিক সংহতি' জানিয়েছেন। 

এ ঘটনায় কোনো ইতালীয় নাগরিক আহত হয়নি তা নিশ্চিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইগি ডি মাইও বলেন, তিনি হামলার 'তীব্র নিন্দা' এবং সমবেদনা জানিয়েছেন।


আরেকটি বিস্ফোরণ, নিয়ন্ত্রণে জানাল তালেবান   

কাবুলের বাসিন্দারা গেল এক ঘণ্টার মধ্যে আরও একটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।

বিবিসি'র আফগান প্রতিনিধি সেকান্দার কেরমানি বিস্ফোরণের কথা শুনেছেন বলে একটি টুইট করেছেন। 

তালেবানের মুখপাত্র যাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, বিস্ফোরণটি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। 


এক ঘণ্টার মধ্যে কথা বলবেন বাইডেন 

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক ঘণ্টার মধ্যে কাবুলের ঘটনা নিয়ে কথা বলবেন।


'সৈন্যরা চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করেছে'  

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব ডমিনিক রাব ১২ জন সেনা সদস্যের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে রাব বলেন, 'অন্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তারা চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করেছে। 

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'আমি নিহত বা আহত সকল আফগানদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে চাই।'


ইসলামিক স্টেট বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে

কাবুল বিমানবন্দরে হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) । 

তাদের নিউজ আউটলেটের টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা একটি বার্তায় এই দাবি উঠে এসেছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারাও বলেছেন যে তারা বিশ্বাস করেন যে বোমা হামলার পেছনে আইএস জড়িত। 

 


জেনারেল কেনেথ ম্যাকেনজি

বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধের কোন সময় নির্ধারণ করা হয়নি  

যুক্তরাষ্ট্র কখন তার সেনা প্রত্যাহার ও বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া বন্ধ করবে জানতে চাইলে জেনারেল কেনেথ ম্যাকেনজি নির্দিষ্ট কোন তারিখ জানাননি। 

ম্যাকেনজি বলেন, আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে যে, আমরা যতজন লোককে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তার বেশি লোক সরিয়ে নেওয়া হোক। কিন্তু উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।


'এই হামলা অব্যাহত থাকতে পারে'  

জেনারেল ম্যাকেনজি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের সঙ্গে সমন্বয় করছে এবং এই হামলার জন্য আমরা যা যা করতে পারি তার সবই করছি।

ম্যাকেনজি এই হামলার জন্য ইসলামিক স্টেট গ্রুপকে দায়ী করেছেন। 

তিনি বলেন, 'আইসিসের হুমকি সম্পূর্ণ বাস্তব, আমরা ধারণা করি এই হামলা অব্যাহত থাকবে।'


যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে 'মিশন' অব্যাহত রাখবে জানিয়েছে পেন্টাগন  

কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে বৃহস্পতিবারের দুই আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১২ জন মার্কিন সেনা সদস্যের মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল কেনেথ ম্যাকেনজি জোর দিয়ে বলেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র তার ‘মিশন’ চালিয়ে যাবে। 

পেন্টাগনের সংবাদ সম্মেলনে ম্যাকেনজি  সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের মিশন হল মার্কিন নাগরিক বা তৃতীয় দেশের নাগরিকদের, বিশেষ করে অভিবাসী ভিসাধারী, মার্কিন দূতাবাসের কর্মী এবং ঝুঁকিপূর্ণ আফগানদের সরিয়ে নেওয়া।

ম্যাকেনজি বলেন, প্রায় এক হাজার মার্কিন নাগরিক এখনো আফগানিস্তানে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।


পেন্টাগনের ব্রিফিং শুরু

দিনের ঘটনা নিয়ে ব্রিফিং শুরু করেছে পেন্টাগন। 

হামলায় আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে


১২ মার্কিন সেনা সদস্য নিহত 

কর্মকর্তারা মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেন, বিমানবন্দর হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১ জন মেরিন ও একজন নৌবাহিনীর চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। 

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির পর আফগানিস্তানে এই প্রথম মার্কিন সামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।


'বাচ্চাটা আমার কোলেই মারা গেল'

একজন আফগান দোভাষী যিনি আমেরিকান বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেন তিনি সিবিএস নিউজকে বলেন, আমি দেখেছি অনেক মানুষ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে ছিল। আমি সেখানে একটি বাচ্চাকে পড়ে থাকতে দেখি। তাকে যখন আমি হাসপাতালে নিয়ে যাই তখন সেই বাচ্চা আমার হাতের ওপরই মারা যায়। তার বয়স আনুমানিক পাঁচ বছর। 

সেই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, 'এটা হৃদয় বিদারক। এখন যা চলছে তা হৃদয় বিদারক, পুরো দেশটি ভেঙে পড়েছে।'


মার্কিন নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত 

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে বোমা হামলায় মার্কিন নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে। 

পেন্টাগনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কাবুলের বিমানবন্দরের বাইরে হামলায় বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছেন। 

মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, মার্কিন নৌবাহিনীর চার সদস্য নিহত হয়েছেন। আরও বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। 


বিস্ফোরণ এলাকা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল: তালেবান

কাবুল বিমানবন্দরের কাছে জোড়া হামলার সমালোচনা করেছে তালেবান। তারা বলেছে, বিস্ফোরণের এলাকাটি মার্কিন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। 

তালেবান নেতা যাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক টুইটবার্তায় বলেন, ইসলামিক এমিরেটস (তালেবান ঘোষিত আফগানিস্তান রাষ্ট্র) কাবুল বিমানবন্দরে বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্য করে বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

তালেবানের এ মুখপাত্র বলেন, এই বিস্ফোরণ যে স্থানে ঘটেছে সেটি মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল।

তালেবানের আরেক মুখপাত্র সুহাইল শাহীন টুইটারে এক বিবৃবিতে বলেছেন, তাঁরা নাগিরকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রতি কঠোর নজর রাখছেন।


হামলার পেছনে আইএস-খোরাসান

মার্কিন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়েছে আল জাজিরা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কাবুল বিমানবন্দরের কাছে হামলার পেছনে রয়েছে আইএসআইএস (আইএস) খোরাসান গ্রুপ।

আফগানিস্তান বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিয়মিত ব্রিফ্রিং করা হচ্ছে। কংগ্রেসকেও এ ব্যাপারে ব্রিফ করা হয়েছে। এই ব্রিফিং সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একটি সূত্র বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার হামলার পেছনে রয়েছে আইএসআইএস-খোরাসান গ্রুপ। মার্কিন কর্মকর্তাদের এটা দৃঢ় বিশ্বাস। 

একটি গোয়েন্দা সূত্রও জানিয়েছে, কাবুল হামলার বিষয়টি এখনো যুক্তরাষ্ট্র তদন্ত করছে। তবে বিমানবন্দরের কাছে হামলার পেছনে আইএসআইএস-খোরাসানের হাত থাকার সম্ভাবনাই বেশি।


নালায় ফেলা হচ্ছে মৃতদেহ

কাবুল বিমানবন্দরের কাছে জোড়া বিস্ফোরণের পর ভয়াবহ দৃশ্য সামনে আসছে। 

শুরু থেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মিলাদ বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ক্ষতবিক্ষত দেহ, বিক্ষিপ্ত মাংস এবং মৃত মানুষদের পাশের নালায় ফেলা হচ্ছে। 

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ দিগ্‌বিদিক ছুটতে থাকে। তালেবান যোদ্ধারা তখন বিমানবন্দরের গেটের সামনে জড়ো হওয়া মানুষদের ছত্রভঙ্গ করতে আকাশে ফাঁকাগুলি করতে থাকে। আমি এক আহত শিশুকে বুকে জড়িয়ে এক ব্যক্তিকে ছুটতে দেখেছি।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী এএফপিকে বলেন, তিন শিশুসন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে দেশ ছাড়ার জন্য তিনি কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমি আর বিমানবন্দরে কখনোই যাব না। আমেরিকা নিপাত যাক, তাদের উদ্ধার তৎপরতা, তাদের ভিসার আমি নিকুচি করি!

ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ম্যাকমাস্টার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে


কেবল তো শুরু: ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল ম্যাকমাস্টার বরাবরই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সমালোচনা করে আসছেন। আজ কাবুলে বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, কেবল তো শুরু!

জেনারেল ম্যাকমাস্টার আফগানিস্তানে জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ওই নরক থেকে বেরিয়ে আসাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার। এর ফল যাই হোক না কেন যুক্তরাষ্ট্র এটা চেয়েছে। আর কাবুল বিমানবন্দরে যা ঘটলো এটা আসলে আপনি সন্ত্রাসী সংগঠনের কাছে আত্মসমর্পণ করলে যা হওয়ার কথা তাই হয়েছে। 

তিনি বলেন, তাঁর সাবেক বস, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে গতবছর তালেবানের আলোচকেরা ‘খেলেছে’। ট্রাম্প ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাজি হন।


ঠিক যে জায়গাটিতে হামলা হয়েছে

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কাবুল বিমানবন্দরে অন্তত দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যখন তাদের নাগরিক এবং সহযোগী আফগানদের উদ্ধারে ব্যস্ত তখন এমন হামলার ঘটনা ঘটলো।

বিস্ফোরণে বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, হতাহতদের কয়েকজন মার্কিন নাগরিকও রয়েছেন।

সিএনএনের সৌজন্যে বিস্ফোরণস্থলের গ্রাফিকস:

map-kabul-airport


হামলার ধরন গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তার মতোই

বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সাংবাদিক ফাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, মার্কিন গোয়েন্দারা ঠিক যে ধরনের হামলার জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন কাবুলের হামলা হুবহু সেরকমই।

এটা ছিল একসঙ্গে বিস্ফোরক এবং গুলির ব্যবহার। সন্ত্রাসী হামলার ধ্রুপদী কৌশল এটি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানের শহরাঞ্চলে যে ধরনের হামলা হয়েছে এটিও তেমন। এ ধরনের হামলায় সাধারণত একটি আত্মঘাতী হামলার সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

ঠিক একই ধরনের হামলার আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিল গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।


সিচ্যুয়েশন রুমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন

আফগান পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক হালনাগাদ পেতে ও নির্দেশনা দিতে সিচ্যুয়েশন রুমে অবস্থান করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

প্রেসিডেন্টকে কাবুলের পরিস্থিতি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত ব্রিফ করা হয়েছে। 

জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়ে আফগানিস্তান বিষয়ক নিয়মিত ব্রিফিংয়ের জন্য সিচ্যুয়েশন রুমেই ছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এসময় তাঁর কাছে কাবুলে বিস্ফোরণের খবর আসে। প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর শীর্ষ সহচরেরা এখনো সেখানে রয়েছেন। তাঁরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। 

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় আজ সকাল সাড়ে ১১টায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেতের সঙ্গে বাইডেনের সাক্ষাৎ করার কথা ছিল। কাবুল পরিস্থিতির কারণে সাক্ষাতের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। 


কাবুল বিমানবন্দরের কাছে জোড়া বিস্ফোরণ

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে পরপর দুটি ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে প্রথম বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ব্যারন হোটেলে বা হোটেল গেটের সামনে আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে ব্রিটিশ পাসপোর্টধারীদের নথিপত্র যাচাই করা হচ্ছিল। আর বিমানবন্দরের অ্যাবে গেটের কাছে বিস্ফোরণস্থলে গত কয়েক দিন ধরে আফগান শরণার্থীরা ভিড় করছেন।

দুই বিস্ফোরণে বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক তালেবান কর্মকর্তার বরাত দিয়েছে বিবিসি জানিয়েছে, বিস্ফোরণে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। ওই কর্মকর্তা জানান, হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। একজন তালেবান রক্ষীও আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

তবে নিরপেক্ষ সূত্রে হতাহতদের তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পেন্টাগনের পক্ষ থেকে মার্কিন সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক হতাহতের কথা জানানো হলেও সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান জানাতে পারেননি তাঁরা। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষও তাদের নাগরিকদের হতাহতের আশঙ্কা করছে।

এর আগে কাবুল বিমানবন্দরে আইএসআইএস বা আইএস (দায়েশ) গ্রুপ হামলা চালাতে পারে জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছিল। মার্কিন কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এটি আত্মঘাতী হামলা। তবে কোনো গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচের ঘটনায় বদলে যেতে পারে অস্ট্রেলিয়ার অস্ত্র-আইন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: রয়টার্স
নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: রয়টার্স

দেশের সবচেয়ে বড় বন্দুক হামলার একদিন পর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) কড়া বন্দুক আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শনিবার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের একটি হানুক্কাহ অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।

পুলিশ অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ না করলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তাঁদের একজনের নাম সাজিদ আকরাম এবং অন্যজন নাভিদ আকরাম। সম্পর্কে তাঁরা পিতা-পুত্র।

বন্দুকধারীদের গাড়িতে জঙ্গি সংস্থা আইএস-এর দুটি পতাকা পাওয়া গেছে। ২৪ বছর বয়সী অভিযুক্ত নাভিদের বাবা সাজিদ তথা অপর অভিযুক্তের কাছে ২০১৫ সাল থেকে অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল এবং তাঁর কাছে ছয়টি নিবন্ধিত অস্ত্র ছিল। এসব অস্ত্র দিয়েই হামলাকারীরা প্রায় ১০–২০ মিনিট ধরে উৎসবে উপস্থিত মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে নিহত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুও রয়েছে এবং নিহতদের বয়স ১০ থেকে ৮৭ বছর পর্যন্ত।

রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার পর হাসপাতালে নেওয়া ৪০ জনের মধ্যে দুজন পুলিশও ছিলেন। এ ছাড়া ঘটনার সময় হামলাকারী নাভিদ গুরুতর আহত হলেও তাঁর বাবা সাজিদ পুলিশের পাল্টা গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন।

সোমবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেছেন, ‘গতকাল আমরা যা দেখেছি, তা ছিল ধর্মবিরোধী খাঁটি শয়তানদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’ তিনি ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সরকার বন্দুক নিয়ম কঠোর করবে এবং জাতীয় অস্ত্র নিবন্ধন চালু করবে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বন্ডাই বিচে প্রায় ১ হাজার মানুষ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হতভম্ব হয়ে দিগ্‌বিদিক পালিয়ে যান। তবে আহমেদ আল-আহমেদ নামে এক বীর নাগরিক খালি হাতে এক হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে বহু মানুষের জীবন বাঁচান। এ সময় আল-আহমেদ নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

বিশ্ব নেতারা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এটি অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে গুরুতর বন্দুক হামলার ঘটনা।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় দেড় লাখ ইহুদি বসবাস করেন। তাঁদের এক-তৃতীয়াংশই বাস করেন সিডনির পূর্বাঞ্চলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মুখে ধনকুবের থেকে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের মুখ জিমি লাই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০১৯ সালে হংকংয়ের রাজপথে সংঘটিত গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে ধনকুবের জিমি লাই। ছবি: বিবিসি
২০১৯ সালে হংকংয়ের রাজপথে সংঘটিত গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে ধনকুবের জিমি লাই। ছবি: বিবিসি

হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের শীর্ষ মুখ ও প্রভাবশালী মিডিয়া উদ্যোক্তা জিমি লাইকে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের (এনএসএল) আওতায় বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন দেশটির আদালত। ৭৮ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ নাগরিক ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে কারাবন্দী রয়েছেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করলেও আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, তিনি হংকং ও চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিদেশি সরকারগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে তাঁর সাজা ঘোষণা হতে পারে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণার সময় বিচারক অ্যাস্থার তোহ বলেন, চীনের পিপলস রিপাবলিকের প্রতি জিমি লাইয়ের ঘৃণা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, লাই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে হংকংয়ের অজুহাতে চীনের সরকার উৎখাতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আদালত আরও রায় দেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া দৈনিক ‘অ্যাপল ডেইলি’ পত্রিকার মাধ্যমে লাই রাষ্ট্রদ্রোহমূলক লেখা প্রকাশ করেছিলেন, যা ঔপনিবেশিক আমলের একটি আইনের লঙ্ঘন।

বেইজিং শাসিত হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন—লাইয়ের কর্মকাণ্ড দেশ ও হংকংবাসীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন করেছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই রায়কে ‘নিষ্ঠুর বিচারিক প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে বলছে, বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনটি কার্যত ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৯ সালে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের পর বেইজিং কোনো আইনসভা পরামর্শ ছাড়াই এই আইন প্রণয়ন করেছিল, যা কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, রায়ের সময় জিমি লাই শান্ত ছিলেন এবং আদালত ছাড়ার সময় পরিবারকে বিদায় জানান। তাঁর স্ত্রী টেরেসা, এক ছেলে ও ক্যাথলিক কার্ডিনাল জোসেফ জেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। লাইয়ের আইনজীবী জানান, দীর্ঘ রায় পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আপিল করা হবে কি না, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

এদিকে লাইয়ের ছেলে সেবাস্তিয়ান লাই যুক্তরাজ্য সরকারকে তাঁর বাবার মুক্তির জন্য আরও সক্রিয় হতে আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য এই মামলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিপীড়ন’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে লাইয়ের মুক্তি দাবি করে এলেও চীন ও হংকং সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

এক সময়ের সফল ব্যবসায়ী জিমি লাই ১৯৮৯ সালের চীনের তিয়েনআনমেন গণহত্যার পর গণতন্ত্র আন্দোলনে সক্রিয় হন। অনেক হংকংবাসীর চোখে তিনি এখনো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রতীক। তবে এই রায় হংকংয়ের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পেহেলগাম হামলায় এনআইএর চার্জশিট, ৫ ব্যক্তির সঙ্গে এলটিই-টিআরএফও অভিযুক্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক। ছবি: পিটিআই
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক। ছবি: পিটিআই

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রায় আট মাস পর চার্জশিট দিয়েছে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। চার্জশিটে পাঁচ সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবাসহ (এলইটি) দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের দুই সশস্ত্র সংগঠনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক।

এনআইএর ১ হাজার ৫৯৭ পৃষ্ঠার চার্জশিটে হামলার পেছনে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র, অভিযুক্তদের ভূমিকা এবং মামলার পক্ষে থাকা প্রমাণের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পেহেলগাম হামলার পরিকল্পনা, সহায়তা ও বাস্তবায়নে এলইটি-টিআরএফ সরাসরি জড়িত ছিল। হামলার মূল হ্যান্ডলার হিসেবে এলইটির শীর্ষ কমান্ডার সাজিদ জাটের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

চার্জশিটে তিনজনের নাম রয়েছে, যাঁদের পাকিস্তানের সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সুলেমান শাহ, হাবিব তাহির ওরফে জিবরান ও হামজা আফগানির। চলতি বছরের জুলাইয়ে শ্রীনগরের কাছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁরা নিহত হন।

এলইটি ও টিআরএফের পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ২০২৩-এর (বিএনএস) অস্ত্র আইন (১৯৫৯) ও বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের (১৯৬৭) বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এনআইএ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার’ ধারাও যুক্ত করেছে।

এ ছাড়া আরও দুজন এই মামলায় চার্জশিটভুক্ত হয়েছেন। পারভেজ আহমদ ও বশির আহমদকে গত ২২ জুন এনআইএ গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা তিন সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

পারভেজ আহমদ ও বশির আহমদ জিজ্ঞাসাবাদে পেহেলগাম হামলায় জড়িত তিন সন্ত্রাসীর পরিচয় প্রকাশ করেন এবং নিশ্চিত করেন যে, তাঁরা পাকিস্তানের নাগরিক এবং লস্কর-ই-তাইয়েবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কে এই সাজিদ জাট

সাজিদ জাট একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত। তাঁর পরিচিত নামগুলোর মধ্যে রয়েছে সাইফুল্লাহ, নুমি, নুমান, ল্যাংড়া, আলি সাজিদ, উসমান হাবিব ও শানি। ২০২২ সালের অক্টোবরে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের (ইউএপিএ) আওতায় তাঁকে ‘ব্যক্তিগত সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

প্রসঙ্গত, ইন্ডিভিজুয়াল টেররিস্ট (Individual Terrorist) বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি কোনো বড় সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থেকেও একা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন। তাঁরা লোন উলফ নামেও পরিচিত। কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় সহজে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না।

ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর ধারণা, সাজিদ জাট পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত লস্করের সদর দপ্তর থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি শুধু টিআরএফের অপারেশনাল প্রধানই নয়, কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসী নিয়োগ, অর্থায়ন ও অনুপ্রবেশের দায়িত্বেও রয়েছেন।

সাজিদ জাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে—২০২৩ সালের ধাংরি গণহত্যা (যেখানে তিনি ছিলেন মূল ষড়যন্ত্রকারী), ২০২৪ সালের মে মাসে পুঞ্চে বিমানবাহিনীর কনভয়ে হামলা এবং ২০২৪ সালের জুনে রিয়াসি বাস হামলা।

এ ছাড়া হাইব্রিড সন্ত্রাসীদের লজিস্টিক ও অপারেশনাল সহায়তা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর মতে, কাশ্মীরে সক্রিয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সবচেয়ে ভয়ংকর মুখ হলেন এই সাজিদ জাট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হিমালয়ে হারিয়ে যাওয়া পারমাণবিক যন্ত্র ৬০ বছর পরও গঙ্গার জন্য ঝুঁকি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্রটি বসানো হয়েছিল। ছবি: এএনআই
ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্রটি বসানো হয়েছিল। ছবি: এএনআই

প্রায় ৬০ বছর আগের ঘটনা, তখন স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। চীনকে টেক্কা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা মিলে নামে এক গোপন অভিযানে। কিন্তু অভিযানে নেমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে হারিয়ে যায় নজরদারির কাজে ব্যবহৃত পারমাণবিক শক্তিচালিত একটি যন্ত্র, যেটি আজও হিমালয় পর্বতের বরফের নিচে চাপা পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের নন্দা দেবী পর্বতের কাছে হারিয়ে যাওয়া ওই পারমাণবিক শক্তিচালিত যন্ত্রটি গঙ্গা নদীর জন্য নানান ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ঘটনার সূত্রপাত ১৯৬৫ সালে, চীনের সদ্য গড়ে ওঠা পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) যৌথভাবে এক গোপন অভিযানে নামে। লক্ষ্য ছিল—ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্র বসানো।

ওই যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল একটি রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর (আরটিজি)। এটি কয়েক কেজি প্লুটোনিয়াম দিয়ে চালিত হতো। এর মাধ্যমে স্থাপিত সেন্সরগুলো দিয়ে সীমান্তের ওপারে চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক পরীক্ষার তথ্য সংগ্রহ করার কথা ছিল। কিন্তু ভয়াবহ তুষারঝড়ের কবলে পড়ে অভিযানে অংশ নেওয়া দল যন্ত্রটি পাহাড়ে রেখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরের মৌসুমে ফিরে গেলে দেখা যায়—আরটিজি ও এর প্লুটোনিয়াম-কোর আর সেখানে নেই। ধারণা করা হয়, তুষারধসের কারণে সেটি ভেসে গেছে অথবা গভীর হিমবাহের নিচে চাপা পড়েছে।

আরটিজি কী

আরটিজি বা রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর হলো এমন একটি যন্ত্র, যা তেজস্ক্রিয় পদার্থের তাপ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ওই পদার্থ ধীরে ধীরে ক্ষয় হওয়ার সময় তাপ তৈরি হয় আর সেই তাপ বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয়।

এই প্রক্রিয়ায় কোনো চলমান যন্ত্রাংশ থাকে না। তাই আরটিজি দীর্ঘদিন কাজ করতে পারে। সাধারণত মহাকাশ অভিযান বা এমন দুর্গম এলাকায় এগুলো ব্যবহার করা হয়।

আরটিজি কোনো পারমাণবিক বোমা নয় এবং এটি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে না। তবে যন্ত্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণজনিত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

হারানো যন্ত্রটি এখন কোথায়

পরবর্তী কয়েক দশকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার ওই যন্ত্রের সন্ধানে অভিযান চালালেও সফল হয়নি। দুই দেশের কেউই নিশ্চিত করে বলেনি, যন্ত্রটির পরিণতি কী হয়েছে।

কিছু কর্মকর্তা ও লেখকের মতে, ভারতীয় কোনো দল নীরবে যন্ত্রটি উদ্ধার করে থাকতে পারে। আবার অনেকের ধারণা, এটি এখনো নন্দা দেবী এলাকার অস্থির বরফ ও পাথরের স্তরের নিচে আটকে আছে।

১৯৭৮ সালে ভারতের পরমাণু শক্তি কমিশনের এক জরিপে স্থানীয় নদীগুলোতে কোনো প্লুটোনিয়াম দূষণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে জরিপটি যন্ত্রটির অবস্থানও নির্দিষ্ট করতে পারেনি। ফলে বিষয়টি আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

গঙ্গায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ঝুঁকি

নন্দা দেবীর হিমবাহ থেকে উৎপন্ন রিষিগঙ্গা ও ধৌলিগঙ্গা নদী মিলিত হয়ে অলকানন্দায় প্রবাহিত হয়। পরে অলকানন্দা ও ভাগীরথী একত্রে গঙ্গা নদীর জন্ম দেয়। এই নদীই নিচের দিকে কয়েক শ কোটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটরটি অক্ষত অবস্থায় বরফের গভীরে চাপা পড়ে থাকে, তাহলে তাৎক্ষণিক ঝুঁকি তুলনামূলক কম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এর আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ গলে বরফের পানির সঙ্গে মিশে নদীতে প্রবেশ করতে পারে।

এই সম্ভাবনাকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—সম্ভাবনা কম, কিন্তু প্রভাব ভয়াবহ। উত্তরাখন্ডে প্রতিবছর বন্যা, তুষারধসের ঘটনা ঘটলে এই আশঙ্কা নতুন করে সামনে আসে।

নতুন করে উদ্বেগ কেন

হিমালয়ে হিমবাহ গলার গতি বেড়ে যাওয়া, ২০২১ সালের চামোলি বন্যার মতো দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি এবং পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকায় পুরোনো সামরিক ও পারমাণবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বাড়তি নজরদারির প্রেক্ষাপটে নন্দা দেবীর এই হারানো যন্ত্রটি আবার আলোচনায় এসেছে।

এখন পর্যন্ত কোনো তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা—তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও হিমবাহ সরে যাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে আরটিজির অবশিষ্টাংশ উন্মুক্ত বা নড়াচড়া করতে পারে।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে ও নিউইয়র্ক টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত