Ajker Patrika

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিপ্লবে অর্থায়ন করছে মোবাইল গেম 

আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১৩: ০৭
মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিপ্লবে অর্থায়ন করছে মোবাইল গেম 

মিয়ানমারে কয়েক বছর ধরে চলছে জান্তা শাসন। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জান্তা যখন যা ইচ্ছে তাই করছে। সাধারণ নাগরিকেরা সব সময় উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে প্রায় পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধ চলছে। যাকে যখন ইচ্ছে আটক করছে, চালাচ্ছে নির্যাতন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের সৈন্যরা কো টুটের (ছদ্দ নাম) বন্ধু এবং তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছিল। কোনো কারণ ছাড়াই তখন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন টুট। তিনি সিদ্ধান্ত নেন তাঁর আইটি দক্ষতা ব্যবহার করে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাবে। 

কো টুট তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি অ্যাপ-ভিত্তিক মোবাইল গেম তৈরি করেন। যা দেশের ‘বাস্তব ঘটনার’ ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এই গেম জান্তাকে চিন্তিত করেছে এবং জান্তা বিরোধী প্রতিরোধের জন্য তহবিল সংগ্রহ হচ্ছে।

 
গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্য আটক বন্ধু দম্পতির বিষয়ে কো টুট বলেন, ‘তাঁরা তাদের জীবনে কখনো একটি অপরাধমূলক কাজ করেনি।’ 

কো টুট জানতেন না তাদের কি হয়েছে। বিবিসি সম্প্রতি জানিয়েছে অন্তঃসত্ত্বা নারীটিকে একদিনের মধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তবে পুরুষটিকে প্রায় দেড় বছর ধরে রাখা হয়েছিল।

এ ছাড়া, তাঁর বন্ধু দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর কো টুট জানতে পারেন সামরিক বাহিনী গণতন্ত্রপন্থী এক কর্মীর স্ত্রী এবং শিশুকন্যাকে আটক করেছে। তবে এটা শনাক্ত করা যায়নি। 
 
কো টুট বলেন, ‘ভাবুন আপনি একটি ছোট শিশু এবং আপনি একটি নোংরা, চাপযুক্ত কারাগারের মধ্যে বেড়ে উঠছেন এবং আপনি জানেন না কী ঘটছে। এই ঘটনা আমাকে উত্তেজিত করেছিল। 

এসব দেখার পর তিনি মনে করেন, একজন আইটি পেশাদার হিসাবে ‘নিষ্ঠুর এবং বিপজ্জনক’ সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনের অংশ হতে হবে। তাই তিনি গেম তৈরির কাজ শুরু করেন। 

কো টুট একটি এনক্রিপ্ট করা অ্যাপে টেক্সট বার্তার মাধ্যমে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁর অবস্থান প্রকাশ করবেন না। তাই তাঁর নিরাপত্তার জন্য ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে। 
 
পলিটিক্যাল প্রিজনার্স মনিটরিং অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের তথ্যানুসারে, এখন পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর হাতে ৪ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। 

এদিকে সৈন্যদের হতাহতের পরিমাপ করা কঠিন। সামরিক বাহিনী ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে কিন্তু পরিসংখ্যান দেয়নি। দেশটির নির্বাসিত জাতীয় ঐক্য সরকার বলছে, প্রতিরোধে ২০ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে। তবে, বিবিসি এই সংখ্যা যাচাই করেনি। 

আইটি পেশাদার কো টুটের লক্ষ্য ছিল পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) নামে পরিচিত সামরিক বিরোধী বাহিনীর জন্য অস্ত্র এবং মানবিক সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহের পাশাপাশি দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। 
 
কো টুট বলেন, ‘আমি অনুভব করেছি যে আমাদের আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং সচেতনতা খুব সীমিত ছিল। মিয়ানমারের সংকটের কভারেজকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের সঙ্গে প্রতিকূলভাবে তুলনা করে।’ 

‘প্রকৃত যুদ্ধে প্রকৃত মানুষ’
তাঁর গেমটি মূলত ২০২২ সালের প্রথম দিকে পিডিএফ গেম হিসাবে চালু হয়েছিল। 

এটি বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যায়, কিন্তু খেলোয়াড়েরা অর্থ সংগ্রহের জন্য ইন-গেম বিজ্ঞাপন দেখে। কো টুট অনুমান করে বলেছেন, এখন পর্যন্ত মোট ৫০৪,০০০ ডলার অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। 

ডাক্তার, মুসলমান এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্যসহ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত প্রকৃত লোকদের ওপর ভিত্তি করে চরিত্রগুলি তৈরি করেছেন।তিনি অনুমান করেন যে, ‘এখন প্রতি মাসে ৭০ হাজার ডলার থেকে ৮০ হাজার ডলার উপার্জন করেন এবং দাবি করেন যে সংখ্যাটি প্রতি মাসে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ 

খেলোয়াড়েরা সামরিক সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত পিডিএফ সৈন্যদের ভূমিকা নেয় এবং মিয়ানমারে বাস্তবের মতো মিশনের মাধ্যমে কাজ করে। 

কো টুট বলেছিলেন, তিনি ডাক্তার, মুসলমান এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্যসহ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত প্রকৃত লোকদের ওপর ভিত্তি করে চরিত্রগুলি তৈরি করেছেন। 

এ বিষয়ে কো টুট বলেছিলেন যে তাদের নথিভুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ কারণ ‘তারা সত্যিকারের যুদ্ধে লড়াই করছে’। 

কো টুট বলেছেন, গেমটি গুগল এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর উভয়েই পাওয়া যায়, যদিও সংবেদনশীল ইভেন্টগুলোর আশপাশে কোম্পানিগুলোর নীতির কারণে এটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। 

গুগল প্লেতে এর নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে ‘ওয়ার অফ হিরোস-দ্য পিডিএফ গেম’। গুগল বলেছে যে এটি কোনো সংবেদনশীল অ্যাপকে অনুমতি দেয় না, তবে সেই বিষয়বস্তু সাধারণত অনুমোদিত হয় যদি এটি ইভেন্ট সম্পর্কে ‘ব্যবহারকারীদের সতর্ক বা সচেতনতা বাড়াতে’ চায়। 

প্ল্যাটফর্ম থেকে সরানোর আগে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে নামটিকে ‘ওয়ার অফ হিরোস’-এ পরিবর্তন করতে হয়েছিল। এটি একটি ‘বিশাল আঘাত’ বলে জানিয়েছিলেন কো টুট। 

অন্যদিকে, অ্যাপল বলেছে যে অ্যাপটি তার নির্দেশিকা লঙ্ঘন করেছে। কো টুট মূল আর্টওয়ার্কের পাশাপাশি কিছু সামরিক মিশন অপসারণসহ সংশোধন করার পরে এটি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। 

কো টুট বলেছে, ‘এটি অবশ্যই ভালো খবর এবং আমরা এখন আরও আয় করার আশা করি।’ 

গেমটি মিয়ানমারের জান্তার শাসককে বিচলিত করেছে। তারা গত এপ্রিল মাসে জনসাধারণের জন্য একটি নোটিশ জারি করে রাষ্ট্র-চালিত মিডিয়াতে প্রচার করে। তারা বলেছে, যারা পিডিএফ গেম খেলবে তারা আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে পারে। 

এতে বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসী সংগঠন নির্বাসিত জাতীয় ঐক্য সরকার পিডিএফের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য গেমটি তৈরি করেছে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে “অবিশ্বাসের বীজ বপন করতে” এবং এইভাবে ‘তাদের সেনাবাহিনী বিরোধী বিপ্লবী বৃদ্ধি করেছে।’ 

কো টুট বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীর হুমকিতে অস্বস্তি বোধ করছি। তবে তারা যাই বলুক না কেন আমার কিছু যায় আসে না।’ 

সামরিক বাহিনীকে পরাজিত করার অনলাইন প্রচেষ্টা সম্পর্কে কো টুট বলেছিলেন, তারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার এটি বন্ধ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমরা চালিয়ে যাব—ডিজিটাল আন্দোলন বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। 

কো টুট বলেছেন, গেমটি প্রায় এক মিলিয়ন বার ডাউনলোড করা হয়েছে। (গুগল প্লে বলে যে এটি ৫ লাখ বারের বেশি ডাউনলোড করা হয়েছে, যদিও অ্যাপল ডাউনলোডের সংখ্যা সম্পর্কে তথ্য দেয় না।) তবে তিনি মনে করেন যে এই পরিমাণ তাঁর অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে কারণ। 

এই গেমটিতে এমনভাবে যুদ্ধ হয় যেন বাস্তবের মতোকো টুট জানিয়েছেন, এই তহবিলগুলো স্থানীয় পিডিএফ-এ পাঠানো হয়, এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর জন্য খাদ্য ও অস্ত্রের পাশাপাশি মানবিক সহায়তার জন্য ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত শিশুদের জন্য তহবিল এবং সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত আহতদের জন্য। 

কো টুট বলেছেন, ‘আমরা শুধু প্রতিরক্ষা গ্রুপগুলোতে তহবিল পাঠাই, কিন্তু কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করব তা বলি না।’ 

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়া হিসাবে গঠিত পিডিএফ জাতিগত লাইনে গঠিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, যেগুলি কয়েক দশক ধরে সীমান্ত এলাকায় কাজ করছে। তারা অনেকের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক শক্তিশালী শক্তি হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে এবং তাদের কাছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। 

কো টুট বলেছিলেন, তিনি বেশ কয়েকবার এটা বাদ দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে এবং তিনি সামরিক বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন চালিয়ে যেতে চান। 

গেমটির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কো টুট। তিনি মনে করেন এই গেম থেকে মাসে ১ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব। 

সবশেষ কো টুট বলেন, ‘আমি আশা করি এই অর্থ মিয়ানমারের জনগণকে সাহায্য করবে, যাদের এটার খুবই প্রয়োজন।’

বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন গোলাম ওয়াদুদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসরায়েল কেন প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল কেন সোমালিয়া থেকে স্বাধীন হতে চাওয়া সোমালিল্যান্ডকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিল—এই প্রশ্ন ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের স্বঘোষিত স্বাধীন রাষ্ট্র সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল শুধু একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্তই নেয়নি, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও লোহিত সাগর ঘিরে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক—এই তিনটি প্রধান কারণ। সোমালিল্যান্ডের অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। এটি এডেন উপসাগরের তীরে অবস্থিত এবং ইয়েমেনের খুব কাছেই, যেখানে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সক্রিয়। চলতি বছরে হুতি ও ইসরায়েলের মধ্যে একাধিকবার হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালায়। জবাবে ইয়েমেনের সানা ও হোদেইদায় হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা চালায় ইসরায়েল।

এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের গবেষক ডেভিড মাকোভস্কি প্রশ্ন তুলেছেন—সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে কি ইসরায়েল সেখানে সামরিক সুবিধা বা গোয়েন্দা উপস্থিতির পথ খুলেছে? বিশেষ করে হুতি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহি গোপনে একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন। গত অক্টোবরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মোসাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে সোমালিয়া ও আফ্রিকান ইউনিয়ন। মিসর ও ফিলিস্তিনসহ কয়েকটি আরব দেশও এর সমালোচনা করেছে। অতীতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, যদিও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা এই ধরনের কোনো যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি ইসরায়েলের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সোমালিল্যান্ডের বন্দরনগরী বেরবেরা ইসরায়েলকে লোহিত সাগরে প্রবেশের সুযোগ দিতে পারে। এমন হলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাব আল-মানদেব প্রণালির ওপর নজরদারি চালাতে পারবে ইসরায়েল। তবে সব মিলিয়ে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে ইসরায়েল ইতিহাস তৈরি করলেও এর পূর্ণ প্রভাব ও ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের সেরা সিইও কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট

২০২৫ সাল ছিল বিশ্ব করপোরেট নেতৃত্বের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার বছর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে শুরু হয় নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ ও অনিশ্চিত নীতিনির্ধারণ। একই সঙ্গে চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াই আরও তীব্র হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বিপুল প্রত্যাশা থাকলেও, সেটিকে লাভজনক ব্যবসায় রূপ দেওয়ার কাজ অনেক সিইওর জন্য হতাশাজনকই থেকে যায়।

তবে এই অস্থিরতার মধ্যেও কিছু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্যতিক্রমী সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এবারও (২০২৫ সাল) সেরা সিইও নির্বাচন করেছে। এ ক্ষেত্রে এসঅ্যান্ডপি ১২০০ সূচকের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের খাতভিত্তিক গড়ের তুলনায় অতিরিক্ত শেয়ারহোল্ডার রিটার্নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর তিন বছরের কম সময় দায়িত্বে থাকা সিইওদের বাদ দিয়ে শীর্ষ ১০ জনকে প্রাথমিক তালিকায় রাখা হয়।

এই তালিকায় ছিলেন—জার্মান অস্ত্র নির্মাতা রাইনমেটালের আরমিন পাপারগার, স্বর্ণখনি জায়ান্ট নিউমন্টের টম পামার, ফুজিকুরার ওকাদা নাওকি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির ডেভিড জাসলাভ, হানহা অ্যারোস্পেসের সন জে-ইল, মাইক্রনের সঞ্জয় মেহরোত্রা, কিনরস গোল্ডের জে পল রোলিনসন, রবিনহুডের ভ্লাদিমির টেনেভ, এসকে হাইনিক্সের কাক নো-জং এবং সিগেট টেকনোলজির ডেভ মসলে।

তবে অতীতের দুর্বল পারফরম্যান্স, করপোরেট গভর্ন্যান্স সমস্যা কিংবা নিছক সৌভাগ্যের কারণে অনেকেই চূড়ান্ত বিবেচনা থেকে বাদ পড়েছেন। স্বর্ণের দাম প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় খনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়লেও, সেটিকে সিইওদের কৃতিত্ব হিসেবে ধরা হয়নি। মেমোরি চিপ খাতে এআই বুমের সুফল পেলেও, সেখানে এসকে হাইনিক্সের গবেষণা ও উন্নয়নে ধারাবাহিক বিনিয়োগ আলাদা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সবশেষে ২০২৫ সালের সেরা সিইও হিসেবে রাইনমেটালের আরমিন পাপারগারকেই বেছে নিয়েছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশসহ ১৫৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাইনমেটাল বড় বড় চুক্তি জয় করেছে এবং নৌযান নির্মাণ খাতেও সম্প্রসারণে নেমেছে। ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা পাপারগার ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাবনা অনুধাবন করেছিলেন। দূরদর্শিতা, সাহস ও দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই ২০২৫ সালের সেরা সিইওর স্বীকৃতি তাঁর হাতেই উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক—কী আছে সর্বশেষ ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবকে সামনে রেখে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এই খসড়া প্রস্তাবকে তিনি ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার একটি সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে দেখছেন।

এর আগে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফার একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চললেও সেটিকে রাশিয়ার দাবির প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল মনে করা হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর প্রস্তাবটি সংশোধন করে ২০ দফায় নামিয়ে আনা হয়। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, অধিকাংশ বিষয়ে পক্ষগুলোর অবস্থান অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। তবে এখনো দুটি ইস্যুতে ঐকমত্য হয়নি—ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ও পরিচালনা।

প্রস্তাবনার শুরুতেই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তির প্রস্তাব রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখতে সীমান্তবর্তী সংঘর্ষরেখা নজরদারির জন্য মহাকাশভিত্তিক মানববিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে।

এই কাঠামো অনুযায়ী, ইউক্রেন তার সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান শক্তি—প্রায় ৮ লাখ সেনা—অক্ষুণ্ন রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর আদলে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। অপরদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপের বিরুদ্ধে আগ্রাসন না করার নীতি নিজ দেশের আইনে এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে হবে রাশিয়াকে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউক্রেনের জন্য রয়েছে বড় পরিসরের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একাধিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার লক্ষ্য প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ। ইউক্রেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাবে এবং অস্থায়ীভাবে ইউরোপীয় বাজারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে।

সবচেয়ে জটিল ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভূখণ্ড প্রশ্ন। রাশিয়া দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার চায়, অন্যদিকে ইউক্রেন বর্তমান যুদ্ধরেখায় সংঘর্ষ বন্ধের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল ও মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছে।

যুদ্ধবন্দীর মতো মানবিক বিষয়ে ‘সবার বিনিময়ে সবার মুক্তি’, আটক বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের ফেরত এবং যুদ্ধাহতদের সহায়তার কথা রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে ইউক্রেন।

এই শান্তিচুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে এবং এর বাস্তবায়ন তদারক করবে একটি ‘পিস কাউন্সিল’, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সব পক্ষ একমত হলে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে—এমনটাই বলা হয়েছে এই ২০ দফা প্রস্তাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪০ শতাংশ জার্মান মনে করেন মার্জের সরকার টিকবে না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি

জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে দেশটির নাগরিকদের একটি বড় অংশের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ জার্মান নাগরিক মনে করেন, এই সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙে যেতে পারে।

২০২৫ সালের মে মাসে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ফ্রিডরিখ মার্জ। তবে বছর শেষ হতে না হতেই তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে জনপ্রিয় জার্মান সংবাদমাধ্যম ওয়েল্ট অ্যাম সোনটাগ (Welt am Sonntag)।

জনমত জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ইউগভ’ জার্মান সরকারকে নিয়ে জরিপটি করে। ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ হাজার ১০ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

ইউগভের তথ্যমতে, ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন—রক্ষণশীল খ্রিষ্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) ও তার সহযোগী দল খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং মধ্য-বাম সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) সমন্বয়ে গঠিত এই জোট সরকারের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন (২০২৯) পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা ‘খুবই কম’।

অন্য দিকে ৫৩ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, মার্জ সরকার তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে। অন্য ৯ শতাংশ কোনো নিশ্চিত মতামত দেয়নি।

জরিপে আরও দেখা গেছে, সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলোতে সরকারের প্রতি অনাস্থা সবচেয়ে বেশি (৪২ শতাংশ), যেখানে পশ্চিম জার্মানিতে এই হার ৩৬ শতাংশ।

জরিপ সংস্থা ‘ইনসা’র অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, চ্যান্সেলর হিসেবে ফ্রিডরিখ মার্জের কাজে সন্তুষ্ট মাত্র ২২ শতাংশ জার্মান। এই ফলাফল মূলত জোটের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে নেতৃত্বের অভাব নিয়ে জনগণের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগেরই প্রতিফলন।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ফ্রিডরিখ মার্জের সিডিইউ/সিএসইউ জোট ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়। অন্য দিকে উগ্র ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) রেকর্ড ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে। আর ওলাফ শোলৎজের দল এসডিপি মাত্র ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পায়, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

তবে এসপিডি বড় ধরনের হারের মুখ দেখলেও সিডিইউ/সিএসইউ জোটের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করে, যার ফলে সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের দল পুনরায় মন্ত্রিসভায় ফেরার সুযোগ পায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত