Ajker Patrika

বিশ্বের সেরা ১০ বিমানবন্দরের ৬টিই এশিয়ার, বাংলাদেশের অবস্থান কত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চাঙ্গি বিমানবন্দরের কৃত্রিম ঝরনা। ছবি: এএফপি
চাঙ্গি বিমানবন্দরের কৃত্রিম ঝরনা। ছবি: এএফপি

ভ্রমণকারীদের ভোটে নির্বাচিত বিশ্বের সেরা ১০০টি বিমানবন্দরের তালিকায় এশিয়ার আধিপত্য দেখা গেছে। সেরা ১০টি বিমানবন্দরের মধ্যে ছয়টিই এশিয়ার। তবে এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দুটি বিমানবন্দর স্থান পেলেও বাংলাদেশের কোনো বিমানবন্দর জায়গা করে নিতে পারেনি।

সম্প্রতি বিমান পরিবহন রেটিং সংস্থা স্কাইট্র্যাক্স এই তালিকা প্রকাশ করেছে। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর টানা ১৩ বারের মতো বিশ্বের সেরা বিমানবন্দরের খেতাব অর্জন করেছে।

চাঙ্গি বিমানবন্দর শুধু একটি বিমানবন্দর নয়, এটি নিজেই একটি গন্তব্য। এখানে যাত্রীদের ফ্লাইটের ৪৮ ঘণ্টা আগে লাগেজ জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, যাতে তাঁরা বিমানবন্দরের সময়টিকেও ভ্রমণের অংশ হিসেবে উপভোগ করতে পারেন। এই বিমানবন্দরের ভেতরে রয়েছে বিশাল ১০ তলা জুয়েল শপিং মল। ২০২৪ সালে এখানে ৮ কোটি মানুষের আগমন ঘটেছিল। এ ছাড়া এখানে রয়েছে একাধিক ইনডোর গার্ডেন (যার মধ্যে একটি প্রজাপতি কেন্দ্রও রয়েছে) ও ৪০ মিটার উঁচু রেইন ভর্টেক্স, যা বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম ঝরনা। স্পা, হোটেল, আর্ট প্রদর্শনী, একটি জাদুঘর, একটি সিনেমা হল ছাড়াও এখানে রয়েছে একটি ডাইনোসর থিম পার্ক।

স্কাইট্র্যাক্স এই বিমানবন্দরকে একটি গ্যাস্ট্রোনমিক ওয়ান্ডারল্যান্ড হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে। ৯ এপ্রিল মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড এয়ারপোর্ট অ্যাওয়ার্ডসে এটি বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর ডাইনিং, বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর ওয়াশরুম ও এশিয়ার সেরা বিমানবন্দরের পুরস্কারও জিতেছে।

সিএনএন বিজনেসের গত মাসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাঙ্গি বিমানবন্দর আগামী ছয় বছরে পরিষেবা ও সুযোগ-সুবিধা উন্নত করার জন্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরের বর্তমান চারটি টার্মিনালের সঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে পঞ্চম টার্মিনাল চালু করার কাজ চলছে।

স্কাইট্র্যাক্সের বিশ্বব্যাপী ৫৬৫টি বিমানবন্দরের গ্রাহকদের ওপর করা জরিপে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা বিমানবন্দর নির্বাচিত হয়েছে কাতারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। স্থাপত্যশৈলী ও শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত এই বিমানবন্দর বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত। এটি সেরা বিমানবন্দর শপিং ও মধ্যপ্রাচ্যের সেরা বিমানবন্দরের পুরস্কারও লাভ করেছে।

তালিকায় তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ স্থান পর্যন্ত দখল করেছে এশিয়ার বিমানবন্দরগুলো। তৃতীয় স্থানে রয়েছে টোকিওর হানেদা (বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন বিমানবন্দর হিসেবে নির্বাচিত), এরপর যথাক্রমে সিউলের ইনচেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর স্টাফ হিসেবে পুরস্কৃত), নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (টোকিওতে অবস্থিত) ও হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

কাতারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ছবি: এএফপি
কাতারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ছবি: এএফপি

শীর্ষ ২০টি বিমানবন্দরের মধ্যে নয়টি ইউরোপের। সপ্তম স্থানে থাকা প্যারিসের চার্লস ডি গল বিমানবন্দর টানা তৃতীয়বারের মতো ইউরোপের সেরা বিমানবন্দরের খেতাব জিতেছে। ক্যাথলিক চার্চের জুবিলি উদ্‌যাপন উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করা রোমের ফিউমিচিনো বিমানবন্দর অষ্টম স্থানে রয়েছে। মিউনিখ, জুরিখ ও হেলসিঙ্কি-ভান্তা বিমানবন্দর যথাক্রমে নবম, দশম ও দ্বাদশ স্থানে রয়েছে। বিস্তৃত ইস্তাম্বুল শহরের ইউরোপীয় অংশে অবস্থিত ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর ১৪তম স্থানে রয়েছে। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে পরিবারবান্ধব বিমানবন্দর হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছে।

ভিয়েনা (১৫তম), কোপেনহেগেন (১৮তম) ও আমস্টারডাম শিফল (১৯তম) তালিকায় স্থান পেয়েছে। তবে ইউরোপের ব্যস্ততম বিমানবন্দর লন্ডন হিথরো কোনো পুরস্কার পায়নি।

টোকিওর হানেদা বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন বিমানবন্দর। ছবি: এএফপি
টোকিওর হানেদা বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন বিমানবন্দর। ছবি: এএফপি

আমেরিকা মহাদেশ থেকে একমাত্র ভ্যাঙ্কুভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (১৩তম) এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। কেপ টাউন বিমানবন্দর শীর্ষ ২০-এ না থাকলেও আফ্রিকা মহাদেশের সেরা বিমানবন্দর ও আফ্রিকার সেরা বিমানবন্দর স্টাফ পরিষেবার পুরস্কার জিতেছে।

শীর্ষ ২০-এর বাকি বিমানবন্দরগুলো হলো দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (১১তম), মেলবোর্ন (১৬তম), জাপানের চুবু সেন্ট্রেইর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (১৭তম, যা বিশ্বের সেরা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছে) ও বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (২০তম)।

তাইওয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর ব্যাগেজ ডেলিভারির পুরস্কার জিতেছে, কোপেনহেগেন বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর নিরাপত্তা প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রশংসিত হয়েছে ও হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের পুরস্কার লাভ করেছে।

সিউলের ইনচেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর স্টাফ হিসেবে পুরস্কৃত। ছবি: এএফপি
সিউলের ইনচেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্বের সেরা বিমানবন্দর স্টাফ হিসেবে পুরস্কৃত। ছবি: এএফপি

২০২৫ সালের বিশ্বের সেরা ২০টি বিমানবন্দর—

১. সিঙ্গাপুর চাঙ্গি বিমানবন্দর

২. হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

৩. টোকিও হানেদা বিমানবন্দর

৪. ইনচেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

৫. নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

৬. হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

৭. প্যারিস চার্লস ডি গল বিমানবন্দর

৮. রোম ফিউমিচিনো বিমানবন্দর

৯. মিউনিখ বিমানবন্দর

নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ছবি: বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ
নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ছবি: বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ

১০. জুরিখ বিমানবন্দর

১১. দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

১২. হেলসিঙ্কি-ভান্তা বিমানবন্দর

১৩. ভ্যাঙ্কুভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

১৪. ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর

১৫. ভিয়েনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

১৬. মেলবোর্ন বিমানবন্দর

১৭. চুবু সেন্ট্রেইর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

১৮. কোপেনহেগেন বিমানবন্দর

১৯. আমস্টারডাম শিফল বিমানবন্দর

২০. বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক—কী আছে সর্বশেষ ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবকে সামনে রেখে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এই খসড়া প্রস্তাবকে তিনি ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার একটি সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে দেখছেন।

এর আগে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফার একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চললেও সেটিকে রাশিয়ার দাবির প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল মনে করা হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর প্রস্তাবটি সংশোধন করে ২০ দফায় নামিয়ে আনা হয়। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, অধিকাংশ বিষয়ে পক্ষগুলোর অবস্থান অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। তবে এখনো দুটি ইস্যুতে ঐকমত্য হয়নি—ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ও পরিচালনা।

প্রস্তাবনার শুরুতেই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তির প্রস্তাব রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখতে সীমান্তবর্তী সংঘর্ষরেখা নজরদারির জন্য মহাকাশভিত্তিক মানববিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে।

এই কাঠামো অনুযায়ী, ইউক্রেন তার সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান শক্তি—প্রায় ৮ লাখ সেনা—অক্ষুণ্ন রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর আদলে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। অপরদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপের বিরুদ্ধে আগ্রাসন না করার নীতি নিজ দেশের আইনে এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে হবে রাশিয়াকে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউক্রেনের জন্য রয়েছে বড় পরিসরের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একাধিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার লক্ষ্য প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ। ইউক্রেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাবে এবং অস্থায়ীভাবে ইউরোপীয় বাজারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে।

সবচেয়ে জটিল ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভূখণ্ড প্রশ্ন। রাশিয়া দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার চায়, অন্যদিকে ইউক্রেন বর্তমান যুদ্ধরেখায় সংঘর্ষ বন্ধের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল ও মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছে।

যুদ্ধবন্দীর মতো মানবিক বিষয়ে ‘সবার বিনিময়ে সবার মুক্তি’, আটক বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের ফেরত এবং যুদ্ধাহতদের সহায়তার কথা রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে ইউক্রেন।

এই শান্তিচুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে এবং এর বাস্তবায়ন তদারক করবে একটি ‘পিস কাউন্সিল’, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সব পক্ষ একমত হলে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে—এমনটাই বলা হয়েছে এই ২০ দফা প্রস্তাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৪০ শতাংশ জার্মান মনে করেন মার্জের সরকার টিকবে না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি

জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে দেশটির নাগরিকদের একটি বড় অংশের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ জার্মান নাগরিক মনে করেন, এই সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙে যেতে পারে।

২০২৫ সালের মে মাসে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ফ্রিডরিখ মার্জ। তবে বছর শেষ হতে না হতেই তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে জনপ্রিয় জার্মান সংবাদমাধ্যম ওয়েল্ট অ্যাম সোনটাগ (Welt am Sonntag)।

জনমত জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ইউগভ’ জার্মান সরকারকে নিয়ে জরিপটি করে। ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ হাজার ১০ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

ইউগভের তথ্যমতে, ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন—রক্ষণশীল খ্রিষ্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) ও তার সহযোগী দল খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং মধ্য-বাম সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) সমন্বয়ে গঠিত এই জোট সরকারের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন (২০২৯) পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা ‘খুবই কম’।

অন্য দিকে ৫৩ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, মার্জ সরকার তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে। অন্য ৯ শতাংশ কোনো নিশ্চিত মতামত দেয়নি।

জরিপে আরও দেখা গেছে, সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলোতে সরকারের প্রতি অনাস্থা সবচেয়ে বেশি (৪২ শতাংশ), যেখানে পশ্চিম জার্মানিতে এই হার ৩৬ শতাংশ।

জরিপ সংস্থা ‘ইনসা’র অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, চ্যান্সেলর হিসেবে ফ্রিডরিখ মার্জের কাজে সন্তুষ্ট মাত্র ২২ শতাংশ জার্মান। এই ফলাফল মূলত জোটের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে নেতৃত্বের অভাব নিয়ে জনগণের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগেরই প্রতিফলন।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ফ্রিডরিখ মার্জের সিডিইউ/সিএসইউ জোট ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়। অন্য দিকে উগ্র ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) রেকর্ড ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে। আর ওলাফ শোলৎজের দল এসডিপি মাত্র ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পায়, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

তবে এসপিডি বড় ধরনের হারের মুখ দেখলেও সিডিইউ/সিএসইউ জোটের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করে, যার ফলে সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের দল পুনরায় মন্ত্রিসভায় ফেরার সুযোগ পায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইউরোপের সঙ্গে ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ আছে ইরান: পেজেশকিয়ান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি: এপির সৌজন্যে
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি: এপির সৌজন্যে

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তাঁর দেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে একটি ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ লিপ্ত রয়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পেজেশকিয়ান সতর্ক করে বলেন, এই যুদ্ধ আশির দশকের ইরান-ইরাক যুদ্ধের চেয়েও অনেক বেশি জটিল এবং কঠিন। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমারা ইরানকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করতে এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে বহুমুখী কৌশল অবলম্বন করছে।

ইরানি প্রেসিডেন্ট বর্তমান সংঘাতকে কেবল সামরিক নয়; বরং একটি সর্বাত্মক অবরোধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘ইরাক যুদ্ধের সময় পরিস্থিতি পরিষ্কার ছিল—তারা যদি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ত, আমরাও পাল্টা জবাব দিতাম। কিন্তু বর্তমান যুদ্ধ অনেক বেশি সূক্ষ্ম। তারা আমাদের প্রতিটি দিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলছে; আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করছে।’

তিনি জানান, একদিকে ইরানকে বিশ্ববাণিজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেশে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট তাঁর সাক্ষাৎকারে ২০২৫ সালের জুন মাসের ১২ দিনের যুদ্ধের প্রসঙ্গও টানেন।

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় (ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান) হামলা চালিয়েছিল। সে সময় ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীরা নিহত হন।

পেজেশকিয়ান দাবি করেন, জুনের সংঘাতের পর ইরান এখন সামরিক সরঞ্জাম ও জনবল—উভয় দিক থেকেই আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘যদি তারা আবার হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখায়, তবে এবার জবাব হবে আরও কঠোর।’

পেজেশকিয়ানের এই কড়া বার্তা এমন একসময়ে এল যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপের নীতি ফিরিয়ে এনেছেন।

এদিকে, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে পরবর্তী সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা।

সাক্ষাৎকার শেষে পেজেশকিয়ান দেশের মানুষের প্রতি জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণের অংশগ্রহণ এবং অভ্যন্তরীণ সংহতি থাকলে বিশ্বের কোনো শক্তিই ইরানকে পরাজিত করতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যে কৌশলে রুশ ধনকুবেরদের কণ্ঠরোধ করেছেন পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে রাশিয়ায় বিলিয়নিয়ার বা ধনকুবেরদের সংখ্যা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তবে ভ্লাদিমির পুতিনের গত ২৫ বছরের শাসনামলে রাশিয়ার এই প্রভাবশালী বিত্তবান গোষ্ঠী, যারা অলিগার্ক নামে পরিচিত, তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বা প্রভাব প্রায় পুরোটাই হারিয়েছে তারা।

বিষয়টি রুশ প্রেসিডেন্টের জন্য বেশ স্বস্তির। কারণ, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এই অতি ধনী গোষ্ঠীটিকে পুতিনের প্রতিপক্ষ বানাতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং পুতিনের ‘পুরস্কার ও শাস্তির’ নীতি তাদের একপ্রকার নীরব সমর্থকে পরিণত করেছে।

শাস্তির এই কড়াকড়ি ঠিক কীভাবে কাজ করে, তা সাবেক ব্যাংকিং বিলিয়নিয়ার ওলেগ তিনকভ খুব ভালো করেই জানেন।

ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘পাগলামি’ বলে সমালোচনা করার ঠিক পরদিনই ক্রেমলিন থেকে তাঁর ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনকভকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, যদি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করা না হয়, তাহলে তৎকালীন রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক তিনকভ ব্যাংককে জাতীয়করণ করা হবে।

নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনকভ বলেন, ‘আমি দাম নিয়ে আলোচনার সুযোগ পাইনি। অনেকটা জিম্মি হয়ে থাকার মতো অবস্থা, যা অফার করা হবে, তা-ই নিতে হবে। দর-কষাকষির কোনো উপায় ছিল না।’

এর এক সপ্তাহের মধ্যে ভ্লাদিমির পোতানিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটি কিনে নেয়।

উল্লেখ্য, পোতানিন বর্তমানে রাশিয়ার পঞ্চম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। রুশ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনের জন্য নিকেল সরবরাহ করেন তিনি।

তিনকভের দাবি অনুযায়ী, ব্যাংকটিকে তার প্রকৃত মূল্যের মাত্র ৩ শতাংশ দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছিল। শেষপর্যন্ত তিনকভ তাঁর প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ হারান এবং রাশিয়া ছাড়তে বাধ্য হন।

পুতিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার উদীয়মান পুঁজিবাদের সুযোগ নিয়ে এবং বড় বড় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা কুক্ষিগত করে একদল মানুষ অবিশ্বাস্য সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।

রাজনৈতিক অস্থিরতার সেই সময়ে এই সম্পদ তাঁদের হাতে বিপুল ক্ষমতা ও প্রভাব এনে দেয়, যার ফলে তাঁরা অলিগার্ক হিসেবে পরিচিতি পান।

রাশিয়ার সেই সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী অলিগার্ক বোরিস বেরেজোভস্কি দাবি করেছিলেন, ২০০০ সালে পুতিনকে ক্ষমতায় বসানোর নেপথ্যে মূল কারিগর ছিলেন তিনি।

তবে এর কয়েক বছর পরেই তিনি এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ২০১২ সালে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি তাঁর (পুতিন) মধ্যে সেই লোভী স্বৈরশাসক ও জবরদখলকারীকে দেখতে পাইনি, যিনি কিনা স্বাধীনতাকে পদদলিত করবেন এবং রাশিয়ার উন্নয়ন থামিয়ে দেবেন।’

বেরেজোভস্কি হয়তো নিজের ভূমিকার কথা একটু বাড়িয়েই বলেছিলেন। তবে রাশিয়ার অলিগার্করা যে একসময় ক্ষমতার শীর্ষপর্যায়ে প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা রাখতেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

এই ক্ষমাপ্রার্থনার ঠিক এক বছর পরেই যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় রহস্যজনকভাবে বেরেজোভস্কির মরদেহ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে রাশিয়ার অলিগার্ক বা ধনকুবেরদের রাজনৈতিক দাপটেরও চূড়ান্ত অবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত